অর্ণবকে অর্ণবের মতো বলতে দেওয়া, ভাবতে দেওয়া, ভাবনার ক্রমপ্রভাব নিয়ে তার সঙ্গ দেওয়ার যাপনটা এক রকম আমুদে আরাম খুঁজে নেওয়ার সগোত্র যদিও, যদিও বেদনাঘটিত বিলাস তারও কিছু জোটে। কখনো কখনো অর্ণব বাতাসে তুড়ি মারে, কখনো নৃত্যপর আস্ফালনে মেতে ওঠে, তার এই নিজস্ব প্রেরণাসম্পন্ন প্রখর উদ্দীপন অনেক কিছু নিজেকে ব্যাখ্যা করে, অনেক কিছু নিজেকে কাটাছেঁড়া করে।
অর্ণব এই মহকুমা শহরের চাকুরে, ইউডি ক্লার্ক। মোটামুটি মাসমাইনে পায়। আমি এক ঠিকাদারের ঊর্ধ্বতন কর্মী। কখনো কাজ থাকে, কখনো থাকে না, কখনো খেতে পাই, কখনো খেতে পাই না। অর্থনৈতিক কোনো নিরাপত্তা নেই। তথাপি অর্ণবের মতো আস্ফানলে যাই না, কোনো রকম বিলাপ মাধুর্যের মুদ্রায় যাই না।
সন্ধ্যার পর থেকে ঢালাও অবসর। মহকুমা শহরের নানা স্থানে অর্ণবের ইচ্ছাভ্রমণের সঙ্গী হতে হয় আমাকে। অর্ণবের বয়স পঁয়তাল্লিশ হয়ে গেছে। আমিও ওই বয়েস দু’এক বছর ছেড়ে এসেছি। অর্ণবরা অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠিত মানুষ, কিন্তু এর মতো বেদনাবিলাপের তেমন কোনো আঁধার পাই না, ও ঠিক আনুকূল্য খুঁজে নেয়, সঙ্গে করে যেখানে-সেখানে নিয়েও যায় আমাকে।
আমি ওর সঙ্গে মজাটাকে চেটে নিই। ওর পাঁচটায় অফিস শেষ! আমাকে উলুবেড়িয়া কোর্টগোড়ায় দাঁড় করিয়ে রেখেছিল দশ মিনিট। ও রিকশা নিয়ে এল। আমি উঠে পড়লাম ওর পাশে। এবার আমরা কোথায় কোথায় যাব, এবার থেকে আমাকে আর ভাবতে হবে না।
প্রথমেই আমাকে সিগারেট বাড়িয়ে দিল। আমি প্রথমে না করলাম, দ্বিতীয়বারের অনুরোধে নিলাম। এটুকু বুঝি, অর্ণবের ইচ্ছার ভেতরই আমার এই সঙ্গ দেওয়া, আমি কত হ্রস্ব, অনতিক্রম্য। ওর সহজ পরিক্রমায় আমি নিজেকে ছেড়ে দিতেই ভালোবাসি। ও যেখানে-যেখানে যাবে, আমিও তার ইচ্ছায় যাব, ও যা করবে তাতে আমার সহযোগ থাকবে, সেসব আমার ইচ্ছার অনুসারী নয়।
চা দোকানে বসে অর্ণব বলল, ‘আমি কি একটু রোগা হয়েছি?’
আমি বললাম, ‘না তো!’
‘আমার ত্বক দেখে তোর কী মনে হয়? ঠিকঠাক আছে?’
‘ঠিকই আছে তো।’
‘পেটে খিদে থাকে সব সময়। সোমাকে ফোনে বলেছি আজ একটু মাটন আনাতে। সকাল থেকেই কেমন জিভটা নোনতা লাগছে, বুঝতে পারছি মাটন খাওয়ার ইচ্ছে।_তুই কি এটা ভালো করে বুঝেছিস রঞ্জন, আমার সেই অর্থে ঘনিষ্ঠ বন্ধু কেউ নেই।’
‘কতবার এ কথা বলবি?’
‘আহ্! তুই ব্যাপারটা ঠিকঠাক বুঝতে পারছিস না_আমাকে অনেকেই পছন্দ করে, বন্ধু ভাবে, কিন্তু কতজন আর কাছের বন্ধু হতে পারে বল। আমি যে কথাটা বলছি, বুঝতে পেরেছিস?’
‘হ্যাঁ রে।’
‘আমার কিন্তু টাকা-পয়সার সমস্যা নেই।’
‘সে জানি।’
‘সোমা তিরিশ হাজারের কাছাকাছি মাইনে পায়, আর আমি ষোলো। আমার টাকাটা সংসারে দিতে হয় না। সোমার আমার টাকার প্রতি দাবিও কম।’
‘এসব তো জানি।’
‘তবুও বলতে ভালো লাগে।’ অর্ণব আকাশের দিকে চোখ তুলল, ‘ওই দেখ চাঁদ।’
আমি বললাম, ‘পূর্ণিমা।’
‘পূর্ণিমা নাকি? আহা।’ সারা শরীরটা নাচিয়ে উৎফুল্ল হলো অর্ণব। তারপর চায়ে চুমুক দিয়ে বলল অর্ণব, ‘আসলে সমস্যা আমার বেঁচে থাকার আলোহীনতা নিয়ে।’
‘আলোহীনতা?’
‘নতুন করে শুনছিস যেন?’
‘তুই যখন কোনো কিছু ভাবনা উত্থাপন করিস সে তো নতুন কিছু, তার পূর্বোল্লেখও থাকে না, তেমনটা রোমাঞ্চ থাকে তোর উচ্চারণের মধ্যে।’
‘ঠাট্টা করবি না।’
‘সত্যি সত্যি ঠাট্টা করছি না।’
‘আসলে আমার কাছে মেয়েমানুষও সমস্যা নয়, তুড়ি মারলেই কাছে চলে আসবে। কিন্তু আমার বাসনাকে উন্মূল করবে, উদ্রিক্ত করবে, তেমন করে তারা তৈরি হতে পারেনি।’
‘মানে?’
‘মানে সব মেয়েমানুষ কেমন অসম্পূর্ণ। সোমার মধ্যে আমি আশ্রয় পাই যদিও, তবে বাসনার বিস্ফোরণ তাতে থাকে না। তেমন কোনো মেয়েমানুষ পেলে আমি হয়তো এ জীবন থেকে পালাব।’
একটু চুপ করে যায় অর্ণব। আনমনা হতে দিই। আকাশের চাঁদের দিকে হয়তো তাকিয়ে দেখে অর্ণব আসলে তাকায়, দেখে কি না জানি না। অর্ণবের ভাবনার ক্রম বুঝতে চেষ্টা করি। আমি ওকে ওর মতো থাকতে দিতেই অভ্যাস করেছি, ওর সঙ্গে থাকার যাপন এমনই ও-নির্ভর।
ওর ছায়াসঙ্গী হিসেবে একটি অটোরিকশায় ওর সঙ্গে উঠে বসি। জিজ্ঞাসা করিনি আমরা কোথায় যাব। সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত কাটাতে হবে। আমারও সময় কাটানোর কিছু নেই। অর্ণবকে পাওয়া গিয়েছে, বেশ কেটে যাবে। আগাগোড়া আকাশের চাঁদ সঙ্গে নিয়ে বাঁয়ে নদী, ডানদিকে রেললাইন রেখে অটোরিকশাটা চলেছে দ্রুতগতিতে। মায়াময় এই সান্ধ্য পরিভ্রমণ। বসবাস ও গাছগাছালির গা ঘেঁষে চলেছি আমরা। উনুনের ধোঁয়া, কোথাও ভাতের গন্ধ, কোথাও দুষ্টু ছেলের প্লুতস্বর ফেলে রেখে আমরা সেই ভিখিরির মতো বগলে খাবার থালা নিয়ে বিনি পয়সার ভোজ খেতে চলেছি চাঁদ সঙ্গে নিয়ে তেমনই।
চাঁদ! আহা চাঁদ। জীবনের কত খিন্নতা। এই যে অর্ণব, তার জীবনের কত কিছু উপচে পড়ছে, অথচ কত তার অসম্পূর্ণতা। সোমা অর্ণবের এই আবেগকেই ভালোবেসে এক সময় বিয়ে করেছিল। এখন সে বিশ্বাস করে আবেগ দিয়ে শুধু বাঁচা যায় না। হয়তো আরো কিছু চায় অর্ণবের কাছ থেকে। সেখানে অর্ণব দিতে পারে না, কত দরিদ্র। সোমা অর্ণবের এই অপারগতাকে ক্ষমা করে বুঝি। করে, করেই। সে তার মতো বাড়তি টাকা রোজগার করতে টিউশনি করে, হারমোনিয়াম টেনে গান করে, সহকর্মী বন্ধুদের পিকনিকে যায়, আর খয়ের মেশানো এক-আধটা পান খেতে শেখে। কিংবা ঠিকঠাক ফুলকো লুচি ভাজার দক্ষতা, মেয়ের ইংরেজি টিচারের যত্ন, নিয়ম করে অর্ণবের প্যান্টজামা ইস্ত্রি করতে দেওয়া। এইও তো বেশ। অর্ণবের কাছ থেকে যা সহজে পাওয়া যায়, তার জন্য উন্মুখতাও থাকে তার।
অর্ণবের বাঁচার মধ্যে কত কিছু গিঁট পাকিয়ে যায়। রাতে যথাসময়ে ঘুম আসে না, ঘুম ভাঙে অস্বাভাবিক দেরিতে। সোমার স্বাভাবিক কথাবার্তা অভিযোগের মতো শোনায়। প্রতিদিন মদ খাওয়া নিয়ে সোমাকে কিছু বলতেই দেয় না।
যথারীতি কুলগাছির একটা মদের ঠেকে নিয়ে যায় অর্ণব। হাফ পাঁইট একটা হুইস্কি নেয়। এক প্লেট স্যালাডও।
আমি জানি চাঁদও এসেছে।
অর্ণব লার্জ পেগ নিল, আমাকেও দিল।
এখন চুপচাপ অর্ণব। আগে জিভটাকে ঠিক করে নিতে চায়।
চোঁ করে বেশ খানিকটা খেল। তারপর দু’পিস শসা খেল। তারপর সিগারেট ধরায়। একটু বিষণ্ন ও দুঃখী লাগে অণর্বকে। বিপন্ন তাকে কখনো লাগেনি। তার সম্পন্নতার অধিকার সব কিছুতেই। কথা বলার ভেতর, মদের ঠেকে চিৎকার-চেঁচামেচি করার ভেতর, বাড়তি দৃষ্টি আকর্ষণ করার ভেতর। এসব ব্যাপারে মদের ঠেকও অভ্যস্ত হয়েছে। কেউ বুঝি মোবাইলে হিন্দি গান বাজায়। অর্ণবের চোখে-মুখে বিরক্তি ফুটে ওঠে। রাগতে সে এই মুহূর্তে ভালোবাসছে না। এখন নিজেকে একটু ঠিক করে নিচ্ছে। অন্য সময়ের থেকে এখন অর্ণব নিরুচ্চার, থেমে আছে। ভাবনার কোনো ত্রাস হয়তো বয়ে চলেছে তার মধ্যে।
বলল, ‘সোমাকে গোপনে কাঁদতে দেখেছি সেদিন।’ ফিস ফিস করে বলল। যেমন করে আততায়ী গায়ের কাছে ঘেঁষে এসে পিঠে পিস্তল ঠেকিয়ে বলে, তেমন শোনাল।
আমি যেন কিছুই শুনিনি।
আবার বলল অর্ণব।
আমি চুপ।
এবার অর্ণব চিৎকার করে উঠল, ‘শুনতে পাচ্ছিস রঞ্জন!’
‘শুনেছি তো। যতবার বলেছিস, ততবার শুনেছি।’
‘তাহলে চুপ করে আছিস কেন?’
‘আমি আর কী বলতে পারি।’
‘আমাকে গোপন করে কাঁদল কেন? এতে তার অধিকার নেই।’ একটা ডান হাতের ঘুষি মারল টেবিলে।
আমি বললাম, ‘কেন তুই কি সোমার সব ভালো থাকার ইজারা নিয়েছিস।’
‘আমি জানি সোমা আগের মতো নেই।’
‘সবাই একই রকম থেকে যেতে তো পারে না, সব কিছুর পরিবর্তন হয়। তুইও বদলেছিস।’
‘তোর কি মনে হয় কেন কাঁদে?’
‘জানি না।’
‘কিছু একটা তো মনে হয় রে বাবা।’
‘কিছু মনে হয় না।’
‘কিছু একটা ভেবে বল।’
‘ওর বোধ হয় তোকে নিয় অসহায়তা বেড়েছে।’
‘কোনো কিছুর তো অভাব নেই সোমার।’
‘বোধ হয় তুই বেশি বেশি স্বামী হয়েছিস, বন্ধুত্ব কমিয়ে দিয়েছিস।’
‘সেটা একটা কারণ বটে। কিন্তু এত মেয়ে আমার প্রতি আকৃষ্ট হয়, আমি তো তাদের পাত্তা দিই না, সোমার প্রতি আমি যে কমিটমেন্ট রক্ষা করে যাই, এটা আমার চেয়ে সোমা বেশি জানে। আমি যেকোনো দিন যেকোনো মেয়েমানুষের সঙ্গে শুয়ে পড়তে পারি না, আমার এই নৈতিকতার নিষেধজর্জর আমাকে সোমা ভালো বোঝে, জানার চেয়ে বেশি বোঝে।’
মদ আরো ঢালে, অর্ণব খায়। আমি সঙ্গ দিই। ধীরে ধীরে একটু-আধটু খাই। অর্ণব শুধলো, ‘আমি মানুষটা কেমন?’
আমি বললাম, ‘তুই একটা গাধা, আস্ত গাধা। তোর প্রেমে এত মেয়ে পড়ে, আর তুই কি না’_
‘বল, বল, আরো বল।’
‘তুমি আসলে প্রেমে পড়া তৈরি করিস।’
‘মানে?’
‘তাদের দিকে যেভাবে তাকাস, যে ভাষা প্রয়োগ করে কথা বলিস, তার মধ্যে গেঁথে নিস তাদের।’
‘আমার কথা বলা, তাকানোটা ওরকমই।’
‘বিশেষ কিছু থাকে। ইচ্ছাকৃত আকর্ষণের ফাঁদ তৈরি করা।’
‘তুই বলছিস?’
‘হ্যাঁ।’
‘ভেবে দেখিনি তো। আমি কি তাহলে’_
‘প্রতারক।’
‘দাঁড়া তোর এই অভিযোগটা ভেবে দেখি।’
‘তুই কি চাস যে মেয়েরা তার প্রেমে পড়া বোঝায়, তারা একে একে তোকে ঘৃণা জানাবে।’
‘কী বলতে চাইছিস কি?’
‘বলতে চাইছি অন্যেরা যে তোর প্রেমে পড়ছে তা সেটুকুই উপভোগ্য তোর কাছে। তারা মুখ ফিরিয়ে নিলে কিছুতেই তুই মনের আরাম পাবি না। তোর চেয়ে কেউ বিপন্ন হবে না।’
‘একথা তো ভাবিনি কখনো। আরে আমি তো তাদেরকে পাত্তাই দিই না।’
‘তারা তার জীবনের সীমাবদ্ধতার ভেতর তোকে খোঁজে হয়তো।’
‘তারা ঘৃণা করলে সত্যিই আমি কষ্ট পাব। কিন্তু ঘৃণা করবে কেন? করে না তো?’
‘তুই জিইয়ে রাখার মন্ত্র জানিস।’
‘বেশ।’
‘সেই বৈভবে প্রতিদিন মদ খাস। বউ মেয়ের কাছে ফিরে গিয়ে সন্ত্রাস চালাস।’
‘ওরা অভ্যস্ত হয়েছে আমার চেঁচামেচিতে। একটা ভালো নাটক লিখতে পারলাম না যে।’
চুপ করে মুখ নামিয়ে কিছু ভাবে অর্ণব। মদের গেলাসে চুমুক দেয়। নতুন করে সিগারেট ধরায়। ঠেক ভরে উঠছে। একটু বেশি ভিড়, চেঁচামেচি। কম বয়সীদেরই ভিড়। তারা কেউ কেউ মোবাইলে গান শোনে, কেউ কেউ কথা বলে দূরের কারোর সঙ্গে। প্রথম যৌবনে অর্ণব গোটা তিন নাটক লিখেছিল। দল গড়ে অভিনয়ও করেছিল বিয়ের আগে। আর এই বছর পনেরো বিবাহিত জীবনে একটাও লাগসই নাটক লিখে উঠতে পারল না। যা লিখতে চাইছে, তার তেমন ফর্ম পাচ্ছে না, পাচ্ছে না ভাষাও। তার এই আত্দভ্রমণে সে একা। বাঁচার ভেতর যাত্রাটা করে সে নিজের ভেতর। সে ভাষা সোমা খানিকটা হয়তো বোঝে, এমনটা ভাবে অর্ণব। দু’একজন বন্ধুও বোঝে। যেমন সে বোঝে এটা দাবি করে অর্ণব। আমি যে খুব একটা বুঝি বলতে পারব না। বুঝি এটুকু যে, কিছু না হওয়ার যাত্রায় তারা বন্ধুরা অর্ণবের সঙ্গী হয়ে থাকছে। এই না হওয়ার মধ্যে কিছু অন্ধকার আছে, হয়তো কিছু আলোও বা। আর কিছু হওয়ার ইচ্ছে বুকে নিয়ে না হওয়ার সফলতার সঙ্গী হয়ে বেশ কিছু আমুদে যাপন জমিয়ে তুলতে পারি আমরা। আমরা অর্ণবের প্রেমিকাদের নিয়ে কিছু কথা বলতে পারি।
আমি জানি উলুবেড়িয়া মহকুমা শহরের এই মদের ঠেকের আকাশে চাঁদ এসেছে।
আমি বললাম, ‘চুপ করে আছিস যে?’
‘ভাবছি।’
‘আমার ঘুম পাচ্ছে, তোর প্রেমিকাদের কথা তোল।’
বিষণ্ন হাসি হাসল অর্ণব।
‘কী ভাবছিস?’
‘এমনি। ভাবছি আমার এই প্রেমিক-সম্পন্নতা সোমা কিভাবে নেয়?’
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কিভাবে নেয়?’
‘সোমা সব জানে, বুঝতে পারে। বোধ হয় খুব ক্ষুরধার বুদ্ধিমস্তিষ্ক দিয়ে আমাকে তার দিকে ধরে রাখে?’
‘সেটা কী রকম?’
‘আমি নিজেই তো তা জানি না। এইমাত্র তো মনে এল। তোর মাথায় কিছু আসছে কি?’
‘পার্সোনাল বিষয়ে নাক গলানোটা’
‘আরে তোর আমার মধ্যে পার্সোনাল কি?’
‘ভালো করে একটা নাটক লেখ।’
‘লিখতেই তো চাইছি, পারছি না।’
‘সেই না পারার ভাবনার যাপনে আমরা কি খুব খারাপ আছি?’
‘তুই কি এটাকে ভালো থাকা বলিস?’
‘বিলকুল।’
‘তুই একটা গাধা।’
‘তুই!’
মাইনের টাকা সোমা চায় না, এটা একটা কারণ বোধ হয়।’
‘তুই-ই সব জানিস।’
‘তুইও গেম কর।’
‘তোর অত্যাচার মেনে নেয়।’
‘বেশ। আর?’
‘তোর মদ খাওয়া নিয়ে তেমন করে বাধা দেয় না।’
‘আর?’
‘তোর অল্প কিছুতে সন্তুষ্টি জানায়। তুই প্রতিদিন রাতে স্টেশন থেকে পাঁচ টাকা দিয়ে বেলফুলের একরত্তি মালা নিয়ে যাস। অল্পমূল্যে তোর কাছ থেকে সোমার পাওয়ার এই সন্তুষ্টির কথা বহুবার বলেছিস। বোধ হয় এই বোধের ভেতর আমাদের কিছু আলো-অন্ধকার আছে।’
অর্ণব মুহূর্তে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। মেসের আছড়ে কাচের গ্লাস ভাঙল। মুখ তার কালো, অন্ধকার। আমার মতো অর্ণব পরাজিত মানুষ নয়, পরাজয় মেনে নিতেও শেখেনি। আর এক পাঁইট হুইস্কি অর্ডার দিল। অর্ণবকে কখনো পরাজিত ও বিপন্নতায় দেখেনি, সে এখন গুম মেরে আছে। কিভাবে ভোগবিলাসে ফিরবে, সে কথাই ভাবছি। অর্ণব ওয়েটারকে ডেকে মিউজিকের ভলিউমটা বাড়াতে বলল। আর উঠে দাঁড়িয়ে নাচতে শুরু করে দিল। আমার হাত ধরে তুলল। আমাকে কাছে নিয়ে নাচতে লাগল। ঠেকের অন্যরাও অনুপ্রাণিত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে নাচতে লাগল। আমি বুঝলাম এই বেশ। এভাবেই তো আমাদের বেশ থাকা।
0 মন্তব্যসমূহ