জান্নাতুল ফেরদৌস নৌজুলা : ২০১৫ সালে পড়া গল্প

গল্পপাঠ : ১
২০১৫ সালে কত সংখ্যক গল্প পড়েছেন?

জান্নাতুল ফেরদৌস নৌজুলা : ১
সকাল-দুপুর- বিকাল-রাত এ, অবসর এলেই এবং হাতের কাছে পেলেই ‘গল্প’ পড়া হয়। ছোট গল্প-বড় গল্প-অনুগল্প কিংবা ভালো গল্প-মন্দ গল্প কোন কিছুতেই আমার সমস্যা নেই; গল্পের ক্ষেত্রে আমি সর্বভূক বলা যায়। যেহেতু যা সামনে পাই তাই-ই পড়ি, তাই সংখ্যাটি নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবু আন্দাজ করে বললে, নতুন-পুরনো মিলিয়ে শ’চারেক গল্প সম্ভবত পড়েছি।


গল্পপাঠ : ২
কোন কোন মাধ্যম থেকে গল্পগুলো পড়েছেন? 

জান্নাতুল ফেরদৌস নৌজুলা : ২
‘পুরনো’ এবং ‘আগে পড়া’ গল্পগুলো যা পড়েছি, তার বেশির ভাগই প্রিন্ট মিডিয়ায় অর্থাৎ বই থেকে। আর নতুন গল্পের ক্ষেত্রে প্রিন্ট মিডিয়ায় সামান্য কিছু পড়লেও, অধিকাংশই পড়েছি অনলাইনে। ‘গল্পপাঠ’, ‘ঐহিক’, ‘ঋতবাক’, ‘কালিমাটি অনলাইন’ সহ আরও কিছু অনলাইন ভিত্তিক সাহিত্য পত্রিকাই মূলত আমার নতুন গল্প’র উৎস। এ ছাড়া, প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও নতুন এবং প্রসিদ্ধ লেখকরা তাঁদের গল্প প্রকাশ করে থাকেন। সেগুলোও ছিল এ বছরের নিয়মিত পাঠ্য।


গল্পপাঠ : ৩
 কোন কোন গল্পকারের গল্প পড়েছেন?

জান্নাতুল ফেরদৌস নৌজুলা : ৩
খুব প্রিয় কিছু গল্প আছে, যেগুলো ঘুরেফিরে বারবার পড়া হয়। এ ক্ষেত্রে, রবি ঠাকুরের কথা বাদ দিয়ে বলাই ভালো! কেননা, গল্পগুচ্ছ’র গল্পগুলোর প্রতি তৃষ্ণা প্রায় সব পাঠকই অনুভব করেন, নিয়মিত এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে! সুতরাং অন্য প্রিয় গল্পকারদের প্রসঙ্গে আসা যায়। আমার বারবার বা প্রায়ই পড়া পুরনো গল্পগুলো’র গল্পকাররা হচ্ছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈয়দ মুজতবা আলী, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাপদ রায় প্রমুখ। উনাদের গল্প ছাড়াও আরও পড়েছি – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হাসান আজিজুল হক, দিব্যেন্দু পালিত, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, ডক্টর মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সাদা’ত হোসেন মান্টো, অমর মিত্র, সেলিনা হোসেন, হুমায়ুন আহমেদ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সহ আরও অনেকের । আর এ বছর যেই লেখকের পুরনো গল্পের সাথে প্রচুর নতুন গল্পও পড়েছি, তিনি গল্পকার মঈনুল আহসান সাবের। এ বছরটি পাঠক হিসেবে আমার জন্য দারুণ উল্লেখযোগ্য, বিশেষ একটি কারণে। তা হলো- এ বছরে আমি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চমৎকার লেখককে পেয়েছি, যাদের গল্প এ বছরই প্রথম পড়েছি। তাঁরা হলেন কুলদা রায়, শামিম আহমেদ, দীপেন ভট্টাচার্য, মোজাফফর আহমেদ, স্বকৃত নোমান, হরিশঙ্কর জলদাস, মুজিব ইরম, নাহার মনিকা, স্বপ্নময় চক্রবর্তী, অপরাহ্ণ সুসমিতো, শিপা সুলতানা, এমদাদ রহমান, শাহানাজ মুন্নী, আফসানা বেগম, সাদিক হোসেন, ফারুক মঈনউদ্দীন, মূর্তালা রামাত প্রমুখ। আর অনুবাদ সাহিত্যের মাধ্যমে পড়া বিদেশী গল্পকাররা হলেন আরনেস্ট হেমিংওয়ে, এডগার এলান পো, কেট চপিন, হারুকি মুরাকামি, কাফকা, মার্কেজ, জেরোম ওয়াইডম্যান সহ আরও কয়েকজন।


গল্পপাঠ : ৪
এর মধ্যে ভালো লাগার গল্পগুলোর কয়েকটি নাম করুন। গল্পগুলো ভালো হয়ে উঠেছে কি কি কারণে সেগুলো উল্লেখ করুন।

জান্নাতুল ফেরদৌস নৌজুলা : ৪
ভালো লাগা গল্পের কথা ভাবতে বসলে, একটি, দুটি বা তিনটি নয়; একেবারে দল বেঁধে নেমে আসে গল্পের বড়সড় একটি ঝাঁকা। যে গল্পগুলো আলোময় দিনে তো বটেই, মন-স্যাঁতসেঁতে দিনেও মন-উঠোনে উঁকি দেয়! যে গল্পগুলো পড়ার পরই হারায় না, বরং ভীষণভাবে ভাবায়! থেকে থেকেই যে ভালো লাগার গল্পগুলো পাঠককে ডাক পাঠায়, গল্পকারের গল্পটিতে নতুন করে ঢু দেবার! আমার ভালোলাগার গল্প-ঝাঁকা সেটাই!

প্রথমেই আসি পুরনো প্রিয় গল্পের প্রসঙ্গে। সৈয়দ মুজতবা আলীর “গল্প সমগ্র”র সব কটা গল্পই অতি চমৎকার। রসিকতাবোধকে জীবনের প্রতিটি পরতে তিনি এমনভাবে মিশিয়েছেন যে, গল্পগুলো (নোনাজল, বেঁচে থাকো সর্দিকাশি, মনি, টুনি মেম ইত্যাদি) কি সাধারণ ঘটনার, কি তীব্র কষ্টের, কি সহজ আনন্দের ~ সবখানেই পাঠক খুব সহজাত ভাবেই সংশ্লিষ্ট বোধ করেন। জীবনের জটিল সব বোধও মুজতবা আলীর পাঠকের কাছে ধরা দেয় সহজ রূপে। কথাশিল্পী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর “শ্রেষ্ঠ গল্প”র প্রায় প্রত্যেকটি গল্পই (টিচার, প্রাগৈতিহাসিক, কুষ্ঠ-রোগীর বৌ, ছোট বকুলপুরের যাত্রী, নেকী, সিঁড়ি, স্বামী-স্ত্রী ইত্যাদি) তৎকালীন সে সমাজ বা জীবন ঘনিশ্ট। কিন্তু তাতে কী? লেখনী যখন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হয়, কল্পনা-ক্ষমতা যখন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়; তখন গল্পকারের প্রেক্ষাপটটি অতীতের হলেও, বর্তমানের সাথে মিলে যায়। সৈয়দ মুজতবা আলী আর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (যদিও এ দুই লেখকের লেখার ধরণ এক নয়; তবু সার্বজনীনতার ক্ষেত্রে তো তাঁরা এক!) তাই পুরনো সে সময়কে তুড়ি মেরে, নতুন এ সময়েও পাঠকের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়ে যান! এমন বিমোহিত গল্প-পাঠের তালিকায় রয়েছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর অনেকগুলি গল্পও। ‘ভণ্ডুলমামার বাড়ি’ সে তালিকায় অন্যতম। এই গল্পটি আমাকে ভীষণ ভাবে নাড়া দিয়ে গেছে। যখনই এ গল্পটি পড়েছি, তখনই গল্পটি আমার একান্ত নিজের মনে হয়েছে। অতীতের ফেলে আসা কোন এক বিন্দুতে ফেরার আকুতি যে সবার মাঝেই থাকে! পুরনো স্মৃতির কাছে ফেরার চিরন্তন এক আকুতি, এ গল্পটিকে অভিনবভাবে বিশেষায়িত করেছে।

অতি সম্প্রতি পড়েছি গল্পকার হাসান আজিজুল হক এর ‘সারা দুপুর’। এ গল্পটি ভালো লেগেছে দুটি কারণে। ভেঙ্গে যাওয়া কোনো সংসারে বাচ্চা একটি ছেলের জটিল মনস্তত্ত্বকে লেখক এখানে এমন স্পষ্ট করে দেখিয়েছেন, যে গল্পটিকে গল্প মনে হয় না। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানসিক দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হলেও, পরিস্থিতি অনুযায়ী বাচ্চাদের মানসিক দিক-পরিবর্তন নিয়ে এমন আন্তরিক লেখা খুব একটা দেখা যায় না। গল্পটি তাই বিষয় বিশ্লেষণে অভিনব। কথাসাহিত্যিক অমর মিত্রের ‘হারানো নদীর স্রোত’ পড়েছিলাম, বছরের শুরুর দিকে। উনার আরও কিছু গল্প পড়েছি আগে। সেগুলোও ভালো লেগেছে। কিন্তু এই ‘হারানো নদীর স্রোত’ বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন ভাবে মনে পড়েছে। মনে পড়েছে সারা বছর জুড়ে। আর যতবার মনে হয়েছে, ততবারই বুকটা টনটন করে উঠেছে। দেশভাগকে কেন্দ্র করে একটি-দুটি শুধু নয়, কত শত জীবন যে ভাগ হয়েছে! কত হাজার মন যে রক্তাক্ত বিভাজিত হয়েছে – কে তার খবর রাখে! লেখক অমর মিত্র, দারুণ ভাবে তাঁর পাঠকের মনে সে কথা গেঁথে দিয়েছেন। ডক্টর মুহম্মদ জাফর ইকবাল মূলত ছোট বাচ্চাদের জন্যই লেখেন, তবু এর মাঝেও পরিণত পাঠকদের জন্য কিছু গল্প লিখেছেন। তাঁর ‘ছেলেমানুষী’, ‘অপরাধ বিষয়ক কল্পনা’, ‘একজন দুর্বল মানুষ’ ইত্যাদি তীব্র ভাবে ভাবিয়েছে।

আধুনিক গদ্যশিল্পী মঈনুল আহসান সাবের এর পুরনো গল্পগুলোর ভেতর ‘রেলস্টেশনে শোনা গল্প’ এবং ‘এটা আমার একার গল্প’ বই দুটির বেশির ভাগ গল্পই ভালো লাগে। এ গল্পগুলো বারবার পড়া যায়। সহজ ভাষায় আকর্ষণীয় গদ্য হচ্ছে উনার গল্পের সাধারণ উপাদান। গল্পগুলোর বিশেষত্ব গল্পের বিষয়বস্তুর ভিন্নতায় না যতখানি, তার অধিক এগুলোর চমৎকার উপস্থাপনায়। প্রায় প্রতিটি গল্পেই, লেখক মানুষের জটিল এবং সহজ মনস্তত্ত্ব নিয়ে খেলেছেন। এবং এমন স্পষ্টভাবে তা দেখিয়েছেন যে, গল্পের পাঠ শেষে পাঠক অবাক হয়ে যান, তার নিজের মনটিকেও এক ধাক্কায় দেখে ফেলে! গল্পগুলো কেমন যেন আয়নার মতো, যেখানে সব দেখা যায়; দেখা যায় নিজেকে, দেখা যায় সমাজ তথা দেশকে। এবারের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত, তাঁর “একটি চিঠি ও কয়েকটি মেয়ে” গল্পগ্রন্থটিও ভাল লেগেছে। বইটিতে ‘বৃষ্টির ছাট’ বলে একটি গল্প আছে, যা ভীষণভাবে মনকে ছুঁয়ে গেছে। গল্পের মূল চরিত্র মৃন্ময়ী অফিসের এক প্রয়োজনে, কল্পনায় একটি চরিত্র তৈরি করে। সেটা নিয়েই গল্প। মনের ভেতরে খুব গোপনে বাস করা কোনো একটি প্রিয় চরিত্রকে যে কি পরম আদরে মানুষ রাখে, তা লেখকের লেখনীতে দেখতে দেখতে পাঠক নিজেও নিজেকে হারিয়ে ফেলেন! অবশ্য নিরাসক্ত লেখক মঈনুল আহসান সাবের কঠিন ভাবেই তাঁর পাঠককে যথাসময়ে কঠোর এ বাস্তবে নামিয়ে আনতে জানেন। আর তাঁর সুপরিচিত মুক্তিযুদ্ধের গল্প ‘কবেজ লেঠেল’ নিয়ে নতুন করে কিছু না বললেও চলে!

এ বছরেই প্রথমবারের মতো পরিচিত হয়েছি শক্তিমান লেখক কুলদা রায় এর গল্পের সাথে। তাঁর “বৃষ্টি চিহ্নিত জল” গল্পগ্রন্থের সবগুলো গল্পই অসাধারণ। তবু এর মাঝে কয়েকটি গল্প রয়েছে, যেগুলো পড়েছি একবার নয়; একাধিকবার। যেমন প্রথমেই বলি, ‘শবনম অথবা হিমিকালিপি’র কথা। এই গল্পটি এক অদ্ভুত জাদু বাস্তবতার গল্প। পুরো গল্পটিই দারুণ এক ঘোর সৃষ্টি করে পাঠকের মনে। বাস্তব সত্যটি খুঁজতে থাকেন উৎসাহী পাঠক। কিন্তু শেষে বাস্তব-পরাবাস্তব সব মিলে মিশে গিয়ে পাঠক ভাবতে থাকেন, কি আছে জীবনে? সবই সত্য ~ হয় এখানে, নয়তো ওখানে! এ গল্পে চমৎকার এক মিষ্টি সুর আছে যা পাঠককে আচ্ছন্ন করে রাখে সারা গল্প জুড়ে। সত্য ঘটনাকে আশ্রয় করে একটি গল্প ‘জ্যোতিদিদির বিড়াল’ আছে এই গ্রন্থে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে লিখিত এই গল্পটি পাঠক-মন কে তোলপাড় করে দিতে পারে যে কোন অবস্থায়। ‘সুবোল সখার বিয়ে-বৃত্তান্ত’, ‘বৃষ্টি চিহ্নিত জল’, ‘মেঘনাদ বধ’ সহ আরও অনেক গল্পই এখানে আছে যা পড়তে ইচ্ছা করে বারবার। এই গল্পগ্রন্থের বাইরে লেখক কুলদা রায় এর আরেকটি গল্প আছে, যা পড়েছি বহুবার! গল্পটির নাম ‘কাঠ পাতার ঘর’। এই গল্প পড়তে গিয়ে সব সময়ই একটা মিষ্টি বাবুই পাখির কথা মনে হয়েছে। জানি না কেন! লেখক এবং তাঁর পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের টুক টুক করে বুনে চলা এক সবজির বাগান – গল্পের দৃশ্যকল্পে নিখুঁত হাজির হয় বলেই হয়ত। বাবা আর ঠাকুরদা’র কাঠ-পাতা মিলিয়ে ঘর তৈরির দৃশ্যও এমন মনে হবার কারণ সম্ভবত। ধীরে ধীরে সামান্য একটু সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাওয়া একটা সংসার ৭১ এ কিভাবে নিরুদ্দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে, ভিটামাটি সব ছেড়ে ~ তা এই লেখক সামান্য পরিসরে অসামান্য দেখিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধকে অতি অল্প কথায় তীব্র ভাবে এঁকেছেন! শুধু আমার নয়; অন্য পাঠকমনেও চিরস্থায়ী হবে এ গল্পটি! এ বছরে পড়া অন্য ভালো লাগা গল্পগুলোর মাঝে – স্বপ্নময় চক্রবর্তীর ‘রাধাকৃষ্ণ’, শামিম আহমেদ এর ‘বারজাখ’, মোজাফফর হোসেন এর ‘লাশটি জীবিত বাকিরা মৃত’, শাহানাজ মুন্নী’র ‘কিছু গল্প দরকার’, মুজিব ইরম এর ‘বাওফোটা’, দীপেন ভট্টাচার্যের ‘নিস্তার মোল্লার মহাভারত’ –গল্পগুলোও ভালো লেগেছে। এগুলোর কোনোটিকে চমৎকার লেগেছে বিষয়বস্তুর নতুনত্বে, কোনোটির কাব্যিক উপস্থাপনার জন্য, আবার কোনোটি- বা সহজভাবে কঠিন সত্য বলার জন্য।

বিদেশী গল্পের মাঝে দারুণ অন্যরকম লেগেছে আরনেস্ট হেমিংওয়ের ‘ক্যাট ইন দ্য রেইন’। একটা বেড়ালকে উপলক্ষ্য করে, স্বামী-স্ত্রীর মনোজগতের দারুণ প্রকাশ মনে হয়েছিল গল্পটিকে। সামান্য কিছু উপকরণে একটা সম্পর্কের পর্যায়গুলো দেখানো, আমার মতে কঠিন। এই গল্পটিতে সম্পাদিত হয়েছে সেই কঠিন কর্মটিই। রওশন জামিল এর অনুবাদে হারুকি মুরাকামির ‘শেহেরজাদ’ গল্পটির কথাও মনে পড়ছে এই মুহূর্তে। গল্পটি মুরাকামির অন্য গল্পগুলোর মতোই খুব সদামাটা একটা ভাব নিয়ে এগুচ্ছিল। তারপর শেষে অবাক করা পরিসমাপ্তি।

অনুগল্প আজকাল প্রচুর পড়া হয়, অনলাইনে সহজলভ্য তাই। চমৎকারও লাগে অনেক গুলোই। এখন অবশ্য ভালো লাগা গল্পগুলোর মাঝে মনে পড়ছে~ কুলদা রায় এর অনুগল্প ‘আলো ও হাওয়ার গল্প’ এবং অপরাহ্ণ সুসমিতো’র “সংসার মায়া’র পাখিকূলে”র কথা। অনুগল্পের ফরম্যাট মাপা, হৃদয়-ছোঁয়া গল্প হলেই অনুগল্প মনে ধরে যায়।


গল্পপাঠ : ৫
সেরা গল্পটি নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ বলুন।

জান্নাতুল ফেরদৌস নৌজুলা : ৫
‘সেরা গল্প’ একটিতে আনতে পারা সম্ভবত বেশ কঠিন। এই মুহূর্তে মনে পড়া ‘সেরা গল্পগুলো’ নিয়ে তো আগেই বলেছি।


গল্পপাঠ : ৬
আপনি কি মনে করেন – এই গল্পগুলো বাংলাদেশের চিরায়ত গল্পগুলোর সমতুল্য বা তাদেরকে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে? 

জান্নাতুল ফেরদৌস নৌজুলা : ৬
এই প্রশ্নটি প্রায়ই মনে আসে। উত্তরটি হয়ত আপেক্ষিক। কেননা ‘কাল’ই বলে দেয়, গল্পটি কালোত্তীর্ণ হয়েছে কিনা! তবু, অনুমান তো করা যায়! সে অনুমানের ভিত্তিতে ভালো লাগা কিছু গল্পকে, গল্পের বিভিন্ন গুণ বিচারে, চিরায়ত গল্পের সমতুল্যই মনে হয়।


গল্পপাঠ : ৭
 বিদেশী গল্পের সঙ্গে এ গল্পগুলোর মানকে কিভাবে তুলনা করবেন? 

জান্নাতুল ফেরদৌস নৌজুলা : ৭
প্রায়ই অনেককে বলতে শুনি, আধুনিক ভালো বিদেশী গল্পের সাথে মানদণ্ডের বিচারে দেশী গল্পগুলো আসতেই পারছে না। আমার অতি স্বল্প জ্ঞান-বুদ্ধিতে, অবশ্য তেমনটা মনে হয় না! বিদেশী গল্পের তুলনায়, আমাদের গল্পের পরিবেশ-পরিপ্রেক্ষিত আলাদা। আমরা যদি অপরিচিত প্রেক্ষিতও নিজের মতো করে (বিদেশী ভালো গল্পগুলোয়) কল্পনার চোখে দেখতে পারি, তবে আমাদের ভালো গল্পগুলোর সার্বজনীনতাও বিদেশী পাঠককে ছুঁয়ে যাবে। যুদ্ধ, দেশভাগ, এমন কি আটপৌরে শহুরে মধ্যবিত্ত জীবনকে কেন্দ্র করেও, অনেক গল্প আমাদের আছে; যা দেশ-কাল-পাত্র ’র সীমানা ছাড়িয়ে আপামর পাঠককে ছুঁয়ে যেতে পারে। তবে পাঠক হিসেবে এটা বলব~ যে পরিমাণ গল্প এখন লেখা হচ্ছে, ঠিক সেই অনুপাতে ভালো গল্প আমরা পাচ্ছি না। আবার এটাও তো ঠিক, এভাবে প্রচুর লিখতে লিখতেই বাংলা সাহিত্য একদিন পেয়ে যাবে অসাধারণ সব গল্পকার!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ