সাক্ষাৎকার : দিলওয়ার হাসান
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : অলাত এহ্সান
[গল্প পড়ে, গল্পকারের লেখনি শক্তি বুঝে বিশ্বের অনেক শক্তিশালী সাহিত্যিককে আবিষ্কার করেছেন তিনি। পরবর্তীতে তারা বিশ্বে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন অনেকে। সেসব লেখদের বাংলাদেশে পরিচয় করি দিলেও দিলওয়ার হাসান রয়েগেছেন অনাবিষ্কৃত। তিনি মুলত গল্পকার।
নিভৃতে গল্পলিখায় তিনি মগ্ন মানুষ। গল্পকারের পাশাপাশি অনুবাদক হিসেবেও তিনি সমধিক পরিচিত। গল্পের বিভিন্ন প্রান্ত সন্ধান, পাঠের বিপুল চর্চা থেকেই তিনি অনুবাদে উৎসাহি হয়েছেন। গল্পের বিষয়ে গভীর বোঝা-পড়া থাকায় তিনি নিজে যেমন সমৃদ্ধ হয়েছেন, উন্নত করেছেন পাঠকের রূটি। আলবার্তো মোরাবিয়ার উপন্যাস ‘টু উইমেন’, আইজ্যাক সিঙ্গারের ছোট গল্প, হারুকি মুরাকামির শ্রেষ্ঠ গল্প তার অনুদিত বহুল নন্দিত ও মুদ্রিত গ্রন্থ। নির্মেদ সাহিত্য চর্চার মতো, সাক্ষাৎকারের তিনি বাহুল্য বর্জিত ও স্পস্ট ভাষী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন গল্পকার অলাত এহ্সান]
অলাত এহ্সান : অনুবাদ তো একটা পরিণত কাজ। আপনার অনুবাদক হয়ে ওঠার প্রস্তুতি কি রকম?
দিলওয়ার হাসান : অনুবাদক হওয়ার জন্যে আলাদা কোনো প্রস্তুতি ছিল না। লেখালেখিতে আসার আগেই বিশ্ব সাহিত্যের ওপর নানা বইপত্র পাঠ ও বড় লেখকদের অনুবাদ পাঠ করে নিজেকে ঋদ্ধ করেছি। সাহিত্যবোধে পূর্ণ না হলে তো অনুবাদক শুধু সাট-লিপিকারে পরিণত হবে।
অলাত এহ্সান : অনুবাদ তো শুধু ভাষার পরিবর্তন নয়, ভাবেরও। অনুবাদের ক্ষেত্রে ভাবের অনুবাদ তো একটা মৌলিক সমস্যা। আপনি এই সমস্যা দূর করতে কি করে?
দিলওয়ার হাসান : এ সমস্যা পুরোপুরি দূর করা কখনোই সম্ভব নয়। তবে যে ভাষা থেকে অনুবাদ করা হচ্ছে তার মূল সুরটি ধরবার একটা নিরন্তর চেষ্টা থাকা দরকার। ওই চেষ্টা আমারও আছে।
অলাত এহ্সান : লেখার সঙ্গে, বিশেষত সাহিত্যের সঙ্গে দেশের ইতিহাস-সংস্কৃতি-মিথ ইত্যাদিরগভীর ভাবে যুক্ত। সেক্ষেত্রে অনুবাদের জন্য লেখকের দেশ-সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা খুবই জরুরি।
দিলওয়ার হাসান : মূল লেখকের দেশ-কাল, সমাজ-সংস্কৃতি না জানলে অনুবাদ দুরূহ হবে। প্রথমে লেখককে বুঝতে হবে, বুঝতে হবে লেখক কোথায় কেমন করে বেড়ে উঠলেন অর্থ্যাৎ তার পরিপুষ্ট হওয়ার পরিবেশটা। এমনও হয় লেখকের অবস্থান গত পরিবেশ-আবহওয়া তার লেখার সুরকে তৈরি করে, দখল করে। লেখক কখনো প্রকৃতি প্রতি আশ্রিতও হন।
অলাত এহ্সান : অনুবাদের দক্ষতা অর্জনের জন্য কোনো একটা দেশ বা মহাদেশ এবং ভাষাকেই বেছেনেয়া উত্তম। তাই না?
দিলওয়ার হাসান : একটা দেশ, একটা ভাষা আর একজন বিশেষ লেখক হলে আরও ভাল হয়। মনোযোগের ঝোঁকটা কেন্দ্রীভূত করতে সুবিধা হয়।
অলাত এহ্সান : একজন লেখক তো লেখায় মেজাজ-মর্জি-ছন্দ-গতি দিয়ে লেখেন। অনুবাদেও সেই মেজাজ-ছন্দেরজন্য সেই লেখকের ওপর প্রস্তুতি দরকার। এজন্য একজন লেখককে নির্বাচন করাই ঠিক, নয়কি?
দিলওয়ার হাসান : একজনকে নির্বাচন করাই শ্রেয়। আবার অনেক সময় একটা গ্রুপ প্রায় একই ধরনের সাহিত্য করে। তবে অনুবাদকের চিন্তা-জানা-পঠন-পাঠনই নির্ধারণ করবে তা।
অলাত এহ্সান : একজন অনুবাদকের তৃপ্তি কোথায়, একটি অনুবাদ করায়, না একটি ভাষা-দেশ-সংস্কৃতি-লেখকসম্পর্কে গভীরভাবে জানায়?
দিলওয়ার হাসান : এক কথায় বলতে গেলে দুটো-ই। কারণ ভাষা-দেশ-সংস্কৃতি বাদ তো আর সাহিত্য হয় না। লেখক এসবের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হন, লেখায় তাকে বাঙ্গময় করে তুলেন।
অলাত এহ্সান : প্রায়ই শোনা যায়, অনুবাদ কোনো সাহিত্য নয়। অনুবাদকে সাহিত্য হয়ে ওঠায় অন্তরায়টা কোথায়? অনুবাদ কি ভাবে সাহিত্য হয়ে ওঠতে পারে?
দিলওয়ার হাসান : অনুবাদ সাহিত্য নয়—এটা সবার মত নয়, কারও কারও মত। অনুবাদও অনুবাদের গুণে উৎকৃষ্ট সাহিত্যে পরিণত হতে পারে। অনুবাদের ক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায়—এক ভাষা থেকে অন্যভাষার প্যাটার্নে বিরাট পার্থক্য। আন্তরিকতা ঢেলে প্রচুর শ্রম দান করলে অনুবাদও সাহিত্য হয়ে উঠতে পারে। একটা উদাহরণ দেই—গোর্কি’র ‘মা’-র অনুবাদ।
অলাত এহ্সান : অনেক সময় দেখা যায়, কোনো লেখক বা দেশের কিছু গল্প অনুবাদ করেই তাকে ‘শ্রেষ্ঠগল্প’ বলে দিচ্ছে। বইয়ের ভূমিকায়ও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু থাকে না যে, এগুলো কেন শ্রেষ্ঠগল্প। কিভাবে বাছাই করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে পাঠকরা কি প্রতারিত হচ্ছেন না?
দিলওয়ার হাসান : আসলে ওখানে অনুবাদকের ভাল লাগাটাই প্রাধান্য পায় বলে তিনি শ্রেষ্ঠ গল্প-টল্প এমন নাম দেন। প্রকাশকদের কাছ থেকে এ রকম অনুবাধ আসে। ভালর তো কোনো সংজ্ঞা আসলে নেই—খোদ লেখককে জিজ্ঞেস করলেও সদুত্তোর পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। তবে এটা প্রতারণা নয়। আর ভূমিকা যে কোনো লেখার জন্যই জরুরি।
অলাত এহ্সান : আমাদের দেশে সাধারণত যে অনুবাদগুলো হয় সেগুলো মূলভাষা থেকে নয়, দ্বিতীয়কোনো ভাষা, বিশেষত ইংরেজি থেকে। তাহলে আমরা ‘সূর্যের রশ্মি থেকে তাপ না নিয়ে বালিথেকে তাপ নিচ্ছি’ বলে মনে হয় না?
দিলওয়ার হাসান : আপনার কথাটা একদিক থেকে ঠিকই আছে। ইংরেজি থেকে করতে গিয়ে প্রায়ই আমরা অনুবাদের অনুবাদ করছি। অর্থাৎ ক্রমশ মূল থেকে সরে যাচ্ছি। অনুবাদকের গভীর অভিবেশ, প্রস্তুতি এই সংকট দূর করতে কাজে লাগে।
অলাত এহ্সান : অধিকাংশ অনুবাদই বিশ্বের জনপ্রিয়বা বহুল আলোচিত, মানে ‘বেস্ট সেলার’ বইগুলো হয়ে থাকে। এই অনুবাদ দ্বারা একটি দেশেরসাহিত্য কতটুকু উপকৃত হতে পারে?
দিলওয়ার হাসান : রেস্ট সেলারের বাইরেও অনেক ভাল বই থাকে, ফলে উপকার কমই পাওয়া যায়। আসলে অনুবাদদের মধ্যে সাহিত্য সাধনা নেই। যে কারণে মানের দিকেই খেয়াল করতে পারেন না। ওই যে বললেন, ভাবান্তর, অনুবাদকের সেই ভাব বোধ থাকলেই তো খুঁজতে সচেষ্ট হবেন। নয়তো ওই বাজারাশ্রি অনুবাদেই সন্তুষ্ট থাকবেন, সে আর এমনকি।
অলাত এহ্সান : বিশ্বের অনেক বিখ্যাত গ্রন্থআছে যে গুলো ভাল, কিন্তু বহুল আলোচিত নয়। যেখানে প্রকাশকরাও বিনিয়োগ করতে চায়না। সেক্ষেত্রে মানসম্মত সাহিত্য অনুবাদ কি করে পেতে পারি?
দিলওয়ার হাসান : এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতার খুব প্রয়োজন। আমাদের বাংলা একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠান সক্রিয় হলে এ সমস্যার অনেকখানি সমাধান হবে। তাছাড়া সাহিত্য মোদি মানুষ অনুবাদ করলে, তা নিজের জন্য হলেও তা মূল্যবহন করবে।
অলাত এহ্সান : একটি দেশ উপনিবেশ মুক্ত হওয়ারপর গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বিশ্বের সেরা সাহিত্য, জ্ঞানগর্ভ-মননশীল-চিন্তাশীল বইগুলোব্যাপক ভাবে, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেই, দেশি ভাষায় অনুবাদ করা। আমাদের দেশে তা হয়নি।এটা কি আমাদের দেশের সাহিত্যের অগ্রগতিতে প্রভাব ফেলেছে মনে করেন?
দিলওয়ার হাসান : আদৌ যে হয়নি তা নয়। এক সময় বাংলা একাডেমি বিস্তর বইপত্র অনুবাদ করিয়েছে। সাহিত্যের অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রভাব তো ফেলেই কম বেশি। তবে রুশ দেশ থেকে আসা রুশ সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ আমাদের একদিকের ঘারতি পূরণ করেছিল বটে, কিন্তু তাকে রাষ্ট্রীয় ভাবে করা হয়নি তখন।
অলাত এহ্সান : ট্যাকনিক্যাল শব্দগুলো ছাড়াওঅন্য ভাষার সাহিত্য অনুবাদে সংকট হলো যথাযথ পরিভাষার অভাব। আমাদের দেশে পরিভাষাতৈরির তেমন কোনো রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেই। সেক্ষেত্রে আমাদের কি করনীয়?
দিলওয়ার হাসান : ব্যাপক ভাবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। উদ্যোগ নিতে হবে পণ্ডিত ও বিদ্বৎ সমাজকেও। তবে সাহিত্যিকের হাতে অনুবাদে অনেক শব্দ এমনিতেই তৈরি হয়। তার ‘পারফেক্ট’ শব্দের পাশাপাশি তা সর্বসাধারণের বোধগম্য হওয়াও জরুরি।
অলাত এহ্সান : অনেকেই মনে করেন অনুবাদের মান-রক্ষার জন্য দেশে রেগুলেটরি স্থাপন করা দরকার। আপনার কি মনে হয়? আমরা কিভাবে মানসম্মতঅনুবাদ পেতে পারি?
দিলওয়ার হাসান : সে রকম রেগুলেটর তো বাংলাদেশে নিয়োগ করা সম্ভব হবে না। বাংলা একাডেমিকেই এ বিষয়ে কিছু ক্ষমতা দিলে ভাল হয়। তবে গুণ সম্পন্ন মানুষের সংস্থানও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
অলাত এহ্সান : অনেকেই পাঠের জন্য মূলগ্রন্থপাঠকেই গুরুত্ব দেন। লেখক প্রস্তুতি হিসেবে অনুবাদ সাহিত্য পাঠকে আপনি কতটা গুরুত্বপূর্ণমনে করেন?
দিলওয়ার হাসান : মূল গ্রন্থ পড়তে পারলেই সবচেয়ে ভাল। অনুবাদ সাহিত্য পাঠ করলে মূল লেখকের সাথে এক ধরণের পরিচয় অন্তত হয়।
অলাত এহ্সান : প্রতিবছরই দেশে প্রচুর অনুবাদহয়। তার সবই জনপ্রিয় ও বহুলালোচিত গ্রন্থ। অপরিচিত কিন্তু শক্তিশালী লেখক বা বই, অনুবাদকের তেমন কোনো আবিষ্কার নেই। এটা কি অনুবাদকের দূর্বলতা, না অন্যকিছু?
দিলওয়ার হাসান : আমাদের দেশে অনুবাদ হয় বাণিজ্যের কথা মাথায় রেখে। এর কারণ বহুলাংশে অনুবাদকের চিহ্নিত করতে না পারার অক্ষমতা। ফরমায়েশের কথা তো বলেছিই। অনুবাদক সাহিত্যে অনুসন্ধিসু না হলে তো যা হয় আর কি।
অলাত এহ্সান : রবার্ট ফ্রস্ট, টি এস এলিয়ট, শার্ল বোদলেয়ার, শাহানামা অনেক অনুবাদ করেছেন; কিন্তু শামসুর রাহমান, বুদ্ধদেববসু, কাজী নজরুল ইসলামের মতো কেউ করতে পারেননি মনে করা হয়। কবিতার অনুবাদ কবি, গল্পের অনুবাদ একজন গল্পকার করলে সেরাটা পাওয়া সম্ভব বলে অনেকে মনে করেন। আপনিকি মনে করেন?
দিলওয়ার হাসান : আপনার সঙ্গে এ বিষয়ে আমি একমত। একাডেমিক প্রবন্ধের বিষয়টা খানি আলাদা বা ওই বিষয় সংশ্লিষ্টতার বিষয়। কিন্তু কবিতা গল্পের ক্ষেত্রে বিষয়টা বেশি সত্য।
অলাত এহ্সান : অনুবাদ তো দুইভাবেই হতে পারে।বিদেশি সাহিত্য দেশি ভাষায়, দেশি সাহিত্য বিদেশি ভাষায়। আমরা কিন্তু তা দেখছিনা। এর কারণ কি? এ সমস্যা থেকে উত্তোরণের উপায় কি বলে মনে করেন?
দিলওয়ার হাসান : বিদেশি সাহিত্য থেকে দেশি ভাষাতেই বেশি অনুবাদ হচ্ছে। উল্টোটা খুব কম হচ্ছে। এর কারণ আমাদের দেশে-বিদেশে জানা লোকের সংখ্যা কম। যারাও জানেন অনুবাদে তাদের আগ্রহ নেই হয়তো। এ সমস্যা উত্তোরণ খুব সহজ বলে মনে হয় না। যারা বিদেশি ভাষা সম্যক জানেন তাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।
অলাত এহ্সান : এবার বই মেলায় আপনার ‘অন্যদেশেরগল্প’ নামক অনুবাদ গ্রন্থ বের হচ্ছে। সে সম্পর্কে বলুন।
দিলওয়ার হাসান : ওটি নতুন বই নয়। আরও ১১টি গল্প যুক্ত করে বর্ধিত আকারে বের হচ্ছে। গল্পগুলোর গল্পময়তা, বিষয় বৈচিত্র্য, লেখুনি শক্তি সব মিলিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় বহন করে। নানা ভাবেই পঠকে তাড়িত করে, নানা রসে জারিত করে।
অলাত এহ্সান : অনুবাদের জন্য এই লেখকদের গল্পগুলোবেছে নেয়ার কারণ কি?
দিলওয়ার হাসান : প্রধানত এই লেখকরা খুব ভাল গল্প লেখেন। এদের অনেক লেখকের গল্পের প্রসাদগুণ অত্যন্ত উঁচু। এদের আবিষ্কার করাও জরুরি। তাই বাংলা ভাষা ভাষী পাঠকদের সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দিতে চাই।
অলাত এহ্সান : এখানে অনেক গল্প তো আগেও অনুবাদ হয়েছে। আপনিও করলেন। ব্যাপারটা মনোটোনাস হয়ে গেল না? কিংবা আপনার বিশেষত্ব কোথায়?
দিলওয়ার হাসান : দু-চারজন বাদে অন্য কারও লেখা আগে অনুবাদ হয়নি। মনোটোনাস হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বইটি পড়লে বুঝতে পারবেন। আগেই বলেছি, বিষয় বৈচিত্রও আছে।
অলাত এহ্সান : অনুবাদের ক্ষেত্রে অনেকে ভাষা, অনেকে ভাব, অনেকে মূলবক্তব্য অনুসরণ করেন। এতে কি একটি সাহিত্যের প্রকৃতাবস্থারহেরফের ঘটে যায় না?
দিলওয়ার হাসান : এই যে তিনটি বিষয়ের কথা আপনি বললেন অনুবাদে আসলে এগুলোর সমন্বয় ঘটাতে হয়। এ কথা অনস্বীকার্য যে, অনুবাদে প্রকৃতাবস্থার হেরফের ঘটবেই।
অলাত এহ্সান : অনেকে মূল বইয়ের সঙ্গে মিলিয়েমিলিয়ে মানে আক্ষরিক বা মূলানুগ অনুবাদ, কেউ ভাবগত বা মূলবক্তব্যকের দিক খেয়ালরেখে অনুবাদ করেন। কোন ধরনের অনুবাদে প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে বলে আপনি মনে করেন? কেন?
দিলওয়ার হাসান : ভাবগত না হলে অনুবাদের সৌন্দর্য ফোটান মুশকিল। শুধু শব্দের প্রতিস্থাপন তো অনুবাদ হতে পারে না। ভাবের জন্য পারফেক্ট শব্দের দরকার হয়।
অলাত এহ্সান : অন্যান্য অনুবাদক থেকে নিজেকেকিভাবে আলাদা করেন?
দিলওয়ার হাসান : এটা পাঠক বলতে পারবেন। তবে লেখক নির্বাচনের ব্যাপারে আমার একটা ভিন্ন চোখ আছে। কনস্তানতিন পাউস্তোভল্কি, ইউসেফ আল সেবাই, পেদরো হুয়ান গুটিয়েররেজ, বোবেরতো বোলানিও, হারুকি মুরাকামি ও ঝুম্পা লাহিড়িকে এ দেশে আমি-ই প্রথম পরিচিত করি।
অলাত এহ্সান : অনুবাদকের স্বাধীনতা, শব্দ তৈরি ইত্যাদি দিক অনেকে সামনে আনেন। এটাকে আপনি কি ভাবে দেখেন? তা ছাড়া অনুবাদকের আদৌ কোনো স্বাধীনতা আছে কি?
দিলওয়ার হাসান : অনুবাদে সৌন্দর্য বলুন বা সাবলীলতা বলুন-এসবের খাতিরে স্বাধীনতা কিছুটা হলেও নিতে হয়। স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচারিতা নিশ্চয়ই একই অর্থ বহন করে না।
অলাত এহ্সান : অনুবাদ আমাদের সাহিত্যে কী অবদান রাখছে?
দিলওয়ার হাসান : অনুবাদ তখনই সাহিত্যে অবদান রাখতে পারবে যখন তার পঠন-পাঠন কাউকে সমৃদ্ধ করতে পারবে। বর্তমান প্রেক্ষিতে যে রকম তো চোখে পড়ছে না। রুশ অনুবাদের বহুল প্রাপ্তি সে সময় সাহিত্যে অবদান রেখেছিল বইকি, কিন্তু তাকে আরো বিকশিত করা যেত।
অলাত এহ্সান : অন্য একটি ভাষায় লেখা অনুবাদ হচ্ছে। অথচ লেখক জানছেন না, রয়েলটি পাচ্ছেন না। মূলানুগ অনুবাদের জন্যও তার সঙ্গেযোগাযোগ করা হচ্ছে না। বিষয়টা কিভাবে দেখেন?
দিলওয়ার হাসান : এই যোগাযোগের ব্যাপারটা খুব সহজ নয়। তবে মূল লেখকেরও রয়ালটির অংশ পাওয়া উচিত, যদিও অর্থের অংক খুব সামান্যই হবে। সবচেয়ে ভাল তাদের অনুমতি নিয়ে রয়ালটি মওকুফ করিয়ে নেওয়া। কিন্তু হাস্য হল, এদেশে অনুবাদকই সম্মানী পায় না, সেখানে মূল লেখকের প্রতিনিধিত্ব করবে কে? খোঁজ নিলে পাওয়া যাবে, অনেক সময় অনুবাদকই জানেন না, তার কত ছাপা হয়েছে।
অলাত এহ্সান : লেখালেখির ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের কথা প্রায়ই শোনা যায়। আমাদের দেশে অনুবাদের তেমন পেশাদারিত্ব দেখছি না। অনুবাদের মানোন্নয়নের জন্য পেশাদারিত্বের ভূমিকা কী মনে করেন আপনি?
দিলওয়ার হাসান : শুধু সাহিত্য-ই নয় যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে পেশাদায়িত্বের মূল্য আছে। সেই মূল্যের কথা বিবেচনায় রেখে অনুবাদকদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তার আসার জন্য পথও তৈরি রাখতে হবে।
অলাত এহ্সান : নতুন লেখক তৈরির ক্ষেত্রে লিটলম্যাগকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হয়। আজকের দিনে অনেকের মধ্যে অনুবাদক হওয়ার চিন্তাওদেখা যায়। অনুবাদক তৈরির ক্ষেত্রে কোনো মাধ্যমটি আপনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন? আদৌ কি তেমন কোনো মাধ্যম আছে?
দিলওয়ার হাসান : অনুবাদক তৈরির ক্ষেত্রে সব মাধ্যমই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ কোনো মাধ্যম এ-ক্ষেত্রে উপযুক্ত বলে আমার মনে হয় না। অনুবাদের পত্রিকা প্রকাশ হওয়া জরুরি। আমারা ‘সিন্দাবাদ’ নামক একটা অনুবাদ পত্রিকা করছি। এটা একটা মান বহন করে। কিন্তু অনুবাদক তৈরি জন্য অনুবাদের লিটন ম্যাগ বের হওয়া দরকার।
অলাত এহ্সান : অনুবাদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। এটা আমাদের দেশে মানসম্মত অনুবাদের ক্ষেত্রে কি কোনো ভূমিকা রাখছে?
দিলওয়ার হাসান : অনুবাদে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেয়, জানি। আমার মনে হয় না পুরস্কারের জন্যে কেউ লেখেন বা অনুবাদ করেন। তবে এটা একটা উৎসাহ বটে। পুরস্কার প্রতি লোভ থাকলে তার অনুবাদের মান থাকবে না। আবার পুরস্কার দেয়ার ক্ষেত্রে মান-আবিষ্কারকে গুরুত্ব দেয়া দরকার।
অলাত এহ্সান : এই মুহুর্তে দেশে যে অনুবাদ হচ্ছে, তার মান নিয়ে কি আপনি সন্তুষ্ট?
দিলওয়ার হাসান : মোটেই সন্তুষ্ট নই। অধিকাংশই বানিজ্যিক অনুবাদ।
অলাত এহ্সান : আমাদের দেশে অনেক অনুবাদক আছেন। বাজারে তাদের অনেক বইও আছে। আপনি কাদেরকে আদর্শ অনুবাদক বলে মনে করেন?
দিলওয়ার হাসান : আপনি আদর্শ অনুবাদক বলে যা বোঝাতে চাইছেন সে রকম অনুবাদকের খুব অভাব আমাদের দেশে। নাম টাম আর বললাম না।
অলাত এহ্সান : আপনাকে ধন্যবাদ, অনুবাদের মূল জায়গা গুলো স্পষ্ট করে বলার জন্য।
দিলওয়ার হাসান : তোমাকে ধন্যবাদ এহ্সান। গল্পপাঠকেও ধন্যবাদ।
লেখক পরিচিতি
দিলওয়ার হাসান
জন্ম ১৯৫৭ সালে, মানিকগঞ্জে। বর্তমান আবাসস্থল–ঢাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স সহ এম,এ। স্কুল জীবন থেকে লেখালিখি ও সাংবাদিকতা শুরু। ১৯৮১ সালে দৈনিক সংবাদের সহ সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবনের শুরু। পেশা - বেসরকারি চাকরি ও লেখালেখি : গল্প, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনি, অনুবাদ। প্রথম আলো, আলোকিত বাংলাদেশ, কালি ও কলম, উত্তরাধিকার, শব্দঘর ও অনলাইন পত্রিকা নিয়মিত লেখেন।
প্রকাশিত গ্রন্থ – অন্য দেশের গল্প, (অনুবাদ গল্প সংকলন), টু উইমেন, (অনুবাদ উপন্যাস), আদম এবং ইভের গল্প(ছোট গল্প), সর্ট স্টোরিজ, আইজ্যাক সিঙ্গার (অনুবাদ গল্প সংকলন), ওস্তাদ নাজাকাত আলি কর্নেলকে একটা চিঠি লিখেছিলেন (ছোট গল্প), হারুকি মুরাকামির শ্রেষ্ঠ গল্প (অনুবাদ গল্প)০

সাক্ষাৎকারগ্রহণকারীর পরিচিতি
অলাত এহ্সান
জন্ম ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আরো ভেতরে, বারুয়াখালী গ্রামে। কঠিন-কঠোর জীবন বাস্তবতা দেখতে দেখতে বড় হয়ে ওঠা। পারিবারিক দরিদ্রতা ও নিম্নবিত্ত অচ্ছ্যুত শ্রেণির মধ্যে বসত, জীবনকে দেখিয়েছে কাছ থেকে। পড়াশুনা করেছেন মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ(ইন্টারমিডিয়েট) ও ঢাকা কলেজে(অনার্স-মাস্টর্স)। ছাত্র জীবন থেকেই বাম রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া। কবিতা লেখা দিয়ে সাহিত্য চর্চা শুরু হলেও মূলত গল্পকার। প্রবন্ধ লিখেন। প্রকাশিতব্য গল্পগ্রন্থ ‘পুরো ব্যাপারটাই প্রায়শ্চিত্ব ছিল’। প্রবন্ধের বই প্রকাশের কাজ চলছে।০
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : অলাত এহ্সান
[গল্প পড়ে, গল্পকারের লেখনি শক্তি বুঝে বিশ্বের অনেক শক্তিশালী সাহিত্যিককে আবিষ্কার করেছেন তিনি। পরবর্তীতে তারা বিশ্বে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন অনেকে। সেসব লেখদের বাংলাদেশে পরিচয় করি দিলেও দিলওয়ার হাসান রয়েগেছেন অনাবিষ্কৃত। তিনি মুলত গল্পকার।
নিভৃতে গল্পলিখায় তিনি মগ্ন মানুষ। গল্পকারের পাশাপাশি অনুবাদক হিসেবেও তিনি সমধিক পরিচিত। গল্পের বিভিন্ন প্রান্ত সন্ধান, পাঠের বিপুল চর্চা থেকেই তিনি অনুবাদে উৎসাহি হয়েছেন। গল্পের বিষয়ে গভীর বোঝা-পড়া থাকায় তিনি নিজে যেমন সমৃদ্ধ হয়েছেন, উন্নত করেছেন পাঠকের রূটি। আলবার্তো মোরাবিয়ার উপন্যাস ‘টু উইমেন’, আইজ্যাক সিঙ্গারের ছোট গল্প, হারুকি মুরাকামির শ্রেষ্ঠ গল্প তার অনুদিত বহুল নন্দিত ও মুদ্রিত গ্রন্থ। নির্মেদ সাহিত্য চর্চার মতো, সাক্ষাৎকারের তিনি বাহুল্য বর্জিত ও স্পস্ট ভাষী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন গল্পকার অলাত এহ্সান]
অলাত এহ্সান : অনুবাদ তো একটা পরিণত কাজ। আপনার অনুবাদক হয়ে ওঠার প্রস্তুতি কি রকম?
দিলওয়ার হাসান : অনুবাদক হওয়ার জন্যে আলাদা কোনো প্রস্তুতি ছিল না। লেখালেখিতে আসার আগেই বিশ্ব সাহিত্যের ওপর নানা বইপত্র পাঠ ও বড় লেখকদের অনুবাদ পাঠ করে নিজেকে ঋদ্ধ করেছি। সাহিত্যবোধে পূর্ণ না হলে তো অনুবাদক শুধু সাট-লিপিকারে পরিণত হবে।
অলাত এহ্সান : অনুবাদ তো শুধু ভাষার পরিবর্তন নয়, ভাবেরও। অনুবাদের ক্ষেত্রে ভাবের অনুবাদ তো একটা মৌলিক সমস্যা। আপনি এই সমস্যা দূর করতে কি করে?
দিলওয়ার হাসান : এ সমস্যা পুরোপুরি দূর করা কখনোই সম্ভব নয়। তবে যে ভাষা থেকে অনুবাদ করা হচ্ছে তার মূল সুরটি ধরবার একটা নিরন্তর চেষ্টা থাকা দরকার। ওই চেষ্টা আমারও আছে।
অলাত এহ্সান : লেখার সঙ্গে, বিশেষত সাহিত্যের সঙ্গে দেশের ইতিহাস-সংস্কৃতি-মিথ ইত্যাদিরগভীর ভাবে যুক্ত। সেক্ষেত্রে অনুবাদের জন্য লেখকের দেশ-সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা খুবই জরুরি।
দিলওয়ার হাসান : মূল লেখকের দেশ-কাল, সমাজ-সংস্কৃতি না জানলে অনুবাদ দুরূহ হবে। প্রথমে লেখককে বুঝতে হবে, বুঝতে হবে লেখক কোথায় কেমন করে বেড়ে উঠলেন অর্থ্যাৎ তার পরিপুষ্ট হওয়ার পরিবেশটা। এমনও হয় লেখকের অবস্থান গত পরিবেশ-আবহওয়া তার লেখার সুরকে তৈরি করে, দখল করে। লেখক কখনো প্রকৃতি প্রতি আশ্রিতও হন।
অলাত এহ্সান : অনুবাদের দক্ষতা অর্জনের জন্য কোনো একটা দেশ বা মহাদেশ এবং ভাষাকেই বেছেনেয়া উত্তম। তাই না?
দিলওয়ার হাসান : একটা দেশ, একটা ভাষা আর একজন বিশেষ লেখক হলে আরও ভাল হয়। মনোযোগের ঝোঁকটা কেন্দ্রীভূত করতে সুবিধা হয়।
অলাত এহ্সান : একজন লেখক তো লেখায় মেজাজ-মর্জি-ছন্দ-গতি দিয়ে লেখেন। অনুবাদেও সেই মেজাজ-ছন্দেরজন্য সেই লেখকের ওপর প্রস্তুতি দরকার। এজন্য একজন লেখককে নির্বাচন করাই ঠিক, নয়কি?
দিলওয়ার হাসান : একজনকে নির্বাচন করাই শ্রেয়। আবার অনেক সময় একটা গ্রুপ প্রায় একই ধরনের সাহিত্য করে। তবে অনুবাদকের চিন্তা-জানা-পঠন-পাঠনই নির্ধারণ করবে তা।
অলাত এহ্সান : একজন অনুবাদকের তৃপ্তি কোথায়, একটি অনুবাদ করায়, না একটি ভাষা-দেশ-সংস্কৃতি-লেখকসম্পর্কে গভীরভাবে জানায়?
দিলওয়ার হাসান : এক কথায় বলতে গেলে দুটো-ই। কারণ ভাষা-দেশ-সংস্কৃতি বাদ তো আর সাহিত্য হয় না। লেখক এসবের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হন, লেখায় তাকে বাঙ্গময় করে তুলেন।
অলাত এহ্সান : প্রায়ই শোনা যায়, অনুবাদ কোনো সাহিত্য নয়। অনুবাদকে সাহিত্য হয়ে ওঠায় অন্তরায়টা কোথায়? অনুবাদ কি ভাবে সাহিত্য হয়ে ওঠতে পারে?
দিলওয়ার হাসান : অনুবাদ সাহিত্য নয়—এটা সবার মত নয়, কারও কারও মত। অনুবাদও অনুবাদের গুণে উৎকৃষ্ট সাহিত্যে পরিণত হতে পারে। অনুবাদের ক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায়—এক ভাষা থেকে অন্যভাষার প্যাটার্নে বিরাট পার্থক্য। আন্তরিকতা ঢেলে প্রচুর শ্রম দান করলে অনুবাদও সাহিত্য হয়ে উঠতে পারে। একটা উদাহরণ দেই—গোর্কি’র ‘মা’-র অনুবাদ।
অলাত এহ্সান : অনেক সময় দেখা যায়, কোনো লেখক বা দেশের কিছু গল্প অনুবাদ করেই তাকে ‘শ্রেষ্ঠগল্প’ বলে দিচ্ছে। বইয়ের ভূমিকায়ও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু থাকে না যে, এগুলো কেন শ্রেষ্ঠগল্প। কিভাবে বাছাই করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে পাঠকরা কি প্রতারিত হচ্ছেন না?
দিলওয়ার হাসান : আসলে ওখানে অনুবাদকের ভাল লাগাটাই প্রাধান্য পায় বলে তিনি শ্রেষ্ঠ গল্প-টল্প এমন নাম দেন। প্রকাশকদের কাছ থেকে এ রকম অনুবাধ আসে। ভালর তো কোনো সংজ্ঞা আসলে নেই—খোদ লেখককে জিজ্ঞেস করলেও সদুত্তোর পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। তবে এটা প্রতারণা নয়। আর ভূমিকা যে কোনো লেখার জন্যই জরুরি।
অলাত এহ্সান : আমাদের দেশে সাধারণত যে অনুবাদগুলো হয় সেগুলো মূলভাষা থেকে নয়, দ্বিতীয়কোনো ভাষা, বিশেষত ইংরেজি থেকে। তাহলে আমরা ‘সূর্যের রশ্মি থেকে তাপ না নিয়ে বালিথেকে তাপ নিচ্ছি’ বলে মনে হয় না?
দিলওয়ার হাসান : আপনার কথাটা একদিক থেকে ঠিকই আছে। ইংরেজি থেকে করতে গিয়ে প্রায়ই আমরা অনুবাদের অনুবাদ করছি। অর্থাৎ ক্রমশ মূল থেকে সরে যাচ্ছি। অনুবাদকের গভীর অভিবেশ, প্রস্তুতি এই সংকট দূর করতে কাজে লাগে।
অলাত এহ্সান : অধিকাংশ অনুবাদই বিশ্বের জনপ্রিয়বা বহুল আলোচিত, মানে ‘বেস্ট সেলার’ বইগুলো হয়ে থাকে। এই অনুবাদ দ্বারা একটি দেশেরসাহিত্য কতটুকু উপকৃত হতে পারে?
দিলওয়ার হাসান : রেস্ট সেলারের বাইরেও অনেক ভাল বই থাকে, ফলে উপকার কমই পাওয়া যায়। আসলে অনুবাদদের মধ্যে সাহিত্য সাধনা নেই। যে কারণে মানের দিকেই খেয়াল করতে পারেন না। ওই যে বললেন, ভাবান্তর, অনুবাদকের সেই ভাব বোধ থাকলেই তো খুঁজতে সচেষ্ট হবেন। নয়তো ওই বাজারাশ্রি অনুবাদেই সন্তুষ্ট থাকবেন, সে আর এমনকি।
অলাত এহ্সান : বিশ্বের অনেক বিখ্যাত গ্রন্থআছে যে গুলো ভাল, কিন্তু বহুল আলোচিত নয়। যেখানে প্রকাশকরাও বিনিয়োগ করতে চায়না। সেক্ষেত্রে মানসম্মত সাহিত্য অনুবাদ কি করে পেতে পারি?
দিলওয়ার হাসান : এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতার খুব প্রয়োজন। আমাদের বাংলা একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠান সক্রিয় হলে এ সমস্যার অনেকখানি সমাধান হবে। তাছাড়া সাহিত্য মোদি মানুষ অনুবাদ করলে, তা নিজের জন্য হলেও তা মূল্যবহন করবে।
অলাত এহ্সান : একটি দেশ উপনিবেশ মুক্ত হওয়ারপর গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বিশ্বের সেরা সাহিত্য, জ্ঞানগর্ভ-মননশীল-চিন্তাশীল বইগুলোব্যাপক ভাবে, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেই, দেশি ভাষায় অনুবাদ করা। আমাদের দেশে তা হয়নি।এটা কি আমাদের দেশের সাহিত্যের অগ্রগতিতে প্রভাব ফেলেছে মনে করেন?
দিলওয়ার হাসান : আদৌ যে হয়নি তা নয়। এক সময় বাংলা একাডেমি বিস্তর বইপত্র অনুবাদ করিয়েছে। সাহিত্যের অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রভাব তো ফেলেই কম বেশি। তবে রুশ দেশ থেকে আসা রুশ সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ আমাদের একদিকের ঘারতি পূরণ করেছিল বটে, কিন্তু তাকে রাষ্ট্রীয় ভাবে করা হয়নি তখন।
অলাত এহ্সান : ট্যাকনিক্যাল শব্দগুলো ছাড়াওঅন্য ভাষার সাহিত্য অনুবাদে সংকট হলো যথাযথ পরিভাষার অভাব। আমাদের দেশে পরিভাষাতৈরির তেমন কোনো রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেই। সেক্ষেত্রে আমাদের কি করনীয়?
দিলওয়ার হাসান : ব্যাপক ভাবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। উদ্যোগ নিতে হবে পণ্ডিত ও বিদ্বৎ সমাজকেও। তবে সাহিত্যিকের হাতে অনুবাদে অনেক শব্দ এমনিতেই তৈরি হয়। তার ‘পারফেক্ট’ শব্দের পাশাপাশি তা সর্বসাধারণের বোধগম্য হওয়াও জরুরি।
অলাত এহ্সান : অনেকেই মনে করেন অনুবাদের মান-রক্ষার জন্য দেশে রেগুলেটরি স্থাপন করা দরকার। আপনার কি মনে হয়? আমরা কিভাবে মানসম্মতঅনুবাদ পেতে পারি?
দিলওয়ার হাসান : সে রকম রেগুলেটর তো বাংলাদেশে নিয়োগ করা সম্ভব হবে না। বাংলা একাডেমিকেই এ বিষয়ে কিছু ক্ষমতা দিলে ভাল হয়। তবে গুণ সম্পন্ন মানুষের সংস্থানও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
অলাত এহ্সান : অনেকেই পাঠের জন্য মূলগ্রন্থপাঠকেই গুরুত্ব দেন। লেখক প্রস্তুতি হিসেবে অনুবাদ সাহিত্য পাঠকে আপনি কতটা গুরুত্বপূর্ণমনে করেন?
দিলওয়ার হাসান : মূল গ্রন্থ পড়তে পারলেই সবচেয়ে ভাল। অনুবাদ সাহিত্য পাঠ করলে মূল লেখকের সাথে এক ধরণের পরিচয় অন্তত হয়।
অলাত এহ্সান : প্রতিবছরই দেশে প্রচুর অনুবাদহয়। তার সবই জনপ্রিয় ও বহুলালোচিত গ্রন্থ। অপরিচিত কিন্তু শক্তিশালী লেখক বা বই, অনুবাদকের তেমন কোনো আবিষ্কার নেই। এটা কি অনুবাদকের দূর্বলতা, না অন্যকিছু?
দিলওয়ার হাসান : আমাদের দেশে অনুবাদ হয় বাণিজ্যের কথা মাথায় রেখে। এর কারণ বহুলাংশে অনুবাদকের চিহ্নিত করতে না পারার অক্ষমতা। ফরমায়েশের কথা তো বলেছিই। অনুবাদক সাহিত্যে অনুসন্ধিসু না হলে তো যা হয় আর কি।
অলাত এহ্সান : রবার্ট ফ্রস্ট, টি এস এলিয়ট, শার্ল বোদলেয়ার, শাহানামা অনেক অনুবাদ করেছেন; কিন্তু শামসুর রাহমান, বুদ্ধদেববসু, কাজী নজরুল ইসলামের মতো কেউ করতে পারেননি মনে করা হয়। কবিতার অনুবাদ কবি, গল্পের অনুবাদ একজন গল্পকার করলে সেরাটা পাওয়া সম্ভব বলে অনেকে মনে করেন। আপনিকি মনে করেন?
দিলওয়ার হাসান : আপনার সঙ্গে এ বিষয়ে আমি একমত। একাডেমিক প্রবন্ধের বিষয়টা খানি আলাদা বা ওই বিষয় সংশ্লিষ্টতার বিষয়। কিন্তু কবিতা গল্পের ক্ষেত্রে বিষয়টা বেশি সত্য।
অলাত এহ্সান : অনুবাদ তো দুইভাবেই হতে পারে।বিদেশি সাহিত্য দেশি ভাষায়, দেশি সাহিত্য বিদেশি ভাষায়। আমরা কিন্তু তা দেখছিনা। এর কারণ কি? এ সমস্যা থেকে উত্তোরণের উপায় কি বলে মনে করেন?
দিলওয়ার হাসান : বিদেশি সাহিত্য থেকে দেশি ভাষাতেই বেশি অনুবাদ হচ্ছে। উল্টোটা খুব কম হচ্ছে। এর কারণ আমাদের দেশে-বিদেশে জানা লোকের সংখ্যা কম। যারাও জানেন অনুবাদে তাদের আগ্রহ নেই হয়তো। এ সমস্যা উত্তোরণ খুব সহজ বলে মনে হয় না। যারা বিদেশি ভাষা সম্যক জানেন তাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।
অলাত এহ্সান : এবার বই মেলায় আপনার ‘অন্যদেশেরগল্প’ নামক অনুবাদ গ্রন্থ বের হচ্ছে। সে সম্পর্কে বলুন।
দিলওয়ার হাসান : ওটি নতুন বই নয়। আরও ১১টি গল্প যুক্ত করে বর্ধিত আকারে বের হচ্ছে। গল্পগুলোর গল্পময়তা, বিষয় বৈচিত্র্য, লেখুনি শক্তি সব মিলিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় বহন করে। নানা ভাবেই পঠকে তাড়িত করে, নানা রসে জারিত করে।
অলাত এহ্সান : অনুবাদের জন্য এই লেখকদের গল্পগুলোবেছে নেয়ার কারণ কি?
দিলওয়ার হাসান : প্রধানত এই লেখকরা খুব ভাল গল্প লেখেন। এদের অনেক লেখকের গল্পের প্রসাদগুণ অত্যন্ত উঁচু। এদের আবিষ্কার করাও জরুরি। তাই বাংলা ভাষা ভাষী পাঠকদের সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দিতে চাই।
অলাত এহ্সান : এখানে অনেক গল্প তো আগেও অনুবাদ হয়েছে। আপনিও করলেন। ব্যাপারটা মনোটোনাস হয়ে গেল না? কিংবা আপনার বিশেষত্ব কোথায়?
দিলওয়ার হাসান : দু-চারজন বাদে অন্য কারও লেখা আগে অনুবাদ হয়নি। মনোটোনাস হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বইটি পড়লে বুঝতে পারবেন। আগেই বলেছি, বিষয় বৈচিত্রও আছে।
অলাত এহ্সান : অনুবাদের ক্ষেত্রে অনেকে ভাষা, অনেকে ভাব, অনেকে মূলবক্তব্য অনুসরণ করেন। এতে কি একটি সাহিত্যের প্রকৃতাবস্থারহেরফের ঘটে যায় না?
দিলওয়ার হাসান : এই যে তিনটি বিষয়ের কথা আপনি বললেন অনুবাদে আসলে এগুলোর সমন্বয় ঘটাতে হয়। এ কথা অনস্বীকার্য যে, অনুবাদে প্রকৃতাবস্থার হেরফের ঘটবেই।
অলাত এহ্সান : অনেকে মূল বইয়ের সঙ্গে মিলিয়েমিলিয়ে মানে আক্ষরিক বা মূলানুগ অনুবাদ, কেউ ভাবগত বা মূলবক্তব্যকের দিক খেয়ালরেখে অনুবাদ করেন। কোন ধরনের অনুবাদে প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে বলে আপনি মনে করেন? কেন?
দিলওয়ার হাসান : ভাবগত না হলে অনুবাদের সৌন্দর্য ফোটান মুশকিল। শুধু শব্দের প্রতিস্থাপন তো অনুবাদ হতে পারে না। ভাবের জন্য পারফেক্ট শব্দের দরকার হয়।
অলাত এহ্সান : অন্যান্য অনুবাদক থেকে নিজেকেকিভাবে আলাদা করেন?
দিলওয়ার হাসান : এটা পাঠক বলতে পারবেন। তবে লেখক নির্বাচনের ব্যাপারে আমার একটা ভিন্ন চোখ আছে। কনস্তানতিন পাউস্তোভল্কি, ইউসেফ আল সেবাই, পেদরো হুয়ান গুটিয়েররেজ, বোবেরতো বোলানিও, হারুকি মুরাকামি ও ঝুম্পা লাহিড়িকে এ দেশে আমি-ই প্রথম পরিচিত করি।
অলাত এহ্সান : অনুবাদকের স্বাধীনতা, শব্দ তৈরি ইত্যাদি দিক অনেকে সামনে আনেন। এটাকে আপনি কি ভাবে দেখেন? তা ছাড়া অনুবাদকের আদৌ কোনো স্বাধীনতা আছে কি?
দিলওয়ার হাসান : অনুবাদে সৌন্দর্য বলুন বা সাবলীলতা বলুন-এসবের খাতিরে স্বাধীনতা কিছুটা হলেও নিতে হয়। স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচারিতা নিশ্চয়ই একই অর্থ বহন করে না।
অলাত এহ্সান : অনুবাদ আমাদের সাহিত্যে কী অবদান রাখছে?
দিলওয়ার হাসান : অনুবাদ তখনই সাহিত্যে অবদান রাখতে পারবে যখন তার পঠন-পাঠন কাউকে সমৃদ্ধ করতে পারবে। বর্তমান প্রেক্ষিতে যে রকম তো চোখে পড়ছে না। রুশ অনুবাদের বহুল প্রাপ্তি সে সময় সাহিত্যে অবদান রেখেছিল বইকি, কিন্তু তাকে আরো বিকশিত করা যেত।
অলাত এহ্সান : অন্য একটি ভাষায় লেখা অনুবাদ হচ্ছে। অথচ লেখক জানছেন না, রয়েলটি পাচ্ছেন না। মূলানুগ অনুবাদের জন্যও তার সঙ্গেযোগাযোগ করা হচ্ছে না। বিষয়টা কিভাবে দেখেন?
দিলওয়ার হাসান : এই যোগাযোগের ব্যাপারটা খুব সহজ নয়। তবে মূল লেখকেরও রয়ালটির অংশ পাওয়া উচিত, যদিও অর্থের অংক খুব সামান্যই হবে। সবচেয়ে ভাল তাদের অনুমতি নিয়ে রয়ালটি মওকুফ করিয়ে নেওয়া। কিন্তু হাস্য হল, এদেশে অনুবাদকই সম্মানী পায় না, সেখানে মূল লেখকের প্রতিনিধিত্ব করবে কে? খোঁজ নিলে পাওয়া যাবে, অনেক সময় অনুবাদকই জানেন না, তার কত ছাপা হয়েছে।
অলাত এহ্সান : লেখালেখির ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের কথা প্রায়ই শোনা যায়। আমাদের দেশে অনুবাদের তেমন পেশাদারিত্ব দেখছি না। অনুবাদের মানোন্নয়নের জন্য পেশাদারিত্বের ভূমিকা কী মনে করেন আপনি?
দিলওয়ার হাসান : শুধু সাহিত্য-ই নয় যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে পেশাদায়িত্বের মূল্য আছে। সেই মূল্যের কথা বিবেচনায় রেখে অনুবাদকদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তার আসার জন্য পথও তৈরি রাখতে হবে।
অলাত এহ্সান : নতুন লেখক তৈরির ক্ষেত্রে লিটলম্যাগকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হয়। আজকের দিনে অনেকের মধ্যে অনুবাদক হওয়ার চিন্তাওদেখা যায়। অনুবাদক তৈরির ক্ষেত্রে কোনো মাধ্যমটি আপনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন? আদৌ কি তেমন কোনো মাধ্যম আছে?
দিলওয়ার হাসান : অনুবাদক তৈরির ক্ষেত্রে সব মাধ্যমই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ কোনো মাধ্যম এ-ক্ষেত্রে উপযুক্ত বলে আমার মনে হয় না। অনুবাদের পত্রিকা প্রকাশ হওয়া জরুরি। আমারা ‘সিন্দাবাদ’ নামক একটা অনুবাদ পত্রিকা করছি। এটা একটা মান বহন করে। কিন্তু অনুবাদক তৈরি জন্য অনুবাদের লিটন ম্যাগ বের হওয়া দরকার।
অলাত এহ্সান : অনুবাদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। এটা আমাদের দেশে মানসম্মত অনুবাদের ক্ষেত্রে কি কোনো ভূমিকা রাখছে?
দিলওয়ার হাসান : অনুবাদে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেয়, জানি। আমার মনে হয় না পুরস্কারের জন্যে কেউ লেখেন বা অনুবাদ করেন। তবে এটা একটা উৎসাহ বটে। পুরস্কার প্রতি লোভ থাকলে তার অনুবাদের মান থাকবে না। আবার পুরস্কার দেয়ার ক্ষেত্রে মান-আবিষ্কারকে গুরুত্ব দেয়া দরকার।
অলাত এহ্সান : এই মুহুর্তে দেশে যে অনুবাদ হচ্ছে, তার মান নিয়ে কি আপনি সন্তুষ্ট?
দিলওয়ার হাসান : মোটেই সন্তুষ্ট নই। অধিকাংশই বানিজ্যিক অনুবাদ।
অলাত এহ্সান : আমাদের দেশে অনেক অনুবাদক আছেন। বাজারে তাদের অনেক বইও আছে। আপনি কাদেরকে আদর্শ অনুবাদক বলে মনে করেন?
দিলওয়ার হাসান : আপনি আদর্শ অনুবাদক বলে যা বোঝাতে চাইছেন সে রকম অনুবাদকের খুব অভাব আমাদের দেশে। নাম টাম আর বললাম না।
অলাত এহ্সান : আপনাকে ধন্যবাদ, অনুবাদের মূল জায়গা গুলো স্পষ্ট করে বলার জন্য।
দিলওয়ার হাসান : তোমাকে ধন্যবাদ এহ্সান। গল্পপাঠকেও ধন্যবাদ।
লেখক পরিচিতি
দিলওয়ার হাসান
জন্ম ১৯৫৭ সালে, মানিকগঞ্জে। বর্তমান আবাসস্থল–ঢাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স সহ এম,এ। স্কুল জীবন থেকে লেখালিখি ও সাংবাদিকতা শুরু। ১৯৮১ সালে দৈনিক সংবাদের সহ সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবনের শুরু। পেশা - বেসরকারি চাকরি ও লেখালেখি : গল্প, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনি, অনুবাদ। প্রথম আলো, আলোকিত বাংলাদেশ, কালি ও কলম, উত্তরাধিকার, শব্দঘর ও অনলাইন পত্রিকা নিয়মিত লেখেন।
প্রকাশিত গ্রন্থ – অন্য দেশের গল্প, (অনুবাদ গল্প সংকলন), টু উইমেন, (অনুবাদ উপন্যাস), আদম এবং ইভের গল্প(ছোট গল্প), সর্ট স্টোরিজ, আইজ্যাক সিঙ্গার (অনুবাদ গল্প সংকলন), ওস্তাদ নাজাকাত আলি কর্নেলকে একটা চিঠি লিখেছিলেন (ছোট গল্প), হারুকি মুরাকামির শ্রেষ্ঠ গল্প (অনুবাদ গল্প)০

সাক্ষাৎকারগ্রহণকারীর পরিচিতি
অলাত এহ্সান
জন্ম ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আরো ভেতরে, বারুয়াখালী গ্রামে। কঠিন-কঠোর জীবন বাস্তবতা দেখতে দেখতে বড় হয়ে ওঠা। পারিবারিক দরিদ্রতা ও নিম্নবিত্ত অচ্ছ্যুত শ্রেণির মধ্যে বসত, জীবনকে দেখিয়েছে কাছ থেকে। পড়াশুনা করেছেন মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ(ইন্টারমিডিয়েট) ও ঢাকা কলেজে(অনার্স-মাস্টর্স)। ছাত্র জীবন থেকেই বাম রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া। কবিতা লেখা দিয়ে সাহিত্য চর্চা শুরু হলেও মূলত গল্পকার। প্রবন্ধ লিখেন। প্রকাশিতব্য গল্পগ্রন্থ ‘পুরো ব্যাপারটাই প্রায়শ্চিত্ব ছিল’। প্রবন্ধের বই প্রকাশের কাজ চলছে।০
1 মন্তব্যসমূহ
প্রশ্ন ও উত্তর দুটোই চমতকার।
উত্তরমুছুন