যেভাবে লেখা হল দোজখনামা

রবিশঙ্কর বল

উপন্যাস আসলে নিজেই নিজেকে লেখে। এই ধারণা আমার ভিতরে ধীরে ধীরে বদ্ধমূল হচ্ছে। আমি হয়ত একটা লেখা শুরু করি, কিন্তু লিখতে লিখতে বোঝা যায়, আমি লেখাটির অনুসরণকারী হয়ে উঠেছি মাত্র। বীজটা বপন করার পর আমার কাজ হয়ে দাঁড়ায় শুধু অঙ্কুরোদগম, চারাগাছের জেগে ওঠা থেকে পত্রে-পুষ্পে-ফলে একটি বৃক্ষের জীবন-উদযাপন দেখে যাওয়া। এভাবেই একটি উপন্যাসের জন্য হয়। কিন্তু তার জন্ম, তার বেড়ে ওঠা, পরিণতি— এসবের রসায়ন আমি কতটুকু জানি? আমি তো তাকে বাইরে থেকে অবলোকন করেছি। হ্যাঁ, বাইরে থেকে। যেভাবে প্রাণ কীভাবে উৎসারিত জানি না, সেভাবেই উপন্যাসের জন্মবৃত্তান্তও আমার কাছে রহস্যময়।
এই রহস্যের সামনে আমার বোধ-বুদ্ধি-কল্পনার সীমাবদ্ধতা টের পাই। ফ্লবেরের একটি কথা তাই আমার কাছে ঔপন্যাসিকের স্বধর্ম বলে মনে হয়। ফ্লবের বলেছিলেন, ‘ঔপন্যাসিক তার সৃষ্টির পিছনে লুকাতে চায়।’ এর অর্থ আমার কাছে এই রকম : পথিক, তুমি এই প্রাচীন স্থাপত্যটি দেখো, খুঁজতে যেও না কে বা কারা তার নির্মাতা, যদি তাকে/তাদের খুঁজেও পাও, জিজ্ঞাসা করো না, কীভাবে এই স্থাপন্য নির্মিত হয়েছিল, কেননা সে/তারা শুধু সৌন্দর্যের হাতছানি অনুসরণ করে গেছে, আর কিছুই সে/তারা জানে না।

উপন্যাস যে লেখে, সে আসলে কে? আমি বলি, অনুসরণকারী। সে তার চারপাশের জীবনগুলিকে অনুসরণ করে, বেশ কিছু দূর থেকে, চরিত্ররা যেন তাকে দেখতে না পায়। তাহলে তো তাকে চোরাগোপ্তা অনুসরণকারীও বলা যায়। কিন্তু চারপাশের এই যে জীবন— চরিত্রগুলি— তারা কি শুধুই বর্তমানের, অনুসরণকারীর সমসময়ের? এই সেদিন একটি লেখায় সর্বাস্তিবাদী দার্শনিক অরিন্দম চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘পিতৃপক্ষের শেষে মহালয়ার দিন গঙ্গার জলে দাঁড়িয়ে তর্পণ করতে গিয়ে তাই আমরা অতীতের উদ্দেশে অঞ্জলি ভরে জল নিয়ে মন্ত্র বলি : ‘যারা অতীতের বান্ধব, অনাত্মীয়, যারা অন্য পূর্ব পূর্ব জন্মে বান্ধব ছিল, তারা সবাই আমার দেওয়া এই জলের দ্বারা তৃপ্ত হোক।’ বিস্মৃত অতীত জানা-অজানা নিযুত-কোটি মানুষের ধারার ধার না ধারলে উগ্র-প্রগতিশীল আমাদেরও বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে ওঠে।’ সর্বাস্তিবাদী এই জীবনে আমি কি তাহলে মির্জা গালিব, সন্ত কবির, সদত হসন মন্টো, মওলানা রুমির সঙ্গেও বাঁচি না? আমার সমসময় কি এতই ছোট যে তা শুধু সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-সাউথসিটি মল-মোমবাতি প্রতিবাদে আটকে থাকে? শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের আত্মকথার একটি অংশ মনে পড়ে: ‘আমার তো মনে হয় আমি পলাশীর প্রান্তরে সিরাজের কামান বাহক সেপাই ছিলাম। ক্যাপ্টেন টলির মজুরদের সঙ্গে মিলে দইঘাট থেকে নিকাশী নালা কেটেছিলাম। কর্নওয়ালিশের ফতোয়ায় বরিশালে আমি ভাগচাষী হয়ে যাই— তারপর হই ক্ষেতমজুর।’

শ্রীরঙ্গপত্তনমের যুদ্ধে টিপুর ভারি তলোয়ার আমিই তাকে এগিয়ে দিয়েছিলাম। অবধে নবাব ওয়াজেদ আলী শাহের খাজাঞ্চি ছিলাম আমি। ইংরেজের বিরুদ্ধে ১৮৫৭-এর মহাবিদ্রোহে সেপাইরা ছিলেন ৮০ ভাগই উত্তর ভারতের ব্রাহ্মণ সেপাই— যাদের পদবি ছিল দুবে এবং পাণ্ডে। তখনও আমার পদবি ছিল পাণ্ডে কিংবা দুবে।

‘কিন্তু ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট আমার নাম ছিল শ্যামল গঙ্গোপাদ্যায়। এখনো সে নামই আছে...।’

আমিও কি একদিন দিল্লির জামা মসজিদের চত্বরে বসে থাকা দাস্তানগো ছিলাম? দাস্তান শুনিয়ে সারা দিনের ভাত-পরোটা-গোস্তের ব্যবস্থা হয়ে গেলেই কী যে ফূর্তি! দাস্তানগোকে যদি জিগ্যেস কর, মিঞা, কিসসাটা কোথা থেকে পেলে, কে কী বলবে? আমার ওয়ালিদ, তার ওয়ালিদ, তারও ওয়ালিদ, তারও আগে কত বুজর্গ আছেন, আর পথে-ঘাটে ঘোরো না, শুধু চোখ খোলা রেখো, কান খাড়া রেখো, দাস্তানের কি অভাব আছে?

মির্জা গালিব আর সদত হসন মন্টো কীভাবে এলেন আমার কাছে? এই রহস্য ভেদ করা কঠিন। ওই যে বলেছি, সবটাই বাইরে থেকে দেখা, অতএব ‘দোজখনামা’-র পাণ্ডুলিপি কীভাবে তৈরি হয়ে উঠল, তার কয়েকটি গল্পই আমি বলতে পারি। এই উপন্যাসের সঙ্গে আমার নাম জড়িত থাকলেও, আমি সর্বান্তঃকরণে বিশ্বাস করি, জামা মসজিদের কোনও দাস্তানগোর বলা গল্প আমি টুকে রেখেছি, এর বেশি কোনও দাবি আমার নেই।

২০০৫ থেকে আমি উর্দু সাহিত্যের সঙ্গে গভীর রমণে লিপ্ত হই। আবু সয়ীদ আইয়ুবের অনুবাদে মির্জা গালিব, মীর তকী মীরের শায়েরি, বিভিন্ন জনের অনুবাদে সদত হসন মন্টো, ইসমত চুঘতাইয়ের গল্পের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম, এটুকুই বলা যায়। কিন্তু উর্দু সাহিত্যের প্রতি যে-তিনজন লেখকের মাধ্যমে আমার অচিনরাগিনী সুরবদ্ধ হন তাঁরা নাইয়ের মাসুদ, যোগিন্দর পল ও ইন্তিজার হুসেন। প্রথম দুই লেখক ভারতবর্ষের বাসিন্দা, তৃতীয়জন পাকিস্তানের। নাইয়ের মাসুদের লেখায় আমি মোহগ্রস্ত করে পড়লাম। দিল্লির কল্যাণ মুখোপাধ্যায়ের কাছে এজন্য আমি আমৃত্যু কৃতজ্ঞ থাকব। নাইয়ের মাসুদ সম্পর্কে দুএকটি কথা প্রয়োজন। লখনউ নিবাসী মাসুদের প্রাসাদোপম বাড়ির নাম ‘আদাবিস্তান’ অর্থাৎ বইয়ের ঘর। জীবনে একবার বিদেশ ছাড়া লখনউতেই তিনি স্থিতি। নাইয়ের মাসুদের একের পর এক গল্প পড়তে পড়তে আমি এক ন্যারেটিভ প্যাটার্ন খুঁজে পেলাম। কী সেই নকশা? দার্শনিক অরিন্দম চক্রবর্তী একেই তো সর্বাস্তিবাদী বলেছেন। অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ, নদীর স্রোতের সঙ্গে বয়ে চলেছে।

২০০৬-এ সংবাদ প্রতিদিন-এ ধারাবাহিকভাবে লেখা হল ‘ছায়াপুতুলের খেলা’। এই উপন্যাসের একটি অধ্যায়ে ঢুকে পড়লেন মির্জা গালিব। ইউসুফ মির্জাকে লেখা এক চিঠিতে গালিব সেখানে লিখেছিলেন, ‘একমাত্র আল্লাই আমার দুর্ভাগ্যের কথা জানেন। মির্জা গালিব, শব্দের রহস্যের কথা জানে; কিন্তু আমার ভাগ্যের কথা কতটুকু জানি? সময়ের চাকাঅন্ধের মতো ঘুরে যায়, জীবনের হাল-হকিকত জানার মালিক তো আমরা নই। আমাকে দেখলে বুঝতে পারবেন, আমি বন্দিও নই, মুক্তও নই; অসুস্থও নই, কিন্তু আমার স্বাস্থ্যই বা কোথায়? আনন্দ নেই, হতাশাও নেই, মরে যাইনি, আবার বেঁচেও তো নেই; তবু টিকে আছি, মানুষের সঙ্গে কথাবার্তাও বলি। টিকে আছি বলেই তো গলা দিয়ে খাবারও নামাতে হয়; মাঝেমধ্যে সুরারও স্বাদ পাই। জীবনের নাটক এইরকমই ম্যাড়মেড়ে। মৃত্যু এলে যবনিকা নামবে। নিজেকে যখন নিজের জীবনের কথা শোনাই, মনে হয়, স্বপ্নে পাওয়া কোনও গল্পের কথা বলছি।’

‘দোজখনামা’, এখন মনে হয়, একটা স্বপ্নে পাওয়া লেখা। গালিব এক শায়েরিতে লিখেছিলেন, ‘অনেক অনেক কিছুর খোঁজ করে, আর আমি তো কুড়িয়ে পেয়েছিলাম। ‘দোজখনামা’ সত্যিই আমি কুড়িয়ে পেয়েছি।’

সেই ২০০৬ থেকে মির্জা আসাদুল্লাহ খান গালিব আমাকে টানছেন। কেন? ২০০৭-এ গালিবকে নিয়ে প্রথম গল্পটি লেখা হল পরশপাথর পত্রিকায়, নাম ‘গালিবের কুকুর’। এই বীজরোপনের উৎসবটি লক্ষ করলে বোঝা যাবে উপন্যাস কীভাবে নিজেকে নিজেই লেখে।


গালিবের কুকুর
মার শালাকে, আরও মার কুত্তাটাকে, মারতে মারতে, না, জানে মারিস না, হারামখোরটা যেন বেঁচে থাকে, কিন্তু এমনভাবে মারবি যাতে চলাফেরা করতে না পারে, চোখে দেখবে না, কানে শুনবে না, ল্যাংড়াতে ল্যাংড়াতে কাসিম জানের গলিতে, এই বল্লিমারো মহল্লায় ঘুরে বেড়াবে, কেউ ওকে দয়া করে খাবার দিতে এলেও ভয়ে চিৎকার করে উঠবে, লওন্ডিয়ারা দেখলেই ইট-পাথর ছুড়বে, গায়ে ঘা হয়ে যাবে, ঘায়ে বিজবিজ করবে পোকা, যন্ত্রণায় মাঝে মাঝেই কেঁউ কেঁউ— কেঁউ কেঁউ করে চেঁচাবে, আর লোকেরা তত ওর দিকে লাঠি নিয়ে তেড়ে যাবে, যা ভাগ— ভাগ শালা কুত্তা কাঁহিকা, ও দৌঁড়াতে গিয়ে পা মুচড়ে পড়ে যাবে, তার পর আবার লাঠির ঘা, ঘা-এর পর ঘা।

আমার ওপর এত নিষ্ঠুর হয়ো না। একেবারে রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুর বানিয়ে দিলে? হায় আল্লা, আমি তো বাড়তি কোনও হরফ নই, তাহলে এ ভাবে আমাকে মুছে দিতে চাও কেন?

হ্যাঁ, কুকুর, তুই একটা কুকুর। তোর নামও শালা, মির্জা গালিব।

কিন্তু একবার যে বলেছিলে, মির্জা গালিব আসলে দুজন। তাহলে?

এখন বলছি, আমি বলছি, শুনে রাখ, মির্জা গালিব আসলে তিনজন। প্রথম গালিবের কিসসাটা শুনতে চাস কুত্তা?

কেঁউ-কেঁউ-কেঁউ-কেঁউ-

কী হল?

আমার পেটে কি তোমার ওই আমির-ওমরাহের কিসসা সইবে?

আয় আমার পাশে বস। একটু মন দিয়ে শোন। আজ আর তোকে মরাব না। তুই তো আমারই শার্গিদ।
তোমার শার্গিদ— তা কী করে হয়? আমার নাম তো বললে মির্জা গালিব।

আমিই আমার উস্তাদ, আমার শার্গিদ। শুনে রাখ— হ্যাঁয়, অওর ভি দুনিয়ামে সুখনবর বহত আচ্ছে, কহ্তে হ্যাঁয় কে গালিব কা হ্যায় অন্দাজ-এ-বয়াঁ অওর। আমিই বলি, আমিই জল্লাদ। আমি জাহান্নাম আরমগাহ্। নরকের বাসিন্দা। আমার কোনও উস্তাদ নেই, আমার কোনও শার্গিদ নেই।

তাহলে বলো, কিসসাটাই শুনি। কেঁউ-কেঁউ-

কী হল?

পোকাগুলো খুব কামড়ায়।

কামড়াক। সহ্য কর, তুই শালা কুত্তা, তোকে সব সহ্য করা শিখতে হবে। আর কথার মাঝে যদি কেঁউ কেঁউ করিস, এমন লাথি ঝাড়ব, শুয়ার কাঁহিকা।

ব্যথা হলে তুমি চিৎকার কর না?

না করি না, ব্যথার অনুভূতি আমার নেই। কবে ভোঁতা হয়ে গেছে। এই জীবনটাকে মাঝে মাঝে একটা কিসসা মনে হয়, হাওয়ায় হাওয়ায় দুনিয়াতে ঘুরপাক খাচ্ছে। আমি আসলে ওই কিসসাটা, মানুষ নই, অস্তিত্বই নেই আমার।

থামো তো, শুধু বড় বড় কথা। তার চেয়ে সেই কিসসাটা শুরু করো।

তুই আমাকে ধমকাচ্ছিস, কুত্তা কাঁহিকা!

আমি তোমার উস্তাদ, তোমার শার্গিদ মির্জা। জন্নত, জাহান্নম— যেখানেই যাও, আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে যাব।

এখন প্রায়ই স্বপ্নে প্রথম দেখি ধুলোর ঝড় উঠেছে। তারপর আস্তে আস্তে তাদের দেখতে পাই।
কাদের?

তাদের আমি চিনি না। তারা আমারই পূর্বপুরুষ। ঘোড়ার পিঠে চেপে, তলোয়ার নাচাতে নাচাতে, ধুলোর ঝড় তুলে তারা ছুটে আসছে। সেলজুক, তুর্কি তারা, নদীর ও পারের দেশ থেকে তারা এখানে এসেছিল। ঘোড়ারা ছুটে আসছে। এটুকুই দেখতে পাই— সাদা, বাদামি, কালো সব ঘোড়া— কী গতি তাদের— আমি তাদের দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই, ঘোড়ার পিঠে চেপে কারা আসছে, বুঝতে পারি না, তাদের কেমন অস্পষ্ট দেখায়, শুধু সাদা-বাদামি-কালো রঙের একটা ঝড় দেখতে পাই। আমার দাদা কুক্কান বেগও ছিলেন সেই দলে। জবরদস্ত সৈনিক। তুর্কি তো।

কেঁউ-কেঁউ-কেঁউ-কেঁউ-

কী হল আবার?

পোকাগুলো খুব হারামি মির্জাসাব। কামড়ায় তো কামড়াতেই থাকে।

মুঘল তখতে তখন শাহ আলম। সাম্রাজ্য দিনে দিনে ভেঙে যাচ্ছে। বাদশা শাহ আলমের বাহিনীতে পঞ্চাশ অশ্বারোহীর অধিনায়ক হলেন আমার দাদা। এই চাকরির জন্য তিনি অনেক জমিজমা পেয়েছিলেন, খেয়েদেয়ে সবাই সুখেই থাকত। কিন্তু দাদার মৃত্যুর পর সেই জমিজমা আর রইল না। চারদিকে তখন অরাজকতা, লুটপাট। আমার ওয়ালিদ আবদুল্লা বেগ খান চলে গেলেন লখনউ। নবাব আসফউদৌল্লার সেনাবাহিনীতে কাজ নিলেন। সেখানে বেশি দিন টিকতে পারেননি।

কেঁউ-কেঁউ-। তারপর?

তোর কেঁউ কেঁউ বন্ধ করবি?

পোকাগুলো বড্ড জ্বালায় যে মির্জা।

তুই শালা নবাব-বাদশা? পোকার কামড় হজম করতে পারিস না? এত দিন ধরে কত পোকার কামড় তো আমি খেয়েছি, কখনও কুঁই-কুঁই করে কেঁদেছি?

তুমি সৈনিকের বংশধর। তোমার তাকতই আলাদা।

না রে তাকত কিছু নেই। শুধু দাঁতে দাঁতে চিপে সব সহ্য করে গেছি। কেন জানিস? ওই যে একদিনকে ভিতর থেকে বলল, যুদ্ধ করার মতো ক্ষমতা তোমার নেই, পণ্ডিতও হতে পারবে না। আমি ভেবেছিলাম দরবেশ হয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াব। কিন্তু সে বলল, মনের আয়নায় এই দুনিয়াকে দেখ আর আয়নাটাকে সবসময় সাফসুতর রেখো। বুঝতে পারলাম, গজল লেখা ছাড়া আর কোনও ক্ষমতা নেই আমার। আর মনের আয়নাটাকে সাফসুতর রাখতে হবে। কিন্তু পারলাম কই বল? এখন আর লিখতেই ইচ্ছে করে না।

কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে গেলে! তোমার ওয়ালিদের কিসসাটা তো শুরু করো।
লখনউ থেকে কিছুদিন পর বাবা হায়দরাবাদে চলে গেলেন, যোগ দিলেন নবাব নিজাম আলি খান বাহাদুরের সেনাবাহিনীতে। ভাড়াটে সেনারা যা করে আর কি!

ভাড়াটে সেনা কী মির্জা?

যারা অন্যের সেনাবাহিনীতে ভাড়া খাটে, তার হয়ে যুদ্ধ করে। বংশ নিয়ে আমার একসময় খুব গৌরব ছিল, কিন্তু বয়স বাড়তে ভেবে দেখেছি, গৌরবের কিছু নেই। আমি একজন ভাড়াটে সেনার বংশধর মাত্র। এরা টাকা আর সম্পত্তির জন্য সব কিছু করতে পারে— জনপদের পর জনপদের মানুষ মেরে উজাড় করে দিতে পারে। আগের গর্ব আর আমার নেই।

তারপর?

কী তারপর?

তোমার ওয়ালিদ—

হ্যাঁ, কী যেন সব গন্ডগোলে হায়দরাবাদ থেকে বাবার কাজ চলে গেল। তিনি আলওয়ারে গিয়ে রাজা রথতাওর সিংয়ের সেনাদলে যোগ দিলেন। কিছুদিন পর সেখানেই এক যুদ্ধে বাবার মৃত্যু হয়।

বাবাকে মনে পড়ে তোমার?

না। বাবার কথা কিছুই মনে নেই আমার। আমি তাঁকে দেখেছিলাম কি না, তাও জানি না। মানুষ জন্মানোর জন্য একজন ওয়ালিদ দরকার, তাই— এর বেশি কিছু জানি না আমি। আমার পাঁচ বছর বয়সে বাবা মারা যান। বাবা তো সবসময় বাইরে বাইরেই থাকতেন। আমরা থাকতাম আগ্রায়। দাদা— আমার মায়ের বাবার বাড়ি কালে মহলে। দাদা খাজা গুলাম হুসেন খানের অবস্থা ভালই ছিল। সেখানেই আমরা বড় হয়েছি— আমি, আমার ভাই ইউসুফ, বোন ছোটি খানম। ওকে খুব ভালবাসতাম। কী তুলতুলে মখমলের মতো ছিল আমাদের ছোটি খানম। আমি ওকে কোলে নিয়ে খুব কচলাতাম। ছোটি খানম খিলখিল করে হাসত। জানিস, যত দিন যাচ্ছে, আমার গজলের চেয়েও ছোটি খানমের ওই হাসি এত মূল্যবান মনে হয়— কতদিন চুপচাপ বসে থেকে আমি ওর হাসি শোনার চেষ্টা করি— এক একদিন শুনতেও পাই— তখন আর নিজেকে ছোট মনে হয় না— আমি কাসিম জানের গলিতে ঘুরতে ঘুরতে, বল্লিমাঁরো পেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জামা মসজিদের কাছে চলে যাই, ভিখিরিদের দেখতে থাকি, কোনও ছোট্ট মেয়ে দেখলে তার সামনে দাঁড়িয়ে যাই— ও-ই কি আমাদের ছোটি খানম?

কেঁউ-কেঁউ-

আবার?

পোকাগুলো বড় কামড়াচ্ছে।

কামড়াক। সহ্য করতে করতে একদিন দেখবি, পোকাগুলো আর কামড়াচ্ছে না। আসলে ওরা কামড়াবে, কিন্তু তুই কিছু বুঝতে পারবি না।

তারপর বল।

বাবার মৃত্যুর পর চাচা নসরুল্লা বেগ খান বাহাদুর আমার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তিনিও বেশিদিন বাঁচেননি। আমার আট বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়। জঙ্গলে বেড়াতে গিয়ে হাতির পিঠ থেকে পড়ে মারা যান তিনি। এর মাঝেও অনেক কথা আছে, কিন্তু আর বলতে ইচ্ছে করছে না। এত ইতিহাস— সাল তারিখ নিয়ে কচকচানি আমার ভাল লাগে না। তার চেয়ে আমাদের পতঙ্গবাজির কথা বলি।
তুমি ঘুড়ি ওড়াতে খুব ভালবাসতে বুঝি?

আকাশে ঘুড়ি দেখলে আমি আর স্থির থাকতে পারতাম না। রাত্রি ছাড়া আগ্রার আকাশে ঘুুড়ি দেখতে পাওয়া যাবে না, তা কখনও হতে পারে? এই তো কিছুদিন আগে কানহাইয়ালাল এসেছিল। গল্প করতে করতে চলে এত ঘুড়ি ওড়ানো, দাবা খেলার কথা। কানহাইয়ালাল একটা মসনবির কথা মনে করিয়ে দিল। ন’বছর বয়সে ওটা লিখেছিলাম, ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে। কানহাইয়ালালের মুখে মসনবিটা শুনতে শুনতে আমার চোখে জল এসে গেল— আমি ওই রকম মসনবি আর লিখতে পারব না। কেন জানিস? সেই সরলতা আমার নেই— নরকের আগুনে পুড়তে পুড়তে আমি শুকিয়ে গেছি। কালে মহলের পাশেই বেশ কয়েকটা উঁচু হাভেলি ছিল। একটা হাভেলির ছাদ থেকে আমরা ঘুড়ি ওড়তাম— আমি, ইউসুফ, কানহাইয়ালাল, আরও অনেকে। রাজা বলবন সিংয়ের সঙ্গে প্রায়ই ঘুড়ির প্যাঁচ খেলতাম। কোনও দিন হেরে গেলে মনে হত, সামনেই তো কালকের দিনটা, বলবন সিংকে আমি হারাবই। হারাতামও। আরে, আমার গায়ে তুর্কি রক্ত, আমি কি দিনের পর দিন হারতে পারি? আমার খ্যাতি তো শুধু গজল লেখার জন্য নয়, আমার শরীরে অভিজাত তুর্কি রক্ত বইছে।

সে তো ভাড়াটে সেনার রক্ত।

চোপ, শালা কুত্তার বাচ্চা। ভাড়াটে সেনা হোক, আর যাই হোক, রক্তটা তো তুর্কির। আমি কি জওক? গজল না লিখলেও আমাকে কে অস্বীকার করতে পারবে?

কেঁউ-কেঁউ-

আবার পোকা?

খুব কামড়ায় মির্জা।

আমার মাথার ভিতরের পোকাগুলোর মতো? যখন কামড়াতে শুরু করে— মনে হয় সব কিছু ভেঙে ফেলি, আমি তখন নিজেকেই বুঝতে পারি না। ওইসব পোকাগুলো কোথা থেকে আসে? পোকার জন্যই দিল্লি কলেজের চাকরিটা খুইয়েছিলাম। ফারসি পড়ানোর জন্য আমাকে, মোমিন খানকে আর মওলবি ইমাম বখ্শকে ডাকা হয়েছিল। থমসন সাহেব এসেছিলেন আমাদের সাক্ষাৎকার নিতে। সাহেবের সঙ্গে আমার আগেই পরিচয় ছিল। পালকি চড়ে তাঁর বাড়িতে গেলাম। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। আমি কুর্শি-নশিন, নবাবের দরবারে আমার আসন, কেউ না কেউ তো অভ্যর্থনা জানাতে আসবে। আর খোদ গভর্নর জেনারেল যখন ডেকে পাঠিয়েছেন, তখন অভ্যর্থনা জানানোই রেওয়াজ। কিন্তু কেউ এল না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর থমসন সাহেব এলেন, জিজ্ঞেস করলেন, আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি কেন। আমি বললাম, কেউ আমাকে নিতে না এলে যাব কেন? থমসন সাহেব বললেন, এখানে আপনি চাকরির জন্য এসেছেন, কে আপনাকে নিতে আসবে? মাথার ভিতরের পোকাগুলো সঙ্গে সঙ্গে কামড়াতে শুরু করল।

কী করলে?

আমি বললাম, এই কাজ আমার মর্যাদা বাড়াবে ভেবেছিলাম। কিন্তু দেখছি, যে সম্মান আমার প্রাপ্য তাও দেওয়া হবে না। তাই চাকরিটা আমি করব না। পোকা—পোকা— কিছু কিছু পোকা থাকে, যা তোমাকে কিছুতেই সফল হতে দেবে না। ওই পোকাগুলোকে তো আমি চিনিও না। জন্ম থেকে ওরা আমার সঙ্গে এসেছে। সাফল্যের পথে যখনই সামান্য এগিয়েছি আমি, ওরা এসে সব ভন্ডুল করে দিয়েছে। কিন্তু ওদের অস্বীকার করব কীভাবে? ওরাও তো আল্লারই দান। আল্লা আমার জীবনের খাতায় যা লিখে দিয়েছেন, তার বাইরে আমি কীভাবে যাব?

কেঁউ-কেঁউ-কেঁউ-কেঁউ-

আবার পোকা?

বড় খিদে পেয়েছে মির্জাসাব।

আমিও আজ সারাদিন কিছু খাইনি। পাই-পয়সাও হাতে নেই। ক’দিন ধরে রাত্তিরের শরাবটুকুও জুটছে না। বেগম, দু-দুটো বাচ্চা ছেলে, কাল্লু, ওর মা, মাদারির বউয়ের খাবারও জোগাড় করতে পারছি না। যা না, রাস্তায় যা, কিছু না কিছু পেয়ে যাবি, বিরিয়ানির মাংসের হাড় জুটে যাবেই— যা যা ঘুরে আয়, ভুগ নিয়ে কিছু করা যায় নাকি? আমি তো আর পারি না। কী হয় বল তো গজল লিখে? কী হয়? গজল কি খাওয়া যায়? এখন একটু খাওয়াপরা, শান্তি ছাড়া আর কিছু চাই না আমি।

তারপর কী হল বল।

কার পর?

পতঙ্গবাজির কথা বলতে বলতে থেমে গেলে। তোমার সেই ছোটবেলার কথা।

দাবা খেলতাম বংশীদের সঙ্গে। ওদের বাড়ি ছিল কাশ্মীরনওয়ালা গলিতে। একেক দিন অনেক রাত পর্যন্ত খেলা চলত। দাবাতেও আমি বুঁদ হয়ে যেতাম। দাবা খেলাটা ভারী অদ্ভুত জানিস। এক একটা চাল মানে তুই মৃত্যুর দরজা একটু একটু করে খুলছিস। যদি তুই নাও হারিস, দেখবি তোর ঘুঁটিগুলো আর এগোনোর পথ নেই, পিছিয়ে আসারও ক্ষমতা নেই। দাবা আসলে মওতের সঙ্গে খেলা! হারলেও মওত, জিতলেও মওত।

খুব রোখ ছিল তোমার, না মির্জা?

তুর্কি রক্ত তো।

কেঁউ-কেঁউ-

আবার পোকা না খিদে?

আমারও শরীরে তাহলে তুর্কি রক্ত, কী বল!

তুই তো শালা বেওয়ারিস কুত্তা।

এই যে বললে, আমার নামও মির্জা গালিব।

নীল রক্ত এখন লাল হয়ে গেছে রে। তুই তিন নম্বর মির্জা গালিব, তোর গায়ে কী করে তুর্কি রক্ত থাকবে? যা রাস্তায় যা, খুঁজেপেতে, আস্তাকুঁড় ঢুঁড়ে যদি কিছু খাবার পাস, খেয়ে নে।

তুমি কী করবে?

আমি একটু শুয়ে থাকি। কতদিন ধরে অন্ধকারেই তো শুয়ে থাকি। মোমবাতি কেনার পয়সা নেই। জেনানা মহলে তো একটু আলো দরকার। আমার এখন আলো ছাড়াই চলে যায়। ধ্বংসস্তুপে আলোর কী প্রয়োজন? কথা বলতে ইচ্ছে করে না, লিখতে ইচ্ছে করে না, কারও নামও আর মনে পড়ে না। আল্লা আমাকে ক্ষমা করুন। সারাটা জীবন কি আমি পাপ আর ভুল করে গেছি? নমাজ পড়িনি, রোজা রাখিনি, কোনও ভাল কাজ করেছি? জানি না। যেসব গজল লিখেছি একসময় তা মুখে মুখে বলতে পারতাম, আজ সেগুলোও ভুলে গেছি। আমি কি সত্যিই কিছু লিখেছিলাম? কিন্তু, বিশ্বাস কর, আমি খুঁজেছিলাম, শেষহীনভাবে খুঁজেছি। মক্কার পথ আমার পথ ছিল না, জন্নতের কথা আমি কখনও ভাবিনি। কারণ কবিতা আমার কাছে ধরা দিয়েছিল। তবু কত কথাই তো লিখতে পারিনি। বাগানে যত ফুল আছে, তাদের সবার কথা কি আমি লিখতে পেরেছি। তবু চেষ্টা করেছি। ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত হৃদয় থেকে যে আর্তনাদ ছড়িয়ে পড়ে, আমি তাকেই লিখতে চেয়েছি।

কেঁউ-কেঁউ-কেঁউ-কেঁউ-

হ্যাঁ-হ্যাঁ— এইরকম আর্তনাদ, যে আর্তনাদ অজান্তে গলা থেকে বেরিয়ে আসে। হরগোপাল তফ্তাকে একবার বলেছিলাম, গজল লেখার জন্য কোনও ব্যাকরণ লাগে না, শুধু নিজের হৃদয়ে ছুরির পর ছুরি বসিয়ে যেতে হয়, দেখতে হয় ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসা রক্ত। আর সেই রক্ত দিয়ে লিখতে হয় একটির পর একটি অক্ষর, তাদের ছন্দ। তফ্তা কি আমার কথা বুঝেছিল? ও তো একের পর এক দিবান প্রকাশ করতে চায়। গজল লেখা কি এত সহজ?

কেঁউ-কেঁউ-কেঁউ-কেঁউ-

খিদে পেয়েছে তো যা, রাস্তায় ঢুুঁড়ে দেখ, কিছু না কিছু পেয়েই যাবি। এখনও তো দিল্লি মরে যায়নি। তবে খুব তাড়াতাড়ি মরবে। তখন তোদের মতো কুত্তার জন্য কোনও জায়গা থাকবে না এখানে। কত আশনাই, কত জলুস হবে। শেষ কয়েকটা দিন ঘুরে ফিরে নে, তারপর তো মরবিই।

‘গালিবের কুকুর’ গল্পের মধ্য দিয়েই ‘দোজখ্নামা’-য় পৌঁছনোর পথ খুলে দিয়েছিল। সেই মধ্য উনিশ শতকের দিল্লিতে মির্জা আসাদুল্লা খান গালিব সত্যিই তো একজন বেওয়ারিশ কুকুর। কত লোকের সঙ্গেই তো পরিচয় ছিল, কিন্তু কে তাঁকে চিনত? ‘দোজখ্নামা’ বই হয়ে প্রকাশিত হয় ২০১০-এ, সে-বছরই আমি দিল্লি যাই গালিবের বাড়ি দেখার জন্য। জামা মসজিদের কাছেই বল্লিমরন। ঘিঞ্চি রাস্তা, দুপাশে দোকান-বাজার, রেডিওতে হিন্দি গান, একটু আগে জামা মসজিদে মগরিবের অর্থাৎ সন্ধ্যার নামাজ পড়া হয়েছে। ভাবছিলাম, এই গলিপথ ধরেই তো মির্জা নওসা (গালিবের ডাক নাম) জামা মসজিদে আসতেন, কখনও অবশ্য নামাজ পাঠে যোগ দেননি। এক রিকশাওয়ালাকে পাকড়াই। মির্জা গালিব বা হাভেলি জানতা হায়?

—কওন মির্জা?

—মশহুর শায়র মির্জা গালিব।

—ইধার তো কেই শায়র নহি রহতে। চলিয়ে পুছকে ঢুন্ড লেঙ্গে।

আশ্চর্য এক গলিপথে ঢুকে পড়ে রিকশা। এখানে বিদ্যুতের আলো নেই। ১৮৫৭-র সিপাহি বিদ্রোহের পর সেপ্টেম্বরে ইংরেজ যখন শহর অধিকার করল, সেই সময়ের ভিতরে ঢুকে পড়েছি নাকি? 

গলিপথের নানা বাঁক পেরিয়ে আবার খোঁজ পাওয়া গেল। একটা দোকানের গায়ে সাইনবের্ডে ঠিকানা লেখা। এই তো, এই তো। আমি চিৎকার করে উঠি। গলি কাসিম জান। এই গলিপথেরই কোনও বাড়িতে মির্জাসাহেবের শেষ বয়সটা কেটেছিল। কয়েকজন দোকানদারকে জিজ্ঞেস করতে তাঁরা কিছুই বলতে পারেন না। বরং প্রশ্ন করেন, কে মির্জা গালিব? কবে থাকতেন? শেষে একজন বয়স্ক মানুষ বাড়িটা দেখিয়ে দিলেন। মির্জা গালিবের হাভেলি। ঠিকানা : ২২৯৭/এ গলি কাসিম জান, বল্লিমরন, দিল্লি-৬। কয়েক বছর আগে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ শুধু হাভেলিতে ঢোকার দরজা, তার পাশের একটা ঘর মির্জার স্মৃতিরক্ষার্থে সংরক্ষণ করেছে। সেখানে মির্জার আবক্ষমূর্তি আর তাঁকে নিয়ে কিছু তথ্যের ফোটোগ্রাফ, মুঘল যুগের কিছু পোশাক-আসাক ইত্যাদি। মূল দরজার পাশেই অ্যালোপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ বিক্রির দোকান বাবর মেডিকেলের মালিকও মির্জার নাম শুনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়েছিলেন। কে মির্জা গালিব? মির্জা তো জানতেন, আল্লা তাঁকে— সব মানুষকেই— ধুলো থেকে বানিয়েছেন, আবার ধুলোতেই মিশে যেতে হবে তাঁকে। শুধু একটি প্রশ্ন থেকে যাবে, কে মির্জা গালিব?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই দোজখের দিকে যাত্রা।

২০০৯-এ ‘দোজখ্নামা’ লেখা শুরু হয়। কিন্তু ২০০৫ থেকেই আমি দোজখের পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছি। খুঁজে চলেছি একটি প্রশ্নেরই উত্তর, কে মির্জা গালিব? মির্জাকে নিয়ে যদি ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখতে চাইতাম, তাহলে সহজেই লিখে ফেলা যেত। উপন্যাস খোঁজে নানা ব্যক্তিকে, খোঁজে তাদের জীবন ও কণ্ঠস্বর। এই মানুষেরা সমসময়ের হতে পারে, দূর অতীত বা ভবিষ্যতেরও হতে পারে। উপন্যাসের ধর্ম তো সর্বাস্তিবাদী হওয়া। কিন্তু ব্যক্তির কণ্ঠস্বর জেগে না উঠলে, উপন্যাস-শিল্প ব্যর্থ বলেই আমার মনে হয়। এখানেই উপন্যাসের যাত্রাপথ ইতিহাসের থেকে আলাদা হয়ে যায়। 

ঐতিহাসিক অশীন দাশগুপ্ত তাঁর ‘ইতিহাস ও সাহিত্য’ বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘ইতিহাস মানুষের, কিন্তু ঐতিহাসিক মানুষের মনের মধ্যে প্রবেশ করতে পারেন না। সাহিত্য চিরকালই এই কাজটি করেছে, এখনও করে। সাহিত্যে যে সত্যের প্রকাশ, ঐতিহাসিকের কাছে তা ঈর্ষার বস্তু।’ তলস্তয়ের ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ উপন্যাস প্রসঙ্গে অশীনবাবু জানান, ‘ঐতিহাসিক মাত্রেই জানেন, টলস্টয়ের কুটুজভ সম্পূর্ণ অলীক। ইতিহাসের কুটুজভ অন্য মানুষ ছিলেন। ঐতিহাসিক যেহেতু তথ্যনিষ্ঠায় বন্দি, টলস্টয়ের কুটুজভকে গ্রহণ করা তাঁর পক্ষে অসাধ্য। কিন্তু উৎসাহী গবেষণা সত্ত্বেও টলস্টয় এই ভুল করবেন কেন? তার কারণ তাঁর সাহিত্য-রচনায় এই ভুলের প্রয়োজন ছিল।’ তাই ঐতিহাসিকের চোখে দেখা মির্জা গালিবের সঙ্গে ‘দোজখ্নামা’-র গালিব অনেক ক্ষেত্রেই মিলবেন না। ইতিহাসগত ভাবে মির্জার সঙ্গে তো সন্ত কবির, রামনিধি গুপ্ত, মওলানা রুশির দেখা হতে পারে না, তিনি রবীন্দ্রনাথ বা শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার পংক্তিও বলতে পারেন না। ‘দোজখ্নামা’-য় এমনটাই ঘটে। অতর্কিতে এসে যায় জীবনানন্দ দাশ বা শঙ্খ ঘোষের কবিতা, জঁ আর্তুর র‌্যাবোঁর অনুষঙ্গ। কারুর কারুর এগুলিকে সরলীকরণ মনে হয়েছে। হতেই পারে। পাঠক তাঁর নিজের মতো করেই পড়বেন। কিন্তু পবনকুমার বর্মা, সঞ্চারী দাশগুপ্তর গালিব-জীবনীতে বা র‌্যালফ রাসেল, খুরশিদুল ইসলামের গবেষণায় যে গালিবকে খুঁজে পাওয়া যায়, ‘দোজখ্নামা’-র গালিব তো এক মানুষ নন। আমার মির্জা গালিব শুধু ইতিহাসের একটি চরিত্র নন, ২০০৫ থেকে তিনি এখনও পর্যন্ত আমার স্বপ্ন-জাগরণের সঙ্গী; হয়তো তাঁর হাত ধরেই আমিও একদিন এই দুনিয়াদারির আয়নার ভিতর দিয়ে পথ করে লুপ্ত হয়ে যাব। আমার দোসর মির্জাই তো লিখেছেন :

মিহরবাঁ হো কে বুলা লো মুঝে চাহো জিস ওয়াক্ত হো
মৈঁ গয়া ওয়াক্ত নহি হুঁ ফির আ না সকু।
(দয়া করে যখন খুশি আমাকে ডেকে নাও।

আমি বিগত সময় নই যে আবার আসতে পারব না।)
অনুবাদ : আবু সয়ীদ আইয়ুব

তিনি এলেন, আমাকে তাঁর কথা বলতে লাগলেন, যেসব কথা ইতিহাস লেখে না। একমাত্র উপন্যাসই সেই কণ্ঠস্বর শুনতে পায়। ‘দোজখনামা’ লেখার সময়ে জীবনের এক জটিল ও ত্রস্ত অধ্যায় আমাকে পেরিয়ে আসতে হয়েছে। আজ তাকে আমি সময়ের আশীর্বাদ বলেই মনে করি। ‘দোজখনামা’ ধারাবাহিকভাবে ছাপা শুরু হয়েছে সবে, তখনই নানাভাবে ধ্বস্ত ও অ্যালকোহলের মিকার আমাকে ভর্তি হতে হল এক বেসরকারি হাসপাতালে যেখানে নেশা ছাড়ানোর চিকিৎসা হয়। সেই দিনগুলির কথা লিখেছি ‘চন্দ্রাহতের কুটির’ উপন্যাসে। নেশারু ও উন্মাদনের মধ্যে থাকতে থাকতে আমি আবিষ্কার করলাম এমন এক জগৎ যার এক চুল তফাতে দাঁড়িয়ে আছে একজন শিল্পীর জীবন— মির্জা গালিব বা সদত হসন মন্টো। চিকিৎসালয়ে আমার সঙ্গী ছিল মির্জার চিঠির সংগ্রহ, অবশ্যই ইংরেজি অনুবাদ। আর সেখানেই লেখা হয়েছে ‘দোজখনামা’-র কয়েকটি অধ্যায়। এই কয়েকটি দিন আমার জীবনে না এলে আমি মির্জার সারা জীবনের বন্দিত্ব ও উন্মাদনাকে অনুভব করতে পারতাম না, মন্টোসাহেবের ক্ষয় বুঝতে পারতাম না।

চিকিৎসালয় থেকে বেরিয়ে দু-একমাস স্বেচ্ছা-নির্বাসনের জীবন বেছে নেই একটি মেসে। বিরাট একটি ঘরে ছয়জনের আলাদা আলাদা বিছানা। রুমমেটরা সকাল দশটার মধ্যেই চাকরিতে বেরিয়ে যায়। আমি মির্জা গালিব ও সদত হসন মন্টোর মুখোমুখি বসে তাঁদের সংলাপ লিখে যাই। সেই দোজখ-জীবনের দিকে ফিরে তাকালে আজ মনে হয়, জন্নতেই ছিলাম। যে-লেখা পড়ে অশ্রুপাত হয় না, আমি তাকে লেখা বলি না। কী সৌভাগ্য, ‘দোজখনামা’ পড়ে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কান্না টেলিফোন ছাপিয়ে আমার বুকের ওপর এসে ভেঙে পড়েছিল। আমার গভীর দুঃখ শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের করকমলে ‘দোজখনামা’ অর্পণ করতে পারিনি। সে কবেকার কথা। ‘দেশ’ পত্রিকায় আমার একমেবদ্বিতীয়ম গল্পটি পড়ে শ্যামলবাবু ফোন করে বলেছিলেন, ‘তোর গল্পের বিষয়টা একেবারে পাকা রুই মাছের পেটির মতো। কিন্তু তুই কখনও শেয়ালদা স্টেশনের বাথরুমে গিয়েছিস? তোর ভাষাটা ওইরকম রে!’ শ্যামলবাবুই একমাত্র এভাবে কথা বলতে পারতেন। আমিও তর্ক করেছিলাম, সবাই আপনার আপনার মতো ভাষায় লিখবে, এমনটা আশা করেন কেন? কয়েকদিন পর ক্ষমাপ্রার্থনার পোস্টকার্ড এল। সেই পোস্টাকার্ড কবেই যে হারিয়ে ফেলেছি। আসলে তো আমার ক্ষমাপ্রার্থনার কথা। শ্যামলবাবুর ‘শাহাজাদা দারাশুকো’, সিরাজদার ‘অলীক মানুষ’ লেখা না হলে কি ‘দোজখনামা’-র জন্ম হতে পারত? আর ২০১০-এর বছর শেষের এক সকালে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পাতায় চোখ রেখে আমি তো অবাক। সে বছরের সেরা পাঁচটি বইয়ের মধ্যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নির্বাচন করেছেন ‘দোজখনামা’। এ কী করে হয়? এই পঞ্চাশ অতিক্রান্ত জীবনে একদিনও তাঁর রবিবাসরীয় আড্ডায় আমি যাইনি; কয়েকবার একা একা তাঁর কাছে গিয়েছি ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর পুজো সংখ্যার জন্য লেখা আনতে। দু-একবার কোনও কোনও গল্প পড়ে আমার মুগ্ধতার কথা জানিয়েছি টেলিফোনে। যেমন ‘মাংস’ গল্পটি। সুনীলদা শুধু হেসে বলতেন, ‘তাই? তোমার ভালো লেগেছে?’ আর বাড়তি কথা নয়। সেদিন বেলার দিকে সুনীলদাকে ফোন করে বললাম, ‘আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। আপনি সত্যি বলেছেন?’ সুনীলদার সংক্ষিপ্ত উত্তর, ‘ভালো লিখেছ, বলেছি। আরও লেখা’। আর কোনও কথা হয়নি। প্রসঙ্গতই জানাই, ‘ ‘দোজখনামা’-র আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ঘটেছিল সুনীলদার হাতেই অক্সফোর্ড বুক স্টোরে।

২০১০-এ ‘দোজখনামা’-র আত্মপ্রকাশ বই হয়ে। এখন মনে হয়, কতদিন আগে। শ্যামলবাবু নেই, সিরাজদা নেই, সুনীল দা নেই।

পাঠক, আমাকে কি খুব পুরনো মনে হচ্ছে? ক্ষতি কী? সেলুনে দাঁড়ি কামাতে গেলে ক্ষৌরকার যুবক বলে, ‘কাকু গোঁফটা কালো করে দিই?’ আমি বলি, ‘থাক। প্রকৃতি যা নিজের হাতে দিচ্ছে, তাকে ফিরিয়ে দেওয়া ঠিক না ভাই।’

—কী বললেন?

—সাদা গোঁফই থাকুক না।

—এমন কী বয়স হয়েছে আপনার, কাকু। কালো করলে দারুণ দেখাবে।

আমি মৃদু হাসি। পঁচিশ বছরের ছেলেটিকে আমি কী করে বোঝাব, বার্ধক্যযাত্রারও নিজস্ব জলতরঙ্গ আছে।

২.
আসলে আমি যে এত হেজিপেজি কথা বলে চলেছি, তার একটাই কারণ, সম্পাদক মশাইয়ের চাওয়া পূর্ণ করা মোটেই আমার কম্মো নয়। বঙ্কিমচন্দ্র কি লিখে গেছেন, ‘কপালকু-লা’ কীভাবে লিখেছেন? এমনকী তাঁর উপন্যাসভাবনাও লিখে যাননি। কেনই বা লিখবেন? বঙ্কিমবাবু নির্ঘাত বলতেন, ‘আমি যে উপন্যাস লিখেছি, সেখানেই তো আমার উপন্যাস-ভাবনা লেখা আছে।’ তবু বঙ্কিচন্দ্রের উপন্যাস-ভাবনার দু-একটি কথা লেখা আছে ১৮৯৩ সনে প্রকাশিত ‘রাজসিংহ’ উপন্যাসের চতুর্থ সংস্করণের বিজ্ঞাপনে। বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছেন, ‘ইতিহাসের উদ্দেশ্য কখন কখন উপন্যাসে সুসিদ্ধ হইতে পারে। উপন্যাস লেখক সর্বত্র সত্যের শৃঙ্খলে বদ্ধ নহেন। ইচ্ছামত, অথীষ্ট সিদ্ধির জন্য কল্পনার আশ্রয় লইতে পারে। ...উপন্যাসের উপন্যাসিকতা রক্ষা করিবার জন্য কল্পনাপ্রসূত অনেক বিষয়ই গ্রন্থমধ্যে সন্নিবেশিত করিতে হইয়াছে...উপন্যাসে সকল কথা ঐতিহাসিক হইবার প্রয়োজন নাই।’ কিন্তু আজকাল ঔপন্যাসিকরাই ঐতিহাসিক হয়ে উঠছেন। এ বিষয়ে আমার প্রিয় লেখক দেবেশ রায়ের সঙ্গে মতবিরোধটা অটুট থাকুক। তিনি যতই বঙ্কিমকে ইউরোপিয়ান ধাঁচার উপন্যাসে দেখুন, এবং কালীপ্রন্ন ও টেকচাঁদের গুণকীর্তন করুন, এঁরা দুজনে ঔপন্যাসিক নন, সময়ের ধারাবিবরণকারী, ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ‘ক্রনিকলার’। তত্ত্বের খাঁচায় কিছু ‘ফিট’ করাতে গেলে যে অবিমৃশ্যকারিতার দিকে যেতে হয়, তার মতো ‘ঐতিহাসিক ভুল’ আর হয় না।

২০০৭-এ লেখা সেই ‘গালিবের কুকুর’ গল্প থেকে শুরু হল ‘দোজখনামা’-র দিকে যাত্রা। যতদূর মনে পড়ে, আরও একটি গল্প একই সময়ে গালিবকে নিয়ে লিখেছিলাম, যা কোথাও, কোনও পত্রিকায় বেওয়ারিশ পড়ে আছে। মির্জাকে নিয়েই আমি লেখা শুরু করেছিলাম। কয়েকটি খসড়াও তৈরি হয়ে উঠল। ডায়েরিতে পঠনপাঠনের টুকরোটাকরা জমে উঠতে থাকল। কতবার কত অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ লেখা হল। তবু মির্জা অধরা। রোজই কথা বলেন আমার সঙ্গে, কিন্তু পালিয়ে পালিয়ে বেড়ান। সে-সময় তো উর্দু সাহিত্যের প্রধানতম লেখকদের নতুন করে পড়ছি। মির্জার সঙ্গে সঙ্গে আমি তখন সদত হসন মন্টোর জীবনী পড়ে জানতে পারি, মির্জা গালিব তাঁর প্রিয় কবি, গালিবকে নিয়ে একটি ছবির চিত্রনাট্যও তিনি লিখেছিলেন, সেই ছবিতে অভিনয় করেন ভরতভূষণ ও সুরাইয়া বেগম। মন্টোসাহেব পাস্তিানে চলে যাওয়ার পর ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল এবং প্রথম জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি।
আমার মনে হল, মন্টোসাহেব যদি গালিবকে নিয়ে একটি উপন্যাস লিখতেন, তবে তা কেমন হত? কিন্তু কীভাবে লেখা হবে তাঁদের কথা? বয়ানটা কেমন হবে? উপন্যাসের প্রাথমিক খসড়া থেকেই মির্জা কথা বলছিলেন কবর থেকে। এবার জুড়ে গেলেন মন্টোসাহেব। তাহলে ভারত ও পাকিস্তানের কবরে শুয়ে দুজনে দুজনের সঙ্গে কথা বলুন। আমি শুধু তাদের সংলাপ লিখে যাব। আমি খুঁজে ফিরব সেইসব মানুষদের কণ্ঠস্বর, দিল্লি তৈরির সময় যাদের কবরে পাঠানো হয়েছিল। জামা মসজিদ থেকে হারিয়ে যাওয়া দাস্তনগোরও এসে আমার হাত ধরলেন। বললেন, আমাদের কিসসাগুলোও তবে বলতে দাও। সে এক উৎসব জমে উঠল। আমার জানাও ছিল না, এতসব চরিত্র এসে তাদের নিজের কথা বলতে চাইবে। আমি শুধু মনে মনে বলেছি, ‘হে অনাদী অতীত কথা বলো...’।

কথা বলো।
১৮৫৭, কথা বলো।
১৯৪৭, কথা বলো।
রক্তপাত, কথা বলো।
শায়েরি, কথা বলো।
জামা মসজিদ, কথা বলো।
হারিয়ে যাওয়া দিল্লি, কথা বলো।
লাহোরের রাস্তা, কথা বলো।
ও পূরবী, কথা বলো।

‘দোজখনামা’ এইসব সংলাপের এক বৃত্তান্ত হয়ে রইল।

এই উপন্যাস লেখবার সময়েই আমি উর্দু শিখতে গিয়েছিলাম তবসুম মির্জার কাছে। কিন্তু এক মাসের বেশি তাঁর কাছে যেতে পারিনি। অধ্যবসায়ের ক্ষমতা আমার নেই। তবসুমও এই উপন্যাসের এক চরিত্র। ‘দোজখনামা’-র জন্য বঙ্কিম পুরস্কার প্রাপ্তির দিনে তবসুম বাংলা আকাদেমিতে এসেছিল ওর ছোট মেয়েটিকে নিয়ে। তবসুম এখন কোথায় জানি না। ‘দোজখনামা’ ওর হাতে তুলে দিতে পারিনি। তবসুম কি পড়েছে? আমি জানি না।

এই অনর্থ লেখাটি তবসুমের করকমলেই অর্পণ করলাম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. "সর্বাস্তিবাদী এই জীবনে আমি কি তাহলে মির্জা গালিব, সন্ত কবির, সদত হসন মন্টো, মওলানা রুমির সঙ্গেও বাঁচি না?" শব্দ তাঁর স্রষ্টাকেও ছাড়িয়ে যায়.....শ্রদ্ধা রইলো রবিশঙ্কর বল।

    উত্তরমুছুন
  2. "কথা বলো।
    ১৮৫৭, কথা বলো।
    ১৯৪৭, কথা বলো।
    রক্তপাত, কথা বলো।
    শায়েরি, কথা বলো।
    জামা মসজিদ, কথা বলো।
    হারিয়ে যাওয়া দিল্লি, কথা বলো।
    লাহোরের রাস্তা, কথা বলো।
    ও পূরবী, কথা বলো।
    ‘দোজখনামা’ এইসব সংলাপের এক বৃত্তান্ত হয়ে রইল।"
    এ যেন এক অন্য পৃথিবীর গল্প। এর ভাব, ভাষা, উচ্চারণ, আওয়াজ সব ভেসে আসে আলৌকিক আসমান থেকে অথচ কি সাংঘাতিক!এ কি আমাদের এই পৃথিবীর কথা নয়!

    উত্তরমুছুন