জান্নাতুল ফেরদৌস নৌজুলা
একটি বিদেশি গল্প পড়ুন--
“কবে চলে গিয়েছিল সে?”
“সে বলেনি।”
“কোথায় গিয়েছিল সে?”
“সে বলতে চায়নি।”
“তুমি কী তাকে জিজ্ঞেস করেছিলে কেন সে চলে গিয়েছিল?”
“আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, সে উত্তর দিতে পারেনি।”
“আর তার শবদেহ?”
“ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়েছিল, ৬৪ নম্বরে।”
গ্রীন্সটন গেজেট, অক্টোবর ১৫ঃ
একটি তরুণীর মৃতদেহ পাওয়া গেল।
গ্রীন্সটন গেজেট, অক্টোবর ১৬ঃ
একটি ছেলে ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়লো।
গল্পটি শেষ।
এমন আকস্মিক ‘শুরু’ এবং ‘শেষ’ এর দিয়ে কত কিছুই না বলা হয়ে যায়! একটা গল্প? গল্পও কি হয়? হয়ই তো! পরিবর্তনশীল এ পৃথিবীর সাহিত্য জগতেও সময়ের সাথে যুক্ত কিংবা বিযুক্ত হয়েছে নতুন অনেক সাহিত্য-ধারণা। অতি ছোট ক্যানভাসে তীব্র কিংবা আটপৌরে ভাষায় গল্প বলার এই ধরণটি ইদানিং বেশ প্রচলিত। চিরাচরিত সাহিত্য যা গ্রন্থ-ভিত্তিক, সেখানে গল্প বা গল্পের ধরণ মোটামুটি একই আছে। ইন্টারনেট ভিত্তিক সাহিত্য জগতেই মূলত অনুগল্পের এই নতুন ধরণটি যুক্ত হয়েছে।
মাইক্রোফিকশনঃ ‘মাইক্রোফিকশন’ এর ধারণাটি এর শব্দগত অর্থ দিয়েই ভাল বোঝা যায়। ‘মাইক্রো’ অর্থ ক্ষুদ্র এবং ‘ফিকশন’ অর্থ সৃজনশীল বর্ণনায় বিস্তৃত কোন বিষয়বস্তু। এটি এই বর্তমান সময়ের একটি ট্রেন্ড; যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো-
· অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত লেখনীর ব্যবহার।
· প্রকাশনার মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেট এর ব্যবহার।
ফ্ল্যাশ ফিকশনঃ এটি আসলে মাইক্রোফিকশনেরই অনুরূপ। এটি কাল্পনিক সাহিত্য বা কাল্পনিকতার চরম সংক্ষিপ্ত এক শৈলী। যদিও কোন সর্বজন স্বীকৃত সংজ্ঞা এর এখনো তেমন নেই, স্ববর্ণিত স্থানে ফ্ল্যাশ কথাসাহিত্য হতে হলে তিনশো শব্দ আবশ্যক। অবশ্য মতান্তরে এই সীমারেখাই আবার হাজার শব্দ। ফ্ল্যাশ ফিকশনের অন্য নাম সমূহঃ
· সাডেন ফিকশন
· মাইক্রোফিকশন
· মাইক্রো-স্টোরি
· শর্ট শর্ট
· পোস্টকার্ড ফিকশন
· শর্ট শর্ট স্টোরি
এই নামগুলোর মাঝে আকারভেদে প্রায়ই কিছু প্রভেদ থাকে। কখনো কখনো এক-হাজার শব্দকে ফ্ল্যাশ ফিকশন এবং এর থেকে সামান্য দীর্ঘ ছোটগল্পকে সাডেন ফিকশন বা আকস্মিক কথাসাহিত্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
মাইক্রোফিকশন এবং ইন্টারনেটঃ মাইক্রোফিকশনের প্রকৃত রাজত্ব আসলে ইন্টারনেটে। এটি পাওয়া যেত প্রধানত ব্লগে। সে যাইহোক, মাইক্রোফিকশনের জন্ম কিন্তু ইন্টারনেটের সাথে নয়; এর জন্ম মধ্যযুগের গ্রীসে। ঈশপ এর সেই ছোট ছোট শিক্ষামূলক গল্পগুলোও ছিল অধুনা এই মাইক্রোফিকশনেরই উদাহরণ। বিংশ শতাব্দীতে হয়েছে প্রাক ইন্টারনেট মাইক্রোফিকশনের আরেক নতুন জন্ম। ফ্রানজ কাফকা, আরনেস্ট হেমিংওয়ে, জর্জ লুইস বার্গস, এডলফো বিওয় ক্যাসারস প্রমুখের রচনায়ও দেখা গিয়েছে অসাধারণ কিছু মাইক্রোফিকশন বা অনুগল্প। ফ্রানজ কাফকা’র একটি অনুগল্প আছে এমন – ইঁদুরটি ‘হায় হায়’ করে বলে উঠলো, “সমস্ত জগত প্রতিদিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। শুরতে এটা এতই বড় ছিল যে আমি ভয় পেয়েছিলাম। ভয়ে দৌড়াতে শুরু করেছিলাম। এবং দৌড়াতে দৌড়াতে আমি খুশি হয়ে উঠেছিলাম যখন দূরে ডানে এবং বামে দেয়াল দেখতে পেয়েছিলাম। কিন্তু দীর্ঘ সে দেয়াল হঠাৎ এত দ্রুত সংকুচিত হতে লাগলো যে আমি প্রায় এর শেষ অংশে পৌঁছে গেলাম। এবং অবধারিত ভাবেই শেষের সে কোণে পাতা ফাঁদে পা দিয়ে দিলাম।” “আপনার প্রয়োজন ছিল শুধু মাত্র দিকটির পরিবর্তন করা” বিড়ালটি এ কথা বলেই তাকে খেয়ে ফেললো। আবার মাত্র একটি চরণেও অনবদ্য এক অনুগল্পের আস্বাদ পেয়েছে আরনেস্ট হেমিংওয়ের পাঠকগণ। গল্পটি এমন – ‘ফর সেলঃ বেবি শুজ, নেভার বর্ন।’ একটিই বাক্য, কিন্তু কী অদ্ভুত তার দ্যোতনা! পুরো একটি গল্প,তার চরিত্রদের নিয়ে হাজির হয়ে যায় পাঠক-কল্পনায়!
মাইক্রোফিকশনের আকস্মিক ব্যাপ্তিঃ মাইক্রোফিকশন বা অনুগল্প নিয়ে যত যাই বলা হোক না কেন, এর আসল ব্যাপ্তি ঘটেছে ইন্টারনেট এর হাত ধরে।
· এর বিশাল প্রচলন একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশককেই মানা হয়।
· দীর্ঘ গ্রন্থের একটি বৈধ বিকল্প ছিল এই অনুগল্প।
· নেট সংস্করণই একে দিয়েছে এক বিশেষ গণতন্ত্রায়ন, যা এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
· নেট এর বৈশিষ্ট্যই এমন যে সংক্ষেপণ, দ্রুত-পড়া গ্রন্থের এখানে বিশেষ প্রয়োজন।
· এর সবচেয়ে সঠিক প্রকাশিত প্ল্যাটফর্ম হলো ‘ব্লগ’।
· ব্লগ স্ব-সংস্করণ এর অনুমতি দেয় কিন্তু মান-সম্পন্ন সম্পাদনার নিশ্চয়তা দেয় না।
ব্লগ এর দারুণ কিছু সুবিধাও আছে। যেমন এটি অতি সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং বিশ্বের যে কোন স্থান থেকেই সকলের প্রবেশযোগ্য। আরও একটি বিশাল সুবিধা হচ্ছে এটি বিনামূল্য; পাঠক এবং প্রকাশক, উভয়ের জন্য।
সাহিত্যকে বর্তমানে দুই ফরম্যাটে দেখা যায়। প্রচলিত সাহিত্য এবং ই-সাহিত্য। প্রচলিত সাহিত্য হচ্ছে বই ভিত্তিক। আর ই-সাহিত্য হলো ইন্টারনেট ভিত্তিক; মিনি-গল্প, মাইক্রো-গল্প এবং ন্যানো গল্প। ইন্টারনেট ভিত্তিক এই সাহিত্যকে সাধারণত এই ভাবে বিভাজিত হতে দেখা যায়।
মিনি স্টোরিজঃ এই আঙ্গিকের গল্পগুলো সাধারণত এক পৃষ্ঠা পর্যন্ত দীর্ঘ হয়ে থাকে।
মাইক্রো স্টোরিজঃ এখানে গল্প হয় আরো সংক্ষিপ্ত। এ গল্পগুলোর শব্দ সংখ্যা হয়ে থাকে সর্বোচ্চ পঞ্চাশ শব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত।
ন্যানো স্টোরিজঃ এই ক্ষেত্রে গল্পগুলো স্ট্রোক সংখ্যা দ্বারা সীমায়িত হয়। এখানে সর্বোচ্চ ১৪০ স্ট্রোক এ গল্প লেখা যায়। ( এগুলো সাধারণত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘টুইটার’ ভিত্তিক হয়ে থাকে)
শুধুমাত্র ন্যানো স্টোরি’র আকার বা আয়তনকেই নির্দিষ্ট এই রূপে দেখা যায়। বাকি দুই ধরণের গল্পের তেমন কোন নির্দিষ্টতা নেই। এগুলোর ব্যাপ্তি আলাপ-আলোচনায় অল্প বিস্তর পরিবর্তিত হয়। একটি গল্প সাধারণত এক পৃষ্ঠার অধিক হয়। ছোট গল্পের এই গুচ্ছ মূলত ইংরেজি সাহিত্যেরই ঐতিহ্য।
মাইক্রোফিকশন বা অনুগল্পের আবির্ভাব মধ্যযুগের গ্রীসে হলেও, এর বিস্তার হয়েছে এই আধুনিক যুগে। ইন্টারনেটের হাত ধরে, ব্লগের মাধ্যমে। আকারে সংক্ষিপ্ত হলেও, সাহিত্য মান যদি অক্ষুণ্ণ রাখা সম্ভব হয়; তাহলে এটি সহজেই পাঠকের কাছে সমাদৃত হয়। বিশ্বজুড়ে উন্মুক্ত সাহিত্য বাজার আর এর সহজলভ্যতার গুণে আজকের সাহিত্যাঙ্গনে অনুগল্পের যথেষ্ট জনপ্রিয়তা! আধুনিক এ জটিল কর্মব্যস্ত জীবনে সাহিত্যের এই দ্রুত-পঠন বিভাগটি খুব সহজেই আজ পাঠকের আপন হয়ে উঠেছে। যদিও ‘সময়’ই সব কিছু নির্ধারণ করে। সাহিত্য জগৎকেও নির্ধারণ করে ‘সময়’। তাই মাইক্রোফিকশন বা অনুগল্পের ভবিষ্যৎ কী হবে তা কেবল ভবিষ্যতের পাঠকই জানে। তবে অদূর ভবিষ্যতে অনুগল্পই যে সাহিত্যাঙ্গনে রাজত্ব করবে না, তাও বা কে বা নিশ্চিত করে বলতে পারে?
একটি বিদেশি গল্প পড়ুন--
“কবে চলে গিয়েছিল সে?”
“সে বলেনি।”
“কোথায় গিয়েছিল সে?”
“সে বলতে চায়নি।”
“তুমি কী তাকে জিজ্ঞেস করেছিলে কেন সে চলে গিয়েছিল?”
“আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, সে উত্তর দিতে পারেনি।”
“আর তার শবদেহ?”
“ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়েছিল, ৬৪ নম্বরে।”
গ্রীন্সটন গেজেট, অক্টোবর ১৫ঃ
একটি তরুণীর মৃতদেহ পাওয়া গেল।
গ্রীন্সটন গেজেট, অক্টোবর ১৬ঃ
একটি ছেলে ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়লো।
গল্পটি শেষ।
এমন আকস্মিক ‘শুরু’ এবং ‘শেষ’ এর দিয়ে কত কিছুই না বলা হয়ে যায়! একটা গল্প? গল্পও কি হয়? হয়ই তো! পরিবর্তনশীল এ পৃথিবীর সাহিত্য জগতেও সময়ের সাথে যুক্ত কিংবা বিযুক্ত হয়েছে নতুন অনেক সাহিত্য-ধারণা। অতি ছোট ক্যানভাসে তীব্র কিংবা আটপৌরে ভাষায় গল্প বলার এই ধরণটি ইদানিং বেশ প্রচলিত। চিরাচরিত সাহিত্য যা গ্রন্থ-ভিত্তিক, সেখানে গল্প বা গল্পের ধরণ মোটামুটি একই আছে। ইন্টারনেট ভিত্তিক সাহিত্য জগতেই মূলত অনুগল্পের এই নতুন ধরণটি যুক্ত হয়েছে।
মাইক্রোফিকশনঃ ‘মাইক্রোফিকশন’ এর ধারণাটি এর শব্দগত অর্থ দিয়েই ভাল বোঝা যায়। ‘মাইক্রো’ অর্থ ক্ষুদ্র এবং ‘ফিকশন’ অর্থ সৃজনশীল বর্ণনায় বিস্তৃত কোন বিষয়বস্তু। এটি এই বর্তমান সময়ের একটি ট্রেন্ড; যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো-
· অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত লেখনীর ব্যবহার।
· প্রকাশনার মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেট এর ব্যবহার।
ফ্ল্যাশ ফিকশনঃ এটি আসলে মাইক্রোফিকশনেরই অনুরূপ। এটি কাল্পনিক সাহিত্য বা কাল্পনিকতার চরম সংক্ষিপ্ত এক শৈলী। যদিও কোন সর্বজন স্বীকৃত সংজ্ঞা এর এখনো তেমন নেই, স্ববর্ণিত স্থানে ফ্ল্যাশ কথাসাহিত্য হতে হলে তিনশো শব্দ আবশ্যক। অবশ্য মতান্তরে এই সীমারেখাই আবার হাজার শব্দ। ফ্ল্যাশ ফিকশনের অন্য নাম সমূহঃ
· সাডেন ফিকশন
· মাইক্রোফিকশন
· মাইক্রো-স্টোরি
· শর্ট শর্ট
· পোস্টকার্ড ফিকশন
· শর্ট শর্ট স্টোরি
এই নামগুলোর মাঝে আকারভেদে প্রায়ই কিছু প্রভেদ থাকে। কখনো কখনো এক-হাজার শব্দকে ফ্ল্যাশ ফিকশন এবং এর থেকে সামান্য দীর্ঘ ছোটগল্পকে সাডেন ফিকশন বা আকস্মিক কথাসাহিত্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
মাইক্রোফিকশন এবং ইন্টারনেটঃ মাইক্রোফিকশনের প্রকৃত রাজত্ব আসলে ইন্টারনেটে। এটি পাওয়া যেত প্রধানত ব্লগে। সে যাইহোক, মাইক্রোফিকশনের জন্ম কিন্তু ইন্টারনেটের সাথে নয়; এর জন্ম মধ্যযুগের গ্রীসে। ঈশপ এর সেই ছোট ছোট শিক্ষামূলক গল্পগুলোও ছিল অধুনা এই মাইক্রোফিকশনেরই উদাহরণ। বিংশ শতাব্দীতে হয়েছে প্রাক ইন্টারনেট মাইক্রোফিকশনের আরেক নতুন জন্ম। ফ্রানজ কাফকা, আরনেস্ট হেমিংওয়ে, জর্জ লুইস বার্গস, এডলফো বিওয় ক্যাসারস প্রমুখের রচনায়ও দেখা গিয়েছে অসাধারণ কিছু মাইক্রোফিকশন বা অনুগল্প। ফ্রানজ কাফকা’র একটি অনুগল্প আছে এমন – ইঁদুরটি ‘হায় হায়’ করে বলে উঠলো, “সমস্ত জগত প্রতিদিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। শুরতে এটা এতই বড় ছিল যে আমি ভয় পেয়েছিলাম। ভয়ে দৌড়াতে শুরু করেছিলাম। এবং দৌড়াতে দৌড়াতে আমি খুশি হয়ে উঠেছিলাম যখন দূরে ডানে এবং বামে দেয়াল দেখতে পেয়েছিলাম। কিন্তু দীর্ঘ সে দেয়াল হঠাৎ এত দ্রুত সংকুচিত হতে লাগলো যে আমি প্রায় এর শেষ অংশে পৌঁছে গেলাম। এবং অবধারিত ভাবেই শেষের সে কোণে পাতা ফাঁদে পা দিয়ে দিলাম।” “আপনার প্রয়োজন ছিল শুধু মাত্র দিকটির পরিবর্তন করা” বিড়ালটি এ কথা বলেই তাকে খেয়ে ফেললো। আবার মাত্র একটি চরণেও অনবদ্য এক অনুগল্পের আস্বাদ পেয়েছে আরনেস্ট হেমিংওয়ের পাঠকগণ। গল্পটি এমন – ‘ফর সেলঃ বেবি শুজ, নেভার বর্ন।’ একটিই বাক্য, কিন্তু কী অদ্ভুত তার দ্যোতনা! পুরো একটি গল্প,তার চরিত্রদের নিয়ে হাজির হয়ে যায় পাঠক-কল্পনায়!
মাইক্রোফিকশনের আকস্মিক ব্যাপ্তিঃ মাইক্রোফিকশন বা অনুগল্প নিয়ে যত যাই বলা হোক না কেন, এর আসল ব্যাপ্তি ঘটেছে ইন্টারনেট এর হাত ধরে।
· এর বিশাল প্রচলন একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশককেই মানা হয়।
· দীর্ঘ গ্রন্থের একটি বৈধ বিকল্প ছিল এই অনুগল্প।
· নেট সংস্করণই একে দিয়েছে এক বিশেষ গণতন্ত্রায়ন, যা এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
· নেট এর বৈশিষ্ট্যই এমন যে সংক্ষেপণ, দ্রুত-পড়া গ্রন্থের এখানে বিশেষ প্রয়োজন।
· এর সবচেয়ে সঠিক প্রকাশিত প্ল্যাটফর্ম হলো ‘ব্লগ’।
· ব্লগ স্ব-সংস্করণ এর অনুমতি দেয় কিন্তু মান-সম্পন্ন সম্পাদনার নিশ্চয়তা দেয় না।
ব্লগ এর দারুণ কিছু সুবিধাও আছে। যেমন এটি অতি সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং বিশ্বের যে কোন স্থান থেকেই সকলের প্রবেশযোগ্য। আরও একটি বিশাল সুবিধা হচ্ছে এটি বিনামূল্য; পাঠক এবং প্রকাশক, উভয়ের জন্য।
সাহিত্যকে বর্তমানে দুই ফরম্যাটে দেখা যায়। প্রচলিত সাহিত্য এবং ই-সাহিত্য। প্রচলিত সাহিত্য হচ্ছে বই ভিত্তিক। আর ই-সাহিত্য হলো ইন্টারনেট ভিত্তিক; মিনি-গল্প, মাইক্রো-গল্প এবং ন্যানো গল্প। ইন্টারনেট ভিত্তিক এই সাহিত্যকে সাধারণত এই ভাবে বিভাজিত হতে দেখা যায়।
মিনি স্টোরিজঃ এই আঙ্গিকের গল্পগুলো সাধারণত এক পৃষ্ঠা পর্যন্ত দীর্ঘ হয়ে থাকে।
মাইক্রো স্টোরিজঃ এখানে গল্প হয় আরো সংক্ষিপ্ত। এ গল্পগুলোর শব্দ সংখ্যা হয়ে থাকে সর্বোচ্চ পঞ্চাশ শব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত।
ন্যানো স্টোরিজঃ এই ক্ষেত্রে গল্পগুলো স্ট্রোক সংখ্যা দ্বারা সীমায়িত হয়। এখানে সর্বোচ্চ ১৪০ স্ট্রোক এ গল্প লেখা যায়। ( এগুলো সাধারণত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘টুইটার’ ভিত্তিক হয়ে থাকে)
শুধুমাত্র ন্যানো স্টোরি’র আকার বা আয়তনকেই নির্দিষ্ট এই রূপে দেখা যায়। বাকি দুই ধরণের গল্পের তেমন কোন নির্দিষ্টতা নেই। এগুলোর ব্যাপ্তি আলাপ-আলোচনায় অল্প বিস্তর পরিবর্তিত হয়। একটি গল্প সাধারণত এক পৃষ্ঠার অধিক হয়। ছোট গল্পের এই গুচ্ছ মূলত ইংরেজি সাহিত্যেরই ঐতিহ্য।
মাইক্রোফিকশন বা অনুগল্পের আবির্ভাব মধ্যযুগের গ্রীসে হলেও, এর বিস্তার হয়েছে এই আধুনিক যুগে। ইন্টারনেটের হাত ধরে, ব্লগের মাধ্যমে। আকারে সংক্ষিপ্ত হলেও, সাহিত্য মান যদি অক্ষুণ্ণ রাখা সম্ভব হয়; তাহলে এটি সহজেই পাঠকের কাছে সমাদৃত হয়। বিশ্বজুড়ে উন্মুক্ত সাহিত্য বাজার আর এর সহজলভ্যতার গুণে আজকের সাহিত্যাঙ্গনে অনুগল্পের যথেষ্ট জনপ্রিয়তা! আধুনিক এ জটিল কর্মব্যস্ত জীবনে সাহিত্যের এই দ্রুত-পঠন বিভাগটি খুব সহজেই আজ পাঠকের আপন হয়ে উঠেছে। যদিও ‘সময়’ই সব কিছু নির্ধারণ করে। সাহিত্য জগৎকেও নির্ধারণ করে ‘সময়’। তাই মাইক্রোফিকশন বা অনুগল্পের ভবিষ্যৎ কী হবে তা কেবল ভবিষ্যতের পাঠকই জানে। তবে অদূর ভবিষ্যতে অনুগল্পই যে সাহিত্যাঙ্গনে রাজত্ব করবে না, তাও বা কে বা নিশ্চিত করে বলতে পারে?
0 মন্তব্যসমূহ