ইয়াছমিন...যদি খেজুর গাচ অয়্যা
পারতাম। রছের লাহান তামাম কিছু বাইর
কইরা আমিবী ছুখের লেঞ্জা ধইরা আছমানে উড়াল দিবার পারতাম। হালার ইছক এমুন চাগর দিয়া উঠত না, জইম্মা জইম্মা টাটাইতো না।
এমতে ডক-ডাগের মাইয়া মানুছ
আছ-পাছে কম আচে নিহি! রোজই তো গুলছান, ছিউলি, কামরুন এরা আয়া কয়, “দিদার। তুমার আতের চা পিলাইবা না?” ছেমড়িগুলারে
দেইক্ষা কাস্টমাররা জোছ-জোছ ফ্যানা তুলতে থাকে। তালেব আর রিপনভী মইজ্জা থাকে কতার নেছায়।আর আমি তহনও আতিপাতি বিচরাই
তুমারে। আমার চক্ষে জবার লাহান ফুইট্টা
থাকো তুমি,ছুইয়ের লাহান বিন্দা থাকো তুমি।
ইয়াছমিন,তুমার লগে মোলাকাতের আগে আমি কত বুঝমান আছিলাম!ভাবের ঘরে
খিল দিতাম না।কত কি অইতো মাগার নিজেরে ছামলায়া পারতাম। এই যেমুন ছোডকালে দাদাজান
কইতো তর লগে ছিরীন বানুর বিয়া দিমু।ছিরীন বানু আছিলো আমার চাচতো বইন।বড় অইতে অইতে
আমারও ছিরীনরে বউ বউ মনে অইতো।ছিরীন বানুও কতায় কতায় হাসাহাসি, ঢলাঢলি করতো।না চাইলেই যারে পাওন যায় তারে ক্যমাতে চামু
তা বুঝবার আগেই একদিন তার ছাদী ঠিক অয়্যা গেলো। ছাদীর দিন দাদাজান আর আমি দুইজনই দুইজনরে দুষ দিছিলাম। মাগার কেন জানি
ছিরীন বানু খসমের লগে চইলা যাওনের পর গালের দাড়িগুলান কামড়াইতাছিল। হেই দিন
সন্ধ্যায় রাস্তার পারের আমির চাচার দোকানে পরথম দাড়ি কাটতে বয়া পড়ছিলাম। আয়নায়
চায়া চায়া বুঝবার পারছিলাম আমি ব্যাটা মানুষ, রোজ রোজ আমার ছেভ অউন লাগবো। বুঝবার পারছিলাম, আমি ব্যাটা মানুষ, কত
মাইয়া আইবো, কত মাইয়া যাইবো। মাগার এখন বুঝবার
পারি না তুমার আওয়া যাওয়া হুদামিচাই আমারে ঠ্যাটা বানায়া খাড়া কইরা থুইচে ক্যালা। ক্যালা
আমি তুমার আওন যাওন দেখতে দেখতে দিলরে ছমাঝায়া পারি না, আমারও তুমারে বুইড়া আঙ্গুল দেখান দরকার।ওস্তাদ কইছিল, “ইয়াছমিনের লগে এমুন পিরীত ওইবার পারে, এই কমিনীই এমুন।” মাগার তুমি গোসসা হইও না। আমিও না বুইঝা ওস্তাদের চোপা
চাইপ্পা ধইরা কইছিলাম, “আবে!মুখ ছামলাও।” পরে হুনছি তার লগেও তোমার
চিন-পরিচয় আছিলো, আওন
যাওন আছিলো। হ ওস্তাদ তুমারে ছিনালই কইছিল। কইছিল, “ইয়াছমিনরা দরা দিবার চায় না, দরা দেয় না। এই পদের মাইয়া মানুছই ব্যাডা মাইনছের জম রে
দিদার”। ওস্তাদ আরও কইছিল, “ব্যাটা, ইয়াছমিনরে তর ওস্তাদই পায় নাইক্কা তুই পাবি ক্যামতে?”
২
ইয়াছমিন, তুমারে আমার আম্মার কথা কই নাইক্কা। আম্মার আছল নাম
লক্ষী। বিয়ার আগে হ্যায় হিন্দুর মাইয়া
আছিলো। কাচা বয়সে আব্বাজানের লগে ভাইজ্ঞা আয়া মুছলমান অইছিলো ঠিকই মাগার আমরা
ভাই-বইন ওইবার পর পলায়া পলায়া হিন্দু পাড়ার নানির বাড়িত যাইতো। আমগোর অছুখ-বিছুখের
ছময় খাটের তলা থেইক্কা ঠাকুর বাইর কইরা পূজা দিতো। আব্বার বালা থাউনের চিন্তায়
সিথিত সিন্দূর দিয়া ছিথি পাটি কইরা ঢাইক্কা রাখতো। পয়লা পয়লা আব্বা দেইক্ষাও দেখত
না। মাগার অস্তে অস্তে নিমতলীর পীরের
মুরিদ অয়্যা নমাজ আর জিকির ছাড়া কিছু বুঝবার পারতো না। ভুলভালে আম্মা রাম-ভগবান
কইলে চয়-চটকনা দিতো।বেদীন কাজ কাম করতে মানা করতো। মাগার আম্মা পূজা বন করে
নাইক্কা। আরও চুপে চাপে হের ঠাকুর ভক্তি উগরায় উঠছিল। হেরা দুজনই একি লগে ধর্মে
আন্ধা অইয়া যাইতাছিলো।
একদিন রাছের মেলাত থেইক্কা
জিলাপি কিন্না দিয়া আব্বায় আমারে জিগাইছিল, “আমি বাড়িত না থাকলে তর মায়
পূজা করে নাকি রে ব্যাটা?” আঁতকা খাওয়া জিলাপির রসে আমার
দিলে ভিজ্জা আছিলো দেইক্ষা আমি কয়্যা দিছিলাম, “হ আম্মা সন্ধ্যাবেলা পূজা
করবার বয় পলাইয়া পলাইয়া। আরও
জিগাইছিল তর নানার বাড়িত যাছ নি?” আমি কইছিলাম,“নানা বাড়িত না থাকলে মাঝে
মইধ্যে যাই। আব্বা তুমি আম্মারে কিছু
কইওনা।”আব্বা শুইন্না চাবাইয়া চাবাইয়া
কইছিল, “মালোয়ানের ঝিরে তালাক দিমু।” হের পরের দিন আব্বা আম্মারে তালাক দিয়া দিছিলো। হেই
থিক্কা মিষ্টি আমার লেইজ্ঞা হারাম।
আম্মা ছাড়া নানান ছমছ্যায় আমরা
বড় অইছি। আমার নানা বাড়িতেও আম্মার জায়গা অয় নাইক্কা। হিন্দু পাড়ায় আম্মার এক
পিসাতো বইন তারে পেডে ভাতে রাখছিল। হুনছি জাতে ফিরা যাইতে আম্মার অনেক বড়
প্রায়শ্চিত করন লাগছিলো।
ইয়াছমিন, ওস্তাদ কয় তুমারে পাওন যায় না। মাগার আমি ঠিক করছি
তুমারে লইয়া নতুন ঘর করবার ছময় আমি মিঠাই খামু। আমার আম্মার কপালে খরাবি আনছিলো
যেই মিঠাই তারেও আমি মাফ-সাফ কইরা দিমু।
৩
গরম বেছি পড়লে কাষ্টমাররা চা
খাইবার চায় না। আমি মিষ্টি আর বাকড়খানি বেচার ধান্ধা করি। আর তুমি পাতলা কামিজে ছাইজা-গুইজা
নটি বেটিগো মতো হাইট্টা যাও।আমারে চিনবার চাও না।তুমি ভুইল্লা যাও আমার লগেভী
তোমার কিছু একটা আছে,একটা
কিছু আছিলো।
এক গরমকালে আম বাগানে আমরা দেখা করছিলাম। আমের
ফুলের গন্ধে মাতাল হইয়া আছিলো দুপুর। তোমার ঠোডের উপরের আর নাকের নিচের জইম্মা
থাকা ঘামের দিকে চায়া চায়া আমি তোমারে হাতে টেকা গুইজা দিছিলাম। তুমি কইছিলা, “ঐ মিয়া টেকা দিলা ক্যালা?” আমি
কইছিলাম, “তুমারই ত্তো ছব।”তুমি কইছিলা, “ছকলতে কয় তুমি একটা কাউঠা কিছিমের আদমি, এক টেকার চা তুমি বাকিতে দিবার চাও না। হেই তুমি মিয়া
টাকা দিলা ক্যালা? খারাপ
মতলব আছে নিহি? ফুর্তি করবার চাও?”
ইয়াছমিন আমি কইতে পারি নাই, আমি জানি তুমার চলে না। চালের কেজি বিছ টেকা আর বেগুন
ছাইট টেকা। কইতে পারি নাই, ফিরত
আনতে যাওনের মতো টেকা কামাই করার আগেই আম্মা দুনিয়া থেইক্কা গেছেগা। আব্বার আতে
রুজি তুইলা দেওনের আগেই আব্বা এক পীর ভাইর লগে নিখোঁজ অইয়া গেছে। বইনডা ছিরাজগঞ্জ
থাকে আর ঢাকা আহে না।
আমি তুমারে কিনতে চাই নাই
ইয়াছমিন। আমি চাইছিলাম টেকার লেইজ্ঞা তুমি ফ্লোর ম্যান কুদ্দুসের কাছাকাছি
দাঁড়াইয়া দরবার না কর। কুদ্দুস যেমুন কুত্তার মতো নাক টাইন্না তুমার ছুবাছ নিবার
না পারে। আমি চাইছিলাম, কোন
ছুমন্দীর পুতের টাকা দেইক্ষা যাতে তুমি কতা দিয়া না হালাও। তুমি যেমুন বুঝবার পারো
আমিই তুমারে বালা রাখবার পারুম।
হেই জষ্ঠি মাছের গরমিতে ভী
আমার গলা হুগায় গেছিলো। আমি গলা খাকড়ি দিয়া কইছিলাম, “ইয়াছমিন আমি তুমারে বিয়া করবার
চাই।” তুমি
কইছিলা, “একবার বিয়া বইছিলাম। বিয়া কোন মস্তি মজাকের চিজ না।” আমার
রাগ উইঠঠা গেছিলো। আমিভী কইছিলাম, “গর ভাড়া দেরিতে দিবা বইলা ছপনের লগে তুমি রাইত বিরাইতে
কোনায় খাড়ায় গুজগুজ কর না? মাইনসে
তুমারে ছিনাল কইলে আমার চান্দিত আগুন লাগে। বিয়া মস্তি মজাকের চিজ না। একলা একলা
বস্তিত থাকনবী মস্তি মজাকের চিজ না।” ছব ছুইনা তুমি আমার কপালে টেকাগুলি ঢীল্লা মাইরা দিছিলা।
হুনচি মাইয়া মানুছ বিয়ার কতা
কইলে খুছি অয়। বেডা মাইনছেরে নিজের ভেরা
বানায়া রাখন মাইয়া লোকেরা পছন করে, মাগার
তুমারে বিয়ার কতা কইতেই তুমি চেইত্তা গেছিলা। আমি তোমার চক্ষের ভিতরে চায়া গুমর
বুঝবার চাইছিলাম। তুমি ধ্বাক্কা দিয়া ছরাইয়া দিয়া কইছিলা,“এহ! হউরের পোলা আইছে।”
৪
এইবার চইত মাছ থেইক্কা সুরজ
কেমুন খামোছ খাইয়া গেছে। ছবতেই
খালাছ অইবার চায়। হুদা আছমানের গলতি আছে
নিহি। হালিমার পোয়াতি মাইয়ার বিয়ানের
টাইম আইছে দেইক্ষা রোজ রাইতে যেমতে বিলাপ পারে,আছমান ভী রোজ রোজ বিলাপ পাইড়া পেট খালাছ করে।উত্তর পাড়ার বস্তি, জাম তলার বস্তি ছব পানির তলে ডুইব্বা যায়।
আমগোর কলিম ছেখের বস্তিত পানি
উঠে না। ম্যালা আদমি এই ছময় ঘর বাগা
বাগী কইরা থাহে এইহানে।হেদিন তুমারেও দেখলাম পলির লগে হাতে পোটলা লইয়া হুজি খালার
গরে ঢুকতে।আমার ইচ্ছা করে তুমারে গিয়া কই,আছমান তো ফন্দি-ফিকির কইয়া তুমারে লিয়া আইছে।আমার গরেই উইঠা আহ না। কাঁথার
তলে হুইয়া হুইয়া গপ করুম। অইতে পারে যদি তুমি কইবা, ফূর্তি করবার চাও? আমি আবার হুগনা গলা খাকড়াইয়া কমু, বিয়া করবার চাই।
রোজ বিহানে চান্দিত ওড়না
প্যাচাইয়া তুমি বাইর অইয়া যাও। ফুলের ছাপ দেওয়া কামিজ আর জংলা ছেলোয়ার।আমি আত মুখ
না ধুইয়াই তুমারে দেহনের লেইজ্ঞা গরের দরজায় চুপি দিতে খাড়াই।ছামনে যাই না। আমারে
দেখলেই যদি তুমার মিঠাইয়ের লাহান মুখ নিম-নিসিন্দা অয়্যা যায়?আমার এমুন চামি চামি দিন দেইখা পরছু ওস্তাদ কইছে, এইবার ভুইল্লা যা।ইয়াছমিনের পিছে না তুই লোওড়াইতাছছ
চুতিয়া জিন্দেগির পিছনে। যেই জীন্দেগি বাহানা দেহায়, দরা দেয় না।নিজের কাছে নিজের ইজ্জত খোয়াইছনা।
না!ইয়াছমিন ওস্তাদের শল্লায়
আমি আঙ্গুর ফল টক কইবার চাই না। আমি ছিয়াল নিহি!আমি আছেক। তুমার ছাচ্চা আছেক।
আমি আইজ বয়া আছি হুজি খালার
গরে। কাম থেইক্কা তুমি ফিরা আইলে আজ
জিগামুই জিগামু। আর কত দিলের টাটানি
ছামলায়া পারমু। হুজি খালা গরে নাইক্কা। নানান ছেমরিরা পাখির লাহান কিচকিচ করতাছে। ছবতের মইধ্যে ময়নারে চিনবার পারলাম। আক্কাস কাকার মাইয়া। আক্কাস কাকা আমার আব্বার বন্ধু আছিলো। আম্মা যাওনের পর আক্কাস কাকা কতদিন ডাইক্কা নিয়া
খাওয়াইছে।ময়না আমগোর বাছায় কত আইছে!আমারে বয়্যা থাকতে দেইখা ময়না কাছে আহে।বাত-চিত
করে। ময়না ছোডকালের কতা কইয়া কান্দে। আমি তার মাতায় আত রাখি। আর অমনি আইয়া খাড়াও
তুমি।
আমারে আর ময়নারে এক লগে বয়া
থাকতে দেইখা তুমি পুলিছের লাহান হাছো। তুমি দরা দিতে না চাওনের বাহানা খুইজা পায়া
ঠোঁট বেকাও। আর আছমান চিক্কুর দিয়া আবার
মেঘ নামায়। তুমি চিল্লায়া কউ,” গর খালি কর মিয়া। মাইয়া মাইনছের গরে কি কাম। রং তামাছা বাইরে গিয়া কর।” হুজি
খালাও ঘরে ঢুইকা জিগায়,
“কি অইচে রে? চিল্লাছ
ক্যালা?”
আমিভী হৌরের পোলার মতোই গলা
ফাডায়া কই,“আমি ইয়াছমিনরে বিয়া করবার চাই।” ছেমড়িগুলি ফের কিচ কিচ কইরা উঠে। হুজি খালা মুখে ছাড়ির
আচল গুজে। তুমার চোক জিদ্দে লাল অইয়া যায়। তুমি ঠাডা পড়া আদমির লাহান পাত্থর অইয়া
থাকো। আর আমি ফের আগের জাগাত বইয়া সিগারেট ধরাই। তুমার চান্দের লাহান খোমা দেইক্ষা
দেইক্ষা মনে মনে কই, “তুমি যদি চুতিয়া জিন্দেগি ওইবার পারো আমিভী কাছুয়া। আমি
লৌড় থামামু না।”
0 মন্তব্যসমূহ