রেজা ঘটকের গল্প : দ্রাঘিমা

কবর থেকে উঠেই পরান উদ্ভ্রান্তের মতো সোজা মধুবতী বরাবর হাঁটতে থাকে। একে তো অমাবশ্যার রাত, তার ওপর অমাবতী। কয়েক দিনের টানা বাদলায় পথঘাটের যাচ্ছে তাই অবস্থা। সবকিছুকে অবজ্ঞা করে পরান হাঁটছে। যতোটা জোরে হাঁটা যায়, প্রাণপণে সেভাবে ঊর্ধ্বশ্বাসে হাঁটে পরান। মরা লোক কারো সঙ্গে কথা বলুক, ওঠবস করুক, আড্ডা মারুক, খাবার খাক, তা জীবিত কেউ আজ পর্যন্ত চায়নি। কেন চায়নি, তা অবশ্য সাংঘাতিক একটা রহস্য। একই মানুষ জীবদ্দশায় আর মরণের পরে কতো পার্থক্য! পরান তাই মনে মনে নিজের আসল পরিচয়টা একটু গোপন রাখার ইচ্ছা পোষণ করল। ভবানীপুরের বদলে শ্মশানপুরী, আর ইহকালের পরিবর্তে মহাকাল। বাকি সবটা আগের মতো থাকবে।
মা, বাবা, ভাই বোন, আত্মীয়, বন্ধু, শিক্ষক, প্রতিবেশী সব যা ছিল, তাই। এমনিতে ঘুটঘুটে অন্ধকার, আবার অম্বুরিবাবু মুখ গম্ভীর করায় পূবের আকাশও কালী হয়ে আছে। ফিসফিসানি বৃষ্টির মধ্যে নদীর তীরের চেনা তালগাছটারও হদিস নেই। নাকি মরা মানুষকে তালগাছও ভয় পায়? অথচ ঠাকুরমার গল্পে তো সব ধরনের ভয়ের সঙ্গেই তালগাছের সখ্য থাকতো। পরান ভাবে, কোনটা সত্যি? পরানের মনে পড়ে ছেলেবেলার সন্ধ্যায় ঠাকুরমার শোনানো ঘুম পারানির গল্প। মস্তবড়ো ভূতটার কোনো মাথা নাই। জ্বলন্ত চুলার মতো জ্বলজ্বলে বিশাল চোখ দুটো বুকের ঠিক মধ্যিখানে বসানো। মধুমতীর এপারে কলেজ গেটের তালগাছে এক পা, আর মধুমতীর ওপারে কাদের মাঝি যে তালগাছে খেয়া বান্দে, সেই গাছে আরেক পা। এবার কার সাধ্য আর মধুমতী পারায়? কার সেই দুঃসাহস যে বাঁশবাড়িয়ার হাট করে একা একা নাও ছাড়ে? যেদিন ভূতটা ওইভাবে খাড়াতো, বাঁশবাড়িয়ার হাট ফেরত লোকজন পরদিন সকাল পর্যন্ত বসে থাকতো। ভূতটা চলে গেলে তারপর সবাই মধুমতী পার হইতো। ছোট বোন গৌরী তখন জানতে চাইতো-- সোকালে ভূততা কোই থাকতো ? জবাবে ঠাকুরমা মুচকি হেসে বলতো-- ক্যানো, চাঁন্দে।

ঠাকুরমা এখন চিতায়। অথচ দেখা করার সহজ সুযোগটাও হাতছাড়া করায় পরানের নিজের ওপরে নিজের একটু মন খারাপ হলো। পরানের মনে পড়ল-- বাবরি মসজিদে হামলার প্রতিবাদে সারা দেশে মৌলবাদী মোসলমানেরা ফুঁসতে লাগলো। এতোদিনের চেনা প্রতিবেশী মোকতার মেম্বার, সোবাহান মৌলভীদের চ্যালাপ্যালারা ঠাকুরমার মন্দিরে হামলা করে মন্দির গুঁড়িয়ে দিলো। সেদিন যারা ঠাকুরমার মন্দিরে হামলা করলো, তাদের অনেকেই ঠাকুরমার হাতের জল খেয়েই প্রাইমারি মারিয়েছেন। সেই কষ্ট সইতে না পেরে সামান্য জ্বরে মাস না ধুরতেই ঠাকুরমা চলে গেলো পরপারে। আজ আমিও পরপারে। কিন্তু ঠাকুরমার সঙ্গে দ্যাখা না করে কোথায় যাচ্ছি? মন খারাপ করে পরান একটু দাঁড়ায় আর পেছনে ঠাকুরমার চিতার দিকে চোখ ঘুরায়।

সারা গ্রাম আদি পৃথিবীর মতো অন্ধকারে ঘুমিয়ে। অথচ পরানদের ঘরে নিভু নিভু আলো জ্বলছে। পরান ভাবে, পুরো পৃথিবী ঘুমিয়ে গেলেও মা আর গৌরী নিশ্চয়ই এখনো জেগে আছে। এমনিতে গত আটচল্লিশ ঘন্টা মা আমার হাজারবার উথালি পাথালি করেছে। কতোবার যে জ্ঞান হারিয়েছে। আবার যখন চেতন ফিরেছে চিতার দিকে তাকিয়ে হাউমাউ কেঁদেছে। তার প্রাণের পরান এখন কোথায়? ভগবান, তুই এ কী দ্যাখালি? গৌরী মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছে। আবার ভিতরে ভিতরে গৌরী নিজেকেও খুব অপরাধী ভাবছে। তার কারণেই ভাইটা ওভাবে পলাশের ছোকরাদের হাতে খুন হলো। অথচ পলাশ মুসলিম হলেও দাদার সঙ্গে ভালোই বন্ধুত্ব ছিল। আর বন্ধুত্বের সুযোগে পলাশ প্রায়ই ওদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতো। বজ্রপাতে বাবা প্রাণকৃষ্ণ প্রাণ হারালে পলাশ অনেকটা অভিভাবকের মতো ওদের পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ল। তখন থেকেই সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে পলাশ-পরানের বন্ধুত্ব। কিন্তু সংসারের হাজারো ঝামেলা মাথায় নিয়ে পরান অনেক কিছুই দেখতে পায়নি। গোপনে গোপনে পলাশ যে গৌরীকে ভালোবাসায় জড়িয়ে ফেলেছে, তা পরান বা ওদের মা রাজলক্ষী জানবে কীভাবে?

ওদিকে পরান নিজের গ্রামের কলেজে ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্ট্যান্টের চাকরি শেষে ফিরতি পথে সুশান্তদের বাড়িতে আড্ডা মেরে রাত করে বাড়ি ফেরে। কখনো কখনো সুশান্তর শুকলাদির সঙ্গে গল্প করতে করতে গৌরী আর মাকে পর্যন্ত ভুলে যেতো পরান। মাঝেমধ্যে গভীর রাত করে বাড়ি ফিরলে মাকে হাজারো কাজের ফিরিস্তি শোনাতো। এইচএসসিতে গৌরী ভালো রেজাল্ট করলে, ওকে ডাক্তারি পড়াবো। আর ডাক্তারি পড়া শেষ হলে ভালো ছেলে দেখে বেশ উৎসব করে ওর বিয়ে দেবো। শুনে মা বলতো-- তার আগে তোর জন্য একটা লক্ষ্মী মেয়ে বউ করে আনবো। পরান তখন মনে মনে সুশান্তর শুকলাদির কথা ভাবতো। কলেজে কতো মেয়ে, অথচ কেউ তো শুকলার মতো না।

অন্ধকারেও পরান সবকিছু দেখতে পাচ্ছে। নাকি মরা মানুষ সবকিছু দেখতে পায়? ফিসফিসানি বৃষ্টির তালে তালে হঠাৎ হঠাৎ দমকা হাওয়ায় মধুমতী তখন বুক ফুলিয়ে নাচছে। যেনো পৃথিবীর এই গোলার্ধের সবাই ঘুমিয়ে গেলেও শান্ত স্নিগ্ধ নারীর মতো মধুমতীও পরানের অপেক্ষায় এখনো জেগে আছে। আর তার পদধ্বনি শুনতে পেয়ে আনন্দে নেচে নেচে উঠছে মধুমতী। পরান উদ্ভ্রান্তের মতো বিক্ষিপ্ত পা চালায়। কতো চেনা পথ, চেনা গলি, মধ্যরাতের নির্জন গ্রাম, বৃষ্টিতে স্নাত হওয়া স্নিগ্ধ প্রকৃতিকে প্রাণ ভরে দেখতে দেখতে মধুমতীর তীরে এসে আবারো দাঁড়ায় সে। মাঝেমধ্যে ঝিঁঝিঁ পোকারা আর সোনা ব্যাঙগুলো গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে। অমাবস্যার এই রাতে বুঝিবা কেঁচো রাজার কনের বিয়ে! নাকি কেঁচো রাজার সাত রাণী প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিলাস ভ্রমনে নেমেছে! পরান ভাবে-- মানুষ আর অন্য প্রাণীতে কতো পার্থক্য। পলাশের ছোকরাগুলো আমাকে খুন করার পর সারা গ্রামে এখন জুজুর ভয়ে সবার ঘরের কপাটে খিল। নাকি সবাই পালিয়ে অন্য কোন গ্রহের ভীনদেশী কোনো মহাদেশে চলে গেলো। আর অন্য প্রাণীদের সেই সুযোগে কতো উৎসব! যেন এই ভূতুড়ে পল্লীতে আজ ওরা বিজয় উৎসবে মেতেছে। পরান ভাবে-- মরা মানুষের অনেক সুবিধা। ইহকাল আর মহাকালের সবকিছুই দেখতে পায়। প্রকৃতির ভাষা, অন্য প্রাণীদের উৎসব, অমাবস্যার রাত সবকিছুই আজ কতো জীবন্ত। এসব ভাবতে ভাবতে পরান একবার পেছনে ফিরে তাকায়-- দ্যাখে, এখনো তাদের ঘরের নিভু নিভু আলোটা দূর বন্দরের নিশানার মতো কার অপেক্ষায় যেনো পিটপিট করছে। তার মধ্যে মা আর গৌরী ঘর থেকে উঠোনে নামছে। কোথায় যাচ্ছে মা আর গৌরী? পরান স্ট্যাচুর মতো মধুমতীর তীরে দাঁড়িয়ে দেখছে-- মা আর গৌরী চুপচাপ পুকুরের ওপারে জঙ্গল ঘেরা চিতার উদ্দেশে নীরবে উঠোনে দাঁড়িয়ে। কী দেখছে ওরা? নাকি ওরা কোথাও যাচ্ছে? কোথায় যাচ্ছে গৌরী আর মা? নাকি ওরাও পালাচ্ছে! বাবা জীবিত থাকলে হয়তো পলাশের ছোকরাদের হাতে বাবাও খুন হতো। মা আর গৌরী বাকি জীবনটা কোথায় কাটাবে? বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে? এখানে স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। স্বাভাবিক বেঁচে থাকারও গ্যারান্টি নেই। কি হবে ওদের? এখানে থাকলে পলাশের ছোকরাগুলোর হাতে হয়তো ওদেরও ইজ্জত খোয়াতে হবে। তার চেয়ে পালিয়ে কোথাও যাওয়া অনেক ভালো। পরান দেখছে-- গৌরী মাকে আলতো ধাক্কা দেয়। মা গৌরীর সেই অর্থবোধক ধাক্কার অর্থ বোঝে। গৌরীকে ইশারায় দাঁড়াতে বলে মা আবার ঘরে ঢোকে। লুকানো যা রতœ তাই আঁচলের মুঠিতে নিয়ে মা আবার গৌরীর কাছে আসে। তারপর মধ্যময়সী মা, অষ্টদশী গৌরীর হাত ধরে চুপচাপ হাঁটতে থাকে। অন্ধকারের মধ্যেও চেনা পথ ধরে ওরা আগায়। কোথায় যাচ্ছে ওরা?

জীবিত মানুষের দিক ভুল হলেও মরা মানুষের বেলায় তার বালাই নেই। সেই ভরসায় পরান মধুমতীর তীর বরাবর হাঁটতে থাকে। জীবদ্দশায় হলে এমন অন্ধকারে পরান তালগাছটার সঙ্গ্ েএটা ওটা নিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে গল্প জুড়ে দিতো।

ভয় তাড়ানোর গল্প। তালগাছ তখন সাড়া না দিলে মধুমতীকে উদ্দেশ্য করে গান ধরতো পরান। অন্ধকারে কখনো একা একা মধুমতীর তীরে হাঁটলে মধুমতীকে পরানের শুকলার মতো মনে হতো। একেবারে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসলেও যে কখনো তাকে ভুলবে না। মধুমতী নারী হয়ে পরানকে তখন সাহস যোগাতো। ভয় তাড়ানোর মতো দুঃসাহস। স্বপ্ন জাগাতো শুকলাকে ভালোবাসবার মতো কল্পনা। মধুমতী তখন নীরবে পরানের সব কথা প্রাণভরে শুনতো। কিন্তু কিছুই বলতো না। পরান ভাবে-- সেই মধুমতী কী এখন আমাকে চিনতে পারছে? অন্ধকারে আমি তো সবকিছুই দেখতে পাচ্ছি। মধুমতী, আকাশ, গাছপালা, অলিগলি, ওপারের ঘুমন্ত ঘাস, বাঁশবাড়িয়া ঘাটের সেই তালগাছটা। সবই আমি চিনতে পারছি। কিন্তু ওরা কি আমায় চিনতে পারছে? জীবদ্দশায় হলে এমন অন্ধকারে একা একা হাঁটার সময় কেমন গা ছম ছম করতো। এক ধরনের ভয় ভয় লাগতো। কিন্তু এখন সে সবের কিচ্ছু নেই। মানুষ খুন হলে কী আমার মতো সুঃসাহসী হয়ে যায়?

অথচ সুশান্তদের বাড়ি থেকে রাত করে ফেরার সময় ওরকম গা ছম ছম করতো ক্যানো? কীসের ভয়ে, কার ভয়ে, ক্যানো গা ছম ছম করতো তখন? নাকি শুধু জীবিত মানুষের গা ছমছম করে? মরা মানুষের বেলায় তা খাটে না। প্রায়ই এসব ভয়ের কথা গৌরী আর মাকে বলার ইচ্ছা জাগতো। কিন্তু কখনো বলতাম না। পাছে মা যদি আবার বাড়ি ফেরার ওপর তখন সান্ধ্য আইন জারি করে! উল্টো মা তখন বলতো-- তুই পারিসও বাছা। অমোন অন্ধকারে তোর ভয়ডরও করে না?

- না, করে না। কীসের ভয় করবে? উল্টো প্রশ্ন তুলে তখন অন্যদিকে মুখ লুকাতাম। মার সঙ্গে চোখাচোখি হলে সত্যিই চোখেমুখে যদি কোনো ভয়ের লক্ষণ খুঁজে পায় মা। তখন আর সুশান্তির শুকলাদির সঙ্গে অন্ধকারে দ্যাখা হবে না আমার। অন্ধকারেও শুকলা কেমন আলো ছড়াতো। সেই আলো আমি ছাড়া আর কে দেখেছে? আমি খুন হওয়ার পর শুকলার ঘরে কপাট লাগলো ক্যানো? শুকলার কী মনেও খিল লেগেছে? এই অন্ধকারে শুকলা এখন কী করছে? আমার কথা ভাবছে? আমি কেন খুন হলাম তাই ভাবছে ? মা আর গৌরী বাকী জীবনটা কীভাবে কোথায় কাটাবে তাই ভাবছে? এখন কার সাথে তার বিয়ে হবে তাই ভাবছে? নাকি আমার জন্য আলো ছড়াচ্ছে? মুঠিমুঠি সোহাগ ভরা ঝিলিকঝিলিক আলো! কি করছে শুকলা এখন?

এসব ভাবতে ভাবতে পরান হাঁটছে তো হাঁটছে। পেছন পেছন পরানের মা আর গৌরী। পরান ভাবে-- মধুমতী তুমি কতো কিছুর সাক্ষী। বজ্রপাতে বাবার মারা যাবার সাক্ষী। ঠাকুরমার মন্দির ভাঙার সাক্ষী। শুকলার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মাঝরাতে আমার একা একা বাড়িতে ফেরার সাক্ষী। পলাশের ছোকরাদের হাতে আমার খুন হওয়ারও সাক্ষী তুমি মধুমতী। আর আজ মা আর গৌরী কোথায় যাচ্ছে, তারও তুমি সাক্ষী। তুমি বেঁচে থাকো মধুমতী।

মাটির রাস্তা শেষ করে পাকা রাস্তায় ওঠার আগে যেখানটায় মধুমতী উত্তর দিকে লম্বালম্বি সোজা বাঁক নিয়ে বাঁশবাড়িয়ার দিকে চলে গেছে, বামদিকে মাটিভাঙ্গা কলেজ, ডানদিকে মধুমতী আর ওপারে মালিখালী শ্মশানঘাট। ঠিক পাকা রাস্তায় পা ফেলার আগে পরান একবার পেছনে তাকায়। মা আর গৌরীও পেছন পেছন আসছে। ওরা কী আমায় দেখতে পাচ্ছে? জীবিত মানুষ কী মরা মানুষের হাঁটা দেখতে পায়? এতো রাতে মাটিভাঙ্গা খেয়াঘাটে কোনো মানুষ থাকে না। মা আর গৌরীও তা জানে। তবু যদি ওরা দেখে ফ্যালে, দূরত্ব রেখেই হাঁটে পরান। আগে কাদের মাঝির জীবিদ্দশায় মধ্যরাতেও বাঁশবাড়িয়ার ঘাটে মধুমতী পারানোর নাও মিলতো। কাদের মিঞা কতো রাতে যে কতো দুর্ভাগাকে পার করে দিলো, তার হিসাব কে রেখেছে? অথচ কাদের মিঞা মারা যাওয়ার পর, তার মেঝো ছেলেটা সন্ধ্যার পরপরই বাড়িতে চলে যায়। এখন মধুমতীর এপার-ওপারের সবাই জানে, বাঁশবাড়িয়া ঘাটে রাতে পারানো যায় না। এমার্জেন্সি হলে অবশ্যই আড়াই মাইল ঘুরে পাটগাতীর ফেরিঘাটে গিয়ে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে নাও মিললেও মিলতে পারে। নতুবা ভোর পর্যন্ত ঘাটে অপেক্ষা করা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই। পরানের মনে পড়ে-- গভীর রাতে ওরকম তাউই ঘুল্লী খেয়ে পাটগাতী ঘাটে মধুমতী পারানোর কথা। জাকের সার্ভিসের বাস টুঙ্গিপাড়া এসে ফেরি নষ্ট বলে যাত্রীদের সেদিন কী কষ্টটা না দিয়েছিল। কিন্তু এখন সে রকম কোনো ঝামেলা নেই। মরা মানুষের নদী পার হতে কোনো ঝামেলা হয় না। ইচ্ছে হলেই হেঁটে হেঁটেই নদী পারানো যায়। কিন্তু মুশকিল হলো-- মা আর গৌরীকে নিয়ে। এতো রাতে ওরা কোথায় যাবে? আর কীভাবে বা ওরা মধুমতী পারাবে? কাদের মাঝিও আমার মতো মরা মানুষ। নইলে বাঁশবাড়িয়া ঘাটে অন্তত কাদের মাঝিকে ওরা পেতো। পরান ভাবে-- মরা মানুষ কী মরা মানুষের কথা শুনতে পারে? যদি পারে? এই ভেবে পরান একটা গান ধরে--

পরান নদীর তীরে তীরে, মরণরে তুই করলি জয়
এই জীবন সত্য, কেউ কী, মানতে চায়? চায় গো ...।।

গানের পরবর্তী লাইনগুলো পরান আর মনে করতে পারে না। তার বড়োই আফসোস হয়। আহা, সত্যিই আমি এখন মরা মানুষ। অথচ এই গান কতো হাজারবার গেয়েছি। আমার গানের খুব তারিফ করতো শুকলা। মধুমতীর তীরে হাঁটতে হাঁটতে কতোবার যে এই গান গাইতাম, আর দূরে জানালা খুলে শুকলা প্রাণ ভরে তা শুনতো। আজ আমিও নেই আর আমার গানও নেই। শুকলাকে এখন কে গান গেয়ে শোনাবে? শুকলা কী আর কোনো দিন কোনো গান শুনবে? কেনো শুনবে? শুনলেও সেই গান কী ওর পছন্দ হবে? বারবার গানের পরবর্তী কলি মনে করার চেষ্টা করেও পরান ব্যর্থ হয়। হঠাৎ কীসের একটা শব্দ দূর থেকে ভেসে আসে। শব্দটা তালে তালে। একই লয়ে একটু সময় পরপর তালে তালে শব্দটা আসছে। পরান আবার দাঁড়ায়। চারদিকেই অন্ধকার। এমনিতে কিছুই দেখা যায় না। পরান মরা মানুষ বলে সবকিছুই দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু শব্দটার উৎস ঠিক ঠাওর করতে পারছে না। মা আর গৌরীর হাঁটার শব্দের চেয়েও ওই শব্দটা একটু আলাদা। নদীতে অন্ধকারের মধ্যেও একটা বড়ো আসমান সমান আয়না থাকে। আর সেই আয়নায় আকাশের নক্ষত্রদের পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায়।

গেল বছরের বন্যায় মধুমতীর দক্ষিণপাড়ের বেশ খানিকটা ভেঙেছে। আগে মধুমতী কলেজ বিল্ডিং থেকে বেশ দূরে ছিল। এখন একেবারে কলেজের দেয়াল ঘেঁষে মধুমতী। এখন তীর বরাবর হাঁটারও আগের মতো সুযোগ নেই। তবু পরান গান গাইতে গাইতে মধুমতীর তীর বরাবর হাঁটতে থাকে। আর শব্দটার উৎস বুঝতে চেষ্টা করে।

পরান নদীর তীরে তীরে, মরণরে তুই করলি জয়
এই জীবন সত্য কেউ কী, মানতে চায়? চায় গো ...

পরান মধুমতীর তীর বরাবর হাঁটছে। পেছন পেছন তার মা আর গৌরী। ইতিমধ্যে যে শব্দটা পরান শুনতেছিল, তা ক্রমান্বয়ে আরো স্পষ্ট আর নিকটতর হচ্ছে। পরান মধুমতীর তীর বরাবর সোজা উত্তরে যাচ্ছে। নদীতে একজন লোক ঠিক তার সমান্তরালে নাও বাইতে বাইতে উত্তরে যাচ্ছে। এতোক্ষণ যা পরান ঠাওর করতে পারেনি। এখন লোকটা আর তার নাওকে পরান স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। পরান মনে মনে ভাবে-- লোকটাকে কি এখন জিজ্ঞাসা করব-- এতো রাইতে উজান ঠেইলা ক্যাঠা যায় গো?

আবার মনে উল্টা প্রশ্ন জাগে-- মরা লোক জানতে চাইছে, একথা যদি নায়ের লোকটা বুঝতে পারে, তখন কী কান্ডটা না হয়! পেছনে মা আর গৌরীও আসছে। ওরা কী নদীর লোকটা আর তার নাওকে দেখতে পাচ্ছে? পরান ভাবে, ওরা ওকে দেখতে পাইলে বরং ভালো। তাহলে এই নায়েই ওরা নদী পারাতে পারবে। এবার বেশ আস্থা নিয়ে জোড় গলায় পরান হাঁক ছাড়ে-- ক্যাঠা যায় গো ?.....

মরা মানুষের কণ্ঠস্বর যে জীবিতদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এই প্রথম পরান তা টের পায়। নিজের কন্ঠস্বরকে পরানের খুবই অচেনা লাগে। ‘ক্যাঠা যায় গো’ শব্দগুলো সিগারেটের ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মতো মধুমতীর আবছা আঁধারে গড়াতে গড়াতে সারা নদীতে প্রতিধ্বনি ওঠে- ক্যাঠা যায় গো... ক্যাঠা যায় গো... ক্যাঠা যায় গো.... যায় গো... যায় গো... গো... গো ... গো...।

মরা মানুষের কণ্ঠ শুনে যেন মধুমতীও সুনামির মতো কেঁপে কেঁপে উঠছে। সারা মধুমতীর ছোট-বড়ো ঢেউগুলোর যেনো এখন একটাই ভাষা-- ক্যাঠা যায় গো... ক্যাঠা যায় গো ... ... ক্যাঠা যায় গো ... ক্যাঠা যায় গো... ক্যাঠা যায় গো... ক্যাঠা যায় গো.... যায় গো... যায় গো... গো... গো ... গো... ... ... ক্যাঠা?

ঘুটঘুটে অন্ধকারে মধুমতীর আকাশ ফাঁটানো অমন শব্দ লহরি তখন কে কে শুনলো? পরান? পরানের মা রাজলক্ষ্মী? পরানের বোন গৌরী? নদীর নায়ের লোকটা? নাকি আকাশের সুদূরবাসী চেনা-অচেনা নক্ষত্ররাজি? দুপারের ঘুমন্ত জনবসতির আর কে কে শুনলো মধুমতীর কণ্ঠে অমন দুর্লভ গান? মধুমতীর ঢেউ আর গানের শব্দমালা যখন ধীরে ধীরে মিলিয়ে একাকার হয়ে গেলো, ঠিক তখনই নাও থেকে জবাব এলো-- কাদের মিঞা।

পরক্ষণে সারা মধুমতীতে আবারো তরঙ্গ ওঠে-- কাদের মিঞা ... কাদের মিঞা... কাদের মিঞা... কাদের মিঞা... মিঞা ... মিঞা ... মিঞা ... .... .... কাদের।

পরান স্পষ্ট শুনতে পায়, বারো বছর আগে শোনা খেয়ানায়ের মাঝি কাদের মিঞার সেই পরিচিত কণ্ঠস্বর। মধুমতী যেনো সেই কাদের মিঞার কণ্ঠে কথা বলছে। পরানের সারা শরীরে মুহূর্তে একটা বিদ্যুৎ তরঙ্গ খেলে যায়। পরান ভাবে-- এখন কী জিজ্ঞেস করবো-- কোন কাদের মিঞা? যদি সত্যি সত্যি লোকটা সেই খেয়ানায়ের মাঝি কাদের মিঞাই হয়, যে কিনা ঠিক বারো বছর আগে মারা গেছে। আবার নিজেকে প্রশ্ন করে-- মরা মানুষের সঙ্গে মরা মানুষের কোনো বিরোধ নেই। কিন্তু মা আর গৌরী যদি শোনে-- নায়ের লোকটা বারো বছর আগে মারা যাওয়া সেই কাদের মিঞা, তখন? এসব বিক্ষিপ্ত চিন্তার মধ্যে পরান আবার জানতে চায়-- মানে ওই খেয়ানায়ের মাঝি নিকি?

সারা মধুমতী জুড়ে তখন একটাই প্রশ্ন-- মানে ওই খেয়ানায়ের মাঝি নিকি? ওই খেয়ানায়ের মাঝি নিকি? খেয়ানায়ের মাঝি নিকি? নায়ের মাঝি নিকি? মাঝি নিকি? নিকি? নিকি? খেয়ানায়ের মাঝি ... খেয়ানায়ের মাঝি ... খেয়ানায়ের ...মাঝি ... মাঝি ... ?

অন্ধকারের মধ্যেই কাদের মিঞা গাল ফুঁলিয়ে হেসে ওঠে-- হে ... হে ... হে ... তোমার দ্যাকছি, আমার কোতা মোনে আছে গো? তুমি ক্যাঠা গো, শুনি? সারা মধুমতীতে ছোট-বড়ো ঢেউয়ের তালে তালে আবারো ঝঙ্কার ওঠে-- হে ... হে ... হে ... তোমার দ্যাকছি, আমার কোতা মোনে আছে গো? তুমি ক্যাঠা গো, শুনি? হে ... হে ... হে ... আমার কোতা মোনে আছে গো ... তুমি ক্যাঠা গো, শুনি? ... তুমি ক্যাঠা গো, শুনি ... তুমি ক্যাঠা গো ... ক্যাঠা গো ... ... গো... গো ... গো ... ?

পরান আবার পেছনে ফিরে তাকায়। এতোসব শব্দমালা, মধুমতীর অমন উতাল পাথাল সুর লহরির মধ্যেও মা আর গৌরী ঠিক আগের মতোই নির্লিপ্ত আর উদ্ভ্রান্তের মতো শুধুই মধুমতীর তীর বরাবর হাঁটছে। যেনো পৃথিবীর অল্পদূরের এতোসব ঘটনা, সুরধ্বনি, মধুমতীর দুর্লভ কণ্ঠের গান, কিছুতেই তাদের কোনো গাত্রদাহ নেই। তারা শুধু ঊর্ধ্বশ্বাসে মধুমতীর তীর বরাবর হাঁটছে তো হাঁটছে। নদীটা কোনোমতে পারাতে পারলে বুঝি তাদের স্বস্তি। ভোরের আলো ফুটবার আগেই তাদের যেনো এ গাঁও ছাড়ার তাড়া। অন্য কিছুতেই তাদের কোনো খেয়াল নেই। পরান নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে-- মরা মানুষের কণ্ঠ বুঝিবা জীবিতরা শুনতে পায় না? না শোনাই ভালো। মা আর গৌরী তাহলে কাদের মিঞার নায়ে নদীটা পারাতে পারবে। পরান মনে মনে ভাবে-- কাদের মাঝির কাছে পরিচয়টা গোপন না করলে বা কী? কাদের মাঝিও মরা মানুষ। আমিও মরা মানুষ। সে নিশ্চয়ই আমার কোনো ক্ষতি করবে না। আবার পাল্টা প্রশ্ন জাগে পরানের মনে-- মা আর গৌরী যদি ভয় পায়? এতোসব উল্টাপাল্টা চিন্তা আর হাঁটার মধ্যেই পরান আবার ফোঁড়ন কাটে-- নাম শুনলি কী চিনবানে?

সারা মধুমতীর ঢেউগুলোতে আবারো নেচে ওঠে একটা শব্দ তরঙ্গ-- নাম শুনলি কী চিনবানে? শুনলি কী চিনবানে ? কী চিনবানে? চিনবানে ? ... চিনবানে ? ... চিনবানে ... ?

কাদের মিঞা আবারো একগাল হেসে পাল্টা জবাব দেয়-- কওনা আগে, শুনি। হে... হে ... হে ..। মধুমতীর যে ঢেউগুলো তখন তীরে আছড়ে পড়ছে, সেগুলো যেনো কাদের মিঞার হাসির মতো হে ... হে ... হে ... কওনা আগে, শুনি। হে... হে ... হে ..। কওনা শুনি... হে... হে ... হে ..। শুনি হে... হে ... হে ... করতে করতে কুলে মিলিয়ে যাচ্ছে। শুনে পরান ভাবে-- কাদের মিঞার কথাবার্তা তো একদম বদলায়নি। ঠিক বারো বছর আগের মতোই আছে। যেমন টেনে টেনে কথা বলা কাদের মিঞার স্বভাব। ঠিক তেমনিই আছে। কথার সুরে একটা আত্মীয়তা পাতানোর মতলব, যা শুনে যে কেউ তার সঙ্গে খাতির পাতায়। কাদের মিঞা একটুও বদলায়নি। পরিচয় গোপন করার ইচ্ছাটা পরানের মন থেকে মুহূর্তে কোথাও কর্পূরের মতো উধাও হয়ে যায়। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে কাদের মিঞার উদ্দেশ্যে পরান জবাব দেয়-- আমি পরান, সেই রাজলক্ষ্মীর ছেলে পরান। ওইযে ঠাটা পইরে বাবা মারা গেইলো। প্রাণকৃষ্ণর ছেলে পরান, চিনিছো ?

সারা মধুমতীতে আবারো ঢেউ খেলে যায়-- রাজলক্ষ্মীর ছেলে পরান। ওইযে ঠাটা পইরে বাবা মারা গেইলো। প্রাণকৃষ্ণর ছেলে পরান, চিনিছো? রাজলক্ষ্মীর ছেলে পরান ... প্রাণকৃষ্ণর ছেলে পরান... রাজলক্ষ্মীর ছেলে পরান ... প্রাণকৃষ্ণর ছেলে পরান... রাজলক্ষ্মী ... পরান ... প্রাণকৃষ্ণ ... রাজলক্ষ্মী ... পরান ... প্রাণকৃষ্ণ ... পরান ... পরান ... পরান ...। পরিচয় পর্বের অমন দুর্লভ দৃশ্য পরানের পেছনে পেছনে হাঁটতে থাকা পরানের মা আর বোন গৌরী কিছুই দেখলো বা শুনলো কিনা পরান বুঝতে পারে না।

এরপর কিছুক্ষণ মধুমতীতে শুধুই নাও বাওয়ার শব্দ। কারো সঙ্গে কারো কোনো কথা নেই। পরান মধুমতীর তীর বরারব আগের মতোই হাঁটছে। পেছনে পেছন মা আর গৌরী। আর পরানের সমান্তরাল নদীতে কাদের মাঝি নাও বেয়ে যাচ্ছে। পরান হাঁটছে আর ভাবছে-- চারিদিকে অসংখ্য শকুন ওৎ পেতে আছে। সেইসব শকুনের চোখের আড়াল হতে মা আর গৌরী কোথায় যাচ্ছে? যেখানে যাচ্ছে সেখানে ওরা কতোটা নিরাপদ? বাংলাদেশের কোথাও কী ওদের জন্য নিরাপত্তা আছে? এতো রাতে কাদের মাঝি বা কেন মধুমতীতে? তাহলে কী কাদের মাঝির মতো কেউ কেউ এখনো প্রিয় বাংলাদেশে ওদের জন্য ভালোবাসা আর নিরাপত্তা নিয়া আছে? তারপর পরান হাঁটতে হাঁটতে এক সময় মধুমতীতে নামে। নামার ঠিক আগে আগে কাদের মাঝিকে সে একটা অনুরোধ করে--

- তুমি ওদের পার কইরা দাও, মাঝি। সারা মধুমতীতে আবারো নাচন ওঠে-- তুমি ওদের পার কইরা দাও, মাঝি। ওদের পার কইরা দাও, মাঝি। পার কইরা দাও, মাঝি। কইরা দাও, মাঝি। দাও, মাঝি। মাঝি। মাঝি। মাঝি... ... ...। পরক্ষণেই নাও থেকে জবাব আসে-- পার করাই আমার ধর্ম, খুকা। পুরো মধমতীতে তখন একটাই তরঙ্গ-- পার করাই আমার ধর্ম, খুকা। করাই আমার ধর্ম, খুকা। আমার ধর্ম, খুকা। ধর্ম, খুকা। খুকা। খুকা। খুকা... ... ...।

মধুমতী আগের মতো কুলকুল বহে চলে। যেন ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষায় সে শান্ত হচ্ছে। শুধু কাদের মাঝি ধীরে ধীরে নাও বাইতে বাইতে এক সময় পরানের মা আর গৌরীর সমান্তরালে চলে আসে। আর তখন করো মুখে কোনো কথা নেই। যেনো সবকিছু আগেই ঠিকঠাক করা ছিল। কাদের মাঝি কুলে নাও ভেড়ায়। পরানের মা আর গৌরী নিশ্চিন্তে সেই পরিচিত খেয়ানায়ে ওঠে। আর কাদের মাঝি চুপচাপ বৈঠা চালায়। ছলাৎ ছলাৎ শব্দে সারা মধুমতী তখন যেন গান ধরে-- মরণরে তুই করলি জয়। এই জীবন সত্য কেউ কী মানতে চায় ? চায় গো ...।

এর একটু পরেই বৃষ্টি সেই গানের তালে যোগ দেয়। গোটা মধুমতীতে সেই বৃষ্টিও যেনো কুয়াশা কুণ্ডলির মতো নাচতে থাকে-- মরণরে তুই করলি জয় ... মরণরে তুই করলি জয় ... মরণরে তুই করলি জয় ...। একসময় চারদিকে কেবলই ঝাপসা হয়ে আসে।


লেখক পরিচিতি
রেজা ঘটক

জন্ম: ২১ এপ্রিল ১৯৭০ (৮ বৈশাখ ১৩৭৭), উত্তর বানিয়ারী, নাজিরপুর, পিরোজপুর, বাংলাদেশ।
পড়াশুনা: অর্থনীতি শাস্ত্রে স্নাতক সম্মান ও মাস্টার্স।
প্রকাশিত গ্রন্থ:
ছোটগল্প: বুনো বলেশ্বরী, ছোটগল্প সংকলন, ২০০৮। সোনার কঙ্কাল, ছোটগল্প সংকলন, ২০১০। সাধুসংঘ, ছোটগল্প সংকলন, ২০১১ । ভূমিপুত্র, ছোটগল্প সংকলন, ২০১৩

উপন্যাস: মা, ২০১২।
সমালোচনা: শূন্য দশমিক শূন্য, ২০১১।
কিশোর গল্প: বয়োঃসন্ধিকাল, ২০০৫।
শিশুতোষ: ময়নার বয়স তেরো, ২০০৩। গপ্পো টপ্পো না সত্যি, ২০১১

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ