স্বকৃত নোমানের টুকে রাখা কথামালা ৩

পাঠেরও তৃপ্তি থাকে। কোনো কোনো লেখা পড়ার সময় মনে হয়, শেষ না হোক, চলতে থাকুক। আবার কোনো কোনো লেখা পড়ার সময় মনে হয়, ধ্যাত্, শেষ হয় না কেন! বেশ কদিন ধরে বই পড়ে তৃপ্তি পাচ্ছিলাম না। গতকাল বিকেলে পাঠক সমাবেশের বইয়ের র্যাকে ঘণ্টাখানেক চোখে বিঁধে রেখেও পড়ে তৃপ্তি পাব এমন কোনো বই খুঁজে পেলাম না। আছে নিশ্চয়ই, আমি খুঁজে পাইনি। একটা অতৃপ্তি নিয়ে বেরিয়ে এলাম। বিপন্নতা নিয়ে কাঁটাবন সিগন্যালের দিকে হাঁটতে থাকি। বিপন্নতা বইয়ের জন্য। বই তো পড়তে হবে। টানা এক সপ্তাহ বই না পড়লে নিজেকে বড় মূর্খ মনে হয়। যেন কোনো পাপ করছি। পঙ্কিলতার মধ্যে নাক ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। জীবনটাকে খুব অর্থহীন মনে হয়। বারবার মনে হয়, কেন বেঁচে আছি?

বাসায় ফিরে হাজারখানেক শব্দের একটা গদ্য শেষ করে রাত বারোটার দিকে আলিমরার তাকগুলোতে চোখ বুলাতে থাকি। কী বই পড়া যায়? অনেক বই আছে, যেগুলোর দু-চার কিংবা দশ-বিশ পাতা পড়ে রেখে দিয়েছি। টানেনি। ভালো লেখা পাঠককে টানে। যে লেখা টানে না, তা জোর করে কেন পড়ব? জীবন খুব ছোট। পড়তে হয় বেছে বেছে, আনন্দের সঙ্গে। পাঠানন্দহীন লেখা পড়ে নষ্ট করার মতো সময় কোথায়?

তো আলমিরার তাক থেকে একটা গল্পের বই টেনে বের করি―দুধভাতে উৎপাত। গল্পকার আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। অনেক দিন আগে কেনা বই। মাত্র চারটি গল্প নিয়ে বইটি। প্রথম গল্প ‘মিলির হাতে স্টেনগান’ পড়ে বইটা আলমিরায় উঠিয়ে রেখেছিলাম। লেখাবাহুল্য, গল্পটা ভালো লাগেনি। কী বলতে চাইলেন, কী বোঝাতে চাইলেন, কিচ্ছু বুঝিনি। পড়েও আরাম পায়নি। বইটা বের করে কোল বালিশে হেলান দিয়ে পড়তে লেগে গেলাম। এই পৃথিবীতে আনন্দ বলতে একটাই―কোল বালিশে হেলান দিয়ে বই পড়া। বইটির দ্বিতীয় গল্প ‘দুধভাতে উৎপাত’ পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল, যেন শেষ না হয়...যেন শেষ না হয়। চলুক, চলতে থাকুক। পড়তে পড়তে রাত পুইয়ে ভোর হোক।

গল্পটি পড়ে শেষ করে বইটিতে চুমু খেলাম। প্রেমিক যেমন প্রেমিকার অধরে চুমু খায়। চোখ বন্ধ করে মহামতি ইলিয়াসের পা দুটো কল্পনা করি। যদি পা দুটো সামনে পেতাম, দু-হাতে ছুঁয়ে ফেলতাম। বলতাম, গল্পটি এতদিন না পড়ে অন্যায় করেছি। মাফ করে দিন। মাত্র দশ পৃষ্ঠার গল্পটি পড়ে যে তৃপ্তি পেলাম, তা দুই শ পৃষ্ঠার সমান। ইলিয়াস আসলেই বস।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ