কি করে গল্পে একটি চরিত্র নির্মাণ করবেন : ২৫ টি পদক্ষেপ

সাজেদা হক


১) ব্যক্তিত্ব:

প্রত্যেকটা চরিত্র্রের ব্যক্তিত্ব থাকা চাই। নচেত সাদা কাগজে তারা কেবলই কালো অক্ষর। যদি সেই অক্ষরগুলোকে রঙ্গিন ঘুড়ি বানাতে চান, তাহলে চরিত্রে যোগ করুন ব্যক্তিত্ব। ব্যক্তিত্বই চরিত্রকে, এগিয়ে নিয়ে যায়। সুতরাং আপনার কল্পিত চরিত্রের ব্যক্তিত্ব নির্নয় করার দায়িত্ব আপনারই।


২) চরিত্রের বিজ্ঞাপন দিন:

চরিত্রের বিজ্ঞাপন দিন। মানে নিজের ঢোল নিজে পেটানো আর কি! ভাবছেন কিভাবে? আপনার চরিত্রকে দিয়ে কোন কিছুর প্রসংশা করুন। বলুন, বাহ! কি চমতকার আপনার বাড়িটি! হ্যা, ঠিক এমনটাই আমারও পছন্দ। এমন ছোট ছোট ঢেউ খেলানো চুলই আমার ভীষন পছন্দের। আবার বলাতে শাড়িতে লাল রঙ্গের বাহার আমার একদম ভালো লাগে না, কিন্তু নীল কিংবা সবুজে আমার আপত্তি নেই, যেমনটি দেখছেন আমার পোশাকে। আমি আসলে এমনটাই ভালোবাসি। বোঝা গেল বিষয়টা?

৩) উজ্জীবিত করুণ:

চরিত্রের নিজস্ব কিছু প্রয়োজন থাকে। সেইসব প্রয়োজনই তাদেরকে উজ্জীবিত করে। হয়তো গোটা উপন্যাস জুড়েই চরিত্রটি তার প্রয়োজনকে মেটানোর চেষ্টা করে। মূলত এই চাওয়া, ইচ্ছাপূরণই গল্পের প্রাথমিক স্তরের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কোন কোন চরিত্র তার সাধ্যমত অণ্যের সেবা করছে। আবার কেউ কেউ সাধ্যেরও বেশি চেষ্টা করছে—কারন এমনটা করাই তার স্বভাব। তার এই আচরণই অন্য চরিত্রগুলোকেও উজ্জীবিত করছে। আবার সে নিজেও হয়তো এমন কিছু দেখে বা শূনে উজ্জীবিত হচ্ছেন। মনে আছে তো, ‘পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না’---প্রবাদটি।

৪) ভয় যোগ করুন:

সবাই কিছু না কিছুতে ভয় পায়ই। কেউ পায় ভূতের ভয়, কেউ আবার মৌমাছি, তেলাপোকা, কুকুর, বেড়াল, এমনকি প্রেমেও ভয় পান। কেউ আবার ভয় পান মৃত্যুর। এমন অসংখ্য বিষয় আছে যা ব্যক্তিত্বভেদে মানুষে মানুষে ভিন্ন। এই নানা ধরণের ভয়ের একটি তালিকা করুন। তারপর আপনার চরিত্রের সাথে মিলিয়ে, প্লটের সাথে মিলিয়ে চরিত্রে সেই ভয়কে যোগ করুন নান্দনিকভাবে।

) অন্তর্দ্বন্দ্ব তৈরি করুন:

প্রত্যেকটা চরিত্রের যেহেতু চিন্তা করার ক্ষমতা আছে, সেহেতু সেই চিন্তায় দ্বন্দ্ব তৈরি করুন। চরিত্রটি হয়তো ভাবছে এখনই ভালোবাসি কথা বলেই ফেলি। কিন্তু একইসাথে তার মধ্যে এই দ্বন্দ্বটিও জুড়ে দিন, ভালোবাসাটা প্রত্যাখ্যাত না হয়ে যায়। দ্বন্দ্ব তৈরি করুন ভালো-মন্দে, নীতি-নৈতিকতার, মানবিক-মানসিক, সামাজিক-সীমাবদ্ধতার। যার সাথে লড়াই করবে সে নিজেই। অন্তর্দ্বন্দ্ব যাকে বলবেন অন্যরা।

৬) বাহ্যিক বিবাদ:

এবার অন্তর্দ্বন্দ্ব নয়, শুরু করুন বাহ্যিক বিবাদও। পুরানো যুদ্ধের ক্ষত, একটি ক্ষতিগ্রস্ত মহাকাশযান মেরামত করার দ্বন্দ্ব কিংবা একটি রহস্যময় খলনায়কে কারাতে কৌশলের বাহ্যিক দ্বন্দ্ব তৈরি করুন। লড়াই হোক সমানে সমানে, সমানে অসমানে। বৃদ্ধ-যুবায়, নারী-পুরুষে, চিন্তায়-চেতনায়, আশা-প্রত্যাশার লড়াই হোক, সম্মুখ লড়াই।


৭) নিজেদের সংযুক্ত করুন:

এবার একটি চরিত্রের সাথে আরেকটি চরিত্রের মিলন করান। বন্ধুর সাথে বন্ধুর, শত্রুর সাথে শত্রুর। কিংবা বন্ধুর সাথে শত্রুকে সংযুক্ত করুন। শত্রুর সাথে সংযুক্ত করুন আত্মীয়-স্বজনরূপী বেইমানদের।একে অপরকে সাহায্য করতে দিন। ভাবতে দিন তারা একই উপন্যাসের অংশ, একটি পরিবার। মোট কথা হলো চরিত্রের সাথে চরিত্রের মেলবন্ধন করুন। হোন সে ইতিবাচক মিলন, কিংবা নেতিবাচক।


৮) এবার পাঠককে সংযুক্ত করুন:

ভাঙ্গা আয়নায় কখনও নিজের প্রতিফলন দেখেছেন? কি মনে হয়েছে আপনার?এই প্রশ্নটিই পাঠকের সাথে আপনার উপন্যাসের চরিত্রের সংযোগ স্থাপন করে দেবে। ভাবুন তো, আয়নায় নিজেকে দেখতে কেমন লাগছে আপনার? কি ভাবছেন আপনি? আমি যা দেখছি, তা কি সবাই দেখতে পাচ্ছে, নাকি পায়? সবাই কি একইরকমভাবে ভাবে? এমন অজশ্র ধরণের প্রশ্নের সাহায্যে পাঠককেও আপনার কথাসাহিত্যের চরিত্র বানাতে পারেন। তাহলে আর দেরী কেন, শুরু করুন।


৯) সামান্য জটিলতা যোগ করুন:

যেকোনে সমস্যার একটা সমাধান তো থাকবেই। কিন্তু সেই সমাধানেই একটা জটিলতা তৈরি করুন। খুব সহজেই সমাধান হয়ে গেলে তো আপনার উপন্যাস শেস হয়ে ছোট গল্প হয়ে যাবে, তাই না। তাই সমাধানেও সামান্য সমস্যা তৈরি করুন। জটিলতা তৈরি করুন।পান্তা বুড়ির কথা মনে আছে, ওই যে চোর প্রতিদিন এসে তার পান্তা খেয়ে যায়। সে কিছুতেই বুঝতে পারে না কে সে চোর। তারপর একদিন চোর ধরতে পান্তার হাড়িতে শিং মাছ রাখা, দরজায় গোবর রাখা, আবার উনুনে সুচ রাখার গল্পটা মনে আছে তো....ওভাবে ভাবুন। কি নাজেহালটাই না হলো ব্যাটা চোর। আহা, এমন গল্প পড়েও আনন্দ।


১০) ভালো কিছু ক্ষমতা দিন:

চরিত্রকে ভালো কিছু ক্ষমতা দিন। যেমন: মেয়েটি যতনা সুন্দর তার চেয়েও ভালো নাচতেও পারে। অথবা মেয়েটি রাধেও, চুলও বাধে! যেমন সুন্দর, স্মার্ট, তেমনী বুদ্ধিমান। হতে পারে একদিকে সে গোয়েন্দা প্রধান অন্যদিকে একজন ভালো শিল্পীও। এই গুনটা কেবল সামাজিক বা বাহ্যিক নয়, মানসিকও হতে পারে। একাধারে দুষ্টু হিসেবে খ্যাত চরিত্রেরও ভালো কোন গুন থাকতে পারে। মানে রাখা যায় আর কি।


১১) এবার খারাপ কিছু যোগ করুন:

শার্লক হোমস একজন অসাধারণ গোয়েন্দা, একইসাথে তিনি একজন ভয়ানক মানুষও। আবার সাবলীল ও আবেগপ্রবণ। একটি চরিত্র কেবলই ভালো হতে পারে না যেমন, তেমনি একটি চরিত্র সবসময়ই খারাপ হতে পারে না। এই ভারসাম্যটা রক্ষা করুন।


১২) আওয়াজ দিন:

আপনার কল্পিত চরিত্রগুলোকে তার ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী ‘আওয়াজ’ দিন। যেমন ধরেন, বাংলার বিহার উড়িষ্যার....বলতেই আমরা নবাব সিরাজুদ্দৌলাকেই বুঝি। প্রত্যেকটা চরিত্র যেমন ভিন্ন, তেমনি ভিন্ন তাদের বলার স্টাইল, চলার স্টাইল। এই ভেদটাকে মাথায় রেখেই ডায়ালগগুলোও সেট করে ফেলুন। যেনো যে কোনো পাঠক সহজেই আপনার চরিত্রগুলোর সাথে একাত্ম হয়ে যান।

১৩) চেহারার বর্ননা যোগ করুণ:

‘খসখসে ত্বক, মলিন চেহারা, ময়লা পোশাক, উস্ক-খুস্ক চুল, ছেড়া জুতা আর চোখ দুটি কোঠরে। যেনো কতদিন না খাওয়া। শীর্ণ শরীরের বোঝা বেয়ে চলায় দায় যেনো। তবুও বেছে আছে শরীফ, বাচার আশায় বেছে থাকা সে যে কত কষ্টের, যন্ত্রনার তা এতোদিনে টের পেল সে। তার ছাপ দেহের প্রতিটি অঙ্গে।...এত কষ্টের মাঝেও ঘুরে দাড়াতে চায় সে..কিভাবে? তাই ভাবছে ...এলোমেলো বাসাতে খসখসে চুল উড়লেও ভাবনাটাকে উড়াতে পারে না, সরাতে পারে না। আচ্ছা বাতাস কি তার চিন্তার চাইতেও ক্ষমতাধর?’ এটি কোনো উপন্যাস থেকে নেয়া হয়। তবে হতে পারে। এর চেয়েও ভালো কিছু যোগ করতে পারেন আপনি। নিন, শুরু করে দিন।


১৪) আবেগ দিন:

আবেগী মানুষই আকর্ষণীয়। যারা কেবল নিজেরই নয়, অন্যের দু:খ-কষ্ট, হাসি-কান্না-আনন্দ-বেদনাকে সমানভাবে অনুভব করেন, তাকে বা তাদেরকে ভালোবাসেন সবাই। সুতরাং পাঠকের এই দুর্বলতাটাকে কাজে লাগান। আপনার অঙ্কিত চরিত্রকেও আবেগ দিন। সেও যেনো আবেগী হয়ে পাঠকের অন্তরে ঢুকে পড়েন। যেখানে কেবল যাওয়া আছে-আসা নেই! কি হলো তো?


১৫) রহস্যময়ী করে তুলুন:

চরিত্র সম্পর্কে সব একেবারেই বলে ফেলবেন না। ইঙ্গিত দিয়ে রাখতে পারেন। সেই ইঙ্গিত নিয়েই ভাবতে থাকুক পাঠকরা। চরিত্রকে ঘিরে রহস্য দানা বাধতে থাকুক।

....কেনো তোমার মনে নেই সেদিনের কথা?..কি হয়েছিল, বলে দেবো সবাইকে?

...চুপ চুপ...প্লিজ বলো না। শেষ করো না প্লিজ।

...এবারের মতো ছেড়ে দিলাম, মনে রেখো।

(যাক বাচা গেলো, না হলে যে কি হতো...)

----------এমন হতে পারে। মনে হচ্ছে না, কিছু একটা বলল না লেখক? পাঠক কেন, আপনীও কি আগ্রহী হয়ে উঠছেন না? হুমম, এটাই। এমনই করে রহস্যপূর্ণ করুন আপনার চরিত্রগুলোকেও।


১৬) গোপন বিষয় যোগ করুন:

অতীত কিংবা বর্তমানে করছে, এমন কোনো বিষয় যুক্ত করুন। অতীতে করে থাকলে তার ইঙ্গিত দিন। বর্তমানে করলে সেটা খোলাসা করুন। ভবিষ্যতে করতে চায় এমন কোনো পরিকল্পনাও শেয়ার করতে পারেন পাঠকের সাথে। মোট কথা এক বা একাধিক গোপন বিষয় চরিত্রগুলোতে যোগ হতে পারে।


১৭) বংশানুক্রমিক দোষ/গুন:

কিছু জেনেটিক বা বংশানুক্রমিক দোষ/গুন যুক্ত করুন। এতে করে চরিত্রটি একটি ভারিক্কি পাবে। অতীতের অনেক ঘটনা যোগ করার পটভূমি তৈরি হবে। আবার ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনার সুযোগ সৃষ্টি হবে। 


১৮) অবাক হওয়ার ক্ষমতা থাকুক:

নদীতে একটি লাশ ভাসতে দেখেছে আপনার চরিত্রটি। সেই লাশ দেখেই তার কথা বলা বন্ধ প্রায়। নীরবে নিভৃতে বসে ভাবছে সে, ভাবছে সেই খুনটা করেছে, বহুবছর আগে? আজ এতোবছর পর কোথা থেকে এলো লাশটা? এখন সে মনোহারী দোকানের মালিক। একটা তোতা পাখিও পোষে। ভাবছে এই খুনের বদলে যদি কেউ তার তোতা পাখিটাকে মেরে ফেলে যায়, তাহলে কি করবে সে। ঘটনার আকস্মিকতায় ভীষণভাবে চিন্তিত সে। এমন অনেক বিষয় নিয়ে চিন্তা করার ক্ষমতা দিন, অবাক হওয়ার ক্ষমতা দিন।


১৯) সমন্বয় করুন:

এই যে চমক দিলেন, রহস্য যোগ করলেন, আওয়াজ দিলেন—এসবের সমন্বয় করুন এখন। সব কিছূতেইএকটা সীমাবদ্ধতা আছে, কোনো কিছুই সেই সীমাবদ্ধতার বাইরে আসা উচিত নয়। একটি হত্যা রহস্য গল্পে একজন খুনীকে আপনি যেভাবে চান ঠিক সেইভাবেই পাঠকের সামনে প্রকাশ করুন। সবকিছু যোগ করতে করতে বিভ্রান্ত হবেন না। স্থির থেকে সবকিছুর সম্বয় করুন।


২০) সামান্য ছল করুন:

মহাভারত পড়েছেন? মামা শকুনির ছোট ছোট চাতুরী কত বড় একটি মহাকাব্যে পরিণত হয়েছে ভাবুন। মহাভারতের যুদ্ধ, কুরুক্ষেত্র তৈরিতে মামা শকুনির এই ছল-চাতুরী সবচেয়ে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। অথচ ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে কিন্তু তার অবস্থান সে পরিস্কার করেছে, যে সে যা করছে তা অন্যায় নয়। এমনকি দ্রোপদীর বস্ত্র হরণের সময় উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং ন্যায়েরমূর্তি যুধিষ্ঠির, গুরু দো্নসহ বিখ্যাত সব যোদ্ধা এবং গুনীজনেরা। কিন্তু মামা শকুনীর কুট চালের কাছে তাদের ধর্ম, মানবিকতা, সাহসও হার মেনেছিলো। যার পরিনথি এই মহাকাব্য। সুতরাং আপনার কথাসাহিত্যেও যোগ করুন ছোট ছোট ছল, চাতুরী।


২১)ইতিহাস যোগ করুন:

কথাসাহিত্যে যোগ করুন সামান্য ইতিহাস। কোন স্থানে আপনার প্রধান চরিত্র দাড়িয়ে। সেখানকার বর্ননায় ইতিহাস যোগ করতে পারেন। কারো সাথে দেখা করতে গেছে আপনার প্রধান চরিত্র, সে চরিত্রটিকে ঐতিহাসিক কোনো চরিত্র বানাতে পারেন। হতে পারে তা কোনো ঐতিহাসিক ছবি, স্থান, মানুষ, সময়, গাছ, পাখি, জন্তু, ঘোড়া ইত্যাদি।


২২) নাম দিন:

উপন্যাস, গল্প বা সাহিত্যের প্রধান চরিত্রের একটি নাম দিন। যে নাম আপনার কাছে অনন্য বা আপনি কমফোর্ট ফিল করেন, তেমন নাম পছন্দ করুন। কারণ নামের কারণেই অনেক সাহিত্য আপন স্থানে আসীন রয়েছে। যেমন, নবাব সিরাজুদ্দৌলা, দেবদাস, নয়নমনি, এ্যানটনী ফিরিঙ্গি, ফেলুদা, জেমস বন্ড। অনেক সময় শুধুমাত্র নামেই প্রকাশ পায় একটি গল্প বা উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু। সুতরাং প্রধান চরিত্রের ভালো একটি নামকরণ করা লেখক হিসেবে আপনার প্রথম কাজ।


৩) চরিত্রকে বিস্তৃত করুন:

চরিত্রগুলো যত বড় হয়, গল্পে ততই পরিবর্তন আসে- তাই না? ঠিক আছে, আসুক পরিবর্তন। কারণ আপনি ভালো করেই জানেন ঠিক কোন সময়টাতে থামতে হবে! তাহলে আর ভয় কি? ডাল-পালা ছড়াক না চরিত্রগুলো। আরো বিস্তৃত করুন সেগুলোকে। বিরহ, প্রেম, ব্যাথা, বেদনা, বিয়ে, প্রতিশোধ, পুনরুত্থান....এতো এতো বিষয়ের মাজেই তো চরিত্র ঘোরাফেরা করবে, তাই না?


২৪) অনুরাগী করে তুলুন:

চরিত্রকে অনুরাগী করুন। এতে করে চরিত্রের সাথে চরিত্রের সম্পর্কটা একটু গাঢ় হবে। সম্পর্কটা মজবুত হবে পাঠকের সাথেও। ধরেন, গল্পে নায়িকা চলে গেছে এয়ারপোর্টে, যাওয়ার আগে নায়ককে এ কথাটা বলার সময় বের করতে পারে নাই। কিন্তু নায়ক কোনোভাবে জেনে ঠিকই এয়ারপোর্টে পেৌছে গেছে। এবার নায়িকার সাথে নায়কের রাগ-অনুরাগের দৃশ্যটাকে ফুটিয়ে তুলতে ভুলবেন না প্লিজ। ভুলে গেলে পাঠক আহত হবেন যে...। এমন অনুরাগ থাকুক একটু।


২৫) রসায়ন তৈরি করুন:

প্রধান একাধিক চরিত্রের মধ্যে রসায়ন তৈরি করুন। মধ্যাকর্ষনে যেভাবে একে অপরের সাথে আকর্ষিত হয়ে আছে, ঠিক তেমনি করে আপনার সব চরিত্রের সাথে সব চরিত্রের একটি অটুট অবন্ধন একে নিন। যেনো একে অপরের পরিপূরক। কোনো চরিত্রকে বাদ দিয়ে আপনার উপন্যাসটি সম্পন্ন হতো না—এমন বোধ তৈরি হোক আপনার পাঠকের মধ্যে।


২৬) সর্বোপরি আপনি:

আপনি এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র। কারণ আপনিই প্রত্যেকটি চরিত্রকে তৈরি করবেন, প্রাণ দেবেন, দেবেন আনন্দ-হাসি-কান্না-দু:খ-বেদনা। সুতরাং এখানে মহাপরিকল্পনাকারী আপনি। আপনি গল্প এবং চরিত্রকে নতুন রূপ দেবেন। সুতরাং আপনি রূপকারও। আপনিই তৈরি করবেন পিতা বা মাতা, দেবতা, ভাই-ভগিনী-কন্যা-জায়া-জননী। তাইলে আর চুপ কেন, তৈরি হয়ে যান, তাদের জীবন দিতে। চরিত্রগুলোতে আত্মার যোগ দিন। এরপর এগুলোই জীবন পেয়ে ফিরে ফিরে আসবে আপনার কাছেই। কি পারবেন না, হ্যা, অবশ্যই পারবেন। আপনিই পারবেন।

লেখক পরিচিতি
সাজেদা হক
সাংবাদিক। লেখক।
ঢাকা। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ