গল্পপাঠ : ১.
২০১৫ সালে কি কি গল্প লিখতে চেয়েছিলেন? লেখালেখির কি কোনো পরিকল্পনা করেছিলেন?
আহমেদ খান হীরক : ১
ভয়ঙ্কর প্রশ্ন। এ কারণে যে পেছন ফিরে তাকাতে গেলে দেখছি বেশ কিছু চরিত্র ও মুহূর্ত বেশ কটমটে চোখে তাকিয়ে আছে। ২০১৫-তে বেশ কিছু গল্প লিখেছি। এর মধ্যে কয়েকটা রম্য। কিন্তু এখন মনে পড়ছে যে আরো কয়েকটা গল্প, অন্তত শুরু ও শেষ, মাথায় তৈরি ছিল; অথচ লেখা হয় নি। এমনকি লিখতে বসেও, মনে হয় যথাযথ শুরু না পাওয়ায়, আর লেখা হয়ে ওঠে নি।আরেকটি বিষয় বলার প্রয়োজন বোধ করি যে মাথায় আইডিয়া আসার সাথে তা লেখার আগে কারো সাথে শেয়ার করলে একটা আলগা চাপও তৈরি হয় আমার ক্ষেত্রে। ২০১৫-তে এরকমভাবে অন্তত একটা গল্প লিখতে পারি নি। মনে হয়েছিল যা শোনানো হয়েছে, তা স্পর্শ করতে পারছি না। এছাড়া ২০১৫’তে ‘আবু নাসিম বা লখিন্দর কোনোটিই তার ছিল না’ শিরোনামের উপন্যাসটি শেষ করার ইচ্ছা ছিল। উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে ‘গল্পপাঠ’-এ প্রকাশিতও হচ্ছিল। কিন্তু তা শেষ করা হয় নি। পরিকল্পনা বা ইচ্ছা যা-ই বলেন না কেন ২০১৫-তে এরকম আমি ভেবেছিলাম।
গল্পপাঠ : ২.
কি কি লিখেছেন?
আহমেদ খান হীরক : ২
কয়েকটি গল্প। এর মধ্যে ‘সিলগালা মহল্লার বেলকনিরা’ বাংলানিউজ২৪-এ প্রকাশিত হয়। এ গল্পটির নাম উল্লেখ করার কারণ গল্পটি আমার বিশেষ প্রিয়। ২০১৫’র লেখালেখির বিভিন্ন অপূর্ণতা এই গল্পটির দিকে তাকিয়ে আমি তুচ্ছজ্ঞান করি। এছাড়া আরো কয়েকটি গল্প বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সাথে রম্য পত্রিকার জন্য নিয়মিত রম্য লেখা হয়েছে। এ সবই সাহিত্যের অংশ থেকে। নাহলে পেশাগত কারণে নিয়মিতই লিখতে হয়েছে অন্যান্য বিষয়াদি।
গল্পপাঠ :৩.
যা লিখতে চেয়েছিলেন সেগুলো কি লিখতে পেরেছিলেন?
আহমেদ খান হীরক : ৩
প্রথমেই এই প্রশ্নের উত্তরটা অনেকাংশে দিয়ে ফেলেছি। উপন্যাসটা শেষ করতে চেয়েছিলাম, পারি না। অন্তত তিনটা গল্প লিখতে পারি নি। অথচ গল্পগুলো মাথায় তৈরি বলে মনে হয়।
গল্পপাঠ : ৪.
যেভাবে লিখতে চেয়েছিলেন সেভাবে কি লেখাগুলো লিখতে পেরেছেন?
আহমেদ খান হীরক : ৪
আমার মনে হয়, যেভাবে লিখতে চাওয়া হয়, তা কখনোই কোনোভাবে লেখা সম্ভব নয়। আমার লেখালেখির ছোট্ট অভিজ্ঞতা তাই বলে। আমি লেখালেখির এই ক্ষুদ্র সময়ে কোনো লেখার ক্ষেত্রেই বুক ঢুকে বলতে পারি না যেভাবে লিখতে চেয়েছি সেভাবেই লেখাগুলো লিখতে পেরেছি। লেখালেখি আমার কাছে অত্যন্ত যন্ত্রণার মতো। ভেতরে ভেতরে আমাকে লেখাটা নিদারুণ কষ্টের মধ্যে ফেলে দেয়। ফলে আমার দিক থেকে একটা তাড়না থাকে লেখাটিকে আছড়ে বাইরে ফেলার। এই ভেতরে তৈরি হওয়া ও আছড়ে বাইরে ফেলার মধ্যে আমার অজান্তেই একটা বদল ঘটে যায়। এটার ওপর চাইলেও আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। আমার ভেতরের সবগুলো লাইন হুবহু কখনোই পাতায় লিখিত হয় না। আর হয় না বলেই একটা খচখচে যন্ত্রণা থাকে। সন্দেহ থাকে, যা বলতে চেয়েছি তা কি বলতে পেরেছি? পাঠকের কাছে পৌঁছানোর পর এই সন্দেহ আরো বাড়ে। আমি আমার লেখা নিয়ে খুব অস্বস্তিতে থাকি।
গল্পপাঠ : ৫.
সে লেখাগুলো কি নিয়ে কি আপনি তৃপ্ত?
আহমেদ খান হীরক : ৫
দুয়েকটা নিয়ে। তবে তৃপ্তিও নয় ফিলিংসা। একটু অন্যরকম। এমনকি খানিকটা গর্বও মিশে থাকে তাতে। আর কিছু কিছু গল্প নিয়ে আক্ষেপও হয়। পরে মনে হয় এটা এমন না হয়ে ওইভাবেও হতে পারত। আমি গল্পের ঘোরে আস্থা রাখি। কোনো কোনো লেখায় মনে হয় আরেকটু কাজ করলে ভালো হতো। আবার কোনো গল্প হয়ে যাবার পর সেটাকে নিয়ে উপন্যাস লেখার কথাও ভাবি। বা সিনেমা হওয়ার কথাও ভাবি। আসলে, তৃপ্তি, অতৃপ্তি, লেখাকে এগিয়ে অন্য কোনো দিকে নেয়ার পুরো ব্যাপারটা একটা অদ্ভুত চক্রের মতো ঘুরতেই থাকে। আর এভাবে আলাদা করে ভাবাও হয় না। আপনি প্রশ্ন করলেন বলে সেদিকে তাকানোর সুযোগ হলো।
গল্পপাঠ : ৬.
২০১৬ সালে আপনার লেখালেখির পরিকল্পনা কি? কি কি লিখবেন বলে মনে করছেন?
আহমেদ খান হীরক : ৬
পেশার লেখালেখির বাইরে অন্তত চারটা গল্প। এবার গল্পগুলো হয়তো ঐতিহাসিক পটভূমির ওপর দাঁড়াতে পারে। দ্বিতীয় পুরুষে লেখা গল্প নিয়ে একটি বই করার ইচ্ছা আছে আগামী কোনো বই মেলায়। সেক্ষেত্রে মনে করি ২০১৬’তে কয়েকটা দ্বিতীয় পুরুষের গল্প লেখার কথাও ভাবছি আমি। কিছু রম্য। আর চলতি উপন্যাস শেষের সাথে নতুন একটি উপন্যাস শুরু করা। জানি না সেটা আদৌ হবে কিনা!
গল্পপাঠ : ৭.
কিভাবে লিখবেন? লেখার জন্য আপনি কি ধরনের প্রস্তুতি নেবেন বলে মনে করছেন?
আহমেদ খান হীরক : ৭
ঐতিহাসিক পটভূমিতে লেখার জন্য অবশ্যই কিছু পড়াশোনা প্রয়োজন। বিশেষত সেই সময়ের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ। এছাড়া আমি খুব মেথড প্রস্তুতির ভেতর দিয়ে যাওয়ার মতো না আসলে। সঠিক পরিমাণ বিশ্রাম নিতে পারাটাই এখন পর্যন্ত আমার প্রস্তুতি হিসেবে কাজে লেগে এসেছে। তবে পেশাজীবী লেখার বাইরে নিজের লেখার সময় আরো একটু বাড়াতে চাই। আর পড়াটা আরো সিলেক্টিভ করতে চাই।
গল্পপাঠ : ৮.
আগামী লেখাগুলোর মধ্যে কি কোনো পরিবর্তন আনার কথা ভাবছেন? কী ধরনের পরিবর্তন আনতে বলে মনে করেন?
আহমেদ খান হীরক : ৮
পরিবর্তন আনতে চাই কিছু। এর সাথে নিজের ভঙ্গিটিও খুঁজতে চাই আগের মতোই। ডিটেলের পরিমাণ আরেকটু বাড়াতে চাই। চিত্রের প্রতি আরো বেশি মনোযোগী হতে চাই। আর নতুন রূপক উপস্থাপন করতে চাই। জানি না আসলে সম্ভব কিনা। তবে এ ধরনের একটা ইচ্ছা আছে। যে ইচ্ছাটা আসলে অনেক দিনই নিজের সঙ্গে বোঝাপড়ায় ব্যস্ত আছে। এছাড়াও আরো কিছু বিষয় রয়েছে...যা এখনি প্রকাশ করতে চাই না এই কারণে যে তাতে তা অর্জন করার একটা বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়।আহমেদ খান হীরক
জন্মসাল- ১৯৮১
জন্মস্থান- রহনপুর, রাজশাহী, বাংলাদেশ।
বর্তমান আবাসস্থল-ঢাকা, বাংলাদেশ।
পেশা- লেখক, টুন বাংলা এ্যানিমেশন স্টুড...
প্রকাশিত লেখা- উত্তরাধিকার, নতুন ধারা ইত্যাদিসহ বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা।
প্রকাশিত গ্রন্থ- কাব্যগ্রন্থ- আত্মহননের পূর্বপাঠ।
0 মন্তব্যসমূহ