অনামিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রদর্শনের প্রগলভতায় বিশ্ব বাংলায় আশ্বিন আসে। ঈদ, দেবী-পুজা, সব আসে । ইন্টারনেটে ফটোশপ ও ফোটো শপবিহীন উল্লাস আসে। ঢাকা শহরের রাস্তায় রক্ত-নালীর পোস্ট আসে। ফোটো-শপিত কিনা এই আরোপ আসে। তার ইন্টারনেট ও মিডিয়া সুলভ হ্যরাস্মেন্ট আসে। হ্যারাস্মেন্টের পর দুর্গা পুজো আসে। গো-রক্ষক গন ছাগ বলি দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এক্সোটিক নানা মন্দিরে ছাগ ও মোষ বলির রক্ত-নালী ভাসে। ঝিলাম ও পদ্মার ধার ধরে ফেসবুকে ছুঁড়ে দেওয়া একের ও আরেকের গন্ধ-নালা-উদ্গীরন ও বিষাক্ত কারবাঙ্কল আসে। ইনবক্সে থ্রেট আসে। কাছে পেলে হত্যা করার ইচ্ছা আসে।
এবছর কাশ্মীরের লাইন অফ কন্ট্রোলে হত্যা এসেছে। কন্ট্রোলের ভেতরে এসেছে আরও আগে। হত্যা যদিও হ্যরাস্মেন্টের আওতা থেকে মুক্ত এক মনুষ্যত্ব বিহীন নেবুলার বিষয়। তাও। সাইবার পৃথিবীতে অনেকে কিসিমের জনমানুষ থাকেন। ধর্মের সরাইখানায় আশ্রয় নেওয়া হিপক্রিটরা থাকেন। ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট থাকেন । পারভারসনের ব্যাকটেরিয়ারা থাকেন। ধর্মীয় ছাতা-ধারী, জাতীয়তাবাদী, ও সেক্সিস্ট যারা পাড়ায়, কর্ম-ক্ষেত্রে, রাস্তার মোড়ে, ট্যাক্সিতে, বাসে, বৈঠক খানায়, এরোপ্লেনে হ্যারাসমেন্ট ঘটিয়ে থাকেন, তারা সবাই থাকেন। সাইবার জগতে হুলিগানি চালান।
পিউরিটান মতাদর্শের ভূত এই হুলিগানির কাজটি করে থাকেন চিরকাল। আর তার সাইড এফেক্ট দোসর হিসেবে কাজ করতে আসেন আগ্রাসন। মাইক্রো থেকে মেগা। ফেসবুক থেকে দেশমাতা, ব্যক্তিগত কেচ্ছা থেকে প্রাণহানির ফতোয়া। অর্থাৎ দারুণ এক সেন্সরশিপের অভয়ারণ্য ঘোষণা।
আর হ্যারাস্মেন্ট ও ট্রল মানব সভ্যতায়তো সেই দিন থেকেই আছে, যেদিন থেকে তারা দল-বদ্ধ হয়ে বাঁচার কথা ভেবে ফেলেছে। মানুষের হৃদয়ে পরস্পরের জন্যে ঘৃণার মঞ্চটি বরাবরই বেশ পাকা। টলারেন্স ও ফ্রি-উইলই তাই মহা-জগতের সবচে খতরনাক বিষয়।
সিরিয়ার একটি অভিবাসী পরিবারের গল্প বলা যাক। ধরা যাক, হিজাব পড়া সেই মেয়ে, তার নাম- বানা। সিরিয়ায় গায়েব হয়ে যাওয়া কোন শহরের রাস্তায় বাস ছিল সেই পরিবারের। ধরা যাক মাত্র এক প্রজন্ম আগে। আরও ধরা যাক, সেই মেয়েকে আমি চিনি। তার চুল ও চোখের রং জানি।
নাইন্থ গ্রেডে উঠতেই বানা বায়না ধরলেন তিনি হিজাব পরবেন। 'কি আশ্চর্য'- ভাবলেন তার বাবা-মা। পরিবার থেকে কোন চাপ নেই হিজাব পড়ার, তার মাও হিজাব পরেননা, ধর্মের অনুশাসন মুক্ত সেই পরিবারে হিজাব পড়ার শখ কোত্থেকে এলো তারা তা বুঝতে পারেননা। কিন্তু বানা'র উপরোধ- সে তো হিজাব পরবে তার ইচ্ছে বলেই, কেউ তো জোর করছেনা।
' মুক্তমনা বলেই যুক্তির খাতিরে মেনে নিলেন সেই দাবী।'
বানা বলে ওঠে হাসি হাসি চোখে।
হিজাব পরে স্কুলে গেলাম প্রথমবার। অন্য বন্ধুরা মিশ্র প্রিতিক্রিয়া দেখালেও, প্রিয় বন্ধুরা সমর্থন করলো। শিক্ষক তার স্বভাব সুলভ পলিটিকালি কারেক্ট থাকলেন। গোল পাকলো, যখন আমি ইশকুলের নতুন তৈরি হওয়া ব্যান্ডে গান গাওয়ার জন্যে অডিশন দিতে গেলাম। সেখানে অন্য ক্লাসের ছেলে মেয়েরাও ছিল। অডিশনে আমি 'ইম্যাজিন' গেয়েছিলাম। এতোই ভালো গেয়েছিলাম যে আমাকে বাদ দেওয়ার সব কলা কৌশল ব্যর্থ হয়ে গেলো। কিন্তু ক্যাচ হোল, অডিশনে পাস করলেও আমাকে আর আমাকে অনুষ্ঠানে গান গাইতে ডাকা হলনা।
কেন ?
জেনে বুঝেও, জানতে চাই, আমি।
হিজাব পরা একটি মেয়ে ব্যান্ডের প্রতিবাদী প্রগতিশীল ইমেজে ব্যাঘাত করতে পারে। অন্য পরিবারের কাছে সেটা একটা থ্রেট ও বটে, অনেক বাবা-মাই হিজাব পড়া মেয়ের সাথে মিশতে দেবেনা।
বানা বলে চলেন…
আমি বললাম..আমার শেষ নাম মুসলিম, আমার মাতৃভাষা ইংলিশ। আমার মা ইংরেজিতে কথা বলেন। আমার আব্বাও। আমি জোয়ান বায়েজ গাই। আমি মসজিদে যাইনা। তাও...
এই এক টুকরো কাপড় তোমার সম্পর্কে কল্পনার রাজ্য তৈরি করেছে
ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলি আমি।
এরপর নানান বক্রোক্তি ও মাইক্রো আগ্রাসনের পর, ঝক্কি ঝামেলা পোয়াতে নারাজ তার বাবা-মা তাকে উপদেশ দিলেন, যেভাবে আমেরিকানরা প্রায়ই বলে থাকেন- what’s good for the goose is not good for the gander! অর্থাৎ- বাড়তি ঝামেলা আমন্ত্রণ কোরোনা। বহু বছরের সংগ্রামের পর তাদের গ্রীন-কার্ড পাওয়ার সময় হয়েছে তখন।
'শুধু তোমার না সবার ভালোর জন্যেই হয় তোমার হিজাব খোলা উচিৎ নয়তো ব্যান্ডে না গান গাওয়া উচিত, পড়ায় মন দাও। হিজাব নিয়ে সংঘর্ষ জীবনে আরও আসবে, এখন তার সময় নয়'। সংক্ষেপে বলা যাক, শেষমেশ ব্যান্ডে গান গাওয়ার ইচ্ছে থেকে অতএব সরে আসতে হয়েছিল তাকে।
'বছর শেষে, আমার ইংরিজির টিচার একদিন আমাদের এক অ্যাসাইনমেন্ট দিলেন', বলে চলেন বানা- 'সেটা ছিল ক্লাসের প্রত্যেক সহপাঠীকে কে দু'এক কথায় বর্ণনা করা। নিঃসঙ্কোচে।'
আমি মজা করে আমার টিচারকেই জিগ্যেস করে বসলাম ঃ আপনি আমায় কি ভাবেন ? দু'এক কথায় বলতে পারেন ?
আমার শিক্ষক বললেন ঃ সত্যি বলতে কি আমি তোমায় প্রথম দিন ক্লাসে হিজাব পড়ে ঢুকতে দেখে ভয় পেয়েছিলাম। ভেবেইছিলাম, এই মেয়ে ঝঞ্ঝাট ডেকে আনবে।
'একজন শিক্ষক যদি ভয় পেতে পারেন, তবে ছাত্ররা কি ভেবেছিলেন, ভাব তবেই' । চুলের বান্ডানা ঠিক করতে করতে বলেন বানা।
আমি ভাবি- তার মানে, এখানে হিজাব পড়তে বাধ্য হওয়া না, দ্বিতীয় পরিসরে তবে আরেক 'বাধ্যতা' কাজ করছে - হিজাব পড়া একজন টিনেজার, যার ইমেজের একমাত্র ফর্মুলা সমীকরণ- এ ইক্যুয়ালস টু সি ; সি ইক্যুয়ালস টু বি; অতএব, এ ইক্যুয়ালস টু বি- এই সমীকরণ মেনে। হিজাব মানে মুসলমান, মুসলমান মানে টেররিস্ট ও ঝঞ্ঝাটের সহজ ও সরল সমীকরণে।
পোস্ট নাইন-ইলেভেন আমেরিকায় এক হেমন্তের বিকেলে বানা আমার কাছে স্বগতোক্তি করেন ঃ কনফিউশন আমি ছোট থেকেই সামলে নিতে পারি, কিন্তু ভয়ের ব্যাপারটা তখনো তেমন বুঝিনি। আমায় দেখে আমার শিক্ষক ভীত কেন হবেন, এর উত্তর তখনো ছিল অজানা।
বানা'র কথা এক পৃথিবী উল্টো দিকে থাকা 'প্রগাশ' কে মনে পড়াল আমায়। প্রগাশ ব্যান্ড। কাশ্মীরের একদল ইশকুল পড়ুয়া মেয়ের দল ২০১২ সালে খুলে ফেললেন এক ইংরেজি গানের ব্যান্ড। মাথায় হিজাব পড়া সেই মেয়েদের দল শুরু তেই পেয়েও গেলেন তুমুল প্রচার ও জনপ্রিয়তা। দুখি-রুখি কাশ্মীরী প্রলেতারিয়েৎ ফুলওয়ালী মেয়েরা তাতে উপস্থিত থাকলেন না ঠিকই, থাকার কথাও নয়, কিন্তু প্রতিদিন রাষ্ট্র-তন্ত্রের ট্যাংকার টেনে চলা রাজপথের ইমেজ কে টেনে-ছিঁড়ে তাতে কল্পনার একটু ডানা জোড়া হোল। যেহেতু ইংরেজি, ফলে আন্তর্জাতিকও ।
আমেরিকান গীতিকারদের / গায়েনদের অনুপ্রেরণায় ইংরেজি গান বেঁধে-গেয়ে ভূস্বর্গ মাতাবার মিনি আন্তর্জাতিক ড্রিমের পালক সুখ তখন সেই মেয়ে-দলের চোখে। গানের দলের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে, তখনই আপত্তি উঠল। রেপ, প্রাণ-নাশের থ্রেট, শেষে হুমকি এলো খোদ কাশ্মীরের গ্র্যান্ড মুফতি'র। সহজ তর্জমায়- ফতোয়া । সেই ফতোয়ার মোকাবিলা করার জন্যে ইশকুলে-পড়া বালিকাদের পরিবার প্রগাশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তা বন্ধও করালেন।
প্রগাশ বা বানা'র পরিবারের ব্যান্ডের ঘটনারা অবিছিন্ন।
প্রগাশে'র ফতোয়া ছিল মেয়েদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। নারীর শিল্পের অনুশীলনের বিরুদ্ধে। এরা পুসি-রায়ট করেননি। ভগবান যীশুকে, রামলালা বা নবী কে নিয়ে স্যাটাইয়ার করেননি। সঙ্গীত ও শিল্প যাতে তার মুক্তির আনন্দ-উৎস না হয়ে উঠেতে পারে, ফতোয়া তার বিরুদ্ধে। অন্দরের গণ্ডীর বাইরে পাবলিক স্পেসের দখল নিতে গেলে পিতৃতন্ত্রের ব্যাল্যান্স নষ্ট হয়। তাই গাওয়া মানা। কোনো ধর্মের কোনো পয়গম্বর, কোনো অভন্ডানন্দ, কোনো সুসমাচার কোথায় কবে এই পুলিশি বন্দবস্ত করে গেছেন, তা ২০১২তে বসে তামিল কেন করতে হবে, এই প্রশ্ন তুলে কিন্তু প্রগাশ অনড় হতে পারলেননা। ব্যান্ডের সদস্যরা তাদের পরিবারের চাপের মুখে পড়ে দল ভেঙ্গে দিলেন। শেষ পর্যন্ত তাদের যা মোকাবিলা করতে হোল তা- ভয়। আর এই ভয় দুই দিকেই। যারা তা প্রয়োগ করছেন ও যারা তা মেনে নিচ্ছেন। আর আছে তৃতীয় পরিসর- কাল্পনিক ভয়, বাকি জনমত কে ঝামেলাকারীদের মতই অকারণ সেন্সরবাদী ভাবার কাল্পনিক ভয়। ঝামেলা, প্রতিবাদ না করে অন্যের শান্তি বিঘ্নিত না করার এক কাল্পনিক মঙ্গল কাব্যের চাপ। সমাজবিদ ফিলিপ ডেভিসনের তত্ব থার্ড পারসন এফেক্ট থেকে ধারণা তৈরি করে এটিকে তৃতীয় পরিসর এফেক্ট বলতে চাইছি। এই চাপকে অকারণ বৃহৎ কল্পনা করে সেন্সরশিপের ব্যাঙ্ক-অ্যাকাউন্ট কে মজবুত করা হয়। বানা'র পরিবারের মতই এখানে প্রগাশ-সদস্যদের তাড়া করেছিল এই ভয়। এক ঃ কল্পনার অনুশীলন করা ভয়ের। কারণ তা মানুষ কে স্মরণ করায় যে- যেকোনো কিছুই বাতিল করা যায়, কিছুই স্থাণু নয়। চির প্রয়োজনীয় নয়। দুই ঃ একঘরে হওয়ার, প্রভাবশালীদের সাথে পাল্লা না করতে পারার ভয়। তিন ঃ তৃতীয় এফেক্ট অনুযায়ী সমস্ত জনমতকে প্রো-সেন্সর ভাবার ভয়।
বারট্রান্ড রাসেলের জবানী মনে পড়তেই পারে ঃ Fear is the basis of religious dogma , এখানে যারা চাপাচ্ছেন, আর যাদের ওপর চাপানো হচ্ছে, ভয় দু তরফেই। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, অল্প সংখ্যার কিছু মানুষ, ইংরেজি নাম প্রিভিলেজড, এতো বেশী সংখ্যার মানুষের ওপর তাদের নিজেদের অস্তিত্ব হারাবার ভয় চাপিয়ে দিয়ে পাল্টা ভয়ের বৃত্ত তৈরি করতে পারলেন কেমন করে ? এখানেই তৃতীয় এফেক্ট আবারো। আর তার সহজলভ্য টুল- সেন্সরশিপ। অল্প সংখ্যক মানুষের তৈরি প্রোপ্যাগান্ডা দিয়ে কিছু যুক্তি খুঁজতে চাওয়া মানুষকে দাবিয়ে দিতে ব্যবহার করা হবে তা । চিরাচরিত এর প্রয়োগ। কারণ অযুক্তি ভয় করে বাস্তব কে মোকাবিলা করার। আর যাবতীয় সেন্সরশিপের ভিতর ধর্মই গায়ত্রী, বিনয় মজুমদারের ধাঁচা মনে এসে যাচ্ছে। যদিও সেন্সরশিপ এক চিরকালীন বহুল আলোচিত বিষয়, যদিও তার পরিধি মহাজাগতিক হয়ে দাঁড়িয়েছে, তবুও সমস্ত রকম সেন্সরশিপের মধ্যে সবচেশক্তিশালী সম্ভবত সেলফ-সেন্সরশিপ- নিজেকে সেন্সর করা। সেন্সর এর অস্তিত্বকে প্রশ্ন না করতে পারার অক্ষমতা। ভারতের মহা-আখ্যানে তাই সম্ভবত কোন আন্ডার-গ্রাউন্ড শিল্প আন্দোলনের সম্ভাবনা দেখা দেয় না। রাষ্ট্র কি করবে, প্রতিষ্ঠান কি করবে, এ কথা ভাবার আগে বা পরে যা সবচে ইন্সট্রুমেন্টাল হয়ে ওঠে পিছিয়ে আসার ক্ষেত্রে, ভয় পাওয়ার ক্ষেত্রে, তা হোল- 'আমার পবিবার কে কি ভোগ করতে হবে'। রাষ্ট্র এই দুর্বলতা জানেন।
তাই প্রো-সেন্সরশিপকে এখানে আলোচিত হতে হবে এক মানসিক অবস্থান হিসেবে, এক ত্রি-পক্ষ সহমতের সহাবস্থান হিসেবে।
এখান থেকেই তাই তৃতীয় এফেক্টের ধারণা থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রগাশের ক্ষেত্রে মুফতি'র ফতোয়ার পর
সেই চাপের কাছে ভিক্টিম প্রো-সেন্সরশিপ হয়ে পড়ছেন। অর্থাৎ ভিক্টিম সেই ত্রাস সৃষ্টিকারীদের কোলাবোরেটরে পরিণত হচ্ছেন, যেখানে ভিক্টিম, ত্রাস সৃষ্টিকারীদের ও তৃতীয় চাপ সবাই প্রো-সেন্সরশিপের জালে আটকা পড়ছেন। বানা ও প্রগাশের উৎসে ছিল যে ফ্রি-উইল, তার সাথে সাথে তফাৎ থাকলেও একই ভাবে আমাদের মনে পড়ে যাবে অতি পরিচিত কয়েকটি সেন্সরের লড়াইকেও। ক্রিস ওফিলস এর ভার্জিন মারী'কে, রাশিয়ার পুসি-রায়টকে, হুসেইনের আঁকা সরস্বতীকে ও স্যাটানিক ভারসাস এর বিতর্ক কে।
ধর্ম নিয়ে মুখ খোলার সবচে সমস্যার দিক হোল, এক ধর্মকে সমালোচনা করলে, প্রশ্নাতীত-ভাবে ধরে নেওয়া হয় যে সেই ধর্ম পাল্টা অন্য ধর্মকে যুদ্ধ করতে চিঠি পাঠাচ্ছে। কারণ স্ট্যাটিস্টিক্স বলছে, অতি স্বাভাবিক ভাবেই বলছে-
ধর্মের অতি রক্ষণশীল আচরণের জন্যে, ধর্মের রক্ষকদের হাতেই মানুষ মারা যায় বেশী। এই নয় যারা ধর্মকে আক্রমণ করছেন যুক্তি দিয়ে, তারা মানুষ মারতে উদ্যত হচ্ছেন।
শিল্পের উত্তর, তা যতই অবমাননাকর হোক মতভেদে, তা কিছুতেই হত্যা বা ভায়োলেন্স হতে পারেনা। আর দেশ-সুদ্ধু সবাই প্সেন্সরবাদী- তৃতীয় এফেক্টের এই কাল্পনিক ভয় আক্রান্ত -শিল্পী / ব্যক্তি / দল কে দুর্বল করে তোলে। প্রশ্ন করার মুখটিকেই ক্রমশ বুজিয়ে ফেলে এই তৃতীয় এফেক্ট। অথচ ফ্রি-উইলের ইচ্ছা আমাদের সার্বিক ভাবে ছুঁয়ে থাকে সর্বত্র। আইন, রাজনীতি, ধর্ম, পাবলিক পলিসি , ব্যক্তিগত সম্পর্ক, লজ্জা, ঘৃণা থেকে ব্যক্তিগত সাফল্য পর্যন্ত।
আমিন বা প্রাগাশের ঘটনা রুশদি ও হুসেইনের ঘটনা থেকে ভিন্ন। সলমান রুশদির স্যাটানিক নিষিদ্ধকরণে সরকারকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন নিসিম এজেকিয়েলের মত কবি। নিসিম, সমকালীন ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কবি , লিবেরাল মতের জন্যে খ্যাত, নিজের জীবনে এলএসডী প্রয়োগের পরীক্ষা করেছেন এককালে, তিনি হঠাৎ প্রো-সেন্সর হয়ে উঠলেন। বলেছিলেন এ বই ব্যান না হলে রায়ট লেগে যাবে ! কাল্পনিক ভয় কে বহুগুণ করে মান্যতা দিলেন তিনি। অর্থাৎ তৃতীয়-এফেক্টকে কাজে লাগানো হোল।
কেন ?
অন্যের ভালোর জন্যে ।
কিসের ভালো ?
তাদের কাল্পনিক বিপদের থেকে রক্ষা করার মত কোনো 'ভালো'।
রায়টের প্রশ্ন তুলে, যুদ্ধের ভয় দেখিয়ে , প্রাণ-নাশের হুমকি দিয়ে , জেলে পাঠাবার ভয় দেখিয়ে যুক্তিবাদীকে, প্রশ্নকার কে থামিয়ে দেওয়া সম্ভব- 'অনেকের মঙ্গলের কারণে'। এক তৃতীয় স্তর থেকে ভয় আমদানী করে। 'আমরা এসে ভেসে যাই'- সমাজের আস্তিনের তলায় ঘুমিয়ে পড়া বিষফোঁড়ার মুখটিতে সক্রিয় করে তুলতেই এই মঙ্গল কাব্য। কাল্পনিক মঙ্গলকাব্য।
এই তৃতীয় এফেক্টের কল্পনায়, এর উল্টোদিকে থাকা আরেক কল্পনা ও মঙ্গল নাট্যও চাপা পড়ে থাকে। তা হোল মঙ্গল কাব্যের কল্পনা- ফ্রি-উইলের কল্পনা- ইমাজিনেশন। কাল্পনিক মঙ্গল কাব্য-মুদ্রার অপর পিঠের নাম। বেশী বয়সী মানুষ, শিল্পী বা অল্পবয়েসী লেখক বা পাঠক সবারই যেমন এক কমন অবলিগেশন- দিবা স্বপ্ন, তেমনই কল্পনার ও স্বপ্ন দেখার পোশাকের আস্তিনের তলায় গুটোনো থাকে আরেক বাধ্যতা। একথা ভেবে নেওয়া খুব সহজ অথবা ভান করেতে পারা যে পৃথিবী কে পালটানো প্রায় অসম্ভব। আমরা বাস করি যে বিশ্বে সেখানে বৃহত্তর সমাজ এতোই বৃহৎ যে ব্যক্তির অস্তিত্ব সেখানে প্রায় অদৃশ্য। বার্লিন দেওয়ালের গায়ে প্রায় একটি অ্যাটমের মত। কিন্তু ব্যক্তি তা কাটিয়ে উঠতে পারেন, বার বার পারেন, আর সেই পারার এনজাইমও নিশ্চয়ই থাকে পাল্টানোর মঙ্গল কাব্যের কল্পনায়।
মনে পড়ছিল ইম্যাজিন গানের ভিডিওটিতে লেনন যে ঘরের ছবি তুলেছিলেন সে ঘরটির কথা। আর আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম নীল গাইম্যান কে, নিউ ইয়র্কের এক শীতের সন্ধ্যেতে- ' এই ঘরের দিকে তাকাও, যা কিছু দেখছ, সব কাল্পনিক- ঘরের দেয়াল ও। কেউ একটা কল্পনা করেছিলেন, এই চেয়ার টিকে। কেউ ভাবলেন, মাটিতে বসার চাইতে একটু উঁচু কিছু ভাবা যাক- এবং এই চেয়ারটিকে কল্পনা করলেন। এই ঘর, এই চেয়ার, এই বাড়ি, এই শহর সব কিছুর অস্তিত্ব আজ রয়েছে কেউ কেউ কল্পনা করেছিলেন বলে। এই ভাবে ধীরে ধীরে তারা সাফল্য পেলেন- রাজনৈতিক আন্দোলনের, ব্যক্তিগত আন্দোলনে। সবেরই শুরু হয় আসলে এক ইম্যাজিনের অবস্থান থেকে। না দেখা সমাজের অস্তিত্বের কল্পনা থেকে'।
ফ্রিডমের কল্পনাটির অস্তিত্বই থাকতনা যদি কেউ না দিবাস্বপ্ন দেখতেন- না-মানার, ভাঙ্গার, কুযুক্তিকে ধূলিসাৎ করার। ধর্মের বিশ্বাস, সামাজিক কু-অভ্যাস ভাঙ্গার জন্যে যদি কটূক্তিও ঘটিয়ে থাকেন কেউ কেউ, উক্তি বা শিল্পের উত্তর হত্যা বা ভায়োলেন্স হতে পারেনা, এই প্রশ্ন করার মুখটিকে ক্রমশ বুজিয়ে দেয় এই তৃতীয় এফেক্ট। ফ্রি স্পীচ যদি কল্পনা হয়, তবে যীশু, আরবী নবী বা রামলীলা ও কল্পনা কিনা এ নিয়ে কেউ ভাববার সাহস পাবেননা, কল্পনা করবেননা। তাই এক শ্রেণীর লোক তাকে স্বতঃসিদ্ধ ব্যবহার করে ক্ষমতাবান হয়ে থাকবেন, যে ক্ষমতার কাছে মিডিয়া ও রাষ্ট্র-যন্ত্র মাথা নোয়ায়। আর ভিক্টিম ভাবতে থাকেন তিনি একা।
আমেরিকান স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান বিল হিক্স, তার স্বল্প কেরিয়ার-জীবনে মোকাবিলা করছিলেন ধর্মগুরুদের। চ্যানেল ফোরের তার এক অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক হওয়ায়, তার উত্তরে প্রীস্ট কে এক দীর্ঘ চিঠি লেখেন বিল -
'In support of your position of outrage, you posit the hypothetical scenario regarding the possibly 'angry' reaction of Muslims to material they might find similarly offensive. Here is my question to you: Are you tacitly condoning the violent terrorism of a handful of thugs to whom the idea of 'freedom of speech' and tolerance is perhaps as foreign as Christ's message itself? If you are somehow implying that their intolerance to contrary beliefs is justifiable, admirable, or perhaps even preferable to one of acceptance and forgiveness, then I wonder what your true beliefs really are. '
তার শেষটা ছিল-
I hope you consider this an invitation to keep open the lines of communication. Please feel free to contact me personally, if you so choose. If not, I invite you to enjoy my two upcoming specials entitled 'Mohammed the TWIT' and 'Buddha, you fat PIG'. (JOKE)
Sincerely,
Bill Hicks
মহাভারতের কাব্যের শেষ কথা ছিল- “By no means can I attain a goal beyond my reach.”
নীল গাইম্যান বলছিলেন, নিউ ইয়র্কে। বলছিলেন- ছোটদের গল্প বলতে হবে, খুব জরুরী কাজ সেটা। কি গল্প বলা হবে? বলছিলেন- বলা হবে কল্পনার গল্প- ফ্রি উইলের গল্প। বারবার পাল্টে নিয়ে বলার গল্প।
মনে এলো, ঝাং ইমুর 'টু লিভ' ছবিটির সেই শেষ কয়েকটি সংলাপ, যা বার বার ফিরে আসছে ছবিটিতে। কাল্পনিক মঙ্গল কাব্য থেকে পাল্টানোর মঙ্গল কাব্যের কল্পনায়। মাও জে দং এর জমানার আগে থেকে, পোস্ট-কালচারাল বিল্পবের চীন পর্যন্ত ভিন্ন ভাবে ঘুরে আসে বড়দের মুখে মুখে সেই চীনা প্যারাবল। যেখানে মুখ্য চরিত্র ফুগুইয়ে তার ছোটো ছেলেটিকে কাঁধে নিয়ে গল্প বলেন কথোপকথনের সুরে ঃ
Fugui : Our family is like a little chicken
Son : What will happen next ?
Fugui : It will become sheep
প্রদর্শনের প্রগলভতায় বিশ্ব বাংলায় আশ্বিন আসে। ঈদ, দেবী-পুজা, সব আসে । ইন্টারনেটে ফটোশপ ও ফোটো শপবিহীন উল্লাস আসে। ঢাকা শহরের রাস্তায় রক্ত-নালীর পোস্ট আসে। ফোটো-শপিত কিনা এই আরোপ আসে। তার ইন্টারনেট ও মিডিয়া সুলভ হ্যরাস্মেন্ট আসে। হ্যারাস্মেন্টের পর দুর্গা পুজো আসে। গো-রক্ষক গন ছাগ বলি দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এক্সোটিক নানা মন্দিরে ছাগ ও মোষ বলির রক্ত-নালী ভাসে। ঝিলাম ও পদ্মার ধার ধরে ফেসবুকে ছুঁড়ে দেওয়া একের ও আরেকের গন্ধ-নালা-উদ্গীরন ও বিষাক্ত কারবাঙ্কল আসে। ইনবক্সে থ্রেট আসে। কাছে পেলে হত্যা করার ইচ্ছা আসে।
এবছর কাশ্মীরের লাইন অফ কন্ট্রোলে হত্যা এসেছে। কন্ট্রোলের ভেতরে এসেছে আরও আগে। হত্যা যদিও হ্যরাস্মেন্টের আওতা থেকে মুক্ত এক মনুষ্যত্ব বিহীন নেবুলার বিষয়। তাও। সাইবার পৃথিবীতে অনেকে কিসিমের জনমানুষ থাকেন। ধর্মের সরাইখানায় আশ্রয় নেওয়া হিপক্রিটরা থাকেন। ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট থাকেন । পারভারসনের ব্যাকটেরিয়ারা থাকেন। ধর্মীয় ছাতা-ধারী, জাতীয়তাবাদী, ও সেক্সিস্ট যারা পাড়ায়, কর্ম-ক্ষেত্রে, রাস্তার মোড়ে, ট্যাক্সিতে, বাসে, বৈঠক খানায়, এরোপ্লেনে হ্যারাসমেন্ট ঘটিয়ে থাকেন, তারা সবাই থাকেন। সাইবার জগতে হুলিগানি চালান।
পিউরিটান মতাদর্শের ভূত এই হুলিগানির কাজটি করে থাকেন চিরকাল। আর তার সাইড এফেক্ট দোসর হিসেবে কাজ করতে আসেন আগ্রাসন। মাইক্রো থেকে মেগা। ফেসবুক থেকে দেশমাতা, ব্যক্তিগত কেচ্ছা থেকে প্রাণহানির ফতোয়া। অর্থাৎ দারুণ এক সেন্সরশিপের অভয়ারণ্য ঘোষণা।
আর হ্যারাস্মেন্ট ও ট্রল মানব সভ্যতায়তো সেই দিন থেকেই আছে, যেদিন থেকে তারা দল-বদ্ধ হয়ে বাঁচার কথা ভেবে ফেলেছে। মানুষের হৃদয়ে পরস্পরের জন্যে ঘৃণার মঞ্চটি বরাবরই বেশ পাকা। টলারেন্স ও ফ্রি-উইলই তাই মহা-জগতের সবচে খতরনাক বিষয়।
সিরিয়ার একটি অভিবাসী পরিবারের গল্প বলা যাক। ধরা যাক, হিজাব পড়া সেই মেয়ে, তার নাম- বানা। সিরিয়ায় গায়েব হয়ে যাওয়া কোন শহরের রাস্তায় বাস ছিল সেই পরিবারের। ধরা যাক মাত্র এক প্রজন্ম আগে। আরও ধরা যাক, সেই মেয়েকে আমি চিনি। তার চুল ও চোখের রং জানি।
নাইন্থ গ্রেডে উঠতেই বানা বায়না ধরলেন তিনি হিজাব পরবেন। 'কি আশ্চর্য'- ভাবলেন তার বাবা-মা। পরিবার থেকে কোন চাপ নেই হিজাব পড়ার, তার মাও হিজাব পরেননা, ধর্মের অনুশাসন মুক্ত সেই পরিবারে হিজাব পড়ার শখ কোত্থেকে এলো তারা তা বুঝতে পারেননা। কিন্তু বানা'র উপরোধ- সে তো হিজাব পরবে তার ইচ্ছে বলেই, কেউ তো জোর করছেনা।
' মুক্তমনা বলেই যুক্তির খাতিরে মেনে নিলেন সেই দাবী।'
বানা বলে ওঠে হাসি হাসি চোখে।
হিজাব পরে স্কুলে গেলাম প্রথমবার। অন্য বন্ধুরা মিশ্র প্রিতিক্রিয়া দেখালেও, প্রিয় বন্ধুরা সমর্থন করলো। শিক্ষক তার স্বভাব সুলভ পলিটিকালি কারেক্ট থাকলেন। গোল পাকলো, যখন আমি ইশকুলের নতুন তৈরি হওয়া ব্যান্ডে গান গাওয়ার জন্যে অডিশন দিতে গেলাম। সেখানে অন্য ক্লাসের ছেলে মেয়েরাও ছিল। অডিশনে আমি 'ইম্যাজিন' গেয়েছিলাম। এতোই ভালো গেয়েছিলাম যে আমাকে বাদ দেওয়ার সব কলা কৌশল ব্যর্থ হয়ে গেলো। কিন্তু ক্যাচ হোল, অডিশনে পাস করলেও আমাকে আর আমাকে অনুষ্ঠানে গান গাইতে ডাকা হলনা।
কেন ?
জেনে বুঝেও, জানতে চাই, আমি।
হিজাব পরা একটি মেয়ে ব্যান্ডের প্রতিবাদী প্রগতিশীল ইমেজে ব্যাঘাত করতে পারে। অন্য পরিবারের কাছে সেটা একটা থ্রেট ও বটে, অনেক বাবা-মাই হিজাব পড়া মেয়ের সাথে মিশতে দেবেনা।
বানা বলে চলেন…
আমি বললাম..আমার শেষ নাম মুসলিম, আমার মাতৃভাষা ইংলিশ। আমার মা ইংরেজিতে কথা বলেন। আমার আব্বাও। আমি জোয়ান বায়েজ গাই। আমি মসজিদে যাইনা। তাও...
এই এক টুকরো কাপড় তোমার সম্পর্কে কল্পনার রাজ্য তৈরি করেছে
ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলি আমি।
এরপর নানান বক্রোক্তি ও মাইক্রো আগ্রাসনের পর, ঝক্কি ঝামেলা পোয়াতে নারাজ তার বাবা-মা তাকে উপদেশ দিলেন, যেভাবে আমেরিকানরা প্রায়ই বলে থাকেন- what’s good for the goose is not good for the gander! অর্থাৎ- বাড়তি ঝামেলা আমন্ত্রণ কোরোনা। বহু বছরের সংগ্রামের পর তাদের গ্রীন-কার্ড পাওয়ার সময় হয়েছে তখন।
'শুধু তোমার না সবার ভালোর জন্যেই হয় তোমার হিজাব খোলা উচিৎ নয়তো ব্যান্ডে না গান গাওয়া উচিত, পড়ায় মন দাও। হিজাব নিয়ে সংঘর্ষ জীবনে আরও আসবে, এখন তার সময় নয়'। সংক্ষেপে বলা যাক, শেষমেশ ব্যান্ডে গান গাওয়ার ইচ্ছে থেকে অতএব সরে আসতে হয়েছিল তাকে।
'বছর শেষে, আমার ইংরিজির টিচার একদিন আমাদের এক অ্যাসাইনমেন্ট দিলেন', বলে চলেন বানা- 'সেটা ছিল ক্লাসের প্রত্যেক সহপাঠীকে কে দু'এক কথায় বর্ণনা করা। নিঃসঙ্কোচে।'
আমি মজা করে আমার টিচারকেই জিগ্যেস করে বসলাম ঃ আপনি আমায় কি ভাবেন ? দু'এক কথায় বলতে পারেন ?
আমার শিক্ষক বললেন ঃ সত্যি বলতে কি আমি তোমায় প্রথম দিন ক্লাসে হিজাব পড়ে ঢুকতে দেখে ভয় পেয়েছিলাম। ভেবেইছিলাম, এই মেয়ে ঝঞ্ঝাট ডেকে আনবে।
'একজন শিক্ষক যদি ভয় পেতে পারেন, তবে ছাত্ররা কি ভেবেছিলেন, ভাব তবেই' । চুলের বান্ডানা ঠিক করতে করতে বলেন বানা।
আমি ভাবি- তার মানে, এখানে হিজাব পড়তে বাধ্য হওয়া না, দ্বিতীয় পরিসরে তবে আরেক 'বাধ্যতা' কাজ করছে - হিজাব পড়া একজন টিনেজার, যার ইমেজের একমাত্র ফর্মুলা সমীকরণ- এ ইক্যুয়ালস টু সি ; সি ইক্যুয়ালস টু বি; অতএব, এ ইক্যুয়ালস টু বি- এই সমীকরণ মেনে। হিজাব মানে মুসলমান, মুসলমান মানে টেররিস্ট ও ঝঞ্ঝাটের সহজ ও সরল সমীকরণে।
পোস্ট নাইন-ইলেভেন আমেরিকায় এক হেমন্তের বিকেলে বানা আমার কাছে স্বগতোক্তি করেন ঃ কনফিউশন আমি ছোট থেকেই সামলে নিতে পারি, কিন্তু ভয়ের ব্যাপারটা তখনো তেমন বুঝিনি। আমায় দেখে আমার শিক্ষক ভীত কেন হবেন, এর উত্তর তখনো ছিল অজানা।
বানা'র কথা এক পৃথিবী উল্টো দিকে থাকা 'প্রগাশ' কে মনে পড়াল আমায়। প্রগাশ ব্যান্ড। কাশ্মীরের একদল ইশকুল পড়ুয়া মেয়ের দল ২০১২ সালে খুলে ফেললেন এক ইংরেজি গানের ব্যান্ড। মাথায় হিজাব পড়া সেই মেয়েদের দল শুরু তেই পেয়েও গেলেন তুমুল প্রচার ও জনপ্রিয়তা। দুখি-রুখি কাশ্মীরী প্রলেতারিয়েৎ ফুলওয়ালী মেয়েরা তাতে উপস্থিত থাকলেন না ঠিকই, থাকার কথাও নয়, কিন্তু প্রতিদিন রাষ্ট্র-তন্ত্রের ট্যাংকার টেনে চলা রাজপথের ইমেজ কে টেনে-ছিঁড়ে তাতে কল্পনার একটু ডানা জোড়া হোল। যেহেতু ইংরেজি, ফলে আন্তর্জাতিকও ।
আমেরিকান গীতিকারদের / গায়েনদের অনুপ্রেরণায় ইংরেজি গান বেঁধে-গেয়ে ভূস্বর্গ মাতাবার মিনি আন্তর্জাতিক ড্রিমের পালক সুখ তখন সেই মেয়ে-দলের চোখে। গানের দলের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে, তখনই আপত্তি উঠল। রেপ, প্রাণ-নাশের থ্রেট, শেষে হুমকি এলো খোদ কাশ্মীরের গ্র্যান্ড মুফতি'র। সহজ তর্জমায়- ফতোয়া । সেই ফতোয়ার মোকাবিলা করার জন্যে ইশকুলে-পড়া বালিকাদের পরিবার প্রগাশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তা বন্ধও করালেন।
প্রগাশ বা বানা'র পরিবারের ব্যান্ডের ঘটনারা অবিছিন্ন।
প্রগাশে'র ফতোয়া ছিল মেয়েদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। নারীর শিল্পের অনুশীলনের বিরুদ্ধে। এরা পুসি-রায়ট করেননি। ভগবান যীশুকে, রামলালা বা নবী কে নিয়ে স্যাটাইয়ার করেননি। সঙ্গীত ও শিল্প যাতে তার মুক্তির আনন্দ-উৎস না হয়ে উঠেতে পারে, ফতোয়া তার বিরুদ্ধে। অন্দরের গণ্ডীর বাইরে পাবলিক স্পেসের দখল নিতে গেলে পিতৃতন্ত্রের ব্যাল্যান্স নষ্ট হয়। তাই গাওয়া মানা। কোনো ধর্মের কোনো পয়গম্বর, কোনো অভন্ডানন্দ, কোনো সুসমাচার কোথায় কবে এই পুলিশি বন্দবস্ত করে গেছেন, তা ২০১২তে বসে তামিল কেন করতে হবে, এই প্রশ্ন তুলে কিন্তু প্রগাশ অনড় হতে পারলেননা। ব্যান্ডের সদস্যরা তাদের পরিবারের চাপের মুখে পড়ে দল ভেঙ্গে দিলেন। শেষ পর্যন্ত তাদের যা মোকাবিলা করতে হোল তা- ভয়। আর এই ভয় দুই দিকেই। যারা তা প্রয়োগ করছেন ও যারা তা মেনে নিচ্ছেন। আর আছে তৃতীয় পরিসর- কাল্পনিক ভয়, বাকি জনমত কে ঝামেলাকারীদের মতই অকারণ সেন্সরবাদী ভাবার কাল্পনিক ভয়। ঝামেলা, প্রতিবাদ না করে অন্যের শান্তি বিঘ্নিত না করার এক কাল্পনিক মঙ্গল কাব্যের চাপ। সমাজবিদ ফিলিপ ডেভিসনের তত্ব থার্ড পারসন এফেক্ট থেকে ধারণা তৈরি করে এটিকে তৃতীয় পরিসর এফেক্ট বলতে চাইছি। এই চাপকে অকারণ বৃহৎ কল্পনা করে সেন্সরশিপের ব্যাঙ্ক-অ্যাকাউন্ট কে মজবুত করা হয়। বানা'র পরিবারের মতই এখানে প্রগাশ-সদস্যদের তাড়া করেছিল এই ভয়। এক ঃ কল্পনার অনুশীলন করা ভয়ের। কারণ তা মানুষ কে স্মরণ করায় যে- যেকোনো কিছুই বাতিল করা যায়, কিছুই স্থাণু নয়। চির প্রয়োজনীয় নয়। দুই ঃ একঘরে হওয়ার, প্রভাবশালীদের সাথে পাল্লা না করতে পারার ভয়। তিন ঃ তৃতীয় এফেক্ট অনুযায়ী সমস্ত জনমতকে প্রো-সেন্সর ভাবার ভয়।
বারট্রান্ড রাসেলের জবানী মনে পড়তেই পারে ঃ Fear is the basis of religious dogma , এখানে যারা চাপাচ্ছেন, আর যাদের ওপর চাপানো হচ্ছে, ভয় দু তরফেই। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, অল্প সংখ্যার কিছু মানুষ, ইংরেজি নাম প্রিভিলেজড, এতো বেশী সংখ্যার মানুষের ওপর তাদের নিজেদের অস্তিত্ব হারাবার ভয় চাপিয়ে দিয়ে পাল্টা ভয়ের বৃত্ত তৈরি করতে পারলেন কেমন করে ? এখানেই তৃতীয় এফেক্ট আবারো। আর তার সহজলভ্য টুল- সেন্সরশিপ। অল্প সংখ্যক মানুষের তৈরি প্রোপ্যাগান্ডা দিয়ে কিছু যুক্তি খুঁজতে চাওয়া মানুষকে দাবিয়ে দিতে ব্যবহার করা হবে তা । চিরাচরিত এর প্রয়োগ। কারণ অযুক্তি ভয় করে বাস্তব কে মোকাবিলা করার। আর যাবতীয় সেন্সরশিপের ভিতর ধর্মই গায়ত্রী, বিনয় মজুমদারের ধাঁচা মনে এসে যাচ্ছে। যদিও সেন্সরশিপ এক চিরকালীন বহুল আলোচিত বিষয়, যদিও তার পরিধি মহাজাগতিক হয়ে দাঁড়িয়েছে, তবুও সমস্ত রকম সেন্সরশিপের মধ্যে সবচেশক্তিশালী সম্ভবত সেলফ-সেন্সরশিপ- নিজেকে সেন্সর করা। সেন্সর এর অস্তিত্বকে প্রশ্ন না করতে পারার অক্ষমতা। ভারতের মহা-আখ্যানে তাই সম্ভবত কোন আন্ডার-গ্রাউন্ড শিল্প আন্দোলনের সম্ভাবনা দেখা দেয় না। রাষ্ট্র কি করবে, প্রতিষ্ঠান কি করবে, এ কথা ভাবার আগে বা পরে যা সবচে ইন্সট্রুমেন্টাল হয়ে ওঠে পিছিয়ে আসার ক্ষেত্রে, ভয় পাওয়ার ক্ষেত্রে, তা হোল- 'আমার পবিবার কে কি ভোগ করতে হবে'। রাষ্ট্র এই দুর্বলতা জানেন।
তাই প্রো-সেন্সরশিপকে এখানে আলোচিত হতে হবে এক মানসিক অবস্থান হিসেবে, এক ত্রি-পক্ষ সহমতের সহাবস্থান হিসেবে।
এখান থেকেই তাই তৃতীয় এফেক্টের ধারণা থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রগাশের ক্ষেত্রে মুফতি'র ফতোয়ার পর
সেই চাপের কাছে ভিক্টিম প্রো-সেন্সরশিপ হয়ে পড়ছেন। অর্থাৎ ভিক্টিম সেই ত্রাস সৃষ্টিকারীদের কোলাবোরেটরে পরিণত হচ্ছেন, যেখানে ভিক্টিম, ত্রাস সৃষ্টিকারীদের ও তৃতীয় চাপ সবাই প্রো-সেন্সরশিপের জালে আটকা পড়ছেন। বানা ও প্রগাশের উৎসে ছিল যে ফ্রি-উইল, তার সাথে সাথে তফাৎ থাকলেও একই ভাবে আমাদের মনে পড়ে যাবে অতি পরিচিত কয়েকটি সেন্সরের লড়াইকেও। ক্রিস ওফিলস এর ভার্জিন মারী'কে, রাশিয়ার পুসি-রায়টকে, হুসেইনের আঁকা সরস্বতীকে ও স্যাটানিক ভারসাস এর বিতর্ক কে।
ধর্ম নিয়ে মুখ খোলার সবচে সমস্যার দিক হোল, এক ধর্মকে সমালোচনা করলে, প্রশ্নাতীত-ভাবে ধরে নেওয়া হয় যে সেই ধর্ম পাল্টা অন্য ধর্মকে যুদ্ধ করতে চিঠি পাঠাচ্ছে। কারণ স্ট্যাটিস্টিক্স বলছে, অতি স্বাভাবিক ভাবেই বলছে-
ধর্মের অতি রক্ষণশীল আচরণের জন্যে, ধর্মের রক্ষকদের হাতেই মানুষ মারা যায় বেশী। এই নয় যারা ধর্মকে আক্রমণ করছেন যুক্তি দিয়ে, তারা মানুষ মারতে উদ্যত হচ্ছেন।
শিল্পের উত্তর, তা যতই অবমাননাকর হোক মতভেদে, তা কিছুতেই হত্যা বা ভায়োলেন্স হতে পারেনা। আর দেশ-সুদ্ধু সবাই প্সেন্সরবাদী- তৃতীয় এফেক্টের এই কাল্পনিক ভয় আক্রান্ত -শিল্পী / ব্যক্তি / দল কে দুর্বল করে তোলে। প্রশ্ন করার মুখটিকেই ক্রমশ বুজিয়ে ফেলে এই তৃতীয় এফেক্ট। অথচ ফ্রি-উইলের ইচ্ছা আমাদের সার্বিক ভাবে ছুঁয়ে থাকে সর্বত্র। আইন, রাজনীতি, ধর্ম, পাবলিক পলিসি , ব্যক্তিগত সম্পর্ক, লজ্জা, ঘৃণা থেকে ব্যক্তিগত সাফল্য পর্যন্ত।
আমিন বা প্রাগাশের ঘটনা রুশদি ও হুসেইনের ঘটনা থেকে ভিন্ন। সলমান রুশদির স্যাটানিক নিষিদ্ধকরণে সরকারকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন নিসিম এজেকিয়েলের মত কবি। নিসিম, সমকালীন ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কবি , লিবেরাল মতের জন্যে খ্যাত, নিজের জীবনে এলএসডী প্রয়োগের পরীক্ষা করেছেন এককালে, তিনি হঠাৎ প্রো-সেন্সর হয়ে উঠলেন। বলেছিলেন এ বই ব্যান না হলে রায়ট লেগে যাবে ! কাল্পনিক ভয় কে বহুগুণ করে মান্যতা দিলেন তিনি। অর্থাৎ তৃতীয়-এফেক্টকে কাজে লাগানো হোল।
কেন ?
অন্যের ভালোর জন্যে ।
কিসের ভালো ?
তাদের কাল্পনিক বিপদের থেকে রক্ষা করার মত কোনো 'ভালো'।
রায়টের প্রশ্ন তুলে, যুদ্ধের ভয় দেখিয়ে , প্রাণ-নাশের হুমকি দিয়ে , জেলে পাঠাবার ভয় দেখিয়ে যুক্তিবাদীকে, প্রশ্নকার কে থামিয়ে দেওয়া সম্ভব- 'অনেকের মঙ্গলের কারণে'। এক তৃতীয় স্তর থেকে ভয় আমদানী করে। 'আমরা এসে ভেসে যাই'- সমাজের আস্তিনের তলায় ঘুমিয়ে পড়া বিষফোঁড়ার মুখটিতে সক্রিয় করে তুলতেই এই মঙ্গল কাব্য। কাল্পনিক মঙ্গলকাব্য।
এই তৃতীয় এফেক্টের কল্পনায়, এর উল্টোদিকে থাকা আরেক কল্পনা ও মঙ্গল নাট্যও চাপা পড়ে থাকে। তা হোল মঙ্গল কাব্যের কল্পনা- ফ্রি-উইলের কল্পনা- ইমাজিনেশন। কাল্পনিক মঙ্গল কাব্য-মুদ্রার অপর পিঠের নাম। বেশী বয়সী মানুষ, শিল্পী বা অল্পবয়েসী লেখক বা পাঠক সবারই যেমন এক কমন অবলিগেশন- দিবা স্বপ্ন, তেমনই কল্পনার ও স্বপ্ন দেখার পোশাকের আস্তিনের তলায় গুটোনো থাকে আরেক বাধ্যতা। একথা ভেবে নেওয়া খুব সহজ অথবা ভান করেতে পারা যে পৃথিবী কে পালটানো প্রায় অসম্ভব। আমরা বাস করি যে বিশ্বে সেখানে বৃহত্তর সমাজ এতোই বৃহৎ যে ব্যক্তির অস্তিত্ব সেখানে প্রায় অদৃশ্য। বার্লিন দেওয়ালের গায়ে প্রায় একটি অ্যাটমের মত। কিন্তু ব্যক্তি তা কাটিয়ে উঠতে পারেন, বার বার পারেন, আর সেই পারার এনজাইমও নিশ্চয়ই থাকে পাল্টানোর মঙ্গল কাব্যের কল্পনায়।
মনে পড়ছিল ইম্যাজিন গানের ভিডিওটিতে লেনন যে ঘরের ছবি তুলেছিলেন সে ঘরটির কথা। আর আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম নীল গাইম্যান কে, নিউ ইয়র্কের এক শীতের সন্ধ্যেতে- ' এই ঘরের দিকে তাকাও, যা কিছু দেখছ, সব কাল্পনিক- ঘরের দেয়াল ও। কেউ একটা কল্পনা করেছিলেন, এই চেয়ার টিকে। কেউ ভাবলেন, মাটিতে বসার চাইতে একটু উঁচু কিছু ভাবা যাক- এবং এই চেয়ারটিকে কল্পনা করলেন। এই ঘর, এই চেয়ার, এই বাড়ি, এই শহর সব কিছুর অস্তিত্ব আজ রয়েছে কেউ কেউ কল্পনা করেছিলেন বলে। এই ভাবে ধীরে ধীরে তারা সাফল্য পেলেন- রাজনৈতিক আন্দোলনের, ব্যক্তিগত আন্দোলনে। সবেরই শুরু হয় আসলে এক ইম্যাজিনের অবস্থান থেকে। না দেখা সমাজের অস্তিত্বের কল্পনা থেকে'।
ফ্রিডমের কল্পনাটির অস্তিত্বই থাকতনা যদি কেউ না দিবাস্বপ্ন দেখতেন- না-মানার, ভাঙ্গার, কুযুক্তিকে ধূলিসাৎ করার। ধর্মের বিশ্বাস, সামাজিক কু-অভ্যাস ভাঙ্গার জন্যে যদি কটূক্তিও ঘটিয়ে থাকেন কেউ কেউ, উক্তি বা শিল্পের উত্তর হত্যা বা ভায়োলেন্স হতে পারেনা, এই প্রশ্ন করার মুখটিকে ক্রমশ বুজিয়ে দেয় এই তৃতীয় এফেক্ট। ফ্রি স্পীচ যদি কল্পনা হয়, তবে যীশু, আরবী নবী বা রামলীলা ও কল্পনা কিনা এ নিয়ে কেউ ভাববার সাহস পাবেননা, কল্পনা করবেননা। তাই এক শ্রেণীর লোক তাকে স্বতঃসিদ্ধ ব্যবহার করে ক্ষমতাবান হয়ে থাকবেন, যে ক্ষমতার কাছে মিডিয়া ও রাষ্ট্র-যন্ত্র মাথা নোয়ায়। আর ভিক্টিম ভাবতে থাকেন তিনি একা।
আমেরিকান স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান বিল হিক্স, তার স্বল্প কেরিয়ার-জীবনে মোকাবিলা করছিলেন ধর্মগুরুদের। চ্যানেল ফোরের তার এক অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক হওয়ায়, তার উত্তরে প্রীস্ট কে এক দীর্ঘ চিঠি লেখেন বিল -
'In support of your position of outrage, you posit the hypothetical scenario regarding the possibly 'angry' reaction of Muslims to material they might find similarly offensive. Here is my question to you: Are you tacitly condoning the violent terrorism of a handful of thugs to whom the idea of 'freedom of speech' and tolerance is perhaps as foreign as Christ's message itself? If you are somehow implying that their intolerance to contrary beliefs is justifiable, admirable, or perhaps even preferable to one of acceptance and forgiveness, then I wonder what your true beliefs really are. '
তার শেষটা ছিল-
I hope you consider this an invitation to keep open the lines of communication. Please feel free to contact me personally, if you so choose. If not, I invite you to enjoy my two upcoming specials entitled 'Mohammed the TWIT' and 'Buddha, you fat PIG'. (JOKE)
Sincerely,
Bill Hicks
মহাভারতের কাব্যের শেষ কথা ছিল- “By no means can I attain a goal beyond my reach.”
নীল গাইম্যান বলছিলেন, নিউ ইয়র্কে। বলছিলেন- ছোটদের গল্প বলতে হবে, খুব জরুরী কাজ সেটা। কি গল্প বলা হবে? বলছিলেন- বলা হবে কল্পনার গল্প- ফ্রি উইলের গল্প। বারবার পাল্টে নিয়ে বলার গল্প।
মনে এলো, ঝাং ইমুর 'টু লিভ' ছবিটির সেই শেষ কয়েকটি সংলাপ, যা বার বার ফিরে আসছে ছবিটিতে। কাল্পনিক মঙ্গল কাব্য থেকে পাল্টানোর মঙ্গল কাব্যের কল্পনায়। মাও জে দং এর জমানার আগে থেকে, পোস্ট-কালচারাল বিল্পবের চীন পর্যন্ত ভিন্ন ভাবে ঘুরে আসে বড়দের মুখে মুখে সেই চীনা প্যারাবল। যেখানে মুখ্য চরিত্র ফুগুইয়ে তার ছোটো ছেলেটিকে কাঁধে নিয়ে গল্প বলেন কথোপকথনের সুরে ঃ
Fugui : Our family is like a little chicken
Son : What will happen next ?
Fugui : It will become sheep
Son : Then ?
Fugui : Then the ox.
Son : After the ox ?
Fugui : After the ox is communism and then there will be dumplings every day.
তার সেই ছোটো ছেলেটি ইস্পাত গলাতে গিয়ে মারা যান। মাত্র দশ বছর বয়েসে।
তার বছর-তিরিশ বাদ, তার মা-মরা নাতিটিকে আবার গল্প শোনান তিনি সে ঃ
Fugui ঃ Our family is like a little chicken
Grandson : What will happen next ?
Fugui : It will become sheep
Grandson : Then ?
Fugui : Then the ox.
Grandson : After the ox ?
Fugui ঃ Planes and trains; we’ll go everywhere, from here everything will get better.
Fugui : Then the ox.
Son : After the ox ?
Fugui : After the ox is communism and then there will be dumplings every day.
তার সেই ছোটো ছেলেটি ইস্পাত গলাতে গিয়ে মারা যান। মাত্র দশ বছর বয়েসে।
তার বছর-তিরিশ বাদ, তার মা-মরা নাতিটিকে আবার গল্প শোনান তিনি সে ঃ
Fugui ঃ Our family is like a little chicken
Grandson : What will happen next ?
Fugui : It will become sheep
Grandson : Then ?
Fugui : Then the ox.
Grandson : After the ox ?
Fugui ঃ Planes and trains; we’ll go everywhere, from here everything will get better.
2 মন্তব্যসমূহ
বেশ গহীনে ভাবা সাম্প্রতিক সব থেকে বিতর্কিত একটি বিষয়-- লেখিকা অন্য নতুন কয়েকটি পার্সপেকটিভ উপহার দিলেন -- ধন্যবাদ লেখিকাকে
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ
মুছুন