অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত'র গল্পভাবনা

ছোট গল্পের যদি কোন জ্যামিতিক চেহারা থাকত তবে সে সরলরেখা হত না, হত বৃত্তরেখা। গল্প যদি খালি সোজা চলে তবে হয় সে শুধু বৃত্তান্ত, কিন্তু যদি চলে বৃত্তরেখায়, তার বৃত্তের অন্তে সে হয়ে ওঠে সত্যিকারের ছোটগল্প । যেখানে বৃত্ত যত বেশি সম্পূর্ণ সেখানে ছোটগল্প তত বেশি সার্থক। যতদূর সোজা যাক, এক সময়ে গল্পকে মোড় ঘুরতে হবে, নিতে হবে তির্যক বাঁক, উড্ডীন বিহঙ্গের বঙ্কিম ও ত্বরিত প্রত্যাবর্তনের আকারে; সোজা পথটা যে পরিমাণে মন্থর ছিল, ফিরতি পথটা হতে হবে ততোধিক ত্বরান্বিত।
প্রতিক্ষেপ বা প্রতিঘাতের এই বেগবলটাই হচ্ছে ছোটগল্পের প্রাণশক্তি। অর্থাৎ, কাহিনী যেখানে এসে বাঁক নেবে, যেখানে প্রতিঘাত যত বেশি প্রবল হবে ও যত বেশি দ্রুত সে ফিরে আসবে তার পরিক্রমা শেষ করে তার প্রথম প্রারম্ভবিন্দুতে, তত বেশি সে রসোত্তীর্ণ হবে। এক কথায়, গল্প যদি না ঘুরল তবে সে বেঘোরে পড়ল; যদি চলতে চায় সে সিধে তবেই সে অসিদ্ধ।

তাই ছোটগল্প লেখবার আগে চাই ছোটগল্পের শেষ, কোথায় সে বাঁক নেবে, কোন্ কোণে। আর কোন রচনায় আরম্ভেই আমরা শেষ জেনে বসি না, না উপন্যাসে, না কবিতায়, না বা নাটকে। আমাকে কতগুলি চরিত্র দাও আমি উপন্যাস শুরু কবে দিতে পারব, দাও একটা সংঘাতসঙ্কুল ঘটনা, তুলে দিতে পারব নাটকের প্রথম অঙ্কের যবনিকা--তিন ক্ষেত্রেই রচনার উত্তেজনায় লেখনীর দুর্বলতায় পথ কেটে চলে যেতে পারব এগিয়ে, কিন্তু শেষ না পেলে ছোটগল্প নিয়ে আমি বসতেই পারব না। শুধু ঘটনা যথেষ্ট নয়, শুধু চরিত্র যথেষ্ট নয়, চাই আমার সমাপ্তির সম্পূর্ণতা। সব জিনিস সমাপ্ত হলেই কোন সম্পূর্ণ হয় না কিন্তু ছোটগল্পের সমাপ্তিটা সম্পূর্তি হয়ে ওঠা চাই। তাই ছোটগল্পের কল্পনা কৃতারম্ভ নয়, কৃতশেষ। যতক্ষণ না আমি শেষ জানি ততক্ষণ আমি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার--আর সবকিছু, কিন্তু ছোটগল্প লেখক নই, ছোটগল্পের বেলায় চাই আমার শেষ, তাই হয়ত ছোটগল্প শেষ বা শ্রেষ্ঠ শিল্প।

গল্পকে বৃত্ত বলেছি বটে, কিন্তু তা অত্যন্ত লঘুবৃত্ত। তার বেষ্টনী বক্র, গতি দ্রুত, পরিসর ক্ষীণ, সমাপ্তি তীক্ষ্ণ। বেশি ভাব বইবার মত তার জায়গা নেই, বেশি কথা কইবার মত তার স্পৃহা নেই, বেশিক্ষণ অপেক্ষা করার মত তার সময় নেই। সে এসেছে চোরের মত চুপি-চুপি, চোর বলে তাকে কেউ ধরতে না পারে। তার বেশবাস অল্প, আয়োজন সামান্য, পরিধি পরিমিত। শুধু তাকে ঘুরলেই চলবে না, কোন কেন্দ্রের উপরে কতটুকু জায়গা নিয়ে ঘুরবে তারও আগে থেকে নির্ধারণ চাই। এই নির্ধারণে যত বেশি নিষ্ঠা তত বেশি রসস্ফুর্তি। বৃত্তের বাইরে অর্থাৎ উদ্বৃত্তে সে পরাঙ্মুখ। উপন্যাসে সহ্য হয় উদ্ধৃত্তি, সহ্য হয় অপচয়, কবিতায় সহ্য হয় ইঙ্গিত, সহ্য হয় অস্পষ্টতা, কিন্তু ছোটগল্পে যেমন চাই স্পষ্টতা, তেমনি চাই সংযম, যেমন চাই সংকোচ তেমনি চাই সুব্যক্তি। জীবনের বিক্ষিপ্ত ও বিস্তৃতের মধ্যে থেকে সংক্ষেপে গ্রহণ বা এক কথায় সংকলনই হচ্ছে ছোটগল্পের উদ্দেশ্য, তার বাণ শব্দভেদী নয়, লক্ষ্যভেদী। অর্থাৎ শব্দ শুনে অনুমানে সে তীর ছোঁড়ে না, সে জানে তার কি লক্ষ্য, সে লক্ষ্যভেদী। সত্যি করে বলতে গেলে, ভেদ করার চেয়ে বিদ্ধ করাই হচ্ছে ছোটগল্পের কাজ। ভেদ করা অর্থাৎ ছেদন করা বা বিদারণ করার মধ্যে শক্তির অপচয় আছে; কিন্তু লক্ষ্যমাত্র বিদ্ধ করা ঠিক তার পরিমিত শক্তির পরিচিতি।

কী আমার শেষ ঠিক করলুম, কী আমার চরিত্র ছকে নিলুম, তার পর এঁকে ফেললুম আমার বৃত্ত। যতদূর সংকুচিত করা সম্ভব ততদূর ঘনিয়ে নিলাম বক্রিমা। ব্যস, এর বাইরে আর পদার্পণ নেই। অবান্তর সব বাদ দিয়ে দিয়ে এসেছি, ফেলে ফেলে এসেছি অকারণ ভার। (এত মৃদু যে কুসুমহার সেও ভার হয়ে ওঠে) এখন এক পা গণ্ডীর বাইরে যাওয়াই জলের মাছ ডাঙায় ওঠা, রাবণের ছোঁয়া লেগে সীতার পাতালে তলানো। এই যে স্খলন এইটেই ছোটগল্পের পক্ষে অধর্ম, অসংযম,অভিচার। পদ্মপাতায় নিটোল যে সম্পূর্ণ শিশিরবিন্দু, আপনার বৃত্তের মধ্যে সে সংহত, তেমনি হবে ছোটগল্প আপনার বৃত্তের মধ্যে বিধৃত, পরিমিত; অকিঞ্চিৎকর চাঞ্চ্যলে তার ভারকেন্দ্র যাবে টলে, সে তার ধর্ম হারিয়ে হয়ে উঠবে হয়ত উপন্যাসের অংশবিশেষ। এই পরিমাণবোধ হচ্ছে ছোটগল্পের নিরিখ। সংস্কৃত সাহিত্যে যাকে বলেছে 'লাঘবান্বিত' অর্থাৎ 'বিস্তরদোষশূন্য'--চাই সেই সংযম, সেই নিবৃত্তি। আমার যদি গাছ দরকার তবে তাতে আমি পাতা দেব না, যদি পাতা দরকার তবু আমি ছায়া বিছাব না তার তলায়। ঘোড়া যদি বা একটা ছোটাই তবে সেই সঙ্গে তার ল্যাজও ধাবিত হয়েছিল কিনা এ খবরে আমার দরকার নেই। যদি সোনার প্রজাপতি উড়ে বসে আমার কাদামাখা জুতোর উপর তবে দরকার নেই জানিয়ে সেই জুতো আমার চীনেবাড়ি না বাটা কোম্পানির থেকে কেনা। চাই নির্মম শাসন, ব্রতোদ্‌যাপনের নিষ্ঠা। প্রত্যেক আর্টই সজ্ঞান সক্রিয় সৃষ্টি। থিয়েটারের রঙ মাখার চেয়ে তোলাই কঠিন, তবু মেজে-ঘষে তুলে ফেলতে হবে রঙ, প্রগল্‌ভ কৃত্রিমতা। ব্যূহ-নির্গমের পথ না জেনে ব্যূহ-প্রবেশের স্পর্ধাটা রূঢ়তার নামান্তর। তাই লেখবার আগে জেনে নিতে হবে কি লিখতে হবে না। ব্যূহপ্রবেশের আগে জেনে নিতে হবে ব্যূহনির্গমের কৌশল। ছোটগল্প সেই লিখতে জানে যে লেখার মাঝে থাকতে পারে না লিখে। স্তব্ধতা অনেক সময় বাক্যের চেয়ে মুখর, সংযম অনেক সময় সংগ্রামের চেয়ে প্রবল, তেমনি ছোটগল্পের বেলায় অল্পতাই হচ্ছে বহুলতা, নির্ভূষণতাই অলঙ্কার। তার প্রয়োগফল সামান্য কিন্তু যোগফল বৃহৎ।

এই সম্পর্কে ব্যাঘ্রাক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে সাদৃশ্যটা কল্পনা করা যেতে পারে। উপমাটা যদিও সম্ভোগ্য নয় তবু সার্থক উপমা। ধরুন আপনাকে বাঘে কামড়ে ধবেছে, মুখে করে টেনে নিয়ে চলেছে ছুটে। যদি আপনার তখনও জ্ঞান থাকে, আপনি কি দেখবেন, বর্তমানে ও ভবিষ্যতে, সেই দোদুল্যমান মুহূর্তে? বর্তমানে দেখবেন বাঘ ও তার বেগ, ভবিষ্যতে অবধারিত মৃত্যু, আশেপাশের গাছপালা ঝোপঝাড় নয়, নীল নির্মল আকাশ নয়, নয় বা আর কোন নিসর্গ শোভা। আক্রমণ থেকে সংহার, এই দুই অন্তঃসীমার মধ্যেকার যে পথ সে পথ যত দীর্ঘ বা বক্রই হোক না কেন তার অস্তিত্ব আর সমাপ্তি সেই সংহারে। তেমনি ছোটগল্পের সে পথ তাতেও উদ্যোগ থেকে নির্ভুল উপসংহারের মাঝখানে কোনদিকে তাকাবার জো নেই, কোথাও বিশ্রাম করবার স্থান নেই, বিস্ময়কে বাঘের মতন কামড়ে ধরে একদ্দিষ্ট হয়ে ছুটে আসতে হবে স্থিরীকৃত লক্ষ্যস্থলে। শরব্যে বা লক্ষিত বিষয়ে বিদ্ধ করতে হবে শরমুখ। আরও একটা উপমা নেওয়া যেতে পারে। ধরুন, এক জায়গায় বোমা পড়ছে, আপনি পালাবেন, এমন সময়ে এল একটা এরোপ্লেন, বললে, চলুন শিগগির। আপনি হতবুদ্ধি হয়ে তাড়াতাড়ি নিতে গেলেন আপনার ক্যাশবাক্সটা, জামাকাপড় ভর্তি আপনার সুটকেস, আপনার প্রয়োজনীয় পাথেয়, কিন্তু জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে এসে দেখলেন এরোপ্লেন গেছে চলে, আপনাকে নিতে সে এসেছিল কিন্তু আপনার ভার নিতে সে আসে নি, তাই আপনার আর পালানো হল না। সোনার তরী গেল চলে, আপনি পারে পড়ে রইলেন। কিন্তু যে জিনিস গুছোতে কালক্ষেপ করে নি, চলে গেছে তখনকাব সেই অবস্থাতেই, এক বস্ত্রে, সেই পেল মুক্তি, পৌঁছুতে পারল তার স্বদেশে। উপন্যাসের বেলায় আমাদের দু-চোখ খুলে রাখতে হবে কিন্তু ছোটগল্পের বেলায় হতে হবে আমাদের এক চক্ষু হরিণ, ব্যাধকে রাখতে হবে সর্বদা চোখের দিকে, যাতে দ্রুতবেগে পৌঁছে যেতে পারি নিরাপদ আশ্রয়ে। দু'চোখ খুলতে গেলেই দৃষ্টিভ্রমে পড়ব গিয়ে ব্যাধের শবসীমায়।

এই যে একরোখা হয়ে ছোট প্রারম্ভবিন্দু থেকে পরিশেষবিন্দুতে, এর মাঝে ফুটবে রসের এককত্ব এবং সেইখানেই কবিতার সঙ্গে ছোটগল্পের মিল। অর্কেস্ট্রা তো নয়ই, বাজবে একতারা এবং তার সঙ্গে থাকবেও না কোন সঙ্গীত। বিষয়ে ও ব্যঞ্জনায় থাকবে শুধু এক সুর। আগাগোড়া এক ব্যবহার, এক বিধি। চলবে না রসের কোন দ্বৈধ উপাদানের কোন মিশেল। বিষয় আমার যাই হোক, আঙ্গিক আমার যে প্রকারের হোক, সংক্ষিপ্ত সাবভাগ নিয়ে আমার কারবার, এবং যা সাব তাতে কখনও ভেজাল থাকতে পারে না।

তারপরে সবচেযে যা বিস্ময়ের, গল্পের যা শৃঙ্গভাগ, তা হচ্ছে বিস্ময়-উৎপাদন। এক কথায় যাকে বলা যায় বিস্মাপন। গল্পের সেই তির্যককোণে একটি অভাবিত বিস্ময় থাকবে লুকিয়ে, এই বিস্ময়ই গল্পের প্রাণবস্তু। ইংরিজিতে খড় ছাড়া যেমন ইট হয় না, তেমনি এই বিস্ময় ছাড়া হতে পারে না ছোটগল্প। পাঠককে চমকে দিতে হবে খোঁচা মেরে, এই আঘাতের থেকে ফুটবে আনন্দ, এই চমকেব থেকে উদ্ভাসন। এই বিস্ময় বাইরে থেকে আমদানি করা আকস্মিক কোন চমক হবে না, এই বিস্ময়, রুধিবে যেমন যন্ত্রণা, তেমনি গল্পের মধেই নিহিত ও অনুস্যূত হয়ে থাকবে। এই বিস্ময় হবে যত অন্ধকারে যত অপ্রত্যাশিত অবহেলিত স্থলে, ততই খুলবে তার শোভা, জমবে তার রস। এই বিস্ময়শৃঙ্গ যদি পাঠক আগে থেকেই আভাসে বুঝতে পারে তবে ছোটগল্পের আসর যাবে ভেঙ্গে, পথশ্রম হবে পণ্ডশ্রম। এই চমক দেয়াটুকুই যখন ছোটগল্পের রসাধার তখন তাকে সযত্নে সমস্ত কৌতূহলের থেকে সংরক্ষিত করাই হচ্ছে কৌশল। পুকুরের মধ্যে মাছ, মাছের পেটে কৌটো এবং সেই কৌটোর মধ্যে প্রাণ তেমনি করে এই বিস্ময়টুকু রাখতে হবে লুকিয়ে এবং যখন তার দ্রুত উদ্‌ঘাটন হবে তখন বহু বিদ্যুদ্দীপ্তি এক সঙ্গে জ্বলে উঠেই মিলিয়ে যাবে না, স্থির হয়ে থাকবে আকাশের চিরস্থায়িতায়। ক্ষণিক একটি মুহূর্ত এক মুহূর্তে এসে উপনীত হবে।

তবে আমবা কী পেলাম--বাঁক বা বৃত্তরেখা, শেষের প্রতি আরম্ভের শাণিতাগ্র ধাবমানতা, বিস্তরবর্জন বা ভাবলাঘব। রসের এককত্ব এবং অপ্রত্যাশিত বিস্ময়-সৃষ্টি। এবং সর্বশেষে চাই সেন্স অব ফর্ম বা আকারচেতনা; এই আকারের পরিমিতি থেকেই রসের সমগ্রতা আসে। আকারে যদি শৃঙ্খলা না থাকে, আনুপাতিক সৌষ্ঠব না থাকে, তবে রসে পড়ে ব্যাঘাত। প্রসঙ্গ হয়ে ওঠে পরিশিষ্ট। অনেক গল্প শুধু এই বিন্যাসের সামঞ্জস্যের দোষে, প্রমিত সংস্থাপনার অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। গল্পের আর সব উপাদান পেলেই আমরা রচনায় প্রবৃত্ত হই, কিন্তু আকার সম্বন্ধে আমাদের কোন পরিমাণজ্ঞান থাকে না। পরিমাণ জানলেই চলে না, পরিণাম সম্বন্ধেও সচেতন হওয়া দরকার। গল্পের ধর্মনাশ হয় শুধু অসংযমে বা রসদ্বৈধে নয়, বেশিরভাগ হয় এই কেন্দ্রচ্যুতিতে।

তাই রসসমগ্রতার জন্যেই চাই যথার্থ আঙ্গিক, লিখনশৈলী, পর্যাপ্ত ও সমীচীন ভাষা। শিল্পে রূপ না হলে রস হয় না। এই রসস্ফূর্তির জন্যেই রূপদক্ষতার প্রয়োজন। সৌষ্ঠব না থাকলে ঐশ্বর্যকে ধরবে কী করে?

গত চল্লিশ বছরেরও উপর গল্প লিখছি, ১৯২১ সাল থেকে ১৯৬৫--লিখে চলেছি সমস্ত খণ্ডকালকে ছুঁয়ে-ছুয়ে, ক্রমবাহিতার সঙ্গে তাল রেখে। 'দুইবার রাজা' 'কল্লোল'-কালে লেখা, প্রথম সাড়া জাগানো গল্প, একটি রুগ্‌ন দরিদ্র ব্যর্থ যুবকের জীবনের স্বপ্ন ও সংগ্রামের কাহিনী। তবু যে কোন মানুষই বুঝি জীবনে দু-বার রাজা হয়, একবার যখন সে বিয়ে করে, আরেকবার যখন সে মবে। তাই গল্পের অমরও দু'বার রাজা হল। আর সেই ছোট ছাত্র-ছেলেটিকে তো স্বচক্ষে দেখা, যে পেন্সিল দিয়ে বালি কাগজের খাতায় তার মৃত দিদির কথা ভেবে কবিতা লিখেছিল--'বড়দি বা বড়তারা।'

মুনসেফি নিয়ে বাংলাদেশের দূর মফস্বলে, গ্রামে-শহরে, পুবে-গঞ্জে, চৌকিতে-মহকুমায় ঘুবেছি--দু যুগেও বেশি--তার কত দৃশ্য, কত শোভা, ঘটনার কত বিচিত্র সম্পদ। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বদলি হয়েছি, নতুন জায়গার দূরত্ব ও চরিত্র ভেবে মন বিষণ্ণ হয়ে গেছে, কিন্তু সেই জায়গায় পৌঁছে দেখেছি, গল্পের কত শত উপাদান। চিরজন্মের যে পরিচিত সেই সাহিত্যের সঙ্গেই সাক্ষাৎকার হয়েছে। দেখেছি শুধু নদী-নালা খাল-বিল মাঠ-খেত গাছ-গাছালি নয়, দেখেছি মানুষ, কত রকমের মানুষ, আর কত তার মহিমা। শুধু শহুরে সভ্য শিক্ষিতেরাই নয়, গ্রামের চাষাভুষা হাড়ি-মুচি ডোম-ডোকল সারেঙ-খালাসি মেথর-ধাঙড় সবাইকে ডেকে এনেছি সমান পঙক্তিভোজে। দেখেছি যা কিছু মানবীয় তাই মাননীয়, তাই প্রাণের পরম আদরের ধন, পরম সন্ধানের বস্তু।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ