পাঠপ্রতিক্রিয়া : অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস---নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে

সাদিয়া সুলতানা

নীলকণ্ঠ পাখি সেই পাখি যে পাখি মানুষকে সারাজীবন ঘুরিয়ে মারে। এই পাখি যেন মানুষের 'কামনা-বাসনার ঘর।' সবার মনেই হয়তো স্বপ্ন থাকে, একদিন সেই পাখি উড়ে আসবে-পাখি আর আসে না। তবু মানুষের স্বপ্নসাধ জিইয়ে থাকে।

অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে' উপন্যাসের চরিত্র মণীন্দ্রনাথও প্রতিনিয়ত সেই নীলকণ্ঠ পাখি খুঁজে চলেন। হঠাৎ হঠাৎ তিনি দুহাত ওপরে তুলে তালি বাজাতে থাকেন-যেন আকাশের কোন প্রান্তে তার পোষা হাজার হাজার নীলকণ্ঠ পাখি হারিয়ে গেছে। তাই তিনি হাতের তালি দিয়ে সেই পাখিদের ফেরানোর চেষ্টা করছেন। মণীন্দ্রনাথের বড় ইচ্ছে, 'জীবনের হারানো সব নীলকণ্ঠ পাখিরা ফিরে এসে রাতের নির্জনতায় মিশে থাক' কিন্তু তিনি এই যে এতো তালি বাজিয়ে চলেন-পাখিরা নামে না। 

দেশভাগ নিয়ে অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহাকাব্যিক উপন্যাসের চার পর্ব-নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে, মানুষের ঘরবাড়ি, অলৌকিক জলযান আর এবং ঈশ্বরের বাগান। সম্প্রতি পাঠ করেছি প্রথম পর্ব 'নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে।' কিছু বই আছে যা ‘ইতিহাসের বিকল্পপাঠ’ হয়ে কালে কালে সমাদৃত হবার মতো। তেমনই এক বই 'নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে।' সময়কে ধরে রাখার এক অনন্য দলিল এই বইটি পড়ার সময় আমি যেমন বিভোর ছিলাম তেমনি পাঠশেষেও সেই ঘোরগ্রস্ততা থেকে মুক্তি পাইনি। 

প্রায় চারশ পৃষ্ঠার এই বইয়ের প্রায় পুরোটা জুড়ে দেশ আর মাটির অলৌকিক সুন্দর বর্ণনা আর বন্দনা। মণীন্দ্রনাথ যখন আকাশ আর দরগার ভাঙা কাচের স্বচ্ছভাব মথিত করে হেসে উঠে সোনাকে বলেন, "নক্ষত্র দ্যাখো-ঘাস-ফড়িং-ফুল-পাখি দ্যাখো, জন্মভূমি দ্যাখো" সেই সময়টাতে আকাশজুড়ে থাকা আলোরস্রোতে প্রিয় জন্মভূমিকে আমিও নতুন করে দেখি। 

উপন্যাসের আরেকটি অংশ উদ্ধৃত না করলেই না, "এই যখন দৈনন্দিন সংসারের হিসাব, তখন বৃন্দাবনী দুই মেয়েকে বাংলাদেশের মাটির কথা শোনায়। শরৎকালে শেফালি ফুল ফোটে, স্থলপদ্ম গাছ শিশিরে ভিজে যায়, আকাশ নির্মল থাকে, রোদে সোনালী রঙ ধরে-এই এক দেশ, নাম তার বাংলাদেশ, এদেশের মেয়ে তুমি। এমন দেশে যখন সকালে সোনালী রোদ মাঠে, যখন আকাশে গগনভেরি পাখি উড়তে থাকে, মাঠে মাঠে ধান, নদী থেকে জল নেমে যাচ্ছে, দু'পাড়ে চর জেগে উঠেছে, বাবলা অথবা পিটকিলা গাছে ছেঁড়া ঘুড়ি এবং নদীতে নৌকা, তালের অথবা আনারসের, তখনই বুঝবে শরৎকাল এ-দেশে এসে গেল।" 

নিজের দেশের মাটির লাবণ্যতা, গাছের ডালে-ডালে, ছায়ায়-ছায়ায়, পুকুরের পাড়ে-পাড়ে জীবনের যে বন্দনা; সামসুদ্দিনের মায়ের বাতের ব্যথার জন্য শশীবালা 'ঠাইরেনে'র উদ্বেগে তেলের শিশি দেয়ার দৃশ্যে মানুষে মানুষে ধর্মে-বর্ণে যে মিথস্ক্রিয়া; দুদিন ধরে পেটে ভাত না জোটা জোটন বিবির ধান খেতের জলে-আলের নরম মাটির আশ্রয়ে কচ্ছপের ডিম খোঁজা, শালুক তোলা, গাছতলায় সুপারি খোঁজা, আলকুশী লতার কাঁটার ঝোপ পেরিয়ে পানের পাতা ছেঁড়া, ফকির সাবের সামনে সানকির নুন মেশানো ফ্যান গলা ভাত-এসব দৃশ্যপট কি বানিয়ে বানিয়ে লেখা যায়? পাঠককে কি ভাসানো যায় কাল্পনিক বেদনায়? যায় না। 'নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে' পড়েছি আর বেদনার চোরাস্রোতে ভাসতে ভাসতে বইয়ের এক একটি চরিত্র ঈশম, জোটন, জালালি, মালতী, ফতিমা, ফেলু, সোনা এদের সাথে এদের প্রিয় জন্মভূমিতে বিচরণ করেছি। 

উপন্যাসের ভালো লাগার একটি চরিত্র ঈশম। ঠাকুরবাড়ির বান্দা ঈশম শেখ আগে গয়না নৌকার মাঝি ছিল। ভয়ানক শক্ত সমর্থ শরীর তার যদিও বয়স বাড়ায় এখন আর সে নৌকা চালাতে পারে না, নদীর চরে তরমুজের খেত পাহারা দেয়। লন্ঠনের আলোতে বিল ভেঙে, গ্রাম ডিঙিয়ে সে মুড়াপাড়ায় ধনকর্তা ওরফে চন্দ্রনাথের কাছে তার ছেলে হবার খবর নিয়ে যাচ্ছে। পথিমধ্যে বিলের জমি, গাছগাছালির ভয়ে সে মরিয়া হয়ে ওঠে। তাকে কানাওলায় ধরে, সে অজ্ঞান হয়ে যায়। 'নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে' উপন্যাসের এই দৃশ্যপটসহ ফাওসার বিল, গজার মাছের আক্রমণ, গর্ভবতী বোয়াল, তরমুজ খেতের সাদা জোৎস্নায় পৃথিবীর আদি মানব-মানবীর মতো দুজন নর-নারীর ভেসে যাওয়া, সূর্যমুখী ঘা সারাবার বাসনায় ফেলুর জোনাকি ধরা এইসব দৃশ্যপট পড়তে পড়তে মনে হয়েছে যে বইয়ের বাক্য নির্মাণে লেখকের কোনো তাড়াহুড়ো নেই, যে কাহিনী রচনায় লেখকের আছে নিবিড় মমতা, অন্তর্ভেদী দৃষ্টি সেই বইই তো কালজয়ী হবে। 

বইপাঠের শুরু থেকেই ক্ষণে ক্ষণে সোনার পাগলা জ্যাঠামশাইয়ের মতো নীলকণ্ঠ পাখি খুঁজেছি। ১৫ নং পৃষ্ঠায় প্রথম পেয়েছি নীলকণ্ঠ পাখির কথা যাকে সোনার পাগলা জ্যাঠামশাই খোঁজেন অবিরত। মাথা ঠিক না থাকা বড়কর্তা ওরফে মণীন্দ্রনাথ উত্তর চল্লিশের মানুষ, ঋজু শরীর তার। এই মেধাবী মানুষটিকে একদিন দরগার হাসান পীর বলেছিলেন, 'পীর-পয়গম্বর হইতে হইলে তর মত চক্ষু লাগে। তর মত চক্ষু না থাকলে পাগল হওন যায় না, পাগল করন যায় না।' সেই মণীন্দ্রনাথ সত্যিই পাগল হয়েছিলেন। মানসিকভাবে অসুস্থ মণীন্দ্রনাথ যখন উচ্চারণ করেন, 'গ্যাৎচোরেৎশালা' তখন চমকে উঠতে হয়। যতটি দৃশ্যপটে মণীন্দ্রনাথ উপস্থিত হন এই একটি শব্দে অবলীলায় তিনি যেন তার মনের ইচ্ছেটা বা মনের না বলা কথাটা বলে ফেলেন। 

একদিন মণীন্দ্রনাথকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে চন্দদের বড় নৌকার মাঝি আবেদালি ছেলে জব্বরকে বলে ঠাকুরবাড়িতে বাড়িতে খবর দিয়ে আসতে যেন তাকে নিয়ে যায়। কিন্তু জব্বর তার বাজান আবেদালিকে উপেক্ষা করে জানায় ঐ বাড়িতে সে যেতে পারবে না কারণ সে লীগে নাম লিখিয়েছে। বাবার মুখের ওপর জব্বর বলে, 'হিন্দুরা আমাগ দেখলে ছ্যাপ ফালায়, আমরা অ ছ্যাপ ফ্যালামু।' 

কাহিনীর এই পর্যন্ত এসে স্তব্ধ হয়ে থেকেছি। তখন আবেদালি-জব্বর যেই সময়ে দাঁড়িয়ে আছে সে সময়ে ঢাকায় রায়ট লেগেছে-হিন্দু আর মুসলমানরা জবাই হচ্ছে, কচুকাটা হচ্ছে। মুসলমানরা জবাই হচ্ছে জেনে প্রথমে আবেদালি উত্তেজিত হলেও বড়কর্তা, ধনকর্তা, অন্যান্য গ্রামের হিন্দুর উদারতা, পুরুষাণুক্রমে আত্মীয় সম্পর্ক আবেদালির উত্তেজনা মুছে দিয়েছে। বরং ছেলের ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা শুনে সে ছেলের ভাত বন্ধ করে দেবার কথা ভাবে। 

রাইনাদী, মুড়াপাড়া, টোডারবাগে হিন্দু আর মুসলমান পাড়ায় এভাবে সুখ-দুঃখে মাখামাখি করে থাকা মানুষগুলোর মাঝে সূক্ষ্মভাবে ধর্ম দেয়াল হয়ে থাকে। ছোট ফতিমা আর সোনাও জানে মুসলমানের মেয়ে ফতিমাকে ছুঁতে নেই। ফতিমার আঁচলে প্রজাপতি বেঁধে দিয়েছিল বলে মা সোনাকে খুব মেরেছিল তাই আরেকদিন ফতিমা সোনাকে ছুঁয়ে দিলে সোনা ভয়ে ভয়ে বলে, 'আমি তরে ছুইয়া দিছি মায়েরে কইস না।' আবার ফতিমাকে আদর করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করলেও মালতী তা করে না কারণ মুসলমানের মেয়েকে ছুঁয়ে দিলে তার জাত যাবে। 

বিপরীতদিকে ইসলামপ্রীতির জন্য সামু ক্রমে ক্রমে এক গভীর অরণ্যের ভেতরে ডুবে যেতে থাকে আর আকালুদ্দিনের মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে, 'কাফের যত বিনষ্ট হয় তত ভাল না?' আবার কোনো বনবাদাড়ে করবী গাছের নিচে কবরের পাশে বসে থাকা জোটন ভুলে যায়-মাটি কার, হিন্দু না মুসলমানের। এই মাটির ভাগ নিয়েই যতো বিভাজন। তবে বস্তুগত বিভাজন হয় বটে, আত্মার বিভাজন হয় না বলেই তো আজ এতকাল পরেও শুকানো ক্ষত লাখো মানুষের মনে তাজা থাকে। বইটি পড়তে পড়তে বার বার বিচ্ছেদের দেয়ালের দুপাশে থাকা অসংখ্য মানুষের স্নেহসিক্ত চোখমুখ ভেসে উঠে এই উপলব্ধিকে আরো সজল করে তোলে। 

আবার যখন মুড়াপাড়ার হাতি লক্ষ্মীর পিঠে চড়ে সোনার পাগলা জ্যাঠামশাই নিরুদ্দেশ হতে চান, যেতে চান পলিনের খোঁজে, হেমলক গাছের কাছে তখন ভীষণ কৌতূহলী হয়ে উঠতে হয় পলিন কে কিংবা কী করে জ্যাঠামশাই পাগল হলেন তা জানার আগ্রহে। জানতে ইচ্ছে হয় কেন স্মৃতি জাগ্রত হতে হতে মণীন্দ্রনাথ হঠাৎ পলিনের দেশে যাবার জন্য হাতির পিঠে উঠে হামাগুড়ি দিতে চাইছিলেন? মণীন্দ্রনাথ যখন সবাইকে এমন মানসিক দোলাচলে রাখেন তখন গ্রামের সর্বত্র, গাছে-গাছে, মাঠে মাঠে সামসুদ্দিন পাকিস্তান জিন্দাবাদ, নারায়ে তকদির ইত্যাদি ইস্তোহার ঝুলাতে থাকে। গাছে ঝুলানো ইস্তেহার আর হাতি ঘিরে থাকা সবার আনন্দ-আগ্রহ এই বিপরীতমুখী দৃশ্য দেখতে দেখতে মালতী কেঁদে বলতে চায়, ‘সামু, তুই দেশটার কপালে দুঃখ ডাইকা আনিস না।’ 

মালতীর স্বামী রায়টে মারা গেছে। শরীরী হাহাকার আর মনোবেদনায় অকাল বিধবা মালতীর বুকের ভেতরে যখন এক সুখপাখি 'কাইন্দা কাইন্দা মরে', আবেদালি-জালালির ঘরে আগুন লাগে কিংবা ক্ষুধার্ত জালালি যখন মালতীর হাঁসাকে চুরি করে সেদ্ধ পোড়া মাংস নুন লংকাতে ভেজে খেয়ে হাঁসার পালক তুলে অশ্বথের নিচের ঝোপ-জঙ্গলে ছড়িয়ে রেখে আসে তখন বুকের অতলের দুঃখের তোরঙ্গ খুলে যায়। 

শুধু সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব নয় এই উপন্যাসে বেশ কয়েকটি চরিত্র ঘিরে নারী-পুরুষের পারস্পরিক জৈবিক আকর্ষণ বা তাড়নার কথা এসেছে। বয়সন্ধিঃকালে নিজের বয়সের সাথে সোনার যুদ্ধ আর সন্ধির কথা এসেছে। জেনেছি গভীর গোপনে বা প্রকাশ্যে মানুষ জৈবিকতাকে কত ভাবেই না লালন করে। মানুষের মনোজগতে বিচরণ করে বিধবা মালতী-রঞ্জিত, জোটন-ফকিরসাব, আবেদালি-জালালি চরিত্রগুলোকে জীবনের বিচিত্র রঙে নির্মাণ করে সেই বৈচিত্র্যই দেখিয়েছেন এই শক্তিশালী লেখক। 

এভাবে বিভিন্ন চরিত্রের কলরবে উপন্যাসের কাহিনী যতো এগোয় সারাদেশের মতো গ্রামে-গ্রামে সবার মনে বাড়তে থাকে দ্বিধাদ্বন্দ্বের চারাগাছ। ধর্ম বিপন্ন-সেই ইস্তেহার নিয়ে ধীরে ধীরে গাঁথা হতে থাকে মানুষে মানুষে বিভেদের দেয়াল, বাড়ে সামসুদ্দিনের মতো মানুষের মনে বিদ্বেষ। তারপর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চূড়ান্ত পর্যায়ে একদিন এখানেও আসে দেশভাগের খবর। সারাদেশের মানুষের ঘরবাড়ি আর আবেগমথিত মাটির ওপর দিয়ে র‍্যাডক্লিফ লাইন বিভাজনের সীমান্তরেখা টেনে দেয়। ধর্মীয় সহিংসতা, সীমান্ত পারাপারে মারা যায় লাখো মানুষ। বাস্তুচ্যুতও হয় অসংখ্য মানুষ। 

নিজেদের বাস্তুভিটে ছেড়ে যাবার দিন সোনা যেই ধারালো ছুরির সাহায্যে নিরুদ্দিষ্ট জ্যাঠামশাইয়ের জন্য ঠাকুরবাড়ির অর্জুন গাছের কাণ্ডের ছালবাকল কেটে লিখে রেখে যায়-‘জ্যাঠামশাই আমরা হিন্দুস্তান চলিয়া গিয়াছি, ইতি সোনা’ ঠিক তেমনই এক ছুরি দিয়ে যেন হিন্দু-মুসলমানের এক দেশ দু’টুকরো হয়ে যায়। আর সারাদেশের মতো সোনাদের গ্রামেও ফুটে ওঠে দেশভাগের বুকচেরা ছবি। 

দুই খণ্ডে বিভক্ত উপন্যাসের দ্বিতীয় খণ্ডের এই অংশে আছে শতশত মানুষের ভিটেবাড়ি ছাড়ার করুণ চিত্র। অর্জুন গাছের কাণ্ডে সোনার খোদাই করা এক লাইনের বাক্যটি পড়ে বহুক্ষণ আমার পরবর্তী পাঠ এগোয়নি। সত্যি 'জ্যাঠামশাই, আমরা হিন্দুস্তান চলিয়া গিয়াছি' বাক্যটিকে দেশভাগের সবচেয়ে নির্মম শিলালিপি মনে হয়েছে। 

এত বড় মাপের উপন্যাসের কোনো খুঁত ধরার ধৃষ্টতা দেখাতে চাই না। তবে একটা পর্যায়ে উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র মালতী আর পছন্দের চরিত্র জোটনের দীর্ঘ সময়ের অনুপস্থিতিতে বেশ অতৃপ্তি লেগেছে। এদের কথা আরও পড়তে মন চাচ্ছিল। কিন্তু বিপর্যস্ত মালতী আর লক্ষ লক্ষ শয়তানকে কলা দেখিয়ে মালতীর অনাকাঙ্ক্ষিত ভ্রুণ নষ্ট করার পাপের জন্য কাঁদতে থাকা জোটনকে পরে আর সেভাবে খুঁজে পাইনি। যদিও একেবারে শেষের দিকে রিফিউজি মালতীকে পাই নতুন করে যে পুনরায় কদর্য মানুষের লালসার শিকার হতে গিয়ে উল্টো শিকারির রক্তের নোনা স্বাদ নিজের ঠোঁটে মেখে নেয়। 

এই উপন্যাসের অন্যতম শক্তিশালী অংশ এর সমাপ্তি। দেশভাগের সাথে সাথে মানুষের বুকে যে অন্তহীন রক্তক্ষরণের উৎসমুখ খুলে গিয়েছিল তার নির্মম ইঙ্গিত দিয়েই যেন শেষ হয়েছে 'নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে।’ 

বহু বছর পরে এই একটি বই গভীরভাবে আমাকে আচ্ছন্ন করেছে। আর আমাকে আমার অপরূপ জন্মভূমিকে নতুন করে ভালোবাসতে শিখিয়েছে, দেখিয়েছে শত শত মানুষের জন্মভিটে হারানোর দগদগে ক্ষত, জানিয়েছে আত্মিক বন্ধনে বাঁধা অজস্র মানুষের অবয়বহীন আর নিবিড় ভালোবাসার কথা। 


নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে
লেখক-অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রচ্ছদ-পূর্ণেন্দু পত্রী
প্রকাশনী-করুণা প্রকাশনী
প্রকাশকাল-১৯৭১ 





লেখক পরিচিতি
সাদিয়া সুলতানা
গল্পকার। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

10 মন্তব্যসমূহ

  1. চমৎকার পাঠপ্রতিক্রিয়া! বইটি পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।

    উত্তরমুছুন
  2. আমার প্রিয়তম বইগুলোর একটি এ "নীল কন্ঠ পাখির খোঁজে"। ভালো লিখেছেন। সাধুবাদ জানাই। তবে "দেশভাগ নিয়ে অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহাকাব্যিক উপন্যাসের চার পর্ব-নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে, মানুষের ঘরবাড়ি, অলৌকিক জলযান আর এবং ঈশ্বরের বাগান।" --- কথাটি সঠিক নয়। মানুষের ঘরবাড়ি আলাদা। লেখক নিজে নীল কন্ঠ পাখির খোঁজে, অলৌকিক জলযান আর এবং ঈশ্বরের বাগানকে সোনা ট্রিলজি বলেছেন।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

      মুছুন
    2. অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পপাঠে সাক্ষাৎকার, নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজের flap,, মানুষের ঘরবাড়ির ভূমিকা তিনটি জায়গাতেই আমি পেয়েছি মানুষের ঘরবাড়ি দ্বিতীয় পর্ব। তাছাড়া মানুষের ঘরবাড়ির বিলুই সোনা এটা ভূমিকাতে লেখক বলেছেন। বইয়ের যতটুকু এগিয়েছি, বাস্তুচ্যুত সোনার পরিবারের বিপর্যয়ের কথা জানছি। এটাকে তাই লেখকের কথামত দ্বিতীয়পর্বই লাগছে।

      পড়ার জন্য ধন্যবাদ দিদি।

      মুছুন
  3. বইটির অনবদ্য পাঠ পতিক্রিয়া এত সুন্দর ভাবে দেওয়ার জন্য লেখিকা কে অশেষ ধন্যবাদ জানাই।

    উত্তরমুছুন