
দ্বিতীয় পর্ব .......................................
রোমের রেলস্টেশন তেরমিনি থেকে বেরুবার মুখেই সেই বিশাল নগর প্রবেশদ্বার। শহরে প্রবেশের প্রধান দরওয়াজা। পোরতা মাজ্জোরে। মেজর পোর্ট। বা প্রধান গেট। এটি ৩য় শতকের তৈরি রোমের পুবের গেট আর এর সাথে লাগোয়া রয়েছে এক বিস্ময়কর অরেলিয়ান দেওয়াল। রোমের প্রথম ক্রিশ্চান এম্পেরর কন্সতান্তিন প্রথমে এবং পরে থিওডোসিয়াস তৈরি করেন শহর রক্ষা দেওয়াল এবং সেই দেওয়ালের ভিতর দিয়ে সারা শহরে প্রবাহিত করা হয় নিকটবর্তী ঝর্ণা থেকে সুপেয় জলের ধারা।
এখন সামার। দিন অনেক বড়। সন্ধ্যের মুখে এখনো তাই আলোয় উজ্জ্বল এ শহর। আকাশ তার হালকা নীল আঁচল বিছিয়ে রেখেছে মাঝে মাঝে তার সাদামেঘের কল্পতরু। কী যে সুন্দর রোমের আকাশ! পথে যেতে যেতে পথের দু'ধারে স্বেত করবী আর রক্ত করবীর গাছ দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মাঝে মাঝে দীর্ঘকায় পাইন বৃক্ষ দাঁড়িয়ে আছে নিঃসঙ্গ, একাকী নিঃশব্দ প্রহরীর মত। পাইন আমার দেশী নয় তবু সে হাত বাড়িয়ে দেয় হ্যালো বলে আর রক্ত করবি! সে তো হেসে হেসে চোখ নাচিয়ে আনন্দে তিনপাক নেচে আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।
জাকারিয়ার বাসা শহর থেকে একটু দূরে 'তরবেল্লা মনাকা' এলাকায়। সেখানে পৌঁছে দেখি আমার জন্যে রান্না বান্না করে মহা আয়োজন সাথে নিয়ে অপেক্ষমান বন্ধু স্ত্রী শিল্পী। পরিচয় হোলো ওদের পারিবারিক বন্ধু আরিফা শাহীন, বেবী, রতন রীনা আর মামুন এর সাথে। ডিনার শেষে সবাই মিলে দেখতে গেলাম রাতের রোম।
শুরুতেই রাতের কলসিয়াম। ওর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছি হঠাত ক্যাচ ক্যাচ করে খুলে গেলো দুই হাজার বছর আগের সেই কলসিয়ামের দুয়ার। চমকে চমকে উঠছি আর দেখছি পুলিতে পড়েছে টান, ভরে গেছে এমফি থিয়েটারের ফ্লোর জলের সমুদ্রে। তাতে ভাসছে রোমান সাম্পান। যাতে বোঝাই করা আছে অপরাধী। রোমান আইনে বিচারশেষে আজ জন সমক্ষে এনেছে এই এমফি থিয়েটারে। সেখানে অকস্মাৎ ডুবিয়ে মারা হবে তাদের। এটা শেষ হলে জল যাবে সরে, শুকিয়ে যাবে মঞ্চ আবার শুরু হবে নয়া হত্যাকান্ড, ওদের মতে অপরাধের বিচার শেষে এক্সিকিউশান। তাকিয়ে দেখি চলছে গ্ল্যাডিয়েটরদের নিষ্ঠুর খেলা। দাগী আসামীদের পরিয়ে আনা হয়েছে রোমের মিথ অনুযায়ী পোষাক আর খেলায় হেরে যাচ্ছে ওরা। ওদেরকে হত্যা করা হচ্ছে নানা নিষ্ঠুরতায়। আবার কখনো পুলি টেনে তোলা হচ্ছে হিংস্র পশু আর তারা নখর দিয়ে দাঁত দিয়ে ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলছে অসহায় মানুষ গুলোকে। ক্যাপাসিটি অনুযায়ী প্রায় সত্তুর হাজার জনগনের সামনে চলছে এই হত্যার উৎসব।
এই ভাবে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে দেশের জনগনকে, রোমানদের শক্তি ও শৌর্য সম্পর্কে। দেখানো হচ্ছে নিষ্ঠুরতায় ওদের অকল্পনীয় দক্ষতা ও গ্লোরী। আমার কেবলই মনে হতে থাকল সেই সত্তুর হাজার রোমানদের সাথে আমিও বসে আছি এর স্তব্ধ গ্যালারীতে, দেখছি গ্লাডিয়েটরদের সেই নিষ্ঠুর খেলা! দেখছি আর্তনাদ, হত্যা, ক্রন্দন আর হাস্য একইসাথে সভ্যতার নিষ্ঠুর খোরাক কিভাবে হয় আর আবার তা ঢেকে যায় সময়ের বুনট চাদরে।
রাতের কলসিয়াম দেখে চলেছি ডাউন টাউন রোমে। সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ বিস্ময়ে চেয়ে রইলাম। এই হল Fontana Di Trevi বা রোমের ঝর্ণা। এ এক অসামান্য সুন্দর স্থাপত্য। ইতালির রোমে, ট্রেভি ডিস্ট্রিক্ট এর এই ঝর্ণাটি সারা বিশ্বের মানুষের বিনোদনের উৎস। মূল ঝর্ণাটি সম্ভবত খৃষ্ট পূর্ব ১৯ এ তৈরি। বহুকাল পরে ১৬২৯ খৃষ্টাব্দে পোপ অষ্টম আরবান, পুরনো ঝর্ণাটির সংস্কার এর প্রয়োজন হলে এর নাটকীয় এবং শৈল্পিক একটি রূপ দেবার লক্ষ্যে জিয়ান লোরেঞ্জো বারনিনিকে (Gian Lorenzo Bernini) একটি ডিজাইন করার অনুরোধ করেন। বারনিনি একটি স্কেচ তৈরিও করেন কিন্তু পোপের হঠাত মৃত্যুতে প্রজেক্টির কাজ আর করা হয়নি।
এরপরে দীর্ঘ সময় ধরে বহু আর্কিটেক্ট, বহু ম্যাথামেটিশিয়ান ও শিল্পীরা এর কাজ করেন। শিল্প, সাহিত্য ও সঙ্গীতের 'বারোক এরা' ছিল একটি প্রতিযোগিতাময় সময়। তখন ইতালিয়ান আর্কিটেক্ট নিকোলা সেলভি এই প্রতিযোগিতায় জিতে ১৭৩২ সালে এর কাজ পুনরায় শুরু করেন। ১৭৫১ তে সেলভির মৃত্যুর পরে তাঁর প্ল্যান অনুসারে অন্যান্য শিল্পী আর্কিটেক্টরা কাজ করেন এবং ১৭৬২ তে টিভোলি থেকে আনা উন্নতমানের ট্রাভার্টিন লাইমস্টোনে গিউসেপ পানিনি'র (Giuseppe Pannini) হাতে এর কাজ শেষ হয়।
ঝর্ণাটির মূল আকর্ষণ এর অসাধারন নাটকীয়তায়। আলোর খেলায় আর স্রোতের ঘুর্নী চক্রের মত দেবতাদের শরীরের পেশী ও পোষাকের ঘুর্ণীচক্রের স্টাইল। অন্যান্য অনেক কিছুর সাথে রয়েছে প্রাচীন গ্রীক মিথলোজি অনুসারে সমুদ্রের পবিত্র আত্মা ও দেবতা ওশানাস। জলের দেবতা ট্রাইটন। রয়েছে জলের পাহারাদার সী হর্স। আর সেই সাথে অপূর্ব আকুয়া নীল জলের ধারা। এর ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে রয়েছে বিল্ডিং প্লাজো পোলি (Palazzo Polli) সেই ১৭৬২র ২২ মে ত্রয়োদশ পোপ ক্লেমেন্ট, উৎসবের সাথে এর উদ্বোধন করেন।
সবার সাথে দাঁড়িয়ে আছি। ছবি তুলছি। মন আনন্দে নেচে উঠছে হঠাত মনে হল আকুয়া নীল জলের ধারায় আমি ভেসে যাচ্ছি ফনতানা ডি ত্রেভির এই জলের দেবতার হাত ধরে। এই এই হাত ছেড়না দেবতা আমার, হে ওশানাস দেখো আমি ভাসছি ডুবছি তোমারই হাত ধরে, আমি আসছি কিম্বা চলে যাচ্ছি সেই সাগরের পরমাত্মার কাছে। আমার প্রার্থনা আমার ডান হাতে। সেখানে তিনটি কয়েন নিয়ে বাম কাঁধের উপর দিয়ে ছুঁড়ে দিলাম ঝর্ণার জলে। জানিনা কার নাম মনে করে রাত্রীর শিয়রে জ্বলে চোখের প্রদীপ। কার পদ চিহ্ন ডাকে বারে বারে। কে আমারে দু'চোখের জলে ভেজায় আর্ত চুম্বনে, জানিনা! জানিনা!! ওগো শোনো তোমরা আমি চোখ বন্ধ করে আমার উইশ কয়েন দিয়েছি ছুঁড়ে জলের অতলে।
রাতের রোম দেখে এসে ঘুমাতে ঘুমাতে বেশ একটু দেরিই হল। সকালে আলতো করে চোখ খুলতেই দেখি চারিদিক আলোয় ভরা। আমার বিছানার উপর সকালের নরম রোদ্দুর আঁচল বিছিয়ে দিয়েছে। সারা আকাশ কি যে সুন্দর এক নরম উজ্জ্বল আলোর ঝর্ণা হয়ে গলে পড়ছে! মনে হচ্ছে ওরা আলোর দেশের পরির গায়ে আজ লুটিয়ে পড়েই থাকবে। মুগ্ধ হয়ে দেখছি সে আলোর খেলা। এ অদ্ভুত এক থর থর মূহুর্ত। ঠিক যেমন দিনের শেষে রাত্রীর নিবিড় গাঢ় প্রেমে ঢেকে যায় সব, যেমনি রাত্রীর হৃদয় থেকে জন্ম নেয় এমন সকাল। শুনশান নিরব চারিদিক। সবাই ঘুম। ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে দেখি লাল রক্ত করবী ভোরের বাতাসে দুলছে।
আজ ওরা সবাই বেরিয়ে যাবে যে যার কাজে। কালকেই কথা হয়ে আছে আমি এই তরবেল্লা মনাক্কা থেকে বেরিয়ে হেঁটে হেঁটে যাব সাবওয়ে রেল স্টেশানে। সেই স্টেশানের নাম গ্রোত্তে চিলুনী। সেখান থেকে দশটা স্টেশান পরে লোদী নামে স্টেশানে গিয়ে একটা বাস নেব তারপরে সেই বাসে তেরমিনি। সেখান থেকে গ্রীন লাইন টুরিস্ট বাসে করে যেতে পারব আমি যেখানে যেতে চাই। মনে মনে ভেবেছি এই বাসে করেই ঘুরে ঘুরে দেখব যতটা দেখা যায়। কত কি যে রয়েছে আমার দেখার লিস্টে। ভ্যাটিক্যান সিটি, ফোরাম, কলাসিয়াম। স্প্যানিশ স্টেপ্স, ক্যাসেল সান্তাঞ্জেলো, প্যানথিয়ন। আজ দেখতে যাব ক্যাসেল সান্তাঞ্জেলো, স্থানীয় ভাষায় কাস্তেল সান্তাঞ্জেলো।
সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে ঠিক ঠাক ধরেছি ট্রেন, লোদীতে নেমে বাসটাও নিতে পেরেছি। সারাদিন বাস চলছে শহরের প্রধান সড়কের গা ঘেঁষে ঘেঁষে। জানালার পাশে বসে দেখছি মুগ্ধ দু’চোখ মেলে। এ এক অসাধারন শহর। এর যেন আদি অন্ত নেই। চারিদিকে বিশাল সব অট্টালিকা, বিশাল ইমারত। পাথর আর পাথরের কারুকাজে ভরা এই শহর।
কতনা শিল্পী, কতনা গনিতজ্ঞ, কতনা বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার কত যে যুগ যুগান্ত ধরে এর কন্সট্রাকশানের কাজ করেছে ভেবে অবাক বিস্ময়ে বিভোর থাকি। বাস চলছে মানুষ উঠছে মানুষ নামছে। ঘুরে ঘুরে দেখে আবার উঠে পড়ছে। আমিও ওদের সাথে নেমে পড়ছি এক একটি জায়গায়। নাম না জানা এই শহর। আমার সাথে কেউ নেই। আমি একা। আমি স্বাধীন। আমার ভীষণ ভালো লাগছে। আমি পারি, এই আত্মবিশ্বাস মানব জীবনকে একরকম পূররনতা এনে দেয়।
বড় বড় স্থাপনার সামনে ট্যুরিস্ট ভরা, দলে দলে লোকজন হাঁটছে, ঘুরছে সেখানে। রাস্তার ধারে ধারে দাঁড়িয়ে পানি, ফুল, স্যুভেনির, পেপার বিক্রি করছে ও কারা! ওদের অনেকেই তো আমার মত দেখতে! নিজেদের মধ্যে ওদের কথা শুনছি। আর না শুনলেই বা কি! ওদের মুখের দিকে চেয়ে আমার নিজের ভাইদের মুখ দেখতে পাচ্ছি আমি জানি ওরা আমার বাংলাদেশের।শ্যমলা অমন মায়াভরা মানুষের মুখ তো আর কোথাও দেখিনা! একজন এগিয়ে এসে কাঁধের ঝোলা থেকে এক বোতল পানি বিক্রির জন্যে হাত বাড়িয়ে ধরেছে আমার দিকে, আমি ব্যাগ থেকে টাকাটা বের করে হাতে ধরে ওর সাথে কথা বলতে যাব এর মধ্যেই পুলিশ ওদের পুরো দলটাকে তাড়া করল। নিমেষে উধাও হয়ে গেল ওরা। চারিদিকে চেয়ে কাছে পিঠে আর কাউকে দেখলাম না।
বাইরে গরম। আকাশ ফেটে সূর্য ঢেলে পড়ছে। মানুষের মগজ গলে বেরিয়ে যাবার মত অবস্থা। এর ভেতরে রাস্তায় দৌড়ে দৌড়ে ওরা বিক্রি করছে হরেক রকম জিনিস। ছাতা, হ্যাট, জল, ফুল, টিকেট, খেলনা, চাদর সানগ্লাস আরো নানা রকম প্রয়োজনীয় জিনিস।
একা একা হাঁটছি, বুকটা কষ্টে ভরে উঠেছে। গলার ভেতর কান্না দলা পাকিয়ে পাকিয়ে উঠছে। ভাবছি পৃথিবীর আদি থেকে এই যে চলেছে মানুষের অভিবাসন, এই যে ভাগ্যের অন্বেষণে দেশ ছাড়ার গল্প, এর শেষ কোথায়! কেবল মাত্র পেটের দায়ে দেশ থেকে দেশান্তরে যাওয়ার এই জীবন কেন হয় মানুষের! বহু বহু পথ পাড়ি দিয়ে ভাসতে ভাসতে কোথাও গিয়ে ঠেকে যাওয়া আর সেদেশে থেকে যাওয়া, কিম্বা আবারো শ্রোতের ফুলের মত ভেসে যাওয়া অন্য কোথাও অন্য কোন দেশে। হয়ত ওরা অনেকেই জানেনা আসলে কোথায় গিয়ে থিতু হবে। জানেনা কেমন সে দেশ, কিইবা তার নিয়ম নীতি, কিইবা তার ভাষা, সংস্কৃতি আর সমাজ। ওরা কেবল জানে কোথাও যেতে হবে, কোথাও গিয়ে বাঁচতে হবে।
মানুষ যখন অজানা কোন দেশে যায় তখন একরকম জীবন হাতের মুঠোয় নিয়েই যায়। তাদের উপরে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিচারও হয় না বেশীর ভাগ সময়ে। বড় অভাগা দেশান্তরি মানুষ! আজ যাদের ঘামে ভেজা মুখ গুলো আমাকে চোখের নোনা জলে ভাসিয়ে দিয়েছে, রোমের এই গ্রীষ্মের দুপুরের সূর্যলাভায় ওরা পুড়ে যাচ্ছে। ওরা ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাতর। রোদে পুড়ে ওদের শ্যমলা চামড়া তামা বর্ন হয়েছে। সারাদিন এইভাবে ওরা হাড়ভাঙা খাটুনির পরে হয়ত ফিরবে ঘরহীন ঘরে। একসাথে গাদাগাদি করে পাঁচ সাতজনের মাথাগোঁজার মত কোথাও। কত জীবন এভাবেই ঝরে গেছে পথে প্রবাসে।
ওদের কেউ কেউ হয়তো আমারই মত ভাগ্যের অন্বেষণে ছেড়েছে স্বদেশ। বেরিয়ে পড়েছে পৃথিবীর পথে। প্লেনে করে, জাহাজ বা নৌকায় করে কিম্বা পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়েছে দীর্ঘ পথ। এসেছে ইতালীর মিলান, ভেনিস, বা রোমের মত বড় বড় শহরগুলোতে। নানান দেশের উপর দিয়ে নানান পথে ঝুকিপূর্ণ সেই সব যাত্রা পার হয়ে এসেছে ওরা! ওই যে রবীন্দ্রনাথের গান আছে না! " পার হয়ে এসেছ মরু, নাইকো সেথায় ছায়া তরু----- পথের দু:খ তোমায় দিলেম গো এমন ভাগ্যহত!--- আচ্ছা কেন এমন হয়! পথের দুঃখ কে দেয়! যে দেয় সে কেন দেয়! দুঃখ যে দেয় সেতো ক্ষমতাবান, তবে সে দুঃখ না দিয়ে সুখ কেন দেয়না!
আমার কান্না পেলো খুব। বাসের ভেতর ফিরতি পথে আমি কাঁদছি। বিকেল শেষ, প্রায় সন্ধ্যার মুখে আবার সেই রেলস্টেশানে এসেছি। টিকেট কাউন্টারে টিকেট কিনতে গিয়ে, কোথায় যাব আর তো সেই স্টেশানের নাম মনে করতে পারছিনা! তো 'কি যেনো' 'কি যেনো' মনে করতে করতে বলে ফেললাম গর্তে চালুনি। তরবেল্লামনাক্কা। কাউন্টারের এই লোক তো বুঝতেই পারেনা, কোথায় যাব। যতবলি গর্তে চালুনি ও অবাক হয়ে থাকে। এই এক জ্বালা এদের নিয়ে, আমেরিকাতেও দেখেছি ইংরেজী উচ্চারনে এই একটু টান টুন ঠিক না হলে এরা বুঝেই না। আমার তো ওই কার্ডিওলজিস্ট শব্দটাই ঠিক হল না আজো। যা হোক এই রোমান ভদ্রলোক বুঝলো না কিছুই, এবার সে উঠে গিয়ে ভিতর থেকে একজনকে ডেকে আনল। সে দু'বার শুনে চিৎকার দিয়ে বলল 'ওওও গ্রোত্তে চিলুউউনি।'
টিকেট নিয়ে নীচে নেমে আবার ফাঁপরে পড়লাম। ডান দিকের ট্রেন উঠব নাকি বামদিকের! একজনকে ওই গর্তে চালুনি'র কথা বললাম। সে কিছুই বুঝল না। যা হয় হবে ভেবে উঠে তো পড়লাম সামনে যে ট্রেন এলো। দেখি ঠিকঠাক এসে গেছি। ট্রেন থেকে নেমে বাসা পর্যন্ত হাঁটতে হাঁটতে মনে মনে বললাম- ভাইরে ভাই! এই যাত্রা বাঁচলাম! আর আমি একা যাচ্ছি না! হয় অনিন্দ্য না হয় সুকন্যা, জাকারিয়ার এই দুই ছেলে মেয়েই আমার গাইড। ব্যস্ততার কারনে অনিন্দ্যকে আর তেমন পাওয়া যায় নি তবে সুকন্যা হয়ে উঠেছিল আমার সাকাগাওয়া। ( বিখ্যাত নেটিভ আমেরিকান গাইড)
লেখক পরিচিতি
লুতফুন নাহার লতা
কবি। গল্পকার। প্রবন্ধকার। নাট্যজন। আবৃত্তিকার।
নিউ ইয়র্কে থাকেন।
লুতফুন নাহার লতা
কবি। গল্পকার। প্রবন্ধকার। নাট্যজন। আবৃত্তিকার।
নিউ ইয়র্কে থাকেন।
0 মন্তব্যসমূহ