ঢাকা: কথাপ্রকাশ, ২০১৪। পৃষ্ঠাসংখ্যা ১১২। মূল্য ১৬০ টাকা। প্রচ্ছদ ধ্রুব এষ।
স্বরচিষ সরকার
এক
পনেরোটি প্রবন্ধ নিয়ে বইটি পরিকল্পিত। এর মধ্যে দশটি প্রবন্ধের বিষয় রবীন্দ্রনাথ। বাকি পাঁচটি প্রবন্ধের বিষয় ভাষা। আমার বিবেচনায় এগুলো নিয়ে আলাদা দুটি বই হতে পারতো। আকারে ছোটো হয়ে যেতো বলে অনেকে অভিযোগ করতে পারেন। কিন্তু সে অভিযোগ ধোপে টেকে না।
“ভাষা, ভাষাদর্শন: বাংলা ভাষা: রাষ্ট্রে সমাজে প্রয়োগবৃত্তান্ত” প্রবন্ধটির কথাই ধরা যাক। প্রবন্ধটির পৃষ্ঠাসংখ্যা ২৬। পৃষ্ঠার মাপে ২৬ মনে হলেও এর সত্যিকারের আয়তন অনেক বেশি। আমি নিজে ১১২ পৃষ্ঠার বইটির ৮৬ পৃষ্ঠা পড়তে যে সময় ব্যয় করেছি, এই ২৬ পৃষ্ঠা পড়তে তার চেয়ে অন্তত দেড় গুণ সময় নিয়েছি। অনেক সময়ে পাঠকের দুর্বলতার জন্য পড়তে সময় লাগতে পারে, তা মানি। কিন্তু বিষয়ও কখনো কখনো অধিক মনোযোগ দাবি করতে পারে। আমি নিজে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র; ব্যাকরণ ও অভিধানে কাজ করেছি। তাই প্রথমে এক ধরনের অহংকার নিয়ে পড়তে শুরু করেছিলাম, আপনারাও হয়তো এভাবে শুরু করতে পারেন। কিন্তু প্রবন্ধটির প্রথম অনুচ্ছেদটি প্রথমবার দ্রুত পড়ে যাবার পরে মনে হলো, কিছুই বুঝতে পারলাম না। তখন দ্বিতীয় বারে ধীরে ধীরে পড়তে শুরু করলাম, যেভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রেরা পড়ে ঠিক সেভাবে, তখন প্রবন্ধের বক্তব্য আমার কাছে স্পষ্ট হতে লাগলো। বুঝতে পারলাম, এ প্রবন্ধ অন্য ধাঁচের। বর্ণনামূলক নয়, বিশ্লেষণমূলকও নয়, এ প্রবন্ধ দার্শনিকের প্রবন্ধ। এখানে কোনো তাড়াহুড়ো চলে না। ধীরে সুস্থে পড়তে হয়, গভীরভাবে অনুধাবন করতে হয়। প্রবন্ধের প্রথম অনুচ্ছেদটি শোনানো যাক:
ভাষা-বলাটা ঠিক কবে থেকে শেখা শুরু আর কবে শেষ তা কোনো ভাষা-বলিয়েই বলতে পারে না। ওটা যে একটা দক্ষতা, শেখা, রপ্ত করার বিষয়, তার একরকম শুরু আছে, একরকম শেষ আছে, তা কারো চেতন মনে হাজির থাকে না। যেমন ব্যক্তির নিজের অস্তিত্বের শুরুর কথা ব্যাখ্যা করে বলবার সাধ্য নেই। জায়গাটা খুব আবছা। পুরোপুরি নিরেট অন্ধকার কিনা জানি না, তবে সেখানে মন-চোখ-দৃষ্টি যে ঠিকমতো চলে না তাতে সন্দেহ নেই। তবে শিশুর ভাষা বলার শুরু-শেষ আমরা মোটামুটি ভালোই দেখতে পাই। বাবা-মা জানে ছেলে-মেয়ে কবে, এমনকি কোন মুহূর্ত থেকে আপ্রাণ চেষ্টায় ঠোঁট বাঁকিয়ে চুরিয়ে, থুথু বের করে হাত পা ছুড়ে ধ্বনি উচ্চারণের চেষ্টা করলো আর কবেই বা শব্দ শিখে উল্টো-পাল্টা করে একসময় দিব্যি কথা-বলিয়ে হয়ে গেল। এই অন্ধকার জায়গাটা নিয়ে ভাষাতত্ত্ববিদ-ভাষাবিজ্ঞানী অনেক কাজ করেছেন এবং আজও যে করেন তা থেকে স্পষ্ট হয়, বোঝা-ব্যাখ্যা পুরো সম্পন্ন হয়নি। হবার নয় বলেই হয়নি। উজ্জ্বল রোদ অত সহজে চেতনার সব স্তরে পড়ে না। পৃথিবী চেনা আর ভাষা-বলা কি একই সাথে চলে? পৃথিবী চেনা বলতে শুধু বস্তু চেনা বোঝাবে না, অস্তি-চেতনা চেনাও বুঝতে হবে। চেতনা তখন বিকাশের কোন স্তরে থাকে?
এই উদ্ধৃতির ভাষা অত্যন্ত সহজ সরল। কোনো অপরিচিত শব্দ নেই। পরিভাষার কচকচি নেই। এখানে ভাষা সম্পর্কে যে তত্ত্ব আলোচনা করা হয়েছে, তা হয়তো কঠিনও নয়, কিন্তু সকলেই এ ব্যাপারে অন্তত একমত হবেন যে, বিষয়টি গভীর মনোযোগ দাবি করে। শুধু এই বিবেচনাতেই ২৬ পৃষ্ঠার এই প্রবন্ধ নিয়ে আলাদা বই হতে পারতো। কিন্তু যে তির ছোড়া হয়ে গেছে, তাকে তো আর ফেরানো যাবে না। ভবিষ্যতে হয়তো ভাষাদর্শন নিয়ে হাসান আজিজুল হকের কাছে একটি গোটা বই প্রত্যাশা করতে পারি। আর আপাতত পারি, যুগলবন্দী এ বইয়ে যা আলোচনা করা হয়েছে, তার দিকে খানিকটা তাকাতে, আর দু-একটা দিকের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে। অতঃপর সেই চেষ্টা করা যাক।
দুই
প্রথমে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক প্রবন্ধ। দশটি প্রবন্ধে রবীন্দ্র-জীবনের বহু দিকের আলোচনা জায়গা পায়। রবীন্দ্রনাথকে বহুভাবে দেখার চেষ্টা আছে। রবীন্দ্রনাথ কেন একুশ শতকেও প্রাসঙ্গিক সে কথাও একাধিকবার বলা হয়েছে।
একটি প্রবন্ধের শিরোনাম ‘আমার রবীন্দ্রনাথ।’ প্রবন্ধটিতে লেখক এক ধরনের গর্ব প্রকাশ করেন, তাঁর একটি বড়ো মাপের রবীন্দ্রনাথ আছে, এজন্য গর্ব। রবীন্দ্রনাথের গুণের অন্ত নেই, তাঁর সৃজনশীলতা অসাধারণ, তাঁর প্রাসঙ্গিকতা একুশ শতকেও জীবন্ত; এমনকি পাশ্চাত্যের খ্যাতিমান দার্শনিকেরাও লেটেস্ট লজিকাল পজিটিভিজম-এর উদাহরণ দিতে গিয়ে কিভাবে রবীন্দ্র রচনার উদাহরণ তুলে ধরেন, তার উল্লেখ করতে গিয়ে হাসান আজিজুল হকের গর্ব অনুভব করা যায়। একাধিক প্রবন্ধের মধ্যে হাসান আজিজুল হকের এই গর্বকে ছড়িয়ে পড়তে দেখি। একটি প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথকে তুলনা করা হয় চন্দনকাঠের সিন্দুকের সঙ্গে। বলেন, পৃথিবীর জাতিপুঞ্জে রাষ্ট্রপুঞ্জে তারাই হতভাগ্য ও করুণার পাত্র, যাদের এই ধরনের সিন্দুক নেই। বাল্মীকি, হোমার, দান্তে এই ধরনের সিন্দুক। সব সময়ে হয়তো তা খোলার দরকার হয় না। কিন্তু এই ধরনের চন্দন কাঠের সিন্দুকের যারা অধিকারী, তাদের আভিজাত্য যে অন্যদের চেয়ে আলাদা তা তো বলাই বাহুল্য।
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে হাসান আজিজুল হক রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রচিন্তার বরাত দেন, প্রায়ই তাঁর কবিতা ও গানের লাইন উদ্ধৃত করেন, তাঁর ‘গোরা’ উপন্যাস যে অসাধারণ সৃষ্টি সে-কথা একাধিকবার উল্লেখ করেন।
রবীন্দ্রনাথের কথা বলতে গিয়ে হাসান আজিজুল হক এক পর্যায়ে তাঁর সহজাত সৃজনশীলতার পথে হাঁটতে শুরু করেন। “ধুলোয় মলিন গল্পগুচ্ছ” তার উদাহরণ। “ধুলায় মলিন গল্পগুচ্ছ”-টি আসলে অনেকটা স্মৃতিকথার মতো। বাংলাদেশের একটি কিশোর কিভাবে রবীন্দ্রনাথের গল্পগুলোর সঙ্গে পরিচিত হয়, এক একটা গল্পের গাঁথুনি কিভাবে তাকে মুগ্ধ করে, এইসব এখানে পরিস্ফুট। রচনাটি শেষ পর্যন্ত নিজেই একটা ছোটোগল্প হয়ে যায়। প্রায় একই ধরনের রচনা “পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রনাথ।” ভ্রমণকাহিনির ভঙ্গিতে রচিত হলেও শেষ পর্যন্ত এ রচনাও গল্পের সারিতে এসে দাঁড়ায়। রচনা দুটি তাঁর যে কোনো গল্পগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হতে পারতো। তবে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে হাসান আজিজুল হকের যে মুগ্ধতা তাঁর অন্যান্য প্রবন্ধের মধ্যে প্রতিফলিত, এই রচনা দুটির মধ্যেও আসলে সেই মুগ্ধতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এদিক দিয়ে রচনা দুটো এখানে যথেষ্ট মানানসই।
তিন
ভাষা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে হাসান আজিজুল হক উপলব্ধি করেন, মানুষ যখন ভাষা ব্যবহার করে, তখন সে ‘প্রায় স্বয়ংক্রিয়, অর্ধচেতন কিন্তু তৎপর একটি ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার মধ্যে’ থাকে। খেয়াল করেন, মানুষ যখন কথা বলে, তখন তার ভুল হয় না। কিন্তু লেখার সময়ে ভাষার শুদ্ধাশুদ্ধির প্রশ্ন এসে দাঁড়ায়। তারপর তাঁর মনে হয়, ভাষার শুদ্ধাশুদ্ধিও আসলে ভাষার মধ্যে থাকে না, তা মানুষেরই তৈরি করে নেওয়া বিষয়। আবার শেষ পর্যন্ত তাঁর মনে হয়, ‘বলতে শেখা আর লিখতে শেখার মধ্যে আপাত তফাত কিছু থাকলেও আর লেখার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু দৃশ্যমান দেখালেও আদতে ভাষা-বলা আর ভাষা লেখার মূল প্রক্রিয়াটা মানুষের জন্যে অনেকটা নিহিত সংস্কারই বটে।’ ভাবনা উদ্রেককারী এবং গভীর মনোযোগ দাবি করে এমন বহু বক্তব্য ভাষা বিষয়ক প্রবন্ধগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
“ভাষা, ভাষাদর্শন” প্রবন্ধে কথার ভাষা আর লেখার ভাষার মধ্যকার পার্থক্য আলোচনা করতে গিয়ে তিনি লেখেন:
লেখার ভাষা তুলনায় যত্ননির্মিত, কোনো খামতি রেখে দেয় না। ভাষা গুছিয়ে তোলে, বাক্যে বাক্যে সাজায়, অসম্পূর্ণ উক্তিকে সম্পূর্ণ করে দেয়। সবচেয়ে বড়ো কথা, কথাকে চিহ্নে রূপান্তরিত করে স্থায়ী করে তোলে। একটু যত্ন করলে, সাবধান হলে, নিয়মকানুনগুলোকে জেনে বা না জেনে প্রয়োগ করলে কথার ভাষার অনেক ত্রুটি ঢাকা পড়ে যায়। তার চেয়ে বড়ো কথা, লেখার কথারা মরে না, থেকে যায়। হয়তো কৃত্রিম, হয়তো নির্মিত। হোক, হলেও কিছু যায় আসে না। মুখের কথা আর লেখার ভাষা খানিকটা আলাদা হয়ে যায় মাত্র। সামান্য ক্ষতি!
এই প্রবন্ধের মধ্যে ভাষা সম্পর্কে হাসান আজিজুল হকের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলব্ধি: পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা যতো, ভাষার সংখ্যাও ততো।
“উচ্চশিক্ষায় বাংলা ভাষার ব্যবহার” নামের একটি প্রবন্ধ আছে এ বইয়ে। শিরোনাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে, আকাক্সক্ষার সঙ্গে বাস্তবের মিল কম থাকায় লেখক হাসান আজিজুল হকের হতাশা ব্যক্ত হয়েছে এখানে। কারণ তিনি দেখতে পান, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আবেগকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, সব ক্ষেত্রে কিভাবে বাংলা ভাষার প্রয়োগ সম্ভব করা যায়, সে ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না। ভাষাশিক্ষাতেই গলদ থেকে যাচ্ছে। বাংলায় পাঠ্যপুস্তক প্রণীত হচ্ছে না, যা কিছু হচ্ছে, তা ভালোভাবে হচ্ছে না, এইসব।
চমৎকার একটা রসিকতা লক্ষণীয় “বাংলা ভাষার কথ্য-লেখ্য সাধু-চলিতের বিভ্রাট: বাংলা একাডেমীর হস্তক্ষেপ, পদক্ষেপ” প্রবন্ধের শিরোনামের মধ্যেই। ভাষা পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠান যদি কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে তাকে পদক্ষেপ বলাই যায়, কিন্তু তা যদি জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার মতো কিছু হয়, তাহলে তা বোঝাতে হস্তক্ষেপই যথাযথ শব্দ, আর হস্তক্ষেপের পাশাপাশি যখন পদক্ষেপ শব্দ আসে, তখন তা আর উদ্যোগ বোঝায় না, হস্তক্ষেপের চেয়ে আরো খারাপ কিছুর দিকে ইঙ্গিত করে। যেমন হাতের ঘুসির বদলে পায়ের লাথি। এই প্রবন্ধের আলোচ্য বাংলা একাডেমির প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ। বোঝা যাচ্ছে, লেখকের বিশেষ আপত্তি প্রমিত শব্দটি নিয়ে। আলোচনা থেকে বোঝা যায়, প্রমিত অভিধার চেয়ে তিনি চলিত এবং মান অভিধার প্রতি দুর্বল। আবার ‘কোষবদ্ধ তরবারির চেয়ে কোষমুক্ত যুদ্ধমান তরবারিকে’ তিনি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। লেখাটি সম্ভবত, ব্যাকরণটি প্রকাশের পূর্বে। তাই খানিকটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে মনে হয়। কারণ বাংলা একাডেমির এই ব্যাকরণ কোনো নির্দেশমূলক ব্যাকরণ ছিলো না, ছিলো বর্ণনামূলক। বাংলা একাডেমি যদি কখনো এমন নির্দেশমূলক ব্যাকরণ তৈরি করে অবশ্যই তা হস্তক্ষেপ বা পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হবে। পাকিস্তান আমলে আমরা বাংলা ভাষার উপরে যেমনটা দেখেছি। সেদিক দিয়ে প্রবন্ধটি সাবধানবাণী হিসেবে গুরুত্ববহ। তাছাড়া সত্যিকার অর্থে সর্বজনগ্রাহ্য একটি প্রমিত ভাষা যে তাঁরও কাম্য, সেটা তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখও করেন তাঁর এ বইয়ের সর্বশেষ প্রবন্ধটিতে। তিনি লেখেন: “আমাকে সবার কাছে প্রকাশ করার জন্য একটা মানভাষা দিতে হবে। একটা গৃহীত ভাষা, যাকে আমরা সবাই গ্রহণ করেছি -- এমন ভাষায় লিখতে হবে।”
চার
হাসান আজিজুল হকের অন্যান্য প্রবন্ধের বইয়ের মতো এ বইয়েরও প্রধান প্রশংসার দিক এর ভাষাশৈলী। তাঁর এ শৈলী বিষয়ের মধ্যে প্রবেশ করতে সহায়তা করে। প্রথাগত সমালোচনা শাস্ত্রে ভাষার এই বৈশিষ্ট্যকে বলা হতো প্রসাদগুণ। এই গুণের কারণে হাসান আজিজুল হক যতো জটিল তত্ত্বই আলোচনা করেন না কেন, তা পাঠকের নিকট দুর্বোধ্য মনে হয় না। তিনি নিজেও এ ব্যাপারে সচেতন বলে হয়। আলোচনা প্রসঙ্গে একদিন তিনি বলেছিলেন, তিনি নিজে যা বোঝেন না, তা লেখেন না; আবার নিজে তিনি যেভাবে বোঝেন, ঠিক সেভাবেই তিনি তা পাঠকের কাছে তুলে ধরতে চেষ্টা করেন। হাসান আজিজুল হকের ভাষাশৈলীর এটাই হলো মূল চাবিকাঠি। এই চাবিকাঠি দিয়ে তিনি রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক সমকালীন জটিলতাকে এবং একই সঙ্গে সমকালীন জটিল ভাষাপরিস্থিতিকে খুবই সহজ ও সরলভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। বইটির বহুল প্রচার কামনা করি।
স্বরচিষ সরকার
এক
পনেরোটি প্রবন্ধ নিয়ে বইটি পরিকল্পিত। এর মধ্যে দশটি প্রবন্ধের বিষয় রবীন্দ্রনাথ। বাকি পাঁচটি প্রবন্ধের বিষয় ভাষা। আমার বিবেচনায় এগুলো নিয়ে আলাদা দুটি বই হতে পারতো। আকারে ছোটো হয়ে যেতো বলে অনেকে অভিযোগ করতে পারেন। কিন্তু সে অভিযোগ ধোপে টেকে না।
“ভাষা, ভাষাদর্শন: বাংলা ভাষা: রাষ্ট্রে সমাজে প্রয়োগবৃত্তান্ত” প্রবন্ধটির কথাই ধরা যাক। প্রবন্ধটির পৃষ্ঠাসংখ্যা ২৬। পৃষ্ঠার মাপে ২৬ মনে হলেও এর সত্যিকারের আয়তন অনেক বেশি। আমি নিজে ১১২ পৃষ্ঠার বইটির ৮৬ পৃষ্ঠা পড়তে যে সময় ব্যয় করেছি, এই ২৬ পৃষ্ঠা পড়তে তার চেয়ে অন্তত দেড় গুণ সময় নিয়েছি। অনেক সময়ে পাঠকের দুর্বলতার জন্য পড়তে সময় লাগতে পারে, তা মানি। কিন্তু বিষয়ও কখনো কখনো অধিক মনোযোগ দাবি করতে পারে। আমি নিজে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র; ব্যাকরণ ও অভিধানে কাজ করেছি। তাই প্রথমে এক ধরনের অহংকার নিয়ে পড়তে শুরু করেছিলাম, আপনারাও হয়তো এভাবে শুরু করতে পারেন। কিন্তু প্রবন্ধটির প্রথম অনুচ্ছেদটি প্রথমবার দ্রুত পড়ে যাবার পরে মনে হলো, কিছুই বুঝতে পারলাম না। তখন দ্বিতীয় বারে ধীরে ধীরে পড়তে শুরু করলাম, যেভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রেরা পড়ে ঠিক সেভাবে, তখন প্রবন্ধের বক্তব্য আমার কাছে স্পষ্ট হতে লাগলো। বুঝতে পারলাম, এ প্রবন্ধ অন্য ধাঁচের। বর্ণনামূলক নয়, বিশ্লেষণমূলকও নয়, এ প্রবন্ধ দার্শনিকের প্রবন্ধ। এখানে কোনো তাড়াহুড়ো চলে না। ধীরে সুস্থে পড়তে হয়, গভীরভাবে অনুধাবন করতে হয়। প্রবন্ধের প্রথম অনুচ্ছেদটি শোনানো যাক:
ভাষা-বলাটা ঠিক কবে থেকে শেখা শুরু আর কবে শেষ তা কোনো ভাষা-বলিয়েই বলতে পারে না। ওটা যে একটা দক্ষতা, শেখা, রপ্ত করার বিষয়, তার একরকম শুরু আছে, একরকম শেষ আছে, তা কারো চেতন মনে হাজির থাকে না। যেমন ব্যক্তির নিজের অস্তিত্বের শুরুর কথা ব্যাখ্যা করে বলবার সাধ্য নেই। জায়গাটা খুব আবছা। পুরোপুরি নিরেট অন্ধকার কিনা জানি না, তবে সেখানে মন-চোখ-দৃষ্টি যে ঠিকমতো চলে না তাতে সন্দেহ নেই। তবে শিশুর ভাষা বলার শুরু-শেষ আমরা মোটামুটি ভালোই দেখতে পাই। বাবা-মা জানে ছেলে-মেয়ে কবে, এমনকি কোন মুহূর্ত থেকে আপ্রাণ চেষ্টায় ঠোঁট বাঁকিয়ে চুরিয়ে, থুথু বের করে হাত পা ছুড়ে ধ্বনি উচ্চারণের চেষ্টা করলো আর কবেই বা শব্দ শিখে উল্টো-পাল্টা করে একসময় দিব্যি কথা-বলিয়ে হয়ে গেল। এই অন্ধকার জায়গাটা নিয়ে ভাষাতত্ত্ববিদ-ভাষাবিজ্ঞানী অনেক কাজ করেছেন এবং আজও যে করেন তা থেকে স্পষ্ট হয়, বোঝা-ব্যাখ্যা পুরো সম্পন্ন হয়নি। হবার নয় বলেই হয়নি। উজ্জ্বল রোদ অত সহজে চেতনার সব স্তরে পড়ে না। পৃথিবী চেনা আর ভাষা-বলা কি একই সাথে চলে? পৃথিবী চেনা বলতে শুধু বস্তু চেনা বোঝাবে না, অস্তি-চেতনা চেনাও বুঝতে হবে। চেতনা তখন বিকাশের কোন স্তরে থাকে?
এই উদ্ধৃতির ভাষা অত্যন্ত সহজ সরল। কোনো অপরিচিত শব্দ নেই। পরিভাষার কচকচি নেই। এখানে ভাষা সম্পর্কে যে তত্ত্ব আলোচনা করা হয়েছে, তা হয়তো কঠিনও নয়, কিন্তু সকলেই এ ব্যাপারে অন্তত একমত হবেন যে, বিষয়টি গভীর মনোযোগ দাবি করে। শুধু এই বিবেচনাতেই ২৬ পৃষ্ঠার এই প্রবন্ধ নিয়ে আলাদা বই হতে পারতো। কিন্তু যে তির ছোড়া হয়ে গেছে, তাকে তো আর ফেরানো যাবে না। ভবিষ্যতে হয়তো ভাষাদর্শন নিয়ে হাসান আজিজুল হকের কাছে একটি গোটা বই প্রত্যাশা করতে পারি। আর আপাতত পারি, যুগলবন্দী এ বইয়ে যা আলোচনা করা হয়েছে, তার দিকে খানিকটা তাকাতে, আর দু-একটা দিকের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে। অতঃপর সেই চেষ্টা করা যাক।
দুই
প্রথমে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক প্রবন্ধ। দশটি প্রবন্ধে রবীন্দ্র-জীবনের বহু দিকের আলোচনা জায়গা পায়। রবীন্দ্রনাথকে বহুভাবে দেখার চেষ্টা আছে। রবীন্দ্রনাথ কেন একুশ শতকেও প্রাসঙ্গিক সে কথাও একাধিকবার বলা হয়েছে।
একটি প্রবন্ধের শিরোনাম ‘আমার রবীন্দ্রনাথ।’ প্রবন্ধটিতে লেখক এক ধরনের গর্ব প্রকাশ করেন, তাঁর একটি বড়ো মাপের রবীন্দ্রনাথ আছে, এজন্য গর্ব। রবীন্দ্রনাথের গুণের অন্ত নেই, তাঁর সৃজনশীলতা অসাধারণ, তাঁর প্রাসঙ্গিকতা একুশ শতকেও জীবন্ত; এমনকি পাশ্চাত্যের খ্যাতিমান দার্শনিকেরাও লেটেস্ট লজিকাল পজিটিভিজম-এর উদাহরণ দিতে গিয়ে কিভাবে রবীন্দ্র রচনার উদাহরণ তুলে ধরেন, তার উল্লেখ করতে গিয়ে হাসান আজিজুল হকের গর্ব অনুভব করা যায়। একাধিক প্রবন্ধের মধ্যে হাসান আজিজুল হকের এই গর্বকে ছড়িয়ে পড়তে দেখি। একটি প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথকে তুলনা করা হয় চন্দনকাঠের সিন্দুকের সঙ্গে। বলেন, পৃথিবীর জাতিপুঞ্জে রাষ্ট্রপুঞ্জে তারাই হতভাগ্য ও করুণার পাত্র, যাদের এই ধরনের সিন্দুক নেই। বাল্মীকি, হোমার, দান্তে এই ধরনের সিন্দুক। সব সময়ে হয়তো তা খোলার দরকার হয় না। কিন্তু এই ধরনের চন্দন কাঠের সিন্দুকের যারা অধিকারী, তাদের আভিজাত্য যে অন্যদের চেয়ে আলাদা তা তো বলাই বাহুল্য।
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে হাসান আজিজুল হক রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রচিন্তার বরাত দেন, প্রায়ই তাঁর কবিতা ও গানের লাইন উদ্ধৃত করেন, তাঁর ‘গোরা’ উপন্যাস যে অসাধারণ সৃষ্টি সে-কথা একাধিকবার উল্লেখ করেন।
রবীন্দ্রনাথের কথা বলতে গিয়ে হাসান আজিজুল হক এক পর্যায়ে তাঁর সহজাত সৃজনশীলতার পথে হাঁটতে শুরু করেন। “ধুলোয় মলিন গল্পগুচ্ছ” তার উদাহরণ। “ধুলায় মলিন গল্পগুচ্ছ”-টি আসলে অনেকটা স্মৃতিকথার মতো। বাংলাদেশের একটি কিশোর কিভাবে রবীন্দ্রনাথের গল্পগুলোর সঙ্গে পরিচিত হয়, এক একটা গল্পের গাঁথুনি কিভাবে তাকে মুগ্ধ করে, এইসব এখানে পরিস্ফুট। রচনাটি শেষ পর্যন্ত নিজেই একটা ছোটোগল্প হয়ে যায়। প্রায় একই ধরনের রচনা “পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রনাথ।” ভ্রমণকাহিনির ভঙ্গিতে রচিত হলেও শেষ পর্যন্ত এ রচনাও গল্পের সারিতে এসে দাঁড়ায়। রচনা দুটি তাঁর যে কোনো গল্পগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হতে পারতো। তবে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে হাসান আজিজুল হকের যে মুগ্ধতা তাঁর অন্যান্য প্রবন্ধের মধ্যে প্রতিফলিত, এই রচনা দুটির মধ্যেও আসলে সেই মুগ্ধতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এদিক দিয়ে রচনা দুটো এখানে যথেষ্ট মানানসই।
তিন
ভাষা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে হাসান আজিজুল হক উপলব্ধি করেন, মানুষ যখন ভাষা ব্যবহার করে, তখন সে ‘প্রায় স্বয়ংক্রিয়, অর্ধচেতন কিন্তু তৎপর একটি ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার মধ্যে’ থাকে। খেয়াল করেন, মানুষ যখন কথা বলে, তখন তার ভুল হয় না। কিন্তু লেখার সময়ে ভাষার শুদ্ধাশুদ্ধির প্রশ্ন এসে দাঁড়ায়। তারপর তাঁর মনে হয়, ভাষার শুদ্ধাশুদ্ধিও আসলে ভাষার মধ্যে থাকে না, তা মানুষেরই তৈরি করে নেওয়া বিষয়। আবার শেষ পর্যন্ত তাঁর মনে হয়, ‘বলতে শেখা আর লিখতে শেখার মধ্যে আপাত তফাত কিছু থাকলেও আর লেখার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু দৃশ্যমান দেখালেও আদতে ভাষা-বলা আর ভাষা লেখার মূল প্রক্রিয়াটা মানুষের জন্যে অনেকটা নিহিত সংস্কারই বটে।’ ভাবনা উদ্রেককারী এবং গভীর মনোযোগ দাবি করে এমন বহু বক্তব্য ভাষা বিষয়ক প্রবন্ধগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
“ভাষা, ভাষাদর্শন” প্রবন্ধে কথার ভাষা আর লেখার ভাষার মধ্যকার পার্থক্য আলোচনা করতে গিয়ে তিনি লেখেন:
লেখার ভাষা তুলনায় যত্ননির্মিত, কোনো খামতি রেখে দেয় না। ভাষা গুছিয়ে তোলে, বাক্যে বাক্যে সাজায়, অসম্পূর্ণ উক্তিকে সম্পূর্ণ করে দেয়। সবচেয়ে বড়ো কথা, কথাকে চিহ্নে রূপান্তরিত করে স্থায়ী করে তোলে। একটু যত্ন করলে, সাবধান হলে, নিয়মকানুনগুলোকে জেনে বা না জেনে প্রয়োগ করলে কথার ভাষার অনেক ত্রুটি ঢাকা পড়ে যায়। তার চেয়ে বড়ো কথা, লেখার কথারা মরে না, থেকে যায়। হয়তো কৃত্রিম, হয়তো নির্মিত। হোক, হলেও কিছু যায় আসে না। মুখের কথা আর লেখার ভাষা খানিকটা আলাদা হয়ে যায় মাত্র। সামান্য ক্ষতি!
এই প্রবন্ধের মধ্যে ভাষা সম্পর্কে হাসান আজিজুল হকের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলব্ধি: পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা যতো, ভাষার সংখ্যাও ততো।
“উচ্চশিক্ষায় বাংলা ভাষার ব্যবহার” নামের একটি প্রবন্ধ আছে এ বইয়ে। শিরোনাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে, আকাক্সক্ষার সঙ্গে বাস্তবের মিল কম থাকায় লেখক হাসান আজিজুল হকের হতাশা ব্যক্ত হয়েছে এখানে। কারণ তিনি দেখতে পান, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আবেগকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, সব ক্ষেত্রে কিভাবে বাংলা ভাষার প্রয়োগ সম্ভব করা যায়, সে ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না। ভাষাশিক্ষাতেই গলদ থেকে যাচ্ছে। বাংলায় পাঠ্যপুস্তক প্রণীত হচ্ছে না, যা কিছু হচ্ছে, তা ভালোভাবে হচ্ছে না, এইসব।
চমৎকার একটা রসিকতা লক্ষণীয় “বাংলা ভাষার কথ্য-লেখ্য সাধু-চলিতের বিভ্রাট: বাংলা একাডেমীর হস্তক্ষেপ, পদক্ষেপ” প্রবন্ধের শিরোনামের মধ্যেই। ভাষা পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠান যদি কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে তাকে পদক্ষেপ বলাই যায়, কিন্তু তা যদি জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার মতো কিছু হয়, তাহলে তা বোঝাতে হস্তক্ষেপই যথাযথ শব্দ, আর হস্তক্ষেপের পাশাপাশি যখন পদক্ষেপ শব্দ আসে, তখন তা আর উদ্যোগ বোঝায় না, হস্তক্ষেপের চেয়ে আরো খারাপ কিছুর দিকে ইঙ্গিত করে। যেমন হাতের ঘুসির বদলে পায়ের লাথি। এই প্রবন্ধের আলোচ্য বাংলা একাডেমির প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ। বোঝা যাচ্ছে, লেখকের বিশেষ আপত্তি প্রমিত শব্দটি নিয়ে। আলোচনা থেকে বোঝা যায়, প্রমিত অভিধার চেয়ে তিনি চলিত এবং মান অভিধার প্রতি দুর্বল। আবার ‘কোষবদ্ধ তরবারির চেয়ে কোষমুক্ত যুদ্ধমান তরবারিকে’ তিনি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। লেখাটি সম্ভবত, ব্যাকরণটি প্রকাশের পূর্বে। তাই খানিকটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে মনে হয়। কারণ বাংলা একাডেমির এই ব্যাকরণ কোনো নির্দেশমূলক ব্যাকরণ ছিলো না, ছিলো বর্ণনামূলক। বাংলা একাডেমি যদি কখনো এমন নির্দেশমূলক ব্যাকরণ তৈরি করে অবশ্যই তা হস্তক্ষেপ বা পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হবে। পাকিস্তান আমলে আমরা বাংলা ভাষার উপরে যেমনটা দেখেছি। সেদিক দিয়ে প্রবন্ধটি সাবধানবাণী হিসেবে গুরুত্ববহ। তাছাড়া সত্যিকার অর্থে সর্বজনগ্রাহ্য একটি প্রমিত ভাষা যে তাঁরও কাম্য, সেটা তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখও করেন তাঁর এ বইয়ের সর্বশেষ প্রবন্ধটিতে। তিনি লেখেন: “আমাকে সবার কাছে প্রকাশ করার জন্য একটা মানভাষা দিতে হবে। একটা গৃহীত ভাষা, যাকে আমরা সবাই গ্রহণ করেছি -- এমন ভাষায় লিখতে হবে।”
চার
হাসান আজিজুল হকের অন্যান্য প্রবন্ধের বইয়ের মতো এ বইয়েরও প্রধান প্রশংসার দিক এর ভাষাশৈলী। তাঁর এ শৈলী বিষয়ের মধ্যে প্রবেশ করতে সহায়তা করে। প্রথাগত সমালোচনা শাস্ত্রে ভাষার এই বৈশিষ্ট্যকে বলা হতো প্রসাদগুণ। এই গুণের কারণে হাসান আজিজুল হক যতো জটিল তত্ত্বই আলোচনা করেন না কেন, তা পাঠকের নিকট দুর্বোধ্য মনে হয় না। তিনি নিজেও এ ব্যাপারে সচেতন বলে হয়। আলোচনা প্রসঙ্গে একদিন তিনি বলেছিলেন, তিনি নিজে যা বোঝেন না, তা লেখেন না; আবার নিজে তিনি যেভাবে বোঝেন, ঠিক সেভাবেই তিনি তা পাঠকের কাছে তুলে ধরতে চেষ্টা করেন। হাসান আজিজুল হকের ভাষাশৈলীর এটাই হলো মূল চাবিকাঠি। এই চাবিকাঠি দিয়ে তিনি রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক সমকালীন জটিলতাকে এবং একই সঙ্গে সমকালীন জটিল ভাষাপরিস্থিতিকে খুবই সহজ ও সরলভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। বইটির বহুল প্রচার কামনা করি।
0 মন্তব্যসমূহ