অচিন্তনীয় অচিন্ত্য : দীপেন ভট্টাচার্য
অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত একটি আবিষ্কার। এমন আবিষ্কার যা বোমার মতো, তার বিস্ফোরণে হতচকিত হয়ে পৃথিবীটাকে নতুন করে দেখতে হয়। যেমন ‘গাছ’ গল্পটিকেই ধরুন, জড়বুদ্ধি ও মূক মেয়ে গঙ্গামণি এক প্রবল ঝড়ের সময় একটি গাছকে জড়িয়ে ধরে বাঁচে, কিছুক্ষণের জন্য ভাষা ফিরে পায় এবং গাছটিকে স্বামী হিসেবে কল্পনা করে।
গ্রামের লোক তার ওপর গাছটির ধনাত্মক প্রভাব দেখে গঙ্গামণিকে গাছটির সঙ্গে ‘বিয়ে’ দিয়ে দেয়। গাছ যেন বোঝে, একটি শাখা বাড়িয়ে দেয় গঙ্গামণির জানালায়, গঙ্গামণি সেটিকে ছুঁয়ে ঘুমায়; গাছটিকে গঙ্গামণি তার ভালমন্দ মনের কথা মনে মনে বলে, পাশের বাড়িতে তার বন্ধু সুভঙ্গবালার স্বামী মনোরথের নামে নালিশ দেয়, মনোরথের চোখ পড়েছে তার ওপর। গাছটি একটি শাখা প্রসারিত করে যাতে মনোরথ তার বাড়ি থেকে গঙ্গামণিকে দেখতে না পায়। মনোরথ গাছের ডালাটি কেটে দেয়, গঙ্গামণির প্রতিক্রিয়া হয় সাংঘাতিক, কান্না, নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দেয়, তার গাছ-স্বামীর কাছে অনুযোগ করে কেন সে নিজেকে রক্ষা করতে পারে নি। মনোরথ ভাবে গাছটা পুরোই কেটে ফেলতে হবে, কিন্তু তার আগেই দেশ ভাগ হয়ে গেল, শুরু হল দাঙ্গা। সুভঙ্গ, গঙ্গামণি পালাতে পারল, দেশের সীমানা পার হলে গঙ্গামণির পিতা শম্ভুপদ সীমান্ত অফিসারকে বলল সুভঙ্গের স্বামী দাঙ্গায় মারা গেছে আরে গঙ্গামণির স্বামী আসতে পারে নি। সমস্ত ঘটনা শুনে অফিসার গঙ্গামণিকে সান্ত্বনা দিল, তার স্বামী তো মারা যায় নি, ‘তাকে কেউ মারবার কথা ঘুণাক্ষরেও ভাববে না….দেখবেন সে ঠিক আপনার জন্য দাঁড়িয়ে আছে বাড়ি আগলে’।
গ্রামের লোক তার ওপর গাছটির ধনাত্মক প্রভাব দেখে গঙ্গামণিকে গাছটির সঙ্গে ‘বিয়ে’ দিয়ে দেয়। গাছ যেন বোঝে, একটি শাখা বাড়িয়ে দেয় গঙ্গামণির জানালায়, গঙ্গামণি সেটিকে ছুঁয়ে ঘুমায়; গাছটিকে গঙ্গামণি তার ভালমন্দ মনের কথা মনে মনে বলে, পাশের বাড়িতে তার বন্ধু সুভঙ্গবালার স্বামী মনোরথের নামে নালিশ দেয়, মনোরথের চোখ পড়েছে তার ওপর। গাছটি একটি শাখা প্রসারিত করে যাতে মনোরথ তার বাড়ি থেকে গঙ্গামণিকে দেখতে না পায়। মনোরথ গাছের ডালাটি কেটে দেয়, গঙ্গামণির প্রতিক্রিয়া হয় সাংঘাতিক, কান্না, নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দেয়, তার গাছ-স্বামীর কাছে অনুযোগ করে কেন সে নিজেকে রক্ষা করতে পারে নি। মনোরথ ভাবে গাছটা পুরোই কেটে ফেলতে হবে, কিন্তু তার আগেই দেশ ভাগ হয়ে গেল, শুরু হল দাঙ্গা। সুভঙ্গ, গঙ্গামণি পালাতে পারল, দেশের সীমানা পার হলে গঙ্গামণির পিতা শম্ভুপদ সীমান্ত অফিসারকে বলল সুভঙ্গের স্বামী দাঙ্গায় মারা গেছে আরে গঙ্গামণির স্বামী আসতে পারে নি। সমস্ত ঘটনা শুনে অফিসার গঙ্গামণিকে সান্ত্বনা দিল, তার স্বামী তো মারা যায় নি, ‘তাকে কেউ মারবার কথা ঘুণাক্ষরেও ভাববে না….দেখবেন সে ঠিক আপনার জন্য দাঁড়িয়ে আছে বাড়ি আগলে’।
‘দাঁড়িয়ে আছে। সুভঙ্গ কাঁদুক, গঙ্গামণি তার চোখের জল মুছে ফেলল, তার স্বামী মরে নি, সে ঠিক দাঁড়িয়ে আছে। অটল সহিষ্ণু একনিষ্ঠ।’
এই গল্পটির যে বিষয় তা খুব সহজেই একটি হাস্যকর তরলতায় পরিণত হতে পারত। লেখক ঘটনাটিকে যাদুবাস্তবতার আঙ্গিকে উপস্থাপনা করেন নি, কাজেই ভাষাগত ও গঠনগত সৃজনে তার স্বাধীনতা কম। সেটা মাথায় রেখায় অচিন্ত্যকুমার সৃষ্টি করেছেন এমন একটি অতিবাস্তবতা–যেমন গাছের সঙ্গে গঙ্গামণির মূকালাপ–তা গাছের কাছে গঙ্গামণির সমস্ত অনুযোগ অভিমানকে বিশ্বাসযোগ্য করেছে।
‘তার যত কথা যত নালিশ সব তার পুরুষকেই। সমস্ত উচ্চারণ সেই অতলান্ত স্তব্ধতায়।
তুমি আমাকে জাগিয়ে দিলে না কেন? দেখতাম তোমার বাহুতে কেমন কোপ মারে। তুমি নীরবে সব সহ্য করলে কেন? অত ভাল মানুষ হলে কি চলে? তোমাকে মারবে আর তুমি তা ফিরিয়ে দেবে না?’
অচিন্ত্যকুমার ভাষা দিচ্ছেন, অনুভব দিচ্ছেন এই মূকজগৎকে। গাছটি যে কী সেটা তিনি উল্লেখ করেন নি, গাছের নামাকরণকে উপেক্ষা করে এক বিমূর্ততা সৃষ্টি করেছেন তা যেন গাছটিকে প্রাণ দিয়েছে। একটি প্রাকৃতিক ঝড় দিয়ে কাহিনী শুরু করেছেন, আর একটি দাঙ্গার ঝড় দিয়ে শেষ করেছেন, কিন্তু দুটির বর্ণনাতে আধিক্য দেন নি, মেল ট্রেনের মত চলেছেন।
গাছকে জীবনের প্রতীক হিসেবে মানব সভ্যতা হাজার হাজার বছর ধরে গণ্য করেছে। সুইস মনোস্তত্ববিদ কার্ল ইয়ুং স্বপ্নে গাছের আবির্ভাবকে আশ্রয়ের আধার হিসেবে কল্পনা করেছেন। এই গল্পটিতে অচিন্ত্যকুমার গঙ্গামণির জন্য সেই আশ্রয়টুকু নিশ্চিত করেছেন, সেখানে উদ্দেশ্যমূলক কোনো যাদুবাস্তবতা নেই, কিন্তু এক ধরণের মায়াময় যাদু প্রবেশ করেছে গোপনে।
একটি গল্পের কত দিক থাকা সম্ভব? মনোরথের যৌন নিপীড়ণ যা কিনা গঙ্গামণি ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না, কাউকে বলতে পারে না, সেখানে গাছটিই হয়ে ওঠে তার আশ্রয়স্থল। গ্রামের লোকেরা গাছের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে, সেখানে সামাজিক পশ্চাৎপদতা আছে, কিন্তু একই সাথে স্বাধীন চিন্তারও বহিঃপ্রকাশ আছে। গঙ্গামণি স্বেচ্ছায় গাছটিকে তার স্বামী হিসেবে বেছে নিয়েছিল সেখানে তার ইচ্ছায় তার পরিবার বা গ্রামবাসীরা বাধা দেয় নি। লৌকিক আচারের ওপরে এও যেন এক অলৌকিকতা। সর্বশেষে রয়েছে দেশভাগজনিত স্থানান্তর ও দেশান্তরের দুর্ভোগ। সেই স্থানান্তরের দাঙ্গায় সুভঙ্গবালার স্বামী মনোরথের মৃত্যু হয়, এও যেন এক ধরণের ন্যায্যতা, গঙ্গামণিকে নিপীড়নের ফলাফল। অন্যদিকে যার স্থানান্তর হতে পারে না, সেই গাছটি, দূরে থেকেও গঙ্গামণিকে আশ্রয় দেয়।
কাজেই কয়েকটি পাতার মধ্যেই গল্পটি অনেকটি স্তর অতিক্রম করেছে। ছোটগল্পের জ্যামিতিক চেহারাকে অচিন্ত্যকুমার বর্ণনা করেছেন বৃত্ত হিসেবে। বলেছেন, সেই বৃত্ত হবে লঘু, তার বেষ্টনী বক্র, গতি দ্রুত, পরিসর ক্ষীণ, সমাপ্তি তীক্ষ্ণ। বলেছেন, বৃত্তের বাইরে, অর্থাৎ উদ্বৃত্তে সে পরাঙ্মুখ। গাছ গল্পটিও একটি বৃত্ত, এক ঝড়ে স্থানু গাছের কাণ্ড জড়িয়ে আশ্রয় পেয়েছিল অসহায় গঙ্গামণি; দেশান্তরিত হয়েও সে আশ্রয় পায় এক নির্মিত মনোজগতে যেখানে তার জন্য অপেক্ষা করে পল্লবিত দীর্ঘাঙ্গ স্বামী যে কিনা তাকে সব্সময় রক্ষা করতে পারবে।
ছোট গল্পকে বর্ণনা করতে অচিন্ত্যকুমার নিচের দৃশ্যটির অবতারণা করেছেন। “এই সম্পর্কে ব্যাঘ্রাক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে সাদৃশ্যটা কল্পনা করা যেতে পারে। উপমাটা যদিও সম্ভোগ্য নয় তবু সার্থক উপমা। ধরুন আপনাকে বাঘে কামড়ে ধরেছে, মুখে করে টেনে নিয়ে চলেছে ছুটে। যদি আপনার তখনও জ্ঞান থাকে, আপনি কী দেখবেন, বর্তমানে ও ভবিষ্যতে, সেই দোদুল্যমান মুহূর্তে? বর্তমানে দেখবেন বাঘ ও তার বেগ, ভবিষ্যতে অবধারিত মৃত্যু, আশেপাশের গাছপালা ঝোপঝাড় নয়, নীল নির্মল আকাশ নয়….আক্রমণ থেকে সংহার, এই দুই অন্তঃসীমার মধ্যেকার যে পথ সে পথ যত দীর্ঘ বা বক্রই হোক না কেন তার অস্তিত্ব ও সমাপ্তি সেই সংহারে।”
আমি এই নিশ্চয়তা দিতে পারি অচিন্ত্যকুমারের গল্প পড়া মানে সেই ছোটার মধ্যে থাকা। ঊর্ধ্বশ্বাসে। মাধ্যাকর্ষণে কেন্দ্রে পতিত হবার মতো। ‘সিঁড়ি’ গল্পে সুধাময়ের স্ত্রী কেতকী। সুধাময় কর্জ শোধ করতে তাদের ঘরটি ভাড়া দেয় জুয়া খেলার জন্য, নিজেও খেলে। রাতের ঐ সময়টুকু কেতকীকে বাইরে সিঁড়িতে বসে থাকতে হয়, খেলুড়েরা টর্চের আলো ফেলে সিঁড়ি ধরে ওপরে ওঠে। মন্মথ আসে, প্রতিদিন জেতে, প্রতিদিন টর্চের আলোয় দেখে কেতকীকে। কেতকী ভাবে প্রতিশোধ নেবে। একদিন সুধাময় সব হারিয়ে কেতকীর সোনার রুলি ছিনিয়ে নিয়ে ওপরে উঠে যায় খেলতে। কেতকী অপেক্ষা করে কতক্ষণে মন্মথ ঐ রুলি জিতে নেবে, কতক্ষণে কেতকী তার নিজের চাল খেলবে। অচিন্ত্য লিখছেন,
‘গাছ কী করে দক্ষিণ হাওয়াকে ডাকে কে জানে! হাওয়া লাগবার আগেই নিজে থেকে নড়েচড়ে ওঠে নাকি?
এবার একবার বসুক না পাশটিতে।
সেই থামা-থামা ভারী-ভারী পা নেমে আসছে। নেমে আসছে।’
তারপর? তারপর গল্পের পরিণতি হল আমরা যেমনটি ভেবেছিলাম সেরকমভাবে নয়।
অচিন্ত্যকুমার ১৯০৩ সনে নোয়াখালিতে জন্মগ্রহণ করেন, ১৯১৬ সনে পিতার মৃত্যুর পর কলকাতায় অগ্রজের কাছে চলে যান। মুন্সেফি করেছেন, জেলা জজ হয়ে জেলায় জেলায় ঘুরেছেন। মামলা-মোকাদ্দমার প্রেক্ষিত,ভাষা তার নখদর্পণে। সাধারণ মানুষকে কাছ থেকে দেখেছেন। তাদের কথাই লিখেছেন, কিন্তু কোনো ধরণের দয়া বা সহানুভূতি উদ্রেক করার জন্য নয়। তার গল্পের নায়ক-নায়িকা, প্রটাগনিস্ট তাদের কার্যকারণের স্ব-উদ্যোক্তা। যেখানে মানুষ সর্বস্ব হারিয়েছে সেখানেও মানুষ তার স্বাধীন চিন্তাকে কার্যকরী করেছে, অসহায়ত্বের চরম সীমায় বসেও আত্মদুঃখে নিমজ্জিত হয় নি। ‘জমি’ গল্পে সোনামুদ্দির স্ত্রী আমিরনের কাছে তাদের জমিটি ছিল প্রাণের চেয়েও মূল্যবান। জলীল মুন্সী সেই জমি দখল করতে চায়, মামলা চলল বহুদিন, সোনামুদ্দি জিতেছিলও, কিন্তু জলীল মুন্সীর ঘোড়াল চাল এড়াতে পারল না, জলীল মুন্সীর কাছে সব খোয়াল। সব হারিয়ে সোনামুদ্দি সেই জলিল মুন্সীর জমিতেই ‘হালিয়া’ খাটা আরম্ভ করল, আর আমিরন জলিলের বাঁদী হল। কিন্তু আমিরনের কাছে ঐ জমিটির সত্বর চেয়ে বড় কিছু নেই, সে জলিলকে বিয়ে করল, রেজস্ট্রি করা রায়তি সত্ব তুলে দিল সোনামুদ্দির হাতে।
‘সোনামুদ্দি হতবুদ্ধির মত বলে, ‘বা, তালাক দিলাম কখন?’
‘ঐ হয়েছে তোমার তালাক দেয়া। ওর কাছে নিকা বসে জমি আবার ফিরিয়ে দিলাম তোমাকে। এই দেখ কবালা।’
…..
‘আর তুই?’
‘আমিই কবালার পণ। আমার জন্য মন খারাপ কোরো না। আমার চেয়ে তোমার জমির দাম অনেক বেশি। আমি গেলে কী হয়? কিন্তু জমি তোমার তো ফিরে এল। তোমার জমির গায়ে তো কেউ হাত দেতে পারল না।’
‘মহবুব?’
‘যদি রাত্রে খুব কাঁদে, চুপি-চুপি দিয়ে আসব তোমার কাছে।’
হৃদয়বিদারক, কিন্তু একই সাথে যেন হৃদয়বিদারক নয়। আমিরন ও সোনামুদ্দি দুজনেই সক্রিয় মানুষ, ভাগ্যের কাছে বন্ধক দেয়া নয়। তাই আমিরন যখন তার জীবনকে আমূল পাল্টে ফেলার মত একটা সিদ্ধান্ত নিল শুধুমাত্র যাতে সোনামুদ্দি তার জমির সত্ব ফিরে পায়, আমরা তার মধ্যে ভাগ্য পাল্টানোর সাহস দেখি। অচিন্ত্যকুমার এইভাবে তার প্রটাগনিস্টদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেন, নিয়তির ক্রীড়ানক বানান না।
অচিন্ত্যকুমারকে কল্লোল যুগের লেখক বলা হয়। ১৯৬৫ সনে প্রকাশিত ‘একশ এক গল্প’ বইটিকে কাজী নজরুলকে উৎসর্গ করেছিলেন। সেখানে তাঁর ১৯৩০ থেকে ১৯৬০এর দশকের গল্পগুলো স্থান পেয়েছে। সেই গল্পগুলো একসাথে মিলে যেন এক উপন্যাস হয়েছে, শুরু করলে থেমে থাকা যায় না। তীক্ষ্ণ ডায়ালগে, আতিশয্যহীন আঙ্গিক বর্ণনায় নিজেকে বাঘের মুখে আবিষ্কার করবেন পাঠক, তখন শুধু সংহারের জন্য অপেক্ষা। কিন্তু সংহারের উপায়টি পাঠক পূর্ব থেকে বুঝতে পারবে না। অচিন্ত্যকুমার লিখছেন, “এই বিস্ময়শৃঙ্গ যদি পাঠক আগের থেকেই আভাসে বুঝতে পারে তবে ছোটগল্পের আসর যাবে ভেঙ্গে, পথশ্রম হবে পণ্ডশ্রম। এই চমক দেয়াটুকুই যখন ছোটগল্পের রসাধার তখন তাকে সযত্নে সমস্ত কৌতূহলের থেকে সংরক্ষিত করাই হচ্ছে কৌশল। পুকুরের মধ্যে মাছ, মাছের পেটে কৌটা এবং সেই কৌটার মধ্যে প্রাণ তেমনি করে এই বিস্ময়টুকু রাখতে হবে লুকিয়ে এবং যখন তার দ্রুত উদঘাটন হবে তখন বহু বিদ্যুদ্দীপিত এক সঙ্গে জ্বলে উঠেই মিলিয়ে যাবে না, স্থির হয়ে থাকবে আকাশের চিরস্থায়িতায়।” আমি নিজে এটাতে বিশ্বাস করি, আমি জানি অনেকে করেন না। ছোটগল্পকে অচিন্ত্যকুমার সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি বলে আখ্যায়িত করেছেন সেখানে ঐ বিস্ময়ের আর্টটির প্রয়োজন রয়েছে। এখানে ও. হেনরির ছোট গল্পের চমকের কথা অনেকে বলতে পারেন, সাহিত্য সমালোচকেরা চমকের লঘুতার জন্য হেনরির সমালোচনা করেন। কিন্তু অচিন্ত্যকুমারের গল্প জীবন থেকে ওঠানো, বাস্তবের চলচ্চিত্রায়ণ। সেখানে ঠাঁই পেয়েছে হিন্দু, মুসলমান, আদিবাসী, বর্গাচাষী, প্রান্তিক মানুষ, উকিল, সাহিত্যিক, ঠাঁই পেয়েছে সমাজের চরম অন্যায্যতা যেখানে ধাইয়ের হাতে বাচ্চা বিয়োবার পরে ধাইয়ের ছোঁয়া ত্যায্য, ঠাঁই পেয়েছে এক ধরণের হিউমার যেখানে লেখক নিজের মৃত্যুর মিথ্যা খবর রটিয়ে নিজেকে জনপ্রিয় করে। তাই তাঁর গল্প অনেক গভীর ও সাধারণ চমকের ঊর্ধ্বে। পাঠক নিজে পড়েই এর বিচার করতে পারেন।
লেখক পরিচিতি
দীপেন ভট্টাচার্য
কথাসাহিত্যিক। প্রবন্ধকার। বিজ্ঞানী
দীপেন ভট্টাচার্য
কথাসাহিত্যিক। প্রবন্ধকার। বিজ্ঞানী
0 মন্তব্যসমূহ