অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তর গল্প : একটি আত্মহত্যা




সারা শহরে ঢিটি পড়ে গেল। বিনয় সান্যালের বউ আত্মহত্যা করেছে।

কে বিনয় সান্যাল?

বিনয় সান্যালকে চিনতে বাকি আছে নাকি কারু? খবরের কাগজে নাম বেরিয়ে গেছে।

কত লোকেরই তো বেরোয়। বল না কে?

রিলিফের বিনয় সান্যাল।

অত ভণিতার দরকার নেই। সোজাসুজি বল না কেন রেপ-কেসের আসামী।

কিন্তু বউটা মরল কিসে?

আর কিসে! গলায় দড়ি দিয়ে।

ভরদুপুরে গলায় দড়ি! চল দেখি গে।

সমস্ত শহর ভেঙে পড়েছে। পুলিশও এসে গিয়েছে সদলে, গাড়ি নিয়ে। ঐ বুঝি ডাক্তার। ডাক্তারের আর কাজ কী।

ঝুলন্ত দেহ নামানো হয়েছে। শোয়ানো হয়েছে খাটে। পুলিশের গাড়িতে এবার মর্গে নিয়ে যাবে বোধহয়।

কী সুন্দর দেখতে বল দিকিনি। আহা, মরল কেন?

আর কেন! লজ্জায়, ঘৃণায়, বিশ্বাসঘাতকতায়। অমন যার স্বামী। সমস্ত সংসারের মুখ পড়িয়ে দিয়েছে।

আহ, আগে অপরাধটা প্রমাণ হোক। সবে তো দায়রা-কোর্টে এসেছে। জুরির বিচারে কী হয় কেউ বলতে পারে না।

আঁচলের খুঁটের গিট খুলে পাওয়া গিয়েছে চিরকুট।

পাওয়া গিয়েছে? মত্যুর কারণ তাহলে লেখা আছে তাতে।

আর কারণ! সব মুহূর্তের ভুল। মুহূর্তের অভিমান।

সে কি, আজ তো সকালের আদালতে নিজেই কোর্টে উপস্থিত ছিল। বসে ছিল আসামীর উকিলদের পাশে।

কাল রাতে সিনেমায় পর্যন্ত গিয়েছিল--

‘‘আমি সিনেমা দেখাঁর নাম করে এসেছি।” বললে মন্ময়ী।

“সঙ্গে আর কেউ আছে?” প্রভাকর জিজ্ঞেস করলে।

‘না।'

‘দূরে রাস্তায় অপেক্ষা করছে?”

‘কেউ না। একা-একা যান নাকি সিনেমায়?”

‘চেনা সাইকেল-রিক্সায় যেতে কোনো অসুবিধে হয় না। কখনো কখনো পাড়ার কোনো বউ-ঝিকে তুলে নিই--।

“এখন সেই সাইকেল-রিক্সায় এসেছেন বুঝি?” চমকে উঠল প্রভাকর।

‘না, পায়ে হেঁটে এসেছি।’

এ সব তো পরের কথা-- গোড়াতেই তো প্রভাকর চমকে উঠেছিল যখন দেখল কম্পাউণ্ডের গেট ঠেলে স্যান্ডেল পায়ে একাকিনী এক মহিলা তারই অফিস-ঘরের দিকে এগিয়ে আসছে।

সর্বনাশ আর কাকে বলে! মেয়ে যখন তখনই জটিলতা। কোনো মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে এলে তো জটিলই, এমনি খুচরো এলেও জটিল।

ভয়ে জড়সড় হয়ে ঢুকে পড়ল মৃন্ময়ী। এতক্ষণ পায়ের নিচে পাথরের কুচির খড়খড় শব্দ হচ্ছিল এখন ভারি মোলায়েম মনে হল। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখল পুরু কার্পেট। লোক শোবার জন্য তোষক পায় না এ একেবারে পায়ের জন্যে বালাপোশ!

‘কী চাই?’ প্রায় মুখিয়ে উঠল প্রভাকর।

‘আপনার কাছে একটা আবেদন আছে।”

তা প্রভাকর জানে এবং তা যে অযৌক্তিক আবেদন তাও জানে। কিন্তু কণ্ঠস্বরটা বিমর্ষ হলেও সলজ্জসরল।

বললে, ‘বসুন।’

মুখোমুখি একটা চেয়ারে বসল মন্ময়ী। কিন্তু কী বলবে কীভাবে বলবে ঠিক করতে পারছে না।

প্রভাকরও প্রতীক্ষা করতে লাগল। যদি তেমন কিছু বিপদ দেখে, টেলিফোনের দিকে তাকাল, থানায় রিং করে দেবে।

আবেদনটা না শোনা পর্যন্ত প্রতিরক্ষার চেহারাটা ঠিক করা যাচ্ছে না।

আরো কতক্ষণ কুণ্ঠিত হয়ে থেকে অস্ফুটে মময়ী বললে, “আমার স্বামীর বিষয়ে বলতে এসেছি। যদি একটু শোননন-’.

‘কোনো কেস?’

আবার থেমে গেল মৃন্ময়ী।

যদি কেস হয় আবেদন যে নামঞ্জুর হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। অবশ্যে সেক্ষেত্রেও সেটা আর প্রভাকরের ফাইলে রাখা যাবে না, কাল সকালেই অন্য কোর্টে ষ্ট্রান্সফার করে দিতে হবে। যদি আবেদন মঞ্জুরযোগ্য হয়?

কী, ঘুষ নিয়ে এসেছে? কোনো আপিল? কোনো ইনজাংশান ? বিবাহ-বিচ্ছেদ? কাস্টডি?

তবু, মুখ থেকে কথা বার করছে না মৃন্ময়ী।

'কে আপনার স্বামী? নাম কী?’

বিনয় সান্যাল।’

‘কোন বিনয় সান্যাল? রিলিফের?’ যে—’

‘হ্যাঁ, সে-ই। কিন্তু—’

মৃন্ময়ীর ভরাট চুলে সিঁথিভরা ডগডগে সিঁদূরের দিকে তাকিয়ে রইল প্রভাকর : ‘কিন্তু, কী?’

“বিশ্বাস করুন কেসটা মিথ্যে।’

রাগে প্রভাকরের রক্ত গরম হয়ে উঠল। বললে, “বিচার শেষ হবার আগে তা কী করে বলা যায়? আর এ জুরির বিচার।’

‘আপনি জজসাহেব, আপনি যেমন বলবেন জরিরাও তেমনি বলবে।’

‘তার কী মানে আছে? ওপক্ষ যদি জরিকে ঘুষ দেয়?’

‘ওরা তা পারে। মেয়েটা ভীষণ বিচ্ছু—’

‘কে মেয়েটর? ভিকটিম-গার্ল? বয়েস কত?’

‘বয়স কমাতে চাইছে, কিন্তু আপনি দেখবেন পেকে ঝুনো হয়ে গেছে, কুড়ি-একুশের কম নয়। রিফিউজি মেয়ে, একটা চাকরি পাওয়া যায় কিনা তারই সন্ধানে আমার স্বামীর কাছে আসত। ম্যাট্রিক পাশ নয়, কী করে চাকরি হবে? চাকরি হয়নি বলেই আক্রোশে এই মামলা সাজিয়েছে। কী অসম্ভব গল্প, বলে কিনা, ঘটনাটা আমাদের বাড়িতেই নাকি ঘটেছে। স্ত্রী বাড়িতে, এ অবস্থায় কোনো স্বামীর পক্ষে এ অপরাধ করা সম্ভব, বিশ্বাসযোগ্য? যদি সত্যি হত, মেয়েটা চেঁচায় না কেন, আমাকে ডাকে না কেন?”

‘সে সব বিচারকালে দেখতে হবে।'

‘যদি ঘটনাটা হয়েও থাকে তাহলে ধরতে হবে, মেয়েটার সম্মতি ছিল। সম্মতি থাকলে তো আর ঐ অপরাধ হয় না।'

‘যদি অবশ্য বয়সে না ঠেকে।’

‘বয়সের গাছ-পাথর নেই যে ঠেকবে। মেয়েটা আগে থেকেই নষ্ট।’

‘সে সব সাক্ষ্যপ্রমাণে ঠিক হবে‘ প্রভাকর পাশ কাটাতে চাইল।

‘কিন্তু আমাদের উকিল বলছে নষ্ট হলেও কেস হতে পারে। আসল হচ্ছে সরল সম্মতি। সম্মতি যদি থাকে তাহলে নষ্ট হলেও কিছু নয়, নষ্ট না হলেও কিছু নয়।

অলক্ষ্যেই বুঝি, কেন কে বলবে, প্রভাকরের হঠাৎ সাহায্য করতে ইচ্ছে হল। বললে, ‘হ্যাঁ, কিন্তু মেয়েটা যদি আগে থেকেই নষ্ট হয় তাহলে সম্মতিটা অনুমান করা সহজ হবে। কিন্তু আবার হঠাৎ গম্ভীর হল প্রভাকর : ‘কিন্তু, আমি বলছি, সম্মতি থাকলেই কি এ পক্ষের অসংযত হতে হবে? একজন সরকারী কর্মচারী, তার সামান্য দায়িত্ববোধ নেই ?’

‘মুহর্তে ভুল করে ফেলেছে’।

এ সমস্তই বিচারের কথা, কোর্টের কথা’, চঞ্চল হয়ে উঠল প্রভাকর :‘তা এখানে কী!’

‘আমি বিচার বুঝি না। আমি শুধু আপনাকে বুঝি।’ চোখ তুলে তাকাল মৃন্ময়ী।

‘আমি কী করব!’

‘আমার স্বামী নির্দোষ, আপনি আমার স্বামীকে খালাস দিয়ে দেবেন। এর কম হলে চলবে না।’ টেলিফোনের উপর হাত রাখল প্রভাকর : ‘জানেন থানায় ফোন করে দিলে পুলিশ এসে আপনাকে য়্যারেস্ট করতে পারে।’

‘তাই করুন, আমাকে জেলে দিন।’ কেঁদে ফেলল মন্ময়ী : 'আমার স্বামীর বদলে আমি যদি আসামী হতে পারতাম, কিংবা ধরুন-ঐ ভিকটিম-গার্ল হতে পারতাম, তা হলেও আমার সহ্য হত। যে নির্দোষ তার লাঞ্ছনা আর অপমান তিলতিল করে দগ্ধ করত না।’

‘আপনি যদি ভিকটিম-গার্ল হতেন!’ চোখের কোণে প্রভাকর বুঝি দেখল বাঁকা করে।

হ্যাঁ, তা হলে আমার স্বামী তো বাঁচত। নির্দোষের তো জেল হত না।’

‘কিন্তু আপনার কী হত?”

‘অবস্থার বিপাকে পড়ে যদি সর্বনাশ হয়ে থাকে, আমার স্বামী আমার পক্ষ নিতেন, ক্ষমা করতেন। না করলেও বিশেষ এসে-যেত না। তার তো জেল হত না, সে তো ছাড়া পেত।’

‘নির্দোষ হলে এমনিতেই ছাড়া পাবে।'

‘তা বলা যায় না, অনেক সময় বিচারে ভুল হয়।’

‘সেই বিচারের ভুলেই হয়তো আসামী ছাড়া পেল।’

‘যেমন করে হোক, পেলেই হল। তাই আমাকে উকিলবাবুরা বলছে কোর্টে গিয়ে বসতে, যদি আমাকে দেখে জুরিদের মায়া হয়, যদি এমন স্ত্রী থাকতে এমন ঘটনা অসম্ভব, দৈবাৎ অমনি মনে করে বসে। কিন্তু আমি সংশয়ে থাকতে চাই না, তাই আপনার কাছে একেবারে নিশ্চিন্ত হতে এসেছি।’

প্রভাকর ছটফট করে উঠল : আমি—আমি কী করব! আমার তো একার বিচার নয়।

‘না, আপনার একার বিচার। আপনি একাই এক হাজার। আপনি ইচ্ছে করলেই নয়কে হয়, হয়কে নয় করে দিতে পারেন। যেমন করে হোক, যে কোনো মূল্যে আমার স্বামীকে বাঁচিয়ে দিন। দোষী সাব্যস্ত করলে ওর শুধু জেলই হবে না, চাকরি চলে যাবে। ছেলেমেয়ে নিয়ে আমি তখন কোথায় দাঁড়াব। সবকিছু তো যাবেই, একটা হীনতম অপরাধী, জেলখাটা কয়েদী আমার স্বামী আমার সন্তানদের বাপ এ-কলঙ্ক নিয়ে বাঁচব কী করে? আমার স্বামীকে শুধু নয়, আমাকে, আমার শিশু সন্তানদের বাঁচান।’

তন্ময় হয়ে তাকাল প্রভাকর। আশ্চর্য, পাপ এমনি নিটোল হয়ে আসে। ঘুষ কখনো এমন সুগোল হয়!

নিয়তি কেমন সুন্দর করে সাজিয়েছে। বাড়িতে, উপরে দোতলায়, স্ত্রী, অদিতি-কে বলবে রুপসী নয়। আর অযাচিত সুযোগ স্বয়মাগত। সুসম্মত। আর সেও কিনা উচ্চতম সরকারী কর্মচারী। সংযমের ভাণ্ডার।

সবই মুহূর্তের ভুল। মুহূর্তের ভুলেই এই জগৎ। তেমনি, ঈশ্বর করুন, বিনয় সান্যালও মুহূর্তের ভুলেই ছাড়া পেয়ে যেতে পারে।

সব নিয়তির মর্জি।

কিন্তু ঠিক সেই মুহর্তে ইলেকট্রিসিটি ফেল করবে এ কে ভেবেছিল? নিয়তিকে অন্ধ কে বলে, নিয়তি রূপদক্ষ।

অন্ধকার তো নয়, আশীর্বাদ।

সমস্ত ঘরদোর বারান্দা মাঠ-ঘাট-রাস্তা অন্ধকারে ভরে গেল, ভেসে গেল। এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। মফস্বল শহরে এ দুর্নিমিত্ত তো হামেশাই হচ্ছে। বরং ভালোই হল, উপর থেকে অদিতি নামতে পারবে না। উদ্বিগ্ন হবারও কিছু নেই, প্রভাকরের হাতের কাছেই মজুত আছে টর্চ, ক্যান্ডেল, দিয়াশলাই-নিত্যিকার আয়োজন।

‘কোনো ভয় নেই, আমি আছি।’

বরং মন্ময়ীরই ভয় পাবার সম্ভাবনা।

মৃন্ময়ীর মনে হল প্রভাকর যেন খুব কাছের থেকে বলছে। বলছে পায়ের নিচেকার কার্পেটের মতই নরম কণ্ঠে।

তাই মন্ময়ীকে স্বর অস্ফুট করতে হল : ‘হ্যাঁ, আমি জানি, আপনি আছেন, আমার ভয় নেই। আমার স্বামীর জন্যে আমি পাগল হয়ে গিয়েছি। পাগলের কিসের ভয়।’

কিন্তু প্রভাকর পাগল নয়। সে বিচারক। সূক্ষ্মরূপে বিচক্ষণ। এখানেও আবার সেই একাকিনী অভিযোক্ত্রী—সোল প্রসিকিউট্রিক্স--সাক্ষী কোথায়, প্রমাণ কী? তারপর কেন, কিসের জন্যে, সম্বন্ধ কী? কে বিনয় সান্যাল?

বিপদের কথা বিপদে বুঝবে, অন্ধকারের কথা অন্ধকার।

তারপর দশ দিক আলো করে জলে উঠল সরলতা।

‘আমি এবার যাই।’ ত্রস্তব্যস্ত হয়ে দরজার দিকে এগুলো মন্ময়ী : ‘কাল কোর্টে দেখা হবে।’

‘হ্যাঁ, যাবেন। আপনার উকিলের পাশে বসবেন।’ প্রভাকরও এক পা। এগিয়ে এল দরজার দিকে : ‘আপনার উকিল কিন্তু বেশ বুদ্ধিমান। জরির মন কখন কী দেখে টলে যায় বলা যায় না।’

‘আমি জরি বুঝি না, আমি জজসাহেবকে বুঝি। ওসব দেবদেবী না ধরে আমি স্বয়ং ঈশ্বরকে ধরেছি।’ বিজয়িনীর মত মাথা উঁচু করে চলে গেল মৃন্ময়ী।

পরদিন একটু যেন সাজগোজ করেই কোর্টে গেল, বসল তার উকিলদের পাশটিতে। কিন্তু এ কার কোর্ট, বিচারাসনে এ কোন হকিম? টাক মাথায় কে এ বুড়ো?

এই কোর্টে বিচার হবে ?”মন্ময়ী যেন নিজের মনেই আর্তনাদ করে উঠল।

‘হ্যাঁ, এই কোর্টেই তো।’ তার সিনিয়র উকিল বললে। তবে

‘আমি যে জানতাম জজসাহেবের কোর্টে হবে।’

‘এও তো জজসাহেব। তবে—য়্যাডিশনাল—‘ বললে জুনিয়র।

‘এ জজবাবু।’ মুচকে হেসে টিপনী কাটল সিনিয়র : ‘ডিস্ট্রিকট। জাজকে বলে জজসাহেব আর য়্যাডিশনালকে বলে জজবাবু। জজসাহেব সর্বক্ষণ শার্ট-প্যান্ট পরে থাকে আর জজবাবু, কোর্টের সময়টুকু ছাড়া বাকি সময় ধুতি-পাঞ্জাবি—’

‘আমি যে শুনলাম জজসাহেব—’মৃন্ময়ী বাতাসের অভাবে হাঁপিয়ে উঠল।

‘বাবু শুনতে সাহেব শুনেছেন, তাতে কিছু এসে যাবে না।’ সিনিয়র চাইল আশ্বস্ত করতে : ‘কাপড়টা খুলেমেলে পরলেই বাবু, পাক দিয়ে পরলেই সাহেব। হরে দরে সমান। আচ্ছা, দেখ তো। হঠাৎ সন্দিগ্ধ স্বরে জুনিয়রকে জিজ্ঞেস করলে ‘দেখ তো আজই কেসটা এ কোর্টে ট্র্যান্সফার করা হয়েছে কিনা।’

জুনিয়র রেকর্ড দেখল। না, গোড়াগড়ি থেকেই এ কেস এ কোর্টে ‘এ্যাসাইন’ করা।

মুহূর্তের ভুল।

মৃন্ময়ী উঠে পড়ল। যাই একবার জজসাহেবকে তাঁর নিজের কোর্টে দেখে যাই।

মন্দিরে ঢুকতে না পারুক কোর্টে নিশ্চয়ই পারবে। কিন্তু এ কী, ঘর খালি। কোথায় জজসাহেব?

অফিস বললে, ইনস্পেকশানে গিয়েছেন। সন্ধ্যায় ফিরতে পারেন, নাও পারেন।

না, সন্ধ্যায়ই ফিরছে প্রভাকর। আর ফিরেই শুনেছে বিনয় সান্যালের স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে।

‘কেন, মরল কেন?’

‘আর কেন! লজ্জায়, ঘৃণায়, বিশ্বাসঘাতকতায়। অমন যার স্বামী—’

আরেকজন বললে, পুলিশ আঁচলের খুঁটে চিঠি পেয়েছে। মৃত্যুর কারণ লেখা আছে চিঠিতে।

‘কী কারণ?’ প্রভাকরও আর্তমুখে জিজ্ঞেস করল : ‘কে দায়ী তার মত্যুর জন্যে? খোঁজ নাও কী লিখেছে?’

পুলিশের লোক, কে জানে কেন, নিজেই চলে এসেছে জজের কুঠি।

‘কী ব্যাপার? কার নাম লিখেছে?’

‘লিখেছে, আমার মৃত্যুর জনন্য কেউ দায়ী নয়।’

নিশ্বাস ছাড়ল প্রভাকর। বললে, ‘কত ডায়িং ডিক্লেরেশন দেখলাম। মৃত্যুর কাছাকাছি হয়ে মানুষ কেমন সত্য কথা বলে। কেমন হঠাৎ মহৎ হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ