ঈশ্বরীতলার রূপোকথা: ষষ্ঠ পাণ্ডব




শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘ঈশ্বরীতলার রূপোকথা’র যে সংস্করণটি আমি পড়েছি সেটি মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স থেকে ১৩৮৩ সালে প্রকাশিত। উপন্যাসের শুরুতে ‘আমার লেখা’ নামে ১৪ পৃষ্ঠার এক আত্মকথন আছে। যারা শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের আত্মজীবনী ‘জীবন রহস্য’ পড়েছেন তারা বুঝতে পারবেন এই আত্মকথনটি ঐ আত্মজীবনীর অংশবিশেষ মাত্র। উপন্যাসের শুরুতে এটি দেবার চিন্তা লেখকের মস্তিষ্কজাত নাকি প্রকাশকের বুদ্ধিজাত সেটি জানি না, তবে কাজটি ভালো হয়নি। 
শ্যামলের উপন্যাস ‘কুবেরের বিষয় আশয়’, ‘সরমা ও নীলকান্ত’, ‘চন্দনেশ্বরের মাচানতলায়’, ‘পাপের বেতন পরমায়ু’ ইত্যাদির অনেকগুলোতে কখনো ছায়া হয়ে, কখনো রেখাচিত্র হয়ে, আবার কখনো মাংসের ভেতরে হাড়ের কাঠামো হয়ে তাঁর নিজের জীবন প্রবলভাবে এসেছে। একই ব্যাপার ‘ঈশ্বরীতলার রূপোকথা’র ক্ষেত্রেও সত্য। যারা শ্যামলের জীবনের কথা জানেন তাদের পক্ষে এই উপন্যাসের অনাথবন্ধু বসুকে চিনতে মুহূর্ত সময় লাগবে না। তাই উপন্যাসের শুরুতে এই আত্মকথন পাঠকের করোটিতে একটা অদরকারী কীট ঢুকিয়ে দেয়। সেই কীটের পদচারণা ও দংশনকে উপেক্ষা করে পাঠক যদি অগ্রসর হন তাহলে তিনি একটু একটু করে ঈশ্বরীতলা নামের এক জাদুবাস্তবতার জগতে ঢুকে পড়বেন। মোটা দাগে উপন্যাসটির গোটা কাহিনী ঘোরতর বাস্তব, কিন্তু তার সাথে পরতে পরতে সূক্ষ্মভাবে মিশে আছে জাদু। ঈশ্বরীতলার আকাশ-বাতাস-পুকুর-বাওড়-হাঁস-মুরগী-কুকুর-বেড়াল-গরু-বৃক্ষ-ফসল-বাড়ি সবই জীবন্ত-কম্যুনিকেটিভ-মায়াময়। সেই মায়ার জগত বাস্তবের দুনিয়ায় সবার অনুভবযোগ্য নয় যেমন এই উপন্যাস বা শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখালেখি সবার জন্য সহজপাচ্য নয়। বস্তুবাদ, ভোগবাদ ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদে যাদের এলার্জি আছে তাদের পক্ষে শ্যামল না পড়াই নিরাপদ।
 
এই উপন্যাসের ঈশ্বরীতলা বিদ্যেধরী নদীর মরা বাঁকের বাওড়ের কাছের এক গ্রাম যেখান থেকে ইলেকট্রিক ট্রেনে কলকাতা ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করা যায়। ঈশ্বরীতলাতে যেমন রেলস্টেশন-স্টেশনবাজার-ধানেরগোলা-ব্যাংকবাড়ি-গম ভাঙানোর কল-আলুর চপের দোকান-সিনেমা হল-পঞ্চানন অপেরা আছে তেমনি আছে অবারিত ফসলের মাঠ, মাছের ভেড়ি, পয়স্তি চর, জলভরা বাওড়, কোম্পানির বাঁধ, ইরিগেশন ক্যানেল, ঘন জঙ্গল, পঞ্চাননতলার জাগ্রত থান। এখানে ভেড়ির মালিক অক্রুর বিক্রম মজুমদার, জনতার লোক রিটায়ার্ড ম্যাজিস্ট্রেট দক্ষিণা চক্রবর্তী, আপস্টার্ট বংশী চন্দ্র কাপালি’র সাথে জেলখাটা ডাকাত সন্তোষ টাকি, জুতোর দোকানদার যাত্রাপাগল জগাই, মৎস্যশিকারী-কাম-দিনমজুর মদন-বদন, অপার্থিব জগতের মানুষ মহম্মদ বাজিকরও আছেন। কলকাতার খুব কাছের হয়েও একেবারে জগতবিচ্ছিন্ন, মফস্বল শহর আর গাঁয়ের সুবিধা-অসুবিধা, তার নানা রঙের মানুষ, কখনো সবাক জীবকুল কখনো সচল প্রকৃতি মিলিয়ে ঈশ্বরীতলা যা, তার কিছু কিছু দেখা মেলে শ্যামলের অন্য লেখাগুলোতেও — কোথাও কোটালপাহাড় নামে, কোথাও কদমপুর নামে, কোথাও অন্য কোন নামে। এমন ধারা স্থানের দেখা মেলে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘মাকোন্দো’তে, ইসাবেল আযেন্দের ‘কর্দিলেরা’য় অথবা আর কে নারায়ণের ‘মালগুড়ি’তে। এগুলোর একটির বহিরঙ্গের সাথে আরেকটির মিল নেই, তবে এগুলোর প্রত্যেকটির সাথে প্রত্যেকটির কোথায় মিল আছে সেটা জাদুবাস্তবতার পাঠকমাত্র জানেন।
 
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কি অনাথবন্ধু বসু নাকি ঈশ্বরীতলা স্বয়ং সেটা নিয়ে তর্ক করা যেতে পারে, তবে তা অহেতুক। অনাথবন্ধু গ্রাজুয়েশন করা, ছাত্রজীবনে রাজনীতি-ডিবেট-প্রেম করা, কলকাতায় চাকুরিকরা একজন মানুষ যিনি নিরিবিলি থাকার জন্য ঈশ্বরীতলায় বাড়ি করেন। তাঁর সেই বাড়িতে তিনি তাঁর স্ত্রী শান্তা, দুই কন্যা টুকু ও লিলি, গৃহকর্মী বলাই, উমা নামের গাভী, কানাই নামের বাছুর, বজ্জাত নামের বেড়াল, বাঘা নামের কুকুর, অরুণ-বরুণ নামের রাজহাঁস, আটটা পাতিহাঁস, এগারোটা ছাগল যার বেশিরভাগ শুক্লা নামের এক ছাগীর সন্তানসন্ততি আর একান্নটা সাদা লেগহর্ন মুরগি নিয়ে বাস করেন। অনাথ সকালে কাঁকড়াভাজা সহযোগে গেলাসের পর গেলাস হাঁড়িবাঁধা তাড়ি খান, কখনো কন্যা টুকুকেও তার ভাগ দেন। টাটকা মাছের তরকারি দিয়ে ভাত খেয়ে অফিসে যান, সেখানে একজনে তিনজনের কাজ করেন আবার অল্প সময়েই অফিস থেকে বের হয়ে যান। অনাথ নিয়মত অফিস কামাই করেন যেমন তার কন্যারা নিয়মিত স্কুল কামাই করে। ইচ্ছে হলে তিনি কাজ ফেলে দুপুরে ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘুমান। অবসরে তিনি ডায়েরিতে নিজের ভাবনা লিখে রাখেন, নিরালায় তিনি কুকুর-বেড়াল-গরু-ছাগল সবার সাথে তাদের ভাষায় কথা বলেন, তৃষ্ণা মেটাতে আকাশ অথবা জ্যোৎস্না পান করেন, মহম্মদ বাজিকরের অপার্থিব জগতের আলোয় নিঃশ্বাস নেন। অনাথ একই সাথে ঘোরতর সংসারী ও উদাস সংসারবিরাগী, একই সাথে চরম বৈষয়িক ও হাতখোলা। অনাথের চরিত্রের সাথে, জীবনযাপনের সাথে পাঠক কখনো নিজের অংশকে কখনো নিজের স্বপ্নের খণ্ডকে আবিষ্কার করতে পারবেন। তাই অনাথ পাঠকের কাছে মোটেও অজানা কেউ নন্‌, বরং নিজের খুব চেনা, নিজের ভেতরের খুব একান্ত একটি চরিত্র। মার্কেজের বুয়েন্দিয়ারা যেমন এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে প্রবাহিত হন, ক্যানভাস সংক্ষিপ্ত হওয়ায় শ্যামলের অনাথবন্ধু বসু এক জন্মেই এক জীবন থেকে অন্য জীবনে প্রবাহিত হন। বার বার পরাজিত হতে হতে ঘুরে দাঁড়ান, সৃষ্টি করেন > সৃষ্ট জগত ধ্বংস হয় > পুনরায় নতুন কিছু নির্মাণ করেন। প্রতিবার নিজের পরিচয় আর অবস্থান পরিবর্তন করেন। সাধারণ জীবনে নাগরিকায়িত মানুষ জীবনযুদ্ধে পরাজিত হলে বিনাগরিকায়িত হন, এখানে অনাথ বিনাগরিক জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়ে নাগরিক জীবনে প্রত্যাবর্তন করে জীবনপ্রবাহ অব্যাহত রাখেন।
 
এখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র অনাথের কার্যক্রম বিশেষত কলকাতার মতো মহানগরের বাঁধানো জীবন ছেড়ে ঈশ্বরীতলাতে থানা গাড়ার ব্যাপারটি গড়পড়তা বাঙালীর তুলনায় একটু খাপছাড়া মনে হতে পারে। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর নিজের জীবনের চম্পাহাটি পর্ব’তে দশজন সাধারণ বাঙালীর চেয়ে যে স্বতন্ত্রতা দেখিয়েছেন সেটি বিবেচনায় নিলে অনাথকে আর খাপছাড়া মনে হবে না। শ্যামলের এই স্বতন্ত্রতা অনেককে স্বস্তি দেয়নি, অনেককে ঈর্ষান্বিত করেছে — যেমনটা অনাথের জীবনেও ঘটেছে। শ্যামল ঘোরতর অস্তিত্ত্ববাদী একজন লেখক। জীবনের রঙ-রূপ-রস তিনি নিজে যেমন উপভোগ করেছেন তেমন তাঁর চরিত্ররাও করেছে। কোন প্রকার ইনহিবিশন, পিউরিটান ভাবনা তাঁর লেখার প্রবাহকে এদিক ওদিক ঘুরিয়ে দেয়নি। তাঁর এই সাবলীল আচরণের সাহস যাদের ছিল না তাদের কেউ ‘রাম’, ‘রাম’ বলে সরে পড়েছেন; কেউ না পেরে গালি দিয়েছেন; কেউ কেউ কিছু জানেন না এমনভাব করে থেকেছেন — এবং এই সকল পক্ষ তাঁকে ঈর্ষা করে গেছেন যেমন অনাথও অন্যদের মাৎসর্যের তাপে দগ্ধ হয়েছেন।
 
ঈশ্বরীতলার রূপোকথা অনাথবন্ধুর জীবনের সাথে সাথে আরও অনেকগুলো চরিত্রকে খুব কাছে থেকে দেখায়, নির্মাণ করে, পরিণতিতে নিয়ে যায়। তাই উপন্যাস হিসেবে এটি যত কম ফর্মারই হোক না কেন এর ক্যানভাসের ব্যপ্তি ঈশ্বরীতলার ফসলের মাঠ অথবা এর আকাশের মতো বিশাল। এখানে কমেডি আছে, রোমান্স আছে, ট্র্যাজেডি আছে। এখানে কর্নেল অরেলিয়ানো বুয়েন্দিয়ার সতেরজন পুত্রের মতো অনাথের পশুপাখিরা প্রাণ হারায় মাঠের ফসলেরা ধুয়ে যায়, আবার মেলকিয়াদেসের মতো মহম্মদ বাজিকর মৃত্যুর জগত থেকে ফিরে আসেন। এখানে মার্কেজের পিয়েত্রো ক্রেসপির প্রতি আমারান্তা বুয়েন্দিয়া অথবা রেবেকা উযোয়ার ভালোবাসার মতো ভীরু প্রেম যেমন আছে, তেমন আযেন্দের জোয়াকিন আন্দিয়েতা আর এলিযা সমার্সের বাঁধভাঙা অসম প্রেমের মতো প্রেম আছে। স্তালিনের যৌথখামারের স্বপ্ন ভেঙে পড়ে ভ্রান্ত নীতির কারণে আর এখানে অনাথের অনাবাদী জমি চাষের যৌথ প্রচেষ্টা মার খায় নোনা জলে, জলের অভাবে, মাজরা পোকার আক্রমণে, অকাল প্লাবনে। এই যৌথ প্রচেষ্টার শুরুটা কি এক Epiphany, নাকি অনাথের চিন্তা মহম্মদের বাক্যে মূর্ত হয়ে আসে! মহম্মদ কি আসলেই ভিন্ন কেউ নাকি অনাথের এক অবতার যে সময়ের ভিন্নতায় বা মাত্রার ভিন্নতায় বাস না করে একই সময়ে একই স্থানে সমান্তরালে বিচরণ করে! সে ভাবনা পাঠকের, ডেলফির মন্দিরের অমোঘ বাণীর মতো শ্যামল শুধু তার বর্ণনা করে যান।
 
বাংলা সাহিত্যের অত্যাবশকীয় উপাদান ‘প্রেম’। শ্যামলের রচনাগুলোতে প্রেম মূলত প্রাপ্তবয়স্ক ও প্রাপ্তমনস্কদের প্রেম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটা বৈবাহিক সম্পর্কের তোয়াক্কা করে না বা সামাজিক রীতিকে বুড়ো আঙুল দেখায়। কিশোর-কিশোরীর প্রেম বা পরিবারের সবাইকে মানিয়ে সদ্য যুবক-যুবতী তাদের প্রেম-বিবাহকে প্রতিষ্ঠিত করছে শ্যামলের লেখা এমন গল্প খুব বেশি নেই। শ্যামলের নায়ক নায়িকারা মূলত বিবাহিত বিবাহিতা, এবং পরকীয়াতে রত। এমন সৃষ্টিছাড়া লেখকের লেখা ঘরে ঢুকলে যারা গোবর-গঙ্গাজল ছিটান তারা শ্যামলকে নিরাপদে এড়িয়ে যান। এই উপন্যাসে অবশ্য প্রেম নিয়ে শ্যামল অমন খেলা খেলেননি। সুতপা বসু আর বিকাশ মজুমদারের প্রেম সাধারণ বাঙালী জীবনের আর দশটা প্রেমের গল্পের মতো এগিয়েছে। এমনকি সেখানে সিনেমাটিক অ্যাকশনও আছে। রিনি মজুমদারের সাথে সন্তোষ টাকির প্রেমটা বরং সাহসী, তবে সেটাও সাধারণ বাঙালী জীবনের ব্যতিক্রম নয়। এই জুটির পরিণতিটি স্বাভাবিক, তবে ঠিক শ্যামলীয় নয়।
 
এই উপন্যাসের সম্ভাব্য রচনাকালের সময়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রগতির ভেকধারীদের হাতে বাম হঠকারীরা কচুকাটা হচ্ছে এবং স্বঘোষিত স্তালিনপন্থীরা আস্তে আস্তে ক্ষমতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সময়কালে গোষ্ঠীবিশেষের রাষ্ট্রের ক্ষমতাকাঠামো থেকে কর্তৃত্বকাঠামোতে মাইগ্রেশনের যে প্রবণতা দেখা গিয়েছিল ঈশ্বরীতলাতে তার রেশ দেখা যায়। তাছাড়া বাস্তবে কর্তৃত্ববাদী স্বঘোষিত স্তালিনপন্থীরা ভ্রান্ত পরিকল্পনার যে অলীক স্বপ্ন দেখিয়ে এক সময় ক্ষমতায় এসেছিল, এবং চার দশকে যে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়েছিল ঈশ্বরীতলার অনাথও তেমন এক বেহিসেবী স্বপ্ন দেখিয়ে মানুষকে জড়ো করেছিলেন এবং এক সময় সে স্বপ্ন চরমভাবে ভঙ্গ হয়। একটা পার্থক্য অবশ্য এখানে আছে, বাস্তবের দুনিয়ায় কর্তৃত্ববাদীরা কোথাও নিজেদের ভুল বা দোষ স্বীকার করেনি অথবা তার দায় নেবার হিম্মত দেখায়নি। অনাথ অবশ্য তাদের মতো নপুংসক নন্‌, তিনি যাবতীয় দায় নিজে চুকেছেন — নিজের সর্বস্ব দিয়ে চুকেছেন। ভবিষ্যতদ্রষ্টা সাহিত্যিক যেখানে মানুষকে বহুকাল আগে তার কর্তব্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন, মানুষরূপী অমানুষ রাজনীতিবিদরা সেই কর্তব্যের পথে না হেঁটে নিজেরা ধ্বংস হয়েছে।
 
তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতির অকপট চিত্র, ভোটের রাজনীতির কুৎসিত চেহারা, বিপ্লবের ব্যর্থ প্রচেষ্টা, সামন্তবাদের অবশেষকে ছাপিয়ে পুঁজিবাদের উত্থান, ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের উত্থান, মূল্যবোধের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানবিক ভালোবাসার গল্প, জয়পরাজয়ের গল্প, ইতিহাসের অস্পষ্ট নোট এমন অনেক কিছুকে ধারণকরা এই রূপোকথা নিয়ে আরও বলতে গেলে গোটা উপন্যাসটিকেই বর্ণনা করতে হবে। বিশেষত কেউ যদি এখান থেকে উদ্ধৃতিযোগ্য অংশ তুলে ধরতে চান তাহলে তাঁকে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা টাইপ করে যেতে হবে।
 
বাংলা সাহিত্যের গদ্যকারদের মধ্যে শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় না বিশেষ জনপ্রিয়, না বিশেষ আলোচিত। একজন গদ্যকার ঠিক কী কী কারণে জনপ্রিয় হন সেটা বলা মুশকিল। কখনো কোন লেখক জনপ্রিয় হয়ে যাবার পর তাঁর লেখা নিয়ে নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে অনেক কিছু হয়তো প্রমাণ করা যেতে পারেন, তবে জনপ্রিয় লেখক হতে পারার ফরমুলা কেউ বলতে পারবেন না। বাংলা ভাষায় লেখা বিশ্বমানের লেখা যেমন জনপ্রিয় হতে পারেনি তেমন ছাপানো ভূষিমালের ত্রিশটির বেশি সংস্করণ বের হবার ইতিহাসও আছে। শ্যামল জনপ্রিয় না-ই হতে পারেন, তাঁর জনপ্রিয় হবার দরকারও নেই। ঈশ্বরীতলার রূপোকথা পড়তে গিয়ে অনেকে হাই তুলবেন, খেই হারাবেন, বিরক্ত হবেন, পড়া বন্ধ করে দেবেন — তাতে শ্যামল বা ঈশ্বরীতলার কিছু যাবে আসবে না। বাংলা সাহিত্যে যারা বিশ্বমানের কাজের নিদর্শন খুঁজতে চান তারা শ্যামল অথবা ঈশ্বরীতলাকে ঠিকই খুঁজে নেবেন।


লেখক পরিচিতি:

ষষ্ঠ পাণ্ডব

গল্পকার। অনুবাদক। প্রাবন্ধিক

ঢাকায় থাকেন।







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ