গল্পের কাছে পাঠক কি চায়?


পাঠক কি চায়?- এটা ভেবেই যারা লেখা শুরু করেন, আমার মনে হয় তা্রাই সফল হয়েছেন বারে বারে। পাঠকের চাহিদার কথা, চাওয়ার কথা ভালোবাসার কথা, পাওয়ার কথা যারা বুঝতে শিখেছেন তাদের জন্য গল্প লেখা, বা উপন্যাস তৈরি মহজ হয়ে গেছে। আর এটাই মূল মন্ত্র। পাঠকের চাহিদার কথা মাথায় রেখে লিখেতে হবে। লেখার সময় বার বার ভাবতে হবে, পাঠক এটাকে কিভাবে দেখতে চায়?



সমাপ্তি হোক সন্তোষজনক:

শুরু বা মধ্যভাগ যাই হোক না কেন, শেষ কিন্তু পাঠকের ইচ্ছা মতোই হোয়া ভালো। মনে আছে হুময়ান আহমেদের কোথাও কেউ নেই এর কথা-বাকেরের ফাসি দিলো গল্পকার কিন্তু তার প্রতিবাদে মিছিল করলো, মিটিং করলো পাঠক, দর্শকরা। এটাই হচ্ছে লেখকের শক্তি। পাঠককে এমনভাবে গল্পের যুক্ত করতে হবে, যাতে সে তার নিজের জীবনের ঘটনা মনে করে। কারণ পাঠক আপনার বই পড়ছে, কারণ একটা অলিখিত প্রতিশ্রুতি আপনি কিন্তু পাঠক কে দিয়েই ফেলেছেন ইতিমধ্যে যে, তিনি বইটি পড়ে মুগ্ধ হবেন। সুতরাং পাঠকের কাছে করা আপনার এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার এ্টাই মোক্ষম সময়। একটা কথা তো প্রচলিত আছে....শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। এই নীতিটি মেনে চলুন।

গল্পের দুই-তৃতীয়াংশ ভাগের পর থেকেই পাঠকরা একটা সমাপ্তির কথা ভেবেই থাকেন। পাঠকের এই চাহিদাটার কথা মাথায় রেখেই সেরকম একটি জায়গা থেকে সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার শুরু করাটাই ভালো।

তারপরো যদি আপনার কোনো সাহায্য লাগে, তাহলে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন নিচের কয়েকটি পয়েন্টে:

১. বিচ্ছিন্নতা
২. মোকবিলা
৩. অন্ধকারাচ্ছন্ন
৪. পছন্দ
৫. নাটকীয় মোড় এবং
৬. ঘুরে দাড়ানো/সমাধান

এবারে আসুন, একটু বিস্তারে বিষয়গুলি আলোচনা করি।

১. বিচ্ছিন্নতা:

হাজারো মানুষের ভীড়েও আপনার নায়ক একা। এটা আপনাকে গল্পে স্টাবলিস্ট করতে হবে। হাজারো মানুষ, হাজারো কাজের মাঝে সে একা, তার একাকীত্বকে ভালো করে ফুটিয়ে তুলতে হবে আপনার খুরধার লেখনীর মাধ্যমে।


২. মোকাবিলা:

গল্পের প্রধান চরিত্রকে সব ধরণের সমস্যার সাথে স্বত:স্ফুর্ত মোকাবিলা করতে দিন। যেমন ধরেন কপালের দোষ, অভিশাপ, যুদ্ধ, কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বি কারো কুট চালের মোক্ষম জবাব দেয়ার ক্ষমতা দিন।


৩. অন্ধকারাচ্ছন্ন:
প্রধান চরিত্রের উপর এত বেশী চাপ সৃষ্টি করুন, তাকে এতো বেশিী লাঞ্চনা, যন্ত্রণা আর নির্যাতনের শিকার করুন যাতে যে চোখে শর্ষে ফুল দেখতে পায়। অনেক সমস্যা কিন্তু কোনো কিচুর সমাধান খুজে পাচ্ছেন না, দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করুন।


৪. পছন্দ:

এমন পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি পছন্দ দিন। নায়কের মাধ্যমে পাঠকদের সামনে তুলে ধরুন। পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য এমন উপায় বের করুন যা, সাধারণত হয় না। এখানে আপনি নতুনত্ব যোগ করতে পারেন। এই েয বিপদ থেকে উদ্ধার হোয়ার নতুন উপায় চিন্তা করছে আপনার নায়ক, সাবলিলভাবে—এটা সাধারণ পাঠককে আকৃষ্ট করবে। সেই সাথে নায়ক কেন এই সমাধানের দিকে যাচ্ছে তার এক বা একাধিক ব্যাখাও এখানে দিয়ে দিতে পারেন।


৫. নাটকীয় মোড়:

এবারে যোগ করুন নাটকীয় মোড়। নায়কের এই অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থায়, সমাধানের উদ্দেশ্যে নেয়া পদক্ষের মাধ্যমে ঝড় তুলুন, ক্লাইমেক্স তৈরি করুন। চোরের দশদিন, সাধুর একদিন—প্রবাদ মনে আছে আপনাদের? সেই প্রবাদ কে মাথায় রেখে গল্প সাজান। কথাসাহিত্যে যোগ করুন উতকন্ঠাময় নাটকীয়তা। নায়ক এখানেও জীবনের ঝুকিও নিতে পারে। কিংবা বাজিও ধরতে পারে। মহাভারতের কথা মনে আছে, শকুনী মামার কুট চালে পড়ে, কিভাবে পাচ পান্ডব তাদের সর্বস্ব বাজিতে হেরে গেলো? ওই প্লটটার কথা ভাবুন। এটাকে বলে নাটকীয় মোড়। আপনার গল্পেও যোগ করতে পারেন এমন একটি ব্যতিক্রম সংযোগ।


৬. সমাধান:

এবার যুদ্ধ। যুদ্ধ জয়ের পালা। যা হবার, তা হয়েছে। এখন আপনি সমাধানের দিকে এগুতে থাকেন। সমাধান করুন সবগুলো পয়েন্ট ধরে ধরে। বাদ রাখবেন না কোনকিছু। এবং সমাধানের ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখুন অভিনবত্ব যুক্ত করতে। নতুনত্ব আনার চেষ্টা করুন ইতি টানার সময়।


এই পয়েন্টগুলি মাথায় রেখেই লিখে ফেলতে পারেন, দারুণ একটি উপন্যাস। তাহলে আর বসে আছেন কেন? তারতারি বসে পড়ুন, খাতা আর কলম নিয়ে। ও ভুলে গেছিলাম, কম্পিউটারেও বসতে পারেন!

লেখক পরিচিতি
সাজেদা হক
সাংবাদিক। লেখক।
ঢাকা। 





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ