অনুবাদ: দিলওয়ার হাসান
[লিডিয়া ডেভিস : ৬৫ বছর বয়সে ২০১৩ সালে ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতে নিয়েছেন মার্কিন কথাসাহিত্যিক লিডিয়া ডেভিস। তাঁর গল্পের যে দিকটি প্রথমেই নজর কাড়ে পাঠকের তা হলো, গল্পের আকার ও বয়ানে কথকের আশ্চর্য সংহতি বা সংক্ষিপ্ততা। দৈনন্দিনতার তুচ্ছ বিষয়ে তাঁর অভিনিবেশ বুদ্ধিবৃত্তিক। গল্প বলার চেয়ে গল্পের ‘এসেন্স’ বা ‘সার’ পাঠকের চিন্তায় উৎসারিত করে দেওয়াই যেন বা লক্ষ্য লিডিয়া ডেভিসের।]
১. পুরোনো অভিধান
আমার কাছে প্রায় ১২০ বছরের পুরোনো একটা অভিধান আছে। এ বছর যে বিশেষ কাজগুলো করছি তার জন্য ওটা লাগছে। অভিধানটার পৃষ্ঠাগুলোর কিনারা বাদামি রং ধারণ করেছে আর খুব পলকা হয়ে গেছে। ওলটানোর সময় ছিঁড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। খোলার সময় অভিধানটার পুট যাতে না ভাঙে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হয়। কারণ, ওটার অর্ধেকাংশের ওপরে কিছুটা ইতিমধ্যেই ভেঙে গেছে। ব্যবহার করার সময় প্রতিবারই আমাকে ভাবতে হয়, বিশেষ কোনো শব্দ দেখতে দেখতে অভিধানটা আরও ভেঙে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচবে তো? এই কাজটার জন্য যেহেতু ওটা আমার ব্যবহার করতেই হবে, জানি আজ না হয় কাল বা কাজ শেষ হওয়ার সময়ের মধ্যে ওটা একেবারে নষ্ট না হয়ে গেলেও কাজ আরম্ভ হওয়ার সময় যে অবস্থায় ছিল তার চেয়েও বাজে অবস্থায় গিয়ে পৌঁছাবে। আজ ওটা শেলফ থেকে বের করার সময় অনুধাবন করি, আমার শিশুপুত্রকে যে রকম সতর্কতার সঙ্গে দেখভাল করি, ওটার ব্যাপারে তার চেয়ে বেশি করছি। যতবার ওটা হাত দিয়ে ধরি, ততবারই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করি, যাতে ওটার কোনো ক্ষতি না হয়; আমার প্রাথমিক ভাবনাই থাকে ওটা। আজ যে ব্যাপারটিতে আমি ধাক্কা খাই তা হচ্ছে, অভিধানের চেয়ে আমার ছেলে আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত ছিল, আমি বলতে পারি না—যতবার আমার ছেলের দেখভাল করি, আমার প্রাথমিক উদ্বেগ থাকে, তার যেন কোনো ক্ষতি সাধিত না হয়। আমার প্রাথমিক ভাবনা প্রায় সব সময়ই ভিন্ন রকমের কিছু একটা হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ওর বাড়ির কাজ কী আছে তা দেখা, তার খাবার ঠিকমতো টেবিলে রাখা আছে কি না তা চেক করা কিংবা টেলিফোনে কথাবার্তা সেরে ফেলা। কাজ যা-ই হোক না কেন তা ঠিকভাবে করা হয়েছে কি না, এটাই বড় কথা; ওই প্রক্রিয়ায় তার কোনো অসুবিধা হয়েছে কি না, তা আমার কাছে ধর্তব্যের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় না। কেন আমি আমার ছেলেকে অন্তত আমার পুরোনো অভিধানের মতো গণ্য করতে পারি না? এর কারণ এটা হতে পারে যে অভিধান সুস্পষ্টভাবে পলকা ও ঠুনকো জিনিস। কোনো অভিধানের একটা পাতার কোনাও যখন ভেঙে যায় তা ভ্রমাতীত বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আমার ছেলেকে তো আর ভঙ্গুর বলে মনে হয় না, কোনো খেলার প্রতি ঝুঁকে পড়ে না, কোনো কুকুরকেও মারে না। নিশ্চিতভাবেই তার শরীর শক্তপোক্ত, নমনীয় আর সহজে আমার হাতে তার কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।
আমি আঘাত দিয়ে তার গায়ে কালসিটে দাগ ফেলেছি, আবার তার চিকিৎসাও করিয়েছি। কখনো কখনো তার অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া আমার জন্য অনিবার্য হয়ে পড়ে, কিন্তু ওই আঘাত কতটা প্রচণ্ড ছিল তা দেখা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। মনে হয়, তা সেরেও যায়। পুরোপুরি সেরে গেছে কি না, কিংবা চিরদিনের জন্য একটুখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না, তা বোঝা শক্ত। কোনো অভিধানের ক্ষতি সাধিত হলে সারাই করা যায় না। হতে পারে আমি অভিধানের যত্ন বেশি নিই ও ভালোভাবে নাড়াচাড়া করি, কারণ ওটা আমার কাছে কিছু চায় না, আর আমাকে পাল্টা আক্রমণ করে না। হতে পারে যেমন জিনিস আমার প্রতি বেশি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে না তাদের প্রতি আমি বেশি দয়াশীল। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি আমার গৃহে লালিত চারা গাছ আমার প্রতি খুব বেশি একটা প্রতিক্রিয়া দেখায় না, তার পরও আমি ওদের প্রতি প্রসন্নতা দেখাই না। চারা গাছগুলো একটা-দুটো দাবি কেবল জানায়। ওদের যে স্থানে রেখেছি, তাতে পর্যাপ্ত আলোর দাবি আমি পূরণ করেছি। তাদের দ্বিতীয় দাবি জল। জল আমি দিই, তবে নিয়মিত নয়। এ কারণে কতগুলো চারা ভালোভাবে বাড়তে পারে না, কতগুলো মরেও যায়। দেখতে ভালো হওয়ার বদলে ওদের বেশির ভাগই দেখতে অদ্ভুত রকমের। কেনার সময় অনেকগুলোই দেখতে ভালো ছিল, কিন্তু তাদের দেখতে অদ্ভুত লাগছে, কারণ ওগুলোর খুব ভালো রকমের যত্ন আমি করতে পারিনি। অধিকাংশই রাখা আছে কদাকার সেসব প্লাস্টিকের পাত্রে, কেনার সময় ওগুলো যেসব পাত্রে রাখা ছিল। সত্যিকার অর্থে ওগুলো আমি বেশি পছন্দ করি না। দেখতে ভালো না হলে গৃহে লালিত চারাগুলো ভালো লাগার অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে কি? যেগুলো দেখতে ভালো, সেগুলোর প্রতি কি আমি বেশি প্রসন্ন? দেখতে ভালো না হলেও তো চারাগুলোর প্রতি আমি সদয় হতে পারি। আমার ছেলে দেখতে ভালো না হলে, এমনকি সে চমৎকার আচরণ না করলেও তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা আমার উচিত। চারা গাছের চেয়ে কুকুরের সঙ্গে আমি বেশি ভালো আচরণ করি, যদিও ওটা অধিক কর্মঠ ও বেশি চাহিদাসম্পন্ন। ওটাকে খাবার ও পানি দেওয়াটা সহজ। ওটাকে আমি হাঁটতে নিয়ে যাই, যদিও সব সময় হয়ে ওঠে না। ওটার নাকে কখনো-সখনো থাবড়া মারি, যদিও পশুচিকিৎসক ওর মাথার কাছাকাছি কোনো জায়গায় কিংবা যেকোনো জায়গায় আঘাত করতে নিষেধ করেছেন। এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত যে ঘুমানোর সময় কুকুরটাকে বিরক্ত বা অবহেলা করি না। এমনও হতে পারে, প্রাণ নেই এমন জিনিসের প্রতি আমার বেশি দয়ামায়া। অথবা তাদের যদি প্রাণ না থাকে দয়া-দাক্ষিণ্যের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমি তাদের প্রতি মনোযোগ না দিলেও ওটা আঘাত করে না, আর এটাই হচ্ছে একটা প্রশান্তির বিষয়। ওই প্রশান্তির ব্যাপারটা কখনো কখনো আনন্দের হয়ে ওঠে। ওগুলোর ভেতর একটা পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়, তা হচ্ছে ওরা ম্যালা ধুলাবালি নিয়ে আসে। ওই ধুলাবালি অবশ্য ওগুলোর কোনো ক্ষতি করে না। ওগুলোর গায়ে ধুলা লাগানোর জন্য আমি বরং লোক ডেকে আনি।
আমার ছেলে নোংরা হয়ে যায় আর আমি তা পরিষ্কার করতে পারি না। তাকে পরিচ্ছন্ন করার জন্য কাউকে অর্থও দিতে পারি না। তাকে পরিচ্ছন্ন রাখাটা শক্ত কাজ। তাকে খাওয়ানোর কাজটা আরও বেশি জটিল। পর্যাপ্ত ঘুমায় না সে। এর আংশিক কারণ, তাকে ঘুম পাড়ানোর জন্য আমি বিস্তর কসরত করি। চারা গাছের দুটি জিনিস খুব দরকার, তিনটিও হতে পারে। কুকুরের দরকার পাঁচটি অথবা ছটি জিনিসের। এটা খুবই পরিষ্কার যে কতগুলো জিনিস তাকে দিচ্ছি, কতগুলো দিচ্ছি না—অতএব এ দিয়েই বোঝা যায় তার কতটা ভালো যত্ন-আত্তি আমি করেছি। শারীরিক যত্নের জন্য যা দরকার সেটা ছাড়াও আবার ছেলের আরও অনেক কিছুর দরকার আর ওই জিনিসের সংখ্যাও বহুগুণ বেড়ে যায় অথবা অনবরত পরিবর্তিত হয়। বাক্যের ঠিক মাঝখানেও তা পরিবর্তিত হতে পারে। যদিও আমি হামেশাই জানি, তার ঠিক কী কী লাগবে তা-ও আমি সব সময় জানি না। এমনকি যখন আমি জানতে পারি সব সময় সেগুলো দেওয়াও আমার পক্ষে সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। অনেকবারই এমনটা হয়েছে তার দরকারের অনেক জিনিসই রোজ তাকে দিই না। এর অনেক কিছুই অবশ্য আমি আমার পুরোনো অভিধানের জন্য করি, যদিও সব নয়, যা আমার ছেলের জন্য করতে পারতাম। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমি ওটা ধীরে-ধীরে, চিন্তাভাবনা করে ও শান্তভাবে নাড়াচাড়া করি। ওটার বয়স বিবেচনা করি। তার সঙ্গে আচরণ করি ভক্তি ও শ্রদ্ধাভরে। ব্যবহার করার আগে আমি থামি ও ভাবি। এর সীমাবদ্ধতাগুলো আমার জানা আছে, যত দূর ওটা যেতে পারে তার চেয়ে বেশি দূর যেতে তাকে উৎসাহিত করি না (উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, টেবিলের ওপর সটান শুয়ে থাকা)। বেশ কিছুটা সময়ের জন্য ওটাকে একা থাকতে দিই।
২. ইঁদুর
কতগুলো ইঁদুর থাকে আমাদের দেয়ালে; কিন্তু রান্নাঘরে এসে কখনো ঝামেলা বাধায় না। এতে আমরা খুশিই, তবে বুঝতে পারি না কেন তারা আমাদের প্রতিবেশীদের রান্নাঘরের মতো আমাদের রান্নাঘরে আসে না, যেখানে আমরা ফাঁদ পেতে রেখেছি। খুশি হলেও আমরা কিন্তু উদ্বিগ্ন, কারণ এসব ইঁদুর এমন সব আচরণ করে যে তা দেখে মনে হয়, আমাদের রান্নাঘরের কোনো দোষ বা সমস্যা আছে। ব্যাপারটা আরও বেশি অদ্ভুত মনে হয় এ কারণে যে আমাদের রান্নাঘরটা প্রতিবেশীদেরটার চেয়ে বেশি গোছাল আর পরিপাটি। ওখানে অনেক বেশি খাবারদাবার পড়ে থাকে, তাকে থাকে বেশি বেশি রুটির টুকরা আর ক্যাবিনেটের তলায় ঠেলে রাখা থাকে পচা পেঁয়াজের টুকিটাকি অংশ। সত্যি কথা বলতে কি, ওখানে এত বেশি বাড়তি খাবার থাকে যে আমার ধারণা ওগুলো দেখে খোদ ইঁদুরেরাই রণে ভঙ্গ দেবে। তবে সুবিন্যস্ত একটা রান্নাঘর থেকে রাতের পর রাত ধরে পর্যাপ্ত খাবার নিয়ে বসন্তকাল অবধি টিকে থাকার বিষয়টা তাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তারা ধৈর্যসহকারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে খাবারের সন্ধান করে আর সেগুলো খুঁটে খুঁটে খায়। তবে আমাদের রান্নাঘরে তারা এমন কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয় যে অভিজ্ঞতা দিয়ে সেগুলো সমাধান করতে পারে না। তারা হয়তো কিছু ব্যবস্থা খুঁজে পেতে বের করে; কিন্তু অচিরেই অদম্য কিছু দৃশ্য আর কড়া গন্ধ তাদের গর্তের ভেতর তাড়িয়ে নিয়ে যায়। পরিত্যক্ত জিনিসের ভেতর থেকে খাবার সন্ধানের যে কাজটি তাদের করা উচিত ছিল তা করতে না পারায় স্পষ্টতই তারা অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে আর হতবিহ্বল হয়।
৩. মায়ের ইচ্ছা
মেয়েটা একটা গল্প লিখল। তা দেখে ওর মা বললেন, ‘তুই যদি একটা উপন্যাস লিখতি তাহলে কতই না ভালো হতো!’ মেয়েটা একটা পুতুলের বাড়ি বানাল। তা দেখে ওর মা বললেন, ‘ওটা যদি সত্যিকারের একটা বাড়ি হতো তাহলে কতই না ভালো হতো!’ মেয়েটা তার বাবার জন্য ছোট্ট একটা বালিশ বানাল। তা দেখে ওর মা বললেন, ‘ওটা একটা লেপ হলে কি আরও বাস্তবসম্মত হতো না রে?’ মেয়েটা ওদের বাগানে একটা ছোট্ট গর্ত করল। তা দেখে ওর মা বললেন, ‘তুই যদি বড় একটা গর্ত করতি তাহলে কতই না ভালো হতো!’ মেয়েটা একটা গর্ত করে তার ভেতরে ঘুমাতে গেল। তা দেখে ওর মা বললেন, ‘যদি তুই গর্তটার ভেতর চিরদিনের মতো ঘুমিয়ে থাকিস তাহলে কতই না ভালো হয়।’
৪. শঙ্কা
প্রায় প্রতিদিন সকালে আমাদের পাড়ার এক মহিলা তার বাড়ি থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসে। তখন তার চোখমুখ থাকে ফ্যাকাশে আর তার গায়ের ওভারকোটটা প্রচণ্ডভাবে দুলতে থাকে। সে চিৎকার করে বলে, শুনুন সবাই, জরুরি একটা বিষয়, খুব জরুরি। তখন আমাদের মধ্য থেকে কেউ একজন তার দিকে ছুটে যায় আর স্থির না হওয়া পর্যন্ত তাকে ধরে রাখে। আমরা জানি আসলে কিছুই ঘটেনি, ওটা ছিল তার অভিনয়। তবে আমরা বুঝতে পারি, আমাদের মধ্যকার কেউ সে যা করেছে ঠিক তা-ই করার জন্য কদাচিৎ অনুপ্রাণিত হয়েছে আর প্রতিবারই নিজেদের শান্ত করতে আমাদের, এমনকি আমাদের বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সবার শক্তি নিঃশেষ হয়েছে।০
অনুবাদক পরিচিতি
দিলওয়ার হাসান
গল্পকার। অনুবাদক। জন্মসাল ১৯৫৭, মানিকগঞ্জ। বর্তমান আবাসস্থল ঢাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স সহ এম.এ। স্কুল জীবন থেকে লেখালিখি ও সাংবাদিকতা শুরু। কর্মজীবন শুরু ১৯৮১ সালে দৈনিক সংবাদ’র সহ-সম্পাদক হিসেবে। বর্তমান পেশা-বেসরকারি চাকরি ও লেখালেখি। গল্প, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনি, অনুবাদ। প্রথম আলো, আলোকিত বাংলাদেশ, কালি ও কলম, উত্তরাধিকার, শব্দঘর ও অনলাইন পত্রিকায় নিয়মিত লেখেন।
প্রকাশিত গ্রন্থ – অন্য দেশের গল্প/প্যাপিরাস (অনুবাদ গল্প সংকলন), টু উইমেন/সংহতি (অনুবাদ উপন্যাস), আদম এবং ইভের গল্প/অর্চি(ছোট গল্প), সর্ট স্টোরিজ : আইজ্যাক সিঙ্গার/ঐতিহ্য (অনুবাদ গল্প সংকলন), ওস্তাদ নাজাকাত আলি কর্নেলকে একটা চিঠি লিখেছিলেন/ঐতিহ্য (ছোট গল্প), হারুকি মুরাকামির শ্রেষ্ঠ গল্প/মাওলা ব্রাদার্স (অনুবাদ গল্প), আইজ্যাক সিঙ্গারের ছোটগল্প / সংহতি(বর্ধিত কলেবর)।
[লিডিয়া ডেভিস : ৬৫ বছর বয়সে ২০১৩ সালে ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতে নিয়েছেন মার্কিন কথাসাহিত্যিক লিডিয়া ডেভিস। তাঁর গল্পের যে দিকটি প্রথমেই নজর কাড়ে পাঠকের তা হলো, গল্পের আকার ও বয়ানে কথকের আশ্চর্য সংহতি বা সংক্ষিপ্ততা। দৈনন্দিনতার তুচ্ছ বিষয়ে তাঁর অভিনিবেশ বুদ্ধিবৃত্তিক। গল্প বলার চেয়ে গল্পের ‘এসেন্স’ বা ‘সার’ পাঠকের চিন্তায় উৎসারিত করে দেওয়াই যেন বা লক্ষ্য লিডিয়া ডেভিসের।]
১. পুরোনো অভিধান
আমার কাছে প্রায় ১২০ বছরের পুরোনো একটা অভিধান আছে। এ বছর যে বিশেষ কাজগুলো করছি তার জন্য ওটা লাগছে। অভিধানটার পৃষ্ঠাগুলোর কিনারা বাদামি রং ধারণ করেছে আর খুব পলকা হয়ে গেছে। ওলটানোর সময় ছিঁড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। খোলার সময় অভিধানটার পুট যাতে না ভাঙে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হয়। কারণ, ওটার অর্ধেকাংশের ওপরে কিছুটা ইতিমধ্যেই ভেঙে গেছে। ব্যবহার করার সময় প্রতিবারই আমাকে ভাবতে হয়, বিশেষ কোনো শব্দ দেখতে দেখতে অভিধানটা আরও ভেঙে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচবে তো? এই কাজটার জন্য যেহেতু ওটা আমার ব্যবহার করতেই হবে, জানি আজ না হয় কাল বা কাজ শেষ হওয়ার সময়ের মধ্যে ওটা একেবারে নষ্ট না হয়ে গেলেও কাজ আরম্ভ হওয়ার সময় যে অবস্থায় ছিল তার চেয়েও বাজে অবস্থায় গিয়ে পৌঁছাবে। আজ ওটা শেলফ থেকে বের করার সময় অনুধাবন করি, আমার শিশুপুত্রকে যে রকম সতর্কতার সঙ্গে দেখভাল করি, ওটার ব্যাপারে তার চেয়ে বেশি করছি। যতবার ওটা হাত দিয়ে ধরি, ততবারই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করি, যাতে ওটার কোনো ক্ষতি না হয়; আমার প্রাথমিক ভাবনাই থাকে ওটা। আজ যে ব্যাপারটিতে আমি ধাক্কা খাই তা হচ্ছে, অভিধানের চেয়ে আমার ছেলে আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত ছিল, আমি বলতে পারি না—যতবার আমার ছেলের দেখভাল করি, আমার প্রাথমিক উদ্বেগ থাকে, তার যেন কোনো ক্ষতি সাধিত না হয়। আমার প্রাথমিক ভাবনা প্রায় সব সময়ই ভিন্ন রকমের কিছু একটা হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ওর বাড়ির কাজ কী আছে তা দেখা, তার খাবার ঠিকমতো টেবিলে রাখা আছে কি না তা চেক করা কিংবা টেলিফোনে কথাবার্তা সেরে ফেলা। কাজ যা-ই হোক না কেন তা ঠিকভাবে করা হয়েছে কি না, এটাই বড় কথা; ওই প্রক্রিয়ায় তার কোনো অসুবিধা হয়েছে কি না, তা আমার কাছে ধর্তব্যের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় না। কেন আমি আমার ছেলেকে অন্তত আমার পুরোনো অভিধানের মতো গণ্য করতে পারি না? এর কারণ এটা হতে পারে যে অভিধান সুস্পষ্টভাবে পলকা ও ঠুনকো জিনিস। কোনো অভিধানের একটা পাতার কোনাও যখন ভেঙে যায় তা ভ্রমাতীত বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আমার ছেলেকে তো আর ভঙ্গুর বলে মনে হয় না, কোনো খেলার প্রতি ঝুঁকে পড়ে না, কোনো কুকুরকেও মারে না। নিশ্চিতভাবেই তার শরীর শক্তপোক্ত, নমনীয় আর সহজে আমার হাতে তার কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।
আমি আঘাত দিয়ে তার গায়ে কালসিটে দাগ ফেলেছি, আবার তার চিকিৎসাও করিয়েছি। কখনো কখনো তার অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া আমার জন্য অনিবার্য হয়ে পড়ে, কিন্তু ওই আঘাত কতটা প্রচণ্ড ছিল তা দেখা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। মনে হয়, তা সেরেও যায়। পুরোপুরি সেরে গেছে কি না, কিংবা চিরদিনের জন্য একটুখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না, তা বোঝা শক্ত। কোনো অভিধানের ক্ষতি সাধিত হলে সারাই করা যায় না। হতে পারে আমি অভিধানের যত্ন বেশি নিই ও ভালোভাবে নাড়াচাড়া করি, কারণ ওটা আমার কাছে কিছু চায় না, আর আমাকে পাল্টা আক্রমণ করে না। হতে পারে যেমন জিনিস আমার প্রতি বেশি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে না তাদের প্রতি আমি বেশি দয়াশীল। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি আমার গৃহে লালিত চারা গাছ আমার প্রতি খুব বেশি একটা প্রতিক্রিয়া দেখায় না, তার পরও আমি ওদের প্রতি প্রসন্নতা দেখাই না। চারা গাছগুলো একটা-দুটো দাবি কেবল জানায়। ওদের যে স্থানে রেখেছি, তাতে পর্যাপ্ত আলোর দাবি আমি পূরণ করেছি। তাদের দ্বিতীয় দাবি জল। জল আমি দিই, তবে নিয়মিত নয়। এ কারণে কতগুলো চারা ভালোভাবে বাড়তে পারে না, কতগুলো মরেও যায়। দেখতে ভালো হওয়ার বদলে ওদের বেশির ভাগই দেখতে অদ্ভুত রকমের। কেনার সময় অনেকগুলোই দেখতে ভালো ছিল, কিন্তু তাদের দেখতে অদ্ভুত লাগছে, কারণ ওগুলোর খুব ভালো রকমের যত্ন আমি করতে পারিনি। অধিকাংশই রাখা আছে কদাকার সেসব প্লাস্টিকের পাত্রে, কেনার সময় ওগুলো যেসব পাত্রে রাখা ছিল। সত্যিকার অর্থে ওগুলো আমি বেশি পছন্দ করি না। দেখতে ভালো না হলে গৃহে লালিত চারাগুলো ভালো লাগার অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে কি? যেগুলো দেখতে ভালো, সেগুলোর প্রতি কি আমি বেশি প্রসন্ন? দেখতে ভালো না হলেও তো চারাগুলোর প্রতি আমি সদয় হতে পারি। আমার ছেলে দেখতে ভালো না হলে, এমনকি সে চমৎকার আচরণ না করলেও তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা আমার উচিত। চারা গাছের চেয়ে কুকুরের সঙ্গে আমি বেশি ভালো আচরণ করি, যদিও ওটা অধিক কর্মঠ ও বেশি চাহিদাসম্পন্ন। ওটাকে খাবার ও পানি দেওয়াটা সহজ। ওটাকে আমি হাঁটতে নিয়ে যাই, যদিও সব সময় হয়ে ওঠে না। ওটার নাকে কখনো-সখনো থাবড়া মারি, যদিও পশুচিকিৎসক ওর মাথার কাছাকাছি কোনো জায়গায় কিংবা যেকোনো জায়গায় আঘাত করতে নিষেধ করেছেন। এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত যে ঘুমানোর সময় কুকুরটাকে বিরক্ত বা অবহেলা করি না। এমনও হতে পারে, প্রাণ নেই এমন জিনিসের প্রতি আমার বেশি দয়ামায়া। অথবা তাদের যদি প্রাণ না থাকে দয়া-দাক্ষিণ্যের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমি তাদের প্রতি মনোযোগ না দিলেও ওটা আঘাত করে না, আর এটাই হচ্ছে একটা প্রশান্তির বিষয়। ওই প্রশান্তির ব্যাপারটা কখনো কখনো আনন্দের হয়ে ওঠে। ওগুলোর ভেতর একটা পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়, তা হচ্ছে ওরা ম্যালা ধুলাবালি নিয়ে আসে। ওই ধুলাবালি অবশ্য ওগুলোর কোনো ক্ষতি করে না। ওগুলোর গায়ে ধুলা লাগানোর জন্য আমি বরং লোক ডেকে আনি।
আমার ছেলে নোংরা হয়ে যায় আর আমি তা পরিষ্কার করতে পারি না। তাকে পরিচ্ছন্ন করার জন্য কাউকে অর্থও দিতে পারি না। তাকে পরিচ্ছন্ন রাখাটা শক্ত কাজ। তাকে খাওয়ানোর কাজটা আরও বেশি জটিল। পর্যাপ্ত ঘুমায় না সে। এর আংশিক কারণ, তাকে ঘুম পাড়ানোর জন্য আমি বিস্তর কসরত করি। চারা গাছের দুটি জিনিস খুব দরকার, তিনটিও হতে পারে। কুকুরের দরকার পাঁচটি অথবা ছটি জিনিসের। এটা খুবই পরিষ্কার যে কতগুলো জিনিস তাকে দিচ্ছি, কতগুলো দিচ্ছি না—অতএব এ দিয়েই বোঝা যায় তার কতটা ভালো যত্ন-আত্তি আমি করেছি। শারীরিক যত্নের জন্য যা দরকার সেটা ছাড়াও আবার ছেলের আরও অনেক কিছুর দরকার আর ওই জিনিসের সংখ্যাও বহুগুণ বেড়ে যায় অথবা অনবরত পরিবর্তিত হয়। বাক্যের ঠিক মাঝখানেও তা পরিবর্তিত হতে পারে। যদিও আমি হামেশাই জানি, তার ঠিক কী কী লাগবে তা-ও আমি সব সময় জানি না। এমনকি যখন আমি জানতে পারি সব সময় সেগুলো দেওয়াও আমার পক্ষে সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। অনেকবারই এমনটা হয়েছে তার দরকারের অনেক জিনিসই রোজ তাকে দিই না। এর অনেক কিছুই অবশ্য আমি আমার পুরোনো অভিধানের জন্য করি, যদিও সব নয়, যা আমার ছেলের জন্য করতে পারতাম। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমি ওটা ধীরে-ধীরে, চিন্তাভাবনা করে ও শান্তভাবে নাড়াচাড়া করি। ওটার বয়স বিবেচনা করি। তার সঙ্গে আচরণ করি ভক্তি ও শ্রদ্ধাভরে। ব্যবহার করার আগে আমি থামি ও ভাবি। এর সীমাবদ্ধতাগুলো আমার জানা আছে, যত দূর ওটা যেতে পারে তার চেয়ে বেশি দূর যেতে তাকে উৎসাহিত করি না (উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, টেবিলের ওপর সটান শুয়ে থাকা)। বেশ কিছুটা সময়ের জন্য ওটাকে একা থাকতে দিই।
২. ইঁদুর
কতগুলো ইঁদুর থাকে আমাদের দেয়ালে; কিন্তু রান্নাঘরে এসে কখনো ঝামেলা বাধায় না। এতে আমরা খুশিই, তবে বুঝতে পারি না কেন তারা আমাদের প্রতিবেশীদের রান্নাঘরের মতো আমাদের রান্নাঘরে আসে না, যেখানে আমরা ফাঁদ পেতে রেখেছি। খুশি হলেও আমরা কিন্তু উদ্বিগ্ন, কারণ এসব ইঁদুর এমন সব আচরণ করে যে তা দেখে মনে হয়, আমাদের রান্নাঘরের কোনো দোষ বা সমস্যা আছে। ব্যাপারটা আরও বেশি অদ্ভুত মনে হয় এ কারণে যে আমাদের রান্নাঘরটা প্রতিবেশীদেরটার চেয়ে বেশি গোছাল আর পরিপাটি। ওখানে অনেক বেশি খাবারদাবার পড়ে থাকে, তাকে থাকে বেশি বেশি রুটির টুকরা আর ক্যাবিনেটের তলায় ঠেলে রাখা থাকে পচা পেঁয়াজের টুকিটাকি অংশ। সত্যি কথা বলতে কি, ওখানে এত বেশি বাড়তি খাবার থাকে যে আমার ধারণা ওগুলো দেখে খোদ ইঁদুরেরাই রণে ভঙ্গ দেবে। তবে সুবিন্যস্ত একটা রান্নাঘর থেকে রাতের পর রাত ধরে পর্যাপ্ত খাবার নিয়ে বসন্তকাল অবধি টিকে থাকার বিষয়টা তাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তারা ধৈর্যসহকারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে খাবারের সন্ধান করে আর সেগুলো খুঁটে খুঁটে খায়। তবে আমাদের রান্নাঘরে তারা এমন কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয় যে অভিজ্ঞতা দিয়ে সেগুলো সমাধান করতে পারে না। তারা হয়তো কিছু ব্যবস্থা খুঁজে পেতে বের করে; কিন্তু অচিরেই অদম্য কিছু দৃশ্য আর কড়া গন্ধ তাদের গর্তের ভেতর তাড়িয়ে নিয়ে যায়। পরিত্যক্ত জিনিসের ভেতর থেকে খাবার সন্ধানের যে কাজটি তাদের করা উচিত ছিল তা করতে না পারায় স্পষ্টতই তারা অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে আর হতবিহ্বল হয়।
৩. মায়ের ইচ্ছা
মেয়েটা একটা গল্প লিখল। তা দেখে ওর মা বললেন, ‘তুই যদি একটা উপন্যাস লিখতি তাহলে কতই না ভালো হতো!’ মেয়েটা একটা পুতুলের বাড়ি বানাল। তা দেখে ওর মা বললেন, ‘ওটা যদি সত্যিকারের একটা বাড়ি হতো তাহলে কতই না ভালো হতো!’ মেয়েটা তার বাবার জন্য ছোট্ট একটা বালিশ বানাল। তা দেখে ওর মা বললেন, ‘ওটা একটা লেপ হলে কি আরও বাস্তবসম্মত হতো না রে?’ মেয়েটা ওদের বাগানে একটা ছোট্ট গর্ত করল। তা দেখে ওর মা বললেন, ‘তুই যদি বড় একটা গর্ত করতি তাহলে কতই না ভালো হতো!’ মেয়েটা একটা গর্ত করে তার ভেতরে ঘুমাতে গেল। তা দেখে ওর মা বললেন, ‘যদি তুই গর্তটার ভেতর চিরদিনের মতো ঘুমিয়ে থাকিস তাহলে কতই না ভালো হয়।’
৪. শঙ্কা
প্রায় প্রতিদিন সকালে আমাদের পাড়ার এক মহিলা তার বাড়ি থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসে। তখন তার চোখমুখ থাকে ফ্যাকাশে আর তার গায়ের ওভারকোটটা প্রচণ্ডভাবে দুলতে থাকে। সে চিৎকার করে বলে, শুনুন সবাই, জরুরি একটা বিষয়, খুব জরুরি। তখন আমাদের মধ্য থেকে কেউ একজন তার দিকে ছুটে যায় আর স্থির না হওয়া পর্যন্ত তাকে ধরে রাখে। আমরা জানি আসলে কিছুই ঘটেনি, ওটা ছিল তার অভিনয়। তবে আমরা বুঝতে পারি, আমাদের মধ্যকার কেউ সে যা করেছে ঠিক তা-ই করার জন্য কদাচিৎ অনুপ্রাণিত হয়েছে আর প্রতিবারই নিজেদের শান্ত করতে আমাদের, এমনকি আমাদের বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সবার শক্তি নিঃশেষ হয়েছে।০
অনুবাদক পরিচিতি
দিলওয়ার হাসান
গল্পকার। অনুবাদক। জন্মসাল ১৯৫৭, মানিকগঞ্জ। বর্তমান আবাসস্থল ঢাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স সহ এম.এ। স্কুল জীবন থেকে লেখালিখি ও সাংবাদিকতা শুরু। কর্মজীবন শুরু ১৯৮১ সালে দৈনিক সংবাদ’র সহ-সম্পাদক হিসেবে। বর্তমান পেশা-বেসরকারি চাকরি ও লেখালেখি। গল্প, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনি, অনুবাদ। প্রথম আলো, আলোকিত বাংলাদেশ, কালি ও কলম, উত্তরাধিকার, শব্দঘর ও অনলাইন পত্রিকায় নিয়মিত লেখেন।
প্রকাশিত গ্রন্থ – অন্য দেশের গল্প/প্যাপিরাস (অনুবাদ গল্প সংকলন), টু উইমেন/সংহতি (অনুবাদ উপন্যাস), আদম এবং ইভের গল্প/অর্চি(ছোট গল্প), সর্ট স্টোরিজ : আইজ্যাক সিঙ্গার/ঐতিহ্য (অনুবাদ গল্প সংকলন), ওস্তাদ নাজাকাত আলি কর্নেলকে একটা চিঠি লিখেছিলেন/ঐতিহ্য (ছোট গল্প), হারুকি মুরাকামির শ্রেষ্ঠ গল্প/মাওলা ব্রাদার্স (অনুবাদ গল্প), আইজ্যাক সিঙ্গারের ছোটগল্প / সংহতি(বর্ধিত কলেবর)।
2 মন্তব্যসমূহ
সম্পাদক সাহেব লেখা প্রকাশ করার আগে তা পড়ে দেখার কোন প্রয়োজনই বোধ করে না। পড়ে দেখলে এমন মারাত্বক ভুল অনুবাদ প্রকাশ পেত না। আমি এখানে একটা লাইন তুলে দিচ্ছি ইদুঁর শিরোনামের অনুবাদ গল্পটি থেকে। লাইনটা হল-"ব্যাপারটা আরও বেশি অদ্ভুত মনে হয় এ কারণে যে আমাদের রান্নাঘরটা প্রতিবেশীদেরটার চেয়ে বেশি গোছাল আর পরিপাটি।" লেখিকা তার গল্পে বললেন যে তাদের রান্না ঘরটা প্রতিবেশীদেরটার চেয়ে বেশী অগোছাল আর অনুবাদক যা বললেন এখানে উল্লেখিত লাইনটাই পড়লেই বুঝতে পারা যাবে। পাঠকদেরকে বিভ্রান্তিতে ফেলার এবং তাদের সাথে প্রতারণা করার অধিকার কারো নেই।
উত্তরমুছুনপাঠকদের সুবিধার্থে এখানে গল্পটির মূল টেক্সট দেয়া হল- Mice live in our walls but do not trouble our kitchen. We are pleased but cannot
উত্তরমুছুনunderstand why they do not come into our kitchen, where we have traps set, as they come into the kitchens of our neighbors. Although we are pleased, we are also upset, because the mice behave as though there were something wrong with
our kitchen. What makes this even more puzzling is that our house is much less
tidy than the houses of our neighbors. There is more food lying about in our
kitchen, more crumbs on the counters and filthy scraps of onion kicked against
the base of the cabinets. In fact, there is so much loose food in the kitchen I can
only think the mice themselves are defeated by it. In a tidy kitchen, it is a
challenge for them to find enough food night after night to survive until spring.
They patiently hunt and nibble hour after hour until they are satisfied. In our
kitchen, however, they are faced with something so out of proportion to their
experience that they cannot deal with it. They might venture out a few steps, but
soon the overwhelming sights and smells drive them back into their holes,
uncomfortable and embarrassed at not being able to scavenge as they should.