রুমা মোদক : ২০১৫ সালে কী লিখেছি, ২০১৬ সালে কী লিখব

গল্পপাঠ : ১. 
২০১৫ সালে কি কি গল্প লিখতে চেয়েছিলেন? লেখালেখির কি কোনো পরিকল্পনা করেছিলেন?

রুমা মোদক : ১
না কোনো পরিকল্পনা ছিলো না।পরিকল্পনা করে সাধারণত কিছু লিখতে পারি না। লিখি না। যখন যে ঘটনায় বোধ আলোড়িত হয়,ভিতরে লেখার তাগাদা তৈরি হয়,তখন সেই বিষয় ঘটনা এবং আংগিক নিয়ে ভাবি। সাদা চোখে অবলোকিত ও তাড়িত হওয়া ঘটনাটিকে সাহিত্য মানের অন্তর্গত করে তোলার কথা ভাবতে থাকি।আংগিক ভাষা নিয়ে ভাবতে থাকি।
গার্হস্থ্য ব্যস্ততায় কখনো ভাবনাগুলো হারিয়ে যায়। কখনো লেখা হয়। ২০১৫ সালে বেশ কয়েকটি গল্প লিখতে চেয়েছি। কয়েকটি পেরেছি,কয়েকটি পারিনি। একটা ডায়েরি তে সংক্ষেপে এবছর নোট রাখার চেষ্টা করেছিলাম।পরে লিখতে গিয়ে দেখি ভাবনায় যতোদূর এগিয়েছিলাম লিখতে গিয়ে সেই গভীরতায় প্রবিষ্ট হতে পারছি না। ভাবনার সুতোটা কোথাও ছিঁড়ে গেছে।তীব্র অন্তর্বেদনায় জর্জরিত হয়েছি।কিন্তু কেনো পারিনি, কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে অনিবার্য গার্হস্থ্য শেকলে বাধা হাত পা আবিষ্কার করে নিজেকে ক্ষমা করে দিয়েছি। কিন্তু তাতে অন্তর্যাতনা লাঘব হয়নি।

গল্পপাঠ : ২. 
কি কি লিখেছেন?

রুমা মোদক : ২.
২০১৫ এর শুরুতে লেখা গল্প ' চক্র'। দৈনিক সমকালের সাহিত্য সাম্পলিমেন্টরি কালের খেয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। বইমেলায় প্রকাশিত গল্পগ্রন্থএ গল্পটি ররয়েছে। ঈদসংখ্যা ইত্তেফাক এ প্রকাশিত 'একটি অতীত ছিল' গল্পটি এদেশের মধ্যবিত্ত হিন্দুদের দেশত্যাগের প্রেক্ষাপট ও অচিহ্নিত অন্তর্গত কারণ নিয়ে লেখা। অনন্যা ঈদসংখ্যায় লেখা ' আধারে আলোতে' গল্পটি বেশ আগের লেখা। এটি আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি। নিপাট প্রেমের গল্প।রাইজিংবিডি ডট কম ও গল্পপাঠে প্রকাশিত গল্প " প্রসংগটি বিব্রতকর',বছরের শেষদিকে মুক্তিযুদ্ধকে প্রাসংগিক করে বর্তমানের প্রেক্ষাপটে লেখা গল্প " চার ফোড়ন "। এটিও সমকালের সাহিত্য সাময়িকী ' কালের খেয়া ' য় প্রকাশিত হয়েছে। এক নিম্নবিত্ত তরুণীর তীব্র মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্ব নিয়ে লেখা গল্প 'স্বপ্নদোষ' লিখেছি গতবছর। এটি এখনো কোথাও প্রকাশিত হয়নি।

এছাড়া "কানাই কথা" ও " আগন্তুক" নামে দুটি নাটক লিখেছি মঞ্চের জন্য।


গল্পপাঠ :৩.
যা লিখতে চেয়েছিলেন সেগুলো কি লিখতে পেরেছিলেন?

রুমা মোদক : ৩.
 না,যা লিখতে চেয়েছিলাম তা পারি নি।


গল্পপাঠ : ৪. 
যেভাবে লিখতে চেয়েছিলেন সেভাবে কি লেখাগুলো লিখতে পেরেছেন?

রুমা মোদক : ৪.
'চক্র', এবং 'প্রসংগটি বিব্রতকর' গল্প দুটি যেভাবে লিখতে চেয়েছিলাম সেভাবে না পারলেও এর চেয়ে ভালো লিখতে পারবো না এই অক্ষমতা অনস্বীকার্য মেনে নিয়ে আর লিখবো না। তবে বাকি সবগুলো তে আবার কলম চালাবো।


গল্পপাঠ : ৫. 
সে লেখাগুলো কি নিয়ে কি আপনি তৃপ্ত?

রুমা মোদক : ৫.
না। কোনো লেখা নিয়ে আজ পর্যন্ত তৃপ্ত হতে পারিনি। প্রতিটি লেখা অতৃপ্ত অবস্থায় শেষ করি, শেষ করতে হয় বলে,কারণ এক পর্যায়ে আবিষ্কার করি আমি আর পারছি না।এর মধ্যেই কিছু চূড়ান্ত করি,কিছু থেকে যায় একেবারেই অতৃপ্ত "আবার লিখবো" পর্যায়ে। যেমন গতবছর লেখা ' একটি অতীত ছিল' ও ' চার ফোড়ন' গল্প দুটি আবার লিখবোই।

গল্পপাঠ : ৬. 
২০১৬ সালে আপনার লেখালেখির পরিকল্পনা কি? কি কি লিখবেন বলে মনে করছেন?

রুমা মোদক : ৬.
২০১৬ সালে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো বাস্তবতা প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করলে বেশ কয়েকটি গল্প লেখার পরিকল্পনা আছে। মাথায় নিয়ে ঘুরা ভাবনাগুলোকে কাগজে কলমে প্রাণ দিতে চাই। হরিশংকর জলদাসের 'জলপুত্র ' কে নাট্যরূপ দিচ্ছি।প্রথমেই কাজটা শেষ করবো। এটা পরিকল্পিত। আর বাকিটুকু অপরিকল্পিত। কতোটা কী পারবো জানি না।


গল্পপাঠ : ৭. 
কিভাবে লিখবেন? লেখার জন্য আপনি কি ধরনের প্রস্তুতি নেবেন বলে মনে করছেন?

রুমা মোদক : ৭.
প্রস্তুতি হিসাবে নয়,বেশ কিছু দেশি বিদেশি সাহিত্য পড়ার পরিকল্পনা আছে। এই পড়া অনিবার্য ভাবে কিছু প্রস্তুতি তৈরি করে দেয়।


গল্পপাঠ : ৮. 
আগামী লেখাগুলোর মধ্যে কি কোনো পরিবর্তন আনার কথা ভাবছেন? কী ধরনের পরিবর্তন আনতে বলে মনে করেন?

রুমা মোদক : ৮.
আমার নিজের কাছেই ইদানিং আমার গল্পের ভাষা একটু একঘেয়ে বোধ হচ্ছে। ভাষাভংগিতে পরিবর্তন আনার তাড়া তাড়িত প্রত্যয় বোধ করছি। ভীষন চেষ্টা করবো নিজেকে অতিক্রমের। কারো অনুকরণ অনুসরণ নয়,ভাষার দিক থেকে আমার পূর্বতন গল্পগুলোর ভাষাভংগিমার দিক থেকে নতুন কিছু তৈরির। কতোটুকু পারবো কী পারবো সময় বলবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ