সালমান রুশদি'র উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হল- মিডনাইটস চিলড্রেন, 'হারুন এন্ড দ্য সী অব স্টোরিজ, লুকা এন্ড দ্য ফায়ার অব লাইফ, শেইম, দ্য স্যাটানিক ভার্সেস, শালিমার দ্য ক্লাউন, টু ইয়ারস এইট মান্থস অ্যান্ড টুয়েন্টিএইট নাইটস, দ্য গ্রাউন্ড বিনেথ হার ফিট, দ্য মুর'স লাস্ট নাইটস, ইত্যাদি। আলোচিত ননফিকশন- 'স্টপ এক্রস দিজ লাইন : কালেক্টেড নন-ফিকশন ১৯৯২-২০০২', 'ইমাজিনারি হোমল্যান্ড'। 'জাগুয়ার স্মাইল : অ্যা নিকারাগুয়ান জার্নি' তাঁর প্রখ্যাত ভ্রমণকাহিনী। তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশ পেয়েছে- 'বেস্ট আমেরিকান শর্ট স্টোরি'স ২০০৮'। প্রাচ্য পাশ্চাত্ত্যের মিলন, বিচ্ছিন্নতা তাঁর লেখার বিষয় যার সঙ্গে মিশে যায় জাদুবাস্তবতা ও ইতিহাস। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত 'দ্য স্যাটানিক ভার্সেস' উপন্যাসটির জন্য ১৯৮৯ সালে রুশদি'র বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করা করেছিল। সালমান রুশদি 'মিডনাইটস চিলড্রেন' উপন্যাসের জন্য ১৯৮১ সালে বুকার পুরস্কার পান। তিনি 'অ্যামেরিকান একাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড লেটারস'-এর সদস্য। 'দ্য টাইমস'-এর মতে- ১৯৪৫ সালের পর যুক্তরাজ্যের সেরা ৫০ জন সাহিত্যিকের তালিকায় তিনি ১৩তম। তাঁর জন্ম ভারতের মুম্বাই-এ, ১৯৪৭ সালে।
সাক্ষাৎকারটি নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর 'সানডে বুক রিভিউ' বিভাগে ছাপা হয়েছিল ২০১৫সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। ভাষান্তর : এমদাদ রহমান।
------------------------------------
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস :
এখন কোন বইগুলি পড়ছেন?
সালমান রুশদি :
তা-নাহিসি কোটস-এর 'বিটুইন দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যান্ড মি', যে-বইটি আমি এই মাত্রই পড়ে শেষ করেছি। বইটি আমাকে মুগ্ধ করেছে। তারপর পড়ব জ্যাক উইদারফোর্ডের 'চেঙ্গিস খান'; জন ডিদিওনের 'দ্য হোয়াইট এ্যালবাম', যাকে পুনরাবিস্কারের জন্য পড়াটা গুরুত্বপূর্ণ, এবং ...... পি. জি. উডহাউজের 'দ্য হার্ট অব এ গলফ'; যে-বইটি গলফ সম্পর্কে আমাকে ভালোই ধারণা দিচ্ছে, অন্ততপক্ষে যতক্ষণ বইটি পড়ছি; এবং- সল বেলো'র 'হামবল্ট্স্ গিফ্ট্'- মনে হচ্ছে এই বইটি বেশ কিছুদিন আমার সঙ্গি হয়ে থাকবে এবং সঙ্গি হিসেবে এই বইটি আমার মনে হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী হবে।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস :
আপনার সব সময়ের প্রিয় ঔপন্যাসিক কে?
সালমান রুশদি :
'সব সময়' মানেই কিন্তু একটা দীর্ঘ সময়; সেই দীর্ঘ সময়ে কাফকা ছিলেন, যার কথাবিশ্বে আমরা সবাই বাস করি; তারপর যার নাম আসবে, তিনি : ডিকেন্স-- আশ্চর্য কল্পনাশক্তি আর গদ্যের সৌন্দর্যের জন্য। কিন্তু সম্ভবত জয়েস প্রিয় হয়ে আছেন আর সকলের চেয়ে বেশিদিন ধরে।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস :
কোন ধরণের লেখা পড়তে বেশি পছন্দ করেন? এড়িয়ে চলে কোন ধরণের লেখা?
সালমান রুশদি : পড়তে গিয়ে আমি আসলে এতকিছু ভেবে দেখি না। যে-বইট আমাকে আকর্ষণ করে সেই বইটিই সাধারণত পড়তে চাই। তারপরও আমি একটি বিশেষ ধারার বই সম্পর্কে সম্প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছি বিশেষ একটি কারণে, সে জন্য আমাকে প্রচুর 'নন-ফিকশন উপন্যাস'ও পড়তে হচ্ছে- কারণ, আমাকে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে যেতে হবে। সুতরাং- মিলারের 'আর্মিস অফ দ্য নাইট'; কেনলি'র 'শিল্ডারস লিস্ট', কাপোটি'র 'ইন কোল্ড ব্লাড' এবং এধারার আরও যেসব বই পাওয়া যায় সেগুলি আমি এখন মন দিয়েই পড়ব।
কোন ধরণের লেখা এড়িয়ে চলি? হ্যাঁ, পর্ণগ্রাফি, এটাও একটা ধারা।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস :
আপনার বিরুদ্ধে যখন ফতোয়া জারি করা হল, তখন কোন বইগুলি আপনাকে মানসিক শক্তি যুগিয়েছিল?
সালমান রুশদি :
সে-সময়ের বাস্তবতায় এনলাইটেনমেন্ট লেখকদের লেখাপত্র পড়তে শুরু করেছিলাম। ভলত্যরের 'কাঁদিদ', দিদেরো'র 'জ্যাকোস দ্য ফ্যাটালিস্ট'; রুশো'র 'কনফেশনস', এছাড়াও জন স্টুয়ার্ট মিলের 'অন লিবার্টি'। আর সেই সময় আমি কিছু বুক রিভিউও করেছিলাম যাতে লেখার হাতটা চালু থাকে। মনে আছে ফিলিপ রথের 'দ্য ফ্যাক্টস' বইটিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছিলাম; তখন কুর্ট ভনেগাটের 'হোকাস পোকাস' বইটি তেমন টানেনি; যার কারণে ভনেগাট আমাকে কখনোই ক্ষমা করেননি, আর আমিও বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিলাম, আর সেকারণে আমি তার অন্যান্য বইগুলি খুব আগ্রহ নিয়ে পড়তে পেরেছিলাম- 'দ্য সাইরেন্স অব টাইটান', 'ক্যাটস ক্রেডল', এবং অবশ্যই যে-বইটির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করব- 'স্লটারহাউজ-ফাইভ' (বিখ্যাত মার্কিন সাহিত্যিক কুর্ট ভনেগাট রচিত বিজ্ঞান কল্পকাহিনীমূলক উপন্যাস। এতে মানুষের জীবনের অর্থ ও জীবদ্দশায় তার অবস্থাকে বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, এক্ষেত্রে মুখ্যচরিত্রের সময় পরিভ্রমণকে কাহিনী-যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। মুখ্যচরিত্র বিলি পিলগ্রিম সময়ের বাঁধন ভেঙে আলগা হয়ে পড়ে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ড্রেসডেন বোমাবর্ষণ ও তার পরের ঘটনাগুলোর মাধ্যমে তার জীবনের অর্থের সাথে তাল মেলানোর চেষ্টা করে)।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস :
শেষ বই যা আপনাকে কাঁদিয়েছে?
সালমান রুশদি :
যখন পড়ি তখন কিছুতেই কাঁদি না, সত্যি, যদিও আমি একবার কেঁদে ফেলেছিলাম 'শালিমার দ্য ক্লাউন'-এর একটি চরিত্রের মৃত্যু দৃশ্য লিখতে গিয়ে, চরিত্রটিকে আমি ভালবেসে ফেলেছিলাম।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস :
শেষ কোন বইটি আপনাকে ক্রুদ্ধ করেছে?
সালমান রুশদি :
এরকম কোনও বইয়ের কথা মাথায় আসছে না। আমার মধ্যে সেইসব বই এড়িয়ে চলার একটা প্রবণতা আছে যে-বইগুলিকে আমার কাছে মনে হয় যে এটা আমাকে প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ করবে। (বই যাদেরকে ভীত ক্রুদ্ধ করেছে অতীতে এমন কিছু মানুষের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে, তাদের জন্যই এই কথাগুলি বলছি)। রাজনীতিবিদদের বই আমাকে বরাবর বিরক্ত করে কিন্তু ওবামা'র 'ড্রিমজ ফ্রম মাই ফাদার' হচ্ছে একটি দুর্লভ ব্যতিক্রম। দুর্ভাগ্যবশত কোন এক বইয়ের দোকানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বই দেখেছিলাম, দেখেই খুব দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে গেছি।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস :
ইন্ডিয়া সম্পর্কে লিখিত কিংবা ইন্ডিয়ান লেখকের লেখা কিংবা অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান লেখকের লেখা কোন বইগুলি আপনার খুব পছন্দের?
সালমান রুশদি :
ই.এম.ফরস্টারের 'এ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া'; আনিতা দেশাইয়ের 'ক্লিয়ার লাইট অব দ্য ডে' আর সুকেতু মেহতার 'ম্যাক্সিমাম সিটি'।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস :
উপন্যাসের প্রিয় নায়ক কিংবা নায়িকা কে? কে আপনার প্রিয় খলনায়ক?
সালমান রুশদি :
প্রিয় নায়ক 'লিওপোল্ড ব্লুম' যে পশুপাখির নাড়িভুঁড়িগুলিকে মজা করে খেয়ে ফেলে। ব্লুম আবার প্রতিনায়কও। আবার অনেক বেশি বীরত্বপূর্ণ নায়কও আছে... হ্যাঁ, আগের দিনগুলিতে ফ্রাদো'র খুব ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম, যদিও তখন স্যাম গ্যামজি ছিল সবচেয়ে বেশি নায়কোচিত চরিত্র- এদের সবার চেয়ে। আর, খল চরিত্র- সেইসব দিনগুলিতে খুব ভাল কিছু খল চরিত্র ছিল। ডিকেন্সের ছিল কয়েকজন- উড়িয়েহ্ হীপ, ওকফোর্ড স্কুইরস। একেবারে সাম্প্রতিকসময়ে 'ক্যাচ-২২'তে জোসেফ হিলার'স এর মাইলো মিন্ডারবিন্ডার।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস :
ছোটবেলায় কেমন বই পড়তেন? তখন কে কে প্রিয় লেখকের তালিকায় ছিলেন?
সালমান রুশদি :
আমাদের সময়ে, ইন্ডিয়ায়, এবং সম্ভবত এখনও- পি. জি. উডহাউজ আর আগাথা ক্রিস্টি পড়েই আমরা আচ্ছন্ন হয়ে থাকতাম। আমি এই দু'জনের পর্বতসমান বই পড়েছি। এছাড়াও পড়েছি আর্থার রান্সোমের 'সোয়ালো এন্ড অ্যামাজন', পড়ে বিস্মিত হয়েছি লেক ডিসট্রিক্ট যাওয়ার সময় নৌকোতে ইংলিশ বাচ্চাগুলি অদ্ভুত কিছু এডভেঞ্চারে জড়িয়ে পড়ে আর ভয়ংকর সব পরিস্থিতির জন্ম হয়- সম্পূর্ণটাই ঘটছে বড়দের চোখ এড়িয়ে।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস :
এই যে আজকের আপনি, তাকে যে বইটি তৈরি করেছে সে বইটির নাম বলতে পারবেন?
সালমান রুশদি :
'সহস্র এক আরব্য রজনী'।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস :
আপনি যদি প্রেসিডেন্টকে কোনও বই পড়তে বলেন, কোন বইয়ের নাম বলবেন?
সালমান রুশদি :
'সহস্র এক আরব্য রজনী'
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস :
ধরুন আপনি এক সাহিত্যিক ডিনারপার্টির আমন্ত্রণকর্তা, সেখানে কোন তিনজন লেখক আমন্ত্রিত হবেন?
সালমান রুশদি :
জীবতদের মধ্যে : ওস্টের, ডি'লিলো, ম্যাক'ওয়ান; মৃতদের মধ্য থেকে : জয়েস, প্রুস্ত, কাফকা।
নিউ ইয়র্ক টাইমস :
হতাশাজনক কিংবা অতিমূল্যায়িত, পাঠের অযোগ্য- কোন কোন বইকে এরকম মনে হয়েছিল? শেষ কোন বইটিকে শেষ না করেই ফেলে রেখেছেন?
সালমান রুশদি :
পড়তে চেয়েও শেষ করতে পারিনি- এই কথাগুলি বলতে গেলেই আমি সমস্যায় পড়ে যাই, কিন্তু...'মিডল মার্চ' বইটির কথাই এক্ষেত্রে উল্লেখ করব। কোনোভাবেই শেষ করতে পারিনি- 'গো সেট এ ওয়াচম্যান'।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস :
জীবনীকার হিসেবে কাকে আপনি বেছে নিবেন?
সালমান রুশদি :
দুঃখিত, আমি নিজেই নিজের জীবনস্মৃতি লিখে ফেলেছি।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস :
আপনার এযাবৎ প্রকাশিত বইগুলির মধ্যে খুব প্রিয় কিংবা আপনার ব্যক্তিগত জীবনে খুব তাৎপর্যপূর্ণ বই কোনটি?
সালমান রুশদি :
দুটি বই আমার সন্তানদের জন্য লিখেছিলাম- 'হারুন এন্ড দ্য সী অব স্টোরিজ; এবং 'লুকা এন্ড দ্য ফায়ার অব লাইফ'।
নিউ ইয়র্ক টাইমস :
কোন বইগুলির কাছে আপনি বারবার ফিরে গেছেন?
সালমান রুশদি :
কাফকা'র 'দ্য মেটামরফোসিস'; বেলো'র 'দ্য এডভেঞ্চার অব ওগি মার্চ'; বোর্হেসের 'ফিকশন'; কালভিনো'র 'দ্য ব্যারোন ইন দ্য ট্রি'স'; গ্রাসের 'দ্য টিন ড্রাম; গারসিয়া মারকেজের 'ওয়ান হানড্রেট ইয়ার অব সলিচ্যুড'; এঞ্জেলা কার্টারের 'দ্য ব্লাডি চেম্বার'; ক্রিস্তোফার লগের- 'ওয়ার মিউজিক'; ডেরেক ওয়ালকটের 'ওমেরোস'।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস :
কোন বইটি এখন পর্যন্ত পড়েননি বলে আপনি লজ্জিত?
সালমান রুশদি :
পঠনের দিক থেকে আমার এত শূন্যতা রয়ে গেছে আর এই অক্ষমতার জন্য লজ্জিত হওয়ার সেই বয়সও আর নেই!
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস :
এরপর কোন বইটি পড়বেন বলে ঠিক করেছেন?
সালমান রুশদি :
এখন খুব পুনঃপাঠ চলছে। তাছাড়া নন-ফিকশন পড়ব অনেক-- রেশারদে কাপুসচিইস্কি'র 'দ্য ইম্প্যারর'; সুশান ওরলিন্স-এর 'দ্য অর্কিড থিফ'; ক্যাথেরিন বু'স-এর 'বিহাইন্ড দ্য বিউটিফুল ফরএভারস'।
0 মন্তব্যসমূহ