জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত
যখনই
তাঁর কথা আমার মনে পড়ে, ভাবি যদি তাঁকে সেদিন যেতে না দিতাম।
ফিলাডেলফিয়া বিমানবন্দরে আমিই তাঁকে লন্ডনের প্লেনে তুলে দিই। পূরবী সঙ্গে ছিল না।
তাঁর চলে যাওয়ার দৃশ্য তার পৰে দেখা সম্ভব ছিল না। আমি যখন তাঁকে নিয়ে আমাদের
এ্যাপার্টমেন্টের বাইরের রাস্তায় ট্যাক্সিতে উঠেছিলাম সে তখন জানালায় এসেও দাঁড়াতে
পারেনি। মাত্র
ছ’মাস আগে পিতার মৃত্যুতে শোকাতুর অসুস্থ পূরবী
তাঁর সানি্নধ্য ছাড়া উঠে দাঁড়াতে পারবে না ভেবেই আমি তাঁকে আসতে লিখেছিলাম, টিকেট পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।
ফিলাডেলফিয়ার বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয়ে ও সেখান থেকে আড়াইশ’ মাইল দূরে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব
পেনসিলভ্যানিয়াতে তাঁর বক্তৃতার নিমন্ত্রণ ছিল, নিমন্ত্রণ
ছিল যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করারও। কিন্তু সেজন্যই তিনি
দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্রে যাননি। গিয়েছিলেন মূলত আমাদের দেখে আসার জন্যই। আমি তাঁর
আপন সনত্মান নই, আমাদের বিয়ের পরে মাত্র বছর দুয়েক পূরবী তাঁর
কাছে ছিল। অথচ তিনি তো অকৃতদার।
তিন মাসেই পূরবীকে তিনি শক্ত পায়ে দাঁড় করিয়ে
দিয়েছিলেন। সেই ক্ষমতা তাঁর ছিল। কখনও এক সাথে কয়েক ঘণ্টা পূরবীর সাথে কথা বলতেন।
বিজ্ঞানের ছাত্রী পূরবীকে দর্শনের অনুরাগী করেছিলেন। সাবসিডিয়ারি পরীক্ষায় পাশ করা
আমার পৰে অসম্ভব হতো যদি না তিনি প্রতি সন্ধ্যায় ঘণ্টাধিক কাল স্নাতক শ্রেণীর
পাঠ্য বিষয় ফিলসফিকে গল্পের চেহারায় আমার সামনে তুলে ধরতেন। বলতেন, “বই মুড়ে রেখে দে, আমি যা বলি শুনে যা”।
তিন
মাস আমরা তাঁকে ফিলাডেলফিয়ায় ধরে রেখেছিলাম যদিও তাঁর থাকার কথা ছিল দু’মাস। আমাদের রাগারাগিতে অস্থির হয়ে ভাইস-চ্যান্সেলরের কাছে
চিঠি লিখে একমাস ছুটি বাড়িয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু আর বাড়াতে রাজি হননি। বলেছিলেন
ভাইস-চ্যান্সেলরের ব্যক্তিগত সচিব জলিল সাহেব (বর্তমানে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড.
আবদুল জলিল) পরামর্শ দিয়েছেন আর দেরি না করতে। ভাইস-চ্যান্সেলর পছন্দ করবেন না।
বলেছিলেন, অবসর নেবার ঠিক আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোন
বিষয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করা উচিত হবে না।
নির্দিষ্ট দিনে আমি তাঁকে প্লেনে তুলে দিতে গিয়েছিলাম।
চেক-ইন্তএর সময়ে তাঁর সম্পূর্ণ ভ্রমণসূচীর খোঁজ নিতে গিয়ে জানলাম করাচী থেকে ঢাকার
ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। শুনে দুশ্চিন্তা হয়েছিল। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, লন্ডন থেকে ওটা ঠিক করে নিতে পারবেন। আমার বড় ভাই লন্ডনে
ছিলেন তখন তাই আর ভাবিনি। পরদিন খবর শুনেছিলাম ভারতীয় বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনাকে
কেন্দ্র করে ভারত নিজ এলাকার ওপর দিয়ে পাকিস্তানী বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।
তখনও বুঝিনি কিছু। একাত্তরের ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল দিনগুলোতে মার্চে মহাতমসার কথা
কার মনেই বা এসেছিল। কিন্তু আমি তো ভুলতে পারি না, যদি
সেদিন তাঁকে প্লেনে তুলে না দিতাম।
কি লেখা যায় তাঁর সম্বন্ধে? যে তিনি, গোবিন্দচন্দ্র দেব, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতীছাত্র, জীবনে কোন পরীক্ষায় দ্বিতীয় হননি; তিনি ড. সর্বপলস্নী রাধাকৃষ্ণনের কাছে প্রত্যৰ শিক্ষা লাভ
করেছেন, ড. দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় সারাজীবন কৃতজ্ঞচিত্তে
তাঁর শিষ্যত্ব স্বীকার করেছেন; নাকি সিলেটে জন্মে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে বোম্বাই পর্যনত্ম
চলে গেছিলেন জীবিকার জন্যে, তারপর আবার উল্টো স্রোতে ফিরে এসেছেন ঘর পানে? এইসব অথবা তাঁর শিশুর মতন স্বভাব, বিষয়বৈভবে ঔদাসীন্য, ভোজনবিলাস-- এইসব? মণি (হায়াত মামুদ)-এ সব কথা লিখেছেন হৃদয়ের চোখ দিয়ে দেখে।
আরও অনেকে লিখবেন হয়তো। কিন্তু অকৃতদার অথচ অপত্য স্নেহে যে কোন পিতার তুল্য, বৈভব-চিনত্মাহীন অথচ প্রখর সাংসারিক জ্ঞানে অতুলনীয়, আত্মভোলা দার্শনিক অথচ প্রভোস্ট হিসেবে ডাইনিং হলে পচা
মাছের সমস্যা সমাধানে পটু এমন একজনের কথা কে লিখবে?
আসলে, অনেক সময় আমি ভেবেছি স্রোতের বিপরীতে যাওয়াই
বোধ হয় তাঁর পছন্দ ছিল। নইলে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে রিপন কলেজ দিনাজপুর থেকে পাট
তুলে নিলেও তিনি থেকে গেলেন কেন? ঐ কলেজের অধ্যাপক হিসেবেই তো তিনি কলকাতা চলে
যেতে পারতেন। আবার সহস্র দিনরাত্রির শ্রম ও নিদ্রার বিনিময়ে দিনাজপুরের
সুরেন্দ্রনাথ কলেজ তিনি গড়ে তুলেছিলেন সেই কলেজ ছেড়ে সিনিয়র লেকচারার হিসাবে তিনি
ঢাকা চলে এলেন কেন?
নাকি জ্ঞানচর্চা, দর্শন
প্রচার নয়, মানবকল্যাণই তাঁর আরাধ্য ছিল? আমি তাঁকে বহুবার জগন্নাথ হলের প্রভোস্টগিরি ছেড়ে দিতে
বলেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবার তিনি যখন নয় মাসের জন্য গেছিলেন ফুলব্রাইট
অধ্যাপক হিসেবে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপৰ জগন্নাথ হলের দায়িত্ব
তখন অন্যের ওপরে ন্যসত্ম করে। আমি সেই সুযোগে প্রভোস্টের বাসস্থান ছেড়ে দিয়ে ধানমণ্ডির
বাড়ির ভাড়াটে উঠিয়ে সেখানে গিয়ে বাস শুরু করি। ধানমণ্ডি ১৩/২ রোডের সেই বাড়িটি
স্বাধীন বাংলাদেশে এক ধর্ম ব্যবসায়ী দখল করে খানকা শরীফ বানিয়ে রেখেছে। আমেরিকা
থেকে ফেরার পর তাঁকে আমি ধানমণ্ডির বাড়িতেই নিয়ে তুলেছিলাম। ভেবেছিলাম, তিনি প্রভোস্টের কাজে ফিরে যাবেন না, পাঁচ নম্বর সেক্রেরিয়েট রোডের ঐ বাড়িতে তাঁকে আর থাকতে হবে
না। হায়, আমার আশা। আমি সেদিন বিকেলে বেরুইনি। বেরুলে
রাত বারোটা-একটার আগে ঘরে ফিরতাম না বলে তিনি অনুযোগ করতেন এ জন্য নয়। না, কখনও তিনি আমাকে কিছু বলেনি। বড় জোর “এত রাত অব্দি কোথায় ঘুরে বেড়াস।” এইটুকুই। যদিও প্রায় রাতেই আমি না ফেরা অব্দি তিনি জেগে
থাকতেন। সেদিন আমি বেরুইনি, সন্ধ্যার পরে কোথাও আলো থাকবে না বলে। গোলাগুলি
বোমার শব্দে জানালার কাঁচ ভেঙ্গে ছড়িয়ে না যায় সেজন্য যথারীতি জানলায়, দরজায় আঠা দিয়ে কাগজের পট্টি সাঁটা শেষ করে, সমসত্ম শহরের সঙ্গে আমরাও সেদিন অন্ধকারে শত্রু বিমানের
আক্রমণ আশঙ্কায় সত্মব্ধ হয়েছিলাম। উনিশশ’ পঁয়ষট্টির সেপ্টেম্বরের এক বিকাল।
তিনি বাইরে, বাগানে, যথারীতি দ্রুত হেঁটে এ-মাথা ও-মাথা করছিলেন। আমি চুপ করেই
বসেছিলাম আমার বিছানায়। বাইরের ঘরে লোক আসার শব্দও হয়তো শুনেছিলাম, কিন্তু সে তো প্রতি বিকাল থেকে রাত্রি পর্যনত্ম অসংখ্যবার
শোনা যায়।
তিনি নিঃশব্দে, আমার
সামনে এসে দাঁড়ালে আমি প্রায় চমকে উঠে তাঁর দিকে তাকাই। অমন গলার স্বর আমি তাঁর
কখনও শুনিনি। তিনি বললেন, “ওরা আমাকে নিয়ে যেতে চায়”। আমি বুঝতে পারি না, বলি, “কারা?” তাঁর মুখে অমন ভাবও কখনও দেখিনি, “ধাই বি-র লোক।” আমি দ্রম্নত বাইরের ঘরে এসে প্যান্ট-শার্ট পরা
যে দুই ভদ্রলোককে দেখলাম তাঁরা আমার একেবারে অপরিচিত নয় বলেই মনে হলো। শহরে, বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চলে এদের আমি আগে দেখে থাকব ভেবেই
ক্রুদ্ধকণ্ঠে ঐ জাতীয় প্রসত্মাবের কারণ জিজ্ঞাসা করতে ইতসত্মত করিনি। তারা
ধীরকণ্ঠে এটি আমাদের চাকরি এবং আমাদের এই আদেশ বলে আমাকে আশ্বসত্ম করতে চাইলেন। “তাড়াতাড়ির কিছু নেই। পনেরো-বিশ মিনিটের মধ্যে ওঁকে তৈরি করে
দিন।” তাঁরা বলেন। আমার আর কিছু বুঝতে বাকি থাকেনি।
তবুও
নির্বোধের মতো জিজ্ঞাসা করি, “ওয়ারেন্ট আছে?” তারা
না-হেসেই বললেন, “ওয়ারেন্টের কোন প্রয়োজন হয় না, এখন।” তারপরে কি ভেবে বললেন, “আপনিও সঙ্গে চলুন। ওর যদি কিছু দরকার হয়, পরে এসে নিয়ে যাবেন।”
ঐ পনেরো মিনিটের মধ্যে কাপড় পরা ছাড়া ভাইস
চ্যান্সেলর ও অপর দু’চারজন সতীর্থকে তিনি ফোন করেছেন আমি শুনতে
পেলাম।
দুই রিক্সায় আমাদের দু’জনের সঙ্গে ওরা দু’জনে বসলেন। নাজিমুদ্দিন রোডের মোড়ে সেন্ট্রাল
জেলের সামনে নেমে রিক্সা ভাড়া মেটাতে মেটাতে তারা আমায় বললেন, “আপনি এখানেই অপেক্ষা করুন।” লোহার
গরাদ দেয়া সদ্য খোলা দরজা দিয়ে ঢুকে যাওয়ার মুখে আমার চোখে জল দেখে শুধু তিনি
আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। তাঁর কাঁদবার বয়স ছিল না, আমারও
নয়, কিন্তু সম্ভবত তাঁর চোখেও জল ছিল। ঘন্টাখানেক
জেলগেটে দাঁড়িয়েছিলাম, তখন যদিও মনে হয়েছিল এক যুগ। এক ঘণ্টা পরে তিনি
আবার দরজার সামনে আসেন, আমি ভাবলাম বোধহয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনার কথা
বলবেন। কিন্তু না, সান্ত্রী দরজা খুলে দিল এবং তিনি ঐ দু’জনের সঙ্গে বেরিয়ে এলেন। বললেন, “আমাকে রাখলো না।” গোয়েন্দা দু’জন
মহোপকারীর মতো সামনে এসে আমায় বললেন, “ওকে নিয়ে যান।”
কৃতজ্ঞতায় আমার মন ভরে গেল।
ঘরে এসে পৌঁছানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই যিনি
বাগানের দরজা দিয়ে ঢুকলেন, তিনি আমার অপরিচিত। আলাপ থেকে বুঝলাম
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন অধ্যাপকের বড় ভাই হবেন আগন্তুক এবং তাঁর গুণমুগ্ধ। পুলিশের বড়
কর্মচারী। আমাকে বললেন, “শেষ মুহূর্তে অনেক টেলিফোন করে অনেক ধরাধরি করে
ওকে ঘরেই রেখে দেয়ার ব্যবস্থা করতে পেরেছি।” তারপরে ওরা দু’জনে
বাক্যালাপ শুরু করেন। ঐ উপকারীর নাম কি আমি আজও সঠিক জানি না। সম্ভবত তিনি ইসলামের
ইতিহাস বিভাগের তৎকালীন অধ্যাপক রেজাই করিমের ভাই।
সেদিন রাতে ঘনকৃষ্ণ অন্ধকারে বিছানায় শুয়ে তিনি
ঘুমুতে পারেননি। রাতে অস্বসত্মিকর নড়াচড়ার শব্দে পাশের ঘরে গিয়ে দেখি তাঁর শরীরে
জ্বর। পরদিন সকাল বেলা থেকে ঘন ঘন বাথরুমে যাওয়া শুরু হয় ও বিকালের দিকে প্রায়
অচৈতন্য অবস্থায় অসাড়েই মলমূত্র ত্যাগ করতে থাকেন। সদ্য মেডিক্যাল কলেজ থেকে বেরুনো
ইন্টার্নি বর্তমানে ভারতবাসী ডা. কালীদাস বৈদ্য তখন বাসাতেই থাকতেন। সবাই মিলে
পরামর্শ করে এ্যাম্বুলেন্স ডাকিয়ে তাঁকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অবশেষে।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিন তলার কেবিনে প্রায় দশ দিন ছিলেন তিনি। কালীদাস বৈদ্য
আমাকে বলেছিলেন, “খুবই ঘাবড়ে গেছেন, নার্ভাস হয়ে পড়েছেন, আর কিছু নয়।” হয়তো
তাই। কিন্তু উনিশশ’ চৌষট্টির দাঙ্গার সময় বাসায় না থেকে জগন্নাথ
হলে সকলের সঙ্গে থাকবার জন্য শুভাকাঙ্ৰীরা বলেছিল তাঁকে। হলে প্রভোস্টের অফিসে
তাঁর বিছানাও করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি যাননি। নিঃসংশয়ে বাগানে পায়চারি করেছেন।
ঘুরে বেড়িয়েছেন। পঁয়ষট্টির সেপ্টেম্বরের সময়ে আমাকেও বার দুয়েক গোয়েন্দা পুলিশের
তলবে তাদের দফতরে যেতে হয়েছিল। নানারকম জিজ্ঞাসাবাদের শেষে চলে আসতে পেরেছিলাম
ঠিকই, কিন্তু অভিজ্ঞতার সেই তিক্ত স্বাদ কখনও যায়নি।
অথচ তিনি পরবতর্ীকালে একবারের জন্যও বলেননি, “তুই ভারতে চলে যা।” একজন হিন্দু অভিভাবকের পৰে ও-রকম বলা ঐ সময়ে, এ অবস্থায় খুবই সম্ভব ছিল। লোকের ভয়ে আমাকে তিনি
পূর্বপাকিসত্মান ত্যাগের পরামর্শ দেননি, এ কথা মানি না। উনিশ শ’ আটান্নয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছিলাম আমি বগুড়া থেকে।
নানা সূত্রে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় গাঢ় হয়েছিল। তাঁর তৎকালীন রচনাবলীর
শ্রম্নতিলেখক সম্পাদক হয়েছিলাম আমি। প্রথমে লেখার প্রয়োজনে রাত্রিবাস এবং
কিছুকালের মধ্যে পাকাপাকিভাবে হল ছেড়ে আমি তাঁর বাসায় চলে আসি। পরে বগুড়া থেকে
আমার বাবা ঢাকায় এলে তাঁকে বলেছিলেন, “আপনার আরও দুটি ছেলে আছে, এটাকে আমায় দিয়ে দিন।” সেই থেকে আমি তাঁর সনত্মান। আসলে আমি তো তাঁর
ছাত্রই। আমি ভারতে চলে গেলে তিনি কেন মন্দভাগী হবেন?
তিন মাস আমরা তাঁকে ফিলাডেলফিয়ায় ধরে রেখেছিলাম যদিও তাঁর থাকার কথা ছিল দু’মাস। আমাদের রাগারাগিতে অস্থির হয়ে ভাইস-চ্যান্সেলরের কাছে চিঠি লিখে একমাস ছুটি বাড়িয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু আর বাড়াতে রাজি হননি। বলেছিলেন ভাইস-চ্যান্সেলরের ব্যক্তিগত সচিব জলিল সাহেব (বর্তমানে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল জলিল) পরামর্শ দিয়েছেন আর দেরি না করতে। ভাইস-চ্যান্সেলর পছন্দ করবেন না। বলেছিলেন, অবসর নেবার ঠিক আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোন বিষয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করা উচিত হবে না।
তবুও নির্বোধের মতো জিজ্ঞাসা করি, “ওয়ারেন্ট আছে?” তারা না-হেসেই বললেন, “ওয়ারেন্টের কোন প্রয়োজন হয় না, এখন।” তারপরে কি ভেবে বললেন, “আপনিও সঙ্গে চলুন। ওর যদি কিছু দরকার হয়, পরে এসে নিয়ে যাবেন।”
0 মন্তব্যসমূহ