জন্ম ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে, কিন্তু শৈশবেই বাংলাদেশ তওবা করে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার নামগন্ধও মুছে ফেলে। দীক্ষা নেয় ইসলাম ধর্মে। ফলে যে-অমুসলিমরা একাত্তরে মুসলমানদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিলেন, সীমাহীন ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন বাঙালিদের একটি দেশ গরার জন্যে, এরশাদী সংশোধনীর পর তাঁরা কার্যত পরিণত হত দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে। এঁদের মধ্যে হিন্দুরা আবার পরিণত হন প্রায় অবাঞ্চিত নাগরিকে। কারণ, তাঁদের অভীন্ন করে দেখা হয় প্রতিবেশী—অতেব প্রতিদ্বন্দ্বী-দেশ ভারতের সঙ্গে। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ নির্যাতনের শিকার হয়ে হ্যাপক হারে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন হিন্দুরা। ফলে অমুস্লমান জনগণের অনুপাত দ্রুত হ্রাস পায়। ১৯৫১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী যে-হিন্দুরা ছিলেন জন্সংখ্যার শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ, ২০০১ সালে তা কমে দাঁড়ায় শতকরা দশেরও কম। চাকরি-বাকরি পাওয়াও তাঁদের জন্যে ক্রমশ কঠিন হয়ে পরে। এমন কি, এখন স্বাধীন নাগরিক হিশেবে অমুস্লমানদের ধরমকর্ম পালন করা এবং বেঁচে থাকার অধিকার কতোটা আছে, তা নিয়েও প্রশ্ন করেছেন অনেকে। গত বছর দশেকে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিষয়ে। সাম্প্রদায়িকতা পাকিস্তান আমলেও ছিলো—প্রবলভাবেই ছিলো, কিন্তু মনে হয় এখন সব পূর্বনজির ম্লান হয়ে গেছে। যদিও, শীকার করতে হয়ে, সাম্প্রদায়িকতার চেহারা চেহারা এবং লক্ষ্য এখন বদলে গেছে খানিকটা।
আর পশ্চিম বাংলায় ? ১৯৯০ –এর দশকের গোড়া অবধি পশ্চিমবাংলায় অহিন্দুদের প্রতি সহনশীলতা নিঃসন্দেহে বৃধি পেয়েছিলো। কিন্তু বিজেপির উত্থান এবং বাব্রি মসজিদ ভাঙার পর থেকে পশ্চিম বঙ্গেও অবস্থার যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছে বলে অনেকেই বলছেন—যেমন শিবনারাইয়ণ রায়, যেমন তপন রায়চৌধুরী। তাঁদের মতে, পশ্চিম বাংলায় এখন গৈরিক পতাকা উড়ছে পতপত করে। তপন রায়চৌধুরী বলেছেন যে, যাঁদের মুখে তিনি কোনোদিন সাম্প্রদায়িক মন্তব্য শোনেননি, ইদানিং তাঁদের কথা শুনে তিনি থ হয়ে গেছেন। মোট কথা, পশ্চিম বঙ্গেও সাম্প্রদায়িকতা মাথা চড়া দিয়ে উঠেছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি সেখানে কথটা প্রবল হয়ে উঠেছে, নির্বাচনী পরিসংখ্যান থেকেই তা পরিস্কার দেখা যায়। উদারনৈতিক ব্যক্তিদের কাছ থেকে এটা দারুণ হতাশার খবর। কারণ, ১৯৮০-র দশকেও মনে হয়নি যে, পশ্চিম বঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার হাওয়া আবার নতুন করে বইতে পারে।
অনেকে বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বঙ্গে ধর্মনিপক্ষতার এই সশব্দ পতনের জন্যে দায়ী করেছেন উপমহাদেশে ডানপন্থী রাজনীতির প্রবল উত্থানকে। দায়ী করেছেন, বিশ্বব্যাপী ইসলামী জঙ্গীবাদী জোয়ারকে। সাম্প্রদায়িকতার প্রসারে নরাধম মোদী অথবা বিন লাদেনের কট্টর জাতীয়তাবাদী রাজনীতি যে দারুণ সাহায্য করেছে, তাতে কোনো সন্দেহো নেই। কিন্তু রাজনীতিই কি এর একমাত্র কারণ? আমার ধারণা, হিন্দু এবং মুসলমানের সাম্প্রদায়িকতার শেকড়া তার চেয়েও গভীরে প্রওথিত। সাম্প্রতিক রাজনীতির চেয়ে এঁদের পারস্পরিক অবিশ্বাস এবুং ঘৃণা অনেক পুরোনো। জাতীয়তাবাদী রাজনীতি এখন কেবল সেই বিষ বৃক্ষের গোড়ায় নতুন করে পানি ঢেলে দিয়েছে। আসলে এ বৃক্ষ অক্ষয় বটের মতো।
অল্পকিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে এক কথায় বলা যায়, বাঙালি মুসলমানরা বিদেশ থেকে আসেননি, তাঁদের চোদ্দো পুরুষ (কথার কথা—আসলে আরও বেশি) বাংলারই সন্তান। নিম্নশ্রেণীর বৌদ্দ অথবা নিম্নবর্ণের হিন্দুছিলেন এদের বেশির ভাগ পূর্ব পুরুষ। বর্ণহিন্দুও ছিলেন। ধর্মান্তরিত মুসলমানরা শতাব্দীর পর শতাব্দী পাশাপাশি বাস করছেন হিন্দুদের সঙ্গে, বিশেষ করে নিন্মশ্রেণীর হিন্দুদের সঙ্গে। এই সান্নিধ্যবশত দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিক বন্ধন এখন যেটুকু আছে, তার চেয়ে বেশি মাত্রায় হতে পারতো। তাঁদের মধ্যে চলাফেরা, উৎসবে, পার্বণে তাঁদের মধ্যে সামাজিক মেলামেশা; পারস্প্রিক আদানপ্রদান ইত্যাদিও আরো বেশি মাত্রায় হতে পারতো। হলে সেটাই স্বাভাবিক হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তা হয়নি। বরং অনেক ক্ষেত্রে এক সম্প্রদায় আর-এক সম্প্রদাইয়ের ছায়াও মাড়ায়নি। এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়ার প্রশ্নও ওঠেনি, কারণ মুসলমানদের খেতে দেখলেও হিন্দুদের জাত যেতো—রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষদের গিয়েছিল। জাত যেতো কারণ খাওয়ার গন্ধও নাকি অর্ধভোজনের সমান। ভোজন দূরে থাক, কোনো মুসলমান ঘরে উপস্থিত থাকলে হিন্দুর পক্ষে সে ঘরে বসে জল খাওয়াও নিষিদ্ধ ছিলো।
খানাপিনা ছাড়া, সামাজিক বন্ধনের আর-একটা উপায় হলো বিবাহ। কিন্তু যেখানে ছায়া মাড়ালেও জাত যেতো, সেখানে আন্তঃসাম্প্রদায়িক বিবাহের প্রশ্নই অবান্তর। এভাবেই হিন্দু আর মুসঅলমান বহু শতাব্দী ধরে প্রতিবেশীর মতী বাস করলেও দুজনই দুজনকে দেখেছেন সন্দেহের চোখে, কেউ বা দেখেছেন ঘৃণার দৃষ্টিতে। হিন্দুদের চোখে মুসলমানরা পাত নেড়ে/ যবন; মুসলমানদের চোখে হিন্দুরা মালাউন/ কাফের। এসব শব্দের অর্থ কী, সেটা অতো গুরুতর নয়, কারণ আক্ষরিকভাবে সেই অর্থে এসব গাল দেওয়া হয় না, এসব কথা দিয়ে প্রকাশ করা হয় মনের মনের অবিমিশ্র ঘৃণা এবং তা প্রকাশ করা হয় আক্রোশের সঙ্গে, তুচ্ছ করার মনোভাব নিয়ে।
সাধারণ বাঙালি মুসঅলমানরা যেমনই হন না কেন, সুলতান এবং আমীর-ওমরাহরা এসেছিলেন বঙ্গদেশের বাইরে থেকে। সরাসরি আরব-ইরান থেকে অতোটা না-হলেও উত্তর ভারত থেকে। সেই মুসলমানদের সঙ্গে উচ্চশ্রেণীর হিন্দুদের বিরোধ হওয়া অসম্ভব নয়। কারণ ভীন্ন ভাষাভাষী ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী মুসলমানরা এসেছিলেন শাসকের বেশে। হিন্দুরা ছিল শাসিত। তাঁদের সবচেয়ে বড়ো বিরোধ স্বার্থ্বর, প্রতিপত্তির। কিন্তু আসগচর্যের বিষয় হলো : অভিজাত মুসলমানদের সঙ্গে স্বার্থের কারণেই অভিজাত হিন্দুদের এক ধরনের আপশ হয়ে যায়।
আর পশ্চিম বাংলায় ? ১৯৯০ –এর দশকের গোড়া অবধি পশ্চিমবাংলায় অহিন্দুদের প্রতি সহনশীলতা নিঃসন্দেহে বৃধি পেয়েছিলো। কিন্তু বিজেপির উত্থান এবং বাব্রি মসজিদ ভাঙার পর থেকে পশ্চিম বঙ্গেও অবস্থার যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছে বলে অনেকেই বলছেন—যেমন শিবনারাইয়ণ রায়, যেমন তপন রায়চৌধুরী। তাঁদের মতে, পশ্চিম বাংলায় এখন গৈরিক পতাকা উড়ছে পতপত করে। তপন রায়চৌধুরী বলেছেন যে, যাঁদের মুখে তিনি কোনোদিন সাম্প্রদায়িক মন্তব্য শোনেননি, ইদানিং তাঁদের কথা শুনে তিনি থ হয়ে গেছেন। মোট কথা, পশ্চিম বঙ্গেও সাম্প্রদায়িকতা মাথা চড়া দিয়ে উঠেছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি সেখানে কথটা প্রবল হয়ে উঠেছে, নির্বাচনী পরিসংখ্যান থেকেই তা পরিস্কার দেখা যায়। উদারনৈতিক ব্যক্তিদের কাছ থেকে এটা দারুণ হতাশার খবর। কারণ, ১৯৮০-র দশকেও মনে হয়নি যে, পশ্চিম বঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার হাওয়া আবার নতুন করে বইতে পারে।
অনেকে বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বঙ্গে ধর্মনিপক্ষতার এই সশব্দ পতনের জন্যে দায়ী করেছেন উপমহাদেশে ডানপন্থী রাজনীতির প্রবল উত্থানকে। দায়ী করেছেন, বিশ্বব্যাপী ইসলামী জঙ্গীবাদী জোয়ারকে। সাম্প্রদায়িকতার প্রসারে নরাধম মোদী অথবা বিন লাদেনের কট্টর জাতীয়তাবাদী রাজনীতি যে দারুণ সাহায্য করেছে, তাতে কোনো সন্দেহো নেই। কিন্তু রাজনীতিই কি এর একমাত্র কারণ? আমার ধারণা, হিন্দু এবং মুসলমানের সাম্প্রদায়িকতার শেকড়া তার চেয়েও গভীরে প্রওথিত। সাম্প্রতিক রাজনীতির চেয়ে এঁদের পারস্পরিক অবিশ্বাস এবুং ঘৃণা অনেক পুরোনো। জাতীয়তাবাদী রাজনীতি এখন কেবল সেই বিষ বৃক্ষের গোড়ায় নতুন করে পানি ঢেলে দিয়েছে। আসলে এ বৃক্ষ অক্ষয় বটের মতো।
অল্পকিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে এক কথায় বলা যায়, বাঙালি মুসলমানরা বিদেশ থেকে আসেননি, তাঁদের চোদ্দো পুরুষ (কথার কথা—আসলে আরও বেশি) বাংলারই সন্তান। নিম্নশ্রেণীর বৌদ্দ অথবা নিম্নবর্ণের হিন্দুছিলেন এদের বেশির ভাগ পূর্ব পুরুষ। বর্ণহিন্দুও ছিলেন। ধর্মান্তরিত মুসলমানরা শতাব্দীর পর শতাব্দী পাশাপাশি বাস করছেন হিন্দুদের সঙ্গে, বিশেষ করে নিন্মশ্রেণীর হিন্দুদের সঙ্গে। এই সান্নিধ্যবশত দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিক বন্ধন এখন যেটুকু আছে, তার চেয়ে বেশি মাত্রায় হতে পারতো। তাঁদের মধ্যে চলাফেরা, উৎসবে, পার্বণে তাঁদের মধ্যে সামাজিক মেলামেশা; পারস্প্রিক আদানপ্রদান ইত্যাদিও আরো বেশি মাত্রায় হতে পারতো। হলে সেটাই স্বাভাবিক হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তা হয়নি। বরং অনেক ক্ষেত্রে এক সম্প্রদায় আর-এক সম্প্রদাইয়ের ছায়াও মাড়ায়নি। এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়ার প্রশ্নও ওঠেনি, কারণ মুসলমানদের খেতে দেখলেও হিন্দুদের জাত যেতো—রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষদের গিয়েছিল। জাত যেতো কারণ খাওয়ার গন্ধও নাকি অর্ধভোজনের সমান। ভোজন দূরে থাক, কোনো মুসলমান ঘরে উপস্থিত থাকলে হিন্দুর পক্ষে সে ঘরে বসে জল খাওয়াও নিষিদ্ধ ছিলো।
খানাপিনা ছাড়া, সামাজিক বন্ধনের আর-একটা উপায় হলো বিবাহ। কিন্তু যেখানে ছায়া মাড়ালেও জাত যেতো, সেখানে আন্তঃসাম্প্রদায়িক বিবাহের প্রশ্নই অবান্তর। এভাবেই হিন্দু আর মুসঅলমান বহু শতাব্দী ধরে প্রতিবেশীর মতী বাস করলেও দুজনই দুজনকে দেখেছেন সন্দেহের চোখে, কেউ বা দেখেছেন ঘৃণার দৃষ্টিতে। হিন্দুদের চোখে মুসলমানরা পাত নেড়ে/ যবন; মুসলমানদের চোখে হিন্দুরা মালাউন/ কাফের। এসব শব্দের অর্থ কী, সেটা অতো গুরুতর নয়, কারণ আক্ষরিকভাবে সেই অর্থে এসব গাল দেওয়া হয় না, এসব কথা দিয়ে প্রকাশ করা হয় মনের মনের অবিমিশ্র ঘৃণা এবং তা প্রকাশ করা হয় আক্রোশের সঙ্গে, তুচ্ছ করার মনোভাব নিয়ে।
সাধারণ বাঙালি মুসঅলমানরা যেমনই হন না কেন, সুলতান এবং আমীর-ওমরাহরা এসেছিলেন বঙ্গদেশের বাইরে থেকে। সরাসরি আরব-ইরান থেকে অতোটা না-হলেও উত্তর ভারত থেকে। সেই মুসলমানদের সঙ্গে উচ্চশ্রেণীর হিন্দুদের বিরোধ হওয়া অসম্ভব নয়। কারণ ভীন্ন ভাষাভাষী ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী মুসলমানরা এসেছিলেন শাসকের বেশে। হিন্দুরা ছিল শাসিত। তাঁদের সবচেয়ে বড়ো বিরোধ স্বার্থ্বর, প্রতিপত্তির। কিন্তু আসগচর্যের বিষয় হলো : অভিজাত মুসলমানদের সঙ্গে স্বার্থের কারণেই অভিজাত হিন্দুদের এক ধরনের আপশ হয়ে যায়।
1 মন্তব্যসমূহ
Mr. Golam Murshid, a liberal intellectual that he professes to be and gives the impression of being, practices 'secularism' which is, as it can be expected, 'balanced' in nature. I won't comment much on this simplistic analysis of communalism that he has attempted here, but where I strongly differ with him is his pairing of Laden with Modi. This is either indulging in straightforward lie or plain innocence (I refrain from using the word stupidity). What happened in Gujarat in 2002 is a riot in which people of BOTH communities clashed, an unfortunate turn of event that took place DUE to burning of Hindu pilgrims by Muslim fanatics. But Mr. Murshid, what is happening in your country is Hindu-massacre in which Hindu-s are being slaughtered like cattle. Show a little honesty with your human self and admit to the unavoidable fact that Islamic fundamentalism in much, MUCH more disastrous than any other form of organised evil that there is nowadays. And one has only to open his/her eyes and ears to know this.
উত্তরমুছুন