অভিজিৎ সেন
বাইরে প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে দীর্ঘ সময় ধরে। জেলা হাসপাতালের লম্বা ঘরখানার দু-পাশের দেয়াল জুড়ে শয্যা পাতা। পশ্চিমের দেয়ালে বড়ো বড়ো জানালা। ওয়ার্ডের সব শয্যাতেই রোগী আছে। শয্যা ছাড়াও মেঝেতেও বেশ কয়েকজন রোগীকে রাখা হয়েছে।
এখন রাত অন্তত দুটো-আড়াইটে হবে। বিগত আট দিন যাবৎ আমি এই হাসপাতালে আছি। আটদিন আগে অফিসের কাজে শহরের বাইরে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে চৌত্রিশ নম্বর জাতীয় সড়কে রাষ্ট্রীয় পরিবহনের একখানা বাসের সঙ্গে আমাদের জিপের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সেই দুর্ঘটনায় দুজন সহকর্মী সহ আমি আহত হই। তিন জনের মধ্যে আমার আঘাতই গুরুতর। এই মুহূর্তে আমি বিপদমুক্ত। এই গভীর রাতে পিছনের দিকে হেলান দিয়ে আবছা অন্ধকার ওয়ার্ডে আমি রোগীদের দেখার চেষ্টা করছি।
ঘরখানা অন্তত পঞ্চাশ ফুট লম্বা। এই মুহূর্তে ঘরের দুই প্রান্তে দুটো বালব জ্বলছে শুধু। দুই প্রান্তের আলোর নীচে দুজন নার্স তাদের টেবিল-চেয়ারে বসে। দক্ষিণ প্রান্তে যে বসে আছে, তার নাম রোজমেরি। উত্তর প্রান্তের নার্স টেবিলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। রোজমেরি একমনে একটা রেজিস্ত্রারের পাতা ওলটাচ্ছে। বেশির ভাগ রোগীই ঘুমে তলিয়ে আছে অথবা যাতে তারা ঘুমায় ওষুধ দিয়ে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবুও চার-পাঁচ জন রোগীর কাতর 'আঃ-উঃ' শব্দ আমি শুনতে পাচ্ছিলাম।
আমি প্রবল বৃষ্টি খুব ভালোবাসি। বাইরের বৃষ্টির শব্দ এবং মাঝেমধ্যে মেঘের গর্জন, বর্ষা পরিণত হয়ে নামলে যে শব্দে প্রচুর ধারাপাতের অঙ্গীকার থাকে, তেমনি গভীর গুমগুম শব্দ শুনলে অনেক মানুষের মতো আমারও দার্শনিক হতে ইচ্ছা হয়। তখন আদি অন্ত সাত-পাঁচ অনেক কথা ভাবতে থাকি আমি। পশ্চিমের জানালার বাইরে অন্ধকারকে চিরে বিদ্যুতের রেখা দেখা যাচ্ছে কখনো-কখনো সেই আলোয় একশো সওয়াশো হাত দূরের পাঁচিল এবং পাঁচিলের ওপারের সংরক্ষিত বনের উঁচু রোগা গাছগুলোর আন্দোলনও চোখে পড়ছে আমার।
নার্সদের টেবিলের ওপরের আলোগুলো সিলিং থেকে লম্বা তার ঝুলিয়ে টেবিলের একফুট উচ্চতায় নামানো। ফলে রোজমেরির আবছা মুখ এবং আলোকিত বুক শুধু আমি দেখতে পাচ্ছিলাম। রোজমেরির যে অংশ এখন আলোকিত সেই বুক খুব দৃঢ় হলেও, অবয়বে স্নিগ্ধ লাবন্য তেমন নেই। কিন্তু সে খুব কর্তব্যপরায়ণ।
একটা চাকা লাগানো চেয়ারে একজন মানুষকে বসিয়ে হাসপাতালের দুজন কর্মচারী দরজা ঠেলে ভিতরে এল।
'দিদি, পেশেন্ট আছে।'
'আরো পেশেন্ট? কোথায় রাখব বল তো?' রোজমেরি চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়াল। জদিও বাঙালি নয় সে কিন্তু বাংলা ভালোই বলে। একজন বাহককে সে বলল, 'দুখানা কম্বল বের কর।'
কম্বল আনলে রোজমেরি সোজা আমার বেডের কাছে চলে এল। এ জায়গাটা ওয়ার্ডের প্রায় মাঝামাঝি। দুইপাশের শয্যার মাঝখানে হাঁটা-চলার ফুট চারেক খোলা জায়গা। সেখানে একখানা কম্বল পেতে রোজমেরি বলল, 'এখানে নামিয়ে দেও।' তারপরে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, 'একি, ঘুমোননি আপনি?'
বললাম, 'ঘুম আসছে না।'
'শুয়ে পড়ুন, শুয়ে পড়ুন। শুলেই ঘুম আসবে,' বয়লে নিজের টেবিলের দিকে চলে গেল সে।
বাহক দুজন লোকটিকে কষ্ট করে নামাল। দাঁতে দাঁত চাপা একটা যন্ত্রণার শব্দ করে সে কম্বলের ওপর বসল, তারপর নিম্নাঙ্গ ঘষটে পশ্চিম দিকের শয্যার একটা পায়ার সঙ্গে পিঠ ঠেস দিয়ে 'আঃ' করে একটা কাতর শব্দ করল।
আবার সব চুপচাপ, শুধু বৃষ্টির শব্দ। পশ্চিমের দেয়ালের জানালাগুলো সব বন্ধ করে দেওয়া। কাচের ভিতর দিয়ে, অন্ধকার প্রকৃতি জুড়ে যে আলোড়ন, বিদ্যুতের আলোয় সে সব দেখতে পাচ্ছি আমি। দেখতে দেখতে নিজের তুচ্ছ অস্তিত্বের কথাও ভুলে গেলাম, এক সময় বসা অবস্থাতেই তন্দ্রামতো এসে গেল।
খুট করে খুব কাছেই একটু শব্দ হতে আমার বিচ্ছিন্নতা কেটে গেল। একটু পরে বিড়ির ধোঁয়ার উগ্রগন্ধ ছড়িয়ে পড়তে নিজের অস্তিত্ব আর অত তুচ্ছ মনে হল না। তামাকের গন্ধ আমার বিগত আটদিনের বাধ্যতামূলক ধূমপাননিবৃত্ত ফুসফুসকে নিমেষে প্রলুব্ধ করে তুলল। অন্ধকারের মধ্যে নীচের লোকটি ওপাশের বেডের পায়ায় হেলান দিয়ে দুই হাতের আড়ালে বিড়ি লুকিয়ে ধূমপান করছে। লুকানো বিড়ির আগুনের আভায় তার বলিষ্ঠ সবল মুখখানি দেখে আমার মনে হল লোকটি অভিগম্য। আমার ফুসফুস ততক্ষণে অধৈর্য হাহাকার শুরু করেছে।
'বিড়ি আর আছে?' আমি যথাসম্ভব নীচু হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম।
'খাবেন?' কোমরের গেজে থেকে বিড়ির কৌটো বার করল সে।
আমি বললাম, 'দয়া করে ধরিয়ে তারপর দেবেন।'
লোকটি হাতের আড়াল করে লাইটার জ্বেলে বিড়ি ধরাল। হাত বাড়িয়ে জ্বলন্ত বিড়িটা নিয়ে নিয়ে দু-হাতের আড়ালে ধরে খুব দ্রুত টানতে লাগলাম আমি। আট দিন পরে আমাকের ধোঁয়া আমার চোখে জল এনে দিল। কিন্তু ভেজা চোখেও আমি রোজমেরির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছিলাম।
বিড়ি শেষ হলে নিচের গামলায় ফেললাম আমি। বললাম, 'এই ঝড়বৃষ্টির মধ্যে কোথা থেকে এলেন এত রাত্তিরে?'
লোকটি মুখ তুলে বলল, 'মোক শুধাছেন, বাহে? অ-- হাট থিকা ফিরবার পথে টেরাকে ধাক্কা মেরেছে হামার সাইকেলে। ভেবেছিলাম মইরে গেছি, পরে দেখ নো গোঁসাইয়ের কিরপায় এ যাত্রা বেঁচেছি। তবে ডান পাওখানা বোধায় গেছে।'
ক্রমে আরও বিস্তারিত শুনলাম। হাটে-কিনে-হাটে-বেচা পাইকার সে। কখনো-কখনো আগে দাদন করা মাল গ্রাম থেকে হাটে এনেও বিক্রি করে। শহর বাজারের পাইকাররা আবার তার মহাজন। কী জিনিস সে বিক্রি করে? সবজি, শস্য, ডিম, মুরগি, হাঁস, পাঁঠা, ছাগল, ফল ইতাদি যাবতীয় জিনিসেরই কারবারি সে। শহরের বাজারে জেসব জিনিসের কদর আছে, সবই সে কেনে এবং সবই সে বেচ।
মাঝেমধ্যে একজন গোঁসাইয়ের কথা উঠছে। খুবই গোঁসাই-ভরসা মানুষ। গোঁসাই তার কাছে ভগবান। কী করে তার গোঁসাই? তেমন কিছু নয়, গ্রামের ভিতরে ছোটো একখানা মুদির দোকান আছে। ওই দোকান নাড়াচাড়া করেই সংসার চলে যায়।
বললাম, 'এবার শুয়ে পড়ুন, আমিও শুই।'
'শোব?' লোকটি বলল, আমার শোয়া অ্যানা অসুবিধা আছে। শুবা পারোছি না। আপনে ঘুমান। আঃ! গোঁসাই--গোঁসাই।
একটা সংক্ষিপ্ত কাতর শব্দ করে সে চুপ করে গেল। বাইরে হাওয়ার দাপট কমলেও এখনও অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ে যাচ্ছে। সেই একটানা শব্দের মধ্যে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন সকালে হাসপাতালের স্বাভাবিক কোলাহলের মধ্যে আমার ঘুম ভাঙল। উঠে বসতে প্রথমেই পায়ের কাছে মেঝেতে বসা কাল রাতের সেই লোকটির দিকে আমার নজর পড়ল। ব্যথায় কাতর লোকটি তেমনি বসে আছে। কোমর থেকে ঊর্ধ্বাঙ্গ সে মাঝেমধ্যে এপাশ- ওপাশ করছে আর অস্ফুট আর্তনাদ করে উঠছে। কাল রাতে নিশ্চয়ই তাকে কড়া ডোজের ব্যথা নিরোধক ইনজেকশন দিয়েছিল, এখন সে ইনজেকশনের প্রভাব স্তিমিত হয়ে গেছে। পেচ্ছাবখানায় যাওয়ার জন্য বেড থেকে নিচে নেমে দাঁড়াতেই রোজমেরি দূর থেকে বলল, 'দাঁড়ান, একা যাবেন না।'
আমি বললাম, ধন্যবাদ, ঠিক আছি আজ। ধরতে হবে না।'
পেচ্ছাবখানার আয়নায় আজ আমাকে ভূতের গল্পের চরিত্রের মতো মনে হচ্ছে। পরশু দিন পর্যন্ত মাথায় মুখে ব্যান্ডেজ সহ আমাকে জীবন্ত মমির মতো মনে হচ্ছিল।
পেচ্ছাবখানা থেকে ফিরে এসে রাতের আগন্তুকের সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 'খুব ব্যথা হচ্ছে নাকি?'
চোখ খুলে লোকটি একটু ম্লান হাসল। তার সর্বাঙ্গে প্রকট যন্ত্রণা, তা সত্ত্বেও সে স্থির থাকার চেষ্টা করছিল। তার সহ্যশক্তি যে অন্য অনেকের চেয়ে বেশি, তাতে আমার কোনো সন্দেহ রইল না। ব্যথা যে কী বস্ত, এ ক-দিনে আমি ভালোই জেনেছি। নয় দিন আগে দুর্ঘটনার মুহূর্তে জ্ঞানহারা হলেও যে মুহূর্তে জ্ঞান ফিরেছে আমি ব্যথা বেদনার পৃথক অনুভূতি না বুঝলেও, আমার যে ভীষণ রক্তপাত হচ্ছে, তা বুঝতে পারছিলাম। অপারেশন থিয়েটার থেকে বেডে নিয়ে যাওয়ার পথে আন্দাজে আমার স্ত্রীর হাত চেপে ধরে আমি শুধু বলতে পেরেছিলাম, কলকাতার বাড়িতে কো নো খবর দিও না। তারপর থেকে সারাটা রাত আমি ক্রমাগত চেতন এবং অচেতনের মধ্যে দুলতে দুলতে যে কোনো একটা দিকে পাকাপাকি ঢলে পড়ার প্রস্তুতি চালাতে থাকলাম। ছ-দিন পরে কলকাতায় আমার বোনের বিয়ে ছিল।
হাসপাতালের সারজিক্যাল ওয়ার্ড ব্যথার জগৎ, ব্যথা নিবৃত্তির জগৎও। ব্যথার উপলব্ধি, অভিব্যক্তি এবং ব্যথাকে গ্রহণ করার শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা এক এক জন মানুষের এক এক রকম। কালকের রাত্রে আসা লোকটি যে ব্যথা সহ্য করার পরীক্ষায় প্রথম দিকে থাকবে, এ ব্যাপারটা আমি পরে বুঝেছিলাম। আমি নিজেও যে যথেষ্ট সহ্যশক্তির অধিকারী এ উপলব্ধিও এই দুর্ঘটনার শিকার না হলে আমার ধারণায় আসত না। হাসপাতালে এই ন-দিন অবস্থানে ব্যথার শারীরিক ও মানসিক প্রতিক্রিয়া কত রকম হতে পারে তা বোঝার সুযোগ আমার হয়েছিল। আমার মনে হয়েছে ব্যথা এবং ব্যথাহীনতার মধ্যে তৃতীয় আর একটি স্তর আছে। কী অভিধা নির্দিষ্ট করা যায় তার জন্য? তিতিক্ষা? নিতান্তই সাধারণ শব্দ সহ্যশক্তি? কিংবা কৃচ্ছ্রব্রত? ব্যথাকে ঐশ্বরিক অভিপ্রায় হিসাবে মেনে নেয় এমন লোকও তো আছে। পছন্দ মতো শব্দ খুঁজে পেলাম না।
রোজমেরির টেবিলের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 'কাল রাতে আমার পায়ের কাছে মেঝেতে যাকে ফেলে এলেন, তার কী হয়েছে?
আটটা বাজতে আর বেশি দেরি নেই। রোজমেরি পরবর্তী বদলি নার্সের জন্য সব কাগজপত্র তৈরি করে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। আমি তার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে সে শাসনের সুরে বলল, 'আপনি এমন ডোন্ট কেয়ার ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেন?'
ফের বললাম, 'আমার পায়ের কাছে কাল রাতে যাকে ফেলে রেখে এসেছেন, সে লোকটি প্রচণ্ড ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছে, কিছু করা যায় কি?'
রোজমেরি বলল, সার্জেন মিত্র না এলে কিছু করা যাবে না। পায়ের হাড়ে মাল্টিপল ফ্র্যাকচার। ফিবুলা ভেঙে বেরিয়ে এসেছে, মনে হচ্ছে ফিমার--'
আমি ফিরে এসে লোকটির কাছে দাঁড়ালাম। চোখমুখ বন্ধ করে থাকা লোকটি অস্ফুটে বলল, 'গোঁসাই-- গোঁসাই--'রোজমেরি কথিত ফিমার, ফিবুলার আমি কিছুই বুঝি না। ক-দিন আগে পর্যন্ত ম্যানডিবল ফ্র্যাকচার--দুর্ঘটনায় যা আমার হয়েছে এবং যে কারণে উপর-নিচ দু-পাটি দাঁত স্টিলের তার দিয়ে আটকে ডাক্তাররা আমার তরল ভিন্ন অন্য খাওয়াদাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে--কাকে বলে আমি জানতাম না।
ঘণ্টাখানেক পর ডাক্তার মিত্র এলেন। আমাকে বসে থাকতে দেখে হেসে বললেন, 'বাঃ আজ তো ভালই আছেন দেখছি, গুড।'
তারপরে নীচের লোকটির পায়ের কম্বল সরিয়ে দু-এক জায়গায় হাত দিতেই লোকটি একবারই জান্তব চিৎকার করে উঠল।
রোজমেরির পরিবর্তন এখনও আসেনি। ডাক্তার তার হাত থেকে ফাইল নিয়ে খসখস করে কিছু লিখে বলল, 'এই ইনজেকশনটা এখুনি দিয়ে দিন আর এক্স-রে ঘরে পাঠিয়ে দিন একে।'
লোকটি যে বেডের গায়ে হেলান দিয়েছিল, সেই বেডে বছর দশেকের একটি ছেলে ছিল। তার পায়ে প্লাস্টার। ডাক্তার মিত্র তার দিকে তাকিয়ে বললেন, 'আজ তোকে ছুটি দেব, মানিক।' কুড়ি দিন পরে এসে প্লাস্টার কেটে যাবি।' তারপর রোজমেরির দিকে তাকিয়ে বললেন, এই পেশেন্টের জন্য বেড খালি রাখবেন।'
নিয়ে যাওয়ার ছ-ঘণ্টা পরে আচেতন অবস্থায় ফেরত এল, এতক্ষণে যার নাম জেনেছি আমি, সেই অভয়পদ। সে অবশ্য পুরোপুরি এল না, ডান পা খানা ওটিতেই রেখে এল। বিকেলের দেখা-সাক্ষাতের সময় একজন মধ্যবয়স্ক লোকের সঙ্গে সতেরো-আঠারো বছরের একটি ছেলেও এল অভয়পদকে দেখতে। তখনও জ্ঞান আসেনি অভয়পদর। হাতের ইশারায় ছেলেটিকে কাছে ডেকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'তোমার বাবা?'
সে বলল, 'হ্যাঁ।'
আমি আর কথা খুঁজে পেলাম না। তবুও বললাম, 'কী করো তুমি?'
সে বলল, 'লেবার খাটি।'
বললাম, 'কাল সারারাত খুব কষ্ট পেয়েছে। খুব ''গোঁসাই-গোঁসাই'' করছিল। গোঁসাই কে?'
'গোঁসাই-- হামরার!' গোঁসাই ছেলেটি একটি বিব্রত ভঙ্গিতে বলল।
আমি বললাম, 'তাকে একবার খবর দিও।'
গভীর রাত্রিতে গতকালের মতোই আবার প্রলয়ঙ্কর বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঘুম ভেঙে গেল আমার। সেই অবিরল ধারাপাতের শব্দের মধ্যে অভয়পদের দুর্বল কণ্ঠস্বর আমার কানে এল। গোঁসাইয়ের কাছে সে জল চাইছে। আমি কিছুটা আঁচ করতে পারছিলাম তার কীরকম কষ্ট হচ্ছে। প্রথম রাত্রে আমারও ওই রকম অবস্থাই ছিল। কিন্তু আমার তো কোনো অঙ্গহানীর ঘটনা ছিল না।
একটু পরে টের পেলাম রোজমেরি অভয়পদর বিছানার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।
'জল দেওয়া যাবে না আপনাকে। স্যালাইন যাচ্ছে তো, ওতেই কাজ হবে। এখন ঘুমোন।'
'ডাক্তারবাবুরা কি পাওখান কাইটে বাদ দিয়েছে, দিদি?'
'হ্যাঁ, সে তো আপনাকে বলাই হয়েছিল।'
'না, তাই বলি। অ্যানা জল দিবেন না, দিদি?'
'না, জল খেলে বমি হবে। কষ্ট বেশি হবে।'
'পাওখানায় যে বড়ো ব্যথা হচ্ছে, দিদি?'
'ও তো একটু হবে। অপারেশন হয়েছে তো।'
'না-না, তা কছি না। পাওয়ের গোছে, গোড়ালিতে--'
'ও ঠিক হয়ে যাবে, ঘুমোন আপনি।'
অভয়পদ ঘুমোল কিনা, জানি না। তবে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলে দেখলাম অভয়পদ জেগে আছে। বে ডে র একদিক উঁচু করে তাকে হেলান দিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেইভাবে বসে সে পায়ের শূন্য অংশের দিকে তাকিয়ে আছে। পেচ্ছাবখানায় যাওয়ার আগে আমি তার সামনে দাঁড়ালাম।
'কেমন আছেন আজ? রাত্রে ঘুম হয়েছে?
'জয় নিতাই, ভালো। না, ঘুম হয় নাই।'
চোখমুখের চেহারা মুমূর্ষু, শুধু অভ্যাসবশতই 'ভালো' বলা। স্যালাইন এখনও যাচ্ছে তার শরীরে। হাঁটুর ওপর থেকে কেটে বাদ দেয়া হয়েছে অভয়পদর পা।
তিনদিন পরে অভয়পদের গোঁসাইকে দেখলাম আমি। দীর্ঘ চেহারার একজন গ্রামীণ মানুষ। গলায় একখানা তুলসির মালা। বয়স মনে হল ষাট পার হয়েছে। দীর্ঘ সরল চুল, মাথার পিছনে বাঁ-দিক ঘেঁষে গুঁজে খোঁপা করা হয়েছে। গোঁসাইয়ের চোখদুটো আয়ত এবং শান্ত। জামাকাপড়ে অভয়পদর সম-আর্থিক অবস্থার মানুষ মনে হল আমার।
গোঁসাইকে দেখে অভয়পদ একেবারে হাউহাউ করে কেঁদে উঠল। বয়স্ক পুরুষ মানুষের এমন নির্ভরতা আমি আগে কখনও দেখিনি।
'গোঁসাই কুনঠে গেছিলেন তুমি? হামি এঠে মইরে যাচ্ছি--'
বেডের পাশে গিয়ে ঝুঁকে অভয়পদর মাথাটা দু-হাতের মধ্যে ধরে রাখল গোঁসাই। এ ক-দিনের মধ্যে অভয়পদকে আমি একবারও এমন অধৈর্য কিংবা দিশেহারা হতে দেখিনি। প্রায় সমবয়স্ক একজন মানুষের কাছে এমন সমর্পণ ভাবাই যায় না।
'মাত্র তিন দিনের তংকে বেটির বাড়িত গিছুনু হামি, আর তার মধ্যেই এত সব কাণ্ড কইরে বসি আছেন তুমরা!' গোঁসাই তার মাথায় হাত বুলাতে লাগল।
একটু সময় পরে খানিকটা শান্ত হয়ে অভয়পদ বলল, 'তোমার পায়ের ধুলা দেন গোঁসাই, নালে দেহমন কেছুই শান্ত হবে না।'
গোঁসাই একখানা পা উঁচু করে অভয়পদর শয্যার সামনে ধরল। অভয়পদ হাত দিয়ে তার পা ঘষে ধুলো নিয়ে জিভে ঠেকাল, মাথায় মুছল। বলল, 'কাক ও ক'বার পারি না, কেও বিশ্বাস কইরবে না। এই যে পাওখান নাই, গোঁসাই, ওই পাওখান কিন্তু আছে, ওই পাওয়ে জব্বের বেথা, গোঁসাই। হাঁটু থিকা পাওয়ের পাতা তক মরণ বেথা গোঁসাই!'
গত তিনদিন অনেকবারই আমার কাছে এবং ডাক্তারের কাছে এই অভিযোগ করেছে অভয়পদ। আমি একবার তাকে বলেছিলাম, 'ও আপনার মনের ভুল। পা-ই নেই, তো পায়ে ব্যথা। সব ঠিক হয়ে যাবে।'
অভয়পদ আমার কাছে তখন জানতে চেয়েছিল, 'হামার পাওখান নিয়া ডাক্তার বাবুরা কী কইরবে?'
আমার উত্তর শুনে সে খুব বিমর্ষ হয়ে পড়েছিল। বলেছিল, পাওখানার সৎকাজ হবে না! জ্যান্ত মানুষের পাওখান শিয়াল কুকুরে টানাটানি কইরে খাবে! হা গোঁসাই!'
সেই পা ব্যথা করছে অহর্নিশ। প্রথমে হাসি পেলেও আমার মনে পড়ল এরকম কথা আমি গল্পে পড়েছিলাম। যুদ্ধের হাসপাতালে কাটা পা চুলকোচ্ছিল আহত সৈনিকের। শেষ পর্যন্ত মর্গের ডাঁই করে রাখা মৃত মানুষ এবং ব্যবছিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ভিতর থেকে নির্দিষ্ট পা খানা খুঁজে বের করে চুলকে দিলে সৈনিকটি শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। অল্প বয়সে এই গল্প পড়েছিলাম। তখন মনে হয়েছিল যুদ্ধের আজগুবি গল্প আরেকটা।
কিন্তু অভয়পদর গোঁসাই তার কথা ধৈর্য ধরে শুনল। তারপরে চাদর দিয়ে কোমর অবধি ঢেকে দিল অভয়পদর। পাশে রাখা বোতল থেকে আচমনের মত একটু খানি জল হাতে নিয়ে দুই কোশে কচলে গামলায় ফেলল সে। তারপর অস্তিত্বহীন পায়ের ওপরে সে হাত বুলোতে শুরু করল। হাত বুলোবার সময় তার ঠোঁট বিড়বিড় করতে লাগল। তার আয়ত চোখ দুটিকে এই সময় সাম্নের শূন্যতায় ভাসিয়ে রেখেছিল সে।
আমি অভয়পদর গোঁসাইকে দেখছি। ভারী নিবিষ্ট লোকটি। একাগ্র। অভয়পদর দিকে চোখ পড়তে অবাক হয়ে দেখলাম শান্ত হয়ে গেছে তার আক্ষেপ। চোখ বুজে আসতে আসতে বোধহয় ঘুমিয়েই পড়ল সে। হ্যাঁ, সে ঘুমিয়েই পড়েছে।
গোঁসাই চোখ ফিরিয়ে তাকে ঘুমিয়ে পড়তে দেখেও আরও অনেক সময় ধরে অস্তিত্বহীন পায়ের ওপর হাত বুলাতে থাকল। এমন নিরহংকার অথচ আত্মবিশ্বাসী চোখ তার!
রচনাকাল- ফেব্রুরারি, ২০০৭
বাইরে প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে দীর্ঘ সময় ধরে। জেলা হাসপাতালের লম্বা ঘরখানার দু-পাশের দেয়াল জুড়ে শয্যা পাতা। পশ্চিমের দেয়ালে বড়ো বড়ো জানালা। ওয়ার্ডের সব শয্যাতেই রোগী আছে। শয্যা ছাড়াও মেঝেতেও বেশ কয়েকজন রোগীকে রাখা হয়েছে।
এখন রাত অন্তত দুটো-আড়াইটে হবে। বিগত আট দিন যাবৎ আমি এই হাসপাতালে আছি। আটদিন আগে অফিসের কাজে শহরের বাইরে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে চৌত্রিশ নম্বর জাতীয় সড়কে রাষ্ট্রীয় পরিবহনের একখানা বাসের সঙ্গে আমাদের জিপের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সেই দুর্ঘটনায় দুজন সহকর্মী সহ আমি আহত হই। তিন জনের মধ্যে আমার আঘাতই গুরুতর। এই মুহূর্তে আমি বিপদমুক্ত। এই গভীর রাতে পিছনের দিকে হেলান দিয়ে আবছা অন্ধকার ওয়ার্ডে আমি রোগীদের দেখার চেষ্টা করছি।
ঘরখানা অন্তত পঞ্চাশ ফুট লম্বা। এই মুহূর্তে ঘরের দুই প্রান্তে দুটো বালব জ্বলছে শুধু। দুই প্রান্তের আলোর নীচে দুজন নার্স তাদের টেবিল-চেয়ারে বসে। দক্ষিণ প্রান্তে যে বসে আছে, তার নাম রোজমেরি। উত্তর প্রান্তের নার্স টেবিলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। রোজমেরি একমনে একটা রেজিস্ত্রারের পাতা ওলটাচ্ছে। বেশির ভাগ রোগীই ঘুমে তলিয়ে আছে অথবা যাতে তারা ঘুমায় ওষুধ দিয়ে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবুও চার-পাঁচ জন রোগীর কাতর 'আঃ-উঃ' শব্দ আমি শুনতে পাচ্ছিলাম।
আমি প্রবল বৃষ্টি খুব ভালোবাসি। বাইরের বৃষ্টির শব্দ এবং মাঝেমধ্যে মেঘের গর্জন, বর্ষা পরিণত হয়ে নামলে যে শব্দে প্রচুর ধারাপাতের অঙ্গীকার থাকে, তেমনি গভীর গুমগুম শব্দ শুনলে অনেক মানুষের মতো আমারও দার্শনিক হতে ইচ্ছা হয়। তখন আদি অন্ত সাত-পাঁচ অনেক কথা ভাবতে থাকি আমি। পশ্চিমের জানালার বাইরে অন্ধকারকে চিরে বিদ্যুতের রেখা দেখা যাচ্ছে কখনো-কখনো সেই আলোয় একশো সওয়াশো হাত দূরের পাঁচিল এবং পাঁচিলের ওপারের সংরক্ষিত বনের উঁচু রোগা গাছগুলোর আন্দোলনও চোখে পড়ছে আমার।
নার্সদের টেবিলের ওপরের আলোগুলো সিলিং থেকে লম্বা তার ঝুলিয়ে টেবিলের একফুট উচ্চতায় নামানো। ফলে রোজমেরির আবছা মুখ এবং আলোকিত বুক শুধু আমি দেখতে পাচ্ছিলাম। রোজমেরির যে অংশ এখন আলোকিত সেই বুক খুব দৃঢ় হলেও, অবয়বে স্নিগ্ধ লাবন্য তেমন নেই। কিন্তু সে খুব কর্তব্যপরায়ণ।
একটা চাকা লাগানো চেয়ারে একজন মানুষকে বসিয়ে হাসপাতালের দুজন কর্মচারী দরজা ঠেলে ভিতরে এল।
'দিদি, পেশেন্ট আছে।'
'আরো পেশেন্ট? কোথায় রাখব বল তো?' রোজমেরি চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়াল। জদিও বাঙালি নয় সে কিন্তু বাংলা ভালোই বলে। একজন বাহককে সে বলল, 'দুখানা কম্বল বের কর।'
কম্বল আনলে রোজমেরি সোজা আমার বেডের কাছে চলে এল। এ জায়গাটা ওয়ার্ডের প্রায় মাঝামাঝি। দুইপাশের শয্যার মাঝখানে হাঁটা-চলার ফুট চারেক খোলা জায়গা। সেখানে একখানা কম্বল পেতে রোজমেরি বলল, 'এখানে নামিয়ে দেও।' তারপরে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, 'একি, ঘুমোননি আপনি?'
বললাম, 'ঘুম আসছে না।'
'শুয়ে পড়ুন, শুয়ে পড়ুন। শুলেই ঘুম আসবে,' বয়লে নিজের টেবিলের দিকে চলে গেল সে।
বাহক দুজন লোকটিকে কষ্ট করে নামাল। দাঁতে দাঁত চাপা একটা যন্ত্রণার শব্দ করে সে কম্বলের ওপর বসল, তারপর নিম্নাঙ্গ ঘষটে পশ্চিম দিকের শয্যার একটা পায়ার সঙ্গে পিঠ ঠেস দিয়ে 'আঃ' করে একটা কাতর শব্দ করল।
আবার সব চুপচাপ, শুধু বৃষ্টির শব্দ। পশ্চিমের দেয়ালের জানালাগুলো সব বন্ধ করে দেওয়া। কাচের ভিতর দিয়ে, অন্ধকার প্রকৃতি জুড়ে যে আলোড়ন, বিদ্যুতের আলোয় সে সব দেখতে পাচ্ছি আমি। দেখতে দেখতে নিজের তুচ্ছ অস্তিত্বের কথাও ভুলে গেলাম, এক সময় বসা অবস্থাতেই তন্দ্রামতো এসে গেল।
খুট করে খুব কাছেই একটু শব্দ হতে আমার বিচ্ছিন্নতা কেটে গেল। একটু পরে বিড়ির ধোঁয়ার উগ্রগন্ধ ছড়িয়ে পড়তে নিজের অস্তিত্ব আর অত তুচ্ছ মনে হল না। তামাকের গন্ধ আমার বিগত আটদিনের বাধ্যতামূলক ধূমপাননিবৃত্ত ফুসফুসকে নিমেষে প্রলুব্ধ করে তুলল। অন্ধকারের মধ্যে নীচের লোকটি ওপাশের বেডের পায়ায় হেলান দিয়ে দুই হাতের আড়ালে বিড়ি লুকিয়ে ধূমপান করছে। লুকানো বিড়ির আগুনের আভায় তার বলিষ্ঠ সবল মুখখানি দেখে আমার মনে হল লোকটি অভিগম্য। আমার ফুসফুস ততক্ষণে অধৈর্য হাহাকার শুরু করেছে।
'বিড়ি আর আছে?' আমি যথাসম্ভব নীচু হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম।
'খাবেন?' কোমরের গেজে থেকে বিড়ির কৌটো বার করল সে।
আমি বললাম, 'দয়া করে ধরিয়ে তারপর দেবেন।'
লোকটি হাতের আড়াল করে লাইটার জ্বেলে বিড়ি ধরাল। হাত বাড়িয়ে জ্বলন্ত বিড়িটা নিয়ে নিয়ে দু-হাতের আড়ালে ধরে খুব দ্রুত টানতে লাগলাম আমি। আট দিন পরে আমাকের ধোঁয়া আমার চোখে জল এনে দিল। কিন্তু ভেজা চোখেও আমি রোজমেরির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছিলাম।
বিড়ি শেষ হলে নিচের গামলায় ফেললাম আমি। বললাম, 'এই ঝড়বৃষ্টির মধ্যে কোথা থেকে এলেন এত রাত্তিরে?'
লোকটি মুখ তুলে বলল, 'মোক শুধাছেন, বাহে? অ-- হাট থিকা ফিরবার পথে টেরাকে ধাক্কা মেরেছে হামার সাইকেলে। ভেবেছিলাম মইরে গেছি, পরে দেখ নো গোঁসাইয়ের কিরপায় এ যাত্রা বেঁচেছি। তবে ডান পাওখানা বোধায় গেছে।'
ক্রমে আরও বিস্তারিত শুনলাম। হাটে-কিনে-হাটে-বেচা পাইকার সে। কখনো-কখনো আগে দাদন করা মাল গ্রাম থেকে হাটে এনেও বিক্রি করে। শহর বাজারের পাইকাররা আবার তার মহাজন। কী জিনিস সে বিক্রি করে? সবজি, শস্য, ডিম, মুরগি, হাঁস, পাঁঠা, ছাগল, ফল ইতাদি যাবতীয় জিনিসেরই কারবারি সে। শহরের বাজারে জেসব জিনিসের কদর আছে, সবই সে কেনে এবং সবই সে বেচ।
মাঝেমধ্যে একজন গোঁসাইয়ের কথা উঠছে। খুবই গোঁসাই-ভরসা মানুষ। গোঁসাই তার কাছে ভগবান। কী করে তার গোঁসাই? তেমন কিছু নয়, গ্রামের ভিতরে ছোটো একখানা মুদির দোকান আছে। ওই দোকান নাড়াচাড়া করেই সংসার চলে যায়।
বললাম, 'এবার শুয়ে পড়ুন, আমিও শুই।'
'শোব?' লোকটি বলল, আমার শোয়া অ্যানা অসুবিধা আছে। শুবা পারোছি না। আপনে ঘুমান। আঃ! গোঁসাই--গোঁসাই।
একটা সংক্ষিপ্ত কাতর শব্দ করে সে চুপ করে গেল। বাইরে হাওয়ার দাপট কমলেও এখনও অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ে যাচ্ছে। সেই একটানা শব্দের মধ্যে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন সকালে হাসপাতালের স্বাভাবিক কোলাহলের মধ্যে আমার ঘুম ভাঙল। উঠে বসতে প্রথমেই পায়ের কাছে মেঝেতে বসা কাল রাতের সেই লোকটির দিকে আমার নজর পড়ল। ব্যথায় কাতর লোকটি তেমনি বসে আছে। কোমর থেকে ঊর্ধ্বাঙ্গ সে মাঝেমধ্যে এপাশ- ওপাশ করছে আর অস্ফুট আর্তনাদ করে উঠছে। কাল রাতে নিশ্চয়ই তাকে কড়া ডোজের ব্যথা নিরোধক ইনজেকশন দিয়েছিল, এখন সে ইনজেকশনের প্রভাব স্তিমিত হয়ে গেছে। পেচ্ছাবখানায় যাওয়ার জন্য বেড থেকে নিচে নেমে দাঁড়াতেই রোজমেরি দূর থেকে বলল, 'দাঁড়ান, একা যাবেন না।'
আমি বললাম, ধন্যবাদ, ঠিক আছি আজ। ধরতে হবে না।'
পেচ্ছাবখানার আয়নায় আজ আমাকে ভূতের গল্পের চরিত্রের মতো মনে হচ্ছে। পরশু দিন পর্যন্ত মাথায় মুখে ব্যান্ডেজ সহ আমাকে জীবন্ত মমির মতো মনে হচ্ছিল।
পেচ্ছাবখানা থেকে ফিরে এসে রাতের আগন্তুকের সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 'খুব ব্যথা হচ্ছে নাকি?'
চোখ খুলে লোকটি একটু ম্লান হাসল। তার সর্বাঙ্গে প্রকট যন্ত্রণা, তা সত্ত্বেও সে স্থির থাকার চেষ্টা করছিল। তার সহ্যশক্তি যে অন্য অনেকের চেয়ে বেশি, তাতে আমার কোনো সন্দেহ রইল না। ব্যথা যে কী বস্ত, এ ক-দিনে আমি ভালোই জেনেছি। নয় দিন আগে দুর্ঘটনার মুহূর্তে জ্ঞানহারা হলেও যে মুহূর্তে জ্ঞান ফিরেছে আমি ব্যথা বেদনার পৃথক অনুভূতি না বুঝলেও, আমার যে ভীষণ রক্তপাত হচ্ছে, তা বুঝতে পারছিলাম। অপারেশন থিয়েটার থেকে বেডে নিয়ে যাওয়ার পথে আন্দাজে আমার স্ত্রীর হাত চেপে ধরে আমি শুধু বলতে পেরেছিলাম, কলকাতার বাড়িতে কো নো খবর দিও না। তারপর থেকে সারাটা রাত আমি ক্রমাগত চেতন এবং অচেতনের মধ্যে দুলতে দুলতে যে কোনো একটা দিকে পাকাপাকি ঢলে পড়ার প্রস্তুতি চালাতে থাকলাম। ছ-দিন পরে কলকাতায় আমার বোনের বিয়ে ছিল।
হাসপাতালের সারজিক্যাল ওয়ার্ড ব্যথার জগৎ, ব্যথা নিবৃত্তির জগৎও। ব্যথার উপলব্ধি, অভিব্যক্তি এবং ব্যথাকে গ্রহণ করার শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা এক এক জন মানুষের এক এক রকম। কালকের রাত্রে আসা লোকটি যে ব্যথা সহ্য করার পরীক্ষায় প্রথম দিকে থাকবে, এ ব্যাপারটা আমি পরে বুঝেছিলাম। আমি নিজেও যে যথেষ্ট সহ্যশক্তির অধিকারী এ উপলব্ধিও এই দুর্ঘটনার শিকার না হলে আমার ধারণায় আসত না। হাসপাতালে এই ন-দিন অবস্থানে ব্যথার শারীরিক ও মানসিক প্রতিক্রিয়া কত রকম হতে পারে তা বোঝার সুযোগ আমার হয়েছিল। আমার মনে হয়েছে ব্যথা এবং ব্যথাহীনতার মধ্যে তৃতীয় আর একটি স্তর আছে। কী অভিধা নির্দিষ্ট করা যায় তার জন্য? তিতিক্ষা? নিতান্তই সাধারণ শব্দ সহ্যশক্তি? কিংবা কৃচ্ছ্রব্রত? ব্যথাকে ঐশ্বরিক অভিপ্রায় হিসাবে মেনে নেয় এমন লোকও তো আছে। পছন্দ মতো শব্দ খুঁজে পেলাম না।
রোজমেরির টেবিলের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 'কাল রাতে আমার পায়ের কাছে মেঝেতে যাকে ফেলে এলেন, তার কী হয়েছে?
আটটা বাজতে আর বেশি দেরি নেই। রোজমেরি পরবর্তী বদলি নার্সের জন্য সব কাগজপত্র তৈরি করে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। আমি তার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে সে শাসনের সুরে বলল, 'আপনি এমন ডোন্ট কেয়ার ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেন?'
ফের বললাম, 'আমার পায়ের কাছে কাল রাতে যাকে ফেলে রেখে এসেছেন, সে লোকটি প্রচণ্ড ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছে, কিছু করা যায় কি?'
রোজমেরি বলল, সার্জেন মিত্র না এলে কিছু করা যাবে না। পায়ের হাড়ে মাল্টিপল ফ্র্যাকচার। ফিবুলা ভেঙে বেরিয়ে এসেছে, মনে হচ্ছে ফিমার--'
আমি ফিরে এসে লোকটির কাছে দাঁড়ালাম। চোখমুখ বন্ধ করে থাকা লোকটি অস্ফুটে বলল, 'গোঁসাই-- গোঁসাই--'রোজমেরি কথিত ফিমার, ফিবুলার আমি কিছুই বুঝি না। ক-দিন আগে পর্যন্ত ম্যানডিবল ফ্র্যাকচার--দুর্ঘটনায় যা আমার হয়েছে এবং যে কারণে উপর-নিচ দু-পাটি দাঁত স্টিলের তার দিয়ে আটকে ডাক্তাররা আমার তরল ভিন্ন অন্য খাওয়াদাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে--কাকে বলে আমি জানতাম না।
ঘণ্টাখানেক পর ডাক্তার মিত্র এলেন। আমাকে বসে থাকতে দেখে হেসে বললেন, 'বাঃ আজ তো ভালই আছেন দেখছি, গুড।'
তারপরে নীচের লোকটির পায়ের কম্বল সরিয়ে দু-এক জায়গায় হাত দিতেই লোকটি একবারই জান্তব চিৎকার করে উঠল।
রোজমেরির পরিবর্তন এখনও আসেনি। ডাক্তার তার হাত থেকে ফাইল নিয়ে খসখস করে কিছু লিখে বলল, 'এই ইনজেকশনটা এখুনি দিয়ে দিন আর এক্স-রে ঘরে পাঠিয়ে দিন একে।'
লোকটি যে বেডের গায়ে হেলান দিয়েছিল, সেই বেডে বছর দশেকের একটি ছেলে ছিল। তার পায়ে প্লাস্টার। ডাক্তার মিত্র তার দিকে তাকিয়ে বললেন, 'আজ তোকে ছুটি দেব, মানিক।' কুড়ি দিন পরে এসে প্লাস্টার কেটে যাবি।' তারপর রোজমেরির দিকে তাকিয়ে বললেন, এই পেশেন্টের জন্য বেড খালি রাখবেন।'
নিয়ে যাওয়ার ছ-ঘণ্টা পরে আচেতন অবস্থায় ফেরত এল, এতক্ষণে যার নাম জেনেছি আমি, সেই অভয়পদ। সে অবশ্য পুরোপুরি এল না, ডান পা খানা ওটিতেই রেখে এল। বিকেলের দেখা-সাক্ষাতের সময় একজন মধ্যবয়স্ক লোকের সঙ্গে সতেরো-আঠারো বছরের একটি ছেলেও এল অভয়পদকে দেখতে। তখনও জ্ঞান আসেনি অভয়পদর। হাতের ইশারায় ছেলেটিকে কাছে ডেকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'তোমার বাবা?'
সে বলল, 'হ্যাঁ।'
আমি আর কথা খুঁজে পেলাম না। তবুও বললাম, 'কী করো তুমি?'
সে বলল, 'লেবার খাটি।'
বললাম, 'কাল সারারাত খুব কষ্ট পেয়েছে। খুব ''গোঁসাই-গোঁসাই'' করছিল। গোঁসাই কে?'
'গোঁসাই-- হামরার!' গোঁসাই ছেলেটি একটি বিব্রত ভঙ্গিতে বলল।
আমি বললাম, 'তাকে একবার খবর দিও।'
গভীর রাত্রিতে গতকালের মতোই আবার প্রলয়ঙ্কর বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঘুম ভেঙে গেল আমার। সেই অবিরল ধারাপাতের শব্দের মধ্যে অভয়পদের দুর্বল কণ্ঠস্বর আমার কানে এল। গোঁসাইয়ের কাছে সে জল চাইছে। আমি কিছুটা আঁচ করতে পারছিলাম তার কীরকম কষ্ট হচ্ছে। প্রথম রাত্রে আমারও ওই রকম অবস্থাই ছিল। কিন্তু আমার তো কোনো অঙ্গহানীর ঘটনা ছিল না।
একটু পরে টের পেলাম রোজমেরি অভয়পদর বিছানার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।
'জল দেওয়া যাবে না আপনাকে। স্যালাইন যাচ্ছে তো, ওতেই কাজ হবে। এখন ঘুমোন।'
'ডাক্তারবাবুরা কি পাওখান কাইটে বাদ দিয়েছে, দিদি?'
'হ্যাঁ, সে তো আপনাকে বলাই হয়েছিল।'
'না, তাই বলি। অ্যানা জল দিবেন না, দিদি?'
'না, জল খেলে বমি হবে। কষ্ট বেশি হবে।'
'পাওখানায় যে বড়ো ব্যথা হচ্ছে, দিদি?'
'ও তো একটু হবে। অপারেশন হয়েছে তো।'
'না-না, তা কছি না। পাওয়ের গোছে, গোড়ালিতে--'
'ও ঠিক হয়ে যাবে, ঘুমোন আপনি।'
অভয়পদ ঘুমোল কিনা, জানি না। তবে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলে দেখলাম অভয়পদ জেগে আছে। বে ডে র একদিক উঁচু করে তাকে হেলান দিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেইভাবে বসে সে পায়ের শূন্য অংশের দিকে তাকিয়ে আছে। পেচ্ছাবখানায় যাওয়ার আগে আমি তার সামনে দাঁড়ালাম।
'কেমন আছেন আজ? রাত্রে ঘুম হয়েছে?
'জয় নিতাই, ভালো। না, ঘুম হয় নাই।'
চোখমুখের চেহারা মুমূর্ষু, শুধু অভ্যাসবশতই 'ভালো' বলা। স্যালাইন এখনও যাচ্ছে তার শরীরে। হাঁটুর ওপর থেকে কেটে বাদ দেয়া হয়েছে অভয়পদর পা।
তিনদিন পরে অভয়পদের গোঁসাইকে দেখলাম আমি। দীর্ঘ চেহারার একজন গ্রামীণ মানুষ। গলায় একখানা তুলসির মালা। বয়স মনে হল ষাট পার হয়েছে। দীর্ঘ সরল চুল, মাথার পিছনে বাঁ-দিক ঘেঁষে গুঁজে খোঁপা করা হয়েছে। গোঁসাইয়ের চোখদুটো আয়ত এবং শান্ত। জামাকাপড়ে অভয়পদর সম-আর্থিক অবস্থার মানুষ মনে হল আমার।
গোঁসাইকে দেখে অভয়পদ একেবারে হাউহাউ করে কেঁদে উঠল। বয়স্ক পুরুষ মানুষের এমন নির্ভরতা আমি আগে কখনও দেখিনি।
'গোঁসাই কুনঠে গেছিলেন তুমি? হামি এঠে মইরে যাচ্ছি--'
বেডের পাশে গিয়ে ঝুঁকে অভয়পদর মাথাটা দু-হাতের মধ্যে ধরে রাখল গোঁসাই। এ ক-দিনের মধ্যে অভয়পদকে আমি একবারও এমন অধৈর্য কিংবা দিশেহারা হতে দেখিনি। প্রায় সমবয়স্ক একজন মানুষের কাছে এমন সমর্পণ ভাবাই যায় না।
'মাত্র তিন দিনের তংকে বেটির বাড়িত গিছুনু হামি, আর তার মধ্যেই এত সব কাণ্ড কইরে বসি আছেন তুমরা!' গোঁসাই তার মাথায় হাত বুলাতে লাগল।
একটু সময় পরে খানিকটা শান্ত হয়ে অভয়পদ বলল, 'তোমার পায়ের ধুলা দেন গোঁসাই, নালে দেহমন কেছুই শান্ত হবে না।'
গোঁসাই একখানা পা উঁচু করে অভয়পদর শয্যার সামনে ধরল। অভয়পদ হাত দিয়ে তার পা ঘষে ধুলো নিয়ে জিভে ঠেকাল, মাথায় মুছল। বলল, 'কাক ও ক'বার পারি না, কেও বিশ্বাস কইরবে না। এই যে পাওখান নাই, গোঁসাই, ওই পাওখান কিন্তু আছে, ওই পাওয়ে জব্বের বেথা, গোঁসাই। হাঁটু থিকা পাওয়ের পাতা তক মরণ বেথা গোঁসাই!'
গত তিনদিন অনেকবারই আমার কাছে এবং ডাক্তারের কাছে এই অভিযোগ করেছে অভয়পদ। আমি একবার তাকে বলেছিলাম, 'ও আপনার মনের ভুল। পা-ই নেই, তো পায়ে ব্যথা। সব ঠিক হয়ে যাবে।'
অভয়পদ আমার কাছে তখন জানতে চেয়েছিল, 'হামার পাওখান নিয়া ডাক্তার বাবুরা কী কইরবে?'
আমার উত্তর শুনে সে খুব বিমর্ষ হয়ে পড়েছিল। বলেছিল, পাওখানার সৎকাজ হবে না! জ্যান্ত মানুষের পাওখান শিয়াল কুকুরে টানাটানি কইরে খাবে! হা গোঁসাই!'
সেই পা ব্যথা করছে অহর্নিশ। প্রথমে হাসি পেলেও আমার মনে পড়ল এরকম কথা আমি গল্পে পড়েছিলাম। যুদ্ধের হাসপাতালে কাটা পা চুলকোচ্ছিল আহত সৈনিকের। শেষ পর্যন্ত মর্গের ডাঁই করে রাখা মৃত মানুষ এবং ব্যবছিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ভিতর থেকে নির্দিষ্ট পা খানা খুঁজে বের করে চুলকে দিলে সৈনিকটি শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। অল্প বয়সে এই গল্প পড়েছিলাম। তখন মনে হয়েছিল যুদ্ধের আজগুবি গল্প আরেকটা।
কিন্তু অভয়পদর গোঁসাই তার কথা ধৈর্য ধরে শুনল। তারপরে চাদর দিয়ে কোমর অবধি ঢেকে দিল অভয়পদর। পাশে রাখা বোতল থেকে আচমনের মত একটু খানি জল হাতে নিয়ে দুই কোশে কচলে গামলায় ফেলল সে। তারপর অস্তিত্বহীন পায়ের ওপরে সে হাত বুলোতে শুরু করল। হাত বুলোবার সময় তার ঠোঁট বিড়বিড় করতে লাগল। তার আয়ত চোখ দুটিকে এই সময় সাম্নের শূন্যতায় ভাসিয়ে রেখেছিল সে।
আমি অভয়পদর গোঁসাইকে দেখছি। ভারী নিবিষ্ট লোকটি। একাগ্র। অভয়পদর দিকে চোখ পড়তে অবাক হয়ে দেখলাম শান্ত হয়ে গেছে তার আক্ষেপ। চোখ বুজে আসতে আসতে বোধহয় ঘুমিয়েই পড়ল সে। হ্যাঁ, সে ঘুমিয়েই পড়েছে।
গোঁসাই চোখ ফিরিয়ে তাকে ঘুমিয়ে পড়তে দেখেও আরও অনেক সময় ধরে অস্তিত্বহীন পায়ের ওপর হাত বুলাতে থাকল। এমন নিরহংকার অথচ আত্মবিশ্বাসী চোখ তার!
রচনাকাল- ফেব্রুরারি, ২০০৭
লেখক পরিচিতি
অভিজিৎ সেন
রহু চণ্ডালের হাড়, ছায়ার পাখি, বিদ্যাধরী ও বিবাগী লখিন্দর, নিম্নগতির নদী ইত্যাদি তাঁর রচিত গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস। তবে শুধু উপন্যাসিক হিসাবেই তিনি পরিচিত নন, গল্পের ক্ষেত্রেও তাঁর রয়েছে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান। বাংলা গল্পের ভাণ্ডারে তাঁর ভূমিকা উজ্জ্বল। তাঁর 'দেবাংশী ও অন্যান্য গল্প' একটি উল্লেখযোগ্য ছোটগল্প সংকলন। লেখালেখির জন্য ১৯৯২ সালে পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্কিম পুরস্কার, ২০০৫ সালে পেয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত শরৎচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার। তিনি অভিজিৎ সেন। জন্ম ১৯৪৫ সালের ২৮ জানুয়ারি, বরিশালের কেওড়া গ্রামে। বিকশিত হন ঝাড়গ্রামে, পুরুলিয়ায়, কলকাতায়। পড়াশোনা করেন ইতিহাস নিয়ে। একসময় উগ্রপন্থী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তারপর সেই রাজনীতিতে আস্থা হারান, নিজেকে গুটিয়ে নেন রাজনীতি থেকে। লিখতে শুরু করেন।
2 মন্তব্যসমূহ
এই ব্যাপারটা শুনেছি - অঙ্গহানির পরে মনোবিকার - অস্তিত্ব অনুভব। অনন্য মমতায় লেখা কাহিনি।
উত্তরমুছুনশ্রাবণী দাশগুপ্ত।
অভিজিৎ সেনের আরো গল্প পড়তে চাই।
উত্তরমুছুন