গল্পে দ্বন্দ্ব তৈরি করার সেরা ১০ টিপস

সাজেদা হক

পাঠকের আকর্ষণ বাড়াতে সব ধরণের গল্পে কিছু দ্বন্দ্বের প্রয়োজন হয়। দ্বন্দ্ব ছাড়া কোনো গল্প একেবারেই উদ্যোমহীন, লক্ষহীন, প্রাণহীন, অসাড় মনে হয়। গল্পে দ্বন্দ্ব যেকোনো স্থান থেকে শুরু হতে পারে, যে কেউ, যেকোনো সময় শুরু হতে পারে।তবে গল্পের শুরুতেই বিরোধের সুত্র গল্পের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে, কাহিনীকে আরো বিন্যস্ত করে, সাবলীল করে। সংঘাত ছাড়াও একটি গল্পবিস্তৃত হতে পারে, কিন্তু দ্বন্দ্ব বা সংঘাত সেই বিস্তৃতার প্রাণ হিসেবে, সহায়ক হিসেবে দারুণ কার্যকর। যে কারণে, গল্পের প্রয়োজনেই দ্বন্দ্ব অপরিহার্য এক উপাদান। সঠিক স্থানে, সঠিক উপায়ে কিভাবে গল্পে নান্দনিক দ্বন্দ্ব উপস্থাপন করা যায় তারই সেরা ১০ টিপস নিয়ে আমাদের আজকের শৈলী।


খেয়াল রাখতে হবে যে ১০টি বিষয়:

১. সাধারণ দ্বন্দ্ব হোক।
২. দ্বন্দ্ব দিয়ে শুরু হোক।
৩. সংঘাতের উদ্দেশ্য থাকুক।
৪. মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব হোক।
৫. বিশ্ব বৈরি চরিত্র হোক।
৬. অপ্রিয় প্রেম থাক।
৭. দ্বন্দ্ব তুলুক ঝড়।
৮. দ্বন্দ্বের বহুমূখী লক্ষ্য থাকুক।
৯. চরিত্রের অতীতকে ব্যবহার করা যাক এবং
১০. পাঠকের কথা চিন্তা করুন।


এবারে আসা যাক টিপসের বিস্তারিত আলোচনায়।

১. সাধারণ দ্বন্দ্ব হোক:

সাধারণ কিছু দ্বন্দ্ব থাকে। আমাদের সমাজ, সংসার, ইতিহাস, ঐতিহ্য, যুদ্ধ, প্রেম, ভালোবাসা জুড়েই রয়েছে কিছু স্বাভাবিক দ্বন্দ্ব। যা ভীষণ সাধারণ এবং স্বাভাবিক। এসব দ্বন্দ্ব পাঠক সহজেই গ্রহণ করে, এসব দ্বন্দ্বের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই আকর্ষিত হন পাঠকেরা। সাধারণ পাঠকের এ চাহিদাকে গল্পের দ্বন্দ্ব হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন, যে কোনো দক্ষ লেখক।


২. দ্বন্দ্ব দিয়ে শুরু হোক:

দ্বন্দ্বেই শুরু হোক গল্প। লেখক হিসেবে পাঠকের আকর্ষন বাড়াতে শুরুতেই সংঘাতের ইংগিত দিতে পারেন। কিন্তু ভূলেও বিরোধ নিষ্পত্তি করবেন না, তাহলে পাঠক আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। এদিকটা মাথায় রেখে দ্বন্দ্বকে নিয়েই এগিয়ে চলুক আপনার গল্প। ধীরে ধীরে জট খুলুক সংঘাতের। বিস্তৃতি পাক কাহিনী।


৩. সংঘাতের উদ্দেশ্য থাকুক:

উদ্দেশ্যহীন কোনো কিছুই আকর্ষণ বাড়ায় না। সংঘাত যেনো পরিহাসের বিষয় হয়ে না দাড়ায় বরং এমন সংঘাত তৈরি করুন যা গল্পের গুরুত্ব বাড়ায়। কাহিনীতে একটা মাত্রা যোগ করে। তাই লেখকের প্রয়োজনে নয়, পাঠকের প্রয়োজনে, গল্পের প্রয়োজনে গল্পে যোগ হোক উদ্দেশ্যপূর্ণ দ্বন্দ্ব।


৪. মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব হোক:

গল্পের মূল চরিত্র মানুষ। মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব হোক। দ্বন্দ্ব হোক সামাজিক, মানবিক। মানুষের অতীতে-বর্তমানে, বর্তমানে-ভবিষত্যে, স্বপ্নে-বাস্তবতায় কিংবা সুজনে-দুর্জনে দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়ুক। গল্পে বিরোধে জড়াক নারী-পুরুষ, যুবা-বৃদ্ধা, লোভ-লাসা, মানুষের সত্য-মিথ্যা জ্ঞান।যেমন গালিভার ট্রাভেলস এ যুদ্ধের একটি ডিম কিভাবে ফাটল এবং চড়িয়ে পড়ল তার বর্ণনা আকৃষ্ট করেছিলো। যেমন করে রাজা হেনরী, তার তিন পুত্র, ফ্রান্সের রাজপুত্র, রাজা হেনরীর স্ত্রী আকিতেন কখনও কখনও একসঙ্গে, কখনও কখনও বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। ব্যক্তিগত সব ইচ্ছা থেকে উদ্ভূত এই দ্বন্দ্বই প্রাকৃতিক।


৫. বিশ্ব বৈরি চরিত্র হোক:

বিশ্বের বিরুদ্ধে মানুষের বেঁচে থাকার মহাকাব্য তৈরি করুন। এমন নায়োকোচিত চরিত্র গল্পে উপহার দিন যা মানুষ মনে রাখবে যুগের পর যুগ। যেমন আজো আলোড়ন তোলে রবিনশন ক্রুশোর মতো চরিত্রগুলো। বেচে থাকার মেৌলিক দ্বন্দ্বগুলোকে উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে এমন দ্বন্দ্ব এবং বিশ্ব বৈরী চরিত্র উপহার দিন।


৬. অপ্রিয় প্রেম থাক:

গল্পের অপরিহার্য উপাদান হলো প্রেম। সেই প্রেমে যদি দ্বন্দ্ব যোগ করা যায়, তাহলে তা অতিগ্রহণীয়। মিষ্টি রোমান্স, তরুণ-প্রাপ্তবয়স্ক প্রেম বেশ আকর্ষণ বাড়ায়। এদের মাঝেও অন্তত ছোটখাট দ্বন্দ্ব থাকা উচিত। এসব দ্বন্দ্ব গল্পে বেশ শক্তিশালী, আরো পরিপক্ক করে। দ্বন্দ্বই চরিত্রগুলোতে প্রাণ দিতে পারে। প্রেমে দ্বন্দ্ব অনিবার্য, যেমন গল্পের প্রয়োজনে, তেমনি পাঠকের প্রয়োজনেও।


৭. দ্বন্দ্ব তুলুক ঝড়:

গল্পের প্রয়োজনে যে দ্বন্দ্ব তৈরি হলো, সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে তার সবগুলো চরিত্র সামনে আনুন। চরিত্রগুলো, দ্বন্দ্বগুলোকে ঝড় তুলতে দিন। এতে গল্পের নায়ক যদি আহত হয়, ভয় পাবেন না। বিশ্বাস রাখবেন আপনি সবসময় বৈশিষ্ট্যপূর্ণ চরিত্র তৈরি করতে পারেন।


৮. দ্বন্দ্বের বহুমূখী লক্ষ্য থাকুক:

সংঘাতের বহুমূখী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকুক। আপনার অক্ষরকে ভিন্ন লক্ষ্য এবং ইচ্ছা দিন। হয়তো দুই পুরুষ একই মহিলার প্রেমে, অথবা দুই দেশের তটরেখা নিয়ে সংগাত হোক। গল্পের মধ্যে প্রতিটি চরিত্র সংঘর্ষকে ব্যবহার করুক। এটি আপনার গল্পকে কেবল দ্বন্দ্বই নয়, ছন্দও দেবে।

৯. চরিত্রের অতীতকে ব্যবহার করা যাক:

একটি চরিত্রকে গল্পের ট্রামকার্ড হিসেবে ব্যবহার করুন, কিংবা ঘটনাকে, অথবা স্থানকে। এটি গল্পের শেষ পর্যণ্ত আপনার পাঠককে আগ্রহী রাখতে সাহায্য করবে। চরিত্রকে স্থিতিশীল রাখলে, বা গতিশীল রাখলে কিংবা দ্বন্দ্বকে সঠিকভাবে ব্যবহার করলে পাঠক আপনার গল্পে একাত্মতা বোধ করবে।

১০. পাঠকের কথা চিন্তা করুন:


সর্বোপরি, গল্পে যে সংঘাত তৈরি করলেন, তা পাঠক কিভাবে গ্রহণ করতে পারে তা ভাবুন। এমনকি পাঠককেও আপনি আপনার গল্পের দ্বন্দ্ব হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। সে রোমান্টিক উপন্যাস হোক, কিংবা অন্য কোনো গল্প। গল্পে একটি ছোট দ্বন্দ্ব আপনাকে বসিয়ে দিতে পারে পাঠকের হৃদয়াসনে। এতে দিতে পারে মহাসম্মাননা, পাঠকের অমূল্য ভালোবাসাও।


*লেখাটি বিদেশী একটি লেখার অনুস্মৃতি।



লেখক পরিচিতি
সাজেদা হক
সাংবাদিক। লেখক।
ঢাকা




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ