সিঁড়িটা অন্ধকার।
একবার একটা সাপ দেখেছিল সিঁড়িতে। যদি সেটা আবার বেরিয়ে আসে কোন গর্ত থেকে। যদি গা বেয়ে ওঠে কিলবিলিয়ে।
উঠুক। তবু এতটুকু ভয় পাবে না কেতকী।
রেলিং ঘেঁসে সিঁড়ির ধাপের উপর জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকে। আঁচলটাকে বড় করে খুলে আগাপাশতলা জড়িয়ে নেয়। মাথা কাত করে রেলিঙে রেখে একটু চোখ বোজবার চেষ্টা করে। সাধ্যি কি একটু তন্দ্রা আসে। পাশের ঘরে হৈ-হল্লার ঢেউ থেকে-থেকে এসে ধাক্কা মারে।
যদিও সর্বত্র চুপ-চুপ, তবু উত্তেজনা মাঝে-মাঝে সীমা ছাড়ায়। খিল-চাপানো বন্ধ দরজাও তাকে ঠেকাতে পারে না।
একটু পরেই আবার সামলে নেয়। ফিসফিসানির শালীন স্তরে গলার স্বর নামিয়ে আনে।
ক'টা বেজেছে না জানি!
নিচে ভাড়াটেদের ঘড়িতে দুটো বাজল বুঝি। হাঁটুর মধ্যে মাথা গুঁজল কেতকী।
টুক করে পাশের ঘরের দরজার খিলটা খুলে গেল।
ঘড়ির শব্দের চেয়েও এ শব্দটা যেন বেশি মারাত্মক। ঘড়ির শব্দে তবু আশা, আর এই শব্দে আতঙ্ক।
এবার কেউ একজন নামবে। বাইরে যাবে। বাইরে মানে বাড়ির পিছনের মাঠটুকুতে, ও-পাশে দেয়ালের ধারে। আবার কতক্ষণ পরে উঠে আসবে গুটিগুটি। যতক্ষণ না ফিরে আসে, ততক্ষণ অনড় অশান্তি।
খেলা ভেঙে গেলে একসঙ্গে অনেকগুলি পায়ের শব্দ হত। খেলা এখনও ভাঙে নি। একজন শুধু নামছে।
টর্চ না ফেললে নামবে কি করে! কেউ-কেউ টর্চটা একবার টিপে ধরেই সিঁড়িটাকে আন্দাজ করে নেয়, বড়জোর শেষ বরাবর গিয়ে আরেকবার টেপে। দেয়ালে গা লাগিয়ে বেশ চওড়া ব্যবধান রেখেই নামে-ওঠে। যেন কত অপরাধী। যার ঘর তাকেই বাইরে বসিয়ে রেখে নিজেরা ভিতরে বসে গুলতানি করছে, যেন গরুচোর হয়ে আছে।
কিন্তু একজন কিছুতেই তার টর্চের বোতামে ঢিল দেয় না। সর্বক্ষণ জ্বালিয়ে রেখেই আসে-যায়। ভাবখানা এই, সব দিকই ভাল করে দেখে-শুনে নামব। কোথায় নাকি কবে সাপ বেরিয়েছিল তাই একটু সতর্ক হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। নামে প্রায় চোরধরা পাহারাওয়ালার মত। তা ছাড়া আবার কি। ঘরের জন্যে রীতিমতো ভাড়া দেয় ক্লাব।
তাই টর্চটা মাঝে-মাঝে গায়ে এসে পড়ে। যখন নিচে থেকে ওঠে, অসাবধানে যদি খোলা থাকে, প্রায় মুখের উপর। দুই চোখে সঘৃণ বিরক্তির ঝলক দিয়ে টর্চের আলোর প্রত্যুত্তর দেয় কেতকী।
আজকের খেলা কি তিনটেতেও ভাঙবে না?
প্রায় শেষরাতের দিকে ভাঙল। লোকগুলো চলে গেলে কেতকী ঢুকল পাশের ঘরে। বিছানা করতে বসল।
নিজের থেকে কিছু জিজ্ঞেস করতে সাহস হয় না। স্বামীই কখন তার জন্যে কান পেতে থাকে।
'আজও কিছু পারলাম না জিততে।' যেন কোন অতল গহ্বর থেকে বলল সুধাময়।
বুকটা ভেঙে গেল কেতকীর। কিন্তু কি সে সাহায্য করতে পারে? এই একমাত্র বিছানা করা ছাড়া?
ও-পাশের ঘর থেকে কোলের শিশু দুটো কেঁদে উঠল তারস্বরে। ওরা কি করে যেন বুঝতে পারে খেলা এতক্ষণে শেষ হয়েছে, বিদায় নিয়েছে লোকগুলো, ফাঁকা হয়েছে মা'র ঘর। তাড়াতাড়ি ছুটে যায় কেতকী। শ্বশুর দরজা খুলে শিশু দুটোকে ঠেলে বার করে দেয়। কান্না যে শুধু মায়ের জন্যে নয়, মারের জন্যেও, এটা কান্নার স্বরগ্রাম শুনেই বোঝা যায়। মাকে পেয়ে শিশু দুটো ফোঁপাতে থাকে। একটাকে কোলে নিয়ে ও আরেকটার হাত ধরে চলে আসে কেতকী। নতুন করে আবার ওদের ঘুম পাড়ায়।
দুটি মাত্র ঘর। তার ওদিকে রান্নার এক ফোঁটা জায়গা আর এক চিলতে কলতলা। মাঝখানে একফালি বারান্দা। আর দোতলা থেকে তেতলায় ওঠবার সিঁড়ির ক'টা ধাপ।
শাশুড়ি নেই, শ্বশুর হরিসাধন থাকে সিঁড়ির দূরের ঘরটাতে। সিঁড়ি দিয়ে উঠেই যেটা ঘর সেটা সুধাময়ের। সুধাময়ের একার নয়, সুধাময় আর কেতকীর। শুধু সুধাময় আর কেতকীরই বলা যায় কি করে? সুধাময়, কেতকী আর তাদের পাঁচ-পাঁচটি শিশুর। বড়টি নয়, ছোটোটি দুই।
এককালে খুব বোলবোলাও ছিল হরিসাধনের। আদালতের মুহুরি ছিল। কোন অন্ধিসন্ধি তাক করে হাতিয়ে-তাতিয়ে নিলেমে এই একটা বাড়ি কিনে ফেলেছিল। মেদমাংস নেই, হাড়ের উপর যেমন ঢ্যাঙা দেহ তেমনি একটা খাড়ি বাড়ি। আগে শুধু একতলা ভাড়া ছিল, বেশ গা হাত পা ছড়িয়ে ছিল তখন সংসার। কি দুর্গ্রহ হল, হরিসাধন গেল ব্যবসা করতে। কেতকীর যখন বিয়ে হয় তখন এই-ই রব ছিল, কলকাতায় বাড়ি, বাপের ব্যবসা, বাপের একমাত্র ছেলে, লেখাপড়া বেশি না করলেই বা কি। যুদ্ধের বাজারের ফাঁপা ব্যবসা, ফেঁসে গেল। দোতলায় ভাড়াটে বসল। বাড়িতে দু-কিস্তিতে বন্ধক পড়ল। তবু ইনকামট্যাক্স ছাড়ল না। ভাড়াটেদের উপর হুকুমজারি হয়েছে, বাড়িভাড়া হরিসাধনকে না দিয়ে আমাদের দেবে। ঘোর দারিদ্রে ডুবল। এমন হল ইলেকট্রিকের বিল শোধ করতে পারল না। কোম্পানি এসে লাইন কেটে দিল। ভাড়াটেদের ইলেকট্রিসিটি চুরি করতে গেল তার লাগিয়ে, ফৌজদারিতে ফাইন হয়ে গেল।
ঘরে হয়ত বা লণ্ঠন বা ক্যান্ডেল জ্বলে, সিঁড়িটা অন্ধকার।
এককালে মকদ্দমার দালাল ছিল হরিসাধন, এখন আরও নিচু স্তরের দালালি করে। আর সুধাময় জুয়া খেলে।
কোথায় খেলবে? নিজের থাকবার ঘরটাকেই জুয়াড়িদের কাছে ভাড়া দিয়েছে। এখন এই প্রত্যক্ষ রোজকার।
শ্বশুরের কাছে হাত পাতলে বলে, বাজার বড় মন্দ।
তারপর কেতকী যাতে শুনতে না পায় তেমনি করে বলে আপনমনে, কে আর আসবে বল এ দিকে? অঢেল দুধ যেখানে বয়ে যাচ্ছে সেখানে ঘোলের কে খবর করে?
যদি কখনও কিছু কামায় নেশা-ভাঙ করে উড়িয়ে দেয়।
কোথাও ড্যালা কোথাও খোদল, ছেঁড়া তোশকে শিশু দুটোকে ঘুম পাড়িয়ে কেতকী জিজ্ঞেস করে, 'কে সবচেয়ে বেশি জেতে?'
‘ঐ মন্মথ।'
‘কোন্ লোকটা?'
‘ঐ যে লোকটা সবচেয়ে বেশি ঢ্যাঙা, গোঁফ আছে, আদ্দির পাঞ্জাবি গায়— তারই পকেট ভর্তি। মেরুদণ্ড নেই এমনি ভাবে দেয়ালে পিঠ দিয়ে বসেছে সুধাময় : 'তা অন্ধকারে তুমি চিনবেই বা কি করে? আর চিনেই বা লাভ কি?'
কি রকম যেন একটা বিশ্রী সুর বাজল সুধাময়ের গলায়।
কেতকী ফেঁস করে উঠল : 'তার মানে?'
'মানে আবার কি।' পিঠ যেন আরও ছেড়ে দিল সুধাময় : 'চিনলেই বা তুমি কি করতে পারো? কি তোমার ক্ষমতা আছে?'
তার যে হাড় ক'খানা জিরজির করছে, ধুলো উড়ছে তার পরনের শাড়িটা এ বুঝি তারই কটাক্ষ। গর্জে উঠল কেতকী : 'সিঁড়ি দিয়ে যখন নামবে একা-একা তখন ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারি।'
'সে কি? সে কি অপরাধ করেছে?' খাড়া হয়ে বসতে চেষ্টা করল সুধাময়।
'রোজ রোজ জিতে যাবে, আমাদের সর্বস্বান্ত করে যাবে, সেই অপরাধ।'
'তাতে তার কি হাত আছে! ভাগ্য তার পক্ষে। আমিই হেরে যাই। আমিই হেরে গেছি।'
দু-হাতের মধ্যে মুখ ঢাকল কেতকী। বললে, 'তোমার হাতেই আমার হার।'
‘কিন্তু তুমি জিততে পারো। গলার আওয়াজটা কুটিল হতে-হতে আর্দ্র হয়ে উঠল : 'তোমার জিতে আমাদের সকলের জিত।
'তার মানে?'
'তার মানে বেঁচে থাকাটাই একটা জুয়ো খেলা। কেউ খেলে আলো জ্বেলে, কেউ খেলে অন্ধকারে।'
'তুমি আমার স্বামী না?'
'কে জানে। আমার তো মনে হয়, কারুরই কোন সম্পর্ক নেই, পরিচয় নেই। ভাগ্যের সঙ্গে জুয়ো খেলতে বসেছি সবাই। যার-যার তাস আলাদা। তুরুপ নেই ফেরাই নেই—তুমিও হারছ, আমিও হারছি।
'লজ্জা করে না বলতে?' বালিশে মাথা রাখতে যাচ্ছিল কেতকী, আবার উঠে বসল। 'আর করে না।'
'পরনে একটা আস্ত শাড়ি নেই, হাতে-গলার সমস্ত গয়না পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছ, হাতে শুধু এই দুটো সোনার কুলি—'
'তারপর যমের অরুচি রোগের ডিপো ঐ দেহ—যাও, বলে যাও, বহু কষ্টে একটা বিড়ি ধরাল সুধাময় : 'সব রং-রাংতা উঠে যাওয়া মাটির ঢেলা। কিন্তু যে খেলে সে কানাকড়িতেও খেলে।'
‘আমার একটা কানাকড়িও নেই। তোমাদের সংসারের সওদায় তা খরচ হয়ে গিয়েছে।' বিছানা ছেড়ে সরে বসল কেতকী।
‘সব খরচ হয়েও তবু কিছু থেকে যায়। একমুখ ধোয়া ছাড়ল সুধাময় : 'তাই তুমিও একেবারে শেষ হয়ে যাও নি। তোমার আবরণ আছে, অন্ধকার আছে। ভদ্রতার আবরণ, নিষেধের অন্ধকার।'
উঠে দাঁড়াল কেতকী। ঘুরে দাঁড়াল। বললে, 'আমি তোমাকে বলে দিচ্ছি, কাল থেকে খেলা বন্ধ করে দিতে হবে। তুলে দিতে হবে এই আড্ডা।'
'এর বেশি আর পারবে না?' যেন একটা দীর্ঘশ্বাস চাপা দিল সুধাময়। তারপর সুর বাঁকা কবে বললে, 'কিন্তু তুমি বললেই কি সব হবে?'
'নিশ্চয়ই হবে। একশো বার হবে। আমি পুলিশে খবর দেব।'
‘তা হলে এখন তবুও বাড়ির মধ্যে সিঁড়ির উপর বসছ, তখন বাড়ির বাইরে সিঁড়ির উপর গিয়ে বসতে হবে।'
‘নির্লজ্জ অসভ্য কোথাকার!' খোলা দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল কেতকী।
কান খাড়া করল সুধাময়। কি, এখুনি পুলিশে খবর দিতে ছুটল নাকি? না কি গেল ভাড়াটেদের কাছে নালিশ করতে? না কি বেরুল নিরুদ্দেশে?
না, কিছুই করে নি। অন্ধকারে তার সুপরিচিত সিঁড়ির ধাপটিতে গিয়ে বসেছে। বাকি রাতটুকু অমনি ভাবেই কাটিয়ে দেবে নাকি?
তা ছাড়া আবার কি। যার ভিতরে এত পাপ তার সংস্পর্শে সে আসবে না।
একে হারের মার তায় অনিদ্রার বোঝা। সুধাময়ের ইচ্ছা হল না যে ওঠে, সাধে, টেনে নিয়ে আসে কেতকীকে। মনে-মনে বললে, বসে থাকো। জুয়ো যে খেলে, যতই সে মাঝপথে জিতুক, শেষ পর্যন্ত সে হারে, ঘাল হয়। সেই শেষদিনটির জন্যে অপেক্ষা কর। জিতব আমরা।
সেই থেকেই স্বামী-স্ত্রীতে ভেদ। কথা বন্ধ।
কিন্তু কি কেতকীর সাধ্য এর বেশি কিছু করতে পারে?
রাত দশটার মধ্যে সংসারের সমস্ত পাট তুলে দিয়ে ছেলেমেয়েগুলোকে ঘুম পাড়িয়ে শ্বশুরের জিম্মায় রেখে আবার তার পরিচিত সিঁড়ির ধাপটিতে এসে বসে। সাড়ে দশটা থেকেই টর্চ টিপেটিপে আসতে থাকে জুয়াড়িরা। তার শোবার ঘরের ভাড়াটেরা। সিঁড়ির অন্ধকারে গা-ঢাকা দিয়ে জড়পুত্তলীর মতো বসে থাকে কেতকী।
এমনি রোজ। রাতের পর রাত।
কোন্ লোকটা ঢ্যাঙা, গোঁফওয়ালা, আদ্দির পাঞ্জাবি গায়, যেন চিনতে পেরেছে।
কেতকী।
জানোয়ার যদি শিকারী হয় সে বুঝি ঘ্রাণেও টের পায়।
খেলার থেকে উঠে উঠে নেমে যায় একেক করে। আবার উঠে আসে। যার যেমন সুবিধে। যার যখন দরকার।
এই বুঝি নামছে মন্মথ!
কেমন ধীর নিঃশব্দ পা। কেমন ভারী-ভারী। থামা-থামা।
কোন্ শব্দের ভাষা নেই? পায়ের শব্দেরও ভাষা আছে।
আর-সকলের টর্চ দেয়ালের দিকে ঝাপটা মারে, মন্মথর টর্চ এদিকে-সেদিকে! আর-সকলে পথ দেখে, মন্মথ দেখে পথে কি পড়ে আছে।
নিচে থেকে ওঠবার সময় যখন টর্চ ফেলে তখনই অসহায় লাগে। না, অসহায় কেন? এক ঝলক হাসি ফিরিয়ে দেবে কেতকী। শোধ দেবে।
'আহা, কি কষ্ট আপনার!' উঠতে-উঠতে এক পা থামে। বলে ফিসফিসিয়ে।
কেতকী মুচকে হাসে। ভাবখানা, না, কষ্ট কি। স্বামী ও তার বন্ধুদের এত আনন্দের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি তাতে কষ্টের স্পর্শ কোথায়? তা ছাড়া মাস-মাস ভাড়া পাচ্ছি না? কষ্ট নিংড়েই সুখ। কষ্টের দুয়ারের বাইরেই আনন্দের সিঁড়ি।
বেশিক্ষণ কথা বলা বিপজ্জনক। কে কি শুনে ফেলে। কে কি মনে করে। খেলায় যতই মত্ত থাক, যখনই কেউ নামে-ওঠে সিঁড়িতে ধারালো কান রাখে সুধাময়।
কথারই বা কি দরকার? কি দরকার টর্চের? অন্ধকারই কথা বলতে পারে। বাতাস যখন রুদ্ধ হয়ে যায় তখন সে রুদ্ধতাও কথা।
তাড়াতাড়ি ছুটে এসে সুধাময় কেতকীর হাত চেপে ধরল। সারা গায়ে ছটফটিয়ে উঠল কেতকী।
‘দাও, দাও, শিগগির দাও—এই শেষ সম্বল, শেষ খেলা' বলে জোর করে বাঁ হাত থেকে রুলিগাছিটা ছিনিয়ে নিল সুধাময়।
যে শুধু হেরে যাচ্ছে তারই উপর আক্রমণ ? আর যে সব লুট করে নিয়ে যাচ্ছে তার উপর কেউ ঝাপিয়ে পড়তে পারে না? নখে-দাঁতে তাকে কেউ ছিঁড়েখুঁড়ে দিতে পারে না? কেড়ে নিতে পারে না তার পকেটের পুঁজি।
ডাকাতি করা কি চলে? জুয়ো খেলেই নিতে হবে। কাঁটাই কাঁটার শোধ তুলবে।
সিঁড়ির উপর মাঝে-মাঝে থামে মন্মথ। দাঁড়িয়ে জিরিয়ে মাঝে-মাঝে দু-একটা কথা কয় ফিসফিসিয়ে। মাঝে-মাঝে কথা কয় না। একটুখানি বেশিক্ষণ থেমে থাকে।
গাছ কি করে দক্ষিণ হাওয়াকে ডাকে কে জানে! হাওয়া লাগবার আগেই নিজের থেকে নড়ে-চড়ে ওঠে নাকি?
এবার একবার বসুক না পাশটিতে।
সেই থামা-থামা ভারী-ভারী পা নেমে আসছে। নেমে আসছে।
কি আশ্চর্য, সিঁড়ির ধাপের উপর বসল পাশ ঘেঁসে।
যেন একটা বরফের গুহার মধ্যে কে ঠেলে ফেলল কেতকীকে। গাছ নেই, পাথর নেই, কিছু একটা ধরে ওঠবার আগ্রহ নেই। সিঁড়ি নেই।
বাঁ হাতটা টেনে নিল আদরে। যে সোনার রুলিটা জিতেছে তাই পরিয়ে দিতে লাগল টিপে টিপে।
না, বুক ঢিপ ঢিপ করতে দেবে না। বরফই জল হবে।
হঠাৎ বুক-পকেটের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিল কেতকী। বললে, ফিসফিসিয়ে, শুধু রুলি ফিরিয়ে দিলে কি হবে? নগদ—নগদ টাকা চাই।'
পকেট ভর্তি টাকা-নোট। এক মুঠো তুলে নিল কেতকী।
‘অনেক—অনেক আজ পেয়ে গেছি। তোমার সোনার রুলি আজ আমার ভাগ্য খুলে দিয়েছে। বললে সুধাময়, 'তোমাকে বলেছি না, জুয়োয় যে জেতে সে শেষ পর্যন্ত জেতে না।' হাত ভর্তি টাকা-নোট পকেটের মধ্যে ছেড়ে দিল কেতকী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন