আমার মত ছোটখাটো প্রাইভেট ফার্মে যারা চাকরি করে তাদের বুঝি ভগবত্ গীতা পড়ে কর্মযোগ জানবার দরকার পড়ে না। রোজ সাড়ে ন’ ঘন্টার খাটুনির পর দেড় মাসের মাথায় ব্যাঙ্কে এক মাসের মাইনে এলে তাকে তো নিষ্কাম কর্মই বলা যায়, তাই না? তা না হলে দীর্ঘ দীর্ঘ সপ্তাহ কেটে যায়, এমনিই কেটে যায়, তবু শরীরে কাম ভাব জাগে না কেন? আহ্, আমার কাজকর্ম তবে নির্ঘাৎ নিষ্কাম কর্মই হবে। উপরন্তু দু-মাস আগে একটা ল্যাপটপ কিনে ছিলুম। এখনও তার ই.এম.আই চোকাচ্ছি। ভাবুন একবার!
অথচ, আমার বউ, কে জানে, হয়ত অন্য কিছু ভাবে। সেদিন অফিস থেকে ফিরে সবে স্নান সেরে বেরিয়েছি, দেখি ওমা, ওরা ইতিমধ্যেই আমার ব্যাগ থেকে ল্যাপটপটা বার করে বসে পড়েছে। মাঝে মাঝে বউ কীসব টাইপ করছে। আমার মেয়ের বয়স তিন। তার অক্ষরজ্ঞান নেই। তবে দৃশ্যজ্ঞান আছে। সে তাই স্ক্রীনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। যেন মা ও বেটি ল্যাপটপ থেকে বেরনো উদ্বৃত্ত আলোয় এমনি অভিভূত হয়ে পড়েছে যে, এই সময়ে, মোবাইল বেজে উঠলেও তারা তা খেয়াল করতে পারবে না। এদিকে সত্যিই মোবাইল বাজছিল তখন।
মেয়েই প্রথম কথা বলল। বলল, অত্রিস দেকচি।
তার মা উচ্চারন ঠিক করে দিল, অস্ট্রিচ।
মেয়ে বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকায়, হুম।
আমিও ওইরকম একটা শব্দ করি, হুম। তারপর তার গালে চুটকি মেরে বলি, আমার লাটুস কোনটা? এইটা, না ওইটা?
সে তার মায়ের দিকে কেমন হিংসার চোখে তাকায়। তার মা, মেয়ে কি উত্তর দেবে সেই দিকে সজাগ থাকে। কিন্ত মেয়ে এতদিনে তৈরি হয়ে গেছে। সে বেশ ফাজিল হেসে নিজের দিকেই আঙুল ঘোরায়। আবার বলে, আমি অত্রিসের দিম খাব।
উটপাখির ডিম?
না অত্রিসের।
সেইটা আবার কি?
ওই তো ওইটা।
ততক্ষণে গিন্নি গুগুল করে আমার দিকে সফল খেলোয়াড়ের মত তাকিয়েছে।
মেয়ে বলে, ওই তো।
এটা অস্ট্রিচের ডিম?
হুম তো।
তুমি খাবে?
হুম।
আমাকে দেবে?
হুম।
আর মামমাম’কে?
না না। সে দু’দিকে মাথা নাড়ায়।
আমাকে দেবে না? তার মা বেশ আব্দারের ভঙ্গিতে বলে।
মেয়ে কিন্তু নিজের জায়গায় স্থির। এবারও একই উত্তর, না না।
কেন দেবে না? আমি জিতে যাওয়া পুরুষের মত খোঁচা দিয়ে উত্তর জানতে চাই।
সে বলে, মামমাম আমাকে দেয়নি।
কি দেয়নি?
তোমাতো চস্।
বউ হেসে ফেলে, টম্যাটো সস। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে, দেখেছ কেমন পাজি হচ্ছে। তোমাকে আমার নামে নালিশ জানাচ্ছে।
এই লাটুস।
অমনি সে পোষ্যের মত আমার কোলে এসে বসে।
তার মা বলে, ভালই ট্রেনিং দিয়েছ। সারাদিন আমি ঝক্কি পোহাচ্ছি আর তোমাকে পেলেই আমি ওর পর হয়ে যাই।
মেয়ে আবার বায়না ধরেছে, আব্বু টাইগার!
বাঘ?
না টাইগার।
না বাঘ দেখব।
না টাইগার।
বউ হেসে ফেলে, বেশ তো আমাকে খোঁচা দিচ্ছ, না!
যা বাবা।
আমিও বুঝি মশাই।
কি বোঝ?
সেটা পরে বোঝাব।
তাই?
তাই নয়ত কী! সে আরও কি বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু থেমে গিয়ে বলে, এই, তোমার ফোনে মিসড কল্ রয়েছে।
কে?
সুমন এল.আই.সি. লেখা।
ধুর বাবা। আবার!
কেন কি হলো?
আরে আর বোলো না। আমার ক্লাসমেট ছিল। এখন এল.আই.সি. করছে। কতবার বলছি এখন ওসব চালাতে পারব না তবু ছাড়ে না। যে যার ধান্দায় আছে। খালি বলে মেয়ের নামে কিছু একটা করে রাখতে। কি করে কাটাই বলো তো?
কাটিয়ে দেবে?
ইলেকট্রিকের বিল কমানোর জন্য বারান্দায় জিরো পাওয়ার লাগিয়েছি, আমাদের আবার ইন্স্যুরেন্স।
তবু।
ধুর ছাড় তো। প্রাইভেট সেক্টরে কোন রুলস্ চলে না। একদিন গিয়ে দেখব চাকরিটাই নেই। তখন? কেউ কোন লেবার ল’ মানে এখানে? কাল যদি আমাকে মালিকের আর পছন্দ না হয় তো গেল। কোথাও কথা বলার জায়গা টুকু নেই। জাস্টিস তো দূরের কথা।
কিন্তু...
কি কিন্তু?
কিছু না।
আব্বু... মেয়ে অধৈর্য্য হয়ে উঠেছে।
কি লাটুস?
টাইগার দেখব তো।
টাইগার দেখবে? বাঘ দেখবে না?
না। শুধু টাইগার।
তোমরা বাপ-বেটি টাইগার দেখ। বউ উঠে গিয়ে বলে, আমি মাংসটা গরম করতে দিই।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলি। সে আমাকে পাত্তা দেয় না। আসলে হয়েছে কি, মেয়ে যবে থেকে ভাষার দুনিয়ায় প্রবেশ করেছে, আমরাও তবে থেকে নিজেদের জগৎকে টাটা করতে শুরু করেছি। তাই, সেখানে উটপাখি ভ্যানিশ; তাই, সেখানে টেবিলের উপর জলের গ্লাস রাখা থাকে। মাইনে না পাওয়া এ.টি.এমের পেটরোগা দারোয়ান যেভাবে অন্যের সঞ্চয়কে আগলে রাখে, আমরাও বুঝি সেই ভাবে তাকে আগলে রাখতে চাইছি। যেন আমার মেয়ে আমার মেয়ে নয়। সে অন্য কারও মেয়ে। আমি শুধু তাকে জিম্মায় নিয়েছি। তার সেই অন্য বাবা-মা’রা হারমোনিয়াম বাজিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়, সর্দি হলে টিস্যু পেপারে নাক মোছে, আর হাইওয়েতে দুরন্ত গাড়ি ছুটিয়ে ছমছমে চাষাবাদ দেখে বলে, হাউ অওস্যম!
মেয়ে বলে, আব্বু ও রক্ত মেখেছে?
বাঘ দেখাবার নামে ফেসবুক খুলেছিলাম। আমার মেয়ে এখন সত্যিকারের বাঘের সম্মুখে!
তাকিয়ে দেখি, অভিজিৎ রায় মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। মাথা থ্যাতলানো। অভিজিতের স্ত্রী সারা গায়ে রক্ত মেখে, তবু দাঁড়িয়ে, হাত বাড়িয়ে রয়েছে। যেন কাকে ডেকে চলেছে। হেল্প ছাইছে। কেউ এগিয়ে আসছে না। ছবির ক্যাপশন – অসহায় বাংলাদেশ।
আব্বু ও রক্ত মেখেছে?
কোন উত্তর দিতে পারি না। ল্যাপটপটা সরিয়ে ওর দিকে তাকাই। তাকাতেও পারিনা।
রক্ত?
না রক্ত নয় মা।
তবে?
কি আর বলব? বলি, ওটা টম্যাটো সস।
তোমাতো চস্ ! মেয়ে কেমন চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকায়। ও তোমাতো চস্ মেখেছে কেন?
আমাদের যেমন হোলি হয়, তেমনি স্পেনেও একটা ফেস্টিভাল হয়। ওরা এ ওকে টম্যাটো ছুড়ে ছুড়ে মারে।
এটা স্পেন?
হ্যাঁ, মা, এটা স্পেন।
স্পেন অনেক দূর?
হ্যাঁ, অনেক দূর।
ওরা ফেস্টিভাল করছে?
হ্যাঁ, ফেস্টিভাল করছে।
আমরাও স্পেন যাব?
আর কথা বাড়াই না। ওকে মায়ের কাছে দিয়ে আসি।
এখন সে মায়ের সঙ্গে বকবক করছে। বাসন-কোসনের আওয়াজ আসছে। আর এখানে ল্যাপটপের দিকে তাকালে, ল্যাপটপ থেকে বেরিয়ে আসা আলোয়, মনে হয়, আমরা কেমন উদ্বৃত্তের টানে ভেসে ভেসে চলেছি যেন। এমনিই ভেসে চলেছি। ভেসে চলেছি আর এ-ওর গায়ে রক্তের মত টম্যাটো সস্ ছুড়ে দিয়ে সাংঘাতিক মজার মত ইশারাকে লাইক দিয়ে চলেছি। তাই না?
-----
পড়ুন সাদিক হোসেনের সঙ্গে আলাপচারিতা
অথচ, আমার বউ, কে জানে, হয়ত অন্য কিছু ভাবে। সেদিন অফিস থেকে ফিরে সবে স্নান সেরে বেরিয়েছি, দেখি ওমা, ওরা ইতিমধ্যেই আমার ব্যাগ থেকে ল্যাপটপটা বার করে বসে পড়েছে। মাঝে মাঝে বউ কীসব টাইপ করছে। আমার মেয়ের বয়স তিন। তার অক্ষরজ্ঞান নেই। তবে দৃশ্যজ্ঞান আছে। সে তাই স্ক্রীনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। যেন মা ও বেটি ল্যাপটপ থেকে বেরনো উদ্বৃত্ত আলোয় এমনি অভিভূত হয়ে পড়েছে যে, এই সময়ে, মোবাইল বেজে উঠলেও তারা তা খেয়াল করতে পারবে না। এদিকে সত্যিই মোবাইল বাজছিল তখন।
মেয়েই প্রথম কথা বলল। বলল, অত্রিস দেকচি।
তার মা উচ্চারন ঠিক করে দিল, অস্ট্রিচ।
মেয়ে বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকায়, হুম।
আমিও ওইরকম একটা শব্দ করি, হুম। তারপর তার গালে চুটকি মেরে বলি, আমার লাটুস কোনটা? এইটা, না ওইটা?
সে তার মায়ের দিকে কেমন হিংসার চোখে তাকায়। তার মা, মেয়ে কি উত্তর দেবে সেই দিকে সজাগ থাকে। কিন্ত মেয়ে এতদিনে তৈরি হয়ে গেছে। সে বেশ ফাজিল হেসে নিজের দিকেই আঙুল ঘোরায়। আবার বলে, আমি অত্রিসের দিম খাব।
উটপাখির ডিম?
না অত্রিসের।
সেইটা আবার কি?
ওই তো ওইটা।
ততক্ষণে গিন্নি গুগুল করে আমার দিকে সফল খেলোয়াড়ের মত তাকিয়েছে।
মেয়ে বলে, ওই তো।
এটা অস্ট্রিচের ডিম?
হুম তো।
তুমি খাবে?
হুম।
আমাকে দেবে?
হুম।
আর মামমাম’কে?
না না। সে দু’দিকে মাথা নাড়ায়।
আমাকে দেবে না? তার মা বেশ আব্দারের ভঙ্গিতে বলে।
মেয়ে কিন্তু নিজের জায়গায় স্থির। এবারও একই উত্তর, না না।
কেন দেবে না? আমি জিতে যাওয়া পুরুষের মত খোঁচা দিয়ে উত্তর জানতে চাই।
সে বলে, মামমাম আমাকে দেয়নি।
কি দেয়নি?
তোমাতো চস্।
বউ হেসে ফেলে, টম্যাটো সস। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে, দেখেছ কেমন পাজি হচ্ছে। তোমাকে আমার নামে নালিশ জানাচ্ছে।
এই লাটুস।
অমনি সে পোষ্যের মত আমার কোলে এসে বসে।
তার মা বলে, ভালই ট্রেনিং দিয়েছ। সারাদিন আমি ঝক্কি পোহাচ্ছি আর তোমাকে পেলেই আমি ওর পর হয়ে যাই।
মেয়ে আবার বায়না ধরেছে, আব্বু টাইগার!
বাঘ?
না টাইগার।
না বাঘ দেখব।
না টাইগার।
বউ হেসে ফেলে, বেশ তো আমাকে খোঁচা দিচ্ছ, না!
যা বাবা।
আমিও বুঝি মশাই।
কি বোঝ?
সেটা পরে বোঝাব।
তাই?
তাই নয়ত কী! সে আরও কি বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু থেমে গিয়ে বলে, এই, তোমার ফোনে মিসড কল্ রয়েছে।
কে?
সুমন এল.আই.সি. লেখা।
ধুর বাবা। আবার!
কেন কি হলো?
আরে আর বোলো না। আমার ক্লাসমেট ছিল। এখন এল.আই.সি. করছে। কতবার বলছি এখন ওসব চালাতে পারব না তবু ছাড়ে না। যে যার ধান্দায় আছে। খালি বলে মেয়ের নামে কিছু একটা করে রাখতে। কি করে কাটাই বলো তো?
কাটিয়ে দেবে?
ইলেকট্রিকের বিল কমানোর জন্য বারান্দায় জিরো পাওয়ার লাগিয়েছি, আমাদের আবার ইন্স্যুরেন্স।
তবু।
ধুর ছাড় তো। প্রাইভেট সেক্টরে কোন রুলস্ চলে না। একদিন গিয়ে দেখব চাকরিটাই নেই। তখন? কেউ কোন লেবার ল’ মানে এখানে? কাল যদি আমাকে মালিকের আর পছন্দ না হয় তো গেল। কোথাও কথা বলার জায়গা টুকু নেই। জাস্টিস তো দূরের কথা।
কিন্তু...
কি কিন্তু?
কিছু না।
আব্বু... মেয়ে অধৈর্য্য হয়ে উঠেছে।
কি লাটুস?
টাইগার দেখব তো।
টাইগার দেখবে? বাঘ দেখবে না?
না। শুধু টাইগার।
তোমরা বাপ-বেটি টাইগার দেখ। বউ উঠে গিয়ে বলে, আমি মাংসটা গরম করতে দিই।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলি। সে আমাকে পাত্তা দেয় না। আসলে হয়েছে কি, মেয়ে যবে থেকে ভাষার দুনিয়ায় প্রবেশ করেছে, আমরাও তবে থেকে নিজেদের জগৎকে টাটা করতে শুরু করেছি। তাই, সেখানে উটপাখি ভ্যানিশ; তাই, সেখানে টেবিলের উপর জলের গ্লাস রাখা থাকে। মাইনে না পাওয়া এ.টি.এমের পেটরোগা দারোয়ান যেভাবে অন্যের সঞ্চয়কে আগলে রাখে, আমরাও বুঝি সেই ভাবে তাকে আগলে রাখতে চাইছি। যেন আমার মেয়ে আমার মেয়ে নয়। সে অন্য কারও মেয়ে। আমি শুধু তাকে জিম্মায় নিয়েছি। তার সেই অন্য বাবা-মা’রা হারমোনিয়াম বাজিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়, সর্দি হলে টিস্যু পেপারে নাক মোছে, আর হাইওয়েতে দুরন্ত গাড়ি ছুটিয়ে ছমছমে চাষাবাদ দেখে বলে, হাউ অওস্যম!
মেয়ে বলে, আব্বু ও রক্ত মেখেছে?
বাঘ দেখাবার নামে ফেসবুক খুলেছিলাম। আমার মেয়ে এখন সত্যিকারের বাঘের সম্মুখে!
তাকিয়ে দেখি, অভিজিৎ রায় মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। মাথা থ্যাতলানো। অভিজিতের স্ত্রী সারা গায়ে রক্ত মেখে, তবু দাঁড়িয়ে, হাত বাড়িয়ে রয়েছে। যেন কাকে ডেকে চলেছে। হেল্প ছাইছে। কেউ এগিয়ে আসছে না। ছবির ক্যাপশন – অসহায় বাংলাদেশ।
আব্বু ও রক্ত মেখেছে?
কোন উত্তর দিতে পারি না। ল্যাপটপটা সরিয়ে ওর দিকে তাকাই। তাকাতেও পারিনা।
রক্ত?
না রক্ত নয় মা।
তবে?
কি আর বলব? বলি, ওটা টম্যাটো সস।
তোমাতো চস্ ! মেয়ে কেমন চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকায়। ও তোমাতো চস্ মেখেছে কেন?
আমাদের যেমন হোলি হয়, তেমনি স্পেনেও একটা ফেস্টিভাল হয়। ওরা এ ওকে টম্যাটো ছুড়ে ছুড়ে মারে।
এটা স্পেন?
হ্যাঁ, মা, এটা স্পেন।
স্পেন অনেক দূর?
হ্যাঁ, অনেক দূর।
ওরা ফেস্টিভাল করছে?
হ্যাঁ, ফেস্টিভাল করছে।
আমরাও স্পেন যাব?
আর কথা বাড়াই না। ওকে মায়ের কাছে দিয়ে আসি।
এখন সে মায়ের সঙ্গে বকবক করছে। বাসন-কোসনের আওয়াজ আসছে। আর এখানে ল্যাপটপের দিকে তাকালে, ল্যাপটপ থেকে বেরিয়ে আসা আলোয়, মনে হয়, আমরা কেমন উদ্বৃত্তের টানে ভেসে ভেসে চলেছি যেন। এমনিই ভেসে চলেছি। ভেসে চলেছি আর এ-ওর গায়ে রক্তের মত টম্যাটো সস্ ছুড়ে দিয়ে সাংঘাতিক মজার মত ইশারাকে লাইক দিয়ে চলেছি। তাই না?
-----
পড়ুন সাদিক হোসেনের সঙ্গে আলাপচারিতা
11 মন্তব্যসমূহ
লেখো। আরো লেখো।
উত্তরমুছুনঅপূর্ব। এবার বইমেলায় দেখা করতে হচ্ছে। লাটুস কেও দেখব। :)
উত্তরমুছুনমজ্জা শুদ্ধু নাড়িয়ে দিলেন। কাঁপছি।
উত্তরমুছুনসলিড দাদা।
উত্তরমুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনRupankar Sarkar
উত্তরমুছুন6 hrs ·
সাদিক হোসেনের গল্প
বেশ কিছুদিন আগে একটা অনুষ্ঠানে গেছিলাম। সেখানে বন্ধু সামরান হুদাকে সম্বর্ধনা জানানো হচ্ছিল তার ‘অতঃপর অন্তঃপুরে’ বইয়ের জন্য। তা সেখানে গিয়ে দেখি আর একটি ছেলে, আমি ছেলেই বলি, সে বয়সে যুবক, যদিও অকালে চুল পেকেছে। ভাবলাম একবার জিজ্ঞেস করি বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী কিনা। ওই দল করলেই চুল পেকে যায়। সে দলের অল্পবয়সীদেরও চুল পাকা। - যাকগে তা দেখি সেই ছেলেটিকেও সম্বর্ধনা জানানো হচ্ছে, নাম সাদিক হোসেন। একটি উপন্যাসের জন্য সে এই সম্মান পাচ্ছে। সে বলল, এই পশ্চিম বাঙলায় মুসলমানদের জীবনযাত্রা নিয়ে তো তেমন কিছু লেখা হয়না, তাই সেদিকটা তুলে ধরতে চায়।
খুবই উত্তম প্রয়াস। যদিও গৌরকিশোর ঘোষ(সম্ভবত) ‘প্রেম নেই’ বলে একটা উপন্যাস লিখেছিলেন, প্রায় পুরোটাই মুসলমান সমাজ নিয়ে, এবং দরিদ্র মুসলমান কেন্দ্রিক। অনেক গবেষণা করেই লিখেছিলেন কেননা অনেক প্রথা প্রকরণ ইত্যাদি অমুসলমানদের পক্ষে জানাও হয়ে ওঠেনা। যাই হোক, সেই সমাজের মধ্যে বাস করে, এমন একজন লিখলে নিশ্চিতভাবেই তা অনেক মনোগ্রাহী হবে। যাঁরা পড়বেন, সাহিত্যরস ছাড়াও তাঁরা জানতে পারবেন অনেক কিছু।
কিন্তু আমার আগ্রহ জেগেছিল তার একটি কথায়। ছেলেটি বড়ই লাজুক, খুব বেশি কথা সে বলতে পারেনি পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে। তবে তাকে যখন কোনও এক প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক জিজ্ঞেস করেন, সে গল্পের প্লট তৈরী করে কীভাবে? সে যা বলল, তাতে চমকে উঠেছিলাম। আরে! এ তো আমার কথা বলছে। ছেলেটি বলল, সে কোনও প্লট করে গল্প লেখেনা। হঠাৎ কোনও একটি নাম তার কাছে চলে আসে। সে যেন দেখতে পায় তাকে। তারপর ঘটনাগুলো আসতে থাকে। সে শুধু লিখে যায়।
আমি ভাবলাম, এতো হুবহু আমার কথা। আমিও তো গল্প ছবির মত দেখতে পাই। চরিত্রদের নাম ধামও আমি পেয়ে যাই সেখান থেকেই। আমি শুধু কেরানির কাজ করে যাই। মাছি মারো আর আটকাও। আমার মত আরও লোক আছে তাহলে?
জেনেগেন হয়ত ভাবছেন আমি সাদিকের থেকে টুকে মেরে দিলাম আইডিয়াটা। তবে আমি অনেক কিছুই প্রমাণ করতে না পারলেও এটা পারব। কারন কুলদা রায়ের ‘গল্পপাঠ’ বলে একটা অন্তর্জাল পত্রিকায় এক সময়ে আমার লেখা বেরোত। সেখানেই এক ইন্টারভিউয়ে আমি এই কথা বলেছিলাম। এবং ভাগ্যক্রমে তা সাদিকের বক্তৃতার অনেক আগে। ওখানে সার্চ করলে এখনো তা পাওয়া যায় দেখেছি। আমার বক্তব্য হল, ঠিক একই উপায়ে লেখা তৈরী করেন, এমন আর একজন সাহিত্যিকও পাওয়া গেল। ‘আমরা’ দলে ভারি হলাম।
কুলদাবাবুর এই পত্রিকায় এক সময়ে আমার লেখাও বেরোত। প্রতি মাসেই থাকত। উনিই চাইতেন লেখা। আমিও মেল করে দিতাম। একবার উনি আমাকে মেসেজ পাঠালেন, এখন থেকে আমি আর চাইবনা। আপনি প্রত্যেক বাংলা মাসের প্রথম সপ্তাহে একটি করে গল্প এই মেল অ্যাড্রেসে পাঠিয়ে দেবেন। আমি পড়লাম মুশকিলে। বাংলা মাস তো একদমই খেয়াল থাকেনা। সত্যি বলতে কি, অবসর নেবার পর থেকে ইংরিজি মাসই হিসেবে থাকেনা। কারণ আমি পেনসন আনতেও ব্যাঙ্কে যাইনা। প্রয়োজন ভিত্তিক টাকা তুলি মাঝে মাঝে। বহুদিন ব্যাঙ্কে গিয়ে ফিরে এসেছি। আমার ছুটির দিনও মনে থাকেনা।
বাংলা মাস খেয়াল থাকেনা বলে আবার কেউ যেন আমাকে ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের কবিতার “জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসেনা” ভাববেন না যেন। বাংলা আমি ইংরিজির চেয়ে ভাল লিখি। কিন্তু বাংলা মাস নিয়ে একটু মানে ইয়ে। তা সেই থেকেই ওখানে আর গল্প পাঠানো হয়না।
তা সেই কুলদাবাবুর ‘গল্পপাঠ’ পত্রিকার একটা নোটিফিকেশনেই আজ দেখলাম সাদিক হোসেনের একটি গল্প, নাম ‘টম্যাটো সস’। দেখেই চট করে পড়ে ফেললাম। আমি অনেকবার অনেক জায়গায় বলেছি, আমি একেবারেই সাহিত্যবিমুখ। বড় বড় সাহত্যিকদের লেখাপত্তর পড়াই হয়না আমার। অনেকেই যখন বিখ্যাত মানুষদের লেখার কথা উল্লেখ করেন, আমি ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকি। আমি বড়ই অলস প্রকৃতির মানুষ, অন্তত পড়াশোনার ব্যাপারে। সে আজ নয়, সেই ইস্কুল থেকেই। কিন্তু চেনা মানুষ লিখলে আমি হামলে পড়ে দেখে নিই লেখাটা। সেই জন্যই পড়লাম।
পড়ে দেখলাম, খুবই অল্প শব্দসংখ্যার গল্প(?)। প্রথাগতভাবে একে ‘গল্প’ বলতে কিছু অসুবিধে আছে। আবার আজকাল যে নতুন কীসব ‘অনুগল্প’ বেরিয়েছে, এটি তাও নয়। কিছুটা ফেসবুকে আমরা যেমন স্টেটাসের মাধ্যমে কিছু ‘মেসেজ’ দেওয়ার চেষ্টা করি, এ তেমনই। তা ছাড়া, ওই যে আগে লিখেছি, চরিত্র বা গল্প ‘চলে আসে’, এ তাও নয়। এটি বাস্তব জীবনেরই ‘স্টেটাস’। কিন্তু লেখাটির শেষ পরিচ্ছেদে গিয়ে পাঠক ধাক্কা খাবেন। এমন একটি ছবি সেখানে তুলে ধরেছেন লেখক, যা পরতে পরতে ভাঙলে অনেক গভীর একটি ইঙ্গিত পাওয়া যাবে। সেই কারণেই এটি ‘গল্প’। সে বার্তা বা ইঙ্গিত উদ্ধার করতে যাঁরা পারলেন, তাঁরা ছাড়া অন্যরাও রসাস্বাদনে বিফল হবেন না। একে অসাধারণ বললেও কম বলা হবে।
ইচ্ছুক ফেসবুকাররা পড়ে দেখতে পারেন ‘গল্পপাঠ’ সাইটে গিয়ে।
৩১.০৫.২০১৬
Mahmud Hasan Parves ভাল লেগেছে। মর্মভেদী। তবে বাংলাদেশে ব্লগার হত্যার মতো এমন গল্প হওয়ার সম্ভাবনা নেই কেন? অবশ্যই আছে।
উত্তরমুছুন--------
Sadique Hossain অনেক ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে।
-------
Iqbal Hasan সাদামাটা অথচ আখেরে সাদামাটা নয় । চমৎকার লেখা ।
---------
Humayun Kabir দারুণ সাক্ষাৎকার।
-----------
Dipak Chakraborty একটি ভাল কথোপকথন।
----------
Papia Bhattacharya চমৎকার লেখা
------------
Sujoy Chakraborty Darun likhechhen....
-----------
Bipul Writes খুব ভালো লেখা
----------
Monika Chakraborty Porbo.
----------
Maya Rani কষ্টে ভরা ভাল লাগা।
--------
Sayeda Hasina মাথাটা ঝিম ঝিম করছে।
----------
মোয়াজ্জেম হোসেন
গল্পটা অসাধারণ !
---------
Shukla Iftekhar Rupon,valo ekta lekha porali.
--------
কিছু বলার মতো অবস্থা থাকলোনা ।
উত্তরমুছুনভারি সুন্দর গল্পটা, অনেকটা জাপানী ছবির মতন তুলি দিয়ে আঁকা/লেখা।
উত্তরমুছুনসাদিক হোসেনের "রিফিউজি ক্যাম্প" পড়ুন।
উত্তরমুছুনগল্পপাঠের লেখক সূচিতে গিয়ে পেয়ে যাবেন কিংবা শিলাদিত্য পত্রিকার গত দু একটি সংখ্যা আগে বেরিয়েছিলো।
সাদিক হোসেনের ক্ষমতা টের পাবেন।
আসলেই তো টমেটো সস..
উত্তরমুছুন