বোধিসত্ত্ব ভট্টাচার্যের গল্প : এক রাস্তা দুই মুখ

রাস্তা
রাস্তাটা ফাঁকা পড়ে ছিল। একেবারে ফাঁকাও ঠিক বলা চলে না। বড় বড় গর্ত, পানের পিক, গর্তের পাশ দিয়ে টায়ারের দাগ, কুকুরের গু মানুষের বমি পাখির পালক- এসবও আটকে ছিল রাস্তাটার গা জুড়ে। জামা, প্যান্ট, মাঙ্কি ক্যাপের মতো। একটি হাওয়াও বয়ে যায় মাঝেমাঝে এই রাস্তার উপর দিয়ে। শনশন শনশন। দোল খেতে খেতে সোজা ধাক্কা খায় অনেক দূরের কোনও ব্রিজের গায়ে। এই সবকিছু সঙ্গে নিয়েও রাস্তাটি দিনের শেষে একা। হেরে যাওয়া উদ্বাস্তু। তার কেউ নেই। কিছু নেই। কোনও এক বড় রাস্তার কনুইয়ের কাছ থেকে হঠাৎ বেরিয়ে এসেছে। এই ধরনের রাস্তা যে ভাবে বেরিয়ে পড়ে আর কী! তারপর কোথাও একটা মিলিয়ে যায়। রাস্তাটার দু’পাশে একটা জরুরী সুস্থতার ব্যাপার আছে। কোনও দোকানপাট নেই। অন্তত চোখে পড়ে না। যা আছে তা একটা গুমটি। দোতলা গুমটি। গুমটি একটাই। মাঝখানে কাঠের একটা পাটাতন দিয়ে ওটার দুটো তলা করে দেওয়া হয়েছে। ফাস ফোলোর সেকেন ফোলোর। দোকানটার কিছু বিশেষত্ব আছে।



১) এই দোকান সপ্তাহে মাত্র একদিন খোলে।

২) দোকানের দুটো তলাই কখনও একসঙ্গে খোলা হয় না। অর্থাৎ, যে হপ্তায় ওপরের তলাটা খোলে তার ঠিক এক হপ্তা বাদে নিচের তলাটা খোলে। মাসে দু’দিন ওপর তলা। দু’দিন নিচের তলা।

৩) ওপরের তলায় গাঁজা আর নিচের তলায় চোলাই বিক্রি হয়।

৪) দোকানটা যে দিন খোলে সে দিন টানা চব্বিশ ঘন্টা খোলা থাকে। ঠিক চব্বিশ ঘন্টা না। তেইশ ঘন্টা আটান্ন মিনিট ( সেকেন্ডের হেরফের থাকতে পারে)। রাত বারোটা এক থেকে এগারোটা উনষাট পর্যন্ত। কখনও কখনও বেশি ঘুম পেয়ে গেলে দুপুর বারোটা এক-এ খোলা হয়। থাকে ওই রাত এগারোটা উনষাট পর্যন্তই। অর্থাৎ, এগারো ঘন্টা আটান্ন মিনিট। রাত এগারোটা উনষাটের পর কিছুতেই আর খোলা থাকবে না দোকান। এই হল নিয়ম। এরকম অদ্ভুত নিয়মে দোকান চালানোর জন্য প্রায়ই খদ্দেরদের আচমকা প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়ে যেতে হয় গুমটিটাকে। চোলাই খাওয়া মানুষগুলো মাঝেমাঝে রাতের দিকে এসে বন্ধ গুমটির নিচের তলার কাঠের দরজায় জোরে জোরে লাথি ঘুসি মারে। গাঁজাখোররা যেহেতু একটু সন্ত গোছের হয়, তাই তাদের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রাগের থেকে অভিমানই বেশি থাকে। তারা গুমটির ওপর তলার বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কোনও হিংসাত্মক কার্যকলাপের দিকে যায় না। তার বদলে অত্যন্ত শান্তভাবে চক দিয়ে ওপরের তলার কাঠের দরজায় বড় বড় করে কয়েকটি বাছাই চার অক্ষর পাঁচ অক্ষর লিখে রাখে। কেউ কেউ দুই বা তিন অক্ষরও লেখে। একজন গাঁজাখোর শিল্পী মাঝেমাঝে এসে দোকানির ছবি একে দেয়। সে সব ছবিতে তার গায়ে কোনও পোশাক থাকে না। সব ছবিতেই দোকানির পুরুষাঙ্গের পজিশন হয় অদ্ভুত। কখনও দেখা যায় দোকানির দু’চোখের মাঝখানের জায়গাটা থেকে নাকের বদলে নেমে এসেছে পুরুষাঙ্গ। কখনও বা, কোমরের নিচ থেকে কোনও পা নেই, তার বদলে গোটা শরীরটাকে দুটো দৃঢ় পুরুষাঙ্গ ধরে রেখেছে সমানভাবে। খদ্দেররা গাঁজা এবং চোলাইয়ের মতো দুটো দুষ্টু শব্দ জনসমক্ষে উচ্চারণ করতে লজ্জা পাওয়ায় নাম রাখা হয়েছে- স্যাম্পেল। অল্প চর্বিওয়ালা থকথকে এই শব্দ জিভের তলায় খেলিয়ে খেলিয়ে হঠাৎ ছুড়ে দিলেই হল। বলতে আরাম। শুনলেও মনে হয় কেমিস্ট্রি ল্যাবের কাজের জন্য জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যেতে এসেছে পড়ুয়া ছোকরা। এই ‘স্যাম্পেল’ থেকেই দোকানের নাম হয়ে গেল- স্যাম্পেল স্টোর্স। আর, দোকানি, স্যাম্পেল দাস। ওঁ নিরাময় দাসের এই ছেলে বর্ডার পেরিয়ে শহরে এসেছে বছর পনেরো আগে। পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চির চেহারাটা সব সময় হাফপ্যান্ট পরে থাকে। মাঝের দুটো দাঁত নেই। কী করে হল, জানতে চাইলে বলে, বিএসএফ মেরেছে- এই কথাগুলো গাঁজাখোররা বলে। নিজেদের মতো বানিয়ে বানিয়ে। তাই ‘বিএসএফ’-টা কখনও কখনও হয়ে যায় কোনও ধর্মীয় সংগঠন। কখনও স্রেফ পাড়ার মস্তান ন্যাটা’দা। দোকানির মুখ কখনও দেখেনি কেউ। গুমটির একটা গর্ত থেকে যে হাত বাড়িয়ে মাল দেয়, সেটাই দেখেছে শুধু। রোগা হাত। ফর্সামতো।

এই সমস্ত আগডুম-বাগডুম নিয়েই টিকে আছে গুমটি। টিকে আছে রাস্তাটা।


মানুষ

এই স্যাম্পেল স্টোর্সের গায়ে হেলান দিয়ে বসে ছিল দুজন মানুষ। ধরে নেওয়া যাক, এদের মধ্যে একজনের নাম বড়ু আর একজন চন্ডীদাস। কিছুটা হাঁফিয়ে ছিল দুজনেই। হা-ক্লান্ত খরখরে দুপুরের আলো ছিটকে পড়ছে তাদের শরীরে। চারপাশকে গিলে ফেলেছে নিস্তব্ধতা। তাকে ফাটিয়ে দিয়ে মাঝেমাঝে মাথা তুলে ফেলছে হেমন্তের বাতাস। হাওয়া হচ্ছে। চন্ডীদাসের চুল নেই বলে সেই হাওয়ায় ওর চুল উড়ছে না। বড়ুর মাথা ভর্তি চুল। কিন্তু টুপি পরে থাকার জন্য তার চুলও ওড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। ওরা বেরিয়ে এসেছে একটি গ্যালারিতে চলতে থাকা ছবির প্রদর্শনীর দুটো আলাদা ক্যানভাসের ভিতর থেকে। বড়ু ছিল হলুদ রঙের কফিশপের মধ্যে। একা। কোলে গিটার। হাতে দামী ঘড়ি। টেবিলে ছোট একটা ডায়েরি আর কাপুচিনো। দুটো হাত জড়ো করে নাকের ডগাটায় ধরা। ওটিতে নিকটাত্মীয় থাকলে মানুষের প্রিয় পোজ যে রকম।

ছবির নাম- ওয়েটিং। ‘ওয়েটিং’-এর ‘ং’-এর তলায় শিল্পীর নামের আদ্যাক্ষর। ‘ক’। ওই জায়গায় কন্দর্প, কমল হাসান, কাক- যা খুশি বসতে পারে। ছবিটার গায়ে একটা মাখনের মতো থকথকে নীল ভাব রয়েছে। ওখানে একটা আড়াই ইঞ্চি কাঠি ঢোকালে গিঁথে বসে যাবে। লোকজন দেখেছে। মাথাও নেড়েছে। ছবিটা বিক্রি হয়নি।

চন্ডীদাসের ছবিতে একটা টেবিল আর দুটো চেয়ার। একটা চেয়ারে বসে ও খাচ্ছে। ফ্যানভাত আর গোরুর মাংস। প্রোটিন আর প্রোটিন। ছবিতে ফ্যানাভাত’কে ‘ফ্যানাভাত’ বলেই চেনা যাচ্ছে, পান্তাভাত মনে হচ্ছে না। এই হিসাবটা ঠিকঠাক ধরা সহজ নয়। এটা থেকে শিল্পীর নিপূণতারই পরিচয় পাওয়া যায়। গোরুর মাংসকে ‘গোরুর মাংস’ হিসাবে বুঝতে অবশ্য কারওরই তেমন কষ্ট করতে হয়নি। চন্ডীদাস যে চেয়ারে বসে খাচ্ছে, তার পাশের চেয়ারের গায়ে লেগে থাকা রক্তই তা বুঝিয়ে দিয়েছে। রক্তটা ওর বাহু থেকেই বেরোচ্ছে। চন্ডীদাসের মাথা ন্যাড়া। কানে বিড়ি গোঁজা। আধপোড়া। গায়ে কোনও জামাকাপড় নেই। সে খাচ্ছে। আকাশ-বাতাস-খাল-বিল-পান্তাভাত-গোরুর মাংস-আমাকে-আপনাকে। খাচ্ছে। হাত-পা পুরুষাঙ্গ ল্যাতপ্যাত করে ঝুলছে তার। পিঠটা পুরো নতুন কেনা বাসন। মসৃণ। চকচকে। চাকচাক মাংস ঠেসে লাগানো। ছবির নাম- ভিশন। শিল্পী- বরিষ্ঠ নাগরিক। এই ছবিটাও কেউ কেনেনি।

এই দুই মানুষ অথবা ছবি, যারা এখনও বিক্রি হয়নি, তারা ক্যানভাস থেকে বেরিয়ে বসে আছে ফুটপাথে। প্রায় দু’ঘন্টা ধরে। এর মধ্যে একটা-দুটো সাইকেল চলে গিয়েছে শুধু। তাছাড়া কোনও মানুষের ব্যাপার নেই।

পিঠের দিকে গলাটা যেখানে শেষ হয়েছে, সেই জায়গাটায় বেশ কয়েকমাস ধরেই একটা ঘা হয়েছে বড়ুর। ধীরে ধীরে সেটা বেড়েই চলেছে। তাজা টসটসে ঘা। তার ভিতর ছোটছোট বিজগুড়ি। যত্নে লালিত মৌচাক। সময় করে পনেরো সেকেন্ড মতো চেয়ে থাকতে পারলেই লোভে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। ঘাড় পর্যন্ত বড় চুল ওটার উপর পড়ে একটা বিরক্তিকর শিরশিরানি তৈরি করে ফেলে। ওর প্রেমিকা ওই জায়গাটায় চেটে দিত। মধু খাবে। মধু। ভালো মধু।

দুপুরের টাটকা হলকাটা নেমে যাচ্ছে শরীরে পাক দিয়ে দিয়ে। চন্ডীদাস কথা বলল। এই হাওয়াটায় খিদে পেয়ে যায় খুব।

চন্ডীদাসের আধপোড়া বিড়িটায় একটা জোরে টান মারলেই ভস করে জ্বলে উঠে নিবে যাচ্ছে। বড়ু চেষ্টা করছিল। চন্ডীদাস ততক্ষণে ঝাড়া হাত-পা। শরীর টানটান করে বসে আছে। কথা বলছে। স্বগতোক্তি। গায়ে জামাকাপড় নেই। মাথায় চুল নেই। নাথিং। ন্যাড়া। ন্যাড়া বেলতলা। ন্যাড়া নাথিং।

বাপটা যে দিন মরল, সে দিন টাটকা মাছের ঝোল হয়েছিল বাড়িতে। ভোর ভোর জাল ফেলে দিলাম। এক একটা প্রায় চারশো গ্রাম মাগুর উঠল। কই উঠল। সরপুঁটিগুলো খলবল করছিল। টাটকা মাছ যেভাবেই রান্না হোক, খুব সুস্বাদু। চন্ডীদাস কথা বলে যাচ্ছে।

বাড়িতে পুকুর ছিল তোদের? বিড়িটা জ্বালানোর চেষ্টা থামিয়ে প্রশ্ন করল বড়ু।

হ্যাঁ। বড় পুকুর। আট বিঘা জমির উপর।

আমাদের ছিল না।

সেটা কে জানতে চেয়েছে! খেঁকিয়ে উঠল চন্ডীদাস। কথার মাঝখানে বাধা পড়লে মাথার ঠিক রাখতে পারে না সে একদম। যা বলছি শুনে যা।

প্রশ্ন করতে পারব না তাই বলে?

তোর বাপ’কে করিস!

বাপ তুলছো কেন? অভদ্র শালা! বলে যাও।

হ্যাঁ। শোন… কালোজিরে কাঁচালঙ্কা দিয়ে সব মাছের ঝোল হয়ে গেল। সঙ্গে আতপ চালের গরম ভাত। সে কী গন্ধ! দুজনে মিলে প্রায় এক কিলো মাছ খেয়ে ফেললাম। খেয়ে দেয়ে বাবা ড্রেস পরে কলেজ ইলেকশনে ডিউটি দিতে গেল। ড্রেস মতলব খাকি উর্দি। ইয়ে সালা খাকি উর্দি হ্যায়! বলছিল, কলেজ ইলেকশন হলেও ব্যাপারটা সিরিয়াস। বড় নেতাদের হাত-টাত আছে। ভিতু লোক ছিল টোটাল। আমি জানতাম। বললাম, ঘ্যানঘ্যান করো না। যা করতে যাচ্ছো করতে যাও। সে দিন প্রথমদিকে তত বোঝা যায়নি। নর্ম্যালই ছিল সবকিছু। দুপুরের দিকে বোম পড়ল। তারপর আমার থেকেও বছরখানেকের একটা ছেলে দৌড়ে এসে টুক করে গুলি চালিয়ে দিল বাবার বুকে। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক। টিভিতে দেখলাম বাবা লুটিয়ে পড়ল অমিতাভ বচ্চনের মতো। গুরু! বিল্লা নাম্বার সাতশো ছিয়াশি। রোগা-পাতলা কনস্টেবল। পুলিশের চাকরির থেকেও বেশি গর্ব ছিল নিজের হাতের লেখা নিয়ে। বাবার গর্ব করার মতো বিষয় বলতে ওই একটাই। বাঁ-চোখে মাইনাস ফোর আর ডানচোখে মাইনাস ফাইভ পয়েন্ট টু পাওয়ার নিয়ে ভেবলে থাকা চাপদাঁড়িওয়ালা সাহিত্যিক নাকি বড় পুরস্কারটা পেতেই পারত না, বাবা তার গাবদা উপন্যাসটা প্রেসে যাওয়ার আগে ফ্রেশ করে লিখে না দিলে। তখন তো সব হাতের লেখা। কম্পিউটার কই!

কোন সাহিত্যিক? কোন উপন্যাস? এই প্রশ্নে চন্ডীদাস বড়ুর দিকে গোটা গোটা করে তাকালো।

উপন্যাসের নাম মনে নেই। সাহিত্যিকেরটা আছে।

কী?

কায়েতের বেটা!

এটা আবার কারওর নাম নাকি?

মুখে আনি না।

আচ্ছা। বলে যাও।

হ্যাঁ। দেখ, আমি যেটা বললাম, সেটা আমার কথা নয়, বাবা নিজেই ওরকম ‘ভেবলে থাকা’ বলত। উপন্যাসটা যে দিন পুরস্কার পেল বাবা সে রাতে আমাদের বাড়িতে একটা ছোট্ট ডিনারের ব্যবস্থা করল নিজের দুই কলিগকে ডেকে। পুলিচ কাকু, পুলিচ কাকু। ডিনারে রুটি আর মুরগির মাংস ছিল। সঙ্গে হুইস্কি। যারা দুজন খেতে এসেছিল দুজনেই বক্তিয়ার। ওসির বউ কাত হয়ে শুলে পুরো তানপুরার মতো লাগে কিংবা থানার মেজবাবু রাত বাড়লেই লক-আপে ধরে রাখা কোন পকেটমারের তলপেটের তলায় হাত দিন- এই হল কথা বলার বিষয়। ওরাই বকে যাচ্ছিল। অনেক পরে বাবার হাতের লেখায় আসল ব্যাপারটা। বাবা কষা মাংস দিয়ে রুটি চিবোতে চিবোতে শোনালো ইস্কুল জীবনের গল্প। কীভাবে হাতের লেখা দিয়ে হেডমাস্টারের নজরে পড়ে গিয়েছিল, সেইসব। সে জিনিস আমি আগেও বহুবার শুনেছি। সহকর্মীরাও শুনেছে কিনা কে জানে! ওদের কথা তখন থেমে গেছে। মন দিয়ে খালি দেশী মুরগি চিবোচ্ছিল শালারা। সহমর্মী বলতে আমি একা। অবশ্য বাবার কথা কেউ শুনুক না শুনুক তা নিয়ে কোনও হেলদোল ছিল না তার। নিজের মতো বলে যেত…

এই তুমি যেমন বলছো? বড়ু এখন আর বসে নেই। চন্ডীদাসের কথা চলার সময় ও নিজের গিটারটা নিয়ে বাজানোর চেষ্টা করছিল। হচ্ছিল না ঠিকঠাক। ‘ক’ নামের যে শিল্পী ওকে এঁকেছে সে ঠিকঠাক পারেনি। স্ট্রিংগুলো বেঁকে গিয়েছে বিচ্ছিরিভাবে। সি-মেজর বা ডি-মাইনর ধরাই যাচ্ছে না। চন্ডীদাসের কথার অনেকটাই ও শোনেনি। শেষটা কানে এসেছে শুধু। তখনই বলে ফেলেছে ফস করে।

চন্ডীদাস কানে তুলল না। সে বলে যাচ্ছে তখন। তার কথার ভিতর কথা ঢুকে যাচ্ছে। কখনও ঢুকতে পারছে না পুরোপুরি। পিছলে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। শ্যামলাপানা লোকটার সম্পূর্ণ ন্যাংটো শরীরে মাঝেমাঝে মশা বসে অনেকটা করে রক্ত খেয়ে ফুলে ঢোল হয়ে যাচ্ছে, সে দিকে খেয়াল নেই। বাইরের পৃথিবীর শব্দ এই ফুটপাথে তেমনভাবে আসে না। যা কিছু ছিঁড়ে ছিঁড়ে আসছে তাও কথার চাপে গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে। দুপুরের আকাশের উপর মেঘের পটি পড়েছে। আলোর ঝাঁঝ কমে এল। তার কিছুটা চন্ডীদাসের কপালে লেগে আছে।

বাবার গালদুটো ছিল আমার পিঠের মতো। চকচক। চকচক। ফুশশশশশ… বেশি আনন্দে থাকলে বাবা আমার পিঠে নিজের গালটা ঘষে দিয়ে মুখ থেকে ওরকম আওয়াজ বের করত। এই সময়গুলোতে বাবাকে আমি ‘তুই’ বলে ফেলতাম। সুপুরির ঢ্যাঁড়ায় বসিয়ে উঠোন জুড়ে দুজনে দুজনকে ঘসটে ঘসটে নিয়ে যাওয়ার খেলাটা চলত তখন। কথা বলতে বলতে চন্ডীদাস লক্ষ্য করল ওর হাত পায়ের পাতাগুলো ফুলে ভারি হয়ে যাচ্ছে। ও বলল, এই দেখ! অনেকক্ষণ ধরে বসে থেকে কথা বলে গেলে আমার এরকম হয়। একটু নাচানাচি করলেই ঠিক হয়ে যাবে।

ওর কথার ভঙ্গীতে কী একটা ছিল। বড়ু হেসে ফেলল। দুর্বল শরীর। চ্যাপ্টা চোয়াল। ও জানে, ভালো দেখাল না। হাসিটা গিলে নিয়ে আবার নতুন একটা হাসি ভিতর থেকে তুলে এনে কায়দা করে ঠোঁটের ডগায় বসিয়ে দিল। এবারেও হল না। কত লোক হাসলে কী সুন্দর দেখায়! অথচ তার বেলায় যত গোলমাল। মুখ বুজে থাকলে এত সহজ এত নিষ্পাপ এত পবিত্র। হাসলেই অন্যরকম।

এরকম পাগলের মতো দমকে দমকে হাসি আনছিস কেন? চন্ডীদাস জিজ্ঞাসা করল।

কী করব! তোমার একটা কথা শুনে এসে গেল।

কী?

আমার বাবাও আমায় ওরকম ঢ্যাঁড়ার উপর বসিয়ে ঘোরাতো। তবে উঠোনে নয়। আমাদের উঠোন ছিল না। ছাদে।

আচ্ছা। চন্ডীদাসের গলাটা নরম শোনালো।

তোমার ফ্যামিলিতে আর কেউ নেই? তোমরা দুজনেই?

হুম। চন্ডীদাস গম্ভীর।

বিকেল একটা সময় মরে যায়। আর পাঁচজনের মতোই। এই মুহুর্তের সময়টা বিকেলের মৃত্যুর আগে আগের। এই সময়টায় আকাশের দু’ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে একদম চাপা কষ বেরিয়ে যায়। মেঘ ছিল, তাই গায়ের রঙ হয়ে গেল তেলাপিয়ার পেট। ঘাড়ের কাছটা দপ করে ওঠে। গলার ওখানটা কুটকুট ব্যথা করে। ডানহাতটা সামনে তুলে দিয়ে বিকেলের সামনের সময়টাকে ধরতে চায় প্রচন্ডভাবে। কিন্তু তা কোনও লক্ষ্যে পৌঁছয় না।

বড়ুর চোখের পাতা ভারি হয়ে আসছিল। মাথাটা ঘাড়ের কাছ থেকে ভেঙে গিয়ে বুকের সঙ্গে টোকা খেয়ে যাচ্ছিল মাঝেমাঝেই। চন্ডীদাসের থেকে বড়ু বছর আটেকের ছোটই হবে। ও বলল, ঘুমোস না রে। ঘুমোস না একদম। ঘুমোলে সর্বনাশ হবে।

কী জানি শালা কী ব্যাপার- বলতে বলতে বড়ু ঘুমের ভিতর ঢুকে যাচ্ছিল। চন্ডীদাস অল্প জোরে চড় মারল।

ধড়ফড় করে যেন জেগে উঠল ও। চ্যাপ্টা চোয়ালের উপর চকচক করছিল চোখদুটো। একটু মেঘের মতো এসে সেটাকে ঢেকে দিয়ে গেল। “আমারও কিছু বলার আছে”- এইটুকু বলেই বড়ু থামল দম নিতে।

বলবি তো। কী বলবি! বল। চন্ডীদাস ওর মুখোমুখি এসে বসল। বড়ুর কাছ থেকে বিড়িটা নিয়ে জ্বালিয়ে ফেলেছে ততক্ষণে। পা দুটো টানটান করে বসে এতক্ষণ কথা বলছিল একমনে। এখন আবার জড়োসড়ো। কথাগুলো বলার সময় ও নিজের নগ্নতাকেও ভুলে যেতে পেরেছিল।

তুই গিটার শেখাবি আমায়? অনেকদিনের শখ। বাবাকেও বলেছিলাম। পুরনো আমলের মানুষ ছিল, বুঝলি না! তাই হল না। চন্ডীদাস কথা বলতে বলতে বিড়িটা শেষ করে ছুড়ে দিল। সেটা স্যাম্পেল স্টোর্সের গায়ে ধাক্কা খেয়ে একটু দূরে গিয়ে পড়ে রইল।

শেখাবো। কিন্তু এখন তো আমার নিজের গিটারেরই স্ট্রিংগুলো ঠিক নেই।

ঠিক আছে। পরে সময় করে শেখাস’খন। চিন্তার কী আছে! আমরা তো আর কেউ বিক্রি হইনি।

বড়ু টুপি পরে চুপচাপ বসেছিল। দেখ, আমি এক যুদ্ধের শহরে বড় হয়েছিলাম।

কোথায়?

সেটা আপাতত না-জানাই থাক।

বেশ। বলে যা।

মানুষজন ঝটপট দরজা-জানলা বন্ধ করে দিচ্ছে, পিছন ফিরে দাঁড়াচ্ছে, ঢোল ক্যানেস্তারা বাজাচ্ছে, প্রাণপণে কানে হাত চাপা দিচ্ছে, চেঁচাচ্ছে, ভ্যাঙাচ্ছে- কিন্তু কোনও ফল নেই। দেওয়াল ভেঙে ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে যথাস্থানে পৌঁছে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। এক এক টানে খুলে নিচ্ছে মানুষের চামড়াশুদ্ধু জামাকাপড়। চ্যাঁ ভ্যাঁ করে চিৎকার করছে সবাই। সবাই। এ সব আমি চোখ বুজলেই দেখতে পাই। এ সব ঘটনা সত্যিই ঘটেছিল আমার জীবনে। আমি বাবা আর মা থাকতাম। আমার মা’কেও ওভাবে টেনে নিয়েছিল।

আচ্ছা।

আমি তারপর এই শহরে চলে আসি। বাবা এখনও ওই য়ুদ্ধের শহরেই। ভালো ছাত্র ছিলাম। সাহিত্যের প্রতি আসক্তি ছিল অসম্ভব। লেখালেখির প্রতিও। কবিতা লিখতাম। এই সব সারেগামা করতে করতেই একদিন প্রেম এসে গেল। কীভাবে হয়েছিল, সেটা ঠিক মনে পড়ে না। বা, বলা ভালো, মনে করতে ইচ্ছা করে না। তবে হয়েছিল। সেটাই সত্যি। এক একটা গর্ভবতী সকাল পেটে মধু নিয়ে বসে থাকতো। আমাদের দেখা হত। আমরা হেঁটে যেতাম। পেরিয়ে যেতাম অনেকগুলো ট্রামলাইন। শ্মশানে বসে থাকতাম। চুল্লির জায়গাটায় না। চিতার সামনে। অন্যজীবন ছাই হয়ে যেত। ও আমার থেকে বছর দশেকের বড়ো ছিল। ওর স্বামী কে কী কেন, জানতাম না আমি। জানার চেষ্টাও করিনি কোনওদিন। ওর ছেলে শাক্য ক্লাস থ্রি। চিতার সামনে অনেকক্ষন বসে থাকতে জানলে একটা হাওয়া টের পাওয়া যায়। চিতার হাওয়া। মাঝে মাঝে এসে ঠোঁট নাকের ডগা কপালের মাঝখানটা ঠান্ডা করে দিয়ে চলে যায়। আমরা চাদর ডাকা দিয়ে বসে থাকতাম। মে মাসের দুপুরেও। বাতাসকে চিরে দিয়ে বেরিয়ে আসা চিতার সেই আচমকা হাওয়াটাই ছিল ওইদিনগুলোয় আমাদের নিজস্ব প্রেম। আরেকটা জিনিসও ছিল আমাদের। ভাস্কর চক্রবর্তী। সন্ধ্যের ময়দান, অন্ধকার ভকভক করে থাকে যেখানে, সেখানে ঘাসের উপর শুয়ে একের পর এক কবিতা বলে যেতাম আমরা। ও গিটার বাজাতে পারতো। ওর মতে ‘এসো সুসংবাদ এসো’ সবথেকে ভালো উঠবে গিটারে। দারুণ সুর করা যাবে। ভাস্করের কবিতার পাঁজরে পাঁজরেই তো সুর। অথচ ও সেই সুরটা মনোমতো তুলতে পারতো না কিছুতেই। ওর ধারণা ছিল আমিই সেটা সবথেকে ভালো পারব। কিন্তু, আমি গিটার বাজাতে জানতাম না একেবারেই। হাড়কাটা গলির একেবারে কাছটায় রাজেশের আলুর দোকান। ওখানে বসে থাকতাম আমরা। ভাস্করের কবিতা নেমে আসতো শরীর জুড়ে। গলিতে ঢুকতো মানুষ। গলি থেকে বেরিয়ে আসতো মানুষ। এরকমই ছিল আমাদের জীবন। অচেনা বাড়িগুলোর ভেতর পর্যন্ত ঘুরে বেড়াতাম …

এ সব কী বলছিস! কবিতা তো!

হুম। শুনে যা। তোর বেলায় তো আমি কিছু বলিনি।

বল। বল। নাক খুঁটতে খুঁটতে বলল চন্ডীদাস।

বড়ু বলে চলে, আক্রা স্টেশনে এক হিজড়ে থাকত। পাগল। এক সময় দল থেকে তাড়িয়ে দেয় ওকে। এরকমই এক বিকেলে একদিন আমাদের দুজনকে দেখে ও গান গেয়েছিল- আজা কো আনি সে প্যায়ার হো গ্যায়া। ও কোথাকার মানুষ- দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, মালদহ না নাইজিরিয়া; তা সব থেকে ভালো বলতে পারবে বাংলা ব্যকরণ বই। কিন্তু ঘটনা হল, আমরা ওকে পঞ্চাশটা টাকা দিয়েছিলাম। এবং, ও সেটা সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের দিকে ছুড়ে মেরেছিল। তবু মাঝেমাঝে ওই গানটা আমরা গেয়ে ফেলতাম দুজনে দুজনের মধ্যে গিঁথে যাওয়ার সময়। এই যে কফিশপটার ছবি। এখানে এক বিকেলে আসলাম। কথা হচ্ছিল। সেই প্রথমবার আসা। কফিশপ নিয়ে তার আগে পর্যন্ত আমার একটা ভয় ছিল। সেই ভয়টা ক্রমে ফুলে যাচ্ছিল। কাচের গুলি মাটিতে ফেলার পর যেরকম শব্দ হয়, ওই ভয়টার ভিতরেও ওরকম এক শব্দ আমি টের পেতাম। একটা ফরাসি সিনেমা তিনবার দেখেছিলাম আমি। ওটা দেখার পর থেকে কেন জানি ধারণা হয়েছিল যে, কফিশপের মধ্যে থাকা মানুষ শুধু ফরাসিতেই কথা বলে। সেই বিকেলটায়, ওই ফুলে উঠতে থাকা ভয়টাই হাত-পা টান করতে গিয়ে ফেটে গেল। আর আমি বুঝতে পারলাম, কফিশপ আদতে এমন একটি ম্যানহোল যার ঢাকনা কখনও চুরি যায় না।

বড়ু এসব কথা বলতে বলতে টের পাচ্ছিল ওর বুকের ভিতরে থাকথাক করে সাজানো ইঁটের দেওয়ালগুলো শব্দহীন ভেঙে পড়ছে। চন্ডীদাসের পায়ের পাতা ফুলে গিয়েছে অনেকটা। চুলকানি হচ্ছিল জায়গাটায়। আস্তে আস্তে সন্ধ্যে হচ্ছে এবার। একটু পরই আকাশের গায়ে সোজাসুজি লটকে গিয়ে চাঁদ আলো পাঠিয়ে দেবে মেঘের ভিতর দিয়ে। ও বলছিল, অনেকদিন ধরে অনেক চেষ্টা করা সত্বেও কিছুতেই ওই কবিতাটা গিটারে তুলতে পারছিলাম না। অথচ ও তোলাবেই। এবং এই কফিশপেই। এইসব ভাবতে ভাবতেই কেটে গেল আরও বেশ কয়েকটা দিন। ততদিনে আমি নিজেই কিনে ফেলেছি একটা গিটার। আমাকে শেখাতে গিয়ে ওর গিটারের স্ট্রিংগুলো ছিড়ে গিয়েছিল।

তারপর? বল...

ও কফিশপে বসেছিল। আমি আর ওইদিন যাইনি।

কেন? চন্ডীদাসের গলাটা একটু জোরে শোনায়।

আমি কবিতাকে গিটারে ধরে রাখতে চাইনি। তাই। কবিতা মানে কবিতাই। গিটার মানে গিটার। দুটো আলাদা জিনিস। এক তারে বাঁধা যায় না। ও বসেছিল কফিশপে আমি জানি। আমি আসিনি। ও বসেছিল। অনেকদিন। আমার জন্য। আমি কোনওদিনও যাইনি। শিল্পী ওই বসে থাকা অবস্থাতেই ওকে এঁকেছে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে কেবল মুখটুকু ছাড়া বাকি সবকিছু নিয়ে ওর জায়গায় ক্যানভাসে চলে এসেছি আমি। আমার এই মুখটা দেখতে পাচ্ছিস, সেটাই খালি ওর...

চন্ডীদাস এই সময় মুখ ফিরিয়ে আশ্চর্য্য হয়ে দেখল, চাঁদ উঠেছে। চাঁদ খুব তাড়াতাড়ি আকাশে উঠে গেল। চাঁদের আলোয় মরুভূমির মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা এক প্রাচীন হেরে যাওয়া জ্যামিতিক চিহ্নের মতো দেখাচ্ছে তাকে। এই রাস্তাটি বেশ ছোট। তার দু’পাশের বড় টানা সাদা দেওয়াল রাস্তার উপর ঘন কালো ছায়া ফেলছিল। এই কালোছায়ার ভিতরেই তার মনে হল কয়েকটা ঢ্যাঙা বালককে সে ওই ফুটপাথ থেকে এই ফুটপাথে আসতে দেখতে পেল। বড়ু জিজ্ঞাসা করল, তুই হঠাৎ এত গুম মেরে গেলি কেন?

ও কোনও কথা বলল না আর। তবে ভয় পেল। গোরুর মাংস খাওয়ার জন্য একটি লোককে কুপিয়ে মেরে ফেলেছিল ও। শিল্পী ছবিতে শরীরটা দিয়েছে ওর। এমনকি পুরুষাঙ্গের উপরের জরুলটাও রয়েছে। শুধু মুখটা বদলে দিয়ে করে দিয়েছে যে লোকটাকে মেরেছিল তার। বড়ুর মতোই ব্যাপার। ওরা দুজনেই আসলে গণেশ। শরীরটা নিজেদের। যাকে মারলো, তার মাথাটা ধড়ের উপর দোল খাচ্ছে। চন্ডীদাস বুঝতে পারছিল, কয়েকটা কুকুরের ঘেউ ঘেউ, সোঁদা গন্ধওয়ালা ভিজে অন্ধকার এবং ঘন পাতাবাহার গাছ নিয়ে একটি পরিপূর্ণ সময় তার ভিতর ঢুকে যাচ্ছে। চাঁদের আলো পড়ছিল এই সময় তার উপর। ঠান্ডা...

প্রত্যেকটা ছবিই আসলে একটি গল্প বলে। প্রেমিক-প্রেমিকার প্রথম চোখে চোখে চাওয়া; কঠিন কঠোর প্রকৃতিতে একের পর এক যুদ্ধকে জয় করা। রামায়ণের সীতাহরণ কিংবা মহাভারতে দ্রৌপদীর বস্ত্র নিয়ে টানাটানির ভয়াবহতা স্পষ্ট হয়েছে আমাদের কাছে এই ছবির মাধ্যমেই। আমাদের চোখ, যা এই কাহিনীগুলোকে পাঠ করে করে ক্লান্ত- ছবিগুলোতে গিয়ে বিশ্রাম করে। যদি কাহিনীতে কিছু থাকে যা কোথাও গিয়ে আমাদের মনন ও কল্পনাকে মিলিয়ে দেয়, ছবিগুলো তখন আমাদের কাজে আসে। ছবিগুলোতে গল্পটা ফুটে ওঠে টাটকা ফুলের মতো। কিন্তু গল্পটা ছাড়া ছবিটা ‘হয়ে ওঠা’ অসম্ভব।


বাতাস

পাখির ডানায় আসে বাতাসের ইশারা। বাতাসের চাইতে এমন কৌতুকের ব্যাপার তো আর কিছু নেই। সেই কৌতুকপূর্ণ আবহের মধ্যে থেবড়ে বসেই প্রদর্শনী থেকে বেরিয়ে আসা এই দুই বিক্রি না-হওয়া ছবি নিজেদের সঙ্গে কথা বলে চলে। সেকেন্ডের পর সেকেন্ড। শতাব্দীর পর শতাব্দী। বাতাসের ভিতর তাদের সেইসব কথার দানা পড়ে থাকে। চাঁদের আলোর ভিতর, চাঁদের বাতাসের ভিতর সেইসব কথার দানা নিয়ে বেঁচে থাকে চন্ডীদাস আর বড়ু। কয়েকটা রাত পরে একটি ঝোড়ো হাওয়া এসে সেই ফুটপাথ থেকে ওদের তুলে নিয়ে যায়। বড়ু তখন গিটার বাজাচ্ছিল। চন্ডীদাস তার তালে তালে নাচছিল ফুলে যাওয়া পায়ের পাতা নিয়ে।


চাঁদের আলো অল্প হলেও ছিল সে দিনও। তাতেই দেখা গিয়েছিল ফুটপাথে লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন লোককে। স্যাম্পেল স্টোর্স খুলতে আর বেশি দেরি নেই…






পরিচিতি:- বোধিসত্ত্ব ভট্টাচার্য
৪ঠা জানুয়ারি, ১৯৯০

বিএসসি(অঙ্ক) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশা:- সাংবাদিকতা
নেশা:- লেখালেখি, বই পড়া, সিনেমা দেখা

প্রিয় লেখক:- ওরহান পামুক, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ