গল্পগুলো এক ঘোরের ভিতর লিখে ফেলেছিলাম, ঠিক কবিতা লেখার মতো। গল্পগুলো আমি দেড় দশক ধরেই লিখেছি, এবং লিখতে গিয়ে নতুন রূপ পেয়েছে, পরিবর্তন ঘটেছে।
মুজিব ইরম কবি। কিন্তু গল্প লিখেছেন কবিতার বাইরে আরো কিছু কথা বলার জন্য। কবি বলেই সেগুলো ঠিক গল্প নয়--গল্পের বাইরে আরো কিছু রূপের জগত। মায়াময়।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------
মুজিব ইরম-এর জন্ম মৌলভীবাজার জেলার নালিহুরী গ্রামে, ১৯৬৯ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাসাহিত্যে স্নাতক সম্মান সহ এমএ।
কাব্যগ্রন্থ : মুজিব ইরম ভনে শোনে কাব্যবান ১৯৯৬, ইরমকথা ১৯৯৯, ইরমকথার পরের কথা ২০০১, ইতা আমি লিখে রাখি ২০০৫, উত্তরবিরহচরিত ২০০৬, সাং নালিহুরী ২০০৭, শ্রী ২০০৮, আদিপুস্তক ২০১০, লালবই ২০১১, নির্ণয় ন জানি ২০১২।
শিশুসাহিত্য : এক যে ছিলো শীত ও অন্যান্য গপ ১৯৯৯।
উপন্যাস/আউটবই : বারকি ২০০৩, মায়াপির ২০০৪, বাগিচাবাজার ২০০৫।
কবিতাসংগ্রহ : ইরমসংহিতা ২০১৩, এবং বাংলা একাডেমী থেকে নির্বাচিত কবিতার বই : ভাইবে মুজিব ইরম বলে ২০০৩ ।
পুরস্কার : মুজিব ইরম ভনে শোনে কাব্যবান-এর জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমী তরুণ লেখক প্রকল্প পুরস্কার ১৯৯৬। বাংলা কবিতায় সার্বিক অবদানের জন্য পেয়েছেন সংহতি সাহিত্য পদক ২০০৯।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
অলাত এহসান : এবার বই আকারে প্রকাশ করলেন?
মুজিব ইরম : গল্পগুলো লিখতে শুরু করেছিলাম সম্ভবত ২০০০ সালের দিকে। প্রায় দেড় দশকের গল্পগুলো থেকে ১০টি গল্প নিয়ে বের হলো আমার ১ম গল্পগ্রন্থ বাওফোটা।
অলাত এহসান : এই সময় ধরে লেখা গল্পগুলোর মধ্যে আপনার গল্পে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন কি?
মুজিব ইরম : গল্পগুলো এক ঘোরের ভিতর লিখে ফেলেছিলাম, ঠিক কবিতা লেখার মতো। একটানা। লেখার পরপর গল্পগুলো ছাপা হয়েছিলো দৈনিক সংবাদের সাহিত্য পাতায়। তারপর গেলো দেড় দশক ধরে গল্পগুলো বারবার কাটাছেঁড়া করেছি। বারবার সম্পাদনা করেছি। নতুন করে লিখেছি। গল্পগুলোর বিভিন্ন রূপ ছাপা হয়েছে উত্তরাধিকার, লেখাবিল, চিহ্ন, গল্পপাঠ, আক্ষরিক, ডেসটিনি, দ্রাঘিমা, বাংলানিউজ২৪.কম, বিডিনিউজ২৪.কম, বাংলামেইল.কম. পরিবর্তন.কম, শিরিষের ডালপালা ইত্যাদি ছোট কাগজ, দৈনিক সাহিত্য পাতা, ওয়েব আয়োজনে। এর প্রাথমিক পাণ্ডুলিপি ছাপা হয়েছিলো ছোট কাগজ লোকনে। প্রতিবারই গল্পগুলোতে রদবদল ঘটেছে। আসলে গল্পগুলো আমি দেড় দশক ধরেই লিখেছি, এবং লিখতে গিয়ে নতুন রূপ পেয়েছে, পরিবর্তন ঘটেছে।
অলাত এহসান : এই বইতে ১০টি গল্প আছে। গল্পগুলো কি কি বিষয় নিয়ে লেখা?
মুজিব ইরম : গল্পগুলো যে কি কি বিষয় নিয়ে লেখা, বলা বড়ো মুশকিল। এরকম বলা যায় কি না আমি ঠিক জানি না। গল্প তো কবিতার যমজ ভাই। ‘কবি এখানে কি বুঝাইতে চাহিয়াছেন’-এর মতোই ‘গল্পকার এই গল্পগুলো কি বিষয় নিয়া লিখিয়াছে’ বলাটা সাম্প্রতিক একজন গল্পকারের বলাটা অসম্ভব বলেই মনে হয়। হয়তো ‘জনৈক অভিঙ্গ হেডমাস্টার’ বলতে পারবেন।
অলাত এহসান : গল্পগুলো লেখার গল্পটা বলুন।
মুজিব ইরম : আমি তো আসলে কবিতার লোক। গল্প লিখবো বলে কোনো দিন ভাবি নাই। গল্প কেনো, আসলে কবিতার বাইরে আর কোনো কিছু লিখবো বলেই ভাবি নাই। কবিতায় এতোই স্বাধীনতা নিয়েছি, এর বাইরে যাবার প্রয়োজনও মনে করি নি। শিল্পের আলাদা আলাদা ফর্মে বিশ্বাস ছিলো না, এখনও নাই। যে কারণে কবিতার বাইরে যেতে হয় নি। কিন্তু একটা সময়ে এসে মনে হলো, এতো স্বাধীনতা নেবার পরও যা করতে চাচ্ছি তা ঠিক আর কবিতায় আটকাতে পারছি না। আর পারছি না বলেই ২০০০ সালের কোনো এক শীত ভোরে ‘দড়া টানার মাছ’ লিখতে শুরু করি। ঠিক ওসময়েই আউট বই/উপন্যাসগুলোও লিখতে শুরু করেছিলাম। তারপর তো ৩টি আউট বই ও ১৫টির মতো গল্প লেখা হয়ে গেলো।
অলাত এহসান : আপনি কি কোনো নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু ও ফর্ম নিয়ে লিখতে পছন্দ করেন বা দূর্বলতা আছে কি? কোনটাকে বেশি গুরুত্ব দেন?
মুজিব ইরম : ঠিক বলতে পারবো না। বিষয় ও ফর্মকে আমি ঠিক আলাদা ভাবে দেখি না। দুটোকেই সমান গুরুত্ব বলে ভাবি। যে বিষয় যে ফর্মের দাবি করে, গল্প লিখতে গিয়ে এমনিতেই মনে হয় এসে যায়। আমি অবশ্য গ্রন্থভূক্ত ১০টি গল্পে ফর্মের চেয়ে বিষয়কেই মনে হয় গুরুত্ব দিয়েছি বেশি। ফলে ধ্রুপদী গল্প বলার ঢঙ্গেই গল্পগুলো লিখতে হয়েছে।
অলাত এহসান : গল্পগুলোতে আপনি কি বলতে চেয়েছেন, কোনো বিশেষ বিষয়কে উপস্থান বা ম্যাসেজ দিতে চেয়েছেন কি?
মুজিব ইরম : গল্পগুলোতে ঠিক কি বলতে চেয়েছি, তা বলাটা বেশ মুশকিল। কোনো বিশেষ বিষয় উপস্থাপন, বা ম্যাসেজ মাথায় নিয়ে কি গল্প লেখা যায়? হয়তো যায়। তবে আমি হয়তো এরকম ভাবি নি। গল্পগুলো আমাকে তাড়া দিয়েছে। আমি তাদের না লিখে পারি নি। ওরা আমাকে লিখে নিতে বাধ্য করেছে বলেই বার বার ওদের কাছে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছি। পাঠক হয়তো এখন তাদের মতো করে বিশেষ বিষয় বা বিশেষ ম্যাসেজ বের করে নেবে।
অলাত এহসান : একটি ঘটনা বা অভিজ্ঞতা কি করে আপনি গল্পে রূপান্তর করেন?
মুজিব ইরম : হয়তো একটা ঘটনা বা অভিজ্ঞতা তাড়া করতে শুরু কললো, গল্প লিখতে গেলাম, আর দেখা গেলো সেই ঘটনা বা অভিজ্ঞতাই উধাও। গল্পটা চলে গেছে অন্য কোথাও, অন্য কোনো খানে। এরকমই হয়, হয়েছে বারবার।
অলাত এহসান : গল্পে কি আপনার ব্যক্তিগত ছাপ এসেছে? কিভাবে এসেছে?
মুজিব ইরম : গল্পগুলোতে আমি একটি বিশেষ অঞ্চলের ভাষা, মানুষ ও সমাজ তুলে আনতে চেষ্ঠা করেছি। এই চেষ্ঠা করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে যে ওসব চরিত্রের মাঝে নিজেও ঢুকে পড়ি নি, তাই বা বলি কী করে। নিজের অভিজ্ঞতা, স্মৃতি ও শৈশব খুব আষ্টেপৃষ্ঠেই মনে হয় গল্পগুলোতে মিশে আছে।
অলাত এহসান : গল্প উপস্থাপনের ক্ষেত্রে আপনি কি মেটাফোর, নিজস্ব শব্দ তৈরি করেন? তা কি রকম?
মুজিব ইরম : কবিতায় আমি যে কাজটা করি, আমার নিজ অঞ্চলের শব্দ ব্যবহার করি, ভাষা ও বলার ভঙ্গি ব্যবহার করি, গল্পগুলোতেও তাই করার চেষ্টা করেছি। হয়তো তা করতে গিয়ে নিজস্ব শব্দও তৈরি করে নিতে হয়েছে। আসলে এইসব শব্দ ও বলার ভঙ্গি এতোটাই রক্তে মিশে আছে, আলাদা ভাবে কখনো ঠিক ভাবি নি। মনে হয় লিখতে গিয়ে হয়ে যায়, হয়ে গেছে।
অলাত এহসান : প্রত্যেক লেখকই চায় তার একটা নিজস্বতা তৈরি করতে, তো বর্তমান গল্পকারদের সঙ্গে আপনার গল্পের পার্থক্য করেন কী ভাবে?
মুজিব ইরম : আমি ঠিক ওই অর্থে গল্পের লোক নই। কবিতার লোক। কবিতার লোক হতে গিয়ে প্রথমেই আমাকে লড়াই করতে হয়েছে নিজের সথে। গল্পগুলো যেন কবিতা হয়ে না যায়। যেন পাঠক বলতে না পারে গল্পগুলো একজন কবির গল্প, যেভাবে আমরা বলে থাকি। কবির লেখা গল্প না লিখে আমি ঠিক গল্পকারের গল্পই করতে চেয়েছি। এতে করে আমার সমসময়ের গল্পকারেরা যেখানে কবিতাশ্রিত ভাষা ও বলার ভঙ্গিতে অধিকাংশই মার্কেজীয় ফর্মের গল্প লিখছেন, আমি তখন আমাদের ধ্রুপদী গল্প বলার ভঙ্গিতেই ফিরে যেতে চেয়েছি। ফিরে যেতে চেয়েছি আমার নিজস্ব ভাষা ও ভূগোলে। এখন সেটা কতোটুকু নিজস্ব হলো, বা কতোটুকু অন্যদের চেয়ে আলাদা হলো, তা তো ঠিক বলতে পারবো না, সেটা না হয় পাঠকের উপরেই ছেড়ে দেয় যাক।
অলাত এহসান : আপনার গল্পগুলোকে কি কোনো বিশেষ ধারা বা ঘরাণার-যেমন মার্কসবাদী, জীবনবাদী, নারীবাদী, ফ্রয়েডিয় ইত্যাদি বলে মনে করেন?
মুজিব ইরম : না, মনে করি না। ওসব প্রচলিত আলোচনায় আমার কোনো সায় নাই। গল্পকে এভাবে একটা লেভেল দিয়ে দেখা বা আলোচনা করা খুব পুরাতন রীতি, প্রাতিষ্ঠানিক রীতি। এরকম বিশেষ বাদী গল্প আমি লিখতে চাই নি। আমি আসলে গল্পই লিখতে চেয়েছি। এখন সেসব থেকে হয়তো কোনো প্রচল ধারার আলোচক এসব রীতিটিতি বের করে ফেলতে পারেন। আমি আসলে এই প্রশ্নের উত্তর করার আগ পর্যন্ত এই নিয়ে ভাবি নি। ভবিষ্যতেও ভাববো বলে মনে হয় না।
অলাত এহসান : বইটি বাওফোটা নামের কারণ কি? নাম দ্বারা আপনি কি বোঝাতে চেয়েছেন?
মুজিব ইরম : আমি সচরাচর যা করে আনন্দ পাই, খুব ছোট নাম রাখতে চাই, আবার নতুন, যাতে শুনেই মনে রাখা সহজ হয়। বাওফোটা অতি আঞ্চলিক একটা শব্দ। যার সরল অর্থ স্যাঁতসেঁতে। বাওফোটা গল্পের একটা অংশ এখানে তুলে দিলাম, মনে হয় বুঝে নিতে সহজ হবে: ‘গন্ধটাকে মা বলেন বাওফোটা গন্ধ। মা কিছুতেই তা সহ্য করতে পারেন না। যখন বাদলা নামে, রোদের দেখা নাই, ঘরের মেঝে-দেয়াল ভিজে থাকে, দরজা-জানালা প্রায় খোলাই যায় না, মা’র মনে হয়- লেপ-তোষক সব গিল্লা হয়ে গেছে। সেই গিল্লা-হওয়া জিনিসপত্রই গন্ধটাকে ডেকে আনে। এই গন্ধ তাড়াতে মাকে কতো কিছু না করতে হয়! ঘনঘন ঝাড় দেওয়া, সময়-সুযোগে দরজা-জানালা খুলে দেওয়া, গিল্লা হয়ে-যাওয়া বিছানা-তোষক রোদে গরম করে আনা- ছেলের ঘর থেকে গন্ধ তাড়াতে মা’র কী আর বিশ্রাম আছে! শীতে যেন মা’র ব্যস্ততা আরো বেড়ে যায়। দুপুর-রোদে বিছানাপত্র গরম করে কী যে পরিপাটি করে রাখেন! ছেলে তার কিছুতেই গিল্লা-হওয়া বিছানায় ঘুমাতে পারে না, দম বন্ধ হয়ে আসে, উমাফোটা লাগে।’
অলাত এহসান : আমরা দেখি বাংলা সাহিত্যে উত্তারাধিকারের ধারা বহন করেছেন অনেক লেখক। আপনি কি নিজেকে কোনো সাহিত্যধারার উত্তরাধিকারী মনে করেন? উত্তরাধিকারী ধারায় অনেক সাহিত্যিক অগ্রজ সাহিত্যিকের কাছে ঋণ স্বীকার করেন। আপনি কি তেমন কোনো সাহিত্যিকের নাম বলবেন?
মুজিব ইরম : আসলে ভূমিতে মাথা দিয়ে তো আর হাঁটা যায় না, ভূমিলগ্ন হয়ে পা মাটিতে রেখেই হাঁটতে হয়। আমি তো হাজার বছরের বাংলা সাহিত্যের উত্তরাধিকার বহন করি। করে যেতে চাই। বাংলা সাহিত্যের সব লেখকের কাছে আমি কোনো না কোনো ভাবে ঋণি।
অলাত এহসান : সাহিত্যের দশক বিচার প্রচলিত আছে। আপনি আপনার দশককে কি ভাবে উপস্থাপন বা চিহ্নিত করছেন?
মুজিব ইরম : সাহিত্যে দশক বিচারের প্রচলন আছে। এর পক্ষ-বিপক্ষও আছে। এতে করে লেখকের শুরু ও বেড়ে ওঠা সহজে সনাক্ত করা যায়। ওই অর্থে আমি নব্বই দশকের কবি বলে সনাক্ত হই। কিন্তু গল্প তো লিখতে শুরু করি পরের দশকে, অর্থাত শূন্য দশকে, আর গল্পের বই বের হলো ২য় দশকে। অতএব গল্পকার হিসাবে কোন দশককে উপস্থাপন বা চিহ্নিত করবো ঠিক বোধগম্য নয়। মনে হয়, এই তিন দশকের চিহ্নই আমি বহন করছি। আর এই তিন দশকেই অসাধারণ সব ছোটগল্প রচিত হয়েছে। এবং হচ্ছে। গর্ব করার মতো।
অলাত এহসান : একটা বই প্রকাশ করা আর একটা ভাল গল্প লেখা, কোনটা আপনাকে বেশি তৃপ্তি দিবে?
মুজিব ইরম : অবশ্যই গল্প লেখা। ১৫/১৬টা বই বের হয়েছে, কিন্তু কখনও বই প্রকাশের তৃপ্তি নিয়ে লিখি নি। কোনো লেখকই লেখেন বলে মনে হয় না। একটা লেখা লিখে উঠতে পারা, সেটা ভালো হোক আর মন্দই হোক, কী যে তৃপ্তিদায়ক। আহা!
অলাত এহসান : পরবর্তী বই নিয়ে আপনার কি কোনো চিন্তা আছে?
: আপাতত কোনো চিন্তা নাই। এই একটা বই করতেই তো প্রায় দেড় যুগ চলে গেলো। আরেকটা যে কবে করার সাহস পাবো, কে জানে!
অলাত এহসান : আপনার না লেখা কোনো গল্প আছে, যা আপনি লিখতে চান?
মুজিব ইরম : আসলে প্রায় দেড় যুগ ধরে গল্পগুলোতে কাজ করতে করতে প্রতিবারই মনে হয়েছে, যে গল্প লিখতে চাচ্ছি তা ঠিক লেখা হয়ে উঠছে না। এই কারণেই বার বার লিখে, বার বার প্রকাশ করেও বই করতে এতো দিন লাগলো। এখন বই বের হওয়ার পর মনে হলো, কোনো গল্পই আমি লিখতে পারি নি, যা লিখতে চেয়েছিলাম। সেই না লেখা গল্পগুলোই আবার লিখতে চাই, অশেষ ব্যর্থতা নিয়ে।
অলাত এহসান : এক বসায় গল্প লেখেন না ধীরে ধীরে, কেঁটেছিড়ে লিখে থাকেন?
মুজিব ইরম : প্রাথমিক পর্যায়ে এক বসাতেই গল্পটি লিখে শেষ করি। একটা ঘোরের ভিতর গল্পটি লেখা হয়ে যায়। কিছুতেই বাদ দেয়া যায় না। দিলে এই গল্প আর লেখা হয় না, হয়তো অন্য একটা গল্প হয়ে ওঠে। গল্পটি লেখা হয়ে গেলে দিনের পর দিন মাসের পর মাস, এমন কি বছরের পর বছর তাতে কাজ করি। বাওফোটার গল্পগুলোতে তো তাই করেছি।
অলাত এহসান : গল্প লেখার কোনো অতৃপ্ততা আছে কি?
মুজিব ইরম : : পুরাই অতৃপ্তি আছে। অতৃপ্তি আছে বলেই গল্পের এই বইটি বের করতে দেড় যুগ লাগলো। এখন বইটি বের হওয়ার পর ভয়ে আর পড়ি না, পড়তে চাই না। এই চরম অতৃপ্তি নিয়েই না লেখা গল্পগুলো লিখে ফেলতে চাই। আবারও অতৃপ্ত হতে চাই।
অলাত এহসান : আজকের দিনে সবাই যখন উপন্যাসের দিকে ঝুঁকছে, আপনি সেখানে ছোটগল্পকে কিভাবে দেখছেন?
মুজিব ইরম : ছোটগল্পকে আমি কবিতাজ্ঞন করি। উপন্যাস, যাকে আমি আউট বই বলি, লেখার চেষ্ঠা করেছি। প্রকাশও হয়েছে। একটা নয়, দুইটা নয়, তিন তিনটা! হয়তো আরও লিখতে পারি, নাও পারি। তবে কবিতা যেভাবে না লিখে থাকার কথা ভাবতে পারি না, গল্পও ঠিক তাই। হয়তো এক জীবনে না লেখা গল্পটাই আমাকে বারবার লিখে যেতে বাধ্য করবে, অনুপ্রেরণা দেবে।
অলাত এহসান : ভাল গল্প বলতে আপনি কোনগুলোকে বোঝেন, মানে আপনার চোখে কোনগল্পগুলো ভাল?
মুজিব ইরম : যে গল্প পড়ে কোনো দিনই ভোলা যায় না, বিষয়ে, বলার ভঙ্গিতে, কিংবা নতুনত্বে; পড়েই চমকে উঠি, মনে দাগ রেখে যায়, মনে হয় এই গল্প আমি কেনো লিখতে পারলাম না, সেসব গল্পকেই আমার ভালো গল্প বলে মনে হয়।
অলাত এহসান : বলা হচ্ছে একদিন সবকিছু ভার্সুয়াল বা কৃত্রিম জগতের আয়ত্বে চলে আসবে। এরমাঝে বইয়ের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার অভিমত?
মুজিব ইরম : শেষ পর্যন্ত বই বইই। যতোই হাইপার মিডিয়া, বা আপনার ভাষায় কৃত্রিম জগতের খবরদারী থাকুক না কেনো, বই থাকবেই। একটা লেখার বর্ণ-গন্ধ-স্পর্শ কি আর বই ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া যায়? যেভাবে মাঝেমধ্যেই শুনি ‘কবিতা আর কেউ লিখবে কি’, বা ‘ছোট গল্প কি মরে যাচ্ছে’, ঠিক ওরকমই মুদ্রিত বই নিয়া শুধু শুধু প্রশ্নই থাকবে। বই লেখা হবে, প্রকাশ হবে, পাঠক পড়বে। অবশ্যই।
অলাত এহসান : আপনি কি বাংলাদেশের বর্তমানে রচিত গল্পগুলো নিয়ে সন্তুষ্ট? একটু বিস্তারিত যদি বলেন।
মুজিব ইরম : সন্তুষ্ট। খুবই সন্তুষ্ট! এতো ভালো গল্প লেখা হচ্ছে, এবং হয়েছে, এক কথায় বলা যায় অসাধারণ! বাংলা ছোটগল্পে যে কারো, এমন কি অতি জনপ্রিয়, যাদেরকে আমরা বাজারী বলে এড়িয়ে যাই, তাদেরও চমকে দেওয়ার মতো গল্প আছে। আর যারা শুধু গল্পই লিখছেন, এসময়ে, তরুণেরা, নানা বর্ণে, নানা ঢঙ্গে, তা তো চমকে দেওয়ার মতো। বাংলা ছোট গল্পের জয় হোক। গল্পপাঠের জয় হোক।
অলাত এহসান : আপনাকে ধন্যবাদ।
মুজিব ইরম : আপনাকেও ধন্যবাদ।
জন্ম ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আরো ভেতরে, বারুয়াখালী গ্রামে। কঠিন-কঠোর জীবন বাস্তবতা দেখতে দেখতে বড় হয়ে ওঠা। পারিবারিক দরিদ্রতা ও নিম্নবিত্ত অচ্ছ্যুত শ্রেণীর মধ্যে বসত, জীবনকে দেখিয়েছে কাছ থেকে। পড়াশুনা করেছেন সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ ও ঢাকা কলেজে। ছাত্র জীবন থেকেই বাম রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া। কবিতা লেখা দিয়ে সাহিত্য চর্চা শুরু হলেও মূলত গল্পকার। প্রবন্ধ লিখেন। প্রকাশিতব্য গল্পগ্রন্থ ‘পুরো ব্যাপারটাই প্রায়শ্চিত্ব ছিল’। প্রবন্ধের বই প্রকাশের কাজ চলছে।
মুজিব ইরম : আপনাকেও ধন্যবাদ।
জন্ম ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আরো ভেতরে, বারুয়াখালী গ্রামে। কঠিন-কঠোর জীবন বাস্তবতা দেখতে দেখতে বড় হয়ে ওঠা। পারিবারিক দরিদ্রতা ও নিম্নবিত্ত অচ্ছ্যুত শ্রেণীর মধ্যে বসত, জীবনকে দেখিয়েছে কাছ থেকে। পড়াশুনা করেছেন সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ ও ঢাকা কলেজে। ছাত্র জীবন থেকেই বাম রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া। কবিতা লেখা দিয়ে সাহিত্য চর্চা শুরু হলেও মূলত গল্পকার। প্রবন্ধ লিখেন। প্রকাশিতব্য গল্পগ্রন্থ ‘পুরো ব্যাপারটাই প্রায়শ্চিত্ব ছিল’। প্রবন্ধের বই প্রকাশের কাজ চলছে।
1 মন্তব্যসমূহ
উত্তরমুছুনBaofuta golpo gronter protiti golpo ami bar bar poreci. Kokon o porar jonno , kokon o alochona( asole somalochona) korar jonno......bar bar e mone hoyece e golpo r karo noy, karo chaya Nei lekoker upor. E tar ekebarei nijosho boyon, atthomogno bunon, jemon gacher protom foll, songkai olpo , shade ononno, bohul opekkai akangkito....
Pritibite jemon notun r kuno borno Nei , golpo lekar notun bisoy o olpo, patok keno ei baofuta gronto ti porbe? Kebol moulik prekkapot ebong nijossho boyon vongir jonno... Mujib Erom k ovinondon .. Olathe Ehsan k donnobad