সাজেদা হক-কথাসাহিত্যে প্লট বা ক্লাইমেক্স তৈরির ৪ উপায়


অনেক ঔপন্যাসিকই তাদের গল্পে কেবল একটি বিষয়কে বিস্ফোরক ইভেন্ট বা ক্লাইমেক্স হিসেবে উপস্থাপন করেন। এটা আসলে একটি উপায়। উপন্যাসের ক্লামেক্সের উন্নয়নে আসলে চারটি উপায়কে বিবেচনায় রাখেন বিশ্বখ্যাত লেখকেরা।

১. চরম পরিণতিমূলক মুহূর্ত
২. সত্যের মুখোমুখি (প্রধান চরিত্রের)
৩. চরম পরিণতিমূলক মুহূর্তের প্রভাব (প্রধান চরিত্রের উপর)
৪. চরম পরিণতির ফলাফল (খলনায়ক পরাজিত)



উপন্যাস শুরুর আগেই অনেক লেখকই সেটির একটি সমাপ্তি বা পরিণতি ভেবেই রাখেন। অনেক সময়, উপরের চারটি উপাদানই দৃশ্যের ধারাবাহিকতায় সাজানো হয়। প্রায়শই, অদেখা কোনো স্থানে গিয়েই কাহিনীর ইতি টানতে চান লেখকেরা। সেই ক্ষেত্রে, সমাধানের সহজ ও চূড়ান্ত উপায় নির্ধারণ করতে সাহায্য নিতে হবে এ্যাক্ট ৩-এর।

যুদ্ধ কিংবা দৈত্য-দানবের কাহিনীতে একরকমভাবে পরিণতির কথা ভাবেন সাহিত্যিকরা। কিন্তু এসব উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলা কাহিনীগুলোতে থাকে চমকের পর চমক। এর উদাহরণ দেয়া যেতে পারে সাম্প্রতিককালের আলোচিত গল্প দ্য লর্ড অব দ্য রিংস কিংবা হ্যারি পটার-এর মতো সাহিত্যগুলোর কথা।

অনেক সময় আমরা কি দেখি, সিনেমা কাহিনীগুলোতে শেষ দৃশ্যের জন্য বিশেষ স্থান বাছাই করা হয়। ডিজাইন করা হয় নতুন সেটের। এমনকি পোশাক, চরিত্রের অবস্থান সব কিছু ভিন্ন একটি ছকে দেখানো হয়। দর্শক বুঝেই যান, কাহিনী সমাপ্তির দিকেই এগুচ্ছে। অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যান যে, এখনই যবনিকা হবে। এই যে সেটিংস- বা প্রস্তুতি উপন্যাস বা কথাসহিত্যের ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য। যবনিকার জন্য আপনি আপনার সাহিত্যে নতুন একটি প্লট বিবেচনায় রাখতেই পারেন!

ভাবছেন কিভাবে? চোখ বন্দু করুন, আপনার মূল গল্পটা আবারো ভাবুন। কোথয়া কি হলো, কিভাবে হলো, কে করলো, কি করলো, কোথায় ঘটল এসব? এরপর নিজেকেই প্রশ্ন করুন আপনার গল্পে ঠিক কোন জায়গাটাতে চরিত্রগুলোকে একত্রি করলে গল্পটার ইতি টানা যায়! কি পেয়েছেন মনমতো স্থানটি? তাহলে আর দেরী কেন, দ্রুত চলে যান আপনার কল্পিত চরিত্রগুলোকে নিয়ে! লিখে ফেলুন টান টান উত্তেজনাময় পরিসমাপ্তি।

এখনও কষ্ট হচ্ছে বুঝতে? তাহলে আরো একটু খুলেই বলি। ধরেন আপনি একটি ছোট বাচ্চাকে নিয়ে গল্পটি দাড় করিয়েছেন, তাহলে এই গল্পটির ইতি আপনি খেলার মাঠে গিয়েও করতে পারেন। আবার ধরেন, আপনার গল্পের নায়ক একজন ব্যর্থ প্রেমিক, গল্পের সমাপ্তিতে তাকে পৌছে দিন সাফল্যের সর্বেোচ্চ শেখরে। কি, দাড়িয়ে গেলো তো একটা অসাধারণ উপন্যাস, তাই না।


চরম পরিণতিমূলক মুহুর্ত:

একটু আগেই বলেছিলাম না, অ্যাক্ট ৩ এর সাহায্য নিন। এবার আসুন অ্যাক্ট ৩ আসলে কি? এটি আসলে একসাথে পুরো বইকে বলা হচ্ছে। মানে আপনার গল্পে ৩টি জিনিস থাকতে হবে, ১. শুরু, ২. মধ্য, এবং ৩. শেষ। এটাই হলো অ্যাক্ট ৩। গল্পের শুরু, ক্লাইমেক্স এবং সমাপ্তি- এই তিনের পরিশীলিত সমন্বয়ে গড়ে উঠে চমতকার একটি উপন্যাস।


সত্যের মুখোমুখি :

এটাকে বলা হয় ‘মোমেন্ট অব ট্রুথ’। সত্যের মুখোমুখি হওয়া। আপনি আপনার গল্পে যেভাবে দ্বন্দ্ব থৈরি করেছেন, যে চরিত্রের মাধ্যমে তা ছড়িয়েছেন, নায়ক বা নায়িকাকে যেভাবে ভুল বুঝিয়েছেন, এবার সময় এসেছে সত্যের মুখোমুখি হওয়ার। পছন্দের একটি স্থান নিধ্যারণ করে যেখানেই সব সত্যের উম্মোচন করুন। সব চরিত্রকে এক জায়গাতেও করতে পারেন। নায়িকা নায়ককে ভুল বুঝে থাকলে, যার মাধ্যমে এই ভুল বোঝাবুঝিটা ছড়িয়েছেন, তাকে সামনে নিয়ে আসতে পারেন। স্বীকারোক্তি দিতে পারেন, যে সেই এসব কিছুর জন্য দায়ী। অর্থ বা সম্পত্তি বা সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য সে এসব করেছে---এমনটাও জানাতে পারেন।


চরম পরিণতিমূলক মুহূর্তের প্রভাব:

সত্য উম্মোচিত হলো তো। এবার আপনি আপনার নায়কের কাছে নিয়ে যান পাঠকদের। বলেন, আপনার প্রধান চরিত্রের কষ্টের কথা। তার উপর বয়ে যাওয়া লাঞ্চনা, বঞ্চনার বিবরণ দিতে পারেন এখানে। বলতে পারেন কিভাবে তিনি তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছিলেন। অথচ তার কোনো দোষ ছিল না। শুধু ভুলের স্বীকার হয়ে এতেগুলো বছর বা সময় দয়া-মায়া-ভালোবাসাহীন, অপমান—ঘৃনার জীবন পার করেছেন। এসব বাক্য যোগ করতে পারেন।


চরম পরিণতির ফলাফল

এবার শুধু প্রধান চরিত্রের নয়, এই ঘটনার ফলে আপনার অন্য সব চরিত্রে যে প্রভাব পড়েছে, তা একে একে বর্ননা করুন। যার বা যাদের কারণে এই পরিণতি এবার তার পরিণতি লেখার সময়। খলনায়কের জন্য উপযুক্ত শাস্তি দিন এ পর্যায়ে। তার পরিণতি নিশ্চিত করুন। তারপর..আর কি....অতপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল....।

লেখক পরিচিতি
সাজেদা হক
সাংবাদিক। লেখক।
ঢাকা। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. কি সর্বনাশ! উপন্যাস লেখার টিপস! এমনিতেই পাঠকের চাইতে লেখকের সংখ্যা বেশি তারপর কোচিং সেন্টার চালু হলে লেখকদের কি হবে?

    উত্তরমুছুন