বিগত দুই দশক ধরে শাহীন আখতার লেখালেখি করছেন। ইতোমধ্যে সিরিয়াস লেখক হিসেবে সাহিত্য জগতে সুনাম অর্জনও করেছেন। তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘তালাশ’ প্রথম আলো বর্ষসেরা বই-১৪১০ পুরস্কার লাভ করে। তিনি গল্প ও উপন্যাসের পাশাপাশি বেশ কিছু সাহিত্য সম্পৃক্ত বই সম্পাদনা করেছেন। তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘সতী ও স্বতন্ত্ররা- বাংলা সাহিত্যে নারী’ তিন খণ্ড অন্যতম। এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে শাহীনের ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘ময়ূর সিংহাসন।’
গল্পপাঠের ভাদ্র সংখ্যায় শাহীন আখতা্রের তাজমহল গল্পটি প্রকাশিত হয়েছে। গল্পটি লেখার পেছনের গল্পটি নিয়ে গল্পকারের সঙ্গে কথা বলেছেন কুলদা রায়।
কুলদা রায় : তাজমহল গল্পটি লিখেছেন ২০১১ সালে। গল্পের বীজটি কিভাবে পেলেন? সেই বীজটি কি রকম ছিল?
শাহীন আখতার : একবার অফিসের কাজে চাটগাঁ গিয়ে মগধেশ্বরী মন্দিরের উল্টো দিকের একটা গেস্টহাউজে উঠি। তিন তলায় ঘর। জানালা খুললেই ঝাঁকড়া একটা বটগাছ ওপর থেকে চোখে পড়ে। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় সারা দিন একা গেস্টহাউজে। নিচে তাকালেই গা ছম ছম করে। অসুস্থতার কারণে সম্ভবত। সন্ধ্যায় মন্দির আর গেস্ট হাউজের মাঝের রাস্তায় হাঁটি কিছুক্ষণ। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। উঁচু উঁচু ফ্ল্যাটবাড়ির মাঝখানে মন্দির সংলগ্ন শ্মশান - অবাকই লাগছিল। সেই রাতে ডায়েরিতে কয়েকটা লাইন লিখি - বটগাছ আর অদেখা মন্দিরটা নিয়ে।
ইয়োগা ক্লাশের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা গল্প লেখার কথা ভাবছিলাম। একজন মাঝবয়সী বিধবা মহিলা কখনো ক্লাশ কামাই দিতেন না। তার সঙ্গে কখনো-সখনো খুচরা আলাপ হতো। বলছিলেন, একা একা ঘরে মন টেকে না। ইত্যাদি। শুরুটা এভাবেই…
নিজের শৈশব, শিলং-চেরাপঞ্জি বেড়ানোর অভিজ্ঞতা লিখতে লিখতে চলে আসে।
কুলদা রায় : লেখার আগে কি কোনো ড্রাফট বা খসড়া করে নিয়েছিলেন? করলে সেটা কি ধরনের ড্রাফট ছিল? না সরাসরিই কাগজ কলম নিয়ে লিখতে বসেছিলেন গল্পটি কোনো ড্রাফট ছাটা?
শাহীন আখতার : আমি কম্পিউটারে লিখি। খসড়া কপি কয়েকটা থাকে। এ গল্পটার বেলায় কেন জানি কম ছিল। খুব বেশি ভাবনা-চিন্তা করতে হয় নাই। এগোচ্ছিল বেশ তরতরিয়ে, অনেকটা আর্শীবাদের মতো।
কুলদা রায় : এই গল্পটি লিখতে কি রাইটার’স ব্লকে পড়েছিলেন? পড়লে সেটা কিভাবে মোকাবেলা করেছিলেন?
শাহীন আখতার : এক বৈঠকে গল্পটা শেষ করার প্রশ্নই ওঠে না। সব মিলিয়ে সপ্তাহ খানেক লেগেছে। লিখতে লিখতে থেমে যাওয়া প্রায়শই হয়। তা চাকরির কারণেও কিছুটা। আপনি রাইটার্স ব্লকের কথা বলেছেন। আমি নিজের ওপর জোর খাটাই না একেবারে। কোনো ডেডলাইনও সামনে রাখি না। নিজের মধ্যে লেখার ইচ্ছাটা তৈরি হলে ফের লিখতে বসি। এ গল্পটায় তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি।
কুলদা রায় : গল্পটি লেখার আগে বা লেখার মধ্যে বা পরে কারো সঙ্গে কি গল্পটি নিয়ে কথা বলেছিলেন? বলে থাকলে তিনি কি কোনো পরামর্শ নিয়েছিলেন?
শাহীন আখতার : গল্পের প্লট নিয়ে কখনোই আমার আলোচনার সুযোগ হয় না। আমি সম্ভবত চাই-ও না, এ নিয়ে কথা বলতে। বলে ফেললে যদি লিখতে না পারি - ভাবনাটা কুসংস্কারের মতো কাজ করে। সবসময় লিখতে না পারার অনিশ্চয়তায় ভুগি। অবশ্য লেখাটা দাঁড়িয়ে গেলে ইচ্ছা করে - কেউ একজন পড়ে বলুক, কোথায় এর সমস্যা বা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে কিনা। সেই অর্থে আমার তেমন লেখকবন্ধু নেই। লেখকদের সঙ্গে আড্ডা বা ওঠা-বসাও নেই। আমার বেশির ভাগ লেখার মতো এ গল্পটাও ছাপা হওয়ার আগে কেউ পড়েনি।
কুলদা রায় : প্রকাশের আগে কি আপনি এডিটিং করেছেন? করলে কখন, কিভাবে এবং কতোব্র এডিট করেছিলেন?
শাহীন আখতার : এডিটিং তো সবসময়ই করি। এ গল্পটা কয়েক জায়গায় ছাপা হয়েছে। প্রত্যেকবারই কলম পড়েছে এর গায়ে। (অবশ্য এবার ছাড়া)।
কুলদা রায় : এই গল্পটি যখন লিখতে শুরু করেন তখন আর কি কোনো লেখা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন?
কুলদা রায় : না, তখন অন্য কোনো লেখা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম না। ‘ময়ূর সিংহাসন’উপন্যাসটা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করছিলাম।
কুলদা রায় : গল্পের ভাষার মধ্যে একধরনের সরলতা আছে। এই সরলতা গল্পের আখ্যানের মতো সহজ হয়ে বয়ে যায়। তার মধ্যে আবার মাঝে মাঝে ছোটো বাক্য আর উর্দু শব্দের ব্যবহার করেছেন। শব্দগুলো যেন যাদুর মতো কাজ করে। অপ্রয়োজনীয় মনে হয় না। স্বাভাবিক বলে মনে হয়। আপনি কি প্লান করে এই উর্দু শব্দ ব্যবহার করেছেন? না, আপনার স্বভাবসুলভ বাকভঙ্গীতেই এই শব্দের মহাফেজখানা আছে?
শাহীন আখতার : বিগত দশকে ‘সতী ও স্বতন্তরা - বাংলাসাহিত্যে নারী’ নামে তিন খণ্ডের একটি সাহিত্য সংকলন সম্পাদনা করি। দোভাষী সাহিত্য বলে একটা ঘরানা চোখে পড়ে তখন - কবি ভারতচন্দ্রের পর আধুনিক সাহিত্যের মাঝখানের সময়কার। যেমন গোলেবকাওলি, সোনাবান, জৈগুণের পুঁথি, সত্যপীরের পুঁথি। এ ধারার উল্লেখযোগ্য কবিরা হচ্ছেন - ফকির গরিবুল্লাহ, সৈয়দ হামজা প্রমুখ। জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও তারা প্রান্তিক। পরবর্তীকালের বোদ্ধারা (আমার জানামতে এক দীনেশচন্দ্র সেন ছাড়া) দূর দূর করে সাহিত্যের ইতিহাসের পাতা থেকে তাদের খেদিয়ে দিয়েছেন। দোভাষী সাহিত্যে চলতি আরবি-ফারসি শব্দ থাকত প্রচুর। চলতি বলছি এজন্য যে, আমার দাদির মুখে এসব শব্দ শুনতে শুনতে আমরা বড় হয়েছি। এক ধরনের আত্মীয়তাবোধ থেকে, আমি পরবর্তী সময়ে সেই সব শব্দসম্ভার প্রয়োগের চেষ্টা করেছি, এখনো করছি।
কুলদা রায় : গল্পটি লেখার আগে যা ভেবে রেখেছিলেন, লেখার পরে সে রকমটি হয়েছে? না, বদলে গেছে?
শাহীন আখতার : এ গল্পটা শেষ কীভাবে হবে, আসলেই আমি জানতাম না। তাই ভাবনার সঙ্গে শেষাংশের গড়মিল খুঁজে পাইনি।
গল্পপাঠের ভাদ্র সংখ্যায় শাহীন আখতা্রের তাজমহল গল্পটি প্রকাশিত হয়েছে। গল্পটি লেখার পেছনের গল্পটি নিয়ে গল্পকারের সঙ্গে কথা বলেছেন কুলদা রায়।
শাহীন আখতার : একবার অফিসের কাজে চাটগাঁ গিয়ে মগধেশ্বরী মন্দিরের উল্টো দিকের একটা গেস্টহাউজে উঠি। তিন তলায় ঘর। জানালা খুললেই ঝাঁকড়া একটা বটগাছ ওপর থেকে চোখে পড়ে। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় সারা দিন একা গেস্টহাউজে। নিচে তাকালেই গা ছম ছম করে। অসুস্থতার কারণে সম্ভবত। সন্ধ্যায় মন্দির আর গেস্ট হাউজের মাঝের রাস্তায় হাঁটি কিছুক্ষণ। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। উঁচু উঁচু ফ্ল্যাটবাড়ির মাঝখানে মন্দির সংলগ্ন শ্মশান - অবাকই লাগছিল। সেই রাতে ডায়েরিতে কয়েকটা লাইন লিখি - বটগাছ আর অদেখা মন্দিরটা নিয়ে।
ইয়োগা ক্লাশের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা গল্প লেখার কথা ভাবছিলাম। একজন মাঝবয়সী বিধবা মহিলা কখনো ক্লাশ কামাই দিতেন না। তার সঙ্গে কখনো-সখনো খুচরা আলাপ হতো। বলছিলেন, একা একা ঘরে মন টেকে না। ইত্যাদি। শুরুটা এভাবেই…
নিজের শৈশব, শিলং-চেরাপঞ্জি বেড়ানোর অভিজ্ঞতা লিখতে লিখতে চলে আসে।
কুলদা রায় : লেখার আগে কি কোনো ড্রাফট বা খসড়া করে নিয়েছিলেন? করলে সেটা কি ধরনের ড্রাফট ছিল? না সরাসরিই কাগজ কলম নিয়ে লিখতে বসেছিলেন গল্পটি কোনো ড্রাফট ছাটা?
শাহীন আখতার : আমি কম্পিউটারে লিখি। খসড়া কপি কয়েকটা থাকে। এ গল্পটার বেলায় কেন জানি কম ছিল। খুব বেশি ভাবনা-চিন্তা করতে হয় নাই। এগোচ্ছিল বেশ তরতরিয়ে, অনেকটা আর্শীবাদের মতো।
কুলদা রায় : এই গল্পটি লিখতে কি রাইটার’স ব্লকে পড়েছিলেন? পড়লে সেটা কিভাবে মোকাবেলা করেছিলেন?
শাহীন আখতার : এক বৈঠকে গল্পটা শেষ করার প্রশ্নই ওঠে না। সব মিলিয়ে সপ্তাহ খানেক লেগেছে। লিখতে লিখতে থেমে যাওয়া প্রায়শই হয়। তা চাকরির কারণেও কিছুটা। আপনি রাইটার্স ব্লকের কথা বলেছেন। আমি নিজের ওপর জোর খাটাই না একেবারে। কোনো ডেডলাইনও সামনে রাখি না। নিজের মধ্যে লেখার ইচ্ছাটা তৈরি হলে ফের লিখতে বসি। এ গল্পটায় তেমন কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি।
কুলদা রায় : গল্পটি লেখার আগে বা লেখার মধ্যে বা পরে কারো সঙ্গে কি গল্পটি নিয়ে কথা বলেছিলেন? বলে থাকলে তিনি কি কোনো পরামর্শ নিয়েছিলেন?
শাহীন আখতার : গল্পের প্লট নিয়ে কখনোই আমার আলোচনার সুযোগ হয় না। আমি সম্ভবত চাই-ও না, এ নিয়ে কথা বলতে। বলে ফেললে যদি লিখতে না পারি - ভাবনাটা কুসংস্কারের মতো কাজ করে। সবসময় লিখতে না পারার অনিশ্চয়তায় ভুগি। অবশ্য লেখাটা দাঁড়িয়ে গেলে ইচ্ছা করে - কেউ একজন পড়ে বলুক, কোথায় এর সমস্যা বা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে কিনা। সেই অর্থে আমার তেমন লেখকবন্ধু নেই। লেখকদের সঙ্গে আড্ডা বা ওঠা-বসাও নেই। আমার বেশির ভাগ লেখার মতো এ গল্পটাও ছাপা হওয়ার আগে কেউ পড়েনি।
কুলদা রায় : প্রকাশের আগে কি আপনি এডিটিং করেছেন? করলে কখন, কিভাবে এবং কতোব্র এডিট করেছিলেন?
শাহীন আখতার : এডিটিং তো সবসময়ই করি। এ গল্পটা কয়েক জায়গায় ছাপা হয়েছে। প্রত্যেকবারই কলম পড়েছে এর গায়ে। (অবশ্য এবার ছাড়া)।
কুলদা রায় : এই গল্পটি যখন লিখতে শুরু করেন তখন আর কি কোনো লেখা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন?
কুলদা রায় : না, তখন অন্য কোনো লেখা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম না। ‘ময়ূর সিংহাসন’উপন্যাসটা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করছিলাম।
কুলদা রায় : গল্পের ভাষার মধ্যে একধরনের সরলতা আছে। এই সরলতা গল্পের আখ্যানের মতো সহজ হয়ে বয়ে যায়। তার মধ্যে আবার মাঝে মাঝে ছোটো বাক্য আর উর্দু শব্দের ব্যবহার করেছেন। শব্দগুলো যেন যাদুর মতো কাজ করে। অপ্রয়োজনীয় মনে হয় না। স্বাভাবিক বলে মনে হয়। আপনি কি প্লান করে এই উর্দু শব্দ ব্যবহার করেছেন? না, আপনার স্বভাবসুলভ বাকভঙ্গীতেই এই শব্দের মহাফেজখানা আছে?
শাহীন আখতার : বিগত দশকে ‘সতী ও স্বতন্তরা - বাংলাসাহিত্যে নারী’ নামে তিন খণ্ডের একটি সাহিত্য সংকলন সম্পাদনা করি। দোভাষী সাহিত্য বলে একটা ঘরানা চোখে পড়ে তখন - কবি ভারতচন্দ্রের পর আধুনিক সাহিত্যের মাঝখানের সময়কার। যেমন গোলেবকাওলি, সোনাবান, জৈগুণের পুঁথি, সত্যপীরের পুঁথি। এ ধারার উল্লেখযোগ্য কবিরা হচ্ছেন - ফকির গরিবুল্লাহ, সৈয়দ হামজা প্রমুখ। জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও তারা প্রান্তিক। পরবর্তীকালের বোদ্ধারা (আমার জানামতে এক দীনেশচন্দ্র সেন ছাড়া) দূর দূর করে সাহিত্যের ইতিহাসের পাতা থেকে তাদের খেদিয়ে দিয়েছেন। দোভাষী সাহিত্যে চলতি আরবি-ফারসি শব্দ থাকত প্রচুর। চলতি বলছি এজন্য যে, আমার দাদির মুখে এসব শব্দ শুনতে শুনতে আমরা বড় হয়েছি। এক ধরনের আত্মীয়তাবোধ থেকে, আমি পরবর্তী সময়ে সেই সব শব্দসম্ভার প্রয়োগের চেষ্টা করেছি, এখনো করছি।
কুলদা রায় : গল্পটি লেখার আগে যা ভেবে রেখেছিলেন, লেখার পরে সে রকমটি হয়েছে? না, বদলে গেছে?
শাহীন আখতার : এ গল্পটা শেষ কীভাবে হবে, আসলেই আমি জানতাম না। তাই ভাবনার সঙ্গে শেষাংশের গড়মিল খুঁজে পাইনি।
কুলদা রায় : আপনাকে ধন্যবাদ।
শাহীন আখতার : আপনাকেও ধন্যবাদ।
1 মন্তব্যসমূহ
খুবি সাবলিল বলার ভঙ্গি।
উত্তরমুছুন