২০১৫ সালে কত সংখ্যক গল্প পড়েছেন?
তমাল রায় : ১
গল্পপাঠ : ২.
কোন কোন মাধ্যম থেকে গল্পগুলো পড়েছেন?
তমাল রায় : ২
গল্প আগে যা পড়তাম, যে পাঠাভ্যাসে, হাতে বই নিয়ে ছাপার কালির ঘ্রাণ নিতে নিতে প্রিয় লেখকের লেখা পড়ে ফেলছি গোগ্রাসে।তারও আগে পড়তাম পড়ার বই এর ভেতর লুকিয়ে।তখন ছিলাম শুধুই পাঠক। এখন পাঠক,নিজেও লেখক ও সম্পাদক হবার দৌলতে সে আবেগী পাঠ আর হয় কই। গল্পগুলি পড়েছি হার্ড কপি পত্রিকায়, লেখকের বই, এবং ওয়েব ভার্সনে। ওয়েব পত্রিকায়।
গল্পপাঠ : ৩.
কোন কোন গল্পকারের গল্প পড়েছেন?
তমাল রায় : ৩
যেহেতু নিজেদের পত্রিকা আছে, তাই কোনো গল্পের প্রথম পাঠের সৌভাগ্য প্রায়শই জোটে। লেখকের সাথেও মত বিনিময় ঘটে সে লেখার বিষয়ে। তার ভাষা, বাক্য গঠন শেড, কালার, প্রযুক্তি সবই সে আলোচনার বিষয়। ভালো লেগেছে সাগুফতা শারমীন তানিয়া, শাশ্বত নিপ্পন, বিধান সাহা, সুমী সিকানদার, মুস্তাফা কামরুল আখতার, রুমা মোদক, নভেরা হোসেন, ইশরাত তানিয়া, বাবুল হোসেইন, সাঈদা মিমি, মোজাফফর হোসেইন, সর্দার ফারুক, অপরাহ্ণ সুস্মিত, আফসানা বেগম, মেঘ অদিতি ইত্যাদি লেখকের।
গল্পপাঠ : ৪.
এর মধ্যে ভালো লাগার গল্পগুলোর কয়েকটি নাম করুন। গল্পগুলো ভালো হয়ে উঠেছে কি কি কারণে সেগুলো উল্লেখ করুন।
তমাল রায় : ৪
গল্প ভালো লাগে বিভিন্ন কারণে। স্বার্থক গল্প হল এক যৌথ পরিবার। গল্প বলার স্টাইল,চরিত্রের নির্মাণ,টেকনিকালিটিস, গল্পের নিজস্ব স্বতঃস্ফূর্ততা,ডিটেলিং এ সব চরিত্র আর তাদের যৌথতা নিয়েই সার্থক গল্প নির্মাণ হয়। গল্প নিটোল হয়ে উঠতেই হবে,এ বিশ্বাস আজ আর অক্ষত নয়। গল্পহীন গল্প ও এ সময়ের উল্লেখ্যোগ্যতা। তবে সব কিছু ছাপিয়ে যায় যখন পাঠক মুগ্ধতায় ঘোরে আচ্ছন্নতায় শুরু থেকে শেষে পৌঁছেও মনের মাঝে সে গল্প নিয়ে আন্দোলিত। এমনই চারটি ভাল লাগার গল্পের পাঠ অভিজ্ঞতা বিনিময় করি নীচের অংশে।
গল্পপাঠ : ৫.
সেরা গল্পটি নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ বলুন।
তমাল রায় : ৫
কোনো একটিকে নিয়ে সেরা তকমা দেওয়ার আমি বিরোধী। চারটি গল্প কে আমি বেছেছি, তাদের বিভিন্নতার আঙ্গিকে।
১।আফসানা বেগমের লেখা ‘ঠিকানা’। নানা থাকতেন কোলকাতায়। ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হওয়ার ভিক্টিম। চলে আসতে হয় ঢাকায়। রাস্তা বাড়ানোর প্রয়োজনে এবার ঢাকার বাড়িও ছেড়ে যেতে হবে। শেকড়হীন হবার যন্ত্রণা। উলুখাগড়ারা কিভাবে গিনিপিগ হয়ে যায়,সারা গল্পে তা ছড়িয়ে অব্যক্ত বেদনার মত । অদ্ভুত এ জীবন নামক জার্নিতে প্রতিনিয়ত ঠোক্কর খেতে খেতে নানা ফিরে যান তার পূর্ব জীবনের গল্পে, আর লেখক সে সব শোনে আর আশপাশের দুনিয়ার সাথে তুল্য মূল্য বিচারে আজকের প্রেক্ষিত ও অতীতকে ফিরে দেখা, ঠিক ভুল, মনোবিশ্লেষণমূলক এই গল্প শেষ হয়েও বিষাদ ছুঁয়ে থাকে।
২। মেঘ অদিতির লেখা ‘জল থেকে সমুদ্র,পাহাড় বা বনতল,চেয়ে আছে কে?’এ গল্প এক অদ্ভুত লিরিকাল গদ্য, প্রায় কবিতার কাছাকাছি অফুরান আবেগ নিয়ে মেঘ থাকে বিষাদের নীলরঙ মেখে। ঠিকানা হীন উড়ো চিঠি,’অনি’ আসলে সেই প্রেম, টুকরো টুকরো স্মৃতির কোলাজে যে ধরা দেয় মাঝে মাঝে আলো আর আঁধারে। তাকে না পাওয়া আর্তি হয়ে ছড়িয়ে যায় আর অদ্ভুত সৌন্দর্যে মায়ায় বিষন্নতার ডিটেইল হৃদয় ক্ষরণের রঙে আঁকা হয় জীবনের ক্যানভাসে।’সমস্ত প্রতিরোধ বুঝি ভেঙে যায়…
আড়াল ভেঙে পায়ে পায়ে এবার চাঁদে পৌঁছে যাচ্ছে অনি’। এও জীবন যা শূন্য থেকে ইনফিনিটিতে মিলিয়ে যায়। আমি মুগ্ধ পাঠক স্তব্ধ হয়ে বসে।ঘোর আর কাটেই না কিছুতেই।’...কেবল মাঝরাতে বৃষ্টি এলে মনে পড়ে...ইচ্ছে এক রেলগাড়ি। এবার গন্তব্য পাহাড়’। প্রেম আসলে ইচ্ছেও। সে উচ্চতর হতে চায়। মূলত লিরিকাল এই জার্নিতে দর্শন এত সুচারু ভাবে প্রয়োগ হয়েছে যে গল্প টি পড়লে আসলে দর্শনেই আরো সম্পৃক্ত হওয়া।
৩। অপরাহ্ণর ‘সীমানা’ পড়ে ঝিম ঘোর লাগে। দালির ছবি দা পারসিসটেন্স অব মেমরি দেখতে দেখতে লেখক ফিরে পায় তার শৈশব,কৈশোর ফিরে পায় তার কিশোর বেলার প্রেম আর আছে এক ইজেল। আঁকো প্রেম আঁকো শৈশব, সে আসলে গড়া। আঁকো ভাঙন, তা হল দেশ ভাগ। ভাঙা আর গড়ার এক অদ্ভুত মিশেলে গল্প এগোয় সাদা আর কালোর অপরূপ ট্যুইস্টে । আমি সাধারণ পাঠক মন্ত্রমুগ্ধ।
৪। ইশরাত তানিয়ার ‘বীজপুরুষ’, কি অসাধারণ অক্ষর তুলিতে নিলুফারকে এঁকেছেন লেখক। কারিগর তৈরি করে ম্যাজিকাল বাক্স, আর নিলুফার তার যাবতীয় জ্বালা যন্ত্রণা নিয়ে অপেক্ষা করে তার না হয়ে ওঠা সন্তানের, নিখুঁত ডিটেইল, গ্রামীন বাংলার ভাব, স্বভাব সব ছবির মতই উঠে আসে একে একে। পারিপার্শ্ব, প্রতিবেশ, নিলুফারের চোখ জুড়ে স্বপ্ন ঘোর, কারিগরের পৌরুষ আর ধীরে ধীরে এক নীল স্বপ্ন দৃশ্যে শেষ হওয়া এই জার্নি আসলে নিলুফারের নয় কমবেশি অবদমিত নারী জাতের।
(গল্পগুলি পড়েছি ঐহিক, নীলাকাশ ও গল্পপাঠে)
১।আফসানা বেগমের লেখা ‘ঠিকানা’। নানা থাকতেন কোলকাতায়। ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হওয়ার ভিক্টিম। চলে আসতে হয় ঢাকায়। রাস্তা বাড়ানোর প্রয়োজনে এবার ঢাকার বাড়িও ছেড়ে যেতে হবে। শেকড়হীন হবার যন্ত্রণা। উলুখাগড়ারা কিভাবে গিনিপিগ হয়ে যায়,সারা গল্পে তা ছড়িয়ে অব্যক্ত বেদনার মত । অদ্ভুত এ জীবন নামক জার্নিতে প্রতিনিয়ত ঠোক্কর খেতে খেতে নানা ফিরে যান তার পূর্ব জীবনের গল্পে, আর লেখক সে সব শোনে আর আশপাশের দুনিয়ার সাথে তুল্য মূল্য বিচারে আজকের প্রেক্ষিত ও অতীতকে ফিরে দেখা, ঠিক ভুল, মনোবিশ্লেষণমূলক এই গল্প শেষ হয়েও বিষাদ ছুঁয়ে থাকে।
২। মেঘ অদিতির লেখা ‘জল থেকে সমুদ্র,পাহাড় বা বনতল,চেয়ে আছে কে?’এ গল্প এক অদ্ভুত লিরিকাল গদ্য, প্রায় কবিতার কাছাকাছি অফুরান আবেগ নিয়ে মেঘ থাকে বিষাদের নীলরঙ মেখে। ঠিকানা হীন উড়ো চিঠি,’অনি’ আসলে সেই প্রেম, টুকরো টুকরো স্মৃতির কোলাজে যে ধরা দেয় মাঝে মাঝে আলো আর আঁধারে। তাকে না পাওয়া আর্তি হয়ে ছড়িয়ে যায় আর অদ্ভুত সৌন্দর্যে মায়ায় বিষন্নতার ডিটেইল হৃদয় ক্ষরণের রঙে আঁকা হয় জীবনের ক্যানভাসে।’সমস্ত প্রতিরোধ বুঝি ভেঙে যায়…
আড়াল ভেঙে পায়ে পায়ে এবার চাঁদে পৌঁছে যাচ্ছে অনি’। এও জীবন যা শূন্য থেকে ইনফিনিটিতে মিলিয়ে যায়। আমি মুগ্ধ পাঠক স্তব্ধ হয়ে বসে।ঘোর আর কাটেই না কিছুতেই।’...কেবল মাঝরাতে বৃষ্টি এলে মনে পড়ে...ইচ্ছে এক রেলগাড়ি। এবার গন্তব্য পাহাড়’। প্রেম আসলে ইচ্ছেও। সে উচ্চতর হতে চায়। মূলত লিরিকাল এই জার্নিতে দর্শন এত সুচারু ভাবে প্রয়োগ হয়েছে যে গল্প টি পড়লে আসলে দর্শনেই আরো সম্পৃক্ত হওয়া।
৩। অপরাহ্ণর ‘সীমানা’ পড়ে ঝিম ঘোর লাগে। দালির ছবি দা পারসিসটেন্স অব মেমরি দেখতে দেখতে লেখক ফিরে পায় তার শৈশব,কৈশোর ফিরে পায় তার কিশোর বেলার প্রেম আর আছে এক ইজেল। আঁকো প্রেম আঁকো শৈশব, সে আসলে গড়া। আঁকো ভাঙন, তা হল দেশ ভাগ। ভাঙা আর গড়ার এক অদ্ভুত মিশেলে গল্প এগোয় সাদা আর কালোর অপরূপ ট্যুইস্টে । আমি সাধারণ পাঠক মন্ত্রমুগ্ধ।
৪। ইশরাত তানিয়ার ‘বীজপুরুষ’, কি অসাধারণ অক্ষর তুলিতে নিলুফারকে এঁকেছেন লেখক। কারিগর তৈরি করে ম্যাজিকাল বাক্স, আর নিলুফার তার যাবতীয় জ্বালা যন্ত্রণা নিয়ে অপেক্ষা করে তার না হয়ে ওঠা সন্তানের, নিখুঁত ডিটেইল, গ্রামীন বাংলার ভাব, স্বভাব সব ছবির মতই উঠে আসে একে একে। পারিপার্শ্ব, প্রতিবেশ, নিলুফারের চোখ জুড়ে স্বপ্ন ঘোর, কারিগরের পৌরুষ আর ধীরে ধীরে এক নীল স্বপ্ন দৃশ্যে শেষ হওয়া এই জার্নি আসলে নিলুফারের নয় কমবেশি অবদমিত নারী জাতের।
(গল্পগুলি পড়েছি ঐহিক, নীলাকাশ ও গল্পপাঠে)
গল্পপাঠ : ৬.
আপনি কি মনে করেন—এই গল্পগুলো বাংলাদেশের চিরায়ত গল্পগুলোর সমতুল্য বা তাদেরকে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে?
তমাল রায় : ৬
কোনো গল্পের চিরায়ত হওয়া নির্ভর করে স্থান কাল পেরিয়ে চিরকালীন হয়ে ওঠায়। যে গল্পগুলির উল্লেখ করলাম তা প্রেম, অপ্রাপ্তি, এবং শেকড় ছিঁড়ে যাওয়া মাটির প্রতি অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণের গল্প। সব গল্প টেকনিকালি সাউন্ড হয়ে উঠতেই হবে বলে আমার মনে হয় না। কিছু ত্রুটি থাকুক। তবু এই সব গল্পরা বিশ্বসুন্দরী না হোক, মায়ের সৌন্দর্যের মতই চিরকালীন।
গল্পপাঠ : ৭.
বিদেশি গল্পের সঙ্গে এ গল্পগুলোর মানকে কিভাবে তুলনা করবেন?
বিদেশি গল্পের সঙ্গে এ গল্পগুলোর মানকে কিভাবে তুলনা করবেন?
তমাল রায় : ৭
বিদেশী গল্পের বিষয়ে বৈচিত্র্য আমায় বরাবর আকর্ষণ করেছে। করেছে স্টাইলাইজেশন। তবু বিভূতিভূষণ-এর মৌরি ফুল, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় এর চন্দনেশ্বর এর মাচানতলার আবেদন সর্বজনীন। আমি এই সব গল্প পাঠ করে বড় হয়েছি। মার্কুয়েজ বা কুন্দেরা প্রণম্য তা হলেও আমার বাংলা, বাংলা ভাষার লেখা কি প্রবলভাবেই প্রাসঙ্গিক ও দেশকালের সীমানা ছাপিয়ে যাওয়া তার প্রমাণ তো সাক্ষাত জীবনানন্দ এবং রবীন্দ্রনাথ। তাই সে বিষয় নিয়ে আর কথা বাড়ালাম না।
0 মন্তব্যসমূহ