- ট্যাক্সি!
সোমেন আরও একবার চেঁচিয়ে উঠল।
এবারও ট্যাক্সিটা জল ছিটিয়ে বেরিয়ে গেল। ফিরেও তাকাল না।
ইস! চন্দনই তবে ঠিক। ওর কথা মত
একটা ক্যাব বুক করে তবে অফিস থেকে বেরনো উচিত ছিল। খামোকা পয়সা বাঁচানোর ধান্দায়
আজ হয়ত বাড়ি পৌঁছনো যাবে না।
এদিকে মোবাইলের অবস্থা তথৈবচ।
অফিস থেকে বেরনোর আগে দেখেচিল ২০% চার্জ রয়েছে। এখন কী অবস্থা কে জানে।
সোমেন মোবাইলটা বের করেই আঁতকে
উঠল। ব্যাটারির চার্জ ৫%-এ এসে ঠেকেছে। এই অবস্থায় অ্যাপ অন করলেই নির্ঘাৎ সুইচড
অফ হয়ে যাবে।
বৃষ্টির তোড় এখন কিছুটা কমেছে।
তবে আছাড়িপিছাড়ি হাওয়া চলছে তো চলছেই। শেডের তলায় দাঁড়িয়ে থেকেও সে প্রায় ভিজে
চুপসে গেল। বাসগুলোর দিকে না তাকানোই ভাল। বাস তো নয়, যেন মানুষ ভর্তি বাক্স।
বাক্সগুলোতে চাকা লাগানো আছে, এই যা। ফুটবোর্ডে যারা পা রাখতে পেরেছে, তারা
ভাগ্যবান।
গতবার এইভাবে ফিরতে গিয়েই সে
হাঁটুতে চোট পেয়েছিল। প্রায় তিনমাস হাঁটু মুড়ে বসতে পারেনি। প্রতিদিন অফিস থেকে
ফিরে মনে হত, হাল ছেড়ে দেবার সময় হয়েছে। আর পারা যাচ্ছে না। পাহাড়-পর্বত ডিঙিয়ে তবে
সামান্য শামুকেই জব্দ হল সে!
কিন্তু মিতু অত সহজে ছেড়ে
দেবার পাত্রী নয়। অ্যালোপ্যাথির পর হোমিওপ্যাথি এল। এক্স-রে প্লেটের উপর টিকটিকি
পটি সারলো। শেষে আইসব্যাগের সঙ্গে জুটে গেল হলুদ-চুনের কম্বিনেশন। অবশেষে কোন
একদিন, হয়ত ভোরবেলা তখন, সে বুঝতে পেরেছিল – তার মত যারা ঢপের চাকরীর ভরসায় সংসার পেতেছে, তারা
বাড়িতে ঘুমতে আসে না। তারা বাড়িতে ফেরে আবার পরের দিনের জন্য শরীরটাকে তৈরি করে
নিতে।
সুতরাং, প্রতি অমাবস্যায়, পা
টনটন করে ওঠে সোমেনের, এবং সে অফিসও যায়। সোমেনের সঙ্গে সোমেনের হাঁটুও হাঁটে,
দৌড়য়, চেয়ারে বসে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
তার নাকের ডগা দিয়ে আর একখানা
বাস চলে গেল। এটিও বাক্সবৎ। বাক্সটি কাৎ খেয়ে ঢুকে গেল আর-এন-মুখার্জির দিকে।
সোমেন মোবাইলে টাইম দেখল।
প্রায়
চল্লিশ মিনিট হতে চলল সে অফিস থেকে বেরিয়েছে। এখনও তার সরণ ও গমন শূন্য। তবে
বাঁচোয়া একটাই, ব্যাটারির চার্জ সেই ৫%-এই আঁটকে আছে। তার মানে ডেটা অফ করে দিলে
মোবাইলটা আরও পাঁচ মিনিট ধুঁকতে পারবে। বাইচান্স, কিছু না পেলে, শেষ ভরসা তো
মোবাইলই!
সেন্ট্রাল এভিনিউ থেকে বেন্টিংক স্ট্রীট ধরে ধর্মতলায়
পৌঁছেছিল সোমেন। ভেবেছিল, এখান থেকে অন্তত কিছু ম্যানেজ করা যাবে। আর যাই হোক, সে
তো গাঁ-গেরামে থাকে না। কলকাতা থেকে তার বাড়ির দূরত্ব বড়জোর ২০কিমি। কিন্তু
ধর্মতলায় ধর্মতলা কোথায়? এ তো জনসমুদ্র!
সোমেন আর দেরি করল না। ঘড়িতে সাড়ে আটটা। এখুনি ডিসিশন
নিতে হবে। এদিকে হাওয়ার যা দাপট তাতে ছাতা খাটিয়ে হাঁটা যাচ্ছে না। এমনিতেও ভিজবে,
অমনিতেও ভিজবে। সে দ্বিতীয় অপশনটা নিল।
অথচ সকালটা ছিল খটখটে। যাকে ঝকঝকেও বলা যায়। জানলা থেকে
যেটুকু আলো দেখা গেছিল, তা তো নীল। নিখাদ নীল। মাঝখানে মাঝখানে যা সাদা, তা যে
কিউমুলো নিম্বাস নয়, সেটুকু সে ভূগোল না পড়েও বলতে পারত।
অবশ্য মিতুর কথা আলাদা। আজকাল সে কোনকিছু অনুমান করে
না। সর্বদা সত্যবচন বলে। সে ঠিক নক করেছিল, আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি
বেরিয়ে যেও। ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি নামবে কিন্তু।
-
বৃষ্টি? পাগল নাকি!
-
বৃষ্টি নয়, গভীর ডিপ্রেশন। মিতু টেবিলে ছাতা রেখে সোমেনকে ভেঙাল।
সোমেন প্যান্টে বেল্ট গলাচ্ছিল। একবার জানলার বাইরে
তাকিয়ে নিল। বলল, দিব্বি কাক উড়ছে, কুকুর ঘুমুচ্ছে!
-
সকাল থেকে গুগুল তিনবার অ্যালার্ট দিয়েছে। তোমার ফোনে
অ্যালার্ট আসেনি?
-
এসেছে তো। দেখেছি।
-
তাহলে যা বললাম, তা-ই কর। টানা দুটো সানডে তো অফিস
করলে। একদিন একটু আগে বেরতে পারবে না।
সোমেন মুচকি হাসল। মিতু জানে এই হাসির অর্থ কী। অর্থাৎ,
আফিস থেকে আগে বেরনো বেশ চাপের।
খেতে বসে সোমেন বেশ মজা করছিল। বলল, বুঝলে আজ ঠিক গুগুল
ফল্স দেবে। আকাশের যা অবস্থা, তাতে তো বৃষ্টির কোন নামগন্ধ পাচ্ছি না। নিউজ
চ্যানেলেও তেমন আপডেট নেই। যা হবার, সব তোমার বাপের বাড়ির দিকে হবে। এগুলো সব
ছাঁটাইয়ের ফল।
-
আহা, কী যুক্তি।
- এটা যুক্তি নয়? সোমেন টোস্টে কামড়
দিয়ে বলল, গত সপ্তাহেই তো নিউজে পেলাম তিন হাজার এমপ্লয়িকে ছাঁটাই করেছে গুগুল।
এতজন লোক এতদিন ধরে কি ভেরেন্ডা ভাজছিল? কিছু না কিছু কাজ তো তারা করত। তিন হাজার
মানুষের কোন রিপ্লেস্মেন্ট সম্ভব নয়, তা সে যতবড় অর্গানাইজেশনই হোক। এখন যা হবার,
তা-ই হচ্ছে। খটখটে আকাশে ওরা মেঘ দেখছে।
মিতুর পিরিচে চা ঢেলে চা খাবার অভ্যাসটা গেল না! সে
পিরিচে ঝড় তুলে বলল, গত বছরের কথাটা মনে নেই? হাঁটু ভেঙে তো রাস্তায় পড়েছিলে। তাও
ফোনে ভুল ঠিকানা বললে। গুগুল না থাকলে তোমাকে খুঁজে পাওয়া যেত? উফ, কী যে টেনশানে
ছিলাম। এখনও ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয়।
-
সেটাই তো বলছি। গুগুল নয়, তোমার
বরকে খুঁজে দিয়েছিল, ঐ তিন হাজার।
-
হ্যাঁ, সব ঐ তিন হাজার। মিতু টেবিল থেকে প্লেটগুলো
তুলতে তুলতে বলল, এই, ন’টা বেজে গেছে। তাড়াতাড়ি কর। আমাকেও
বেরতে হবে।
সোমেন আর্তনাদ করে উঠল। সে কোনক্রমে পায়ে মোজা গলিয়ে
সিঁড়িতে নেমে গেছিল। তারপর কী মনে হতে, আবার উপরে উঠে এসে, ছাতাটা নিয়ে নিল।
ভগবান আছে কী নেই – সেটি বড় কথা নয়। আসল
কথা হল অংক আছে। আর অংকে তিন হাজার ইউক্যালস-টু-জিরো প্রমাণ
করা কোন বড় ব্যাপার নয়।
বারটার মধ্যেই আকাশ অন্ধকার হয়ে
এসেছিল। তারপর ঝিরঝির, ঝরঝর, টিপটিপ। শেষে দুপুর নাগাদ শুরু হল তুমুল।
বাড়ি থেকে টিফিন আনলেও
লাঞ্চটাইমে একবার বাইরে বেরনোর অভ্যেস সোমেনের। এক নাগারে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকলে হাঁটুটা আবার বিগড়ে
যায়। আজ লাঞ্চ করতে বেশ দেরিই
হয়ে গেল তার। ভেবেছিল একটা সিগ্রেট
ফুঁকেই ফিরে আসবে। রুমে থাকতে থাকতে বুঝতে
পারেনি, করিডরে পৌঁছেই বুঝতে পারল, বাইরে কী
ভয়ানক তান্ডব চলছে এখন। করিডরটি নো-স্মোকিং জোন। সিগ্রেট খেতে গেলে রাস্তাতেই নামতে হয়। সোমেন এদিক ওদিক ঘুরে আবার সিটে এসে বসল।
সে লক্ষ্য করল চন্দনও
তার মত উসখুস করছে।
-
কী ব্যাপার? চন্দন বলল,
একটাই তো নেশা। তাও দিনে দু’টো। সেটাও না জুটলে কী কাজ করা যায়?
-
তা বটে।
সোমেন চন্দনকে বিশেষ ঘাঁটাল না। সে জানে চন্দন একবার বকতে শুরু করলে আর থামবে না।
এক্সেল শিটের দিকে তাকিয়ে
সোমেনের মাথা ঘুরে উঠছিল। সে চোখ বন্ধ
করে মিনিটখানেক বসে থাকল।
‘মায়োবি’ একটি মোবাইল কোম্পানি। চীনের পিনলিয়াং শহরে এটির সদর দপ্তর। প্রায় ২৫০০ কর্মী সেখানে কাজ করে।
সোমেনের অফিস মোবাইল টেকনলজি
নিয়ে কোন কাজ করছে না। তারা ‘মায়োবি’র এমপ্লয়িদের জন্য আইডি কার্ড বানানোর
বরাত পেয়েছে।
আইডি কার্ডের ডিজাইন ইতিমধ্যে
ফাইনাল হয়ে গিয়েছে। এখন এক্সেল শিট থেকে ডেটা
নিয়ে কার্ডগুলোতে পেস্ট করতে হবে। তারপর চলবে
প্রুফিং। প্রুফিং শেষ হলে প্রিন্টিং-এর জন্য সফট-কপি মেইল
করতে হবে মুম্বাইয়ে। ওখান থেকে
শিপিং হবে। আর কাজটার জন্য টাইম পাওয়া
গেছে মোটে ফাইভ ওয়ার্কিং ডেজ।
চন্দন প্রোগ্রামার। আজ বুঝি তার বিশেষ কাজ নেই। সে হজমোলা গালে দিয়ে চুকচুক আওয়াজ করছিল। বলল, সোমেনদা খাবে নাকি?
-
না থাক।
-
আরে
খাওনা। সিগারেট না খেলে গালটা কেমন বাসি বাসি হয়ে যায়। খেয়ে দেখো ভাল্লাগবে।
-
খাও ত
মোটে দু’টো সিগারেট!
চন্দন হেসে ফেলল,
জানো সোমেনদা, তোমাকে বলা হয়নি, একটা কোর্সে ভর্তি হয়েছি। রোববার করে ক্লাস।
তিনমাস পরে পরীক্ষা।
-
কোন
কোর্স?
-
চাইনিজ
শিখছি। ভেবে দেখলুম, ইংরাজির জামানা শেষ। এবার থেকে শুধু চুং-চাং চলবে। বলে
দিচ্ছি, দেখে নিও।
-
তাই?
-
তা নয় তো
কী! তুমি শিখবে? আমি আর একজনকে জোগাড় করেছি। তুমি এলে তিনজন। পুরো জমে যাবে।
নেক্সট রোববার থেকে ক্লাস শুরু। আমাদের বাড়িতে। সার্টিফিকেট পাবো চীনের
ইউনিভার্সিটি থেকে।
-
বাবা। এ
তো এলাহি ব্যাপার।
-
তবে!
কেমন ধান্দা লাগিয়েছি ভাবো। এই সোমেনদা জয়েন করছ তো?
-
আমি জয়েন
করলে বুঝি তোমার টিউশন ফি কিছুটা কমবে?
ধরা পড়ে গিয়ে চন্দন
পালাবার পথ পেল না, যাও তোমাকে শিখতে হবে না। আমি শিখে নিয়ে তোমাকে শিখিয়ে দেব।
-
সে-ই
ভাল।
সোমেন হজমোলা নিয়ে আবার কপি-পেস্টে ডুবে গেল।
দু’ঘন্টার বৃষ্টিতেই
রেললাইনে জল উঠে গিয়েছে। শিয়ালদহের সাউথ সেকশনে ট্রেন চলাচল বন্ধ। মিতুই খবরটা ম্যাসেজ
করেছিল। কাজের চাপে সোমেন চেক করতে পারেনি। যখন জানল, তখন অলরেডি বিকেল পাঁচ’টা।
সেন্ট্রাল এভিনিউ
হাঁটু ছাড়িয়েছে। চা নিয়ে করিডরে গিয়েছিল সোমেন। এখান থেকে ঝুঁকে দেখলে সোজা
লালবাজার অব্দি রাস্তাটাকে দেখা যায়। কিন্তু এখন আর রাস্তা কোথায়। পুরোটাই তো নদী!
এই বিকেলেই স্ট্রীটলাইটগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই আলোয় ঘোলা জলে ডুবে যাওয়া
রাস্তাটা ঠিক যেন পীতবর্ণের জন্ডিস রুগী। গাড়িগুলো যাচ্ছে হাতির গতিতে। হাতির মতই
দুলে দুলে। সামনের পব্লিক বাস্টা একমিনিটও দৌড়তে পারছে না। আবার কোনমতে নড়নচড়ন
করলেই দু’পাশের ফুটপাথ ভেসে যাচ্ছে ঢেউ-এ।
-
এদিকে
দেখ সেমোনদা।
চন্দন কখন তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল সোমেন খেয়াল
করেনি। সে একটু অপ্রস্তুত হল।
চন্দন বলল, কী কান্ড দেখো। এরা এখনও মানুষ হল না।
সে রাস্তার মধ্যিখানে
ইশারা করছিল। সোমেন সেদিকে তাকিয়ে দেখল, একজন সুটেড-বুটেড লোককে কাঁধে তুলে রাস্তা
পার করাচ্ছে লুঙ্গি পরা বিহারি খোট্টা। লোকটি কাঁধের উপর উঠেও ক্ষান্ত হননি। তার
মধ্যে মাথা বাঁচাতে আবার ছাতা খাটিয়েছে।
-
চিনতে
পারলে?
-
চেনা
চেনা লাগছে। তুমি চেনো নাকি?
-
আরে, উনি
সফটেক-এর মালিক। দুই ভাই মিলে কোম্পানিটা চালায়। এ ছোটভাই। হেব্বি খচ্চর। ১৫
তারিখের আগে মাইনে দেয়না।
-
ওহ, আমি
ভাবলাম তুমি বিহারিটার কথা বলছ। ওটাকে আমি চিনি। প্রায় ত রাস্তায় দেখা যায়। এদিকেই
থাকে মনে হয়। ঠেলা গাড়ি চালায়। বাইদ্যওয়ে, একাউন্টে মালপত্তর এসেছে?
-
কী যে
বল! চন্দন গলাটা ছোট করে নিয়ে বলল, আজ তো সবে ৯। ১২-র আগে তো কোনদিন মাইনে পাইনি।
সব শালা এক।
সোমেন হেসে ফেলল, তাড়াতাড়ি চাইনিজটা শিখে নাও। এদের
যুগ শেষ হয়ে এল বলে।
চন্দন সোমেনের শ্লেষটা ঠিক ধরতে পারল, তুমি না
সোমেনদা! তারপর কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করল, আজ তাড়াতাড়ি বেরনো যাবে?
সোমেন নিজের কপালটা দেখিয়ে কাজে ফিরে গেল।
-
কপাল ত
নয়, যেন গোদরেজের লক!
চন্দন নিজের মনেই
বিড়বিড় করছিল। চন্দনের বাড়ি মেট্রো স্টেশনের কাছেই। এখনও অব্দি মেট্রো রেলের বিগড়ে
যাবার কোন খবর নেই। চন্দনের কাছে তাই বাড়ি ফেরা ছাড়াও অন্য সমস্যা হাজির হয়েছে।
-
আবার কী
হল? সোমেন জিজ্ঞেস করল।
-
একটা
সোজা হিসেব দেবে সোমেনদা?
-
হিসেবটা
সোজা?
-
আহ,
শোনোই না। চন্দন চেয়ারটা সোমেনের দিকে টেনে নিল, মনে কর, এই যে তুমি রোজ সকালে
আসছ, রাত অব্দি কাজ করছ, বাড়িতে কোনমতে ঘুমিয়ে আবার পরের দিন ঠিক সময়ে কাজে ফিরছ।
এটা চলছে। চলছে তো চলছে। চলছেই। তারপর তোমার যখন ৫০ বছর বয়স হল, তুমি বুঝতে পারলে,
তুমি আর এত চাপ নিতে পারছ না। তোমার ইন্সিউরেন্স নেই, পেনশন নেই, গ্রাচ্যুইটি পাবে
কিনা তার ঠিকঠিকানা নেই। কিন্তু তোমার শরীর খারাপ আছে। ইলেক্ট্রিসিটির বিল আছে।
মাসকাবারি বাজার আছে। এছারা আয়ুও আছে হয়ত মেরেকেটে আরও ১৫ বছর। কিন্তু পি-এফে যা
জমেছে তা দিয়ে ঐ ১৫ বছর টানতে পারবে না। এখন বল, তুমি কী করবে?
-
কার কী
হল?
-
সেটা
ছাড়ো। মনে কর, কেউ না। তুমি। তুমি কী করবে?
-
লটারি
কাটব।
- একজ্যাক্টলি।
সেটাই হয়েছে। উনি শুধু লটারি কাটছে। কাটছে তো কাটছেই। কারো কথা শুনছে না। সারা ঘর
লটারির টিকিটে ভরে গেল। পাখা চালালে লটারির কাগজ ওড়ে। ক্যান ইউ ইম্যাজিন? পাড়াতে
এখন সবাই লটারিকাকু বলে ডাকে। না, শুধু লটারি নয়। ডানহাতে দু’টো, বাম হাতে
তিনটে উঠেছে ইতিমধ্যে। তারপর গতমাসে আবার চুম্বক নিয়েছে।
-
চুম্বক?
-
আজ্ঞে।
জী হাঁ। চুম্বক। মানে ম্যাগনেট।
-
বল কী!
-
কি আর
বলবে। কপাল তো নয়, যেন গোদরেজের লক। তার আবার ভাগ্য!
চন্দন আচমকা চুপ মেরে গেল। চেয়ারটাকে টেনে আবার নিজের
কম্পিউটারের সামনে চলে গেল।
ওদিকে ভাগ্য পরখ করতে গিয়ে সোমেন দেখল, সে ভিজে গিয়ে
একটা কাক হয়ে গিয়েছে, আর কাকটা ঘাড় ঘুরিয়ে চন্দনের কথাটাই ভাবছে। চন্দন কার গল্প
বলছিল তখন? লোকটি কি চন্দনের বাবা হন? নাকি কাকা-জ্যাঠা? নাকি পাড়ার কেউ?
-
ট্যাক্সি!
মনুমেন্টের তলায় দাঁড়িয়ে সোমেন ভগবানের দেখা পেয়ে
গেল। হলুদ ট্যাক্সিটি গতি থামিয়ে ঠিক তার সামনে এসে থামল। সে দরজা টেনে ভেতরে ঢুকে
পড়ল।
বৃষ্টি থামলেও হাওয়ার ঝাপট চলছিলই। রাত ১০টার পর
বৃষ্টিটা আবার ঝাঁপিয়ে নামল। যা খবর পাওয়া যাচ্ছে, রেললাইন এখনও ক্লিয়ার করা
যায়নি। শিয়ালদহের দক্ষিণ শাখা ইন্দির ঠাকুরনের মত গাছতলায় বসে আছে। এর প্রভাব
নর্থেও পড়তে শুরু করেছে। হাতের ঘটিটা ঐ গড়িয়ে পড়ল বলে!
বাড়ি ফিরবার আগেই মোবাইলটা সুইচড-অফ হয়ে গেছিল। সোমেন
বাড়ি ফিরেই মোবাইলটা আগে চার্জে বসিয়ে দিল।
মিতুর মুখ থমথম করছে?
-
কী হল?
-
বাড়ির
দেয়াল ধ্বসে পড়েছে। বাবা অসুস্থ। ওকে নিয়ে দাদা কোথায় যাবে বলত!
-
সেকী!
সোমেন কথার জোগান দিতে পারছিল না। শেষে বলল, তোমার পিসির বাড়ি তো কাছেই। ওদের
ওখানে কোন ব্যবস্থা করা যায় না?
-
কী যে বল!
মিতুর চোখ লাল হয়ে গিয়েছিল। টুপ করে জল খসে পড়ল, এই ছবিগুলো পাঠিয়েছে। দেখ। দেখলেই
বুঝতে পারবে।
মিতুর দাদা ওর মোবাইলে বেশ কয়েকটা ছবি পাঠিয়েছিল। ছবি
তো নয়, যেন মৃত্যুর সংকেত!
মিতুদের বাড়ি একতলা। জল খাটের পায়া অব্দি উঠে এসেছে।
খাটের উপর জড়সড় হয়ে বসে আছে ওর বাবা।
কোমর জলে দাঁড়িয়ে আছে ওর ভাইজি। হাতে একখানা
টেডি-বিয়ার। হলুদ রঙের। এই বয়েসে বিপদ-আপদ টের পাওয়া কঠিন। ঘরে জল ঢুকে গিয়েছে,
থালাবাসন ভাসছে – তাতে যেন সে বেশ মজা পেয়েছে। সে হাসছে। তার সামনের দু’টো দাঁত সদ্য
ভেঙেছে বুঝি। সে এখন ফোকলা মেয়ে।
দু’টো ছবি ছাদ থেকে তোলা হয়েছিল।
আলুয়াবাড়ির এই এলাকাটিতে জল থইথই করছে। গাছপালা মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নৌকোর
উপর বসে রয়েছে একটা পরিবার। তারা হয়ত ঘর ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাচ্ছে।
আলুয়াবাড়ি ভাসছে। ঠিকমত ফোনে কথা বলা যাচ্ছে না।
বারবার লাইন কেটে যায়। কোথাও ইলেক্ট্রিকের পোল হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে জলের উপর।
আলুয়াবাড়ি ভাসছে? তারমানে কি ইসলামপুর, রাধিকানগর,
উত্তর দিনাজপুর – এগুলোও ভাসছে? জলের তলায় মানুষেরা নিশ্বাস নিচ্ছে? জলের
তলায় মানুষেরা খাবার খাচ্ছে? মানুষেরা হাত-পা নাড়ালে জলের উপরিতল বুজকুড়ি কাটছে?
-
আজ তো
আমি সারাদিন নিউজ শুনেছি। ওখানকার কোন খবর কেউ দিচ্ছে না। একজায়গায় শুনলাম ২ জনের
মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সেই খবরটাও আর ফলো করল না।
মিতু এক নিশ্বাসে
কথাগুলো বলেই মুখ ঘুরিয়ে নিল। তারপর কিছুটা সামলে আবার শুরু করল, এই ছবিগুলো
ফেসবুকে শেয়ার করেছিলাম। দু’মিনিটের মধ্যেই উধাও হয়ে গেল।
টাইমলাইনেও আর খুঁজে পেলাম না। এখন আমাকে টেম্পরারি ব্লক করে দিয়েছে। ভাবতে পারো
এটা নাকি ২০৩০?
সোমেন মিতুর পিঠে হাত
রাখল, দাদার সঙ্গে কথা বলেছ?
-
সেই আট’টার দিকে
একবার কথা হয়েছিল। তারপর থেকে তো আর ফোনে পাচ্ছি না। আমার মনে হয় ইচ্ছে করে
নেটওয়ার্ক জ্যাম করে রেখেছে যাতে আমরা কোন খবর না পাই। আমার কিছু ভাল্লাগছে না।
সারারাত মিতু ঘুমতে
পারল না। পাশের মানুষটি না ঘুমলে, পাশের লোকটিরও ঘুম আসে না। সোমেন চখ বন্ধ করে
চুপচাপ শুয়ে ছিল। নাইটল্যাম্পের আলো বৃষ্টির শব্দের সঙ্গে মিশে ভারি হয়ে আসছে যেন।
সোমেন বুঝতে পারছিল, এবার সেই ভারি ভারি আলোর চাঙড় তাদের দু’জনার মধ্যে
হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে।
মাঝখানে একবার
বাথরুমে গেছিল মিতু। লাইট জ্বালাবার আওয়াজ পেয়েছিল সে। তবু চোখ খোলেনি। সে চোখ
বন্ধ করেই মানুষগুলোকে দেখছিল।
সে জল দেখছিল। পুকুর
উপচিয়ে উঠে আসা, নদী উপচিয়ে উঠে আসা ঘোলাটে জল দেখছিল। সে দেখছিল জলে ভেসে আছে
থালাবাসন, সসপ্যান, প্লাস্টিকের বালতি। নারকেল গাছটি উটের মত গলা বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে
রয়েছে। গাছটির গলায় কে একজন হলুদ রঙের টেডি-বিয়ারটিকে লাল রিবন দিয়ে বেঁধে দিয়েছে।
ঠিক যেন জন্মদিনের উপহার। কার জন্মদিন এখন? কে জন্মেছিল এইদিনে? নাকি এখুনি
এইমুহুর্তে কেউ একজন জন্ম নেবে বলে তার বাবা টেডি-বিয়ারটিকে এইভাবে গাছের গায়ে
ফলের মত বেঁধে রেখে এসেছে?
দু’টো তিন’টে টায়ার
বেঁধে তার ওপর কাঠের পাটাতন ফেলা হয়েছে। পাটাতনের উপর বসে আছে মিতু, মিতুর বাবা, চন্দন
ও সোমেন। মিতুর দাদা অনেক দূরে। একতলার ছাদে উঠে তাদের দিকে হাত নাড়ছে।
সোমেনের হাতে একটা
স্টিলের খুন্তি। এইটুকু যন্ত্র দিয়ে সে কিভাবে নৌকোটিকে টানবে?
মিতুর মুখ থমথমে। সে
কোন কথা বলছে না।
চন্দন বলল, আমি যাব
না সোমেনদা। ব’লেই সে নৌকো থেকে ঝাপ দিল।
মিতুর বাবা বলল, এই
তো চামচ, গ্লাস, চা-পাতা, চিনির কৌটো। দু’টো তিন’টে হাঁড়িও
এনেছি। এই দিয়েই চালাতে হবে। চালাও খোকা। জোরে জোরে দাঁড় টানো।
-
সোমেন,
এই সোমেন!
মিতুর ডাকে খুন্তিটা ফেলে দিল সে।
-
কখন থেকে
ডাকছি। আট’টা বাজে এখন।
মিতু ইতিমধ্যে স্নান সেরে নিয়েছে। তার গাঁ দিয়ে
মশ্চারাইজারের গন্ধ আসছে।
-
দাদা
ভোরবেলা ফোন করেছিল। বলল রাতের মধ্যেই ওরা পিসির বাড়ি শিফট করতে পেরেছে। এখন জল না
নামা অব্দি ওখানেই থাকবে।
সোমেন তখনও নৌকোয়। জানতে চাইল, ক’টা বাজে?
-
বললাম তো
আট’টা। আমি চা করছি, তুমি মুখ ধুয়ে নাও। আজ বুঝি তুমি অফিস
যেতে পারবে না।
মিতু ওর ফোনে একটা নতুন অ্যাপ ইন্সটল করেছে। তাতে
গ্রাফিক্যালি দেখা যাচ্ছে কিভাবে নিম্নচাপ কলকাতার দিকে এগিয়ে আসছে।
মিতু বলল, ম্যাজিক দেখবে?
-
কী?
অ্যাপটা যে শুধু মেঘের গতিপ্রকৃতি দেখাচ্ছে তা না।
পিনকোড এন্টার করলে সেই অঞ্চলের রাস্তাঘাটের কী অবস্থা এখন, তাও দেখিয়ে দিচ্ছে।
বাড়ি, ল্যাম্পপোস্ট, গাড়ি তো বটেই, সোমেন মানুষের মুখও স্পষ্ট দেখা পেল।
সোমেন বলল, তোমাদের বাড়ির পিনকোড মেরে সার্চ কর। দেখি
কী অবস্থা।
মিতু ঠোঁট ওল্টালো, আগেই দেখেছি। মেট্রোসিটির বাইরে
এরা কোনকিছু কভার করে না।
সোমেন অফিসে ফন করে দিয়েছিল। অফিস কামাই, কিন্তু
কাজের কামাই নেই। সে সুজয়দাকে ফোনে ধরল। সুজয় সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। বলল,
একদম আস্তে পারবে না?
-
কী করে
যাব? ট্রেন এখনও বন্ধ। আর রোডের যা অবস্থা এখন বেরলে লাঞ্চের আগে পৌঁছতে পারব না।
-
আচ্ছা,
দাঁড়াও। সুজয়দা কী চিন্তা করে বলল, আমাকে আধঘন্টা টাইম দাও। কথা বলে জানাচ্ছি।
পনের মিনিটের মধ্যে আবার ফোন এল।
-
বল।
-
মেশিন অন
করেছ।
-
মেশিনের
সামনেই বসে আছি। তুমি বল।
-
Ok. আমি তোমাকে সারভার অ্যাক্সেস দিয়ে দিচ্ছি। তুমি ঘরে বসেই কাজ করতে পারবে। আর হ্যাঁ,
ওয়েবক্যামটা অন করে নাও।
-
থ্যাঙ্ক ইউ
সুজয়দা। সোমেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
মিতু পাশে বসে সব’টা শুনছিল। বলল, ইস, বাইরে বৃষ্টি
পড়ছে আর তুমি এখন কাজ করবে?
কাজ করতে করতেই মাথায়
মতলবটা এসেছিল। প্রথমে বিশেষ পাত্তা দেয়নি। কিন্তু মতলবটা মাথা থেকে বেরল না। শেষপর্যন্ত ভাবল, একবার ট্রাই
করে দেখাই যাক না কী হয়!
সে পিৎজা-লাভের ওয়েবসাইটে
চলে গেল। ল্যান্ডিং পেজে এখনও ব্যানারটা
রয়েছে। ৩০ মিনিটে ডেলিভারি। অন্যথায় ডবল টাকা একাউন্টে ফেরত।
-
মিতু, এই
মিতু।
মিতু সঙ্গে সঙ্গে হাজির।
-
অ্যাডটা
দেখ।
-
এখন পিৎজা?
-
অ্যাডটা দেখ
না।
মিতুর মুখে মনিটারের
সোনালি আলো এসে পড়েছে। সে বলল, টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনে তো তেমন কিছু লেখা নেই। কিন্তু
ওরা এখানে ডেলিভারি করবে কিভাবে? এখানের সবাই তো এখন ঘরবন্দি।
-
ইমাজিনেশনটাকে
বাড়াও। সোমেনের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল, ডেলিভারি না করতে পারলেই তো লাভ। আধঘণ্টায়
১২০০টাকা একাউন্টে চলে আসবে। এই বাজারে মন্দ কী!
সে তাদের পিনকোর্ড
দিয়ে সার্চ করল। কী আশ্চর্য, পপ-আপে ভেসে উঠল – সার্ভিস
অ্যাভেইলাবেল।
সে আর দেরি করল না।
পেমেন্ট গেটওয়ে পেরিয়ে তার একাউন্ট থেকে যখন ৬০০টাকা ডেবিটেড হল, সে মিতু দিকে
তাকাল – মিতার ঠোঁটে তখন সিনেমার নায়িকাদের মত হাসি।
টুং।
অর্ডার কনফর্মেশন এস-এম-এস
চলে এসেছে।
মিতু বলল, জিপিএস অন
কর।
সোমেন জিপিএস অন করে
এবার অ্যাপটা খুলল। মোবাইলের স্ক্রিন জুড়ে কলকাতার ম্যাপ। একটা নীল ডট প্রায় পাখির
মত উড়ে এসে চৌকোণ সবুজ জায়গাটায় এসে থামল।
ডট-টির উপর ট্যাপ
করতেই দু’জনে অবাক। সেখানে ওদের বাড়ির ঠিকানা লেখা।
যা খবর পাওয়া যাচ্ছে – লোকাল
ট্রেন এখনও বন্ধ। জিঞ্জিরা বাজারের দিকে বাস উলটে গিয়েছে। যদিও কোন হতাহতের খবর
নেই। তবে রাস্তা পুরপুরি বন্ধ না হলেও, ঐ রাস্তা কোথাও পৌছয় না।
মিতু কনফার্মড, এখুনি
ক্যান্সিলেশন এস-এম-এস ঢুকবে। ঢুকবেই ঢকবে। পিৎজা-লাভের কোন আউটলেট এদিকে
নেই। শেষ আউটলেট সেই তারাতলায়। সেখান থেকে এইসময়ে ৩০ মিনিটে ডেলিভারি করা অসম্ভব। তারমানে ১২০০ টাকা একাউন্টে ক্রেডিটেড হচ্ছেই।
সোমেন বলল, ঐ টাকায় এবার
এ-সির ইএমআইটা দেওয়া হয়ে যাবে।
১৫ মিনিট কেটে গেল।
কোন এস-এম-এস এল না। এদিকে অ্যাপে ডেলিভারি স্ট্যাটাস দেখাচ্ছে – অন দ্য ওয়ে।
মিতুকে ফোন করেছে ওর দাদা। মিতুর বাবা গতরাতের ঝক্কি সামলাতে পারেনি। শরীরটা আবার বিগড়েছে।
মিতু বলছে, কোন উপায়
নেই? কোনভাবে হাসপাতালে পৌঁছুতে পারবে না?
ওপার থেকে কী উত্তর আসতে
পারে তা সহজেই অনুমেয়।
২০ মিনিট। এখনও কোন এস-এম-এস এল না। ওদিকে সোমেন দেখছে একটা সবুজ ডট ব্লু ডটের দিকে ক্রমশ
এগিয়ে আসছে।
সে নিজের চোখকে বিশ্বাস
করতে পারছিল না। আর একবার অর্ডার ডিটেইলস
চেক করে নিল। সবই তো ঠিকঠাক আছে, তবে?
মিতু খুব আস্তে আস্তে
ফোনে কথা বলছে। গতরাতের টেনশন আবার তার
চোখমুখে হাজির।
২৬ মিনিটে এস-এম-এস এল - We are
ready to deliver your order. Kindly provide us accessibility to serve you
better.
সোমেন চেয়ার ছেড়ে সোজা বারান্দায় চলে এল। এখান থেকে বাড়ির সামনের রাস্তাটা দেখা যায়। রাস্তাটা জলে ডুবে আছে। কোথাও কোন গাড়ি বা বাইক নেই। অথচ অ্যাপে দেখাচ্ছে তার বাড়ির সামনে পিৎজা এসে গিয়েছে।
ব্যাপারটা কী! সোমেন কিছুই
বুঝতে পারছিল না। তখনি তার চোখ গেল সামনের
ব্যালকনির দিকে। সেখানে দু’জন দাঁড়িয়ে তাদের ছাদের দিকে ইশারা করছে।
-
এই মিতু, তাড়াতাড়ি এসো।
সোমেন বউ-এর জন্য ওয়েট করল না। কোনরকমে একটা
ছাতা নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে দৌড়তে থাকল।
ছাদের দরজা খুলতেই দমকা হাওয়ায় তার ছাতাটা উড়ে
গেল। তবু সেদিকে তার খেয়াল নেই। সে অঝোর বৃষ্টির মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়েছে। তার মাথার উপর কালো মেঘের আকাশ। আকাশে লাইট জ্বলছে।
মিতুও ততক্ষণে এসে পড়েছিল। সে সোমেনের হাত কামছে ধরল। দু’জনাই আকাশের দিকে তাকিয়ে স্থির।
তখন তাদের মাথার উপর ঠিক সাইন্সফিকশনের মত একটা
ড্রোন ঘুরছে।
আবার দমকা হাওয়া দিল। বিদ্যুৎ চমকাল।
সোমেন আর মিতু হুহু করে ভিজে যাচ্ছে। ঠিকমত তারা দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। তবু ড্রোনটি পিৎজা-লাভের প্যাকেট নিয়ে তাদের দিকে অলৌকিক হাসি ছুঁড়ে দিয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ