ঝুম্পা লাহিড়ীর সাথে কথোপকথন

অনুবাদ : রু্বিনা খানম


ঝুম্পা লাহিড়ীর ‘ইন্টারপ্রেটর অব ম্যালাডাইস’ ১৯৯৯ এ প্রকাশিত প্রথম গল্প সংকলন আমেরিকার প্রবাসী বাঙালীদের পরিবার, দায়িত্ব, জীবনযুদ্ধ, স্মৃতি ও বিস্মৃতির এক অপূর্ব বহির্প্রকাশ।

অবশ্যই এরপর থেকে সাহিত্যের ভাবধারা হয়েছে আরো অনেক বর্ণিল ও বৈচিত্রপূর্ণ, এরমধ্যে লাহিড়ী লিখেছেন ভারতীয় আমেরিকানদের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখেছে তার উল্লেখযোগ্য লেখনি অন্যতম ‘দ্যা নেইমসেইক’ এবং ‘আনএকাস্টমড আর্থ।


কোলকাতায় ও রোড আইল্যান্ড এ প্রোথিত নিজের শেকড়ের আরো গভীরে গিয়ে তিনি লিখেছেন তার নতুন উপন্যাস- ‘দ্যা লোল্যান্ড’, দুই ভাইকে নিয়ে গল্প যাদের পথ আলাদা হয়ে গিয়েছিল যখন দুরন্ত ছোটভাই উদয়ন যোগ দিয়েছিল ১৯৭০ এর সমাজতান্ত্রিক নকশাল আন্দোলনে।

গুডরীডস এর হয়ে এন্ডারসন টেপার লাহিড়ির সাথে কথা বলেছেন তাঁর এই বিপ্লবী সময়ের প্রতি বিশেষ আগ্রহ এবং তার এই দীর্ঘ ও পরিশ্রমসাধ্য লেখার পরিভ্রমণ নিয়ে।


গুডরীডসঃ 
এইউপন্যাস কী কোলকাতা ও এর লোমহর্শক ইতিহাস নিয়ে না ঐ দুই ভাইয়ের পারিবারিক গল্প নিয়ে? নাকি শুরু থেকেই এই দুটো ছিল একই সূত্রে গাঁথা?

ঝুম্পা লাহিড়ি : 
এই উপন্যাস লেখার ধারণাটি আমার মাথায় আসে কোলকাতার ঐ এলাকার ঘটেছে এমন কিছু ঘটনা থেকে যে এলাকায় আমার বাবা বড় হয়েছেন এবং আমারও আমার শৈশব এর অনেকটা সময় কেটেছে। আমি শুনেছি সেখানে এক পরিবারের দুই ভাইই ছাত্রাবস্থায় যোগ দিয়েছিল নকশাল আন্দোলনে [পশ্চিমবাংলার নকশালবাড়িতে ১৯৬৭ তে শুরু হওয়া সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব] এবং এরপরে ৭০ এর দশকে নিহত হয়েছিল প্যারামিলিটারি হাতে। এটাই ছিল উপন্যাসটির প্রধান উপকরণ, এবং এরপর বিভিন্ন স্থান, কাল আর পাত্রের সন্নিবেশ ঘটেছে এটাকে কেন্দ্র করে। এরপর আমি আমার নিজের প্রয়োজনে গুছিয়ে নিয়েছি। আমার মনে হয়েছিল গল্পের জন্য এক ভাই রাজনীতিতে যোগ দিলেই ভালো হয়, আমি যতটুকু জেনেছি নিয়েছি, যেটা খুব বেশি না, এবং এরপর সেখান থেকেই শুরু করেছিলাম।


গুডরীডসঃ
আপনি বলেছিলেন যে ছোটবেলা থেকেই নকশাল আন্দোলন নিয়ে আপনার আগ্রহের কথা এবং এ লিখার ইচ্ছা ছিল বহু আগে থেকেই।

ঝুম্পা লাহিড়ি :
হুম কোলকাতার জন্য ওটা ছিল একই সাথে উত্তেজনাপূর্ণ ও বিভিষীকাময় সময়, এবং আমি বড়ই হয়েছি মানুষের মুখে সেই সময়ের গল্প শুনে শুনে। সত্তুর এবং আশির দশকে নিয়মিতই আমার কোলকাতায় যাওয়া হয়েছিল পরিবারের সাথে, আর ১৯৭২ এবং ১৯৭৩ এর পরিস্থিতি ছিল সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ।

আমি তখন ছোট্ট মেয়ে, পাঁচ কী ছয় বছর বয়স, কিন্তু আমি টের পাচ্ছিলাম ঠিকই যে কিছু একটা ঘটছে যদিও বুঝতে পারছিলাম না সেটা কী। এবং এই উপন্যাস কাজে হাত দেয়ার আগে পর্যন্ত সেটা খুব ভালো বুঝতেও পারিনি, প্রথমে আন্দোলনটি ঠিক কিভাবে শুরু হয়েছিল এবং স্বাধীনতা পরবর্তী ভারত এবং বাংলায় সমাজতন্ত্রের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে পড়াশোনা করেছি। বিষয়টি এতই জটিল যে আমি নিজেকে এই বিষয়ে খুব জ্ঞানী বলে মনে করি না। ঐতিহাসিক ঘটনা এবং পরিস্থিতি স্বভাবগতভাবেই নাটকীয় হতে পারে, কিন্তু সেই একই নাটক গল্পে রুপান্তরিত নাও হতে পারে। সুতরাং প্রথমেই আমি সত্যটা যেমন তেমনভাবেই নিলাম- আসল ঘটনা, আসল জায়গা, আসল পরিস্থিতি- সেই সাথে আমার তৈরী গল্প ও চরিত্রগুলো।


গুডরীডসঃ
উপন্যাস এর দ্বিতীয় পর্ব আমেরিকা এবং রোড আইল্যান্ড, যেখানে স্থায়ী হয়েছিল বড়ভাই সুভাষ। গুডরীডসের সদস্য ক্যালি হোয়াং জানতে চেয়েছে বোস্টন এলাকা নিয়ে আপনার এতসব কাজ থাকার পর কেন এই গল্পটায় আপনি রোড আইল্যান্ড এ ফিরে গেলেন, যেখানে আপনি বড় হয়েছেন।

ঝুম্পা লাহিড়ি :
 আমার মনে হয়েছে রোড আইল্যান্ডকে গল্পে নিয়ে আসার জন্য আমি প্রস্তুত, আর ম্যাসাচুসেটস এর গল্প লিখতে লিখতে ক্লান্ত হয়ে আমি চাইছিলাম রোড আইল্যান্ড নিয়ে লিখতে। ছোটবেলায় রোড আইল্যান্ড এ যখন আমি নকশালের গল্প শুনতাম আমি খুব অল্পই বুঝতে পারতাম, নকশাল আমার কাছে ছিল খুব দূরের কিছু, আর আমি সবসময়েই চেয়েছিলাম এই বিষয়টিকে আমার কোন বইয়ে নিয়ে আসতে। মাঝে মাঝে এমন হয় যে পৃথিবীর অন্য কোথাও কোনকিছু ঘটছে কিন্তু আপনার মনেই হচ্ছে না আসলে কিছু একটা ঘটছে যদি আপনি এর থেকে অনেক দূরে থাকেন। হতে পারে তা সর্বগ্রাসী ও হৃদয়বিদারক কিছু কিন্তু ওটা আপনাকে খুব একটা স্পর্শ করে না আর খুব বেশি আপনি জানেনও না। মনে হতে পারে যেন কিছুই ঘটছে না। আর আমি চাইছিলাম আমার চরিত্রগুলো যেন একই উপলব্ধির অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়।

গুডরীডসঃ
এটা কী প্রবাস ধারণার সাথে সম্পর্কিত কোন প্রকার শারিরীক ও মানসিক নিঃসঙ্গতা?

ঝুম্পা লাহিড়ি :
এটা অনেক কিছুর উপরই নির্ভর করতে পারে, তাই না? আমার মনে হয় যে কোন তথ্য জানাটা এখন আরো অনেক সহজতর হয়েছে, মানুষ চাইলে খুব সহজেই তা বিনিময় করতে পারে। যদি ঐ সময়ের মতো কিছু একটা এখন কোলকাতায় ঘটে, তাহলে এখানকার মানুষের আরো ভালো ধারণা থাকবে। কিন্তু আমি এমন এক সময়ে বড় হয়েছি যখন চিঠিই ছিল একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম। এর কারণে অনেক কিছু অস্বাভাবিক মনে হতো। তখনও মানুষ এতটা ভ্রমনইচ্ছুক ছিল না। আমার বাবা-মা হয়তো আড্ডায় বসেছে অন্য কোনো বাঙালী বন্ধুদের সাথে যাদের মধ্যে সম্প্রতি কেউ এসেছে কোলকাতা থেকে সাথে এমন খবর নিয়ে যে, “ওহ, পরিস্থিতি খুব খারাপ।” কিন্তু তবু, এখন চাইলে আমি একটা টিকেট করে বিমানে চড়ে দুনিয়ার একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ঘুরে আসতে পারি, তখন এটা খুবই বড় ব্যাপার ছিল। আমার মনে পড়ে না যে মানুষ অতটা ঘুরে বেড়াতো। এখন সবকিছুই বদলে গেছে।


গুডরীডসঃ
আসুন আপনার লেখালেখির জীবন আর অভ্যাস নিয়ে কথা বলা যাক। গুডরীডস সদস্য ম্যাগান কনার জানতে চেয়েছেন, “লেখালেখির কোন অংশটা আপনার কাছে সবচেয়ে বেশি কঠিন মনে হয়?”

ঝুম্পা লাহিড়ি :
 আমার মনে হয়য় প্রতিটা অংশই কঠিন নিজ নিজভাবে, সত্যিই। শুরুটা থাকে রহস্যাবৃত। তখনো আপনার হাতে কোন নির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা নেই, আপনি জানেন না আপনি কোন পথে যাচ্ছেন, সুতরাং প্রচুর ভুল হয় শুরুতে, পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লেখা অপচয় হয় একরকম দিবাস্বপ্নের মতো অবস্থায় লিখে লিখে। এরমধ্যেও একটা দারুণ স্বাধীনতাও আছেঃ আমি নতুন নতুন জিনিস খুঁজে পাচ্ছেন, আঁকড়ে ধরছেন, এদিক ওদিক সাঁতার কাটছেন এবং এরপর ধীরে ধীরে নোঙর ফেলছেন। অবশ্যই একবার নোঙর ফেলা মানেই স্থিতিশীল হওয়া, এক জায়গায় আটকে পড়াও। এরপর প্রশ্ন চলে আসে দায়বদ্ধতারঃ সত্যিই কী এই চরিত্রগুলো কোন মূল্য আছে আমার কাছে? ওদের কিছু হওয়া না হওয়ায় আসলে কী কিছু আসে যায় আমার? এই যে প্লটটি আমি গড়ে তোলার চেষ্টা করছি তা কী আসলেই সম্ভবপর? যেমন আমি আগে বলেছি, এই বইয়ে আমি শুরুটা করেছি উদয়ন এর হত্যাকান্ডের ঘটনা নিয়ে কারণ এই ঘটনাটিই পরিপূর্ণভাবে আমি জানতাম। এর মানে আমার মাথায় একটা দৃশ্য ছিল। কিন্তু আমি জানি না এটা দিয়ে বইটা শুরু হবে, নাকি শেষ হবে নাকি ক্রমানয়ে ধাবিত হবে এই দৃশ্যের দিকে।
গুডরীডসঃ আপনার কী মনে হয়য় এই বইয়ের উপন্যাস হয়ে ওঠার মতো উপকরণ শুরু থেকেই ছিল?
ঝুম্পা লাহিড়ীঃ ভেতরে ভেতরে আমার মনে হচ্ছিল এটা কোনভাবেই একটা ছোট গল্প হতে পারে না। মানে, গার্সিয়া মার্কেজ হয়তো এটা ছয় পৃষ্ঠার কোন গল্পে এটাকে ধারণ করতে পারতো। কিন্তু আমার জন্য এটা আমার জন্য এমন এক ভিন্নজগত ছিল যা একই সাথে চেনা এবং অচেনা, এবং নিজের মধ্য থেকে বের হয়ে আমার আরো অনেক কিছু জানার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। আমি বোঝার চেষ্টা করছিলাম নিজের জন্যই, কী ঘটেছিল এবং কেন।


গুডরীডসঃ
 গুডরীডস সদস্য এন্ড্রু জানতে আগ্রহী একজন তরুণ লেখক হিসেবে ২০০০ সালে পুলিৎজার পুরষ্কার পাওয়ার কোন প্রভাব আপনার উপর পড়েছিল কীনা, পড়লে সেটা কী রকম?

ঝুম্পা লাহিড়ি :
 আমি আসলে এটা নিয়ে খুব একটা ভাবার চেষ্টা করিনি, ঐ সময়ে ওটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়েছিল। এখনও কিছুটা হলেও কল্পবাস্তবই মনে হয়। মানে আমি জানতাম যে এটা বাস্তব, কিন্তু ভেতরে ভেতরে মনে হচ্ছিল খুব তাড়াতাড়ি আর অসম্ভব কিছু একটা। এবং এ কারণে আমি জানতাম না, এটা আমার লেখালেখির জীবনে বা ব্যক্তি জীবনে কোথায় প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু আমি কৃতজ্ঞ একই সময়ে, এর কারণ এটা আমার জন্য নতুন অনেক পথ খুলে দিয়েছে আর সারা দুনিয়াজুড়ে আরো অনেক পাঠক পেতে সাহায্য করেছে। আর বাস্তবিক অর্থে এটা আমাকে লেখালেখির জন্য নিজের জীবন নিবেদন করতে সাহায্য করেছে, এটা এমনই মূল্যবান যে এটা সব লেখকের ভাগ্যে জুটে না, সুতরাং আমি সত্যিই নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি।


গুডরীডসঃ 
আমার মনে হয় আপনার পুলিৎজার, ১৯৯৭ এ অরুন্ধতী রায় এবং ২০০৬ কিরণ দেশাই এর বুকার প্রাইজ ভারতীয় নতুন লেখকদের জন্য একটি উদার প্লাটফর্ম তৈরী করে দিয়েছে।

ঝুম্পা লাহিড়ি :
হুম, আমি যখন লেখালেখি শুরু করি, একা অনুভব করতাম বিশেষ করে আমি যেখান থেকে এসেছিলাম। আমি রুশদীর লেখা এবং ভারতীয় লেখকদের ইংরেজিতে লেখা পড়েছিলাম। আমেরিকায় বসবাসকারী বাঙালি লেখক ভারতী মুখার্জীর আমেরিকাকে কেন্দ্র করে লেখাগুলো পড়েছিলাম। কিন্তু আমি একটু অন্যভাবে উপলব্ধি করতাম কারণ আমি ভারতীয় বংশদ্ভূত লেখক কিন্তু যে বেড়ে উঠেছে আমেরিকায় ভিন্ন দৃষ্টিকোণ নিয়ে। আমার মনে আছে, যখন আমি “ইন্টারপ্রেটার অব ম্যালাডিস” এর জন্য গল্পগুলো একত্রিত করছিলাম, আমার প্রকাশক জিজ্ঞেস করেছিল, “আপনার এই বইটির বিশেষত্ব কী?” আমি এ ছাড়া আর কোন বিশেষত্ব খুঁজে পাইনি যে আমিই প্রথম এই বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লিখেছি। এই বই প্রকাশিত হওয়ার পর অনেক ভারতীয় অথবা দক্ষিন এশিয়ার লেখকই এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লিখেছে। অবশ্যই এটি একটি দারুণ বিষয়। এবং হতে পারে আমার পুলিৎজার পাওয়ার পর প্রকাশকদের মাথায় ঢুকেছে যে,এরকমভাবেও লেখা যেতে পারে। সম্ভবত এই পুরুষ্কারগুলো অন্যান্য লেখঙ্কের জন্য সম্বাবনার নতুন দরজা খুলে দিয়েছিল।


গুডরীডসঃ
আপনার কি মনে হয় যে, আপনার লেখা ভারত এবং আমেরিকায় ভিন্নভাবে অনুবাদ এবং গ্রহণ করা হয়?


ঝুম্পা লাহিড়ি :
সচেতনভাবে আমি কখনো এই নিয়ে ভাবি না যে আমার লেখা কীভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে। কিন্তু আমি মনে করি ভারতে তা অবশ্যই ব্যতিক্রম কারণ আমার লেখালেখি ভারতীয় ডায়াসপরা নিয়ে। সুতরাং অনেক ভারতীয় পাঠকই যারা কখনোই ভারতের বাইরে যাইনি তাদের কাছে এটা অবশ্য ভিন্ন জগত মনে হতেই পারে। আমার অধিকাংশ কাজই ভারতের বাইরে অথবা ভারত এবং আমেরিকার সংমিশ্রণ। আমার কিছু চরিতের জন্ম এবং বেড়ে ভারতেই বেড়ে উঠা । আবার কিছু চরিত্রের ভারতের সাথে আছে জটিল সম্পর্ক, হতে পারে তা উদবিগ্নতা বা ক্রমশই একা হয়ে যাওয়ার, যখন যা গল্পের প্রয়োজনে উপজীব্য। কিন্তু একটি জিনিসের জন্য আমি কৃতজ্ঞ, যে আমার লেখালেখিতে আমেরিকার অভিজ্ঞতা উঠে আসে। এটি আমেরিকান সাহিত্য হিসেবেও নিশ্চিতভাবে পড়া যেতে পারে। আমার মনে হয় শুরুর দিকে এটি ছিল না-আবারও এই কারণেই আমার লেখাকে কীভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে এই বিষয়ে আমি খুব একটা মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করি না। উদাহরণসরূপ “দ্য নেইমসেইক” কে লোকজন ভারতীয় প্রথম জেনারেশনের গল্প অথবা একটি ভারতীয় পরিবারের গল্প প্রথম ক্লাসিক হিসেবেও গ্রহণ করতে পারে। পার্থ্যকটি সুক্ষ্ণ কিন্তু তবুও এটি একটি পার্থক্য।


গুডরীডসঃ
 ভারতী মুখার্জীর লেখা একসময় আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। আর কোন কোন লেখক এবং তাঁদের বই আপনাকে প্রভাবিত করেছেন?

ঝুম্পা লাহিড়ি :
 অনেকেই এবং তা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু এই বই এর জন্য আমি বলবো টমাস হার্ডি বিশেষভাবে অনুপ্রেরণা দিয়েছে, যাঁকে কী না একজন লেখকে হিসেবে আমার দারূন পছন্দ এবং যাঁর লেখা আমি বার বার পড়ি। যখন আমি এই বইটি লিখছিলাম, তাঁর লেখা আমি আবার পড়েছি। তাঁর সাথে আমি একধরণের যোগসূত্র খুঁজে পাই, বিশেষ করে তাঁর লক্ষ্য, জায়গা সম্বন্ধে তাঁর অনুভব, মনোস্তাত্বিক দক্ষতা, ট্র্যাজেডি, পারিবারিক এবং সামাজিক সীমাবদ্ধতা বোঝার ক্ষমতায়। এই বইয়ে এরকম কিছু সীমাবদ্ধতার ধারণা এবং ঐতিহ্য নিয়ে লেখার চেষ্টা করছিলাম।


গুডরীডসঃ
 আপনার প্রতিদিনকার লেখালেখির অভ্যাস আর রুটিন সম্পর্কে কিছু বলুন। এত বছরে কিছু কী পরিবর্তন হয়েছে?

ঝুম্পা লাহিড়ি :
 সব সময়েই আমার লেখালেখির অভ্যাস তখনকার অবস্থার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। আমি লেখালেখি শুরু করেছি বিশ বছর বয়সের পরে যখন আমি একা ছিলাম, স্নাতোকোত্তর করছিলাম। সুতরাং আমার লেখালেখি সীমাবদ্ধ ছিল ছুটিরদিনগুলোর মধ্যেই যখন পড়াশোনার কোন কাজ থাকতো না। এরপর প্রভিন্সটাউনের একটা ফেলোশীপ পেলাম লেখালেখির জন্যই, এবং ঐ তখন আমি সাত মাস সময় পেলাম যখন লেখা ছাড়া অন্যকোন কিছু করার ছিল না। তখন দিনের একটা বড় অংশই আমি লিখে, পড়ে, চিন্তা করে সময় কাটাতে পারতাম। এরপর বিয়ে করলাম, বাচ্চা হলো, মধ্য ত্রিশে আমি মা, সুতরাং লেখালেখিটাকে সংসার জীবনের সাথে তাল মিলিয়েই চালাতে হলো। বাচ্চারা বড় হতে শুরু করলে তারা যখন স্কুলে থাকতো ঐ সময়টাতে আমি লিখতাম। এরপর রোমের উদ্দেশ্যে ব্রুকলীন ছেড়ে যাওয়ার আগে অনেকটা এভাবেই কাটলো। এখন পর্যন্ত রোমেই আছি, গত কয়েকবছর ধরে। ঘর নিরিবিলি থাকলে প্রতিদিনই আমি কয়েকঘন্টা করে লিখি।

গুডরীডসঃ 
এখন কী পড়ছেন?

ঝুম্পা লাহিড়ি :
রোম এ আসার পর থেকে ইতালিয়ান সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক বেড়েছে। সতর্কতার সাথে এবং ধীরে ধীরে বিংশ শতাব্দীর ইতালিও লেখক ক্যালভিনো, পাসোলিনি, পাভেস, নাটালিয়া গিন্সবার্গ, মরেভিয়ার সাথে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করছি। এটা সত্যিই একজন পাঠক ও লেখক হিসেবে এটা আমার জন্য সত্যিই এক দারুণ এবং অবিশ্বাস্য এক অভিজ্ঞতা আমার জন্য।

গুডরীডসঃ
‘লো ল্যান্ড’ তো প্রকাশিত হয়ে গেছে, আমি জানতে আগ্রহী এখন লেখালেখির গণমুখী দিক- সমালোচনা, সাক্ষাতকার আর বুক ট্যুর নিয়ে আপনি কী ভাবছেন বা কিভাবে নিচ্ছেন।

ঝুম্পা লাহিড়ি :
 এটা সত্যিই আমার জন্য কঠিন একটা দিক। বই প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পরে এটা নিয়ে শোরগোল আমার জন্য খুবই অস্বস্তিকর। আমার লেখালেখিগুলো আসে খুবই ব্যক্তিগত একটা জায়গা থেকে- আমার মনে হয় না যে আমি এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম- এবং এটা খুবই অদ্ভুত বিষয় এতবছর ধরে যা ছিল নিজের সাথে নিঃশব্দ কথোপকথন, হঠাত করেই তা আর নিশব্দ থাকে না। মানে, যে পরিমান সময়, শক্তি, স্বপ্ন, প্রচেষ্টা, লেখা, সম্পাদনা, পুনর্লিখন একতা বইয়ের ক্ষেত্রে ঘটে মনে হয়য় এ যেন একটা সময় আর প্রচেষ্টার সমুদ্র। আর পরিভ্রমনটি মোটেও সুখকর নয়, এটা দীর্ঘ ও কঠিন। আর যাত্রাশেষ হয়ে গেলে সমুদ্রের অন্য তীরে নিজেকে কল্পনা করে সেই পরিভ্রমণ কেমন ছিল এটা ব্যাখ্যা করা কঠিন। আমি অনুভব করি যে এই যাত্রা আমাকে পরিবর্তিত আর পরিবর্ধিত করেছে কিন্তু এর পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দেয়া আসলে অসম্ভব।

গুডরীডসঃ
আমার মনে হয় আপনি অসাধারণ কাজ করেছেন। অনেক ধন্যবাদ, ঝুম্পা।
-------------------------------------------------------------
গুডরীডস এর জন্য এই সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন এন্ডারসন টেপার। এন্ডারসন ভ্যানিটি ফেয়ার এ কাজ করেন, লিখেছেন অনেক বই ও প্রকাশনা, যার মধ্যে আছে ‘ দ্যা নিউ ইউর্ক টাইমস বুক রিভিউ’, ‘টিন হাউজ’, ‘ওয়ার্ডস উইদাউট বর্ডারস, এবং ‘দ্যা প্যারিস রিভিউ ডেইলি’।
তিনি ব্রুকলীন বই মেলার ইন্টারন্যাশনাল স্টেইজ এবং পিইএন ওয়ার্ল্ড ভয়েসেস এরও উপদেষ্টা।






অনুবাদক পরিচিতি
রুবিনা খানম

গল্পকার। অনুবাদক।
কানাডা প্রবাসী। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ