
রিমিঃ
জীবন ও প্রকৃতির স্ববিরোধিতার মধ্যে দিয়েই বেড়ে উঠেছে আমাদের প্রজন্ম। সেই প্রভাব আপনাদের দুজনেরই লেখায় লক্ষ করলাম। এই বিষয়ে কিছু বলুন।
মোজাফফরঃ
দেখুন, লেখালেখিটা আমার জন্য মোটেও সহজ কাজ ছিল না। আশির দশকের মাঝামাঝি আমার জন্ম, নব্বইয়ে বুঝতে শেখা। ভুল ইতিহাসের পাঠ নিয়ে আমি বেড়ে উঠেছি। আমার চারপাশ থেকে জেনেছি, বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ থাকলেই ভালো হতো! ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তান হেরে গেলে অনেক বন্ধুকে দেখেছি মনমরা হয়ে বসে থাকতে। তারা একাত্তরের পরের প্রজন্ম, মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, ভুল ইতিহাস রপ্ত করেছে। দেখেছি, গ্রামের অশিক্ষিত-শিক্ষিত সকলেই যাকে একবাক্যে ইমাম হিসেবে মানে, সেই ইমাম সত্তর বছর বয়সে বিয়ে করছেন টিন-এজের মেয়েকে। তা নিয়ে কোনো সমালোচনা হচ্ছে না, সমালোচনা হচ্ছে আমরা কোনো গানবাজনার অনুষ্ঠান করলে। এরপর গ্রামে আহলে হাদিস ও হানাফির ভেতর প্রকাশ্য ও মৌন দ্বন্দ্ব দেখেছি। এসবের মধ্য থেকে আমাকে স্বতন্ত্রবোধ তৈরি করতে হয়েছে। সাহিত্যের প্রথম পাঠটা হয়েছে কতগুলো বিভ্রান্তির ভেতর থেকে। এখানে মুক্তিযুদ্ধের আগে-পরে বাংলাদেশের সাহিত্যের একটা বিরাট অংশ লেখা হয়েছে সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে। আমি ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলছি। কিন্তু আমাদের প্রজন্ম স্বাধীন দেশ পেয়েছে। আমাদের আন্দোলন তাই অন্যখানে। অন্যভাবে।
রিমিঃ
বোধিসত্ত্ব আপনি বলুন?
বোধিসত্ত্ব ভট্টাচার্যঃ

২) রিমিঃ
মোজাফফরের ‘ঘুমপাড়ানো জল’, ‘একটি নদীর গল্প’ পড়লে পাঠকের মনে দেশভাগের স্মৃতি, দাঙ্গা ও সেইসময়েও মানুষের কোমলবৃত্তি—এইসব স্মৃতি নাড়াচাড়া করে। এই যে সময়ের সীমাবদ্ধ সরলরৈখিকতাকে আপনি উল্লেখ করে পাঠককে তার শিকড়ের সন্ধান দিয়েছেন। এর জন্য আপনাকে কতটা পথ এগোতে হয়েছে?
মোজাফফরঃ
আলাদাভাবে আমাকে কিছু করতে হয়নি। আমার যা বয়স তাতে দেশভাগ দেখার প্রশ্ন আসে না। কিন্তু দেশভাগের ইতিহাস আমার রক্তে প্রবাহিত। আমার নানা দেশভাগের পর ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় চলে আসেন। এক খালা তার পরিবার-ভিটেমাটি নিয়ে থেকে যান। আমি মায়ের চোখেমুখে বোনকে অন্যদেশে রেখে আসা ও নিজের স্থানচ্যুতের সেই বেদনা দেখেছি। ‘একটি নদীর গল্প’ গল্পের মাস্টারমশাইকে আমি দেখেছি। নিকট আত্মীয়। দেশ দেশ করতে করতে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে মারা গেলেন। এখানে খুব বেশি বানিয়ে কিছু বলতে হয়নি। ‘ঘুমপাড়ানো জল’ গল্পের পাত্রপাত্রীরা আমার তৈরি, কিন্তু যে বাস্তবতায় তাদের নিক্ষেপ করেছি সেটি আমার তৈরি না। তার ভেতর আমি নিজেও আছি। ১৯৪৭-এ দেশভাগের সেই বেদনা আমরা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি; নানাভাবে।
বোধিসত্ত্বঃ
আচ্ছা, 'একটি নদীর গল্প' প্রসঙ্গে একটা কথা বলি।
রিমি:
বলুন।
মোজাফফর:
বলুন।
বোধিসত্ত্ব:
আমি ছোটোবেলা থেকে ঠাম্মার কাছে মানুষ। আমাদের আদিবাড়ি বরিশালে। প্রচুর গল্প শুনে শুনে বড়ো হয়েছি। আমাদের কালীমন্দিরটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। দেশভাগ বড়ো যন্ত্রণার। তবে কী, যিনি বারো বছর বয়সে কলকাতা এসেছেন, তার ডায়ালেক্টে কিছুটা হলেও ভিটেমাটির জল-হাওয়ার ছিটে লেগে থাকবে, তা যেমন ঠিক, তেমন এটাও ঠিক যে, তিনি স্নানকে কখনওই 'গোসল' বলবেন না। এরকম কয়েকটা জায়গা চোখে পড়ল, যেটায় মূলত ডায়ালেক্টটা নিখুঁত ধরতে না পারার প্রভাব রয়েছে। যেমন ধরুন, বাংলাদেশের বাঙালি বলেন- একটা ফোন দেব। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি বলেন- একটি ফোন করব... এই ধরনের কিছু minor, প্রায় চোখেই পড়ে না, এমন খুঁত রয়েছে গল্পটিতে। কিন্তু সব মিলিয়ে গল্পটি বেশ ভালো। আমি বুঁদ হয়ে পড়ে গেলাম। লেখক গল্পটিকে পাঠকের নাড়িতে ঢুকিয়ে দিতে পেরেছেন। এ বড়ো কম কথা নয়!
মোজাফফর:
অনেক ধন্যবাদ। আমি সহমত পোষণ করছি। ডায়লগে আরও কাজ করার আছে। সব কিছু হয়তো আমি জানিও না। খুব উপকার হল।
বোধিসত্ত্ব:
বেশ। ভৈরব নদী নিয়ে লিখেছেন গল্পটি। ভৈরব তো খুলনা বিভাগের মধ্যে? মোজাফফর:- শাখা নদী হিসাবে একইনামে মেহেরপুরে আছে। এটা আগে নদীয়ার ভিতর ছিল। এখন মৃত। মেহেরপুর অবশ্য খুলনা বিভাগের মধ্যেই পড়ে...
বোধিসত্ত্ব:
আচ্ছা।
৩)রিমিঃ
বোধিসত্ত্ব, আপনার গল্প এইসময়ের কথাই বলে। তবু আপনার লেখায় একটা বিচরণ দেখা যায়। যেমন আপনার ধুলো গল্পে উড়ালপুল দুর্ঘটনাস্থলে নিখোঁজ পুত্রের এক নিশ্চিত বা অনিশ্চিত সমাপ্তির খোঁজে সুরেশ্বর ও বাকী চারজনের যে জার্নি আপনি বর্ণনা করেছেন, তার মধ্যে বহু মানুষের যন্ত্রণা, ব্যথা ফুটে উঠেছে। লেখক মাত্রেই সংবেদনশীল। এই সংবেদনশীলতাকে কিভাবে আপনি একটা জার্নি বা পথচলা যাকে বলে তার মধ্যে ফুটিয়ে তোলেন?
বোধিসত্ত্বঃ
লেখাটি শুরু করার আগে, অর্থাৎ, ভাবনাটি যখন নিজের মধ্যে বিজগুড়ি কাটছে, তখন প্রধান চিন্তা থাকে গল্পের বিষয়বস্তুর উৎস নিয়ে। এবার, বিষয়বস্তু তো আসতে পারে বিভিন্ন উৎস থেকে। সেই উৎসগুলির আধ্যাত্মিকতা, আবেগ, নির্জনতা, খিদে-মৈথুনের কষ্ট, জিলিপি খাওয়ার আনন্দ- এই সবকিছু নিয়েই আমার ভিতরে ভাবনাটি চলতে থাকে। ভাবনাটি সময়ের নিয়মেই কিছুক্ষণ বা অনেকক্ষণ পরে একটি ধারণায় পৌঁছয়। সেই ধারণাটি যদি আমাকে বিস্মিত করে তোলে, তবেই আমি লিখতে বসি। প্রথম কয়েকটা লাইন লেখার পর আমি চেষ্টা করি গল্পটাকে নিজের মতো ছেড়ে দেওয়ার। চরিত্ররা যেখানে যাচ্ছে যাক। যেভাবে থাকছে থাকুক। গল্প তো শুধু লেখকের না। চরিত্রদেরও। একটি গল্পে অন্তত কিছুটা সময়ও যদি চরিত্রদের নিজের মতো করে বিচরণ করতে না দেওয়া যায়, তবে তা প্যাকেটজাত দ্রব্য হতে পারে, শিল্প কখনওই নয়। লেখকের হাতে অবশ্যই রাশটি থাকবে। কিন্তু তা যেন গল্পের গলায় ও চরিত্রের গলায় চেপে না বসে। এখন, এই ব্যাপারটি শুধু লেখক টের পেলেই তো হবে না! তাঁর এই বোধটা দানাসহ ছড়িয়ে দিতে হবে পাঠকের মনের মধ্যেও। কাজটা খুব সহজ নয়। 'ধুলো' গল্পটির শুরু থেকেই সবাই হাঁটছিল। কেউ থামেনি। ওই গল্পটি তো তারা না হাঁটলে হতোই না। সংবেদনশীলতা আমার কাছে পায়েসের মতো। গল্পটি হল কাঁসার বাঁটি।
রিমিঃ
মোজাফফরের ‘ভ্যাদা কবির প্রস্থান’ বোধির ‘অন্ধবাড়ি’ গল্পগুলোর মধ্যে চরিত্রদের আশা আকাঙ্ক্ষা, বিপন্নতার মধ্যেও শেষপর্যন্ত একটা প্রাপ্তি থেকে যায়। না পাওয়া থেকেও এক ধরণের প্রশান্তি আসে পাঠকের মনে। এই জায়গাটা কিভাবে ধরে রাখেন আপনাদের লেখায়?
মোজাফফরঃ
প্রথমেই বলি বোধিসত্ত্ব ভট্টাচার্য'র ‘অন্ধবাড়ি’ গল্পটি ভীষণ ভালো গল্প। খুব টনটনে। আমি মনে করি মোটাদাগে শিল্প হয় দুই ধরনের—একটা হৃদয়নিংসৃত, অন্যটা মস্তিষ্ক সৃজিত। কিন্তু মহৎশিল্প হয় এই দুটোর মিশ্রণে। এই গল্পে সেটা ঘটেছে। ভাষার ম্যারপ্যাঁচে মৃদু উইট গল্পটিকে আরো সতেজ-প্রাণময় করে তুলেছে। কিভাবে এটা সম্ভব হলো সেটি অবশ্য এর লেখক বলতে পারবেন। তবে আমি ‘ভ্যাদা কবির প্রস্থান কবিতা’ নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে পারবো না। এই গল্পের ভ্যাদাকে আমি কখনো দেখিনি। একদিন আচমকা লিখতে বসে লেখা হয়ে গেছে। পাঠক যেভাবে পড়তে পড়তে এগুতে থাকে, আমি তেমন লিখতে লিখতে এগিয়েছি। আগে থেকে একটা শব্দও ভাবা ছিল না বলে নির্দিষ্ট করে কিছুই বলা সম্ভব না। গল্পের শেষে যদি কোনো প্রশান্তি এসে থাকে সেটা গল্পের ভেতর থেকেই এসেছে, পরিকল্পিতভাবে আনা হয়নি। ছোটগল্পে লেখকের একটা পরিকল্পনা বা ছক নিশ্চয় থাকে, কিন্তু শিল্পটা সেই পরিকল্পনার প্রত্যক্ষ সংযোগে সবসময় আসে না।
বোধিসত্ত্বঃ
মানুষকে ঘনিষ্ঠভাবে লক্ষ করতে জানলে দেখা যায়, সে যে কোনও পরিস্থিতিতেই খুব বিপন্ন। খুব স্বস্তিদায়ক মুহূর্তগুলোও বিপন্নতাই নিয়ে আসে তার কাছে শেষমেশ। যেমন ধরুন- বিয়ে করতে গেলেও সে ভাবছে ধুতির খুঁটটা কীভাবে সামলাবে। পুরস্কার পেয়েও সে ভাবছে মঞ্চে উঠে বেফাঁস কিছু বলে ফেলবে কি না, আমতা আমতা করবে কি না। প্রতিটি মানুষই প্রতিটি দিনেই অন্তত বাইশবার বিপন্ন বোধ করে। এখানে বলে রাখা ভাল বিপন্নতা মানেই কিন্তু বিষণ্ণতা নয়। আমরা এই দুটিকে প্রায়শই গুলিয়ে ফেলি। এক করে দেখে ফেলি।
‘অন্ধবাড়ি’ গল্পে এইরকম বিপন্ন মানুষের কথাই এসেছে। তারা যে বিষণ্ণ, তা কিন্তু নয়। অথচ, তাদের বিপন্নতা পাঠকের মনে বিষন্নতা নিয়ে এসেছে, এমন কিছু কথা আমি পাঠকদের মুখ থেকেই শুনেছি। এই বিষণ্ণতা আবার একরকমের প্রশান্তিও। সেইদিক দিয়ে গল্পটিকে ‘একটি উতরে যাওয়া কাহিনি’ হিসাবেই আমরা দেখতে পারি। গল্পটি ক্লিক করে গিয়েছে বলা যায়। অনেক গল্পে বহু চেষ্টা করেও এই সমীকরণটি সফলভাবে আনা যায় না। কোনও কোনও গল্পেই আসে তা। নিজে থেকেই আসে।
৫)রিমিঃ
‘আলো ক্রমে আসিতেছে’ গল্পে ‘আমাকে ছাইমনের কাছে নে চল না রে বকম!’ এই একলাইনের মধ্যে দু’জন নিঃসঙ্গ মানুষের কাছে আসা ও প্রকৃত অর্থেই জীবনের মধ্যে আলো এসে পড়ার যে বর্ণনা বোধি দিয়েছেন, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করছি এই লেখনশৈলী বা ক্রাফট যদি একটু বর্ণনা করেন পাঠকদের জন্য ও পরবর্তী গল্পকারদের জন্য।
বোধিসত্ত্বঃ
আমি গল্প লেখার সময় সবথেকে বেশি ভাবি ভাষা এবং বিষয় নিয়ে। কারণ, আমার মনে হয়, গল্পের বিষয় হল গল্পের আত্মা। আর ভাষাটি হল, সেই আত্মার আলো। ফর্ম নিয়ে কখনওই খুব একটা ভাবিনি। শুধু বুদ্ধি আর চিন্তা দিয়ে গল্প লিখলে তাতে স্বতঃস্ফূর্ততা থাকে না। শিল্পের মধ্যে বীজ থেকে প্রাণের জন্মের মতো স্বতঃস্ফূর্ততা থাকতে হবে। এইটি আমি বিশ্বাস করি। যা আমি দেখছি এবং যা আমি দেখছি না- গল্পের বীজ তো লুকিয়ে থাকে এই সব কিছুতেই। লেখকের কাজ হল ওই বীজটুকু কুড়িয়ে নিয়ে একটা ঠিকঠাক মাটির সন্ধান করা। খিদে পেলে অনেকটা করে খাওয়া। ভালোবাসতে ইচ্ছে করলে অনেকটা করে ভালোবাসা...এই গল্পের বীজটিকেই হতে হবে একটা স্পার্কলিং ব্যাপার। কাহিনি-কাঠামো হল গল্পের কঙ্কাল। কাহিনি যত এগোবে, সেই কাঠামোতে একটু একটু করে গোস্ত, চামড়া মাপে মাপে লেগে যাবে। আসবে রক্ত। তার বয়ে যাওয়ার শব্দ। অবশ্য, এই ব্যাপারগুলো এত নিয়ম মেনে নাও ঘটতে পারে। ইনফ্যাক্ট, সেটাও তো একটা গল্পই। আমি গল্প লিখতে গিয়ে দেখেছি, পরাবাস্তব বা জাদুবাস্তব বারবার চলে আসে। ব্যাপারটা আমি উপভোগ করি লিখতে। লেখার মধ্যে দর্শনও আমাকে টানে। তবে, গল্প লেখার সময় দর্শন বা তথ্যের অবতারণা করতে চাইলে তা করতে হবে খুব সতর্কভাবে। এমনভাবে করতে হবে, যাতে কখনওই মনে না হয়, লেখক জ্ঞান দিচ্ছে। পায়েসে যেমন চিনি মিশে থাকে, গল্পে তথ্য বা দর্শন থাকুক তেমনভাবেই। এগুলো আমি বিশ্বাস করি।
৬)রিমিঃ
একই প্রশ্ন মোজাফফরের ‘অন্ধকারে বসে থাকে বনসাই’ ও ‘একটি রাতের গল্প’ সম্পর্কে রাখছি। গল্পলেখার এই ক্রাফট বা শৈলী সম্বন্ধে যদি আপনার বক্তব্য রাখেন।
মোজাফফরঃ
উল্লিখিত দুটি গল্পে ঐতিহ্যগত বর্ণনাশৈলীর প্রয়োগ ঘটেছে। ‘অন্ধকারে বসে থাকে বনসাই বাবা’ গল্পের গল্পটা আমার কিন্তু শৈলীটা মার্কিন গল্পকার জেরোম ওয়াইডম্যানের ‘মাই ফাদার সিটস্ ইন দ্য ডার্ক’ গল্প থেকে নেয়া। সেই গল্পের বিষয় মানুষের সঙ্গে ইতিহাসের সম্পর্ক, এখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের। গল্পের শৈলীতে আমার নিজস্বতা এসেছে ব্যক্তি-উপলব্ধি থেকে। বাবাকে তখন সদ্য হারিয়েছি। তিনি গাঁয়ে থাকতেন, আমি শহরে। বাবা চলে যাওয়ার পর আমি মাঝে মাঝে আমার ভেতর বাবার উপস্থিতি টের পেতাম। দ্বৈতসত্তার মতো। তিনি আমার চারপাশের কংক্রিটজীবন মানতে পারছেন না, বিদ্রোহ করছেন ছকআঁটা উন্নতির। কিন্তু বিদ্রোহের ভাষা মৌন। এই মৌনভাষা থেকে গল্পের বর্ণনা শৈলীটা এসেছে। আর ‘একটি রাতের গল্প’ ট্যাডিশন্যাল ফর্মে লেখা। আমি এই গল্পে ফর্ম নিয়ে বেশি খেলে গল্পের বিষয়বস্তু থেকে পাঠকের মনোযোগ ঘোরাতে চাইনি। সচেতনভাবে চেয়েছি পাঠক যেন গল্পের দিকে ফোকাসড থাকে। আপনি যখন মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে লিখবেন তখন আপনি খুব বেশি স্বাধীনতা পাবেন না। আমি মনে করি, গল্পটা মুখ্য হলে এবং সবধরনের পাঠকের জন্য লেখা হলে ফর্মটা সরল রাখায় ভালো। আবার অনেক সময় আমি এটাও বলি, সরল গল্প পাঠকের মনে দাগ কাটবে তখনই যখন ফর্মটা অন্যরকম হবে। আমার ‘বাঁশিওয়ালা মজ্জেল’ গল্পটিতে জাদুবাস্তবতার বিষয়টি এসেছে ঐ কারণেই। পাঠককে চমৎকৃত করা গল্পের মূল উদ্দেশ্য না, কিন্তু ঐ মোচড়টা না থাকলে মানুষ গল্পটি পড়ে আরাম পেত না।
বোধিসত্ত্ব:
আমি বছর দুয়েক আগে একটি গল্প লিখেছিলাম। নাম- বুরবুদ। ওয়াইডম্যানের 'মাই ফাদার সিটস ইন দ্য ডার্ক' পড়ে অসম্ভব প্রভাবিত হয়েছিলাম তখন। মনে হয়েছিল, ঠিক ওরকমভাবেই একটা গল্প লিখি। কিন্তু শুরু করার পর দেখলাম, রাস্তা বেঁকে গেল। না শৈলি, না বিষয়, না ভাষা- কোনও কিছুতেই 'মাই ফাদার সিটস ইন দ্য ডার্ক'-এর সঙ্গে 'বুরবুদ' গল্পটির একফোঁটা মিল নেই। এটাই সাহিত্যের মজা। শুরু করি একটা কিছু ভেবে। তারপর, লিখতে লিখতে লিখতে লিখতে দেখি, এমন একটা কথায় পৌঁছে যাচ্ছি, যা আমি আগে কখনও ভাবিনি।
৭)রিমিঃ
এইবার একটু অন্য প্রসঙ্গে যাচ্ছি। বোধি আপনি একজন সাংবাদিক। মোজাফফর আপনিও একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত। এই যে ভিন্ন ধরণের পেশা আপনার লেখালেখিকে কিভাবে প্রভাব ফেলে? যেমন ধরুন গল্পকার ও সাংবাদিকতা এর মধ্যে কি কোন যোগাযোগ বা স্ববিরোধিতা আছে?
বোধিসত্ত্বঃ
আমি এক্ষেত্রে আমার উত্তরটা দিই। সাংবাদিকতা এবং সাহিত্যের কোনও প্রথাগত শিক্ষা নেই আমার। আমি পড়াশোনা করেছি গণিত নিয়ে। কিন্তু, এ কথাটি অনস্বীকার্য যে, সাংবাদিকতা আমাকে এমন অনেক কিছু শিখিয়েছে, যা কাজে লেগেছে গল্পকার হিসাবে। কী রকম? একটু ব্যাখা করি। যা আমরা দেখছি এবং লিখছি, তা হল সাংবাদিকতা। আর গল্প হল সেটাই, যা আমরা দেখছি এবং যা দেখছি না- এই দুটিকে একসঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া। তবে, এ কথাও ঠিক, ফিল্ডে নেমে দিনের পর দিন ধরে সাংবাদিকতা চালিয়ে যেতে যেতে নিয়মিত উন্নত সাহিত্য সৃষ্টি করা খুব সহজ না। প্রায় অসম্ভবই। একজন মতি নন্দী, একজন মার্কেজ, একজন শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম। খবরের কাগজে গত চার বছরে আমার প্রকাশিত ছোটো-বড়ো গদ্যের সংখ্যা ছ'শো মতো। এখানে লিখতে লিখতে শিখেছি ডেডলাইনের গুরুত্ব। আর শিখেছি, সম্পাদনা। অর্থাৎ, লেখার কোন অংশটি ফেলে দেব, কোন অংশটি আরেকটু গুছিয়ে লিখব, কোন অংশটি যেরকমভাবে আছে সেরকমই রাখব- এইসব। একজন লেখকের ক্ষেত্রে এই সম্পাদনার বোধটি থাকা অসম্ভব জরুরি। আমি গল্প লিখছি দশ বছর ধরে। এটা সাহিত্যের জগতে তেমন কোনও সময়ই না আসলে। আরও অন্তত পঁচিশ বছর টানা লিখে যেতে পারলে তখন এই সম্পাদনার মেধাটি আমার মজ্জায় আরো সফলভাবে এঁটে বসবে সম্ভবত।
মোজাফফরঃ
আমার কর্মজীবনের শুরুটা হয়েছে সাংবাদিকতা দিয়ে। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র হয়েও আমি সচেতনভাবে এই পেশাটা নির্বাচন করেছিলাম লেখালেখির সুবিধা হবে ভেবে। তা কিছুটা হয়েছেও। সংবাদপত্রের ভাষা সাহিত্য না হলেও একটা ন্যারেটিভ থাকে বটে। কখনো কখনো এতো পাওয়ারফুল ন্যারেটিভ থাকে যে সত্যকে একদম বদলে দেয়। আপনার চোখের সামনেই ঘটনাটা ঘটলো, কিন্তু পরদিন কাগজ খুলে দেখলেন, আপনি যা দেখেছেন তা ঘটেনি! যা ঘটেছে তা আপনি দেখেননি! এই ‘পাওয়ারটা’ কখনো কখনো কথাসাহিত্যে কাজে লাগে। যেমন আমি সচেতনভাবে জার্নালিস্টিক অ্যাপ্রোস কাজে লাগিয়েছি ‘লাশটি জীবিত’ গল্পে। আমি নিজে গল্পকার ও সাংবাদিকতার ভেতর স্ববিরোধিতার চেয়ে যোগাযোগটাই বেশি দেখি। এটা তো অনেক পুরানো প্রতিষ্ঠিত কথা যে সাংবাদিকতা সাহিত্য না। বটেই। কিন্তু আধুনিক সাহিত্য সাংবাদিকতার কাছে এবং সাংবাদিকতা সাহিত্যের কাছে ঋণী অনেক বলে আমি মনে করি।
8)রিমিঃ
প্রতিষ্ঠানমুখিনতা কি আজকের প্রজন্মের লেখায় কোন ছাপ ফেলছে? আমি বলতে চাইছি, এই যে সবে লিখতে এসে আজ গল্পকাররা পুরস্কার পাচ্ছেন, বিভিন্ন সভা সমিতিতে আমন্ত্রণ পাচ্ছেন, এর ফলে তাঁদের লেখায় কি কোন প্রভাব পড়ছে? পড়লে কি ধরণের?
বোধিসত্ত্বঃ
আমি একদম প্রথম থেকেই প্রতিষ্ঠানের লেখক। আমার কখনও অসুবিধা হয়নি। এটুকু বলতে পারি। কারণ, দিনের শেষে আমি কী লিখছি, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। আমি কোথায় লিখছি বা কোথায় যাচ্ছি বা কী করছি- লিখতে পারলে এগুলো সব পিছনের বেঞ্চে চলে যায়।
রিমিঃ
হ্যাঁ, বোধিসত্ত্ব এটা আপনি একদম খাঁটি কথা বলেছেন। লিখতে পারলে বাকি সব পিছনের বেঞ্চে চলে যায়।
মোজাফফরঃ
কলকাতার কথা বলতে পারবো না, তবে বাংলাদেশের কথা বলতে পারি। প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের লেখকদের খুব বেশি ডাকে না। অন্যদিকে লেখকদের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার বিষয়টি এখানে ঠিকমতো ফলেনি। প্রতিষ্ঠান বরাবরই জনপ্রিয়তার পেছনে ছোটে। ফলে বিনোদন তারকা বা ক্রিকেটারদের নিয়ে প্রতিষ্ঠানের যত আগ্রহ। এই কারণে একালের তরুণ মেধাবীরা ওসব পেশায় নাম কামানোর জন্যে হন্যি হয়ে ছুটছেন। আর সেটি না হলে ব্যাংকে চাকরি জুটিয়ে নিচ্ছেন মোটা মাইনে পাওয়ার জন্য। সাহিত্য যখন পৃষ্ঠপোষকতা হারাচ্ছে তখন আমি পুরস্কার প্রদান, সভা-সমিতি এসবের সমালোচনা করি কোন সাহসে? ওগুলো যতটুকু আছে, তাও যদি না থাকে তাহলে তো কর্পোরেট-টার্মে সাহিত্যের ব্র্যান্ডিং একদম থাকবে না। তবে সাহিত্যের ক্ষতি যদি কিছুতে হয়ে থাকে সেটি হলো প্রযুক্তি। তরুণদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আসক্তি। এটি কেবল সাহিত্য না, সব ধরনের শিল্পমাধ্যমের ক্ষতি করছে। বিশ্বজুড়েই। প্রকাশনা শিল্পই তো হুমকির মুখে এখন। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি বলে তো কিছু আর থাকছে না। কোনো সিডি/ডিভিডি/ ক্যাসেট বিক্রি হয় না। ইউটিউবে সব ফ্রি পাওয়া যায়। একদিকে জীবনধারণের খরচা বাড়ছে অন্যদিকে সস্তা হচ্ছে শিল্প। মূল সমস্যা এখানেই।
৯.রিমিঃ
সমসাময়িক গল্পকারদের লেখার বিষয়ে কিছু বলুন।
বোধিসত্ত্বঃ
সমসাময়িক লেখকদের লেখা আমি পড়ি খুঁটিয়ে। সে তিনি যে ভাষাতেই লিখুন না কেন। তিনি তো আমার সময়েই লিখছেন! এক্ষেত্রে আরেকটা বলার- 'সমসাময়িক' বা 'সমবয়সী' শব্দদুটোও আমরা গুলিয়ে ফেলি ভীষণ। 'সমসাময়িক' বললেই আমাদের অবচেতনেই এই বোধটি প্রগাঢ়ভাবে কাজ করে যে, নিশ্চয়ই এমন কোনও লেখকের কথাই জানতে চাওয়া হচ্ছে এখানে যিনি আমার বয়সী বা আমার কাছাকাছি বয়সী। আসলে তো তা নয়। যিনি আমার সময়ে লিখছেন, তিনিই আমার সমসাময়িক। তাঁদের মধ্যে বাংলায় যাঁরা লিখছেন সেখানে দেবেশ রায় আছেন, হাসান আজিজুল হক আছেন, মণীন্দ্র গুপ্ত আছেন, অমর মিত্র আছেন, স্বপ্নময় চক্রবর্তী আছেন, অভিজিৎ সেন আছেন, আফসার আহমেদ আছেন, শোভন তরফদার আছেন, নলিনী বেরা আছেন, অনিতা অগ্নিহোত্রী আছেন, আবুল বাশার আছেন, বিপুল দাস আছেন, রবিশঙ্কর বল আছেন, কুলদা রায় আছেন, তৃপ্তি সান্ত্রা আছেন, মানব চক্রবর্তী আছেন, সৌরভ মুখোপাধ্যায় আছেন, বিনোদ ঘোষাল আছেন, ইন্দ্রনীল সান্যাল আছেন, শাহযাদ ফিরদৌস আছেন, নাসরীন জাহান আছেন, নীহারুল ইসলাম আছেন, জয়ন্ত দে আছেন, সাদিক হোসেন আছেন, অনির্বাণ বসু আছেন, শমীক ঘোষ আছেন, রোহণ ভট্টাচার্য আছেন। আছেন আরও অনেকেই। এঁদের প্রত্যেকের লেখা পড়েই আমি শিখেছি। এঁদের লেখা আমাকে পাঠক হিসাবে সমৃদ্ধ করে তুলেছে বারবার। আমি পড়তে ভালোবাসি। পড়ি গুছিয়ে এবং খুঁটিয়ে। কারও লেখা একবারও মনে ধরলে আমি তাঁর পাঠক।
মোজাফফরঃ
বর্তমানে পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি করে ছোটগল্প লেখা হচ্ছে। ঢাকায় এবছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ৫শতাধিক ছোটগল্পের বই বের হয়েছে। সমসাময়িক অনেকের গল্প পড়েছি; পড়ছি। গল্পের বর্ণনা ও বয়ানরীতিতে অনেক পরিবর্তন চোখে পড়ছে। এই পরিবর্তনটা সবসময় যে ভালো হচ্ছে তা নয়, কিন্তু এটা সময়ের দাবি। এখান থেকে একটা শৈলী ঠিকই দাঁড়িয়ে যাবে। তবে অনেকের গদ্য ঠিক যুতের না। আমার মনে হয়, মোটাদাগে বাংলা সমসাময়িক ছোটগল্পে গদ্যে দুর্বলতা আছে।
১০.রিমিঃ
আপনার অগ্রজ ও সমসাময়িক লেখকদের লেখার মধ্যে কি কোন ধারাবাহিকতা খুঁজে পান, না কি এখনকার লেখায় ছকভাঙার একটা প্রচেষ্টা লক্ষ করেন?
বোধিসত্ত্বঃ
যা কিছু প্রথাগত, তাকেই আমরা 'ছক' বলে ডাকি। 'ছক' আসলে একটি মনোটনাস খাঁচা। তার বাইরে একজন শিল্পীকে তো কখনও না কখনও বেরোতেই হবে। নইলে তাঁর লেখা পড়ব কেন? যাঁদের নাম করলাম, তাঁরা তো তাই করেছেন। করে চলেছেন ক্রমাগত। তার জন্যেই তাঁরা আমার সমসাময়িক অগ্রজ।
মোজাফফরঃ
ছকভাঙার প্রচেষ্টা নিশ্চয় আছে। সবসময়ই তা থাকে। নতুন গতিপথের সন্ধান করা সাহিত্যের চিরকালীন চরিত্র। রবার্ট ফ্রস্ট অক্তাবিও পাসকে বলেছিলেন, প্রত্যেক কবি জন্ম নেন নতুন কিছু বলার জন্যে। কথাটা শিল্পের সব শাখায় খাটে। কিন্তু সাহিত্যের ঐতিহ্য বা ধারাবাহিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে নতুন সাহিত্য সৃষ্টি হয় না। ভালো এবং নতুন সাহিত্যের মধ্যে পূর্বের যত ভালো, সেটা থাকে। বর্তমান বাংলা সাহিত্যে ছোটগল্পে মোটাদাগে বড়রকমের পরিবর্তন এসেছে। এটা হয়েছে সময় ও বাস্তবতা বদলেছে বলে। গত পঞ্চাশ বছর আগের বাস্তবতার গল্প এখন লেখা হবে কেন?
১১.রিমিঃ
আপনার প্রিয় দুটি গল্পের বিষয়ে কিছু বলুন, প্লট, গল্পের ক্রাফট ইত্যাদি বিষয়।
বোধিসত্ত্বঃ
একজন লেখকের পক্ষে নিজের গল্প বিষয়ে কিছু বলা সত্যিই খুব কঠিন। তার কারণ, যত বড়োই লেখক হন না কেন, নিজের লেখার বিষয়ে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ মতামত দেওয়া সহজ কাজ নয়। তবে অন্য কিছু কথা বলা যেতেই পারে... আমি বেছে নেব আমার দুটো গল্প। অন্ধবাড়ি এবং দুই বাবা ও বেলগাছ। 'অন্ধবাড়ি' আয়তনে একদম ছোটো। আঠারোশো-উনিশশো শব্দের গল্প। গল্পটি অত্যন্ত তাড়াহুড়োর মধ্যে এক বেলায় লিখেছিলাম খবরের কাগজের জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, যে সংখ্যার জন্য গল্পটি অত তাড়াহুড়ো করে লেখা, সেই সংখ্যাটি শেষ মুহূর্তে ক্যানসেল। পরে এই গল্পটি 'ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট' ( NBT )-এর গল্প সংকলনে জায়গা পায়। আর খবরের কাগজে ওই সংখ্যাটি আবার পরে হয়। আমি তখন অন্য একটি গল্প দিয়েছিলাম। 'অন্ধবাড়ি' গল্পটি আমার কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণেই- এটি হল আমার একমাত্র গল্প, যা লিখতে আমার একদিনেরও কম সময় লেগেছিল। নইলে আমি একটি গল্প লিখতে সময় নিই। গল্পটির চরিত্রের পায়ে ফুটে যাওয়া চোরকাঁটার ব্যথা আমি টের পেয়েছিলাম। 'দুই বাবা ও বেলগাছ' খবরের কাগজে একটি স্পেশাল ইস্যুতে বেরোয়। গল্পটি নিয়ে মিশ্র-প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। এই গল্পটি আমার বিশেষ প্রিয়। দীর্ঘদিন ধরে একটু একটু করে লিখেছিলাম। অনেকদিন ফেলে রেখেছি। আবার কেটে লিখেছি। এই চরিত্রদের মধ্যে কয়েকজনকে আমি দেখেছি। বেলগাছ আর তক্ষক তো আমার বাড়িতেই রয়েছে। গল্পটি লেখার প্রায় দেড় বছর বাদে প্রকাশিত হয়। নিজের গল্প নিয়ে আর কী বলব! পাঠকই যা বলার বলবেন! মোজাফফর যেমন 'অন্ধবাড়ি' নিয়ে বললেন। ভালোলাগল। লেখার পরে পাঠ-প্রতিক্রিয়া পেতে কার না ভালোলাগে!
মোজাফফরঃ
প্রথমে বলি ‘লাশটি জীবিত’ গল্পের কথা। ইচ্ছে করেই লিটারারি জার্নালিজম টেকনিকটা অ্যাপ্লাই করেছি। এই গল্পে এই ধরনের টেকনিকের দরকার ছিল। ঐতিহ্যগত নির্মাণশৈলী ব্যবহার করলে গল্পটা এতটা কমিউনিকেটিভ হত না। কথক হিসেবে যিনি আছেন তিনি দু-একটি যায়গায় উঁকি দিয়ে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে কথা বলেন। এর কারণ—গল্পটা খুব মর্মস্পর্শী হওয়ায় পাঠক দ্রুত লাশের বা লাশের পরিবারের পক্ষ নিয়ে হাহাকার করতে শুরু করে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। গল্পে লাশটির নাম আমি দিইনি কারণ আমরা তাকে চিনি না। আমরা শ্রমিকদের ব্যক্তিসত্তা হিসেবে চিনতে চাই না। কিন্তু ভবন মালিকদের আমরা চিনি। আমরা শেষপর্যন্ত আগ্রহ প্রকাশ করি যে খুন হল তাকে নিয়ে নয়, খুনিকে নিয়ে। যার নির্দেশে খুনটা হলো, তাকে চেনা দরকার। এই চেনার প্রবণতা অনেক সময় ক্রিমিন্যালের প্রতি আমাদের সহানুভূতিশীল করে তোলে। অনেকে আছেন গল্পটা জেনে তারপর লিখতে বসেন। আবার অনেকে আছেন গল্পটা লিখতে লিখতে জানেন। আমি দ্বিতীয় দলে। আমার লেখা বেশিরভাগ গল্পই আমি লিখতে লিখতে নির্মাণ করেছি। যেমন ‘জীবনটা গল্প অথবা মরীচিকার’ গল্পটি। আমি জানতাম দু’জন নাগরিক মানুষের গল্প লিখব। বাকিটা জানতাম না। এরপর আমি দু’জন চরিত্র নির্মাণ করলাম। আমি দেখলাম, নিঃসন্তান এই দম্পতি তাদের কল্পজগতে দু’জন সন্তানের জন্ম দিয়েছে। তারা মেটারিয়েলিটির মধ্যে বসবাস করে। আমি এমনটি চাইনি, কিন্তু তারা এভাবেই বেছে নিয়েছে। কল্পসন্তানের পছন্দ অপছন্দ নিয়ে তারা ঝগড়া করে। অনেক সময় সিরিয়াস ঝগড়া। সন্তানের মধ্য দিয়ে তারা অতীতচারী হয়। টাইম এন্ড স্পেস তখন ভেঙে যায়। গল্পটা আমি প্রাথমিক অবস্থায় এখানেই শেষ করি। বহুদিন পর, আমার এক পরিচিত কাপুল জানালেন, তারা সন্তান এক্সপেক্ট করছেন। খবরটা বাড়ি এসে আমি আমার এই গল্পের পাত্রপাত্রিকে দিলাম। অর্থাৎ গল্পের লেজ অংশটুকু আবার যোগ করলাম। দেখলাম, আমার বাস্তবে দেখা মানুষদুটোর মতো এরা প্রথম প্রথম খবরটি শুনে আনন্দ পেলেও পরে আর আনন্দ পায়নি। কল্পলোকের সন্তানকে হারানোর ভয় তাদের পেয়ে বসে। আমি সেটা লিখেছি মাত্র। গল্পের চরিত্রদের এমন পোজেসিভ আচরণের কারণে গল্পটি শেষ করতে আমাকে তিনজন ন্যারেটরের সাহায্য নিতে হয়েছে। গল্পের দুজন পাত্র-পাত্রী দুই অংশের ন্যারেটর। আর শেষ অংশের ন্যারেটর আমি নিজেই। এভাবেই গল্পটি লেখা হয়েছে।
১২)রিমিঃ
গল্প নিয়ে এই আড্ডা যেন শেষ হবার নয়। তবু শেষ তো করতেই হয়। এই আড্ডার শেষ প্রশ্ন আপনাদের দুজনের কাছেই রাখছি। গল্প রচনার ক্ষেত্রে কথ্য ভাষা ও সাহিত্য ভাষা এই দুটো কি সচেতনভাবে পৃথক রাখলে লেখার সাহিত্যগুণ বজায় থাকে? আবার এই দুইয়ের মিলনে এক নতুন সাহিত্যভাষার জন্ম নেয় বলে আপনাদের মনে হয়?
বোধিসত্ত্বঃ
এটা নির্ভর করবে আমি কী নিয়ে গল্প লিখছি, গল্পের চরিত্র কারা, গল্পটা মূলত কী ধর্মী- এই সব বিষয়গুলোর উপর। তবে, এই প্রসঙ্গে আরেকটি কথার উল্লেখ না করলেই নয়। কথ্য ভাষা আসলে কী? যা আমরা কথোপকথনের সময় ব্যবহার করি। তাই তো? এবার সেই ভাষাটিকে আমরা যদি গল্পের মধ্যে নিয়ে আসি, তখন তো তা সাহিত্যেরই অঙ্গ হয়ে উঠছে, তাই না? রাস্তায় দাঁড়িয়ে একজন একটি গালাগালি দিলে তা কথ্যভাষার মধ্যেই পড়ে। কিন্তু, যখনই কোনও গল্পের মধ্যে ওই শব্দটা আমি লিখছি, তখনই তা মিশে যাচ্ছে গল্পের শরীরে। মিশে যাচ্ছে সাহিত্যের ঘাম-রক্তে। তখন কেন তাকে সাহিত্যের ভাষা বলব না? সাহিত্য বহতা নদীর মতো। সে সব কিছুকেই গ্রহণ করে। সেখানে ছেঁড়া চটি, ফুলে ঢোল হয়ে যাওয়া বাসি মড়া থেকে শুরু করে বর্ষার ইলিশ অবধি সবাই ভেসে থাকতে পারে। কিন্তু শেষমেশ নদীটি কাকে তার গর্ভে স্থান দেবে এবং কাকে পাড়ে ফেলে দিয়ে চলে যাবে চিরকালের মতো, তা নির্ভর করবে স্রোত এবং সময়ের ওপর। ভাষায় যা যা শব্দ আছে, সবই লেখা যায় গল্পে। এবার সেই শব্দগুলো ঠিক কীভাবে লিখলে গল্পটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে, তা-ই মূল ভাবনার বিষয়। এক্ষেত্রে, তাই মনে হয়, কথ্য বা সাহিত্য- এভাবে ভাষার শ্রেণীবিভাগ করার প্রয়োজন নেই। 'মা নিষাদ' যেমন হতে পারে সাহিত্যের ভাষা, 'বরাহনন্দন'ও তেমনই সাহিত্যেরই ভাষা হয়ে উঠতে পারে অনেক বলিষ্ঠভাবে। নির্ভর করছে, সংশ্লিষ্ট গল্পের প্রয়োজনে আমি কতটা লিখব এবং কতটা লিখব না, তার ওপর... যা-ই লেখা হোক না কেন, লেখার সময় লেখকের এই বিশ্বাসটুকু থাকা প্রয়োজন যে- আমি যে লেখাটা লিখছি, তা আগে কেউ লেখেনি বা আমি যেভাবে লিখছি, সেইভাবে আর কেউ লেখেনি...অন্তত লেখার সময় লেখকের মনে এই বিশ্বাসটুকু থাকা প্রয়োজন। নইলে লেখা হবে না।
মোজাফফরঃ
অনেকে কথ্যভাষায় বা প্রচলিত ব্যবহৃত ভাষায় সাহিত্যরচনার পক্ষপাতী। এখানে আমার দ্বিমত আছে। শব্দের সঙ্কুচিত বিশ্বে লেখালেখিটা মামুলি বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কথ্যভাষা যদি টেকো হয়, তবে সাহিত্যভাষা হতে হবে সুকেশযুক্ত। শুধু ব্যক্তিবোধ বা গল্পের উন্মোচন নয়, শব্দের সম্ভাবনাকে সম্প্রসারণ করাও সাহিত্যের কাজ।
এটা তো ঠিক যে, রবীন্দ্রনাথ যদি কথ্যভাষায় লিখতেন, তবে ‘রবীন্দ্রনাথ’ হতে পারতেন না। শেকসপিয়ার পৃথিবীজুড়ে খ্যাতি পেয়েছেন তাঁর তৈরিকৃত ভাষাশৈলীর কারণেই। শেকসপিয়রের নাটক থেকে ভাষার কারুকাজ বের করে সরল করে দেন, কিচ্ছু থাকবে না সেখানে। শ্রদ্ধেয় আবদুশ শাকুরকে একবার তাঁর ‘তৈরি’ ভাষা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম। বলেছিলাম, আপনার সাহিত্যভাষা তো আরোপ করা! উনি অনেক কথার ভেতর বলেছিলেন--লক্ষ্য করো সল বেলো, হেমিংওয়ের দিকে। ভাষার ডালপালা ছাঁটতে গিয়ে তাঁরা চিন্তার প্রবাহকেও সংকুচিত করে ফেলেছেন।
সমসাময়িক কথাসাহিত্যে ভাষা তার সব সাজসজ্জা ঝেড়ে খুব সাদামাটাভাবে (as it is) উপস্থিত হচ্ছে। ভাষার কাব্যময়তা কমে মেদহীন ঝরঝরে গদ্য এই সময়ের সাহিত্যের ভাষাগত বৈশিষ্ট্য। সেটা কেউ কেউ চমৎকারভাবে করেছেনও। কিন্তু মোটা দাগে আমার মনে হয়েছে, এই প্রজন্মের লেখকদের ভাষাগত দুর্বলতা আছে। সীমিত শব্দভাণ্ডার ও পাঠযোগে অনেকে গল্প-উপন্যাস লেখার চেষ্টা করছেন। কথ্যভাষায় বেশি জোর দিতে গিয়ে সাহিত্যিক-ভাষার যে সৌন্দর্য সেটি কমে যাচ্ছে সমসাময়িক গদ্যসাহিত্য থেকে।
পরিচিতি
মোজাফফর হোসেনঃ
মোজাফ্ফর হোসেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এমএ। মূলত কথাসাহিত্যিক। বিশেষ আগ্রহ অনুবাদ ও সমালোচনা সাহিত্যে। এ পর্যন্ত তিনটি গল্পগ্রন্থ এবং একটি করে প্রবন্ধ, অনূদিত গল্পসংকলন ও সম্পাদিত গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। কাজ করছেন বাংলা একাডেমিতে। সম্পাদনা করছেন শাশ্বতিকী নামক সাহিত্যপত্রিকা।
প্রকাশিত গ্রন্থ দ্বিধা (গল্পগ্রন্থ, অন্বেষা প্রকাশনী ২০১১), আদিম বুদবুদ অথবা কাঁচামাটির বিগ্রহ (গল্পগ্রন্থ, রাত্রি প্রকাশনী ২০১২), বিশ্বগল্পের বহুমাত্রিক পাঠ (গল্পবিষয়ক অনুবাদ ও আলোচনা গ্রন্থ, অনুপ্রাণন প্রকাশনী ২০১৪), আলোচনা সমালোচনা, প্রসঙ্গ কথাসাহিত্য (প্রবন্ধ সংকলন, অনুপ্রাণন প্রকাশনী ২০১৫), অতীত একটা ভিনদেশ (গল্পগ্রন্থ, বেহুলা বাংলা ২০১৬), বিশ্বসাহিত্যের নির্বাচিত প্রবন্ধ (সম্পাদিত, দেশ পাবলিকেশনস ২০১৭)
বোধিসত্ত্ব ভট্টাচার্যঃ
অঙ্কের ছাত্র হলেও বর্তমানে পেশা সাংবাদিকতা। কথাসাহিত্যে বিশেষ আগ্রহ। ছোট গল্প, প্রবন্ধ ও সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে তাঁর বিচরণ। প্রকাশিত গল্পসঙ্কলন ‘অন্ধবাড়ি’(আদরের নৌকা, পাবলিকেশন ২০১৭), ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট অফ ইণ্ডিয়া(NBT) প্রকাশিত নবলেখনমালা বাংলা গল্প সঙ্কলন(২০১৬)-এ প্রকাশিত গল্প-‘অন্ধবাড়ি’।
রিমি মুৎসুদ্দী
দিল্লীতে থাকেন। পেশা অধ্যাপনা ও সাংবাদিকতা।
গল্পকার, গবেষক, প্রবন্ধকার।
5 মন্তব্যসমূহ
ছোটগল্পের অনেক খুটিনাটি দিক নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে দেখছি। তবে একটা বিষয় নিয়ে তোমরা গল্পকার কিংবা উপন্যাসের লোকেরা কথা বল না, সেটা হচ্ছে আমাদের (মানে বাংলাদেশের) আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলো কেন তোমাদের গল্পে আসে না। এখানকার গল্পকার-ঔপন্যাসিকরা তো সেই আঞ্চলিক বৃত্তেই আটকে আছে। অথচ কত সম্ভাবনা ছিল, আমাদের আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে গল্প-উপন্যাস লেখার।
উত্তরমুছুনএক. দুশো বছরের ব্রিটিশ উপনিবেশ (প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি এবং শাসন-শোষণ)
দুই. যুদ্ধোত্তর জেনেভাক্যাম্প, সেখানকার অমানবিকতা এবং তাদের ভবিষ্যৎ পরিণাম
তিন. বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা নিয়ে আছে।
এছাড়াও আরো খুটিনাটি অনেক বিষয় তো আছেই, যা আন্তর্জাতিক হয়ে উঠতে পারে।
হ্যাঁ গল্পের ভাষা, কিংবা বুনোন কৌশল নিয়ে তো মতপার্থক্য থাকতেই পারে এবং আছেও। একজন ন্যারেশন চান, আরেকজন হয়তো অসংখ্য বিষয়কে এক সুতোয় গাঁথতে চান। এসব তো কলাকৌশলগত দিক। কিন্তু বর্তমানের কিংবা অতীতের এই যে স্কেপিং চলছে বাংলা গল্প-উপন্যাসে, সেটা আমার কাছে মনে হয়, এখানকার লেখকদের সাহসের দারুণ অভাব। প্রকৃত কথাটা না বলে কিংবা নিজের সময়কে বাদ দিয়ে একধরনের স্কেপিং করে চলেছেন এখানকার গল্পকার-ঔপন্যাসিকরা।
তারপরও তোমাদের আলোচনা পড়লাম, ভালো লাগলো।
Dilruba Ahmad --
উত্তরমুছুনWill read and let u know
Like · Reply · April 17 at 2:06pm
Mojaffor Hossain সিওর। প্লিজ!
Monika Chakraborty--
valo laglo.
Mojaffor Hossain--
thanks didi
Ishrat Tania--
Bodhisatwa, Rimi দি, Mojaffor ভাই- ব্যাস আর কি চাই? পড়ব অবশ্যই :)
Mojaffor Hossain--
haha. thanks
Like · Reply · April 17 at 9:36pm
Ruma Modak--
পড়া হয়েছে ইতোমধ্যে। দুই বাংলার অভিন্ন ভাষার ভিন্ন সংস্কৃতির সাহিত্য ভাবনার মিথস্ক্রিয়া উপভোগ্য ভীষন, বোধকরি সঞ্চালনার মুন্সিয়ানা বের করে আনতে পেরেছে দুই লেখকের এই অন্তর্গত ভাবনার অন্তস্রোত
Like · Reply · 2 · April 17 at 2:55pm
Mojaffor Hossain
thanks for reading.
Riton Khan--
Joan Didion তার Slouching Towards Bethlehem: Essays বইটিতে বলছেন "আমরা বেঁচে থাকার জন্যই গল্প বলি"। এবং Gabriel García Márquez ও বলে গেছেন জীবনে বেঁচে থাকাটাই সবকিছু নয়, বরং কিভাবে এই বেঁচে থাকাটা বয়ান করা যায় সেটাই আসল। আমার আরেক প্রিয় লেখক Susan Sontagও বলেছেন, "To tell a story is to say: this is the important story".
Mojaffor Hossain --
কথাগুলো খুবই সত্য। ধন্যবাদ রিটন ভাই।
উত্তরমুছুনহামিম কামাল--
দুজনের ভাবনা, উপলব্ধি দু’রকমের ভালো লেগেছে। চমৎকার।
Like · Reply · 1 · April 17 at 6:19pm
Mojaffor Hossain --
thanks for reading bro
Mahbub Mayukh Rishad-
ভালো লেগেছে
Mojaffor Hossain --
thanks
Marina Nasrin --
পড়লাম। সাহিত্য নিয়ে দুজনের দুধরণের বক্তব্য হলেও কোথাও এসে ভাবনাগুলো চমৎকার ভাবে মিলেও গিয়েছে । শুভেচ্ছা ।
Debasis De-- khub valo laglo
Ruhul Mahfuz Joy বেশ ভাল একটা ইন্টারভিউ।
Biplab Biswas পুরোটাই পড়লাম। গল্প ও গল্পকারদের নিয়ে আলোচনা পড়তে কেমন যেন মুষড়ে পড়ি। দীর্ঘদিন এই খেবড়ো পথে আছি। মুজফফর বলছেন,প্রচুর গল্প লেখা হচ্ছে; প্রকাশক উন্নাসিক, বলছেন,গল্পের বই পাঠক আর খায় না; তাই ছাপতে অনাগ্রহ। আমি দুজনকেই খানিক হলে জানি,অবশ্যই মুখবই সহায়তায়। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারিও সম্প্রতি বন্ধু হয়েছেন। আমিও দু- একটি লেখা ' গল্পপাঠ '-এ লিখেছি। চোমস্কির মতে " সম্মতি নির্মাণ " করতে পারিনি বলে আমার পাঠক গুটিকয়। ঘটনা যাই হোক,কোনও গল্পকারিগরের খোঁজ পেলে ছুটে যাই। সাধ্যমতো পড়ি ও কিছু বলার চেষ্টা করি। এই আর কী। শুরুতেই একটি বানানবিভ্রাট আছে। হয়তো অনিচ্ছাকৃত। সম্ভব হলে শুধরে নেবেন। আর ' পুরস্কার ' করে নেবেন। চলতে থাকুক। ধন্যবাদ।
উত্তরমুছুনLike · Reply · 3 · April 16 at 2:04am
Bodhisatwa Bhattacharya
Bodhisatwa Bhattacharya ধন্যবাদ।
Like · Reply · April 16 at 2:09am
Kuloda Roy
Write a reply...
Choose File
Bodhisatwa Bhattacharya
Bodhisatwa Bhattacharya একটু দেখবেন প্লিজ। Kuloda Roy
Like · Reply · 1 · April 16 at 2:07am
Anasuya Mukherjee
Anasuya Mukherjee Porlam,vari LAJJA lagchhe eto akorsonio bisae haoa SATTEO EKTA line amar MATHAE sudhui ghure berechhe,gachher niche chaka,KOI kakhono to vabini,baro baro gachh asamvab PRYIO,kintu okhanei dekhte valo lage,TADER o je cholte ichchha kare manei haeni,asole nirvarata,mayeder khetreo bodh hae tai ,Bari fire MA ek glass jal,Anya kichhu vabte ichchha karena.
Like · Reply · 2 · April 16 at 8:59am
Bodhisatwa Bhattacharya
Bodhisatwa Bhattacharya ধন্যবাদ।
Like · Reply · 1 · April 16 at 2:09pm
Biplab Biswas
উত্তরমুছুনBiplab Biswas যা মনে হল/ অল্প কথায়:
প্রথমেই বলি,ইংরাজি সাহিত্যের ছাত্র হয়েও বৃহত্তর ইউরোপিও সাহিত্য বিশেষত নবউন্মেষের বিষয়আশয় খুব একটা পড়া হয়ে ওঠেনি। তাই তোমার লেখালেখির শরীরে সেভাবে না ঢুকে সে বিষয়ে কিছু বলা একজাতীয় ধৃষ্টতা। তবে তোমার ' দুই বাবা ও বেলগাছ ' পড়েছি; অনুভূতির রকমফের হয়েছে বই কী? অবশ্য এই সাক্ষাৎকার নিয়ে এক- দু কথা বলাই যায়। প্রথমেই আমি মোজাফফরের বিরুদ্ধমতে গিয়ে তোমার সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলি,কথ্য ভাষায় রচিত সাহিত্য সর্বত্রগামী না হলেও তা সাহিত্যভাষার সৌন্দর্য হানি করে এমনটি আমিও মনে করি না। এ ব্যাপারে সতীনাথ,অমিয়ভূষণ থেকে শুরু করে শহীদুল জহির প্রমুখ অনেকের কথাই বলা যায়। তোমার ' বৃহত্তর ' ব্যাখ্যা গুলিয়ে যায়নি। আমি বহু আগে একটি গল্প লিখেছিলাম যেখানে এই নিয়ে এক ব্যঙ্গোক্তি ছিল। একজন গল্পকারের যে নিখুঁত দৃষ্টি থাকা দরকার তা তোমার আছে বলেই মনে হয়েছে। তবে বিপুল বটবৃক্ষ যার তলায় হরেক কিসিমের মানুষের আশ্রয় ঘটে,সে তো এমনিতেই সমৃদ্ধ ; তার আবার চাকার কী দরকার? ফোন দেব/ ফোন করব- সঠিক অনুধাবন। ভৈরব আমার জায়গার মৃতপ্রায় নদী, তাকে খড়ে নদীও বলে। তোমার পায়েস/ কাঁসার বাটি,গল্পের আত্মা / আলো উপমাসকল জুতসই। তবে গল্পের ফর্মকে নস্যাৎ করা যায় কি,পুরোপুরি? আমার মতে,নির্দিষ্ট পত্রিকায় সাংবাদিকতাসূত্র সংশ্লিষ্ট লেখককে প্রচারের আলোয় আনে বই কী? অবশ্য শেষ পর্যন্ত লেখাটিই থেকে যায়। এখানেই আমি " সম্মতি নির্মাণ "- এর কথা কমেন্টে বলেছিলাম। সমসাময়িক / সামসময়িক --সমবয়সী বিষয়ে তোমার কথা যুক্তিগত। তুমি যে অন্য লেখকের লেখা পড়,এটা জেনে ভালো লাগল। তবে তা নির্বিশেষ হওয়াই উচিৎ।
এখন এ টুকুই থাক। ভালো থাকো। থাকো রসেবশে।
Like · Reply · 3 · April 17 at 1:03pm
Bodhisatwa Bhattacharya
Bodhisatwa Bhattacharya ধন্যবাদ। তবে, আমি কিন্তু ফর্মের ব্যাপারটিকে পুরোপুরি নস্যাৎ একদমই করিনি। তার প্রশ্নও নেই। আমি বলতে চেয়েছি- গল্পের ফর্ম নিয়ে কখনওই ততটা ভাবিনি, যতটা ভেবেছি বিষয় ও ভাষা নিয়ে। 'খড়ে নদী'-র ব্যাপারটা জানতাম না। এর মানে কী?
Like · Reply · 1 · April 17 at 1:31pm · Edited
Biplab Biswas
Biplab Biswas নদীটির স্থানিক নাম।
Like · Reply · April 17 at 1:44pm
Kuloda Roy
Write a reply...
Choose File
Bodhisatwa Bhattacharya
Bodhisatwa Bhattacharya মোজাফফরও আসুন। Mojaffor Hossain
Like · Reply · April 17 at 1:29pm
Mojaffor Hossain
Mojaffor Hossain অনেক ধন্যবাদ। সবমিলে খুব ভালো অভিজ্ঞতা হলো।
Like · Reply · April 17 at 2:09pm · Edited
Kuloda Roy
Write a reply...
Choose File
Sourav Mukhopadhyay
Sourav Mukhopadhyay ভারি চমত্কার । বোধি, তোমার কথাগুলি অনেকবার পড়ার মতো।
Like · Reply · 2 · April 17 at 1:38pm
Mojaffor Hossain
Mojaffor Hossain সত্যিই অন্যরকম অভিজ্ঞতা হলো। আমাদের গল্পগুলো পড়ে ও ভীষণ খেটে পুরো বিষয়টি পরিচালনা করার জন্য বিশেষভাবে ধন্যবাদ প্রিয় রিমি মুৎসুদ্দি দিদিকে। আর ভীষণ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি গল্পপাঠের কাছে।
Like · Reply · 1 · April 17 at 2:03pm
Bodhisatwa Bhattacharya--
ধন্যবাদ সৌরভদা। আপনি কিছু লিখুন। আলোচনাটা চলুক।
Sourav Mukhopadhyay-- আপাতত তোমাদের মধ্যে ঢুকছি না। পরে সময়মতো বলব নিজের কথা কিছু ।