চোমংলামার গল্প : মূল্যবোধের সংকট ও অস্থির সময়ের দলিল

পুরুষোত্তম সিংহ 

চোমংলামার প্রকৃত নাম বিমল ঘোষ। ‘বসুমতী’ পত্রিকায় উত্তরবঙ্গের কথা লিখতে গিয়ে তিনি এই নাম নিয়েছিলেন। তিব্বতীরা এভারেস্ট শৃঙ্গকে বলে ‘চোমাংলুমা’। কিন্তু নেপালী ও সিকিমভাষী মানুষদের উচ্চারণে তা হয় ‘চোমংলামা’। লেখক নিজেই বলেছেন উত্তরবঙ্গের উত্তর সীমান্তের মানুষদের সঙ্গে ‘লামা’ শব্দের নিবিড় পরিচয়। সেই ফিচার লিখতে গিয়েই বিমল ঘোষ হয়ে গেলেন চোমংলামা। তিনি দেশভাগে চলে আসেন শিলিগুড়িতে। এই রুগ্ন বালক ফুটবল খেলতে পারতো না তাই শামসুর রাহমান বলেছিলেন আপনাকে লিখেই খ্যাতি অর্জন করতে হবে। শামসুর রাহমানের প্রেরণাতেই সাহিত্যজীবনে প্রবেশ ঘটে।
উপন্যাস লিখেছেন আটটি। একটু মজার গপ্প বলি। একদিন ‘বঙ্গশ্রী’ পত্রিকার অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। সম্পাদক ভেবেছেন হয়ত কোন নতুন লেখক। সম্পাদকের প্রশ্ন লেখা এনেছেন। নবীন যুবক সেদিন হতভম্ভ হয়ে গিয়েছিল। একদিকে অভাব ও অন্যদিকে লেখার তাগিদ যেন নাড়া দিয়ে বসেছিল। গল্প জীবনে প্রবেশের সাতকাহন না হয় নিজের মুখ থেকেই শুনে নেওয়া যাক – 

“সংকোচের সঙ্গে বললাম, লিখি বটে, তবে এখনও কোন কাগজে ছাপা হয় নি। ঠিক আছে। আপনি কালই একটা লেখা দিয়ে যান। দেখবো। রাস্তায় এসে দেখলাম কাগজের দাম বেড়ে গিয়েছে অস্বাভাবিক ভাবে। ছয় পয়সা দিয়ে ছয় তা কাগজ কিনে ফেললাম। তারপর হাঁটতে হাঁটতে দেশবন্ধু পার্কের একটি বেঞ্চিতে এসে বসলাম। পাঁচ ঘন্টার পরিশ্রমে একটা গল্প দাঁড় করানো গেল। বারবার পড়লাম গল্পটা । তারপর পকেটে পুরলাম। 

পরদিন পুরো গল্পটাই পড়ে ফেলে তিনি পছন্দ করলেন। বললেন, আগামী সংখ্যায় যাবে। বের হলে পত্রিকা আর পারিশ্রমিক নিয়ে যাবেন।“ (১) 

চোমংলামার ‘অগ্নিবাণ’ গল্প পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। নবীন লেখককে উৎসাহ দিতে চিঠিও লিখেছিলেন। তরাই-ডুয়ার্স অঞ্চলের নানা সমস্যা, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য, চা শিল্পের ওঠা-পড়া ও শ্রমিকদের নানা শোষণ যন্ত্রণাই তাঁর লেখার মূল বিষয়। চা বাগান ও শ্রমিকদের নিয়ে তাঁর লেখা অন্যতম উপন্যাস ‘পাতার নাম জনম’। কোনদিন খ্যাতির জন্য লেখেননি। নীরবে নিভৃতে বসে নিজের কলমটি সচল রেখেছেন। আত্মকথায় লিখেছেন –“সারাজীবন মাটিতে দাঁড়িয়ে মাটির দিকে তাকিয়েই সাহিত্যচর্চা করে গেলাম। কল্পনার মিনারচূড়ায় ওঠা হয়নি। আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকাইনি।“ (২) মাটি মেশানো মানুষ যেন তাঁর গল্পের উপাদান। 

প্রথম গল্পেই দেখি বর্তমানের এক অস্থির সময়ের বৃত্তান্ত। পণ্যায়ন ও ভোগবাদী জীবন মানুষকে মূল্যবোধহীনের কোন সীমা থেকে কোন সীমায় নিয়ে যাচ্ছে তা দেখিয়েছেন। আর সেই মূল্যবোধহীনতা দেখাতে গিয়ে গল্পের স্বাভাবিক বিন্যাস থেকে লেখক নিজেই দূরে সরে গেছেন। বলা ভালো ভোগবাদী লালসাময় জীবনের চিত্র অঙ্কন করতে গিয়ে একটি পরিবারের যে নষ্টামির চিত্র অঙ্কন করেন তা পাঠক মনে অবিশ্বাসের সুর লিপিবদ্ধ করে দেয়। তবে গল্পের ব্যঞ্জনাকে কখনোই অস্বীকার করা যায় না। ললিতবাবুর পরিবারের সবাই স্বাধীন যৌন জীবন উপভোগ করতে ব্যস্ত। এই পরিবারে এসেছে দরিদ্র মুকুল। এ গল্পের দুটি দিক। একদিকে ললিতবাবুর চোরা কারবার ও পরিবারের ভোগবাদী জীবন, অন্যদিকে যতীনবাবুর সংসারের দরিদ্র, অভাব অনটন। যতীনবাবুর ছেলে মুকুল অভাবের তাড়নায় এসেছে মেসো ললিতবাবুর বাড়ি। গ্রামের ছেলে কীভাবে অভাবের তাড়নায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে লেখক তা দেখান। নষ্ট মূল্যবোধহীনতারও দুটি দিক লেখক দেখিয়েছেন। ললিতবাবুর পরিবার স্বাধীন জীবন চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে যৌন জীবন উপভোগ করেছে। নারীবাদী দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করে কেউ কেউ হয়ত দেখাতে চাইবেন এ জীবন স্বাভাবিক। তবুও মেনে নিতে কোথায় যেন দ্বিধা হয়। হয়ত আমাদের মধ্যবিত্ত পাঠক সত্তাই এ জন্য দায়ী। অন্যদিকে অভাবের তাড়নায় মূল্যবোধ নষ্ট হতে চলেছে মুকুলের। রাস্তা সহজ সরল, কিন্তু কিছু রাস্তা থেকে আর বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়, আর জঙ্গলের রাস্তা যেন আরই বন্ধুর। তেমনি অভাবের তাড়নায় কিছু মধ্যবিত্ত ভুল রাস্তায় চালিত হতে বাধ্য হয়, যেখান থেকে বেরিয়ে আসার পরিত্রাণ নেই। তবে এই অধঃপতনের জন্য মনে সংশয় আছে, দ্বন্দ্ব আছে, বেরিয়ে যাবার চেষ্টা আছে কিন্তু উপায় নেই। সেই অস্থিরতা, দ্বন্দ্বই লেখকের মূল লক্ষ। এই রহস্যময় সময় গ্রন্থির মায়াজাল থেকে মধ্যবিত্তের পরিত্রাণ নেই, তবে দ্বিধা আছে, এ গল্পেও তা দেখি –“ভয়ে মুকুলের গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছে না। বাবার ডাকে সে সাড়া দিতে পারছে না। আর সাড়া না দিতে পারার জন্য যেন তার আরও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। দু’হাত দিয়ে সে লতাগুল্ম ঝোপঝাড় সরিয়ে বের হয়ে আসতে চাইছে, কিন্তু সামনে চলার মতো কোনো রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না।“ (৩) 

এ গল্পের বিপরীতে আছে ‘অরণ্যবাস’ গল্পটি। দুই গল্পেই আছে অধঃপতিত মূল্যবোধ। তবে দুটি গল্পের দুটি ভিন্ন দিক। ‘জঙ্গলের রাস্তা’ গল্পে মূল্যবোধের কাছে পরাজয় ঘটেছে মুকুলের, এ গল্পে মূল্যবোধের অধঃপতন থাকলেও উত্তরণের পথ আছে। মূল্যবোধকে দূরে রেখে লেখক নায়ক নায়িকাকে প্রকৃতির মধ্যে নিয়ে গেছেন। শ্রাবণী ও শৈবাল অরণ্যে বসবাস করলেও শ্রাবণীর মনে পূর্বের নানা ঘটনা ভেসে এসেছে। আসলে আমরা এক মূল্যবোধহীন সময়ের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছি। নবীন প্রজন্ম কীভাবে নষ্ট সময়ের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, লাস্যময়ী জীবন উদযাপনে নিজেদের সমুহ বিপদ ডেকে আনছে সেই ক্ষয়িতমনা সময়েরই ভাষ্য লেখক রচনা করতে চেয়েছেন। ‘জঙ্গলের রাস্তা’ গল্পে মুকুল নিজেকে বাঁচাতে পারেনি অভাবের কারণে, কিন্তু এ গল্পের শ্রাবণী নিজেকে বাঁচিয়েছে। এ গল্পেও শ্রাবণীর মামার বাড়ির মানুষরা অর্থের দাস হয়ে নৈতিক অধঃপতনে নেমেছে, যৌনতায় মেতে উঠেছে। অরণ্য যেমন সজীব তেমনি অরণ্যের রাস্তাও জটিল। তবে সেই গহন অরণ্য দিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে হয়। গহন অরণ্যে হরিণের বড় বিপদ। হরিণ নিজেকে রক্ষা করেই চলে। তবে সব হরিণ পারেনা। আসলে এই সময়ে নবীন প্রজন্মের বড় হয়ে ওঠাও যেন এক আত্মসংগ্রাম। সেখানে সবাই জয়ী হয়না। এ গল্পের শ্রাবণী জয়ী হয়েছে। একই প্রজন্মের দুটি দিক লেখক দেখিয়েছেন। কেউ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, কেউ সেই নষ্ট সময়ের মধ্য থেকেই নিজেকে বড় করে তুলছে। 

জমি ও নারীকে মিলিয়ে দিয়েছেন ‘আবাদ’ গল্পে। জমি যেমন ফসল উৎপাদন করে নারীও তেমনি সন্তান জন্ম দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধরে রাখে। এই ফসল উৎপাদন ও সন্তান জন্মের জন্য প্রয়োজন পুরুষের। সন্তান জন্ম ও ফসল উৎপাদন দুটিই যেন লেখকের কাছে আবাদ। গল্পের কেন্দ্রে আছে কামেশ্বরী। নামটি তাৎপর্যপূর্ণ। ‘কাম ‘ অর্থে যৌনতা যেমন বোঝায় তেমনি লোকজীবনে ‘কাম’ শব্দের অর্থ কাজ বা কর্ম। এ গল্পের কামেশ্বরীর দুইই প্রয়োজন। কামেশ্বরীর স্বামী মৃত হওয়ায় ফসল উৎপাদনে অসুবিধা হয়। ফলে সে গজল সিং এর সঙ্গে ‘পানিছিটা’ বিবাহ করে। গোপনে যৌন বাসনাও ছিল। কেননা পূর্বের বিবাহে যৌন সুখ সে পায়নি। অন্যদিকে গজল সিং ভালোবাসতো কেতু বর্মনের কন্যাকে। কিন্তু দরিদ্র গজলকে কেতু কন্যা দিতে চায়নি। গজলও ভেবেছিল কামেশ্বরীর সঙ্গে ‘পানিছিটা’ বিবাহ করে অর্থ রোজগার করে কেতু বর্মনের কন্যাকে বিবাহ করবে। কিন্তু ইতিমধ্যেই যৌন সংসর্গে কামেশ্বরীর গর্ভে সন্তান এসেছে। তাই গজলও আজ পালিয়েছে। তবে এই পালানোর জন্য কামেশ্বরীর কোন আক্ষেপ নেই। কেননা এই গজলের জন্যই সে যেমন মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছে তেমনি জমির ফসলও চাষ হয়েছে। এই গজলের জন্যই সে যেমন সন্তানের জন্ম দিতে চলেছে তেমনি জমিতে আবাদ হয়েছে। এই পুরুষই নারী ও জমিকে উৎপাদনশীল করে তুলেছে। প্রতারণা নয় বরং নিজের মাতৃত্ব ও ফসল উৎপাদনে সে খুশি হয়েছে, আর লেখক তা মিলিয়ে দেন চমৎকার ভাবে –“অঙ্‌’ কোনো দিন মরে না। ভালোবাসা ফুরিয়ে যায় না, গজল সিং-এর মনে ‘অঙ্‌’ থাক বা না থাক- তার নিজের মনে ‘অঙ্‌’ ছিল। আর সেই নিখাদ –নির্ভেজাল অঙকেই গজল সিং রূপ দিয়ে গিয়েছে। রূপ দিয়েছে ফসলের জমিতে –তার শরীরে। কামেশ্বরীর গাল বেয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। সে মনে মনে বলে –তুমি আর ঘুরৎ আসিবে না তা জানিনু। তুমার পরে আমার কোনো ‘আগ’ নাই। তুমি আমার জমিটাৎ ফসল ভরি দিছ, হামার নারী ‘জনম’ সাত্থক করি দিছ। তুমার পরে ‘আগ’ কিবা।“(৪) গল্পের প্রেক্ষাপট তরাই অঞ্চল। চরিত্রের মুখে আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগে গল্পকে এক উচ্চ সুরে বেঁধে দেন। এ গল্পের যাবতীয় মুন্সিয়ানা দাঁড়িয়ে আছে ভাষার মধুকারী প্রয়োগে। তবে তা কখনোই আঞ্চলিক হয়ে দাঁড়ায় না, এক সর্বজনীন গ্রহণযোগত্যা নিয়েই তিনি উপস্থিত হন। 

বস্তি জীবন নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘জৈবিক নিয়ম’ গল্প। দেহ অপেক্ষা নারীর কাছে মাতৃত্বই যে বড় কথা তা প্রতিপন্ন করেছেন। সেইসঙ্গে আছে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের চিত্র। এই হীন মূল্যবোধ বিত্তশালী মানুষের কাছে আরও প্রবল। এ গল্পের দুটি দিক। একদিকে অবধারিত যৌনতা, মূল্যবোধহীনতা, আপাত সামাজিক ঐতিহ্য, অন্যদিকে নারীর মাতৃত্ব। নিম্নবিত্ত বাসন্তী ও নিশিকান্তের পরিবার। একাধিক সন্তান নিয়ে সংসারে অভাব। ইতিমধ্যে মল্লিক বাড়ির যুবতী কন্যা সন্তানবতী হয়েছে। লজ্জার জন্য সে সন্তানকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গেছে। মল্লিক বাড়ির বউ প্রথমে বাসন্তীকে সন্তান দিতে চাইলেও সে নেয়নি, অর্থও দিতে চেয়েছিল কিন্তু অর্থও নেয়নি। তবে অর্থের প্রতি নজর ছিল স্বামী নিশিকান্তের। অবৈধ সন্তানটি যখন রাস্তায় ফেলে দিয়েছে তখন বাসন্তী তুলে নিয়েছে। বাসন্তীর সংসারে অভাব, অর্থের হাতছানি থাকলেও সে পা দেয়নি। এ নিয়ে স্বামীর সঙ্গে মতান্তর ঘটেছে। মাতৃত্ব বিক্রি করে সে অর্থ রোজগার করতে চায়নি, সে অর্থ রোজগার করতে চেয়েছে দেহ বিক্রি করে- 

“নিশিকান্ত রাগে মাথার চুল ছেঁড়ে। হায়। হায়। হায়। এমন সুযোগ কেউ ছাড়ে ! দুধের ধারা বেচুম না। কী আমার সতী সাবিত্তির রে ! 

বাসন্তী গলা ফাটিয়ে বলে, হ, বুকের দুধের ধারা বেচুম মা। মাইয়া মানষের শরীল ব্যাচন যায়, কিন্তু জননীর দুধের ধারা ব্যাচন যায় না রে বেলাডি।“ (৫) 

‘আশ্রয়’ গল্পও এক ভাঙা মূল্যবোধের নিদর্শন। এখানেও রয়েছে অবাধ মদ্যপান ও অবৈধ মেলামেশার প্রসঙ্গ। গল্পের প্রেক্ষাপট নেপালি সমাজ। প্রেমবাহাদুর থাপা বিবাহ করেছিল সাবিত্রীমায়াকে। চাকুরি পেয়ে দেরাদুনে গিয়ে প্রেমবাহাদুর মজেছিল রত্নমায়ায় প্রেমে। এমনকি সাবিত্রীমায়াকে পরিত্যাগ করে রত্নমায়াকে বিবাহও করেছিল। কিন্তু জীবনে শান্তি পায়নি। রত্নমালা ও তাঁর সন্তানরা অবাধ মদ্যপান ও যৌনসঙ্গে উল্লাসময় জীবনযাপন উপভোগ করেছে। যা ভালো লাগেনি প্রেমবাহুরের। ফলে সে দেরাদুন থেকে সংসার নিয়ে এসেছিল দার্জিলিঙে। কিন্তু এখানেও শান্তি পায়নি। ফলে প্রেমবাহাদুর আজ ঘর ছেড়েছে। বৌদ্ব মন্দিরে দেখা হয়েছে এক থেরির (সন্ন্যাসিনী) সঙ্গে। এই থেরিই হল পূর্বের স্ত্রী সাবিত্রীমায়া। আজ প্রেমবাহাদুর ক্ষমা চাইলেও বা আশ্রয় চাইলেও সে হতাশ হয়েছে, এমনকি ভগবান বুদ্ধের কাছে আশ্রয় কৃপা করতে বলেছে। একটি স্বপ্নহীন পরিবারের আশ্রয়চ্যুতির গল্প এটি। প্রথম জীবনে প্রেমবাহাদুরও উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে, আত্মসুখ ভোগে নিজের প্রথম স্ত্রীকে ত্যাগ করেছিল। আজ প্রেমবাহাদুরের স্ত্রী সন্তানরা ভোগবাদী জীবনযাপনে নিজেদের আবদ্ধ করেছে। সে আজ বৃদ্ধ, তাই আজকের উচ্ছৃঙ্খল জীবন আর ভালো লাগেনি। সময় সরণি ধরে সে অনেকটা পথ হেঁটে এসেছে, ফলে এ জীবন আর ভালো লেগেনি। কিন্তু সব ত্যাগ করতে চাইলেই তো আর ত্যাগ করা যায়না। নষ্ট মূল্যবোধের পাশাপাশি তিনি উত্তরের প্রকৃতিকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। চোমংলামার গল্পগুলি উত্তরবঙ্গের স্থান কাল পাত্র ও জনজাতিকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে। স্থানিক রঙের পাশপাশি ভাষা ব্যবহারেও তিনি আঞ্চলিক জনজীবনকে প্রাধান্য দেন। কিন্তু এক অনায়স দক্ষতায় তা সর্বজনীন করে তোলেন, আসলে বলার গুণেই তা আঞ্চলিকতার গণ্ডি অতিক্রম করে যায়। 

‘শেকড় বাকড়’ গল্পটি দেশভাগের পটভূমিকায় লেখা। ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ হলেও একবিংশ শতাব্দীতে এসে সেই প্রচলিত ধর্ম যে অনেকখানি লঘু হয়ে গেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ধর্মীয় মৌলবাদ আজও বর্তমান তবে লেখক এক উদারচেতন মনন নিয়েই এ গল্পে প্রবেশ করেছেন। তিনি সময় সত্যকেই বড় করে তুলেছেন। আজকের তরুণ প্রজন্মের শিক্ষিত শ্রেণি আর ধর্মীয় সংস্কার নিয়ে অত উৎসাহী নয়। ফলে ধর্মের বিভেদ ভুলে জীবনের ক্ষেত্রে আনন্দ ও প্রেমকেই সত্য বলে মেনে নিয়েছে। কিন্তু প্রবীণ প্রজন্ম সেই প্রাচীন ধ্যান ধারণা নিয়েই বসে আছে। হাজি জহিরুল সাহেবের বাড়ি ইসলামপুরে। দেশভাগে তাঁর দাদা মনিরুল সাহেব ওপারে চলে গিয়েছিল। কিন্তু সময় পরিবর্তনে সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটে গেছে। তাই হাজি জহিরুল সাহেবের সন্তান যেমন হিন্দু মেয়ে বিবাহ করে তেমনি মনিরুল সাহেবের সন্তানরা নিজের নামের সঙ্গে হিন্দু নাম যুক্ত করে ফেলেছে। জহিরুল সাহেব কোলকাতায় গিয়ে সন্তানের ভিন্ন সংস্কৃতি দেখে যেমন ফিরে এসেছে তেমনি মনিরুল সাহেবও পুত্রদের পৃথক সংস্কৃতি মেনে নিতে পারেননি বলে আবার দেশত্যাগ করে ইসলামপুরে চলে আসেন। মনিরুল সাহেব বাড়ি বদল করে ওপারে গিয়েছিলেন। আজ মনিরুলের বাড়িতে থাকে ভবতারণ চক্রবর্তী। তাঁর সন্তান নিরঞ্জনও মুসলিম নারী সায়রার সঙ্গে প্রেম করে। আসলে বদলে যাওয়া সংস্কৃতি, সময়ের পরিবর্তনে ধর্মীয় ধ্যান ধারণার পরিবর্তন কীভাবে ঘটে যাচ্ছে তা লেখক দেখিয়েছেন। আসলে যে ধারণাকে সামনে রেখে দেশভাগ হয়েছিল সময়ের বিবর্তনে সে ধারণা যে নিছকই হাস্যকর তা লেখক প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন। তাই আজকের সংস্কৃতিক বিবর্তনকে ঠিক মনে নিতে পারেনি ভবতরণ বা হাজি জহিরুল সাহবেরা। কিন্তু যুগের ক্ষেত্রে এই সংস্কৃতির বিবর্তনই সত্য। সংস্কৃতিকে ধরে রাখা যায়না, নদী যেমন নিম্নপ্রদেশের দিকে এগিয়ে যায় তেমনি সংস্কৃতির নির্দিষ্ট একটা অভিমুখ থাকে। এই সংস্কৃতিকে বরণ করে নেওয়া ছাড়া অন্য উপায় নেই। আসলে তারাশঙ্করের যে থিম নবীন-প্রবীণের দ্বন্দ্ব তা এখানে খুঁজে পাওয়া খুব বেশি কঠিন নয়। জহিরুল, মনিরুল, ভবতরণরা প্রাচীন ধারণা নিয়েই বাঁচতে চেয়েছেন কিন্তু নবীন নিরঞ্জন, দিদারুল, ফিরোজারা নবীন সংস্কৃতি ও জীবনকে বরণ করে নিয়েছে, আসলে যুগের ক্ষেত্রে এই বিবর্তিত সময় ও পরিবর্তিত সংস্কৃতি দুইই সত্য। প্রবীণ প্রজন্মের আক্ষেপ ছাড়া কিছুই নেই, যে ধর্ম, সংস্কৃতির ভিত্তিতে দেশভাগ তা আজ লুপ্ত। তবুও মনে সেই প্রশ্ন - 

“ চক্রবর্তী প্রায় সব –হারানোর দৃষ্টি মেলে একটুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন দুই ভাইয়ের মুখের দিকে। তারপর প্রায় কান্নার কাছাকাছি গলার স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন –আচ্ছা হাজি ছাহেব, মৌলবি ছাহেব, আপনারা কবার পারেন দ্যাশডা ভাগ অইল কিয়ের লাইগ্যা ? 

দুই ভাই –ই দুজনের মুখের দিকে তাকালেন। না। এ প্রশ্নের জবাব তাঁরা জানেন না। কেননা এ প্রশ্নটা তো তাঁদেরও।“ (৬) 

‘অন্ধকারের মুখ’ ( সাপ্তাহিক বর্তমান, ২০ ই মার্চ ১৯৯৩ ) গল্প অন্ধকারের এক রাত্রি অভিযান। সে অভিযান গড়ে উঠেছে সেবকের অরণ্য প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর এই উত্তরবঙ্গ। ফলে উত্তরের লেখকদের কলমে এই অরণ্য প্রকৃতি নিবিড় ভাবে উঠে আসে। ব্যতিক্রম নয় চোমংলামাও। রাতে নিউ জলপাইগুড়ি যাবে বিভাস ও মণিকা। কিন্তু ময়নাগুড়ির কাছে তুরতুরি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় সেবক হয়ে ঘুরে যেতে হবে। সেই সেবকের রাস্তায় রাত্রির অন্ধকারের রহস্যই এ গল্পের ভিত্তিভূমি। আসলে লেখকের উদ্দেশ্য উত্তরের প্রকৃতির আস্বাদ পাঠককে দেওয়া। কিন্তু সেই আস্বাদ দিতে চান গল্পের মধ্য দিয়ে। ফলে বিভাস ও মণিকাকে নিয়ে এক নৈশ অভিযানের চিত্র আঁকেন। ‘শিবা ভোগ’ গল্পও অরণ্যের পটভূমিকায় গড়ে উঠেছে। জলপাইগুড়ি, নাগরাকাটা অঞ্চলকে কেন্দ্র করে গল্পের আখ্যান বিবর্তিত হয়েছে। ‘শিবা ভোগ’ শব্দের অর্থ শিয়াল দ্বারা খাওয়া ভোগ। ডায়না নদীর তীরে অবস্থিত শ্মশান। মনোহর পোদ্দারের নানা বেআইনি ব্যাবসা আছে। কাঠ চুরি তার মধ্যে অন্যতম। এই মনোহরকে রিস্টিযোগ কাটানোর জন্য শ্মশানে পূজা দিতে বলেছিলেন পুরোহিত কাশীশ্বর পণ্ডিত। প্রতাপশালী মনোহরকে দেখে এ অঞ্চলের অফিসাররাও ভয় পায়। মিত্তির সাহেব জানায় কাঠ চুরির জন্য কিছু লোককে গ্রেফতার করতে না পারলে চাকরি থাকবে না। মনোহর ইচ্ছা করেই বিনোদ রাভাদের ধরিয়ে দেয়। তাঁর লালসা ছিল বিনোদের স্ত্রীর প্রতি। জেল থেকে ফিরে এসে বিনোদ স্ত্রীকে আর পায়নি। মনোহরও পূজার প্রসাদ শিয়ালকে খাওয়াতে গিয়ে তির বিদ্ধ হয়েছে। অবশেষে বাঘের মুখে পড়ে মৃত হয়েছে। এ গল্পেও নষ্ট মূল্যবোধের চিত্র আছে, তবে তা সূক্ষভাবে। মনোহর শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করে নিজের ঐশ্বর্যই গড়ে তোলেনি, গরিব মানুষগুলিকে গ্রেফতার করিয়েছে। নিজে মুনাফা লাভ করেছে কিন্তু ফল ভোগ করতে হয়েছে বিনোদ রাভাদের। তবে জয় হয়নি। সে নিজেও মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। 

‘জন্মান্তরের কাল’ ভগ্ন দাম্পত্য জীবনের গল্প। তবে বিচ্ছেদে নয় মিলনেই গল্পের সমাপ্তি ঘটেছে। সম্পর্ক যেন রক্তের সূত্রেই গড়ে ওঠে। ধমনীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বংশের যে রক্তধারা তা অস্বীকার করা সম্ভব নয়। সেই জন্মসূত্র ধরেই ভগ্ন সম্পর্কে পৌঁছেছে মিলনে। অনিমেষের স্ত্রী লাবণ্য। কিন্তু বিচ্ছেদ ঘটে গেছে দীর্ঘদিন। লাবণ্য অলকেন্দুর হাত ধরে ঘর ছেড়েছিল। সঙ্গে নিয়ে এসেছিল অনিমেষের কন্যা মিলিকে। আজ মিলির বিবাহ উপলক্ষে এসেছে অনিমেষ। ফিরে গেছে তেইশ বছর আগের অতীতে। অনিমেষ নিজেকে বিচ্ছিন্ন মানুষ ভাবলেও নতুন জামাই সুশোভন আবার সম্পর্কের মূলে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। বৃক্ষকে ছেদন করলেও শিকড় থেকে নব বৃক্ষ যেমন জন্মায় তেমনি ভগ্ন সম্পর্কও যেন রক্তের সূত্র ধরে আবার মেলবন্ধনে এগিয়ে গেছে। আর এই মিলনকে লেখক চিত্রিত করেছেন অনবদ্য ভাষা ও চিত্রে –“স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, ভালো লাগা আর ভালোবাসাকে মর্যাদা দেওয়ার অপর নামই দাম্পত্য জীবন। মিলি যদি এই বোঝাপড়াকে অ্যাডজাস্ট করে না চলতে পারে তবে সেই দুর্ঘটনাই ঘটতে পারে – যে দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে আপনার জীবনে। আসলে আমি একটা পরগাছাকে উপড়ে এনে মাটিতে রোপণ করে বোঝাতে চাই যে মাটিই তার মূল আশ্রয়। মাটি থেকে রস আহরণ করেও সে বাঁচতে পারে।“ (৭) সাধারণ ও অতি তুচ্ছ বিষয় নিয়েই তিনি গল্পে অবতীর্ণ হন। আবার গল্পকে বিরাট মহিমায় বা বৃহৎ ক্যানভাসে নিয়ে যান না। নদীর তীরের মতো এক সরল রেখায় তাঁর গল্প এগিয়ে চলে। গল্পের জন্য যেটুকু বাঁক বদল সেটুকুই তিনি করেন অযথা জটিলতা তাঁর গল্পে নেই। তবে বহু ক্ষেত্রেই তা সাধারণ হয়ে দাঁড়ায়। আসলে যে সময়ে দাঁড়িয়ে তিনি গল্প লিখছেন তখন বাংলা গল্প বহু পথ অতিক্রম করে ফেলেছে। সেই স্রোতে মিশে না গিয়ে তিনি আপন মনে উদাস সুরে নিজের ভূগোলকে সামনে রেখেই গল্প গড়ে তোলেন। ফলে গল্পে এক সজীবতা থাকে কিন্তু বৃহৎত্তর ভূগোলে গল্পগুলি সাধারণ শ্রেণিতে গণ্য হবে এমন সংশয় থেকেই যায় ! 

জমি ও মানুষের বৃত্তান্ত নিয়ে বাংলা সাহিত্যে বহু গল্প লেখা হয়েছে। অমর মিত্র থেকে ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায় বহু গল্প লিখেছেন জমি ও মানুষের বৃত্তান্ত নিয়ে । তেমনি নক্‌শাল আন্দোলন, বর্গা প্রথা নিয়েও কম গল্প লেখা হয়নি। অমর মিত্র বলেছিলেন –“চাষার জমি চাষার হৃদয়”। তেমনি আছে জমিখোর মানুষের বৃত্তান্ত। কিছু জমিদার বহু জমি দখল করেছিল। কিন্তু বর্গা প্রথা চালু হওয়ায় জমি আড়াল করতে শুরু করে। নিজের স্ত্রী, পুত্র- পুত্রবধূর নামে জমি আড়াল করতে বাধ্য হয়েছিল ও জমি আড়াল করেছিল। এই ফর্ম অমর মিত্রের বহু গল্প উপন্যাসে আমরা পেয়েছি। সেই একই ফর্মকে ব্যবহার করেছেন চোমংলামা ‘জবাই’ গল্পে। গল্পের অন্দরমহলে রয়েছে মুসলিম সমাজ। গল্পের প্রেক্ষাপট উত্তরবঙ্গ। বহু জমির মালিক হাজি জহিরুল হক। বর্গা প্রথা চালু হওয়ায় সেও জমি আড়াল করেছে। স্ত্রী প্রায়ত হলে আর বিবাহ করেননি, ভেবেছিলেন পুত্রের বিবাহ দিয়ে সংসার কাটাবেন। কিন্তু পুত্ররা কলকাতায় থাকে, গ্রামে আসেনি। জহিরুল হকের বাঁধা হালুয়া ছিল জমিরুদ্দিন। জমিরুদ্দিনের স্ত্রী মাজেদা এসেছিল জহিরুলের বাড়িতে স্ত্রীর সেবা করতে। স্ত্রী মৃত হলেও মজিদা আজও জহিরুল হকের বাড়িতে থেকে গেছে। এমনকি জহিরুলের সঙ্গে অন্তঃরঙ্গ হয়েছে। অন্যদিকে বর্গা প্রথায় জমিরুদ্দিন জমি পেয়ে হালুয়ার কাজ ছেড়ে নিজেই চাষ শুরু করেছে। এই জমির প্রতি লোভ জহিরুলের। অস্ত হিসাবে ব্যবহার করেছে মজিদাকে। সরকার পরিবর্তনে জমির হস্তান্তর ঘটে যেতে পারে, ফলে জমি মজিদার নামে দিয়ে দিতে। সেই জমি পরে হস্তান্তর করে নেবে সে। হাজি সাহেবের এই জমি বৃত্তান্তকে কেন্দ্র করে তিনজন পৃথক স্বপ্ন দেখেছে। গ্রাম্য ভাষায় ‘জবাই’ শব্দের অর্থ হল বলি দেওয়া। এখানে কসাই জহিরুল, বলি হচ্ছে জমিরুদ্দিন, আর তরবারি যেন মজিদা। এই গোলকবৃত্তান্তকে লেখক নিয়ে গেছেন স্বপ্নালোকে। গল্প প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সাধারণ স্থরে গেলেও লেখক বাজিমাত করেছেন শেষে গিয়ে। তিন জনের স্বপ্নভাবনার মধ্য দিয়ে গল্পের অন্তিম সত্য ফুটে ওঠে – 

“হাজি সাহেব স্বপ্ন দেখলেন, তার লালখেরোর জাব্‌দা খাতায় যেখানে নিষ্কর, পতিত, ডাঙা ফসলি প্রভৃতি যাবতীয় জমির পরিমাণের হিসাব লেখা আছে, তিনি সেই জমা সংখ্যাটা এক দাগে কেটে দিচ্ছেন। মোট জমির পরিমাণ দুশো ষাট বিঘে। ওই সংখ্যাটা কেটে দিচ্ছেন তিনি বারে বারে। 

জমিরুদ্দিন তার ভাঙা মাটির ঘরে শুয়ে স্বপ্ন দেখল, যেন জমিরুদ্দিন নয়, হাজি সাহেব নিজে জমিরুদ্দিনের বাড়িতে এসে একটা মুরগি নিয়ে জবাই করছেন। 

আর মাজেদা স্বপ্ন দেখল – একজন ফাঁদি ফাঁদ পেতেছে ঘুঘু ধরার জন্য। ফাঁদের মধ্যে তার পোষা ঘুঘুকে শিষ দিয়ে ডাকাচ্ছে আর একটা বনের ঘুঘু ফাঁদের ঘুঘুর কাছে আসতে গিয়ে ফাঁদে জড়িয়ে গেল !” (৮) 

এবার চোমংলামার গল্পের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা যেতে পারে। তাঁর সমস্ত গল্পের প্রেক্ষাপটই উত্তরবঙ্গ। এমনকি স্থান নামের দ্বারা তিনি সেই প্রেক্ষাপটকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে দেন। উত্তরবঙ্গের প্রান্তিক জনজাতি, তাদের ভাষা, লোকাচার বিশ্বাস নিয়ে তিনি উপস্থিত হয়েছেন। গল্পকে স্বতন্ত্র বলয়ে নিয়ে যাবার কোন প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায়না। এক সহজ সরল জীবনেরই গল্প তিনি বলতে চান। তবে সময়ের গোলকধাঁধা বিশেষভাবে উঁকি মারে। যে মূল্যবোধহীন সময়ে, ভোগবাদী পণ্যায়নের যুগে আজকের প্রজন্ম বড় হয়ে উঠেছে, যে বোধহীন সত্তা নিয়ে নবীন প্রজন্ম এগিয়ে যাচ্ছে সেই অন্তঃসারশূন্য সময়কেই তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। লেখকের মূল উদ্দেশ্যই যেন ব্যক্তি মানুষের মূল্যবোধহীনতা পাঠকের কাছে প্রতিপন্ন করা। সে কথা তিনি প্রবন্ধ আকারে বলতে পারেন না, তাই গল্পের ফর্মে বলেন। 

তথ্যসূত্র 

১. ‘আত্মস্মৃতিতে উত্তরবঙ্গ সংখ্যা’, সম্পাদনা অজিতেশ ভট্টাচার্য, প্রথম প্রকাশ ২০০২,সমীক্ষা প্রকাশন, পৃ. ৪৬ । 

২. তদেব, পৃ. ৪৭। 

৩. ‘চোমংলামার ছোটগল্প’, সম্পাদনা ড, গৌরমোহন রায়, প্রথম প্রকাশ আগস্ট ২০০৩, পুনশ্চ, পৃ. ৩২। 

৪. তদেব, পৃ. ৩৮। 

৫. তদেব, পৃ. ৭৫। 

৬. তদেব, পৃ. ৯৩। 

৭. তদেব, পৃ. ১১৬। 

৮. তদেব, পৃ. ১২৫। 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ