সাদিয়া মাহজাবীন ইমাম'এর গল্পের ভুবন : গল্পটাকে নিজের ভেতর বহন করা ছাড়া কোন বিশেষ কৌশল নেই

গল্পপাঠ :
গল্প লিখতে শুরু করলেন কেন?
সাদিয়া মাহজাবীন ইমাম
লেখা নিজেকে খনন সমতুল্য কাজ। কবিতা, গল্প বা উপন্যাস সাহিত্যের যে শাখাই হোক । এই খননের কাজটা কেন গল্পের ঢঙ্গে প্রকাশ করছি সেটা বোঝানো লেখকের জন্য কঠিন। তবে গল্প ছাড়া অন্যধারাগুলো হয়ত আমার জন্য প্রতিবেশির বাড়ির উঠোনের মতো।
বেড়াতে যাওয়া যায় সেখানে কিন্তু হাত-পা মেলে রোদ পোহাতে বসা যায়না। লেখা শুরু করেছিলাম অনেকগুলো কারণে, চারপাশের জগতের রঙ বা অপ্রকাশ্য শব্দটা আমি কেমন করে গ্রহণ করছি, বোঝাতে চাওয়া একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

গল্পপাঠ :
শুরুর লেখাগুলো কেমন ছিল?
সাদিয়া মাহজাবীন ইমাম :
সেদিন অমর মিত্রের একটা লেখায় পড়ছিলাম ‘উপন্যাস লিখতে লিখতে শিখতে হয়’, যে কোন লেখাই কিন্তু তাই। তবে লেখা নিয়ে নিরীক্ষার সাহসটা প্রথমদিকে কম থাকে, শব্দ সহযোগিতা করেনা। আমার গল্পেও তাই ঘটেছে, প্রথম দিকের লেখায় ডায়লেক্ট কম, বর্ণনা অধিক। শব্দ ব্যবহার এমনি অপটু যে দুর্বল পাঠক পর্যন্ত বুঝবে এটা লেখকের প্রথম সময়ের। এখন হয়ত সামান্য পরর্বিতন আসছে।


গল্পপাঠ :
গল্প লেখার জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছেন? নিলে সেগুলো কেমন?
সাদিয়া মাহজাবীন ইমাম :
আয়োজন করে লেখার জন্য প্রস্তুতি নেয়া যায় কিনা জানিনা। যে লিখবে তার প্রস্তুতি নিজের অজান্তেই শুরু হয়- তাঁর পাঠভ্যাস, র্পযবেক্ষণ, জীবনবোধ, সংবদেনশীলতা দিয়ে। কোন রুটিন ওর্য়াক করিনা তবে যে বিষয়ে লিখি তা নিয়ে পড়তে হয়। ধরা যাক নদী ভাঙ্গন নিয়ে লিখবো। তখন কেমন ভাঙ্গনে স্রোত কেমন বা কোন সময়ে বাতাসের হালটা কোনদিকে যায়, নদীর গতি-প্রকৃতি এসব নিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা না তৈরি করে লিখলে গল্পে লুপহোল হয়। সচেতন পাঠক মাত্রই তা বুঝতে পারেন।


গলপাঠ : 
আপনার গল্পলেখার কৌশল বা ক্রাফট কি?
সাদিয়া মাহজাবীন ইমাম :
গল্পটাকে নিজের ভেতর বহন করা ছাড়া কোন বিশেষ কৌশল নেই। যত বেশি সে প্রকাশের আগে আমার সাথে থাকার সময় পায় তার হাত, পা, ত্বক পরিপুষ্ট হয়। অতিরিক্ত কালক্ষেপণে আবার কত গল্প হারিয়েও গিয়েছে। গল্পের সাথে বোঝাপড়া না হলে লিখতে বসে টের পাই তখন শব্দ, ভাবনা, লেখার গতি সবকিছুই প্রতিশোধও নেয়। এই বোঝাপড়াটা সব লেখকের জন্যই জরুরি। গল্পের মূল বক্তব্যটা শেষে দিতে চেষ্টা করি।


গল্পপাঠ : 
আপনার নিজের গল্প বিষয়ে আপনার নিজেরে বিবেচেনা কি?

সাদিয়া মাহজাবীন ইমাম ;
পাঠক বলতে পারবেন। 


গল্পকার : 
আপনার আর্দশ গল্পকার কে কে? কেনো তাঁদরেকে আর্দশ মনে করেন?

সাদিয়া মাহজাবীন ইমাম : 
বিভূতি ভূষণকে পড়া যায়না, তাঁর সাথে ভাগলটুলি থেকে ইছামতি পর্যন্ত পাশে পাশে হাঁটতে হয়। বিভূতি ভূষণ হচ্ছেন বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ প্রকৃতিপুত্র।

বনফুল তাঁর গল্পে একেবারে শেষ লাইনে যেয়ে সব চিত্র এলোমেলো করে দেন ওটা বড় চমক। বনফুলের গল্প অধিকাংশই আকারে ছোট অথচ কী পরিপূর্ণ! অনুগল্পের কৌশল রীতিমত মারাত্বক আর রসবোধ প্রবল!

নরেন্দ্রনাথ মিত্রের লেখায় ভালোবাসা আর জীবিকা দুটোর মিশেল নিপুণ। মনে হয় বহুকাল আগের মানুষদের গল্প, সামনে বসে বলে যাচ্ছেন গল্পকার। নরেন্দ্রনাথ দুএকটি বাক্যে বিপুল আবেগের গভীরতা তুলে আনেন। এসব শুধু ভালোলাগা নয় শেখারও বিষয় আমার জন্য।

স্বপ্নময় চক্রবর্তীর গল্প পড়তে গেলে আমি ভালোমানসী মুখোশ ভাঙ্গার শব্দ শুনতে পাই। তোয়াক্কা না করে লেখেন আবার সরল বর্ণনার ভেতর কী অসাধারণ তুলে আনেন গভীর জীবন পর্যবেক্ষণের ছবি।

তলস্তয়ের লেখায় আদিমকালের আধ্মাতিকতার গন্ধ যা এ সময়ে দাঁড়িয়েও বিশ্বাসীর জন্য একই রকম আবেদন রাখে। আর চরিত্র নির্মাণে তলস্তয় অদ্বিতীয়।

কাফকা ঘোরের ভেতর নিয়ে যেতে বাধ্য করেন, সেই ঘোরটা আপনার সব সময় পছন্দ হবেনা কিন্তু বের হতে পারবেন না। আলবেয়্যার কামুও অনেকটা তাই। স্যাডিজমে ভরপুর তবুও নেশাগ্রস্থ করে তোলে।

ছোটগল্পে চমক দিতে জ্যাক লন্ডন, চেখভ অসাধারণ।


গল্পপাঠ : 
কার জন্য গল্প লেখেন? আপনি কি পাঠকের কথা মাথায় রেখে লেখেন? লিখলে কেনো লেখেন? আর যদি পাঠকের কথা মনে না রেখে লেখেন তাহলে কেন পাঠককে মনে রাখেন না লেখার সময়ে?

সাদিয়া মাহজাবীন ইমাম :
লেখার সময় এসব ভাবনা কাজ করেনা। কোনটাই একক সত্যি বা মিথ্যে নয়। নিজের জন্য যেমন লিখি আবার পাঠকের কথাও মনে থাকে, আবার কখনো লেখাটা ছাড়া অন্য কোন ভাবনাই মাথায় আসেনা। কখনো কিছু না ভেবেও লেখক লিখেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ