—মেয়েলি গীত, সুনামগঞ্জ
পুরনো পাড়ায় পাশের টালির লম্বা টানা বাড়িটির একটি ঘরে থাকেন আবুল খায়েরভাই ও তার পরিবার। বিহারের মুজাফফরপুরের বাসিন্দা আবুল খায়েরভাই ও তাঁর পরিবারের ঠিকানা মধ্য কলকাতার এক টালির বাড়ির এক কামরা ঘর, যেখানে কোনও রান্নাঘর নেই, বাথরুম নেই। গোটা বাড়িটির সমস্ত বাসিন্দাদের জন্যে একটাই স্নানঘর ও একটি পায়খানা। এক কামরা ঘরের ভেতর সাত-আটখানা করে ইট পেতে উঁচু করে তোলা পালঙ্কের তলায় গৃহস্থের তাবৎ সংসার। রাতের বেলায় সেই সংসার সরে যায় দরজার পাশে, যেখানে রাখা থাকে উনুন আর হাঁড়ি-কলসী ভরা সব জল, আর সেই উঁচু পালঙ্ক বা খাটের তলায় পাতা হয় গুটিয়ে রাখা বিছানাপত্র। ঘরঘর শব্দ তুলে ঘোরে টেবিল ফ্যান। দরজার ঠিক বাইরেটাতে রাখা থাকে দড়ির চারপাই, যা কিনা দরজার মুখটাতে বিছিয়ে রাতের শয্যা পড়ে বাড়ির পুরুষটির। ঘরে-বাইরের এই সংসারের বাসিন্দা মোট সাতজন। ভাবী, তাঁর পাঁচ ছেলেমেয়ে আর আবুল খায়ের ভাই। বড় ছেলেটি মৌলানা আজাদে পড়ে, মেয়ে দুটি প্রাইমারির পরে আর স্কুলে যায়নি, সংসারের ঊনকোটি কাজ তাদের দায়িত্বে আর ভাবীর কোলপোছা ছোট দুই যমজ ছেলেমেয়ের মধ্যে ছেলেটি পাশের ইংরাজি মিডিয়াম স্কুলে যায় আর মেয়েটি দু-বেলা গলির টাইমকল থেকে জল তোলে আর মায়ের ফাই-ফরমাশ খাটে।
আবুল খায়েরভাইয়ের ভাতের হোটেল আছে পাশের মিসরিগলিতে। সেখানে গরুর ভুনা, গরুর ঝোল, গরুর কাবাবের সঙ্গে থাকে ভাত আর রুটি। ডালপুরি, হালুয়াপুরি আর জিলিপি থাকে সকালে আর সন্ধ্যায় বিফ রোল, পরোটা ও কাবাব। পালা-পার্বণে সেই ভাতের হোটেলে রান্না হয় বিরিয়ানি আর সেই বিরিয়ানি রাঁধেন আবুল খায়ের ভাই নিজে। সেই বিরিয়ানির শতেক গল্প আমি ভাবীর দুই মেয়ে বেবি আর সামুর কাছে শুনেছি আর গল্প শুনে শুনে সেই বিরিয়ানি খাওয়ার প্রবল বাসনা সত্ত্বেও কখনও বলে উঠতে পারিনি যে আমি ওই বিরিয়ানি চেখে দেখতে চাই। বেবি যে শুধু আবুল খায়েরভাইয়ের রান্না করা বিরিয়ানির গল্প করে তা নয়, সে নিজেও নাকি দারুণ বিরিয়ানি রাঁধে আর হর-হামেশাই সেই বিরিয়ানির গল্প করে। সমবয়েসি বেবি আর আমার একটা কমন ইন্টারেস্ট ছিল রান্না। বেবি গল্প করত বেশি, শুনত কম আর অত তুচ্ছাতিতুচ্ছ রান্না বা খাবারের গল্পও এত রসিয়ে বলত যে সেই খাবারটি চেখে দেখার গোপন বাসনায় আমি দগ্ধ হতাম।
দেশে আম্মা বিরিয়ানি রাঁধত কয়েক রকমের। মুরগির বড় বড় টুকরো দিয়ে কালোজিরা চালের মোরগপোলাও, খাসির মাংসের আখনি, গরুর মাংসের তেহারি বা বা এমনি এমনি খাসার চাল— এই বাংলায় যাকে গোবিন্দভোগ বলে, সেই চাল আর মাংস দিয়ে বিরিয়ানি। আমরা যাকে বলতাম— বিরানি। এক এক সময় এক এক রকমের বিরানি রাঁধত আম্মা। একটার স্বাদ যেন আর একটার থেকে বেশি। আখনি, তেহারি নাকি মোরগ পোলাও, কোনটা যে কোনটার থেকে বেশি ভাল হত সেই নিয়ে আমি আজও ধন্দে। কিন্তু কলকাতার ওই মুঘল দরবারের বিরিয়ানি, বেবির গল্পের বিরিয়ানি আর আম্মার রান্না করা হরেক রকমের হরেক স্বাদের বিরানি যে এক নয়, সে আমি প্রথম দিন মুঘল দরবারের বিরিয়ানি খেয়েই বুঝেছিলাম। মুঘল দরবারের সেই বিরিয়ানি যে খুব ভাল কিছু ছিল না সে তখন খেতে গিয়েই টের পেয়েছিলাম কিন্তু স্বাদ যাই হোক, এ যে অন্য এক ঘরানা, তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি।
দুই
নারিকেল তিন ঘোটে, পাখাল করিল ঝাটে,
নেট বস্ত্রে অনল জালিল।
নৈবেদ্য ভণ্ডুল দিয়া, ঘটে জল চড়াইয়া,
ঘৃত অন্ন রন্ধন করিল।।
বিপুলা রন্ধন করে, নিদ্রা যায় লক্ষীন্দর,
কালনিদ্রা সহিতে না পারে।
রন্ধন সম্পন্ন হইল, বিপুলায়ে জানাইল,
উঠিয়া ভোজন করিবারে।।
বেহুলা ডাকে উচ্চৈস্বরে, উঠে বসি লক্ষ্মীন্দরে,
ঘৃত অন্ন করিলা ভোজন।
ভোজন করিয়া সুখে, তাম্বুল দিলেন মুখে,
তুষ্ট হইলা বণিক্য নন্দন।।
—রায়ানী গান, বাগেরহাট
ক্রমে সেই দিন এল, যেদিন বেবি বিরিয়ানি রান্না করল। তার আগেই অবশ্য আবুল খায়েরভাইয়ের হোটেলের বিরিয়ানি চাখার সুযোগ হয়েছিল। সে কোনও এক রবিবার, কিসের উৎসব ছিল সেদিন তা আজ আর মনে নেই শুধু মনে আছে, একটা প্লেট অন্য আর একটা প্লেট দিয়ে ঢাকা দিয়ে বেবি যা নিয়ে এসেছিল তা আবুল খায়েরভাইয়ের রান্না করা বিরিয়ানি। এই বিরিয়ানি গরুর মাংসের। ছোট্ট ছোট্ট মাংসখণ্ড আর বড় একখণ্ড বড় আলুর সঙ্গে জাফরানি রঙে রাঙানো বাসমতি চালের ভাত। বনষ্পতি তেলে রান্না সেই বিরিয়ানির স্বাদ আমি কখনোই ভুলব না। আজ বুঝি, আবুল খায়েরভাই ওস্তাদ রাঁধিয়ে ছিলেন। সামান্য আয়োজনেও কী করে স্বাদ আসে তা বুঝতে হলে যেতে হবে ফেলে আসাসময়ের মিসরিগলিতে, আবুল খায়েরভাইয়ের ভাতের হোটেলে।
তখন সে পাড়ায় কারও বাড়িতে রেফ্রিজারেটর অর্থাৎ ফ্রিজ বলে কোনোকিছুর অস্তিত্ব ছিল না। খুব বেশিদিন নয়, বছর পঁয়ত্রিশ আগের কথা বলছি। মাংস সংরক্ষণ করা হত জ্বাল দিয়ে রেখে। দিন কয়েক আগে কোরবানির ঈদ গেছে ফলে সবার বাড়িতেই কম-বেশি মাংস। ঈদের এই মাংস দিয়ে বেবি একদিন বানায় চাঁপ তো আর একদিন বানায় কাবাব। বিরিয়ানি আর বানায় না। কোন মাংস দিয়ে কি রান্না হবে সেটা সেই সংরক্ষণপর্বের প্রথমেই ঠিক করে নেওয়া হত। বিরিয়ানি, চাঁপ, কাবাব, কোরমা এসবে হলুদ পড়বে না আর তাদের কাটও আলাদা। সেই মতো মাংস কেটে কোনোটা শুধু লবণ দিয়ে জ্বাল দেওয়া হত আবার কোনোটা হয়তো আদা-রসুন দিয়ে। এবং বিরিয়ানির জন্যে রাখা হত খাসির মাংস।
একদিন সকাল থেকে বেবির দেখা নেই। সামু এসে জানিয়ে গেল, বিরিয়ানি হচ্ছে! তোলা উনুনে কয়লার আঁচে বেবি রান্না করছে মহার্ঘ্য সেই বিরিয়ানি— যার গল্প শুনিয়ে শুনিয়ে বেবি আমার মাথা খারাপ করে ছেড়েছে। দুপুরবেলা ওড়নার ঢাকা দিয়ে বেবি নিয়ে এল একটা প্লেট— যা আর একটা প্লেট দিয়ে ঢাকা। ভুরভুর করে মিশ্র এক গন্ধ বেরোচ্ছে মিষ্টি আতর, বনষ্পতি আর বাসমতি চালের। এক মুখ উজ্জ্বল হাসি নিয়ে বেবি বলল, কাকি, মাটন বিরিয়ানি! বললাম, আমাকে শেখাও! বলল, আগে খাও! বেবির রান্নার হাত জবরদস্ত। কয়লার আঁচে রান্না করা বিরিয়ানির প্রতিটি জিনিস সুসিদ্ধ। কয়েক দিন ধরে জ্বাল দিয়ে রাখার ফলে মাংস একটু রসহীন লেগেছিল আমার কিন্তু সবকিছু মিলিয়ে অনবদ্য ছিল বেবির রান্না করা সেই বিরিয়ানি। এবং বিরিয়ানি রান্নায় আমার হাতেখড়ি হয় বেবির কাছে। যদিও তা হাতে-কলমে নয়। রান্নার গল্প শুনে শুনে মাথায় গেঁথে গিয়েছিল এক একটা মশলা, প্রক্রিয়া।
তিন
একদিন গিয়া যেতা দেখছি, কইলে বিশ্বাস করবায় নি।
ইবার বিদেশ যাইবার আগে, একদিন গেছলাম তাইনর লগে
এবো আমার চখুত লাগে রঙ বিরঙ্গের নিশানী।
শাহজালাল বাবার মাজার, কি সুন্দর কই মাগুর গলাজ
কইতর উড়ে হাজার হাজার শুইনা আজানের ধ্বনি।
চৌক বন্দরর মিঠা পান, তিন দিন মুখে থাকে গেরান
সুন্দর সুন্দর ভাতের দোকান খাইতে মজাদার বিরানী।
—গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, আঞ্চলিক গান, সুনামগঞ্জ
যে বাড়িতে আমার বাস, সে বাড়িতে বিরিয়ানি রান্না হত না। অতিথি সৎকার বা পালপার্বণে পোলাও-কোরমা আর ঝাল মাংস— এই ছিল সেট মেনু। সঙ্গে একটা মাছ। রেহানা নামের একটি অবাঙালি মেয়ে কিভাবে যেন সম্পর্কিত ছিল সেই বাড়ির সঙ্গে। মোঘলাই খাবার খেতে ইচ্ছে হলে ডাক পড়ত রেহানার। সে এসে তোড়জোড় করে কাবাব, চাঁপ আর বিরিয়ানি বানাত। সে ছিল সেই মুঘল দরবারের বিরিয়ানির মতো রান্না। ভাত আলাদা, মাংস আলাদা আলু আলাদা। কোনোটার সঙ্গে কোনোটা মিশ খায় না আর কেওড়া, গোলাপ, মিষ্টি আতরের আধিক্যে চাল বা মাংসের আসল গন্ধও খুঁজে পাওয়া যেত না।
সেবার বোটানিকাল গার্ডেনে বেড়াতে যাওয়া হবে বাড়ির সকলে মিলে। তখন বিদ্যাসাগর সেতুর অস্তিত্ব ছিল না, বোটানিকাল গার্ডেনে যেতে হলে হাওড়া ব্রিজ হয়ে ঘুরে আসতে হত ফলে সময় লাগত বেশি যার জন্যে লোকে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ত বোটানিকাল গার্ডেন আসতে হলে। সে এক ছুটির দিন। সিরাজ থেকে বিরিয়ানি তোলা হল, সঙ্গে চাঁপ। দু’খানা কালো-হলুদ ট্যাক্সি নিয়ে আমরা সারাদিনের জন্যে বেড়াতে চললাম শিবপুরের বোটানিকাল গার্ডেনে। এই বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশেই একদিন আমার বসত হবে কিন্তু তার তখনও দেরি আছে বছর কুড়ি। জনপ্রতি একটা করে বিরিয়ানির বাক্স নিয়ে আমরা খেতে বসলাম গাছের ছায়ায়। তখন লোকে সারাদিনের জন্যে খাবার, জলখাবার, ফ্লাস্কে করে চা, ক্যাম্পাকোলার বোতল আর ঘাসের উপর বিছানোর জন্যে চাদর নিয়েই বোটানিকাল গার্ডেনে যেত। সিরাজের এই বিরিয়ানি আমার কাছে অন্তত আহামরি কিছু লাগেনি, যার জন্যে সকাল সকাল ট্যাক্সি চেপে লাইন দিয়ে বিরিয়ানির বাক্স তুলে আনতে হবে। তবে মুঘল দরবারের বিরিয়ানির থেকে ভাল ছিল এটুকু মনে আছে। এর চাল অনেক চিকন, রঙ বা গন্ধের আধিক্য নেই কিন্তু সেই এক কেমন যেন ছাড়াছাড়া ব্যাপার। আলগা, যেন চালের সঙ্গে মাংসের বা আলুর কোনও ভাব নেই, নেহাত একসঙ্গে থাকতে হয়, তাই আছে! আমার মাথায় তখন অহর্নিশি এক বিরিয়ানি রান্না হত, আর সেই বিরিয়ানিতে আলু নেই, রঙ নেই, কেওড়া, গোলাপজল, মিষ্টি আতর কিচ্ছু নেই। সেই বিরিয়ানিটা একদিন শুধু রেঁধে ফেলার অপেক্ষা।
পুরনো পাড়ায় যমুনা সিনেমা হলের পাশটিতে ছিল খালেক হোটেল। হল থেকে সিনেমা দেখে বেরিয়ে লোকে লাইন দিয়ে কিনত বিফ রোল, শিক কাবাব আর পরোটা আর তারপর বিফ বিরিয়ানি। ওই পাড়াতেই বাস ছিল আমার ফলে সিনেমা দেখে বেরিয়ে নয় এমনি এমনিই সিদ্দিককাকুকে দিয়ে আনাতাম বিফ রোল, বিফ বিরিয়ানি। সিদ্দিককাকু সেই বাড়িরই বাসিন্দা ছিলেন, যে বাড়িতে আমি থাকতাম। মেজগিন্নি রান্নাঘরে যেতে পছন্দ করতেন না ফলে সিদ্দিককাকুকে হরহামেশাই আশেপাশের হোটেলগুলোতে দৌড়তে হত। চোলিয়ার হোটেলের হালুয়াপুরি আর একপো দুধের চা ছিল আমার ফেভারিট। সেদিন ওইপাড়া দিয়ে আসতে গিয়ে দেখলাম, ঝাঁ চকচকে রেস্টুরেন্ট হয়েছে চোলিয়ার হোটেল। পাশেই বড় এক অন্য রেস্টুরেন্ট আর তাদের মাথার উপর এক সুপার স্টোর। চোলিয়ার হোটেলের মাংস-ভাত ছিল সিদ্দিককাকুর রোজকার আহার। এবং শুধু সিদ্দিককাকুই নয়, ওই পাড়ার অসংখ্য মানুষ সস্তায় মাংসভাত খেত ওই ভাতের হোটেলে।
বেশ কিছু বছর বাদে ট্রামলাইনের ওপারে গোলতলাবের পাশে এক নতুন রেস্টুরেন্ট হল— হোটেল আরাফাত। আহামরি কিছু নয়, সাধারণ ভাতের হোটেল তবে এর একটা বিশেষত্ব ছিল, আরাফাতে বিরিয়ানি হত রোজ। বিফ বিরিয়ানি। ছেলেকে টিউশন পড়িয়ে ফিরে এসে ট্রাম থেকে যেখানটায় নামতাম, ঠিক সেখানটাতেই আরাফাত হোটেল। এখন যদি কেউ আরাফাত হোটেলে যান, তবে সেদিনকার সেই হোটেলকে খুঁজে পাবেন না কারণ সে হোটেল এখন হাত-পা ছড়িয়ে ফুটপাথ দখল করে কাবাব সেন্টার, টি জংশন (ব্রান্ড নয়) অবদি করে ফেলেছে। ছেলে আমার বিফ ছাড়া কিছু খায় না। অতএব ফেরার পথে রোল আর বিরিয়ানির প্যাকেট তুলতেই হত আরাফাত থেকে। ছোট্ট ছোট্ট মাংসখণ্ড আর বিশালাকারের আলু— এই হচ্ছে যে কোনও ছোটখাটো ভাতের হোটেলের বিরিয়ানির বিশেষত্ব। দীর্ঘকাল যাওয়া হয় না আরাফাত হোটেলে আর স্মৃতি এখন চলে যাচ্ছে বিস্মৃতির অতলে কিন্তু যদ্দুর মনে পড়ছে, এরা রঙ-টং বিশেষ দিত না ওই বিরিয়ানিতে। দু-প্যাকেট বিরিয়ানিতে দিব্যি রাতের খাওয়া হয়ে যেত আমাদের মা-বাচ্চা তিনজনের। মাংস অবশ্য টেনে ছিঁড়তে হত। তা গরুর মাংস একটু টেনে না ছিঁড়লে আর অনেকক্ষণ ধরে না চিবুলে কী তার স্বাদ পাওয়া যায়!
কলকাতার নিউ মার্কেটের পিছনদিকে পরপর কয়েকটি রেস্টুরেন্ট আছে বিরিয়ানির। আর অনেকগুলো আছে এমনি ভাতের হোটেল। নামকরা মোঘলাই খাবারের রেস্টুরেন্ট আমিনিয়া যেমন রয়েছে, রয়েছে নিজাম, আর রয়েছে ইউপি বিহার রেস্টুরেন্ট। বর ভদ্রলোক একবার সেই আমিনিয়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন, পরোটা, চাঁপ, রেজালার সঙ্গে বিরিয়ানিও অর্ডার করেছিলেন। কেন জানি না, সেই একবারের পর এই সব নামকরা বিরিয়ানির দোকান আমিনিয়া, সিরাজ— এসব জায়গায় আমি দ্বিতীয়বার আর যাইনি। নিজামে এখনও যাই রোল খেতে, ইউপি বিহারে পরোটা আর ভুনা খেতে কখনও বা বিরিয়ানিও— যদি ছেলে সঙ্গে থাকে। সে অবশ্য বহুকাল আর সঙ্গে নেই। তাই পরোটা আর ভুনা অথবা যখন-তখন বিরিয়ানির জন্যে ছোট ছোট সব বিরিয়ানির দোকানগুলোতে আর হানা দেওয়া হয় না। সকালে ডালপুরি আর সন্ধায় বিফরোলও খাওয়া হয় না। ছেলে যেমন বড় হয়েছে, তেমনি বড় হয়েছে ওই ছোট ছোট জয়েন্টগুলোও। হঠাৎ হঠাৎ ওই পাড়ায় গেলে ওই রেস্টুরেন্টগুলোকে দেখলে কেমন যেন অচেনা লাগে। বড় বড় সব ফ্লেক্স লাগিয়ে তাতে রকমারি রংবাহারি সব খাবারের ছবি। মরশুমে মরশুমে বদলায় খাবারের নাম আর ছবি। কখনও দোকানে দোকানে প্রতিযোগিতা চলে হালিম আর ইফতারের আবার কখনও নেহারি, পায়া ইত্যাদির। বেশ কিছুকাল আগে শুনেছিলাম আবুল খায়েরভাইয়ের ছোট্ট সেই ভাতের হোটেল নাকি এখন চকচকে বিরিয়ানির জয়েন্ট হয়েছে। তাঁর রান্না বিরিয়ানি কি একই রকম আছে নাকি বদল এসেছে তাতেও? জানি না।
0 মন্তব্যসমূহ