বদরুন নাহারের গল্প: হরিদাসের বাড়ি

 

 

 



হুসনার মার মাথা বোধ হয় পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেল। একা একা বকে যেতে থাকেন সারাদিন। হুসনার সেদিকে নজর দেওয়ার সময় কোথায়? সংসারের ম্যালা কাজ। আধ-পাগলা মায়ের কোলে গেঁদা ছেলেটাকে তুলে দিয়ে সে ছুটে বেড়ায়। বাচ্চাকে দুই হাতে ধরে হুসনার মা বলে, চল পুইত। হরিদাসের বাড়িত যাই।

সে কথা শুনে ফেলে অন্ধ কয়েস মিয়া। হুসনার শ্বশুর। সারাদিন বারান্দায় বসে হুসহাস করে মশা-মাছি তাড়ায়, আর কান পেতে হুসনার মার কথা শোনে। সে চিৎকার করে বলে, বেয়াইন, খবরদার, ওই বাড়ির মাত মুখত আনছো না। আমারার নাতিক লই ওতা কইস না।

হুসনার মা। একলিমা বিবি, নাতিকে হাত থেকে নামিয়ে কোলের টোপরে বসায়। কয়েস মিয়ার কথাটা নিয়ে ভাবতেছিল, তখনই হাঁস দুটো এলো। তারা লম্বা গলা তুলে তুরতুর করে একলিমা বিবির পায়ে ঠোঁকোরায়। তাতে সে হেসে উঠে, বলে, যাহ্.. । এসময় সে একটু আগে শোনা কথাটাও ভুলে যায়। রাজহাঁসের সঙ্গে সোহাগ করে, যাহ্ গাঙ্গেত যা। আর তখন গল্পও পাল্টে যায়, বলে, বুঝলাইননি বেয়াই। গুন্ডগোলের বছর এমন দুইখানি হাঁস বেইচা, বাপে আমারার বিয়া দিছিল।

কয়েস মিয়ার রাগ হয়। বিটি খালি বিয়ার গল্প ফান্দে। বয়স হইল, লাজ শরম নাই। একলিমা বিবি থামে না, সে জানায়, সেই হাঁস বেচা তখন বাক্কা কঠিন ছিল। রাজহাঁস দুটো তখনও তার দিকে ঠোঁট বাড়িয়ে ধেয়ে আসে, সে হাত উঠায়, হাওইত.. যা..। তারপর আবার বলা শুরু করে, যুদ্ধের সুম, মাইনষ্যা তো হাঁসত কিনছেনা। আমারার বড় কাকায় তা বাদে বালি বাজার তামাত গেছিল। সেইখানে হুরমত সর্দার কিনছিল, তারও এক গপ আছে গো বেয়াই।

কয়েস মিয়া জানে, এরপর সেই একই গল্প করবে হুসনার মা। হুরমত সর্দার সেই হাঁস রাইন্ধা পাঁচটা মিলিটারিরে খাওয়াছে। আর একলিমা বিবির বিয়াতে পাড়া-পড়শি খাইল খাসিয়া পানের খিলি। পরদিন খবর আসে, পাঁচজন মিলিটারি শ্যাষ! হুরমত নাকি বিষ দিছিলো! সারা বিশ্বম্ভরপুরে সেই কথা জালুনদীর ঢেউ-এর আগে ছুটছে। সে ঘটনা কয়েস মিয়াও জেনেছিল। তখন তার হুসনার মার বিয়ার খবর জানা ছিল না। কেবল জানত, হুরমত সর্দার মিলিটারি মারছে! আর তাতে গ্রামে যেন কেয়ামত নামে। দলে দলে পাকসেনারা আসতে থাকে, সবাই ছুটে পালায়ছিল। একলিমা বিবি হেসে উঠে বলে, বিয়ার রাইতে হুসনার বাপোর লগে আমিও নৌকায় উইঠা পালাইছিলাম।

কয়েস মিয়া বলে, থামেন।

কিলাই, আপনি হুতেইনা?

কয়েস মিয়া ভাবে, একলিমা বিবির গল্প শোনার চেয়ে, বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া ভালো। বেটি খালি আকথা-কুকথা মাতে। বেটির উপরি দোষ। নিজের চক্ষু দুইখান ভালো থাকলে, সে ঘর ছাড়তো। কিন্তু এখন পারে না। বড় ঘরের বারান্দায় বসে কয়েস মিয়া শুনতে শুনতে রাগে ফোসফাস করে, আর মাছি তাড়ায়। উঠোনের বরইগাছের নীচে বসে একলিমা গল্পেই মেতে থাকে।

হুসনার মার কেবল হরিদাসের গল্প। হরিদাসের নাকি এককালে দিরাইতে বাড়ি ছিল। সে ম্যালাদিন আগের কথা, কয়েস তা জেনেছে শফিকুলের বাপ, আতিকুলের কাছে। সে গন্ডগোলের সময়েরও আগে কথা, তখন হিন্দু-মুসলিম ভাগ হইল। তাতেই সে দিরাই ছেড়ে সীমান্তে গেল। মানুষ ভুলে যায় সেসব কথা। কিন্তু যুদ্ধে বেঁচে ফেরা মানুষের মুখে করে আবার হরিদাসের গল্প ফিরে আসে, কালনীর তীর হয়ে, জাদুকাটা নদী হয়ে, রক্তি নদী হয়ে সারা সুনামগঞ্জে। শুধু হরিদাস না, মানুষ গনি মিয়ার গল্পও করে। গো-গুলের পর কয় বছর খুব সে গল্প করছে সবাই। এখন তা আর কারো মনে নাই। কেবল একলিমা বিবি ভুলতে পারল না। তার আবার গল্প শুরু হয় বিয়ের রাতে।

একলিমা বিবির মতে, গন্ডগোলের জন্যিই বাপ হুট কইরা বিয়া দিল। হুসনার বাপ, আতর আলীর লগে। আতর আলীর নাম নিতেই একলিমার মনেপড়ে হুসনার দাদা জমির আলীর কথা। সেও এক জোয়ান তাগড়া মানুষ ছিল। হুসনার বাপের জন্মেরও আগে, সে স্বপ্ন দেখলো। বাড়ির পেছনে করচবনের মধ্যে একখানা গাছ, তাকে স্বপ্ন দেখায়ছিল পীর শাহ্ আরিফিন। তাহেরপুরে পীরের মোকামে নাকি জমির আলী যাওয়া-আসা। সে তার মুরিদ, সেই মুরশিদই নাকি স্বপ্নে গাছখানা দেখায়। জমির আলী নিশ্চিত, গাছটা আগর গাছ। একলিমা বলে, স্বপ্ন দেখাছেনা, তারবাদে পোয়ার জন্ম, তাতেই হুসনার বাপের নামও রাখছিল আতর আলী। বাদে কতদিন ব্যাটায় করচ বনে আগর গাছ খুঁইজা ফিরছে, তা গাছখান পাইছেনা। লাখ টাকার গাছের শুকেত, পাগল হইল। তা পুতের নাম কইলাম আতরই আছিল।

যদিও সবাই জানে, এই হাওর-বাওওে হিজল গাছ থাকলেও আগর গাছ নাই। তবুও হুসনার মার গল্পের শেষ নাই। সেও আজকাল স্বপ্নও দ্যাখে। এইসব কথা বলে লাজুক হাসে, তার ধারণা শ্বশুর মরলে, স্বপ্নেরোগটা তাকে দিয়ে গেছে। প্রত্যেক রাতেই স্বপ্ন দ্যাখে। সব পীর মুরশিদের দোয়া। তা একলিমা বিবি কোনদিন লাখ টাকার স্বপ্ন দেখতে পারল না। বেটি খালি স্বপ্নে আকথা-কুকথা দ্যাখে। তাতে কয়েস আলীর ভীষণ রাগ। পীর আরেফিনের ভক্ত সেও। চোখ ভালো থাকতে প্রতিবছর যেত জাদুকাটা নদী পেড়িয়ে রাজগাঁও, বারুনী মেলায়। তা সে ম্যালা দিনকার কথা। কিন্তু হুসনার মা যখন গল্প করে, সবার মনে হয়, এই তো সেদিনের কথা। জাদু কাটা নদী পেড়িয়ে, ছোট খাল দিয়ে তারা বিশ্বম্ভরপুর গেল, রাজপাড়ায় গেল। এত কিছু একলিমার মনে থাকে না, মনে থাকে পরনে জরির মালাশাড়ি। যা পরে সে আতর আলীর হাত ধরে উঠে বসেছিল গরুর গাড়িতে। সেই গারোয়ান ছিল এক হাজাম ব্যাটা। সে নদী পাড়ি দেওয়া মানুষকে গাড়ীতে করে সীমান্তে যেত। সেই তাদেরকে নিয়ে গিয়েছিল হরিদাসের বাড়ি। নো ম্যান্স ল্যান্ডে। একলিমা কি আর বুঝত সীমান্ত রেখা কি? সে ভেবেছিল ইন্ডিয়া। তাই মিলিটারির ভয় মনে থাকে না। তা বাড়ি ভর্তি মানুষ আর মানুষ। গন্ডগোলের তোড়ে ভেসে আসা মানুষ। হরিদাসের বাড়ির কালিমন্দিরের চাতালে আশ্রয় নিল একলিমা আর আতর আলী। সে কথায় হুসনার মা জানায়, বাপ-কাকারত ছাইরা, জোয়ান মর্দ্দ আতর আলীর লগে যাইতে ভয় পাইছি। তার কন্ঠ লাজুক হয়, বলে, হেরে আমি চিনছি নাতো। কেবল কবুল কয়নের সম, একনজর দেখছিলাম। তা সে তো অচেনায়, নাহ্?

একথার উত্তর কেউ দেয় না। যুদ্ধের সময় কে আর কারে ভালো করে দেখতে পায়। তারা তো আর আতর আলীরে কোনদিন দেখে নাই। খালি গপ শুনে চেনা যায়? সে তো আর বাড়ি ফিরে নাই। তাতেই একলিমা বিবির মনে গেঁথে থাকল হরিদাসের বাড়ি। সে জানায়, ব্যাটার কিতা হইছে বা! কুনখোনাকর কোন গণি মিয়া, তার লগে খায়-খাতির করে যুদ্ধে গেল, আর ফিরছে না। তখন আতর আলীর গল্প ফুরিয়ে আসে। যুদ্ধ থেকে না ফেরা মানুষের গল্প আর বাড়ে না। যুদ্ধের বিয়ে, যুদ্ধেই শেষ। কিন্তু শেষ হয় না হুসনার মার গল্প। তার চোখে লেগে থাকে আতর আলী। হরিদাসের বাড়ি। বেলা বাড়লে পাড়ার দুই একজন এসে জোটে সে গল্পে।

একলিমা বলে, সে আইচ্ছা শরমের মাত, ব্যাটার তো বিয়ার হাউস আছিল। তারপিছে যুদ্ধের মধ্যে কেউ বিয়া করে? হুসনার ছেলেটি কোলের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকে। একলিমা বাড়তি কাপড় টেনে নাক ঢাকে, ব্যাটায় মোরে ভালা পাইছে, সোহাগ চাইতো। তা সেই রাতে.. বলে থেমে যায়। উৎসাহি পাড়ার মানুষ ঠালা দিয়ে উগড়ে না দিলে আগায় না। হাবুলের মা কয়, খও না বুজি, তার বাদে কিতা।

তখন আবার একলিমা বলে, ব্যাটার বাক্কা শক্তি আছিল। একরাইতে মন্দিরের চাতাল থেকে পাঁজাকোলা কইরা বাদারে নিল। অন্ধার রাইত, তারার চোখ যেন বাগডাশার নাহাল জ্বলে। দূরে গুলির শব্দ পাইছি। ভয়ে আমি সিটকাই আছিলাম। জঙ্গুলো ধারে নিয়া কইছিল, বউ আয় আমারার এইখান্দইতে শুই। এরপর আর বলতে পারে না। শরম পায়। হাবুলের মা হাসে, বুইছি, তুমারার সোহাগ করইছে।

তার উত্তর না দিয়ে একলিমা বলে, তা বাদে ব্যাটায় গণি মিয়ার লগে যুদ্ধে গেল।

গণি মিয়ার সঙ্গে আতর আলীর যুদ্ধে যাত্রার কথায় হুসনার মার মাথা আবার আওলায়। বলে, গণি মিয়াই সব খাইছে। ব্যাটার যুদ্ধের নিশা। তারপর আর গল্পের আগা-মাথা কিছুই ঠিকঠাক থাকে না। কখনও সে বলে হুসনার বাপের নাম গণি মিয়া, কখনও বা বলে, আতর আলী। কয়েস মিয়ার তাতে ভীষণ আপত্তি। সে হুসনারে কথা শোনায়। হুসনা রেগে যায়, কীতা খন আধ-পাগলা মানুষের মাত শুনতেইন? না আমারার মাত। হুসনা জানায়, তার নানা তারে বাপের গল্প কইছে। যুদ্ধের গল্প কইছে। রাতে স্বামীর কাছে শুয়ে গুণ গুণ করে কাঁদে হুসনা। শ্বশুরের এমন কথায় দুখ লাগছে। সুহেল মিয়া সীমান্তের কারবারি লোক। সে হুসনারে বুঝ দেয়, কানা মানুষের মাতে কান দিছনা? তাগোর মাত ধরন নাই।

হুসনা স্বামীর বুকের মধ্যে চেপে আসে, বলে, তুমি কি সীমান্তে বাড়িটা দেখছোইনি? সেই মন্দিরটারে।

এমন কথায় সুহেলের রাগ হয়, মুখে বলে না। বরং সোহাগ করে, উতা কি আর আছোইনি? যুদ্ধের পর হরিদাস নাকি ইন্ডিয়া গেছেগা। ওই তো রাজপাড়া ছাইড়া নো ম্যান্স ল্যান্ড, এখনে কোন ঘরও নাই। শুনছি মন্দিরেরও কয়টা পিলার আছে।

তুমি দেখছোইনি?

তা, হুনছি, সীমান্ত পিলার, পাড়ি দিয়া দুই দ্যাশের মধ্যে এক কয়ার জমিন আছে।

একলিমা মেয়েকে সেই বাড়ির গল্প বলতে পারতো। যুদ্ধের ছয়টা মাস সে তো ওইখানেই ছিল। তখন কত লোক সেদিক দিয়ে ইন্ডিয়া গেল। কতজন হরিদাসের বাড়ি ঘিরে রয়ে যায়। কিন্তু সেকথা আজ গুছিয়ে বলতে পারে না। যুদ্ধের গল্প করতে গেলেই তার কেবল আতর আলী, জাদুকাটা নদী, গণি মিয়ার কথা মনেপড়ে। চোখের তারায় ভাসে লাল জড়ির মালাশাড়ি। কিন্তু ছয় মাস তো ম্যালাদিন। সেখানে কত কত ঘটনা। হরিদাসের বড় ছেলেটা যুদ্ধে মরল, তা কি আর সে হুসনারে বলতে পারল। ভুলে ভুলে যায়। কিন্তু যেদিন হুসনার স্বামী বাড়ি ফেরে না, সেদিনগুলোতে একলিমা বিবি অস্থির হয়ে ওঠে। বারবার হুসনারে জিগায়, ব্যাটায় কুনখানো গেছে?

হুসনা বলে, কারবার করার কাজেত ওপারো গেছে।

তখন চকিতে একলিমার হরিদাসের কথা মনেপড়ে। সেও একজন কারবারি লোক আছিল। সেও ইন্ডিয়ান জিনিস আইনা রাজগাও বিক্রি করছে।

হুসনা জিগায়, তুমি তারার দেখছোইনি?

দেখবাম না ক্যা? তারার বাড়িত তো আছিলাম। তুই অখন প্যাটে, যুদ্ধ শ্যাষে বাজানে আমারে খুঁইজা আনছিল।

সে কথা হুসনা জানে, নানাজান বলেছে। এমন কি একথাও শুনেছে যে হরিদাস এই সুনামগঞ্জেরই লোক। কালনীর কূলে বাড়ি ফেলে ওই সীমান্তে বাড়ি করছিল। খুব বেশি জানতে চায় না হুসনা। এত খবরের কি দরকার? নানা বাড়িতে বেড়ে ওঠা হুসনা, এখন তার সোনার সংসার। যদিও নিজের পাগল মা আর অন্ধ শ্বশুরের যন্ত্রণা কম না। তবুও সুহেল মিয়া ভালো মানুষ। কারবারিতে হাত পাকা, অভাব নাই। তাতেই হুসনার আনন্দ। মায়ের সংসার হলো না, নিজের স্বাধীন সংসারকে সে আঁকরে ধরে থাকে।

হুসনা শুনতে না চাইলেও একদিন হরিদাসের বাড়ির গল্প ফিরে আসে। তখন চৈত্র মাস। হুসনার শ্বশুর সারাদিন আফসোস করে, চোখত ভালো নাই। থাকলে সে নিজেই পীর আরেফিনের ঊরুসে যেত। সুহেলকে কয়েকবার বলে। ছেলের সময় নাই। এমন দিনে হুসনার মা বেশ ক্ষেপে ওঠে, পীর আরেফিনের মুরিদ হবে। এতদিন বাদে জেদ ধরে, যাবে পীরের মোকামে। তার বকবকানি বাড়ে, বাড়ে অস্থিরতা। সেই চৈত্র মাসেই একলিমা বিবি শ্বশুরের ন্যায় লাখ টাকার স্বপ্ন দেখে। সে স্বপ্নে খুঁজে পায় হরিদাসের বাড়ি! সকালে উঠে সেকথা বলে, হরিদাসের কালী মন্দিরের চাতালে একটা আগর গাছ, লকলক করে বেড়ছে। ঠিক যেন তোর বাপের মতো, জোয়ান-তাগরা। বাকীটুকু আর হুসনা শোনে না, তার সময় কোথায়? সংসারে ম্যালা কাজ। সে মায়ের স্বপ্নের কথা ভুলেই যায়। কিন্তু সন্ধ্যায় যখন একলিমা বিবিকে খুঁজে পাওয়া যায় না। হুসনার তখন মনেপড়ে, আগর গাছ আর হরিদাসের বাড়ির গল্প। গ্রামে খোঁজ পড়ে যায়, কোথায় একলিমা বিবি? একমাত্র বাসেত মিয়া খানিক বলে, কিতা খইলা, দুপুরেই তো দেখছিলাম। কিতা যানি খুঁজে। জিজ্ঞাস করতে কইল, আগর গাছ।

গ্রামের মানুষ হুসনার মাকে আর খুঁজে পায় না। পীরের বাড়ি পর্যন্ত লোক পাঠানো হয়, সেখানেও নাই। সেই শোকে হুসনার কান্নায় বাড়ি ছাপিয়ে যায়, কিন্তু সবাই অবাক হয়ে দেখে কয়েস মিয়াও কান্দে। অন্ধ মানুষটা বলতে থাকে, পাগল বেটি, তোরা কেউ তারে মায়া করছিসনা।

সবার চোখ বুড়ো কয়েস মিয়ার দিকে, এতদিনের রাগ তার উবে গেল! তার অকেজো চোখ বেয়ে পানি পড়ে, যেন মার্সিয়ার ক্রন্দন। হুসনা দেখে বারান্দায় বসে অন্ধ মানুষটা একা একা বলতে থাকে, পাগলী বেটি, কিতা রে বাপ, সে কি আগর গাছ পাইতোনি? না আতর আলীরে খোঁজ পাইত..

হুসনা কাছে যেয়ে বলে, কীতা কন? এই হিজল-করচার জঙ্গুলও আগর গাছ অয়না।

কয়েস মিয়া বলে, মনে খয় তোর মা হরিদাসের বাড়ি খুঁজাত গেছে। তারে কোন আর পাওয়া যাইবোনি।



---------------------
ডিসেম্বর/২০১৮


লেখক পরিচিতি:

বদরুন নাহার

কথাসাহিত্যিক।

নিউইয়র্কে থাকেন।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ