গল্পপাঠ : ১
২০১৫ সালে কত সংখ্যক গল্প পড়েছেন?
মাহমুদ হাসান পারভেজ : ১
তা গুণে বলা সত্যিই কঠিন। তবে এটা বলা যাবে, আমার সারা জীবনে পড়ার অভিজ্ঞতা ধরুণ ১০০। এর মধ্যে ২০১৫ সালেই ৫০ ভাগ পড়া গল্প। এর কারণ এ বছরটা আমার গল্প ও গল্পকার আবিষ্কারের প্রথম বছর। তাই পড়ার তেমন কোন বাছ বিচার নেই। সত্যি কথাটি হলো- এ বছরের আগেও আমি অনেক গল্পকারের নামই জানতাম না।পড়তে গিয়ে অনেক গল্পকারকে আবিষ্কার করছি। এদের মধ্যে একেবারে নতুন প্রজন্মের অনেকেই যেমন আছেন আবার খ্যাতনামা ও শক্তিশালী অনেকেই আছেন। একেকটা গল্প পড়ি আর নতুন করে ঘোর তৈরি হয়। কোন কোন গল্পের ঘোরটা দীর্ঘসময় ধরে চলে। বেশ মজা পাই। অবাকও হই।
গল্পপাঠ : ২
কোন কোন মাধ্যম থেকে গল্পগুলো পড়েছেন?
মাহমুদ হাসান পারভেজ : ২
মাধ্যম বলতে গল্পের বই, ওয়েব ম্যাগজিন আর লিটন ম্যাগাজিন থেকেই সব পড়া। আর অনলাইন নিউজ সাইটগুলোর সাহিত্য বিভাগ থেকেও বেশ কিছু গল্প পড়েছি। তবে সবথেকে বেশী গল্পের বই থেকেই পড়েছি। এখানে বলে রাখি, পড়ার মাধ্যম হিসেবে আমার প্রথম পছন্দ বই। তবে ভ্রমণের সময়টাতে পড়ার ক্ষেত্রে অনলাইন সবচে জুতসই মাধ্যম।
গল্পপাঠ : ৩
কোন কোন গল্পকারের গল্প পড়েছেন?
মাহমুদ হাসান পারভেজ : ৩
বলেছিলাম বোধ হয় বছরটি আমার গল্পকার ও গল্প আবিষ্কারের বছর। এর একেবারে শুরুটা হয়েছিল আসলে গত বছরের (২০১৪) শেষ মাসগুলো থেকেই। এ বছরের গোড়া থেকে ধরলে তালিকাটা ক্রমাগত বাড়ছেই। তালিকা অনেক দীর্ঘ হবে। পছন্দের ক্রমানুসারে নয় বরং মেমরিতে যাদের নামটা আগে আসছে তাদের নামগুলোই বলি। তার আগে বলে নেওয়া ভাল, পাঠক হিসেবে আমি একাল সেকাল বা নতুন পুরনো বা এ দশক সে দশক ভেবে গল্পকার বা গল্পে বিশ্বাস করতে চাই না। আমার কাছে যে কোন সময়ের গল্পকারই সমান। সকল বয়সের গল্পকারই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
অমর মিত্র, কুলদা রায়, নুরুননবী শান্ত, এমদাদ রহমান এ চারটি নামকে শুরুতে রাখলাম। পক্ষপাতের দৃষ্টিকোণ থেকেও তা হতে পারে। এর অন্য একটা কারণ হলো এঁদের সাথে আমার কদাচিৎ হলেও গল্পের বাইরে গিয়ে যোগাযোগ হয়। সে সূত্রে গল্পপাঠ ওয়েবজিনে, অন্য কোন অনলাইন পেজে বা এঁদের প্রকাশিত বইও আমি সংগ্রহ করে পড়েছি। এরপরে আছেন- যাদের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল তাদের গল্প। এঁদের মধ্যে কারও যেমন একটি গল্প কি দুটি গল্প পড়েছি, আবার কারও গল্পসমগ্রও পড়া শেষ। এঁরা হলেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, মেহেদী উল্ল্যাহ, মোজাফফর হোসেন, স্বকৃত নোমান, শহীদুল জহির, শওকত আলী, হাসান আজিজুল হক, নরেন্দ্রনাথ মিত্র, সুবিমল মিশ্র, হুমায়ুন আহমেদ, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, নাহার মনিকা, দীপেন ভট্টাচার্য, মঈনুল আহসান সাবের, প্রেমেন্দ্র মিত্র, জাকির তালুকদার, শিমুল মাহমুদ, শামিম আহমেদ, শ্রাবণী দাশ গুপ্ত, চন্দন আনোয়ার, শাহাদুজ্জামান, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, অতীন বন্দোপাধ্যায়, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, আল মাহমুদ, মাহবুব মোর্শেদ, মনিরা কায়েস প্রমুখ। এছাড়া এবছরেই আরও অনেক গল্পকারের গল্প পড়া হয়েছে যাদের নামটা এ মুহুর্তে মনে আসছে না।
অমর মিত্র, কুলদা রায়, নুরুননবী শান্ত, এমদাদ রহমান এ চারটি নামকে শুরুতে রাখলাম। পক্ষপাতের দৃষ্টিকোণ থেকেও তা হতে পারে। এর অন্য একটা কারণ হলো এঁদের সাথে আমার কদাচিৎ হলেও গল্পের বাইরে গিয়ে যোগাযোগ হয়। সে সূত্রে গল্পপাঠ ওয়েবজিনে, অন্য কোন অনলাইন পেজে বা এঁদের প্রকাশিত বইও আমি সংগ্রহ করে পড়েছি। এরপরে আছেন- যাদের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল তাদের গল্প। এঁদের মধ্যে কারও যেমন একটি গল্প কি দুটি গল্প পড়েছি, আবার কারও গল্পসমগ্রও পড়া শেষ। এঁরা হলেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, মেহেদী উল্ল্যাহ, মোজাফফর হোসেন, স্বকৃত নোমান, শহীদুল জহির, শওকত আলী, হাসান আজিজুল হক, নরেন্দ্রনাথ মিত্র, সুবিমল মিশ্র, হুমায়ুন আহমেদ, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, নাহার মনিকা, দীপেন ভট্টাচার্য, মঈনুল আহসান সাবের, প্রেমেন্দ্র মিত্র, জাকির তালুকদার, শিমুল মাহমুদ, শামিম আহমেদ, শ্রাবণী দাশ গুপ্ত, চন্দন আনোয়ার, শাহাদুজ্জামান, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, অতীন বন্দোপাধ্যায়, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, আল মাহমুদ, মাহবুব মোর্শেদ, মনিরা কায়েস প্রমুখ। এছাড়া এবছরেই আরও অনেক গল্পকারের গল্প পড়া হয়েছে যাদের নামটা এ মুহুর্তে মনে আসছে না।
গল্পপাঠ : ৪.
এর মধ্যে ভালো লাগার গল্পগুলোর কয়েকটি নাম করুন।
মাহমুদ হাসান পারভেজ : ৪
গল্পগুলো ভালো হয়ে উঠেছে কি কি কারণে সেগুলো উল্লেখ করুন।
মহা মুস্কিল! পড়া গল্প থেকে বেছে বেছে ভাল লাগা কয়েকটির নাম বলা তো খুব কঠিন। ব্যাপারটা আরও কঠিন যখন আমি নিজে এখনও পাঠক হিসেবে নবজাত। পড়ে ফেলা বেশীরভাগ গল্পই আমার ভাল লেগেছে। তবে একেবারে ভাল না লাগলেও আমি কোন গল্পই এখন আর মাঝ পথে ছেড়ে দেই না। শেষ পর্যন্ত পড়ে ফেলি। এর ফলে প্রায়ই দেখি, কোন কোন গল্পের শুরুতে বা মাঝে গল্পটি পড়তে সস্তি বোধ না হলেও শেষ পর্যন্ত গিয়ে বেশ আরামবোধ হচ্ছে। অথবা ইতমধ্যে একটা মানসিক পরিবর্তন ঘটেছে।
যাই হোক, ভালো লাগা গল্পের নাম আর তা ভালো হয়ে ওঠার কারণ নিয়ে বলার আগে পাঠক হিসেবে আমার সীমাবদ্ধতা স্বীকার করা জরুরী বোধ করি। এ প্রসঙ্গে গল্প ভালো লাগা বা গল্প ভালো হয়ে ওঠার প্রথাগত আলোচনার বাইরে থেকে আমি কিছু বলতে চাই।
কোন গল্পের পাঠক হিসেবে সবসময় ঘোরের ভেতর থাকতে আমার সচ্ছন্দ বোধ হয়। তাই আমার সেসব গল্পই বেশী ভালো লেগেছে- যে গল্পগুলো আমাকে একটা ঘোরের মধ্যে রেখে গল্প শুনিয়েছে। গল্পকার নিশ্চয় তার মত করেই গল্পটা বলে থাকেন। প্রত্যেক গল্পের বয়ান কৌশল, আখ্যান, সেটিং প্রভৃতিও পৃথক হয়। এখানে গল্প বলার কায়দা থেকে শুরু করে প্রতিটি গল্পের জন্মবীজ, দেহ-কান্ড, জীবন-জগত, অনুভুতি, দেখা না দেখার সাথে সাথে পাঠকও মিশে যাবেন বা এটাচমেন্টে থাকবেন। -সাহিত্যের পাঠক হিসেবে এটাই আমার দৃষ্টিভঙ্গি।
যেমন ধরা যাক, প্রেমেন্দ মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পটির কথা। গল্পটির বয়ান কৌশলে আদ্যোপান্ত পাঠক আটকে থাকবেন এবং গল্পটি অবশ্যই পড়ে শেষ করবেন এমনটি বোধ হয় বলা যায়। অথচ গল্পের ঘটনা তেমন কিছুই নাহ্! ঘটনায় ক্লাইমেক্স খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনকি তেলেনাপাতা নামের কোন গ্রাম আসলেই আছে কি না সেটাও সন্দেহ। তবে কি না সেরকম এক প্রত্যন্ত গ্রামকে উন্মোচন করতেই একদিন শহরের ৩ যুবক আসে। প্রত্যন্ত বা অজ গ্রামের শত দুর্ভোগকেও যুবকেরা এডভেঞ্চার মনে করে উপভোগ করতে পারে। গ্রামের নৈসর্গিক পরিবেশে শ্রেফ সময় কাটিয়ে তারা আবার শহরে ফিরে যায়। প্রায় ঘটনাহীন এই গল্প চরম বাস্তবতার ভেতর দিয়ে যে চরম রোমান্টিকতাকেও আশ্রয় করতে পারে সেটাই মুগ্ধ করার মত।
আরেকটি গল্পের কথা বলি, মেহেদী উল্ল্যাহর গল্প- ‘রোদ বৃষ্টির রোগী’। বছরের একেবারে শুরুতেই পড়েছিলাম কোন একটা অনলাইন কাগজে। কিন্তু এখনও মনে দাগ কেটে আছে। হয়ত আরও অনেকদিন গল্পটা ভুলব না। ভুলে গেলেও হয়ত আবারও পড়তে চাইব। কেন এমন হবে বলুন? গল্পটির ভিন্ন একটা স্বাদ আছে। একইরকম দেখতে দুইজন মানুষ, যারা জমজ ভাই হলেও হতে পারে। কিন্তু ঠিক কি কারণে তারা একে অন্যের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক জীবন যাপন করতে পারে তার একটা বুদ্ধিবৃত্তিক উপস্থাপনা আছে আখ্যানভাগে। কাকতালীয় ভাবে তাদের দুইজনকেই আবিষ্কার করবে পাঠক। এবং সবচে বড় কাকতাল হলো তাদের একজন রোদের সাথে সংশ্লিষ্ট রোগী এবং অন্যজন বৃষ্টির সাথে সংশ্লিষ্ট রোগী। কিন্তু যেটা কাকতাল নয় এবং চরম বাস্তব সেটা হলো ধ্বংসরূপী ‘সাইক্লোন’ই দুই জমজের শৈশবকে হয়ত পৃথক করে দিয়েছে। এ জায়গায় দাঁড়িয়ে গল্পটি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।
সম্প্রতি যেমন পড়েছি কুলদা রায়ের ‘দি জায়েন্ট গ্রেপ’; দেখতে দেখতে একটি বহুমাত্রিক গল্প হয়ে উঠল। যেমন করে একটা অতি সাধারণ লাউ গাছ বেড়ে ওঠে; ডালপালা ছড়িয়ে লাউ গাছে ফুল আসে, ফল আসে –ঠিক তেমন করে যেন গল্পটিও বলা হয়েছে। এই বলার ভঙ্গিতে আমরা লাউ গাছকে আঙুর গাছ মনে করে গল্পের শেষ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি। লাউ গাছে যেমন লাউ ধরবে তেমনি আঙুর গাছেও কেউ একদিন বিশালাকার মিষ্টি আঙুর ফলাবে। জায়েন্ট গ্রেপ একদিন ঠিকই ফলবার কথাও ছিল। কিন্তু সত্তর বছর আগে ঘটে যাওয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সব সম্ভাবনাকে কেমন নষ্ট করে দিয়েছে। ছোট্ট একটা বিন্দুতে গল্পটি শুরু হয়ে শেষে এত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠে- এক কথায় অসাধারণ।
এখানে শ্রাবণী দাশ গুপ্তের ‘কাল রবিবার আছে’ গল্পটি নিয়ে একটি কথা না বললেই নয়। আমার খুব ভাল লেগেছে। আমাদের খুব চেনা পরিসরে অতি তুচ্ছ একটি মেয়ের জীবন ছবি; কতটা নির্মম বাস্তবতার সাথে যুদ্ধ করে সে টিকে থাকে তার স্পষ্ট বর্ণনা আছে। এরকম গল্প হয়ত আরও থাকতে পারে। তবে এই গল্পটায় যে মনস্তাত্বিক আরোহন-অবরোহন আছে তা বয়ানের দক্ষতায় পাঠককে গল্পের ভেতর ঢুকিয়ে নিয়ে ঘুরিয়ে আনবে। একসময় তুচ্ছ মেয়েটিকে পাঠকের ভিষণ আপন মনে হতে থাকবে।
এরকম অসংখ্য ভালো লাগার গল্প সামনে জ্বলজ্বল করছে। কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলি। তার মধ্যে নরেন্দ্রনাথ মিত্রের ‘রস’; আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘যোগাযোগ’; সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘রাণীর ঘাটের বৃত্তান্ত’; অমর মিত্রের ‘পাসিং শো’, সুবিমল মিশ্রের ‘হারাণ মাঝির বিধবা বৌয়ের মড়া বা সোনার গাণ্ধীমূর্তি’; হুমায়ুন আহমেদের ‘একটি নীল বোতাম’; এমদাদ রহমানের ‘নিভৃতবাস’; শহিদুল জহিরের ‘কোথায় পাব তারে’; শওকত আলীর ‘নয়নতারা কোথায় রে’; জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের ‘যদি পাড় ভাঙে’; শিমুল মাহমুদের ‘ইলিশখাঁড়ি’; নুরুননবী শান্তর ‘মেজাজ’; ময়নুল আহসান সাবের এর ‘কবেজ লেঠেল’; জাকির তালুকদারের ‘পুরুষ’; হাসান আজিজুল হকের ‘নামহীন গোত্রহীন’ – এ গল্পগুলোর কথা মনে আসছে।
মহা মুস্কিল! পড়া গল্প থেকে বেছে বেছে ভাল লাগা কয়েকটির নাম বলা তো খুব কঠিন। ব্যাপারটা আরও কঠিন যখন আমি নিজে এখনও পাঠক হিসেবে নবজাত। পড়ে ফেলা বেশীরভাগ গল্পই আমার ভাল লেগেছে। তবে একেবারে ভাল না লাগলেও আমি কোন গল্পই এখন আর মাঝ পথে ছেড়ে দেই না। শেষ পর্যন্ত পড়ে ফেলি। এর ফলে প্রায়ই দেখি, কোন কোন গল্পের শুরুতে বা মাঝে গল্পটি পড়তে সস্তি বোধ না হলেও শেষ পর্যন্ত গিয়ে বেশ আরামবোধ হচ্ছে। অথবা ইতমধ্যে একটা মানসিক পরিবর্তন ঘটেছে।
যাই হোক, ভালো লাগা গল্পের নাম আর তা ভালো হয়ে ওঠার কারণ নিয়ে বলার আগে পাঠক হিসেবে আমার সীমাবদ্ধতা স্বীকার করা জরুরী বোধ করি। এ প্রসঙ্গে গল্প ভালো লাগা বা গল্প ভালো হয়ে ওঠার প্রথাগত আলোচনার বাইরে থেকে আমি কিছু বলতে চাই।
কোন গল্পের পাঠক হিসেবে সবসময় ঘোরের ভেতর থাকতে আমার সচ্ছন্দ বোধ হয়। তাই আমার সেসব গল্পই বেশী ভালো লেগেছে- যে গল্পগুলো আমাকে একটা ঘোরের মধ্যে রেখে গল্প শুনিয়েছে। গল্পকার নিশ্চয় তার মত করেই গল্পটা বলে থাকেন। প্রত্যেক গল্পের বয়ান কৌশল, আখ্যান, সেটিং প্রভৃতিও পৃথক হয়। এখানে গল্প বলার কায়দা থেকে শুরু করে প্রতিটি গল্পের জন্মবীজ, দেহ-কান্ড, জীবন-জগত, অনুভুতি, দেখা না দেখার সাথে সাথে পাঠকও মিশে যাবেন বা এটাচমেন্টে থাকবেন। -সাহিত্যের পাঠক হিসেবে এটাই আমার দৃষ্টিভঙ্গি।
যেমন ধরা যাক, প্রেমেন্দ মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পটির কথা। গল্পটির বয়ান কৌশলে আদ্যোপান্ত পাঠক আটকে থাকবেন এবং গল্পটি অবশ্যই পড়ে শেষ করবেন এমনটি বোধ হয় বলা যায়। অথচ গল্পের ঘটনা তেমন কিছুই নাহ্! ঘটনায় ক্লাইমেক্স খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনকি তেলেনাপাতা নামের কোন গ্রাম আসলেই আছে কি না সেটাও সন্দেহ। তবে কি না সেরকম এক প্রত্যন্ত গ্রামকে উন্মোচন করতেই একদিন শহরের ৩ যুবক আসে। প্রত্যন্ত বা অজ গ্রামের শত দুর্ভোগকেও যুবকেরা এডভেঞ্চার মনে করে উপভোগ করতে পারে। গ্রামের নৈসর্গিক পরিবেশে শ্রেফ সময় কাটিয়ে তারা আবার শহরে ফিরে যায়। প্রায় ঘটনাহীন এই গল্প চরম বাস্তবতার ভেতর দিয়ে যে চরম রোমান্টিকতাকেও আশ্রয় করতে পারে সেটাই মুগ্ধ করার মত।
আরেকটি গল্পের কথা বলি, মেহেদী উল্ল্যাহর গল্প- ‘রোদ বৃষ্টির রোগী’। বছরের একেবারে শুরুতেই পড়েছিলাম কোন একটা অনলাইন কাগজে। কিন্তু এখনও মনে দাগ কেটে আছে। হয়ত আরও অনেকদিন গল্পটা ভুলব না। ভুলে গেলেও হয়ত আবারও পড়তে চাইব। কেন এমন হবে বলুন? গল্পটির ভিন্ন একটা স্বাদ আছে। একইরকম দেখতে দুইজন মানুষ, যারা জমজ ভাই হলেও হতে পারে। কিন্তু ঠিক কি কারণে তারা একে অন্যের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক জীবন যাপন করতে পারে তার একটা বুদ্ধিবৃত্তিক উপস্থাপনা আছে আখ্যানভাগে। কাকতালীয় ভাবে তাদের দুইজনকেই আবিষ্কার করবে পাঠক। এবং সবচে বড় কাকতাল হলো তাদের একজন রোদের সাথে সংশ্লিষ্ট রোগী এবং অন্যজন বৃষ্টির সাথে সংশ্লিষ্ট রোগী। কিন্তু যেটা কাকতাল নয় এবং চরম বাস্তব সেটা হলো ধ্বংসরূপী ‘সাইক্লোন’ই দুই জমজের শৈশবকে হয়ত পৃথক করে দিয়েছে। এ জায়গায় দাঁড়িয়ে গল্পটি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।
সম্প্রতি যেমন পড়েছি কুলদা রায়ের ‘দি জায়েন্ট গ্রেপ’; দেখতে দেখতে একটি বহুমাত্রিক গল্প হয়ে উঠল। যেমন করে একটা অতি সাধারণ লাউ গাছ বেড়ে ওঠে; ডালপালা ছড়িয়ে লাউ গাছে ফুল আসে, ফল আসে –ঠিক তেমন করে যেন গল্পটিও বলা হয়েছে। এই বলার ভঙ্গিতে আমরা লাউ গাছকে আঙুর গাছ মনে করে গল্পের শেষ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি। লাউ গাছে যেমন লাউ ধরবে তেমনি আঙুর গাছেও কেউ একদিন বিশালাকার মিষ্টি আঙুর ফলাবে। জায়েন্ট গ্রেপ একদিন ঠিকই ফলবার কথাও ছিল। কিন্তু সত্তর বছর আগে ঘটে যাওয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সব সম্ভাবনাকে কেমন নষ্ট করে দিয়েছে। ছোট্ট একটা বিন্দুতে গল্পটি শুরু হয়ে শেষে এত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠে- এক কথায় অসাধারণ।
এখানে শ্রাবণী দাশ গুপ্তের ‘কাল রবিবার আছে’ গল্পটি নিয়ে একটি কথা না বললেই নয়। আমার খুব ভাল লেগেছে। আমাদের খুব চেনা পরিসরে অতি তুচ্ছ একটি মেয়ের জীবন ছবি; কতটা নির্মম বাস্তবতার সাথে যুদ্ধ করে সে টিকে থাকে তার স্পষ্ট বর্ণনা আছে। এরকম গল্প হয়ত আরও থাকতে পারে। তবে এই গল্পটায় যে মনস্তাত্বিক আরোহন-অবরোহন আছে তা বয়ানের দক্ষতায় পাঠককে গল্পের ভেতর ঢুকিয়ে নিয়ে ঘুরিয়ে আনবে। একসময় তুচ্ছ মেয়েটিকে পাঠকের ভিষণ আপন মনে হতে থাকবে।
এরকম অসংখ্য ভালো লাগার গল্প সামনে জ্বলজ্বল করছে। কোনটা ছেড়ে কোনটার কথা বলি। তার মধ্যে নরেন্দ্রনাথ মিত্রের ‘রস’; আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘যোগাযোগ’; সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘রাণীর ঘাটের বৃত্তান্ত’; অমর মিত্রের ‘পাসিং শো’, সুবিমল মিশ্রের ‘হারাণ মাঝির বিধবা বৌয়ের মড়া বা সোনার গাণ্ধীমূর্তি’; হুমায়ুন আহমেদের ‘একটি নীল বোতাম’; এমদাদ রহমানের ‘নিভৃতবাস’; শহিদুল জহিরের ‘কোথায় পাব তারে’; শওকত আলীর ‘নয়নতারা কোথায় রে’; জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের ‘যদি পাড় ভাঙে’; শিমুল মাহমুদের ‘ইলিশখাঁড়ি’; নুরুননবী শান্তর ‘মেজাজ’; ময়নুল আহসান সাবের এর ‘কবেজ লেঠেল’; জাকির তালুকদারের ‘পুরুষ’; হাসান আজিজুল হকের ‘নামহীন গোত্রহীন’ – এ গল্পগুলোর কথা মনে আসছে।
গল্পপাঠ : ৫.
সেরা গল্পটি নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ বলুন।
মাহমুদ হাসান পারভেজ : ৫
ভাল লাগার সব গল্পই আমার কাছে সেরা গল্প। তবে ‘সেরা’ গল্প নির্বাচনে যে সব শর্ত থাকতে হয় বলে বোদ্ধাগণ মনে করেন তা নিয়ে আমার যথেষ্ট জ্ঞানের অভাব আছে। তবু যে গল্পটি হৃদয়ে গেঁথে আছে সেটা নিয়েই সংক্ষেপে বলি।
এমদাদ রহমানের ‘নিভৃতবাস’ গল্পটি গল্পপাঠে পড়েছিলাম গত জানুয়ারিতে। এরপর বইমেলা থেকে তার ‘পাতালভুমি ও অন্যান্য গল্প’ বইটি সংগ্রহ করি। গল্পটি আবারও পেয়ে যাই। প্রতিবার পাঠের সময় আমার এক অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি হয়েছিল। প্রতিটি লাইন, প্যারাগ্রাফ যেনবা নিজে নিজে গল্পটা তৈরি করছিল। আর আমি ক্রমশ গল্পের জগতে বন্দি হতে শুরু করি অদ্ভুত কোন ঘোরের ভেতর দিয়ে। আর কি অদ্ভুত, আমি নিজেকে দেওয়ালের একটা টিকটিকি মনে করেছিলাম। আমি কখনও কখনও অশরীরী হয়ে গিয়েছি। পারালাইজড মাকে বিছানায় কেবল নড়াচড়াহীন পাথরের মত দেখাচ্ছিল। শব্দগুলোর-বাক্যগুলোর ভেতর দিয়ে আমি যেন এক খুব পরিচিত কোন রমণীর ঘ্রাণ পাচ্ছিলাম। কে সেই রমণী? সে প্রশ্ন আমাকে বার বার একটা গতিহীন আদিম কচ্ছপের স্বপ্নে ফেরত নিয়ে যায়। সেখানে গেলে আমি বারবার নিরুত্তর হয়ে পড়ি! অথচ আমি শঙ্খচিলের স্বপ দেখতে চাই। অবশেষে আমি দেওয়ালের ভেতর বন্দি হয়ে থাকি। যেখানে
অদ্ভুত আকর্ষণে পড়ে ফেলা সে গল্প। এ গল্প একেবারে মগজ অবধি পৌঁছায়। মগজের ভেতর অনুরণন তৈরি করে। দুঃখ বোধ এসে গ্রাস করে। ঘৃণা হয়। আবার মুগ্ধতা এসে কখনও উছলিয়ে দেয় সকল অনুভূতিকে।
গল্পের বোদ্ধারা কি বলবেন জানি না, তবে ‘নিভৃতবাস’ গল্পটিকে আমি দেখি মূলত অনুভুতিপ্রবণ ভাবাশ্রয়ী গল্প হিসেবে। এভাবেও গল্প বলা যায়- এটা আমার ধারণায় ছিলনা। গল্প বলতে তো- কত কলকব্জা থাকা চাই। সেসব কলকব্জার ইঞ্জিনিয়ারিং মোতাবেক আমরা পাঠকরা গল্প পড়তে অভ্যস্ত। ফলে আমাদের পঠনে নতুন কোন আঙ্গিক দেখে কেউ কেউ আঁৎকে উঠতে পারেন। এরকম ধারণা আমারও যে ছিলনা তা নয়। কিন্তু সে ধারণাটাই ভুল প্রমাণিত হয় এ গল্পটি পড়ার মাধ্যমে। শেষ পর্যন্ত আমি অদ্ভুত একটা আকর্ষণ নিয়েই গল্পটা শুধু উপভোগ করেছি। একারণেই গল্পটিকে আমি আমার সেরা গল্পের তালিকায় রেখেছি।
এমদাদ রহমানের ‘নিভৃতবাস’ গল্পটি গল্পপাঠে পড়েছিলাম গত জানুয়ারিতে। এরপর বইমেলা থেকে তার ‘পাতালভুমি ও অন্যান্য গল্প’ বইটি সংগ্রহ করি। গল্পটি আবারও পেয়ে যাই। প্রতিবার পাঠের সময় আমার এক অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি হয়েছিল। প্রতিটি লাইন, প্যারাগ্রাফ যেনবা নিজে নিজে গল্পটা তৈরি করছিল। আর আমি ক্রমশ গল্পের জগতে বন্দি হতে শুরু করি অদ্ভুত কোন ঘোরের ভেতর দিয়ে। আর কি অদ্ভুত, আমি নিজেকে দেওয়ালের একটা টিকটিকি মনে করেছিলাম। আমি কখনও কখনও অশরীরী হয়ে গিয়েছি। পারালাইজড মাকে বিছানায় কেবল নড়াচড়াহীন পাথরের মত দেখাচ্ছিল। শব্দগুলোর-বাক্যগুলোর ভেতর দিয়ে আমি যেন এক খুব পরিচিত কোন রমণীর ঘ্রাণ পাচ্ছিলাম। কে সেই রমণী? সে প্রশ্ন আমাকে বার বার একটা গতিহীন আদিম কচ্ছপের স্বপ্নে ফেরত নিয়ে যায়। সেখানে গেলে আমি বারবার নিরুত্তর হয়ে পড়ি! অথচ আমি শঙ্খচিলের স্বপ দেখতে চাই। অবশেষে আমি দেওয়ালের ভেতর বন্দি হয়ে থাকি। যেখানে
অদ্ভুত আকর্ষণে পড়ে ফেলা সে গল্প। এ গল্প একেবারে মগজ অবধি পৌঁছায়। মগজের ভেতর অনুরণন তৈরি করে। দুঃখ বোধ এসে গ্রাস করে। ঘৃণা হয়। আবার মুগ্ধতা এসে কখনও উছলিয়ে দেয় সকল অনুভূতিকে।
গল্পের বোদ্ধারা কি বলবেন জানি না, তবে ‘নিভৃতবাস’ গল্পটিকে আমি দেখি মূলত অনুভুতিপ্রবণ ভাবাশ্রয়ী গল্প হিসেবে। এভাবেও গল্প বলা যায়- এটা আমার ধারণায় ছিলনা। গল্প বলতে তো- কত কলকব্জা থাকা চাই। সেসব কলকব্জার ইঞ্জিনিয়ারিং মোতাবেক আমরা পাঠকরা গল্প পড়তে অভ্যস্ত। ফলে আমাদের পঠনে নতুন কোন আঙ্গিক দেখে কেউ কেউ আঁৎকে উঠতে পারেন। এরকম ধারণা আমারও যে ছিলনা তা নয়। কিন্তু সে ধারণাটাই ভুল প্রমাণিত হয় এ গল্পটি পড়ার মাধ্যমে। শেষ পর্যন্ত আমি অদ্ভুত একটা আকর্ষণ নিয়েই গল্পটা শুধু উপভোগ করেছি। একারণেই গল্পটিকে আমি আমার সেরা গল্পের তালিকায় রেখেছি।
গল্পপাঠ : ৬.
আপনি কি মনে করেন—এই গল্পগুলো বাংলাদেশের চিরায়ত গল্পগুলোর সমতুল্য বা তাদেরকে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে?
মাহমুদ হাসান পারভেজ : ৬
প্রথমে বলতে চাই, চিরায়ত গল্পের কাল সব সময় প্রায় স্থির থাকে না। নিয়ত স্বাদ ও গন্ধ পরিবর্তন হয়। পাঠকের রুচির পরিবর্তন হয়। পাঠকের চাহিদার সাথে গল্পের বিষয়বস্তু, কাঠামো, বয়ান প্রভৃতির পরিবর্তন হয়। বাংলা গল্পের বিবর্তনধারায় বর্তমান সময় অবধি অনেক চিরায়ত গল্পের জন্ম হয়ে থাকবে। এসব বাংলা গল্প পড়ার ক্ষেত্রে আমি শুধু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সীমানা দিয়ে তা ভাগ করতে চাইনা। রবীন্দ্রনাথ ও তার সমসাময়িক যুগ থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে যত চিরায়ত গল্প এসেছে তার গুটিকয়েক পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। এ বছরের পাঠ তালিকায়ও বেশ ক’টি সেরকম গল্প রয়েছে। সে ক্ষুদ্র পাঠ অভিজ্ঞতা দিয়ে এ সময়ের পড়া গল্পগুলোর তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণ খুব কঠিন্ তবে একেবারে অসম্ভব নয়। যদি ধরি মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ‘প্রাগৈতিহাসিক’ গল্পটি চিরায়ত গল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম-তবে বলা যায়- হ্যাঁ, একালের গল্পগুলোর অনেকগুলোই সমতুল্য তো বটেই বরং কোন কোনটি অবশ্যই তা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে।
গল্পের বয়ান কৌশলে যেমন ভিন্নতা এসেছে তেমনি বহুমাত্রিকতা, বিশ্ব সাহিত্যের বিভিন্ন রীতি ও তত্ত্বের প্রয়োগ প্রভৃতিতে এখনকার অনেক বাংলা গল্প চিরায়ত গল্পগুলোকে ছাড়িয়ে যায়। শহীদুল জহিরের কথাই যদি বলি, তাঁর বেশির ভাগ গল্প সৃষ্টিই পাঠককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। কী বিষয়ে, কী ভাবানুষঙ্গে বা বর্ণনায়, বয়ান কৌশলে তিনি নতুন মাত্রা যুক্ত করতে পেরেছেন। যদিও কেউ কেউ বলে থাকবেন শহীদুল জহির এর ভাষা একই রকম ভাবে একই মন্থরতায় প্রবাহিত। অথচ তিনি গল্প প্রবাহ দিয়েই পাঠককে প্রতিনিয়ত নতুন কোন বিষয়ের সাথে যোগাযোগ করিয়েছেন। প্রবন্ধের মত ভাষা হলেও তার রসাস্বাদনে পাঠকের তেমন কোন কষ্ট তো হয়ই না বরং তা আরও ব্যঙময় হয়ে ওঠে। তার বেশীরভাগ গল্পই তাই চিরায়ত ধারার না হয়েও একটি নতুন ধারার গল্পরীতি তৈরি করেছে। এতো গেল শহীদুল জহিরের কথা। এ সময়ের অনেক কমিটেড গল্পকারের গল্প পড়ছি, তাদের অনেকেই নীরিক্ষাধর্মী অনেক গল্প লিখছেন। এমদাদ রহমানের ‘নিভৃতবাস’ গল্পটিকে যদি বাংলা যে কোন চিরায়ত গল্পের সাথে মেলাই তবে তা নিশ্চিত পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। গল্পটি নিয়ে আমার পর্যবেক্ষণ তো একটু আগেই বলেছি।
আমি আশাবাদী, বাংলা গল্পের বিবর্তনের ধারায় আরও চিরায়ত বাংলা গল্প যেমন সৃষ্টি হবে তেমনি ভিন্ন ধারার ও নতুন নতুন গল্পরীতির অবির্ভাব ঘটবে। এতে করে লাভ যেটা হবে- বাংলা গল্প একদিন বিশ্বসাহিত্যের নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাবে।
গল্পের বয়ান কৌশলে যেমন ভিন্নতা এসেছে তেমনি বহুমাত্রিকতা, বিশ্ব সাহিত্যের বিভিন্ন রীতি ও তত্ত্বের প্রয়োগ প্রভৃতিতে এখনকার অনেক বাংলা গল্প চিরায়ত গল্পগুলোকে ছাড়িয়ে যায়। শহীদুল জহিরের কথাই যদি বলি, তাঁর বেশির ভাগ গল্প সৃষ্টিই পাঠককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। কী বিষয়ে, কী ভাবানুষঙ্গে বা বর্ণনায়, বয়ান কৌশলে তিনি নতুন মাত্রা যুক্ত করতে পেরেছেন। যদিও কেউ কেউ বলে থাকবেন শহীদুল জহির এর ভাষা একই রকম ভাবে একই মন্থরতায় প্রবাহিত। অথচ তিনি গল্প প্রবাহ দিয়েই পাঠককে প্রতিনিয়ত নতুন কোন বিষয়ের সাথে যোগাযোগ করিয়েছেন। প্রবন্ধের মত ভাষা হলেও তার রসাস্বাদনে পাঠকের তেমন কোন কষ্ট তো হয়ই না বরং তা আরও ব্যঙময় হয়ে ওঠে। তার বেশীরভাগ গল্পই তাই চিরায়ত ধারার না হয়েও একটি নতুন ধারার গল্পরীতি তৈরি করেছে। এতো গেল শহীদুল জহিরের কথা। এ সময়ের অনেক কমিটেড গল্পকারের গল্প পড়ছি, তাদের অনেকেই নীরিক্ষাধর্মী অনেক গল্প লিখছেন। এমদাদ রহমানের ‘নিভৃতবাস’ গল্পটিকে যদি বাংলা যে কোন চিরায়ত গল্পের সাথে মেলাই তবে তা নিশ্চিত পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। গল্পটি নিয়ে আমার পর্যবেক্ষণ তো একটু আগেই বলেছি।
আমি আশাবাদী, বাংলা গল্পের বিবর্তনের ধারায় আরও চিরায়ত বাংলা গল্প যেমন সৃষ্টি হবে তেমনি ভিন্ন ধারার ও নতুন নতুন গল্পরীতির অবির্ভাব ঘটবে। এতে করে লাভ যেটা হবে- বাংলা গল্প একদিন বিশ্বসাহিত্যের নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাবে।
গল্পপাঠ : ৭
বিদেশি গল্পের সঙ্গে এ গল্পগুলোর মানকে কিভাবে তুলনা করবেন?
মাহমুদ হাসান পারভেজ : ৭
বাংলা গল্প যেমন বিবর্তনের ধারায় এগিয়ে চলছে তেমনি বিশ্ব সাহিত্যও ক্রমাগত এগিয়ে চলছে। তবে তুলনামূলক মান বিচার করার মত ‘সমালোচনা সাহিত্য’ এখনও বাংলা সাহিত্যে নেই। ফলে অনেক ভাল এবং বিশ্বমানের বাংলা গল্প থাকা সত্বেও আমাদের গল্প বিশ্বসাহিত্যে স্থান করে নিতে পারছে না বলে আমার মনে হয়। আর আমার পড়া গল্পগুলোর মধ্যেও অনেক গল্পই বিশ্বমানের নিঃসন্দেহে।
0 মন্তব্যসমূহ