ভেতো বাঙালির রোজ নামচা : প্রথম পর্ব

মোহাম্মমদ আতাউর রহমান

আসলে জীবনটা চলমান। নদীর মতন। নদী উৎস থেকে নানা সমাজ সভ্যতাকে অতিক্রম করে, এঁকে-বেঁকে এক সময় তার গন্তব্যে পৌঁছায়। জীবনও নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। নদী তার অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখতে শাখা প্রশাখার আশ্রয় নেয়। জীবন সন্তান উৎপাদন আর কাজের মাঝে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট থাকে । রবীন্দ্রনাথের মতে--প্রাণী প্রসারিত হতে চায় যুগে, আর মানুষ প্রসারিত হতে চায় যুগে এবং কালে।
সভ্যতার প্রাথমিক যুগ থেকে আজ পর্যন্ত--গুহাচিত্র থেকে আধুনিক পারফর্মিং আর্টস, সব কিছুই সেই টিকে থাকারই প্রয়াস। সবাই অবিরাম লড়াই করে যাচ্ছে যার যার অবস্থান থেকে অস্থিত্বকে টিকিয়ে রাখতে । কেউ “কনফুসিয়াস”, কেউ “স্পার্টাকাস” কেউ বা “হালাকু খাঁ” হয়ে টিকে থাকার প্রয়াস পেয়েছে। 

বিমল মিত্র আক্ষেপ করেছেন--ইচ্ছে ছিল রামায়ন লিখবার, ‘কিন্তু কড়ি দিয়ে কিনলাম’ লেখা হয়ে গেল । স্রষ্টা তার সময়ের কালকে অতিক্রম করতে পারে না অর্থাৎ আমরা সবাই গণ্ডীবদ্ধ । গণিতের ভাষায়, “উইদিন দি ডোমেন” । বিমল মিত্রকেও তাই ‘সত্য’ যুগের বদলে ‘কড়ির’ যুগকেই বেছে নিতে হয় । 

আমার জন্ম ব্রিটিশ ভারতে। বেড়ে উঠেছি পাকিস্তানি ভাবাদর্শের আবহাওয়ায়। জীবনকে বুঝবার সুযোগ হয়েছে স্বাধীন দেশে । শেষ জীবনে হাজির হয়েছি “সব পেয়েছির দেশ মার্কিন মুল্লুকে” । রামায়ন-মহাভারত বা কড়ি দিয়ে কিনলাম লেখার চেষ্টা না করে গুহাবাসীর মত একটা ছবি আঁকার চেষ্টা করেছি মাত্র । আঁকতে পেরেছি কি ? জানি না ।

নো দাইসেলফ । নিজেকে খোঁজো । নিজেকে খুঁজতে গিয়েই পিছন ফিরে তাকান । চোখ খুলতেই লক্ষ করা গেল, আমার অস্থিত্ব তো সেই দ্বাপর যুগে, মহা প্লাবনের পর আবার যখন ‘এ বিশ্বকে বাসযোগ্য’ করার জন্য তোড় জোড় শুরু হয়ে গেছে । শুভ-অশুভের লড়াইয়ের প্রস্তুতি চলছে । এর পর আই এ্যাম এ্য জাহেলিয়াদ যুগ পার হয়ে নতুন সূর্যের উদয় হয়েছে; সেও তো অনেক দিন পেরিয়ে গেল। মুক্তি হয়েছে কি ? পাঞ্চালীর মনের গভীরের কামনাই কি দীর্ঘ দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত মুক্তির ব্যারিকেড ? আদমের ‘নিষিদ্ধ ফল’ ভক্ষণের পরিণতি কি ? সেই ছবি আঁকার চেষ্টা করা গেছে ।  

রোপা ফসলের জন্য চাই পত্তন । আমরা বলি ‘পাতো’। জমিতে ফসল রোপার যে বীজ চারা। বর্তমান গ্রন্থ “ভেতো বাঙ্গালীর রোজনামচা”, আমার জন্ম থেকে প্রবাসে তথা মার্কিন দেশে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত সময়ের একটা খণ্ডচিত্র মাত্র; আমার মূল প্রচেষ্টার পাতো । আমার অন্য গ্রন্থ “ভেতো বাঙ্গালীর উৎস সন্ধান”-এ, সেই ঐতিহাসিক যুগ থেকে প্রথম মহাযুদ্ধের সমাপ্তি অব্দি চিত্র আঁকার যে চেষ্টা করেছি যা প্রকাশের অপেক্ষায় । তা ছাড়া কুঁজোর চীৎ হয়ে শোবার ইচ্ছের মতন, মার্কিন দেশে আগমন থেকে বাকীটার ছবি আাঁকার একটা ইচ্ছে তো মনের মধ্যে লীন হয়ে থাকলোই। সময় হবে কি? জানি না ? 




প্রাইমারী শিক্ষা 

The world that is the object of our inquiry is not our making; we do indeed contrive our own mistakes and illusions, and often find it difficult to discover that we are in error--- Bertrand Russell.

প্রায় সকল “ভেতো’ বাঙ্গালীর মত আমার জন্মদিনটির সঠিক তারিখটি খুঁজে বের করা একটি গবেষণার বিষয় । এমন কি গবেষণা করেও যে সঠিক তারিখটি খুঁজে বের করা যাবে তা মনে হয় না । মা বলতেন - ঐ যে বছর দেশে আকাল হল, তার বছর দুই পর ভাদ্র মাসে তোর জন্ম । ফুফু বলতেন - যে বছর আমার হকুয়া মামুজান (আব্দুল হক শরীফ) ওলাওঠায় মারা যায়, সে বছরই তোর জন্ম । আমার ডাক নাম কেন “রেশন” হল খোঁজ নিতে জানা গেল - দুর্ভিক্ষের পর যে বছর আমাদের গ্রামে “রেশন কার্ড” পদ্ধতি চালু হয় সে বছর আমার জন্ম, তাই দাদী গোস্বা হয়ে নাম রাখেন “রেশন কার্ড” । এর থেকেও অনুমান করা যায় আমার জন্ম মোটামুটিভাবে দুর্ভিক্ষের দু’বছর পর অর্থাৎ ১৯৪৫ সন । তবে মনে পড়ে - তখন খুব ছোট, পরে জেনেছি, সেটা ১৯৪৮ ইং সনের শেষের দিক, বোধ করি বছর চারেক বয়স হবে, তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন আমাদের মহাকুমা শহর গোপালঞ্জে সভা করতে এসেছিলেন । আমরা যারা ছোট অর্থাৎ যারা শহরে যাবার যোগ্যতা অর্জন করতে পারিনি, শত জনতার সঙ্গে মিছিল করে সভায় যেতে না পারায় শুধু “পাকিস্তান জিন্দাবাদ” দিয়ে স্কুল মাঠ প্রদক্ষিণ করে তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল । বাবা ছিলেন স্থানীয় মুসলিম লীগের হোমরা-চোমরা গোছের চেলা । শুনেছি এককালে বাবা, নেতাজী সুভাষ বসুর সঙ্গে “আজাদ হিন্দ ফৌজে” যোগ দিয়ে দেশ স্বাধীন করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। পরে, মুসলমানের ঘরে জন্ম বিধায়, পাকিস্তান আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম লীগের স্থানীয় নেতা হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন । আবছা আবছা মনে পড়ে, বাবার নেতৃত্বে বেশ কয়েক হাজার লোক সেদিন পাকিস্তান-জিন্দাবাদ ধ্বনি দিয়ে শহরাভিমুখে খাজা নাজিমুদ্দিনকে এক নজর দেখার জন্য গিয়েছিল। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস - পরবর্তিকালে বাবা, নাজিমুদ্দিনের নামে কুকুর পোষার কথা, চিন্তা করেছিলেন । 

বাবা যতদিন বেঁচেছিলেন ততদিন মুসলিম লীগ করেছেন । মনে পড়ে পাকিস্তানের প্রথম গণপরিষদ নির্বাচনে বাবা আমাদের এলাকার মুসলিম লীগের প্রধান এজেন্ট। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মুছলিম লীগ থেকে ডাক-সাইটে নেতা ওহিদুজ্জামান আর আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। বাড়ীতে মেরুন রঙের হাজার দুয়েক বোরকা আনা হল । মেয়েরা বোরকা পরে ভোট দিতে যাবে । শ’পাঁচেক রিক্সারও ব্যবস্থা হল যাতে করে ভোটাররা গ্রামের আঁকা-বাঁকা রাস্তা দিয়ে হেলে-দুলে সময়মত ভোট কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারে। সারা এলাকায় সাজ-সাজ রব। আমরা শ্লোগান দেই “মুসলমান সব ভাই-ভাই হারিকেন মার্কায় ভোট চাই”; অপর পক্ষ - গ্রামের মামাতো ভাইদের শ্লোগান - “আমার ভাই তোমার ভাই, মুজিব ভাই মুজিব ভাই । কৃষক শ্রমিক ভাই ভাই নৌকা মার্কায় ভোট চাই”। মুসলিম লীগের মার্কা হারিকেন - গ্রামে গ্রামে হাজার হাজার হারিকেন জ্বালান হতে থাকলো প্রতি রাতে । আওয়ামী লীগের মার্কা নৌকা -- সারা দেশটাই ভরে গেল নৌকায় । নির্ধারিত দিনে ইলেকশান হয়ে গেল । কোন গোলমাল -- হই চই কিছুই নাই । ঢাল লও সড়কি লও বা বন্দুক পিস্তল লও এমন কি ছোট খাট কোন মারামারি পিটাপিটি ছাড়াই নির্বাচন হয়ে গেল । নির্বাচনে তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বিপুল ভোটে বিজয়ী হলেন । জনাব ওয়াহিদুজ্জামান যতগুলি বোরখা কিনেছিল ততগুলি ভোট পায় নাই । বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরেও জনাব ওয়াহিদ্দুজ্জামান সাহেব তরুণ নেতা মুজিবুর রহমানকে অভিনন্দন জানালেন । 

নির্বাচন চলাকালীন এক দিনের কথা আমার বিশেষ ভাবে মনে পড়ে । বাবার গাছ লাগানোর খুব সখ ছিল এবং তাঁর ধারণা ছিল কোনো গাছ নিজে না লাগালে সে গাছ বাঁচেনা । তাই সব সময় আমাদের সঙ্গে নিয়ে গাছ লাগাতেন। কিন্তু আমরা সব ভাই বোন কেউই কাজটি মোটেই পছন্দ করতাম না, কিন্তু তবুও কাজটি আমাদের করতে হতো। একদিন বাবার সঙ্গে বাড়ীর সীমানায় আম গাছ লাগাচ্ছি, ইতোমধ্যে কয়েক জন লোক বাবার সঙ্গে দেখা করতে আসলেন। সকলেই তৎকালীন বিখ্যাত ভাগলপুরি লুঙ্গি পরা । এর মধ্যে একজন বেশ লম্বা চওড়া ইয়া গোঁফ ওয়ালা লোক এসেই বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললেন - ডাক্তার ভাই( উল্লেখ্য বাবা কলকাতার ক্যাম্বেল স্কুল থেকে কিছু পড়াশুনা করে গ্রামে ডাক্তারি করতেন) তোমার কাছে ভোট চাইতে এলাম । বাবার উত্তর -- তোমার সাহস তো কম নয় হে, তুমি জানো আমি তোমাকে ঠেকানোর জন্য আদাজল খেয়ে লেগেছি । তা জানি ! তাই তো ভাবীর হাতের চা খেতে এসেছি । এরূপ হাসি ঠাট্টার মধ্যে বেশ কিছুটা সময় কেটে গেল । একটি জাতির পথ প্রদর্শক এভাবে সেদিন এককাপ চা আর লাঠি বিস্কুট খেয়ে বিদায় নিয়েছিলেন । এখন কি এরূপ কোন ঘটনা কল্পনা করা যায়? শেখ মুজিব সম্মন্ধে আরো একটি ঘটনা না বলে পারছি না । ঘটনাটি জেনেছি আমার মেঝো কাকার নিকট থেকে । কাকা তখন দারুণ ফুটবল প্লেয়ার । গোপালগঞ্জ শহরে তখন পাবলিক স্কুল আর মিশন স্কুলের মধ্যে দারুণ রেষারেষি। কিশোর শেখ মুজিব মিশন স্কুলের ক্যাপটেইন । বাৎসরিক ফুটবল খেলা। কাকাকে পাবলিক স্কুল থেকে হায়্যার করে এনেছে । বিকালবেলা খেলা । কাকাকে গোপনে রাখা হয়েছে শেখ মুজিবদের বাড়ী ছেড়ে একটু দূরে । ঠিক করা আছে, খেলা শুরু হবার ঠিক আধা ঘন্টা আগে মাঠে উপস্থিত হবেন । সেমতে কাকা খেলা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে রওয়ানা দিয়েছেন মাঠের উদ্দেশ্যে । শেখ মুজিবদের বাড়ীর সামনে আসতেই শেখ সাহেব বাড়ী থেকে বেরিয়ে কাকাকে ছালাম দিয়ে প্রশ্ন -- মেঝো ভাই কখন আসলেন ? অনেকদিন পর দেখা হলো তাই না? আসেন মা পিঠা বানিয়েছে । খেয়ে যাবেন । অগত্যা রাজি হতে হলো কাকাকে। কাচারী ঘরে (বসবার ঘর) কাকাকে বসতে দিয়ে পিঠা নিয়ে আসলেন শেখ সাহেব । গরম গরম পিঠা খেতে ভালই। ইতোমধ্যে শেখ সাহেব - আসছি মেঝো ভাই, বলেই কাছারি ঘরের শিকল বাইরের থেকে লাগিয়ে ভৌ দৌড়। ঘণ্টা খানেক পর কাকার চেঁচামেচি শুনে কেউ একজন দরজা খুলে দেয়। এই হচ্ছেন শেখ মজিবুর রহমান । যিনি তার দল বা দেশের জন্য ছিলেন নিবেদিত প্রাণ । সে বার কাকা এক ঘণ্টা পরে মাঠে পৌঁছালেও মিশন স্কুলকে অনেক গুলি গোল খেতে হয়েছিল ।

আমার বঙ্গুবন্ধুর সঙ্গে দেখা হয় ১৯৭৩ সনের শেষের দিকে। কোন এক বিশেষ বিষয় ( লেবু ভাই হত্যার বিচার চাইতে) নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গেছিলাম । তখন তিনি শুধু মাত্র প্রধানমন্ত্রী নন, কিংবদন্তীর মহানায়ক । পরিচয় দিতেই - আমাদের গ্রামের অন্তত পক্ষে পনর থেকে বিশ জন লোকের নাম বলে তাদের বিষয়ে খুঁটিনাটি জানতে চাইলেন । বিশ বছর পর এত লোকের নাম মনে রাখা সত্যই মহান ব্যক্তিত্বের পক্ষেই সম্ভব । 

ছোট বেলা মাছ ধরা, পাখী মারা, নদীতে হুটোপুটি খেলাই ছিল মূলত আমাদের সময় কাটাবার প্রধান বিষয়। আমাদের বাড়ী, তারপর খেলার মাঠ, এর পর স্কুল অর্থাৎ আমাদের উত্তর ঘরের জানালা দিয়ে স্কুলের ছেলেমেয়েদের সব কাজকর্মের উপর নজরদারী করা যায় । অনেক সময় তাইই করতাম, বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে । স্কুলটি মূলত নিজেদের । বাপ-চাচারা দাঁড় করিয়েছেন । স্কুলটির একটু ইতিহাস আছে । বর্তমানে যে এলাকা নিয়ে গোপালগঞ্জ জেলা গঠিত, এক সময় সে এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা ছিল হিন্দু । আমার দাদার দাদা দূরের কোন গ্রাম থেকে এসে স্থানীয় হিন্দু জমিদার থেকে তিনশ একরের মত জমি পত্তন নিয়ে একটি নতুন গ্রাম প্রতিষ্ঠা করে ছেলে মেয়েদের নিয়ে বসবাস শুরু করেন। আমাদের গ্রাম ছাড়া আশে পাশের সব গ্রামই হিন্দুদের আবাসভূমি ছিল। ইতোমধ্যে বেশ কিছু সময় কেটে গেছে । সেকালে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের জন্য তেমন কোন দিক নির্দেশনা ছিল না । আমার দাদা তৎকালে ইউনিয়ন কাউনসিলের দফাদার পদে উন্নীত হয়েছিলেন এবং অনারারী ম্যাজিষ্ট্র্রেট হিসাবে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে কাজ করায় বোঝতে সক্ষম হয়েছিলেন যে ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা ছাড়া পিছনে পড়ে থাকতে হবে, তাই তিনি নিজের পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়েকে স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন । কিন্তু সেকালে ইচ্ছা করলেই ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠান সম্ভব ছিল না । আশে পাশে সকল স্কুলগুলি উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত ছিল । অতএব নিম্ন বর্ণের হিন্দু অথবা মুসলমানদের জন্য ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠান ছিল প্রায় নিষিদ্ধ । এটা মোটামুটিভাবে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন চলাকালীন সময় । অনন্যোপায় হয়ে দাদা নিজের বাড়ীতেই মক্তব খোলেন এবং বিভিন্ন গ্রামের প্রায় চল্লিশ জন ছাত্র-ছাত্রীকে জায়গীর রেখে শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। মক্তবটিতে তখন মাইনর পর্যন্ত অর্থাৎ বর্তমান পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ান হত । মক্তবটি আট-দশ বছরের বেশী টিকে থাকতে পারে নি । এ আট দশ বছরে এলাকায় মুসলমানদের মাঝে শিক্ষার বিষয়ে উৎসাহ দেখা গেলেও মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হল। মাইনর পাশ মেয়েদের বিবাহ দেওয়ার জন্য উপযুক্ত শিক্ষিত ছেলে পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ল । আমার মেঝো ফুফু মক্তব থেকে মাইনর পাশ করায় তার বিবাহ দেওয়া সমস্যা হয়ে দাঁড়ালে দাদা নিজের শালীর ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়ে সমস্যা সমাধান করলেন । বাবার কাছে শুনেছি, দাদা আত্মীয়দের মধ্যে বিবাহ পছন্দ করতেন না। এর পর আবার অনেকগুলি বছর কেটে গেল । বাবা-চাচারা কলকাতায় গিয়ে, কেউ কেউ কিছু কলেজ শিক্ষা শেষ করে গ্রামে ফিরে আসেন এবং নতুন ভাবে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন । এবার স্কুলটিকে জুনিয়র হাই বা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করা হয়। তখন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ডামাডোল শুরু হয়েছে । স্কুলটির নাম রাখা হয় “ আড়পাড়া মুসলিম জুনিয়র হাই স্কুল” । এ থেকেই বুঝতে পারা যায় যে তখন পাকিস্তান আন্দোলন দাঁনা বেধে উঠেছে । স্কুলটি চার পাঁচ বছর চলার পর অর্থের অভাবে পুনরায় বন্ধ হয়ে যায় । প্রাইমারী সেকশনটি সরকারী সাহায্য পাওয়ায় টিকে যায়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর স্কুলটি পুণরায় দশম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত হয়ে বর্তমানে এলাকার একটি উন্নত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে বিবেচিত এবং আমার বাবা-দাদাদের কাজের পুরস্কার স্বরূপ স্কুল পরিচালনা পর্ষদে বর্তমানে আমাদের পরিবার থেকে তিনজন ডোনার সদস্য নির্বাচিত হবার বিধান রাখা হয়েছে ।

তখনকার প্রথানুযায়ী আমাদের মত ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের - মাছ মারিব খাইব সুখে, দিন যাইবে হেলেদুলে অবস্থা । চলছিল ভালই । বাধ সাধলেন মেঝো ফুফু । তখনকার দিনের উচ্চ শিক্ষিত ফুফুর বিয়ে হয়েছিল তার খালাত ভাইএর সঙ্গে । ফুফা একটি মেয়ে রেখে মারা যান এবং তখনকার নিয়মানুযায়ী মেয়ে নিয়ে ফুফু বাবার বাড়ী চলে আসেন । ফুফু মেয়েটিকে বছর বারো বয়সে বিয়ে দেন এবং মেয়েটি বিয়ের এক বছর পরে মারা যায় । এর পর ফুফুর প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়াল ভীষণ ভাবে আমাদেরকে আদর করা, বকাঝকা করা, আর মানুষ করে তোলা । ফুফু বাবাকে উপদেশ দিলেন, “রোদে রোদে মাছ মেরে বেড়ায় । ওকে এখন স্কুলে ভর্তি করে দে ।” যে কথা সেই কাজ । বাবা যদিও একটু বেশী বয়স না হলে স্কুলে দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না। ঠিক হলো অমুক দিন বড়বোন স্কুলে সব শিক্ষকদের সঙ্গে পারিচয় করে দিয়ে আসবেন । যদিও সকল শিক্ষকই আমাকে চিনতেন । সাজ সাজ রব । তালপাতা কেটে শুকানো হলো কারণ তখনকার দিনে প্রথমে তালপাতায়, পরে শ্লেটে এবং সর্বশেষে বিশেষ এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কাগজে লেখার অনুমতি মিলত । রান্না করার মাটির হাঁড়ির নিচের জমাট বাঁধা কালি পানির সঙ্গে মিশিয়ে লাউয়ের পাতা দিয়ে দোয়াতে ভরে রাখা হত কালি হিসাবে । কুনচি বা বাঁশের ডাল অথবা বাঁশের আগাকে চোখা করে তৈরি করা হত কলম । নির্ধারিত দিনে প্রয়োজনীয় লটরবটর অর্থাৎ-তালপাতা, কালি, কলম এবং একটি খেজুর পাতার পাটি বা মাদুর নিয়ে বুজির সঙ্গে স্কুলে পৌঁছানো গেল। তখনকার দিনে মাটিতে মাদুর পেতে আমারা পড়া শিখতাম। আমরা বোধ হয় দেরি করে ফেলেছিলাম; গিয়ে দেখি “বচন খাঁ স্যার” সবাইকে নামতা শেখাচ্ছেন । সবাই দাঁড়িয়ে একযোগে বেসুরা গলায় “দুই দুগুনু চার” ইত্যাদি নামতা পড়ছে । বচন খাঁ স্যারের হাতে একটা আশ্মালি লাঠি ( উল্লেখ্য আশ্মালি এক প্রকার ছোট গাছ; ছাত্র-ছাত্রীদের পিটানোর লাঠি হিসাবে উত্তম )। স্যার দারোগার স্টাইলে লাঠি হাতে ছেলেমেয়েদের নামতা পড়তে সাহায্য করছেন । বুজির সঙ্গে ঘরে ঢুকতেই - -তুই তবে শেষ পর্যন্ত স্কুলে এসেছিস ! ওখানে দাঁড়িয়ে পড়। আমি লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম। ইতোমধ্যে সকলেই পড়া বন্ধ করে দিয়েছে । তোরা থামলি কেন? ধমক দিতেই আমার অবস্থা শোচনীয় । কেউ একজন বলে বসল - “ছ্যার রেশন হিসি করে দিয়েছে ”। সারা স্কুলে হাসির রোল পড়ে গেল। আমাদের স্কুলে তখন কোন ক্লাসের মাঝে ওয়াল বা বেড়া না থাকায় সব ক্লাশের ছেলেমেয়েরা পুরো স্কুল ঘরে কি হচ্ছে তা দেখতে পেতো । স্যার সকলকে ধমক দিয়ে চুপ করতে বললেন আর আমাকে আদর করে বললেন, “ভয় পেয়েছিস ? আজ তোর ছুটি । বাড়ী যা । কাল থেকে ঠিক মতো স্কুলে আসবি ।” বুজির সঙ্গে বাড়ী চলে এলাম । পথে বুজি শুধু বললেন -তুই কি রে ! এত ভয় পেলে কি চলে ! কেউ তো তোকে কিছু বলে নাই । এভাবে আমার স্কুলের প্রথম দিনটি শেষ হল । পর দিন থেকে নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছি। বচন খাঁ স্যারকে ভীষণ ভয় পাই । তবে পড়ানোর স্টাইল অন্যরকম । সব অক্ষর শেখান ছড়া দিয়ে ।

ক-য় কলাগাছ কচুর পাতা, কলমি শাক খাই,
কুন্চি কেটে কলম করে ক - লিখিরে ভাই

অথবা

খ-য় খড় হয় ধানের গাছে, সেই ধানে হয় খৈ
খালামনি খৈ ভাজেন নিত্য নিত্য খাই।

তালপাতা থেকে শ্লেটে লেখার বাঁধা পেরিয়েছি । বছর শেষে এবার কাগজে লেখার অধিকার পাব । এক সঙ্গে দশ-বার জন ছেলে মেয়ে কাগজ ধরবে । বিরাট অনুষ্ঠান । ঘরে ঘরে সাড়া পড়ে গেল । সারা গ্রামে উৎসবের আমেজ । খই ভাজা, মুড়ির মোয়া, মুড়কি ইত্যাদি তৈরি। নানা কাজ বেড়ে গেল বাড়ীর মেয়েদের । নির্ধারিত দিনে মুড়ি, মুড়কি, মোয়া এবং একটি রূপার টাকা, আমরা বলতাম কাঁচা টাকা, ও একখানি সাদা কাগজ নিয়ে স্কুল শুরু হওয়ার অনেক আগেই স্কুলে পৌঁছানো গেল । আজ কোন ক্লাস নাই। শুধু অনুষ্ঠান । তাই স্কুলের সব ছেলেমেয়েরাই আনন্দে ভরপুর। যথা সময়ে অনুষ্ঠান শুরু হল । আমরা যারা আজ কাগজ ধরব তারা সবাই ভালভাল জামা পরে এসেছি ( উল্লেখ্য সাধারণত: আমরা স্কুলে গায়ে কোন জামা দেই না, কেউ কেউ অবশ্য নতুন জামা পরে এসেছে )। বচন খাঁ স্যার অনুষ্ঠানের পরিচালক । স্যার রূপার টাকায় সিদুঁর মাখিয়ে সাদা কাগজটির উপর ছাপ দিয়ে কাগজে লিখে দিলেন - “এলাহী ভরসা”। পরের লাইনে লিখলেন - “মন দিয়ে কর সবে বিদ্যা উপার্জন । সকল ধনের চেয়ে বিদ্যা মহাধন । এই ধন কেহ নাহি নিতে পারে কেড়ে । যতই করিবে দান তত যাবে বেড়ে ।” আমরা সবাই স্যারের সাথে সাথে সুর করে উক্ত বাক্যগুলি পড়ার পর অনুষ্ঠান শেষ হল । রূপার টাকাটি শিক্ষকের বকশিস। তখনকার দিনে প্রাইমারী শিক্ষকদের বেতন ছিল পাঁচ টাকা যা দিয়ে তাদেরকে চলতে হত । এখন আমাদের কাজ হচ্ছে বাক্যগুলি মুখস্থ হলে কাগজখানি নদীর অথবা পুকুরের তলদেশে ডুব দিয়ে গিয়ে এক নিঃশ্বাসে কাদার নিচে লুকিয়ে রেখে আসতে হবে যাতে করে কাগজটি কেউ নষ্ট করতে না পারে । এখন থেকে আমরা ইচ্ছে মত কাগজে কলম দিয়ে লেখার অধিকার পেলাম । বিরাট অধিকার অর্জন করা গেল । এক দিনেই বড় হয়ে গেলাম । বাঁচা গেল ! এখন থেকে গ্রামের অনেক মহিলাদের প্রবাসী আত্মীয়কে চিঠি পত্র লিখে দেওয়া যাবে ।

গড়িয়ে গড়িয়ে আরো একটি বছর কেটে গেল । তৃতীয় শ্রেণীতে উঠেছি । রবি মাস্টার আমাদের শিক্ষক । রবি স্যার ছোটো খাটো মানুষটি । দারুন ট্যালেন্ট । বাংলা, ইংরেজী, অংক, এবং সংস্কৃততে দারুন পণ্ডিত । সুন্দর ছবি আঁকেন । খাতায় ছবি এঁকে দেন । যত আদর করেন পিট্টি দেন তার চেয়ে বেশী । রবি স্যারের মার খেয়ে যে টিকে থাকবে সে মানুষ হবে এই ছিল তখনকার কিংবদন্তী । ছড়া দিয়ে অংক শিখান -

মনের দামের বামে ইলেক মাত্র দিলে
আড়াই সেরের দাম শিশু অনায়াসে মেলে ।

অনেক দিন পরের কথা । আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি । গ্রামে গিয়েছি কোন পালা-পার্বণে । রবি স্যারের সঙ্গে দেখা এক দোকানে । পায় হাত দিয়ে ছালাম করতে গেলেই - স্যার ছিটকে দূরে সরে গেলেন । অনেক চেষ্টা করেও চেনাতে পারলাম না । বাবার নাম বলতেই চিনলেন । প্রথম থেকেই “আপনি”বলে সম্বোধন করছিলেন । কোন অবস্থাতেই তিনি স্বাভাবিক হতে পারছিলেন না । শেষ কালে বললেন - “জানেন বাবা, আজকাল আর কেউ প্রাইমারী শিক্ষকদের মনে রাখে না । তাছাড়া দিনকাল পাল্টে গেছে । আমাদের এখন অনেককে সমীহ করে বাঁচতে হয়। কিছু মনে করবেন না বাবা ।” সেই ডাক সাইটের রবি স্যার, যার ভয়ে অন্য স্কুলের ছেলেমেয়েরা পর্যন্ত মূর্ছা যেত ; ছেলে দুষ্টামি করলে মায়েরা রবি স্যারকে বলে দেবে বলে ভয় দেখাত, সেই রবি স্যার অনেকের ভয়ে সন্ত্রস্ত ! 

চতুর্থ শ্রেণীতে উঠেছি । ক্লাশে প্রায় বিশ জন ছাত্র ছাত্রী । আমি সব সময় তৃতীয় স্থান অধিকার করি । সামান্য ব্যবধানে আমার গ্রাম সম্পর্কে ভাগিনা মন্টু দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে । মন্টু অংকও মুখস্ত করে । গর্ব করে বলত- - বইতে বানান ভুল থাকলে অমার ভুল হবে, অন্যথায় ভুল হবে না । মন্টু এখন বিএ, বিটি পাশ করে আমাদের স্কুলের হেড মাষ্টারী করে । মন্টু মাস্টার নামে খ্যাত । নিজে প্রিন্সিপ্যাল হতে পারবেনা তাই স্কুলটিকে কলেজ পর্যায় উন্নীত হতে দিতে চায় না বলে এলাকায় গুজব । আমাদের মধ্যে প্রথম স্থান সব সময় জহুরের জন্য রক্ষিত । জহুর দারুন মেধাবী ছেলে । সব সময় প্রতিটি বিষয়ে অন্তত: পক্ষে বিশ পঁচিশ নম্বর বেশী পেত আমাদের থেকে। হাতের লেখা চমৎকার । মনে মনে ভাবতাম - - জহুর যদি স্কুলে না আসত অথবা পরীক্ষার সময় অসুখ করত তবে ভাল হত । অভাবের তাড়নায় জহুর প্রাইমারীর পর আর পড়তে পারে নাই । তখন জহুর পড়তে পারে নাই বলে কিছুই মনে হয় নাই । ত্রিশ বছর প্রায় কোন খবর জানি না । একবার বাড়ীতে বেড়াতে গেছি । তখন ঠিকাদারী করি। দারুণ পসার । কথায় কথায় মা বললেন -- তোর কি পশ্চিম পাড়ার জহুরের কথা মনে আছে ? খুব অসুস্থ । জানা গেল -- দীর্ঘদিন পাটকলে শ্রমিকের কাজ করত । আট দশটি ছেলে-মেয়ে হওয়ায় সংসার চালাতে বেবী টেক্সী চালায় আর মাঝে মধ্যে চুরি-চামারি করে । এখন কি হয়েছে- - ভীষণ অসুস্থ। অনেক পুরনো কথা মনে পড়ে গেল । এক সময় জহুরের কেন অসুখ করে না তাই ভাবতাম! পরের দিন কাউকে দিয়ে খবর দিতেই বিকালে জহুর এলো । প্রথমে আপনি-আজ্ঞে করে কথা বলার চেষ্টা করছিল । চেপে ধরতে পুরানা সম্মোধনে ফিরে আসি আমরা । পুরানা কথার স্মৃতিচারণ করা গেল। অনেক কথাই জহুর মনে করতে পারল না । কথায় কথায় তাকে কিছু অর্থ সাহাষ্য করতে চাইলে -- শুধু বলল, “ পারলে একটা ভাল কাজের ব্যবস্থা করে দাও ।” চেষ্টা করব বলে এসেছিলাম । চেষ্টা করেছিলাম কি না মনে নাই, তবে তার কয়েক বছর পর খবর পেয়েছিলাম জহুর আর নাই ।

দেখতে দেখতে আরো একটি বছর কেটে গেল । এখন প্রাইমারীর শেষ ধাপ । ইতোমধ্যে সরকারী নির্দেশ - -পঞ্চম শ্রেণীতে ইংরেজীর পরিবর্তে উর্দু পড়াতে হবে। আমরা দারুণ খুশি । ইংরেজী বিদেশী ভাষা তায় ভীষণ কঠিন । আমরা মুসলমান আমাদের উর্দু জানা উচিৎ। তাছাড়া উর্দু অনেক সোজা । স্কুলের কেউ কেউ আবার মন্তব্য করল - - তেলাপোকার পায়ে কালি মেখে কাগজের উপর ছেড়ে দিলেই উর্দু লেখা হয়ে যাবে । অতএব আলিফ, বে, তে, ছে ইত্যাদি শুরু হল । যারা ভাবছিল উর্দু সহজ হবে তাদের মুখ চুন । আমরা মুসলমানী ভাষা শিক্ষার করসৎ করতে থাকলাম । পড়া না পারার জন্য হুজুরের নিয়মিত পিট্টি । আমি তখন চতুর্থ শ্রেণীতে। আমার ইমিডিয়েট বড় - মেঝো ভাই এবং আমাদের এক ভাগনে “সামা” পঞ্চম শ্রেণীতে । কোন কারণে তিন দিন ছুটি থাকা সত্ত্বেত্ত দুজনেরই উর্দু পড়া হয় নাই । আগামী দিন নি:শ্চই ধোলাই হবে । হুজুর ছাড়ার পাত্র নন । বিকালে মেজোভাই, সামা, আমি এবং সামার ছোট বোন জাহু আমার সঙ্গে পড়ে, এক অনির্ধারিত সভায় বসা হল । আসন্ন দুই অগ্রজের সমূহ বিপদের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত হল--রাত্রে স্কুলে এসে স্কুলের সকল চেয়ার টেবিলে গরুর বিষ্টা বা গোবর মেখে রাখা হবে যাতে আগামী দিন স্কুল ছুটি হয়ে যায় । যে কথা সেই কাজ । রাত্রে দুইভাই একটু আগেই ঘুমাতে গেলাম । বাবা মা আর ঘুমাতে যায় না । আমরাও আর বের হতে পারছি না । একসময় চুপিচুপি বেরিয়ে পড়া গেল । সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ সারতে প্রায় সকাল হয়ে গেল । পর দিন স্কুলে বিরাট হই চই । কে করেছে এ কাজ? সবাই অস্বীকার করছে । আমাদের কথা তো কেউ কল্পনাও করতে পারল না, কারণ আমরা নম্র এবং ভদ্র তা ছাড়া বাবা দারুন রাগী । তার ছেলেরা কিছু অপকর্ম করলে কেটে দুই ভাগ করে ফেলবে । অপরাধীকে খুজে পাওয়া গেল না । তবে কেউ কেউ আন্দাজ করল-উত্তর বাড়ীর আকরামের দ্বারাই কাজ এটা হয়েছে । অতপর চেয়ার টেবিল পরিস্কার করতেই বেলা অনেক হয়ে গেল । স্কুল সেদিনের জন্য ছুটি । যা বাঁচা গেল । নতুন কোন ঘটনার জন্ম না দিয়েই প্রাইমারীর পাঠ চুকল। এর পর হাই স্কুল । মুক্ত আকাশ ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ