লেখার সময় পাঠকের কথাটা মাথায় রাখার ধারণাটাই তৈরি হয়নি আমার ভেতর

কামাল রাহমান

১. গল্প লিখতে শুরু করলেন কেন? 

কামাল রাহমান: আমার প্রিয় ও একান্ত যন্ত্রণাগুলো যাপনের জন্য।

২. শুরুর লেখাগুলো কেমন ছিল? 

কামাল রাহমান:  শুরুর প্রেমগুলোর মতোই উত্তেজনাপূর্ণ। ফুলে ও ভুলে ভরা।


৩. গল্প লেখার জন্য কোনো প্রস্তুতি নিয়েছেন কি? নিলে সেগুলো কেমন? 

কামাল রাহমান:  নিয়েছি। অনুকরণ ও অনুসরণ করেছি। নিজের রঙে এমনভাবে রাঙাতে চেষ্টা করেছি সেসব, যেন অন্যেরা পুরোনো রঙগুলো আর খুঁজে না পায়।

৪. আপনার গল্পলেখার শৈলী, কৌশল বা নৈপুণ্যটা কি, বা কোথায়? 

কামাল রাহমান: গল্পটা লিখে ভুলে যাওয়া যে এটা নিজের, তারপর অনবরত সংশোধন করে যাওয়া, যে পর্যন্ত না অন্যের গল্প হয়ে উঠে ওটা।

৫. নিজের গল্প বিষয়ে আপনার বিবেচনা কি কি? 

কামাল রাহমান: ফালতু, কচু, কচ্ছপ, , , আমার কাছে এটা এক ধরনের কৌতুক! অনেকে ক্রিকেট ভালোবাসে, অনেকে ফুটবল, কখনো কখনো আমি ভালোবাসি শব্দগুলো নিয়ে এক ধরনের খেলায় মেতে উঠতে, অনেকগুলো শব্দ নিয়ে ‘জাগ্ল’ করে আনন্দ পাই। সিরিয়াসলি গল্প লেখার উদ্যোগ কখনো নেয়া হয়নি। তবে উপন্যাসটা লেখার চেষ্টা করি কষ্ট করে, মন দিয়ে।

৬. আপনার আদর্শ গল্পকার কে কে? কেনো তাঁদেরকে আদর্শ মনে করেন? 

কামাল রাহমান: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জগদীশ গুপ্ত, মানিক বন্দোপাধ্যায়, জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ, হাসান আজিজুল হক, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, মাহমুদুল হক, কায়েস আহমেদ, মামুন হুসাইন, মনিরা কায়েস, , ,  আরো আরো অনেকে, , , তারপর চেখভ, শলোকভ, তলস্তয়, বালজাখ, টমাস মান, জ্যাক লন্ডন, রোয়াল্ড ডাল, ফ্লবের, মোপাশা, হেমিংওয়ে, ফকনার, হেসে, সিঙ্গার, স্ট্যাইনবেক, মার্কেস, , ,  তালিকা তো ফুরোবে না। তাছাড়া এভাবে তালিকা তৈরি করা মনে হয় উচিতও না।
দুই মাসতুতো ভাই, রাজনীতিবিদ ও ধর্মজীবী, মিলে ‘আদর্শ’ শব্দটাকে এত নোংরা ও অর্থহীন করে ফেলেছে যে ওটায় আর আস্থা রাখতে পারি না। ইংরেজি ‘আইডল’ শব্দটার বাংলা কোনো কিছু নিতে যদি আপত্তি না থাকে আপনার তাহলে বলতে পারি, এঁদের কাছ থেকে সুন্দরের ধারণাটা পাই, চেষ্টা করি সুন্দরকে জানতে, বুঝতে, পেতে, ও ধারণ করতে. . . 

৭. কার জন্য গল্প লেখেন? আপনি কি পাঠকের কথা মাথায় রেখে লেখেন? লিখলে কেনো লেখেন? আর যদি পাঠকের কথা মনে না রেখে লেখেন তাহলে কেনো পাঠককে মনে রাখেন না লেখার সময়ে? 

কামাল রাহমান: আমি ও পাঠক, উভয়ের জন্যই তো লিখি। লেখার সময় পাঠকের কথা মাথায় রাখার ধারণাটাই তৈরি হয়নি আমার ভেতর। মনে হয় ওটা পাশ্চাত্যের বানিজ্যিক লেখকদের বিষয়। আমাদের ওখানে একমাত্র হুমায়ূন আহমেদ খুব সফলভাবে ওটা করতে পেরেছিলেন। ঐ মেধাটা নিশ্চয় তাঁর ছিল। যারা তাঁকে অস্বীকার করতো, তাদেরও অনেককে দেখেছি খুব মন দিয়ে হুমায়ূনের নাটকগুলো টিভি পর্দায় উপভোগ করতে। মনোরঞ্জক সাহিত্যটা খুব ভালোভাবেই দিতে পেরেছিলেন তিনি। যাহোক, প্রথমত নিজের জন্য লিখি আমি। কিছুটা ভালো লাগলে পাঠকের সঙ্গে শেয়ার করি। নয়তো রেখে দেই আমার প্রিয় জঞ্জালঘরে। আশা করি ওখানেই থাকবে ওগুলো, যে-পর্যন্ত-না ফেলা দেয়ার কষ্টটা কষ্ট মনে না হওয়ার বয়সে পৌঁছুবো। বিলেতে কীট নেই, নয়তো ওরাই বাঁচিয়ে দিতো আমাকে। দ্বিতীয়ত, আমার পাঠকসংখ্যা এত কম যে, এ নিয়ে মাথায় কিছু তৈরি হওয়ার সুযোগ আসেনি, ওটাও সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।

৮. এখন কি লিখছেন? 

কামাল রাহমান: উপন্যাস।

৯. আগামীতে কি লিখবেন? 

কামাল রাহমান: কবিতা!


কামাল রাহমানের গল্প পড়ুন>>১.  বিচ্ছেদ ২. ইঁদুর। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ