[হ্যাল ওয়ালিং কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া উপরাজ্যের ভিক্টোরিয়াতে বসবাস করেন। তিনি কানাডার একজন উঠতি গল্পকার। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি উত্তর আমেরিকার শ্রেষ্ঠ সাহিত্য পত্রিকাগুলোতে লেখালেখি করছেন এবং একটি উপন্যাস লেখায়ও হাত দিয়েছেন। গত মার্চ ৬, ২০১৮ তে আমেরিকার শর্ট ফিকশন অনলাইন ব্লগে তার এই গল্পটি ছাপা হয়। তার লেখার সরল ভাষা, বিষয় বিবেচনা, স্মৃতি ও অন্তর্গত বোধ, ও প্রকৃতি বর্ণনা তাকে বিশিষ্ট করে তুলেছে। ]
অফিসার আমাকে হারিয়ে যাওয়া শিশুটির ছবি দেখালো।
‘এটা কি তুমি ?’ সে প্রশ্ন করল?
‘যদি আমি হই, আমি কি কোন পুরস্কার পাবো?’
লোকটি ভাবে, আমি তার সঙ্গে মশকরা করছি এবং সে চোখদুটো কুঁচকে আমার দিকে তাকায়, কিন্তু যেটা ও দেখতে পায় না সেটা হলো, আমি কিন্তু বেশ খানিকটা গম্ভীর ছিলাম। শেষবার যখন আমি পুলিশের জন্য দরজা খুলে দিয়েছিলাম তখন ওরা আরাম করে সোফায় বসে ‘গরডন রামসে’ শো দেখছিল আর আমার সংগে চার অঙ্কের নগদ অর্থে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেছিল।
ব্রণের দাগসহ এই পুলিশ অফিসারটি দেখতে অনেকটাই ‘যিহোবা’র মতন। ‘তুমি কি দয়া করে এই ছবিটা নেবে?’ বলেই সে খড়খড় শব্দ করে ফটোকপিটা নাড়তে থাকে। আমার বিশ্বাস এটাকে এখনও জেরস্ক কাগজ বলা হয়।
‘ওটা দেখতে কোনভাবেই আমার মতন নয়’।
‘তোমার কি শৈশবের কোন ছবি আছে?’
অবিশ্বাস্য। আমি চিৎকার করে বলে উঠি—
‘অবিশ্বাস্য!!!’-- একজন অসন্তুষ্ট বাবার মতন।
নামের ট্যাগ অনুযায়ী অফিসারটির নাম ছিল ‘কিন্সকি’, দেখতে আমার চাইতে বয়সে তরুণই হবে, তবে খুব বেশী না। হাড়-জিরজিরে, ছাঁটাই করা ছাগলা-দাঁড়ি সহ সরু মাথা, এবং খুবই বাজে অঙ্গভঙ্গি । নানারকম পকেটওয়ালা পুলিশের ‘ইউটিলিটি বেল্ট’টি যেন ভেজা সাঁতারের পোশাকের মতন ঝুলে ছিল। বিন্দুমাত্র কোন উত্তেজনা ছাড়াই হঠাৎ আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, এটা কারো হাঙ্গামা করার একটা প্রয়াস।
‘এটা কি সত্যি যে, তুমি কখনও তোমার বাবাকে দেখোনি?’ সে বললো।
‘হ্যা...খুব ভালো বলেছো!!’
‘এবং তোমার মা মারা গেছেন?’
‘বাহ ! ‘তুমিতো দেখছি ঠিক সত্যিটাই ধরতে পেরেছো’।
‘তুমি কি কিছু মনে করবে, যদি তোমাকে ডিএনএ টেস্টের জন্য পুলিশ স্টেশনে যেতে বলি?’
‘কেন নয়? এটাতো আমার নতুন বছরের সংকল্প, অনেক বেশী ঘরের বাইরে যাওয়া আর কম্পিউটারে সময় কম দেয়া'। আমি বিড়ালের থালাটা শুকনো খাবার দিয়ে ভরে দেই, আর সবাইকে নিয়ে লিফটের দিকে যাই।
বাইরে, আগের দিনের বেশ মজবুত একটি কালো ক্রুজার গাড়ি ডাবল পার্ক করা ছিল। একজন নারী পুলিশ ড্রাইভিং সাইডের দিকে দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখের দিকে তাকালে গাড়ির ছাদটি পুরোপুরি দেখা যায় না।
‘কোনদিন এ গাড়িতে চড়েছো?’ সে প্রশ্ন করলো।
‘আমার মনে হয় এই প্রশ্নের উত্তরটি তুমি জানো’।
সে বাঁকা হাসি দেয় এবং ওর সঙ্গে ঠাট্টা করতে পেরে আমার ভালই লাগলো।
কিন্সকি গাড়ির পেছনের দরজাটি খোলে। মনে হয়, যেন ভিনাইল ফলকের মধ্যে পা রাখলাম। সামনের সিটে বসা কিন্সকি এবং ওর পার্টনার ন্যাপকিন, কাটাঁচামচ আর মশলা চালাচালি করে। আমি দেখতে পাই ওরা ভ্যাঙ্কুভারের অন্যতম সেরা রেস্টুরেন্ট ‘মঙ্গোলিয়ান গ্রিল’ থেকে খাবার কিনে এনেছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি এই ছেলেটি সম্পর্কে কী বলতে পারবে?’
‘একেবারে কিছুই না’, মহিলা পুলিশ কর্মকর্তাটি বললেন।
‘তোমার কেন মনে হলো এই ছেলেটিই আমি?’
‘তোমারইবা কেন মনে হলো যে আমি ভাবছি-- সে তুমি?’
সে এমনভাবে গাড়ি চালাচ্ছিল যেন পুলিশের গাড়িতে সাইরেন বাজছিল; আর একইসঙ্গে সে মুখের ভেতর নুডলস ঢুকাচ্ছিল। আমি তার কাছে ছবিটা দেখতে চাইলাম। কিঙ্কসি সিটের ফাঁক দিয়ে সেটি আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। ছবির শিশুটির নিখুঁত গোল চোখ, নরম ঢেউখেলা ঠোঁট, কানগুলো যেন ফিতার ধনুক। মনে হয় যেন সে কিন্ডারগার্টেনে পড়ছিল তখন। ছেলেটির ঠিক মাথার কাছে উপরে বড় বড় মোটা অক্ষরে লেখা ‘নিখোঁজ’। বর্ণনাটি কালি দিয়ে মুছে দেয়া হয়েছে।
রাস্তার মোড়ে বাতি জ্বললে গাড়িটা যখন থামলো তখন তাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'ওর নাম কি?’
‘যদি মিলে যায়, তবেই আমরা তোমাকে জানাবো’-- কিঙ্কসি উত্তর দিল। ‘এই মুহুর্তে খুব সহজেই সবকিছু আবেগে মিশে যাবার সম্ভাবনা আছে।’ আমাদের সামনে একজন ছন্নছাড়া লোক খুচরো পয়সার জন্য গাড়ির লোকগুলোর সাথে বকবক করছিল। নারী পুলিশ কর্মকর্তাটি জানালার কাঁচ নামিয়ে তাকে একটি গরম মাংসের খুসুর বাড়িয়ে দিল।
ডিএনএ টেস্ট করতে মাত্র দুমিনিট লাগলো। তারা আমাকে একটি স্যাঁতস্যাঁতে ফরেনসিক রুমে নিয়ে গেল। সেখানে একরঙা পাজামা-ফতুয়া পরা একজন অফিসার ফ্যাশন ম্যাগাজিন ‘ভোগ’পড়ছিল। সে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করলো। তারপর একটা রাবারের গ্লাভস হাতে পরে নিল এবং গালের ভেতর ত্যানা ঢুকিয়ে লালা ঝরিয়ে নিল। তারপর আমরা গাড়িতে ফিরে এলাম। আর অফিসাররা আমাকে বাড়িতে নিয়ে গেল।
‘ফোন নাম্বারটা কত তোমার'? কিন্সকি জিজ্ঞেস করলো।
‘কাজ দ্রুত চলছে।’
‘কালকের মধ্যেই হয়ত আমরা ফলাফলটা পেয়ে যাবো,’ নারী পুলিশ অফিসারটি বলল।
‘তখনই কি আমি আমার পুরষ্কারটি পাবো?’
‘তুমি এখনো কিছু জেতোনি, অফিসারটি বললো।
* * *
বাড়ি ফিরে প্রথমেই আমি যে কাজটি করি সেটি হলো ছেলেটিকে ওয়েবসাইটে খুঁজি। তাকে অনুসন্ধান করে খুঁজে পাওয়া কোন কঠিন ব্যাপার না। ১৯৯০ সালের হারানো শিশুদের তালিকাতেই তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়। অন্যান্য সাইটেও তার হারিয়ে যাওয়া বিষয়ে প্রচারিত অনেক খবর এবং ছবি খুঁজে পাই।
ম্যাথিউ’র বয়স যখন পাঁচ তখন ড্যানি’স রেস্টুরেন্ট থেকে সে হারিয়ে যায়। ম্যাথিউয়’র পরিবার সম্প্রতি সানসাইন কোস্টে বাড়ি বদল করেছে। ম্যাথিউ খুব জীবজন্তু ভালোবাসতো। তাঁর পরিবার এখনও আশা ছেড়ে দেয়নি। আজ তারা ম্যাথিউ’র 'তের’তম জন্মদিন উদযাপন করছে।
শেষের নিবন্ধটিতে একটা ডিজিটালি বয়স বাড়ানো ইমেজ ছিল। ওরা ছেলেটার চুল পাতলা করে দিয়েছে, চেহারাটাতে একটু ভারিক্কি আর ত্রুটিপূর্ণ ভাব আনা হয়েছে, চোখগুলো একটু প্রসারিত আর মুখটা অসমভাবে থলথলে দেখাচ্ছে; প্রাণহীন একটা চেহারা। নিন্তেন্দো গেইমের একটি ভিলেন চরিত্র ‘গোল্ডেনেই’র মতন বহুভুজ বোকা হাসি দিয়ে আছে সে।
আমি সারাদিনের কথা লিখি এবং অনলাইনে একটা ফোরামে পোস্ট করি। থ্রেডে আমি এ পর্যন্ত যত লেখা লিখেছি সে তুলনায় এবার অনেক বেশী উত্তর পাই। বেশীরভাগ লোকজনই আমাকে বিশ্বাস করে না। তারা ঠিক বুঝতে পারে না কীভাবে আমার ছেলেবেলার কোনো ছবি নেই। তারা বলছে পুলিশ আরও তথ্য প্রকাশ করবে। ডিএনএ পরীক্ষায় দুই থেকে তিন সপ্তাহ লাগে। তারা আমার মা সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে চাইলো আর নানাধরনের বাজে শব্দ দিয়ে তাকে নিকুচি করলো। আমাকে ভালোবাসাহীন ও মিথ্যেবাদী বলল, এবং বলল নিজেকে আমার মেরে ফেলাই উচিত।
ড্যানি’স শব্দটির সঙ্গে যতদূর মনে করতে পারি, এমন কোন জায়গায় আমি ছিলাম না কোনদিন। কিন্তু ড্যানি’স সম্পর্কে কিছু বিষয় আমি জানি। ওদের ‘ফিশার প্রাইস’ কোম্পানীর খাবার; বিষন্ন ওয়েট্রেস আর বেঢপ সাইজের ম্যেনু। সত্যিকথা বলতে কি, দশ বছর বয়সের নিচে ছেলেমেয়েরা প্রতি মঙ্গলবার ওখানে ফ্রি খাবার খেত।
আমি একটা পাবে যাই এবং যাকেই প্রথমে সামনে দেখি তার সাথেই কথা বলতে শুরু করি। আমি তাকে আমার গল্প বলি, এবং সে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে; কিন্তু সে যথেষ্ট একাকী এবং মদ্যপ হওয়ার কারণে সে চেষ্টা করে রহস্যের পাক খুলতে।
‘তোমার সবচেয়ে সাম্প্রতিক স্মৃতি কোনটি?’ লোকটি জিজ্ঞেস করে।
‘দেশলাই নিয়ে খেলা।‘
‘তখন তোমার বয়স কত ছিল?’
‘তিন? হয়তোবা চার।’
‘তোমার মা কখনও ছবি তোলেনি?’
‘তুলেছিল, কিন্তু সে সেগুলো হারিয়ে ফেলেছে।’
‘তোমার বার্থ সার্টিফিকেট?’
‘ওটাও সে হারিয়ে ফেলেছে। জিনিষপত্র গুছিয়ে রাখার ব্যাপারে সে কোনদিনই ভাল ছিল না।‘
‘তুমি তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করো নি? সে কি মারা গেছে?’
‘সে খুব ভাল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতো না।’
আমি আর বিয়ার পান করতে পারলাম না। রেড ওয়াইনে ফেরত গেলাম এবং আমাদের জন্য আরেক রাউন্ড মদ কিনলাম। পাব-এর পেছন দিকটায় কিছু মেয়ে ডার্ট খেলতে গিয়ে পালক ছুঁড়ছিল। দেখে মনে হচ্ছিল যেন এটা বিয়ের আগের শেষ ব্যাচেলর পার্টি।
‘আমি জানি না’, আমার নতুন বন্ধুটি বলে উঠলো। সে তার সেলফোনে ছবিটি পেয়েছে। আমার মুখের পাশে ছবিটি তুলে ধরে সে বললো, ‘মানে, এটা যে কেউ হতে পারে। ওটা তোমার সন্তানও হতে পারে।’
‘তারা একটা বিরতির সময়ে আমাকে ধরে ফেলে এবং ভেতরে প্রবেশ করে।’ এখন আমি একেবারে অন্য প্রসঙ্গে চলে যাই। ‘সে একবার আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। আমি তাকে গত কয়েক বছর দেখিনি। সে সব গার্ডদের চিনতে পারতো, কিন্তু কোনরকমে আমায় চিনতে পারতো। একবার মরিচের একটা খাবার এনেছিল। কেবল ওটাই সে রান্না করতে পারতো।
‘আর এরা?’ বলে সে তার সেলফোনটা তুলে আমাকে দেখায়। ছেলেটির পরিবারের ছবি। তারা শপথের ভঙ্গিতে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে - মা, বাবা এবং একটা ছোট্ট মেয়ে। সবাই মিলে একটি সাইনবোর্ড ধরে আছে, যেখানে লেখা ‘বাড়ি ফেরো, ম্যাথিউ।’ ছোট্ট মেয়েটির চোখদুটোতে কানায়-কানায় জল।
ব্যাচেলর পার্টি নিজস্ব গতিতে চলতে থাকে, কিন্তু কনে থেমে গিয়ে আমাদের গালে চুমু দিতে থাকে। ওর বন্ধুরা গান-বাজনা আর হৈ-হল্লার জন্য নিয়ম অনুযায়ী আলাদা হয়ে যায় আর সবশেষে ‘বিভার’ শব্দটি দিয়ে শেষ করে যা আমি ঠিক স্পষ্ট বুঝতে পারি না। এদের মধ্যে একজন একটি ছোট চকবোর্ডে দুটো ‘এক্স’ চিহ্ন এঁকে দেয়।
বার্টেন্ডার আমাদের মদ পরিবেশন করা বন্ধ করে দেবার পরই অবশ্য আমি আর আমার বন্ধু চলে যাই।
পাবের বাইরে এসে আমি তাকে বলি, ‘তুমি আসলেই একজন ভাল মানুষ।‘
‘আশা করি যা খুঁজছো, তা তুমি পেয়ে যাবে’ সে বললো।
বাড়ি ফিরে আমি আবার কম্পিউটারে বসি এবং সেই পারিবারিক ছবিটি বের করি। মায়ের দিকে দৃষ্টি দেই, তার ক্লান্ত আর আশান্বিত ভ্রুকুটির দিকে তাকাই। মনে করার চেষ্টা করি। ছবিটির সঙ্গে যুক্ত লেখাটি পড়ি। তাতে লেখা আছে বাবা ও মা উভয়েই ট্রেডমার্ক আইনজীবি হিসেবে কাজ করেন। আমি ওদের ফেসবুক প্রোফাইল দেখি এবং তাদের নিজস্ব প্র্যাকটিসের ওয়েবসাইটে গিয়েও দেখি।
‘হ্যালো?’ একটা নারী কন্ঠ শোনা যায়
‘তুমি কি ঘুমাচ্ছিলে?’
‘কে তুমি?’
‘আমি ম্যাথিউ।’
আমি তার শ্বাসের পরিবর্তন টের পাই, আর ফোনের অন্য লাইনে চারপাশের ঘিরে থাকা শব্দ শুনি। চিন্তা করি, এই মুহুর্তে আমি কেমন বোধ করছি, আমার হ্রদপিন্ড যেন প্রচণ্ড গতিতে দৌঁড়াচ্ছে, এবং আমি অনুমান করতে পারি যে, ঐ নারীটির ক্ষেত্রে এই বোধটি কেমন হতে পারে।
‘না, দুঃখিত,’ বলি আমি, এবং তারপর কলটা কেটে দেই।
* * *
আমি কখনও স্বপ্ন মনে রাখতে পারি না। আমি জানি যে প্রায়ই আমার একটা ভয়াবহ ওজনহীন অনুভূতি হয়, যেন সময় ও স্থান একই সময়ে, একই সঙ্গে, প্রতিটি দিক পরিবর্তন করতে থাকে। আমি জেগে উঠি, বিছানার চাদর ঘামে ভিজে যায়। ঘরের কোন এক প্রান্ত থেকে মায়ের কণ্ঠস্বর ভেসে আসতে থাকে, যেন সেই স্বর আমার নাড়ির স্পন্দন, ত্বকের অংশ। যেখানেই যাই সেখানেই আমি কণ্ঠটি শুনতে পাই। অন্ধকারে, অথবা আমার অজ্ঞানতায়। এটা যে কারোই হতে পারে। শব্দগুলো মনে রাখার কিছু নেই। আমি জানি, তারই কারণে একটা অদ্ভূত অনুভূতি আমায় ঘিরে রেখেছে। সময় ও স্থানের স্থানান্তর। রঙহীন আকার। একটা পরিচিত দুঃস্বপ্ন।
* * *
পরদিন দুপুরে আমার ফোন রিং হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি বিছানা ছাড়ি না।
‘আমি ভিপিডি’।
আমি নারীর কন্ঠস্বরটি চিনতে পারি।
‘তোমার টেস্ট নেগেটিভ এসেছে।’
‘মিল নেই?’
‘না মিল নেই’
‘তো এটুকুই?’
‘এটুকুই সে লিখেছে।’
‘কিন্তু তাহলে আমি কেন?’
‘যদি তোমাকে বলতে পারতাম, কিন্তু সত্যিটা যে কি, আমি ঠিক তা জানি না।’
অন্ধকার হয়ে আসছে। বিড়ালটা আমার পা জড়িয়ে আছে। আমি পাত্রে খাবার নেই, তারপর এলিভেটর দিয়ে নিচে নামি। অর্ধেক ব্লক হেঁটে আমি ভ্যানকুভারের ‘বেস্ট মঙ্গোলিয়ান গ্রিল’ রেস্টুরেন্টে যাই।
‘চার নাম্বার?’ সার্ভার ডেকে বলে।
আমি তাকে দশ ডলার দেই। সে জানে যে ভাংগতিগুলো সে রেখে দিতে পারে।
কাছেই একটা পার্ক ও ভেড়িবাঁধ আছে, যেখানে ইচ্ছে হলেই বসা যায় আর শহর দেখা যায়। আমি ঠাণ্ঠায় জমে যেতে যেতে খাবার খাই, ভেজা ঘাসে বসে অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি।
যখন আমি ছোট ছিলাম, তখন চাঁদের আকৃতি ও অবস্থান নিয়ে নিজের সঙ্গেই নিজে বাজি ধরতাম। বছরের পর বছর ধরে পরিচিতজনেরা অনেক চেষ্টা করে আমাকে বিজ্ঞান শিখিয়েছে। তারা বলেছে, এটা যথেষ্ট সহজ। তাদেরকে আমি বলেছি, আমি বিস্ময় পছন্দ করি। আবিষ্কারের আগের মুহুর্তগুলো আমার ভীষণ প্রিয়; বিশেষ করে যখন তুমি আশ্চর্য্য হও এটা ভেবে যে আদৌ সেখানে কিছু থাকবে কিনা।
কখনও কখনও বিষয়টা ঠিক তোমার মাথার ওপর দিয়ে যাবে।
কখনও কখনও এটা শুধু শুধুই চলে যাবে।
আবার কখনও, এটাই যখন শেষ বলে মনে হবে, ঠিক তখনই তার দেখা পাবে; দিনের আলোয় যেন সেটি চকচক করবে।
কখনও কখনও বিষয়টা ঠিক তোমার মাথার ওপর দিয়ে যাবে।
কখনও কখনও এটা শুধু শুধুই চলে যাবে।
আবার কখনও, এটাই যখন শেষ বলে মনে হবে, ঠিক তখনই তার দেখা পাবে; দিনের আলোয় যেন সেটি চকচক করবে।
অনুবাদকের পরিচয়
মৌসুমী কাদের
গল্পকার। অনুবাদক।
0 মন্তব্যসমূহ