সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় : ২০১৫ সালে কী গল্প লিখেছি, ২০১৬ সালে কী লিখব

গল্পপাঠ : ১. 
২০১৫ সালে কি কি গল্প লিখতে চেয়েছিলেন? লেখালেখির কি কোনো পরিকল্পনা করেছিলেন?


সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় : ১
 নাঃ। কোনো পরিকল্পনা ছিলনা। খাকেও না। ঘটনা ঘটবে দেখব, বা কিছু পড়ব, রিঅ্যাক্ট করব, তবে তো লেখা। গল্প কিছু লিখিওনি গোটা বছরে। না, এই ২০১৫র শেষ সপ্তাহে আনন্দবাজারের রবিবাসরীয়তে ‘বিশেষ বিশেষ খবর’ নামে মকুমেন্টারি ধরণের একটা লেখা লিখলাম, ওটা আমার কাছে ফিকশনই। সেটা গোটা বছরের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ দেখে লেখা। বছর জুড়ে কী ঘটবে তার উপরে তো আমার হাত ছিলনা। তাই কী লিখব তারও কোনো পরিকল্পনাও ছিলনা। তবে ওটাকে কেউ গপ্পো নাও বলতে পারেন।



গল্পপাঠ : ২. 
কি কি লিখেছেন?

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় : ২
ফিকশনের মধ্যে --- একটা উপন্যাস লিখেছিলাম। মহেঞ্জোদারো। আগামীকাল পত্রিকায় বেরিয়েছিল, এবার গুরুচন্ডালি থেকে বই হচ্ছে। সেটা অবশ্য ২০১৪তেও শুরু করে থাকতে পারি, ঠিক মনে নেই। এছাড়াও খবরের কাগজে এটা-সেটা লিখছি। তার তালিকা কারোরই মনে নেই, আমারও না।


গল্পপাঠ : ৩
যা লিখতে চেয়েছিলেন সেগুলো কি লিখতে পেরেছিলেন? 

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় : ৩
লেখার পরে তো মনে হচ্ছে এইগুলোই লিখতে চেয়েছিলাম। তা, এইগুলো পেরে গেছি। না পারলে বুঝতাম, সেভাবে চাইনি। সেভাবে চাইলে লোকে না লিখে পারেনা। সময় সুযোগ হয়নি, বা প্রচুর চাপ যাচ্ছে, পারছিনা, এ সবাই বলে, আমিও। সেসব মিথ্যে কথা নয়। কিন্তু তার মধ্যেই মহেঞ্জোদারো লিখলাম। কারণ ওটা লিখতে চাওয়াটা সর্বগ্রাসী হয়ে উঠল। যা লিখিনি সেগুলো নিশ্চয়ই সেভাবে চাইনি।


গল্পপাঠ : ৪. 
যেভাবে লিখতে চেয়েছিলেন সেভাবে কি লেখাগুলো লিখতে পেরেছেন? 

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় : ৪
 কীভাবে লিখতে চেয়েছিলাম ঠিক জানিনা। এসব তো ঘটমান বর্তমান। যেটা যেভাবে আসে সেভাবেই লেখা হয়ে যায়। কাজেই ওভাবেই চেয়েছিলাম বলা ভালো।


গল্পপাঠ : ৫. 
সে লেখাগুলো কি নিয়ে কি আপনি তৃপ্ত? 

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় : ৫
 লিখে তো তৃপ্তই। তবে কী হয়েছে সেটা নিজে বছরখানেক পরে আরেকবার পড়লে বোঝা যাবে। মানে, আমি বুঝব। যারা পড়ে ফেলেছেন, আদৌ যদি পড়ে টড়ে থাকেন কেউ, তো তাঁরা বুঝেই ফেলেছেন। 


গল্পপাঠ : ৬. 
২০১৬ সালে আপনার লেখালেখির পরিকল্পনা কি? কি কি লিখবেন বলে মনে করছেন?

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় : ৬
কোনো পরিকল্পনাই নেই। মানে নিয়মিত কাগজে যা লিখি তা ছাড়া। তারও অবশ্য কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই।


 গল্পপাঠ : ৭. 
কিভাবে লিখবেন? লেখার জন্য আপনি কি ধরনের প্রস্তুতি নেবেন বলে মনে করছেন?

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় : ৭
এইটা নিয়ে সত্যিই ভাবি। লেখার ধরণ ক্রমাগত বদলানো দরকার। সেটা শুধু স্টাইলের প্রশ্নে নয়, দৃষ্টিভঙ্গীর কারণেই। আপনি যদি একই কথা দশ বছর ধরে বলে যান, সেটা লিখে চলার তো কোনো মানে নেই। একটা কথা একটা লেখায় বলা যায়, বড়োজোর চার-পাঁচটা লেখা লাগতে পারে। কিন্তু তারপরে ওই একই জিনিস লেখার কোনো অর্থ হয়না। দেখার ভঙ্গীতেই বদল আনার প্রয়োজন পড়ে। পাঁচের নামতা ক্লাস টুতে পড়ে লোকে। কিন্তু সারাজীবন ওখানেই আটকে থাকার মানে নেই। সেটা মৃত্যুতুল্য হবে। কাজেই এই চিন্তাটা সবসময়েই থাকে, যে, আমি খতম হয়ে যাচ্ছিনা তো? নতুন করে ভাবতে পারছি তো? সেটা কোনো নির্দিষ্ট বছরের ব্যাপার নয়। এ জিনিস আছে থাকবে। তার মধ্যেই একসময় বুড়ো হব। লেখায় হয়তো পুনরাবৃত্তি চলে আসবে। তখন সেটা নিয়েই প্যারডি লিখতে পারলে মন্দ হয়না। কিন্তু এখনও ততটা বুড়ো হইনি। দেরি আছে মনে হয়।


গল্পপাঠ : ৮. 
আগামী লেখাগুলোর মধ্যে কি কোনো পরিবর্তন আনার কথা ভাবছেন? কী ধরনের পরিবর্তন আনবেন বলে মনে করেন?

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় : ৮
মাঝে মাঝে নরম হয়ে যাব ভাবি। কিন্তু হবনা। হাহাহা। আরও সাটল হতে চাই। এ নিয়ে আসলে অনেক কথা বলা যায়। সাটলটি আর দড়ির উপর দিয়ে হাঁটা মোটামুটি একই ব্যাপার। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে যেমন তিনটে দানার শেষে সামান্য একটু বিরতি দিয়ে একটা স্বর ছুঁড়ে মারতে হয়, তার সময়জ্ঞান এবং ওজনটাই আসল, ঠিকঠাক ছুঁড়ে মারতে পারলে তবেই লোকে হায়হায় করে উঠবে, অবিকল সেই জিনিস। দড়ির একদিকে পা পড়ে গেলেই জিনিসটা গাঁজাখুরি হয়ে যাবে, এবং মাটিতে ধপাস। আর একচুল অন্যদিকে পা পড়লেই প্রেডিক্টেবল হয়ে গিয়ে কেলেঙ্কারির একশেষ। টিভি সিরিয়াল হয়ে যাবে। মহলটা তৈরি করে ঠিক জায়গায় ঠিক করে ছুঁড়ে মারতে হবে একটি বাক্যকে। বাক্য না হয়ে অনুচ্ছেদও হতে পারে, বা অন্য কিছু। এইটা করতে পারলে মজা আছে। এবং সেটা নিজে টের পাওয়া যায়, অন্য কাউকে লাগেনা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ