
এই অসুখের কবলে পড়ে ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলায় হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন। দেশ ছেড়েছেন। নিঃশ্ব হয়েছেন। সমষ্টিগত বিষাদ বহন করতে হচ্ছে বংশ পরম্পরায়।
এর নিদান হিসেবে ধর্ম-সম্পদায় অনুসারে দেশভাগ হয়েছিল ১৯৪৭ সালে। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার অসুখ সারার লক্ষ্মণ দেখা যায়নি। ১৯৫০, ১৯৫৪ , ১৯৬৪ সালে রক্তক্ষয়ী হামলা ঘটেছে ধর্ম-সম্প্রদায়ের মধ্যে।
অসাম্প্রদায়িক দেশ নির্মাণ করার আকাঙ্ক্ষায় বাংলার পূর্ব ভূখণ্ডে ৩০ লক্ষ মানুষ আত্মত্যাগ করেছিল। জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা থেকে মুক্ত হতে পারেনি। ১৯৯২, ২০০১, ২০১৪, ২০১৬ সালে পুরনো কৌশলে সেই সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত ছোবল হেনেছে।
এই মর্মভেদী বিষয়গুলো নিয়ে গল্পপাঠের প্রকাশক মৌসুমী কাদের কথাসাহিত্যিকদের সঙ্গে আলাপ করেছেন। আলাপে অংশ নিয়েছেন ভারতের অকাদেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক অমর মিত্র। নিচে সেই আলাপ পত্রস্থ হলো--
১. অমর মিত্র :
প্রশ্ন ২. মৌসুমী কাদের
একজন মহৎ লেখকের দায়বদ্ধতার জায়গাটি থেকে অসাম্প্রদায়িকতার গুরুত্ব কতটুকু?
২. অমর মিত্র :
অসাম্প্রদায়িক না হলে কি মহৎ লেখক হওয়া যায়? লেখকের ধর্ম মানব ধর্ম। এই পৃথিবী, এই মহাপ্রকৃতি,এই জীবন আর সমাজ নিয়ে তিনি বাঁচবেন। ধর্ম নিয়ে নন। একজন মহৎ লেখকের দায়বদ্ধতার জায়গাটি থেকে অসাম্প্রদায়িকতার গুরুত্ব কতটুকু? লেখক সত্য উচ্চারণ করবেন। তিনি সংখ্যালঘু,সংখ্যালঘুর উপরে আক্রমণের বিরুদ্ধে নিশ্চয় দাঁড়াবেন তার মানে সংখ্যাগুরুর ধর্মের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ নয়। তিনি একজন মানবাধিকার কর্মীর মতোই অত্যাচারিতের পক্ষে দাঁড়াবেন। তিনি অসাম্প্রদায়িক,সংখ্যালঘুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংখ্যাগুরু উদারমনার সাহায্যও নেবেন।
প্রশ্ন ৩. মৌসুমী কাদের :
ব্যক্তি জীবনের ‘সাম্প্রদায়িক অভিজ্ঞতা’ লেখক হিসেবে প্রকাশ করবার সময় কতটা ‘নৈর্ব্যক্তিক’ হওয়া সম্ভব?
৩. অমর মিত্র :
ব্যক্তিজীবনে সাম্প্রদায়িক অভিজ্ঞতা থেকে মুক্ত থাকাই লেখকের প্রধান কাজ। আমি মন্দির এড়িয়ে চলি। হ্যাঁ ধর্মের দর্শন বুঝতে চেষ্টা করি। তার ইতিহাস তার রহস্যময়তা বুঝতে চাই। যে কোনো ধর্মের ক্ষেত্রে এইটিই হয়।
প্রশ্ন ৪. মৌসুমী কাদের
সমাজকে সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে লেখক যখন কোন একটি সম্প্রদায়কে সমর্থন করতে বাধ্য হয় (যেমন সংখ্যালঘু) এবং তিনি যদি সেই একই গোষ্ঠিরই লোক হন তখন কি উপায়ে লিখলে ‘পক্ষপাতিত্ব হচ্ছে’ বলে মনে হবে না।
৪. অমর মিত্র :
লেখক সত্য উচ্চারণ করবেন। তিনি সংখ্যালঘু , সংখ্যালঘুর উপরে আক্রমণের বিরুদ্ধে নিশ্চয় দাঁড়াবেন তার মানে সংখ্যাগুরুর ধর্মের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ নয়। তিনি একজন মানবাধিকার কর্মীর মতোই অত্যাচারিতের পক্ষে দাঁড়াবেন। তিনি অসাম্প্রদায়িক , সংখ্যালঘুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংখ্যাগুরু উদারমনার সাহায্যও নেবেন।
প্রশ্ন ৫. মৌসুমী কাদের :
লেখক যখন স্বার্থপর হয়, আত্মপ্রচারণায় মগ্ন থাকে, ‘মানুষ এবং মাধ্যম’ উভয়কে ব্যবহার করে, নির্লজ্জ আত্মপ্রচার এবং স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টায় লিপ্ত হয় এবং একসময় সুনাম এবং গ্রহণযোগ্যতা পায়, এমনকি মহৎ লেখকের খেতাবও অর্জন করে; নব্য লেখকরা কী ভাবে তাকে গ্রহণ এবং অনুসরণ করবে?
৫. অমর মিত্র :
শেষের প্রশ্নে একটিই কথা অত সব গুণে গুণান্বিত ব্যক্তি কি মহত্তম লেখক হন? তাঁর মনের ছায়া কি লেখায় পড়ে না? তা নষ্টই করে লেখাকে। তাঁকে কি নব্য লেখকরা গ্রহণ করেন? ধার্মিক হওয়া আর সাম্প্রদায়িক হওয়া এক বিষয় নয়। ধর্ম পালন করেন এমন বড় লেখক আমি দেখেছি। তিনি কুসংস্কার,অন্য ধর্মের প্রতি ঘৃণা নিয়ে নিশ্চয়ই জীবন যাপন করেন না। যাঁরা করেন তা তাঁরা কি মহৎ লেখার জনক? ধর্ম আর ক্ষমতার অন্ধকারের বিরুদ্ধেই ত তিনি লিখবেন। ধর্ম এখন ক্ষমতা অর্জনের প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। লেখক যদি ক্ষমতার বিরুদ্ধে যান ধর্মের বিরুদ্ধেও যাবেন নিজের অজান্তে।
0 মন্তব্যসমূহ