জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত
‘প্রভাতফেরি’র সঙ্গে পরিচয় কৈশোরকালে। প্রায় শেষরাত্রিতে গান গেয়ে পাড়ার রাস্তা দিয়ে
হেঁটে চলা, আর সেই গান শুনে আশপাশের বাড়ি থেকে বেরিয়ে
মিছিলের গানে গলা মেলানো--এই ‘প্রভাতফেরি’, জানতাম। পরে দেখি, অভিধানও ওই কথাই বলে--প্রভাতকালে পাড়ায় পাড়ায় গান গেয়ে পুরবাসীকে
জাগানো। বায়ান্নর পরের সব ফেব্র“য়ারিতে তাই সকলকে জাগানো হতো ঘুম থেকে। তবে কেবল পাড়ার লোককে নয়, সারাদেশের মানুষই।
বায়ান্নর ফেব্র“য়ারির কথা আমার মনে পড়ে না। কী ঘটেছিল ওই বছর
একুশে ফেব্র“য়ারির আগে বা পরে লোকমুখে শুনেছি, পড়ে জেনেছি। দ্বাদশবর্ষীয় কোনো বালকের অবশ্য সব
স্পষ্ট মনে থাকার কথা নয়। মনে আছে আরও চার-পাঁচ বছর পরের ফেব্র“য়ারির কথা। কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র, ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী, প্রভাতফেরির কথা আগেই জানা ছিল। তাই শহরের শেষ
মাথায় আমার বাসস্থানে যখন ওই গানের সুরের ধ্বনি পৌঁছেছিল, ছুটে মিছিলে যোগ দিতে সময় লাগেনি মোটেও। যে
গানে গলা মেলাতে হলো তা ছিল ‘ভুলবো না, ভুলবো না, একুশে ফেব্র“য়ারি ভুলবো না।’ মিছিলের সামনে ছিলেন, গানেরও ওই শহরেরই সন্তান গাজীউল হক। পরে জেনেছি, ওই গানটি তাঁরই লেখা।
ছাপ্পান্ন সনে অগণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র বাতিলের
দাবি নিয়ে মিছিলের কথা মনে আছে, এবং ওই-রকম কোনো এক সময়ে তিরানব্বই “ক” ধারার প্রবর্তনের কথাও। কিছু নেতাকর্মীকে দেখা
যায় না অনেকদিন, কেউ কেউ গ্রেফতার হন। পরবর্তীকালের নানা মিছিলে
‘রাজবন্দিদের মুক্তি চাই’ দাবি তাই স্থায়ী স্লোগানে পরিণত হয়। আমি নিজে
কখনো থানার বারান্দায়ও উঠিনি, সাধারণ একজন কর্মী তাই ও-রকম ঘটা স্বাভাবিকও নয়, তবে আমার বাবাকে স্থানীয় গোয়েন্দা বিভাগ সতর্ক
করে দিয়েছিল। এমনি করে মফস্বল শহরের কলেজে দু’বছর কেটেছিল। আইয়ুবশাহী আমল শুরু হওয়ার ঠিক আগের দু’বছর।
গ্রাম থেকে শহরে চলে আসা নিম্ন মধ্যবিত্ত
পরিবারের সন্তান, থাকুক না অতীত বংশকৌলীন্য, তেজারতি কি জোতদারি, এমন কেউ সমাজের মধ্যমণি হয় না সাধারণত। এ কারণে
তার বড় হয়ে ওঠার কথা মনোগ্রাহীও হয় না। যে জন্য এ রচনায় কালক্ষেপণ তা হচ্ছে পেছন
ফিরে একবার দেখা ওই-রকম এক কিশোরের তরুণ হওয়ার সময়ে কোনখানে-- কখন, মানবকল্যাণ চিন্তা কি ‘প্রগতিশীল’ রাজনৈতিক চিন্তা রোপিত হয়েছিল। যে কারণে তার
জীবনের চেহারাও পাল্টায়।
আমার বাল্যকাল খুঁজে নিজ পরিবার কি তার চারপাশে
কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি দেখি না। শুধু এটুকুই শোনা যায় বড় মামা
কলেজের শেষ পরীক্ষা দিতে পারেননি, কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার কারণে। এর বাইরে আর কেউ ও ব্রিটিশবিরোধিতা কি
স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন, শুনিনি। গ্রাম ছেড়ে শহরে আসার মূল কারণ ছিল মাতার মৃত্যুর পরে
অপ্রাপ্তবয়স্ক আমরা কয়েকজন ভাইবোন কি করে গ্রামে বাস করব, বাবার এ চিন্তা। ঘুরে বেড়ানোর চাকরি ছিল
তাঁরদেশভাগের পূর্বে।
২
খাট-বাক্স বাসনকোসনের বস্তা নিয়ে পাবনা জেলার
হোরাসাগর নদীতীরবর্তী এক গ্রাম থেকে বগুড়া জেলার করতোয়া নদীতীরের জেলা শহরে
এসেছিলাম আমরা নৌকায়। মাঝপথে করতোয়ার মুখে চরে আটকে যাওয়ায় একদিন বেশি লেগেছিল বলে
সাত, সাতদিন ধরে ভেসেছিলাম আমরা। শেষদিনে শেরপুর
থানা শহরের ঘাটে নৌকা বাঁধার সময়ে শুনেছিলাম মহাত্মা গান্ধী নিহত হয়েছেন। শহরে
পৌঁছনোর দু’একদিন পরই সম্ভবত স্থানীয় জেলাস্কুলের ময়দানে
শোকসভা হয়েছিল। তার দ্’ুএক বছর পরেই মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর প্রথম
মৃত্যু বার্ষিকীতে আমার ঠিক আগের দিদি ছোটমামার চিন্তায় উদ্দীপিত হয়ে আসন্ধ্যা
অনশন করেছিল। সঙ্গে আমিও। স্কুলজীবন শেষ হওয়ার আগে আর কোনো রাজনৈতিক কর্মকা-ের কথা
মনে পড়ে না কেবল দেশভাগ হওয়ার পরে বড় মামার পরিবারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে চলে যাওয়া
এবং কয়েকসপ্তাহ পরেই ফিরে আসা ছাড়া। এই। বোঝবার বয়স থাকলে ওই ঘটনা বরং রাজনীতি কি
রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রতি বিমুখই করত। তেমন ঘটেনি, স্কুলের শেষ ক্লাস থেকেই গণমানুষের আন্দোলন কি তাদের প্রতি আকর্ষণ শুরু হয়, কলেজের প্রথম বছরেই সেটি স্থায়ী আসন করে নেয়।
ভাবি, সেটি কি ওই ফেব্র“য়ারির প্রভাতফেরিতেই ঘটেছিল?
সম্ভবত সহপাঠী কমলেশ-এর জন্যই ‘সাম্যবাদ’ কী ওই--জাতীয় বিষয় চিন্তায় স্থান পায়। দত্ত এস্টেটের
নায়েব ছিলেন তার বাবা। এ কারণে পরিবারে রাজনৈতিক আবহ ছিল হয়ত তার। এক অনাত্মীয়
ব্যবসায়ীর দোকানে কর্মচারি কি গৃহকর্মে সহায়তার বিনিময়ে তাঁর বাড়িতে স্থান হয়
আমার। স্কুলে পড়ার সুযোগ দেন কোনো মাইনে দেবেন না এ শর্তে। ছাত্র আন্দোলন বা ওই
জাতীয় কর্মকাে অংশ নেয়ার কোনো কথাও এ-কারণে ছিল না আমার। কমলেশের সাহচর্যেই সে পথে
যাওয়া।
স্কুলের শেষ বছরে কমলেশ তার শিল্পকর্মের জন্যই
পাড়ায় প্রসিদ্ধি লাভ করে একটি ছবি এঁকে। আমাদের বিশ্বাস ছিল পাশের বাড়ির পেশকার
সাহেবের কন্যা অনিতার মনোরঞ্জনের চেষ্টাই ছিল সেটি মূলত। বিশাল আকৃতির একটি মানুষ
মাঝখানে, ওপরে নানা দালানকোঠা, গাড়ি ইত্যাদি। নিচে নিরন্ন, কঙ্কালসার জন ভাত খুঁটে খাচ্ছে ডাস্টবিন থেকে
আর সেই কৃতান্ততুল্য মানুষ গুঁড়িয়ে দিচ্ছে দালান কোঠা এ রকম একটি ছবি। ছবির
একেবারে নিচে লেখা ‘সাম্যবাদ’ এবং শিল্পীর স্বাক্ষর--কমলেশ সেন।
শিল্পকর্ম উদ্বোধনের দু’একদিন পরে তার ঘরে বসে ছবিটি দেখছিলাম আমরা।
বাইরের ঘর থেকে ভেতরে যাওয়ার দরজার মাথায় ছবিটি টাঙানো। অনেকক্ষণ দেখে আমি মন্তব্য
করেছিলাম ‘কানকাটা সাম্যবাদ’। বিশালাকৃতি মানুষটির কান ছিল না। এটি দেখেই
সম্ভবত। তবে অনিতার মনোরঞ্জনের চেষ্টা বানচাল করে দেয়ার উদ্দেশ্যও হয়ত ছিল। কমলেশ
ওই কথা শুনে মুহূর্তে তার বসা অবস্থান থেকে উঠে ছবিটি দরজার উপর থেকে খুলে নিয়ে
উঠোনে ছুড়ে ফেলে দেয়। বন্ধু বিমল সেটি কুড়িয়ে এনে টেবিলে রেখে দেয়। বোঝবার চেষ্টা
করি ধনীর দালানকোঠা গুঁড়িয়ে দেয়া ওই ডাস্টবিন থেকে ভাত খুঁটে খাওয়া মানুষের জন্যই।
পাড়ায় ইতোমধ্যে কিছু সংস্কৃতিচর্চা শুরু হয়। কমলেশ
ও তার বড় বোন মনদির উদ্যোগেই। মনদির গানের মাস্টার ছিল। কিছুকাল কলকাতায়
আত্মীয়গৃহে কাটানোর ফলে সংস্কৃতিচিন্তা তার মাথায় বাসা বাঁধে এবং পাড়ায় সাংস্কৃতিক
কর্মকা প্রসারের উদ্দেশ্যে একটি ছোট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উপলক্ষ্য মনে পড়ে
না। শুধু মনে আছে কমলেশ পাড়ার দাদার ভূমিকায়, আমরা কর্মী, এবং আমাকে কিঞ্চিৎ বিস্মিত করে দিয়েই
অনুষ্ঠানের ঘোষক পদটি প্রদান। ওই অনুষ্ঠানেই সুকান্তের কবিতা আবৃত্তি করার ফলে
আমার সম্মানলাভ সেটি হচ্ছে অনিতার প্রফুল্ল হাসি আমার প্রতি। সুকান্তর কবিতা আমাকে
নাড়া দেয়, নিঃসন্দেহে। কমলেশই ওই কবিতা পড়তে দিয়েছিল
আমাকে।
ওই ঘটনার কিছুকাল পরেই একদিন বিকালে আমরা
তিনবন্ধু হাঁটতে হাঁটতে ছাত্র ইউনিয়নের অফিসে যাই।
কমলেশ সেখানে আগে এসেছিল, বুঝি। অফিসঘরের মেঝেতে বসা অনেকেই তার পরিচিত।
আমি দু’একজনকে চিনতাম বিমল এ রকমই। দেখি একটি অনুষ্ঠান
চলছে। মঞ্চ মেঝের ওপরে সতরঞ্চি বিছিয়ে। শ্রোতাদের জন্য মেঝেতে চাদর পাতা। অত্যধিক
উৎসাহের কারণেই বুঝি আমিও মঞ্চে উঠে যাই এবং যে কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতা চলছিল সেই
কবিতাটি--‘বনলতা সেন’ আবৃত্তি করে ফেলি আবেগের সঙ্গেই। মঞ্চে ওঠার দ্বিতীয় দিনে একটি পুরস্কারও
জুটে যায় কবিতা পাঠে কৃতিত্বের জন্য, জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থটিই। ওই শুরু। অমোঘ আকর্ষণে টেনে নিল ছাত্র ইউনিয়নে। ফেব্র“য়ারির প্রভাতফেরিতে অংশগ্রহণ কত জরুরি অতি
দ্রুত বুঝে যাই ছাত্র ইউনিয়নে আসার পরেই।
৩
মফঃস্বল শহরের ছাত্র সংগঠন, ছাত্র আন্দোলন মধ্য পঞ্চাশ পেরিয়ে, তার চেহারা সকলেরই জানা হয়ত। সভা, মিছিল, শহরের রাস্তার পাশের দেয়ালে কি গাছে পোস্টার সাঁটা, বিভিন্ন দিবস পালন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনে সহায়তা করা এসব। এ
রকম করেই কেটেছিল কলেজের প্রথম দু’বছর। এর মধ্যে খুব মনে আছে কয়েকটি ঘটনাই।
ছাপ্পান্ন সনে আসামের প্রলয়ঙ্করী বন্যা ভাসিয়েছিল
আমাদের সব জনপদও। বানভাসী মানুষের জন্য অর্থসংগ্রহে শহরের রাস্তায়, বাজারে, আদালত প্রাঙ্গণে গান গেয়ে অর্থসংগ্রহের দলে আমিও ছিলাম। গানটি এ রকম, ‘ভিক্ষা দাও, ভিক্ষা দাও, ভিক্ষা দাও গো পুরবাসী, তোমাদেরি ভাই ভগ্নি সবাই আছে যে গো তারা জলে
ভাসি। কত নরনারী করে হাহাকার…’। গানটির সুর মনে আছে এখনও। আদালতের বারান্দায় বসা এক সৌম্যদর্শন ভদ্রলোকের
সামনে ভিক্ষার কৌটাটি বাড়িয়ে ধরলে তিনি লজ্জিত মুখে একটি আধুলি দিয়ে বলেছিলেন, ‘আর কিছু নেই এখন।’ আট আনা ওইকালে অনেক পয়সা। এক সেরেরও বেশি চাল
কেনা যায়। তবুও ভদ্রলোক কিছু না-দিতে পারার জন্য কত কুণ্ঠিত ছিলেন।
আর একটি ঘটনার কথাও খুব মনে পড়ে। মওলানা আবদুল
হামিদ খান ভাসানীর শহরে আগমন। রাত্রির শেষ ট্রেনে তিনি পৌঁছেছিলেন রেলস্টেশনে।
সেখান থেকে রিক্সা করে তাঁকে নিয়ে আসা--হ্যাজাক জ্বালিয়ে রিক্সার পাশে পাশে হাঁটছে কেউ, আমরা রিক্সার হুড বা মাডগার্ড ধরে হাঁটছি।
পরদিন এডওয়ার্ড পার্কে জনসভা ছিল। ভাসানী সাহেবের বক্তৃতার সময় স্থানীয়
কৃষক-শ্রমিক পার্টির নেতা তার বক্তব্যে বাধা দিলে চিৎকার-পাল্টা চিৎকার শুরু হয়।
ওই গোলযোগের মধ্যে ইসলামী ছাত্র সংঘের এক মাঝারি নেতাকে ধরে ফেলে অনেকে গ গোল
সৃষ্টি করার জন্য এবং দুচার ঘা দেয়ার মুহূর্তে আমিও ছুটে যাই অংশগ্রহণের
উদ্দেশ্যে। একটু পরেই মঞ্চে ফিরে এলে দুর্গাদাস মুখার্জী বলেছিলেন, ‘ঐ পথ আমাদের নয়।’ লজ্জিত হই নিঃসন্দেহে। সহিংসতার কোন স্থান ছাত্র আন্দোলনে নেই এ চিন্তা ধ্র“ব হয়।
কলেজের দু’বছরে গণকল্যাণমুখী কর্মকাে র যেটি সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে তা হচ্ছে আটান্নর
বসন্ত মহামারিতে প্রায় স্নানাহার ভুলে গ্রামে গ্রামে প্রতিষেধক টিকা দিয়ে বেড়ানো।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের একটি ছাত্রদল আমাদের শহরে যায় ডা. এফ. আলমের নেতৃত্বে
গ্রামেগঞ্জে টিকা দেয়ার জন্য। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন দিকে যায় তারা। প্রতিটি
দলে স্থানীয় ছাত্রইউনিয়নের কর্মীও থাকে। ওই-রকম একদলের সঙ্গে আমিও ছিলাম।
গুটিবসন্তে মুমূর্ষু, মৃত অনেক দেখেছিলাম সেবার।
কিন্তু নিজে আক্রান্ত হওয়ার কথা একবারও মনে
আসেনি। প্রতিষেধক টিকা নেয়া আছে এই চিন্তা বড় ছিল অবশ্যই। কিন্তু গণমানুষের জন্য
ত্যাগস্বীকারের স্পৃহাও ছিল নিঃসন্দেহে।
ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে মনে পড়ে না
কখনো কোনোরকম জাগতিক প্রাপ্তি ঘটেছে। একটি টাকারও নয়। অফিস ভাড়ার টাকা সংগ্রহ করতে
দুর্গাদাকে কষ্ট করতে দেখে বরং মনে হতো সেখানে যদি কিছু দেয়া যায়। শুধুই একবার, রংপুরে যুবলীগ সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার সময়ে
জংশন স্টেশনের ভিড়ে যখন কোনো কামরায়ই উঠতে পারছিলাম না আমরা
তখন আমাদের শহরের পার্লামেন্ট সদস্য আমাদের সকলকে তাঁর প্রথম শ্রেণীর কামরায় তুলে
নিয়েছিলেন। এই। এতটুকুই।
৪
ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম দু’বছরের কথা বলার উদ্দেশ্য কি তাহলে সময়
পরিবর্তনের সঙ্গে সব পাল্টায় এ কথা স্পষ্ট করার জন্য? ‘ক্যাডার’ শব্দের সঙ্গে কোনো পরিচয় ছিল না তখন আমাদের। বন্দুক, পিস্তল, ছোরা, চাপাতি, হকিস্টিক, এমনকি বাঁশের লাঠিও ব্যবহার করার কথা ভাবত না
কেউ তখন। অন্তত আমার শহরে নয়। তাহলে কি ঘটেছে গত পঞ্চাশ বছরে? কোটি টাকার চাঁদা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘাত এখন
ছাত্রকুলের মধ্যেই। বিরুদ্ধ দলের সদস্য সর্বদাই বধ্য, এ চিন্তা। মনে হয়, স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম যে কেবল স্বাধীনতার
জন্যেই, অস্ত্রের ব্যবহার যে শুধু ঐ একই উদ্দেশ্যে, এ-কথা কেউ মনে রাখেনি। অথবা গণমানুষের স্বার্থ
নয় নিজের স্বার্থরক্ষাই আন্দোলনের উদ্দেশ্য এ বিশ্বাসে বলীয়ান এখন সকলে।
৫
ফেব্র“য়ারির ওই প্রভাতফেরি সারা শহর ঘুরে রোদ উঠবার মুখে সাতমাথায় এসে শেষ
হয়েছিল। সামান্য দু’একটি কথা বলবার পরে নেতারা বিকালে আলতাফুননেসা
ময়দানের জনসভায় আসতে বলেছিলেন। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। খালি পায়ে ঘরে ফেরা।
শহীদ মিনার ছিল না তখন। ছিল না ফুলে ফুলে ঢাকা
তার পাদদেশ। ছিল না ছাত্র আন্দোলনে নিবেদিত প্রাণ সকলের ওই ফুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে মালা, তোড়া তছনছ করে একুশে ফেব্র“য়ারির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন। মাত্র কয়েক বছর
আগেই।
বিগত কয়েক বছরে উভয় বাংলায় প্রকাশিত
জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত’র আত্মস্মৃতিমূলক রচনা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছে।
ঐ রকম ২০টি রচনার একটি সংকলন আগামী বইমেলায় ‘সময় ভোলে না কিছু’ এই নামে প্রকাশিত হবে। প্রকাশ করবেন ইত্যাদি
গ্রন্থ প্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা।
0 মন্তব্যসমূহ