ভাসিলি আকসিওনভ (১৯৩২-২০০৯) ছিলেন রাশিয়ান ঔপন্যাসিক এবং ছোট গল্পকার। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত প্রজন্মদের মধ্যে অন্যতম খ্যাতিমান লেখক হিসেবে পরিচিতি পান। তার মা-বাবা দীর্ঘদিন সোভিয়েত কারাগারে বন্দী থাকার ফলে তিনি সরকারী হোমে পালিত ছিলেন এবং পরবর্তীতে ১৯৫৬ সালে মেডিক্যাল স্কুল থেকে স্নাতক পাশ করেন।
কয়েক বছর ডাক্তার হিসাবে কাজ করার পর তিনি লেখালেখিতে ফিরে যান। ১৯৫০ দশকের প্রথম দিকে তাঁর কয়েকটি ছোট গল্প ও উপন্যাস প্রকাশ পায়। তাঁর উপন্যাস ‘কোলেগি’, ‘জিজদ্নি বিলে্’, ‘এ টিকেট টু দ্য স্টারস’ ইত্যাদি সোভিয়েত সমাজের বিদ্রোহী যুবক এবং তথাকথিত বেমানানদের নিয়ে ঝরঝরে বর্ণনায় লেখা কাহিনী। আকসিওনভ পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট নানা বর্ণের চরিত্রগুলোর মুখের অপভাষাগুলোকে তার লেখায় নবজন্ম দিয়েছিলেন। এ লেখাগুলো পশ্চিমা সংস্কৃতির কাছে ছিল খুবই আকর্ষণীয়। এগুলো সামগ্রিকভাবে সোভিয়েত সমাজের পূর্ববর্তী সমষ্টিগত আদর্শকেই তুলে ধরেছিল।
আকসিওনভ তার ‘ভিক্টরী’ নামের এই গল্পে একজন সাধারণ দাবাড়ু কীভাবে আবেগের সুযোগ নিয়ে ও স্নায়ুচাপ সৃষ্টি করে আরেকজন গ্রান্ডমাস্টারের কাছ থেকে বিজয় ছিনিয়ে নিতে পারে সেই অসাধারণ চিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছেন। ঘোড়া, নৌকা, সৈন্য…প্রতিটি গুটি চালের সাথে মানুষের মনে কতরকম রহস্য অনুভূতি ঘোরাফেরা করে এবং মুহূর্তেই যে জীবন কেমন অস্থিতিশীল ও ভিন্নমাত্রার হয়ে ওঠে সেইটিই এই গল্পের মূল বিষয়। ‘হেরে’ গিয়েও যে জীবনের কাছে জেতা যায় এবং মহৎ হয়ে ওঠা যায়, গল্পটি তেমনই একটি দৃষ্টান্ত।

একপ্রেস ট্রেনের বগিতে বসে গ্র্যান্ডমাস্টার তার সহযাত্রীর সাথে দাবা খেলছিলেন।
লোকটি কামরায় ঢুকে গ্র্যান্ডমাস্টারকে দেখে সঙ্গে সঙ্গেই চিনতে পেরেছিল। এবং তার মতন একজন দাবাড়ুর সঙ্গে একদান খেলে অবিশ্বাস্য জয়ের তীব্র গোপন ইচ্ছা পুষে রেখেছিল।...সে ঠান্ডা মাথায় কৌতুহলী ও সেয়ানা দৃষ্টিতে গ্র্যান্ডমাস্টারের দিকে তাকিয়ে ভাবলো, ‘কী আর হবে? ‘তাঁর সঙ্গে খেলতে পারাটাই তো বড় ব্যাপার। আর মনে মনে নিজেকে বোঝালো, ‘--- লোকটাতো আসলে একটা আবাল।’
গ্র্যান্ডমাস্টার তৎক্ষণাৎ বুঝে গেলেন যে তিনি ধরা পড়ে গেছেন। লোকটি তাকে চিনে ফেলেছে। বিষন্ন মনে তিনি এই সত্যটাও অনুভব করলেন যে খেলাটাকে অন্ততপক্ষে দুটো গেমে গড়াতে হবে। তাঁর মনে হলো, একটা সময় ছিল যখন তিনি মাঝেই মাঝেই গুগলভস্কি বুলেভার্ডের (*১) দাবা ক্লাবের জানালা দিয়ে এরকম গোলাপী আর উঁচু কপাল চেহারার লোক দেখতে পেতেন।
ট্রেনটা চলতে শুরু করলে সহযাত্রীটি শরীর মুচড়িয়ে নিখাদ চালাকির ভঙ্গিতে অনেকটা অনিচ্ছা ভাব করে জিজ্ঞেস করলো; ‘একটা ছোট্ট গেম হয়ে গেলে কেমন হয়, বন্ধু?’
‘হতেই পারে’ -- গ্র্যান্ডমাস্টার বিড়বিড় করে বলে ওঠেন।
লোকটি বগি থেকে মাথা বাড়িয়ে ট্রেনের সহকারীকে ডাকলো। সহকারী একটা দাবা সেট নিয়ে এলো। অনীহা ও উদাসীন ভাব দেখানো সত্বেও লোকটি দাবা সেটটিকে খপ্ করে হাতে তুলে নিলো। তারপর গুটিগুলোকে টেবিলে ছল্কে ফেলে দিয়ে গ্র্যান্ডমাস্টারের সামনেই দুটো বড়ে গুটিকে হাতের মুঠোয় আঁকড়ে ধরে রাখল। গ্র্যান্ডমাস্টার লোকটির বুড়ো আঙুল এবং তর্জনীর মাঝখানের থলথলে মাংসল জায়গাটিতে ‘জি.ও’ আঁকা একটা উলকি দেখতে পেলেন।
‘বাঁয়ের টা’ .... বলেই গ্রান্ডমাস্টার সামান্য একটু ভ্রু কুঁচকালেন। পরবর্তীতে ঐ বাম দিক আর ডানদিকের গুটিগুলোর মধ্যে কীভাবে মারমার কাটকাট যুদ্ধটা হতে পারে সেটি অনুমান করার চেষ্টা করলেন।
তিনি সাদা গুটি নিলেন।
'আমাদের কিছুটা সময় কাটাতে হবে, ঠিক? দাবা হোল ভ্রমণের সময় শুধুই একটা সময় কাটাবার উপায়’, গুটিগুলো গুছাতে গুছাতে জিও খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো।
ওরা খুব দ্রুতই ‘নর্দান গ্যাম্বিট’খেলাটা খেলে ফেললো এবং তারপরই সবকিছুতে বিভ্রান্তি শুরু হলো।
গ্র্যান্ডমাস্টার বোর্ডের দিকে সতর্কভাবে তাকিয়ে ছোট ছোট গুরুত্বহীন চাল দিতে শুরু করলেন। তার চোখের সামনে বেশ কয়েকবার রানীকে দিয়ে চেক দেয়ার সম্ভাবনা জ্বলজ্বল করে দেখা দিলেও তিনি চোখের পাতা নামিয়ে সবকিছু সম্বরণ করলেন এবং মশার ভোঁ ভোঁ আওয়াজের মত গুন্ গুন্ করে ক্লান্তিকরভাবে লোকটিকে সমবেদনা দেখিয়ে যেতে লাগলেন।
‘সাহসী খাস বুলাস,…(*২)
তোমার সাকলাই গরীবি বাস …’
জিও একঘেয়ে কন্ঠে গেয়ে উঠল…
গ্র্যান্ডমাস্টার প্রতিটি কাজের ব্যাপারে ছিলেন খুবই যত্নবান। কাপড় পরা থেকে শুরু করে আদব-কায়দাসহ প্রতিটি ব্যাপারে তিনি খুবই সতর্ক ছিলেন। এসব দেখে সাধারণত মনে হবে যে, তার আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে এবং তিনি সহজেই মনে কষ্ট পান। উনি কম বয়েসী ছিলেন। তার পরনে ধূসর রঙের স্যুট এবং হালকা রঙের টাই। টাইটা খুবই সাধারণ মানের। তিনি ছাড়া আর কেউ জানতো না যে তাঁর এই সাধারণ টাই’য়ে ‘হাউজ অফ ডিওর’ লেখা একটা লেবেল লাগানো আছে। এই ছোট্ট গোপন বিষয়টি চুপচাপ স্বভাবের তরুণ গ্র্যান্ডমাস্টারকে একধরণের স্বাচ্ছন্দ্য দিত। তাঁর আছে একজোড়া ভারী চশমা। এ চশমা অন্যদের কাছে তার ভীরু চোখের চাহনী আর আত্মবিশ্বাসের অভাববোধকে গোপন করে। তবে নিজের ঠোঁটের ব্যাপারে তাঁর খেদ আছে। কারণ ওটার একটা স্বভাব হলো যখন তখন করুণ একটা হাসি দিয়ে ফে্লা অথবা থরথর করে কাঁপা। যদিও তিনি সহজেই অন্যদের কাছে নিজের ঠোঁটগুলোকে লুকোতে পারেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এটি এখনও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
জিওর খেলাটা গ্র্যান্ডমাস্টারকে একই সঙ্গে চমৎকৃত ও হতাশ করছিল। বোর্ডের বামপাশের গুটিগুলো জট বেঁধে ঠকবাজি করতে পারে এমন একটা সন্দেহের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। ওদিকের সমস্ত গুটি থেকে যেন বাথরুম আর ক্লোরিনের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছিল। ব্যারাকের পঁচা আর রান্নাঘরের ভেজা ত্যানা ছাড়াও আরো ছিল ক্যাস্টর অয়েলের দীর্ঘস্থায়ী গন্ধ; আর গ্রান্ডমাস্টারের শৈশবের সেই পেট খারাপের গন্ধ।
‘তা আপনি হলেন গিয়ে গ্র্যান্ডমাস্টার, আরও কত কি, নাকি?' জিও জিজ্ঞেস করলো।
‘হ্যা’, গ্রান্ডমাস্টার স্বীকার করলেন।
‘হা হা হা , কি দৈব ব্যাপার?' জিও অবাক হলো।
‘দৈবটা আবার কী?' কোনটাকে দৈব বলছে সে? এটা কি কোনো দৈব বিষয়? দৈবের মতো এখানে কি ঘটতে পারে?
'আমি চাল ফিরিয়ে নিচ্ছি, আমার এই চাল ফিরিয়ে নেওয়াকে দয়া করে মেনে নিন।'
গ্রান্ড মাস্টার আতঙ্ক নিয়ে খানিকক্ষণ ভাবলেন। তারপর কী ঘটতে যাচ্ছে অনুমান করে হাসলেন। বললেন, 'হ্যাঁ, অবশ্যই, অবশ্যই।'
‘তা, আপনি হলেন গ্র্যান্ডমাস্টার, কিন্তু আমি আপনার ‘রানী’ আর ‘নৌকা’ কে ঘেরাও করছি’, জিও বলল। তারপর সে তার হাত তুলে ঘোড়ার গুটিটা দিয়ে বোর্ডের উপরে উত্তেজনা ছড়াবার চেষ্টা করল।
‘পেছনের দরজা দিয়ে আক্রমণ’? গ্র্যান্ডমাস্টার মনে মনে বললেন; ‘ওটা ভিলোচকা! (*৩) দাদামশাইয়ের ছিল একটা নিজস্ব আক্রমণের ছক যা কতকটা কাঁটাচামচের মতন। তিনি কাউকে ছকটি ব্যবহার করতে দেননি। এসব ছিল তাঁর নিজস্ব সম্পদ। যেমনটি ছিল তাঁর ব্যক্তিগত ছুরি, কাটা, ব্যবহারের প্লেট ও ছোট্ট পিকদানী। ‘লায়ার’ (*৪) পশমের ভারী কোটটার কথাও মনে আসছে। ঢোকার দরজার পাশেই সেটা ঝুলানো থাকতো। যদিও দাদামশাই কখনই সেটা পরে বাইরে যেতেন না। দাদা-দাদীকে স্মরণ করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একটা আক্রমণাত্বক চাল দিলেন তিনি। গুরুজনদের হারানোটা সত্যিই খুব কষ্ট্কর।’
ঘোড়ার গুটিটা যখন বোর্ডের উপর ঝুলছিল তখন সম্ভাব্য চেক আর শিকারের লক্ষ্য--এসব কিছু যেন গ্র্যান্ডমাস্টারের চোখের সামনে আবার ভেসে উঠল। হায়রে, ঘোড়ার ময়লা বেগুনী পাছা, প্রায় ছিড়ে আসা পুরু ফ্ল্যানেলের জামা এতটাই প্ররোচিত করছিল তাকে যে তিনি কাঁধ ঝাঁকালেন।
‘তুমি কি ‘নৌকা’ বিসর্জন দিচ্ছো?’ জিও প্রশ্ন করল।
‘ কিইবা করতে পারি আমি?’
‘একটা নতুন আক্রমণের জন্য নৌকা বিসর্জন দিচ্ছো? আমি কি ঠিক অনুমান করলাম?’ জিও প্রশ্ন করল।
‘আমি শুধু রানী কে বাঁচাবার চেষ্টা করছি’, গ্র্যান্ডমাস্টার বিড়বিড় করে বললেন।
‘তুমি আমাকে ধোকা দেবার চেষ্টা করছো নাতো?’ জিও আবারও প্রশ্ন করল।
‘না, কী বলতে চাও? তুমি একজন পাকা খেলোয়াড়।’
জিও তার মনের মধ্যে পুষে রাখা রাখা চালটা দিয়ে আক্রমণ করলো।
গ্রান্ডমাস্টার সিঁড়ির পেছনের এক কোণে রানীকে লুকিয়ে রাখলেন। ধ্বসে পড়া পাথরের সিঁড়িগুলো বাঁকানো। এখানে সামান্য পচে যাওয়া গাছের গুড়িগুলোর সঙ্গে শরৎকালের পচা মেপলপাতার কটু গন্ধ ভরে আছে। এখানে তুমি আরাম করে বসো---উবু হয়ে থাকো। ভারী সুন্দর জায়গাটা। যেভাবেই হোক এখানে তোমার আত্মবিশ্বাসটা ভেঙে পড়বে না। বসার আসনটা এক সেকেন্ডের জন্য একটু উঁচু করতেই সিঁড়ির পেছন থেকে তিনি দেখতে পেলেন জিও তার নৌকাটা সরিয়ে ফেলছে।
বা পাশে অর্থহীন ভিড়ের মধ্যে কালো ঘোড়াটির অনধিকার প্রবেশ ঘটেছে। স্কয়ার বি-ফোরে তার এই দখলদারী যে কোন মূল্যেই হোক গ্র্যান্ডমাস্টারকে চিন্তায় ফেলে দিলো।
গ্র্যান্ডমাস্টার অনুভব করলেন যে, আজকের এই সবুজ শরৎ সন্ধ্যায় বিচ্ছিন্নভাবে কোন হাসিখুশী কল্পনাই ধোপে টিকবে না। যদিও একথা সত্য যে গর্ধব টাইপ কিছু লোক সারা পৃথিবী জুড়ে দারুণ আনন্দের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে--নৌবাহিনীর ক্যাডেট বিলি, হ্যারী নামের সেই কাউবয়, সুন্দরী মেরী ও নেলী, ব্রিগেটিনের জলপথে ভ্রমণ..., কিন্তু এমনও মূহুর্ত আসে যখন স্কয়ার-ফোরে কালো ঘোড়াটি রেখে আসল বিপদটা টের পাওয়া যায়। যেন একটা কঠিন প্রতিযোগিতা ধেয়ে আসে--- সূক্ষ্ম, চিত্তাকর্ষক এবং কৌশলী। সামনে কেবল টিকে থাকা।
গ্র্যান্ডমাস্টার একটা সৈ্ন্য জিতে নিলেন। তারপর রুমালটা হাতে তুলে নিয়ে নাক ঝাড়লেন। কয়েক মুহুর্ত গেল কেবল চুপচাপ। যখন তার ঠোঁট এবং নাক রুমাল দিয়ে ঢাকা ছিল, তখন একটা তুচ্ছ দার্শনিক মেজাজ তাকে ভর করলো।
‘কিছু অর্জন করার এটাই উপায়’ নিজেকেই নিজে বলেন তিনি। ‘কিন্তু তারপর কী? সারাজীবন ধরে তুমি কেবল চেষ্টা করছো কিছু অর্জন করতে, তারপর বিজয় তোমার হবেই, কিন্তু এর মধ্যে কোন আনন্দ নেই। উদাহরন স্বরূপ হংকং শহরটিকে ধরা যাক-- ধরা ছোঁয়ার বাইরে ভীষণ রহস্যময় মনে হয়। কিন্তু আমি ইতিমধ্যে সেখান থেকে ঘুরে এসেছি। আমি প্রায় সব জায়গাতেই ঘুরে ফেলেছি।’
সৈন্য হারিয়ে জিও’র খুব একটা ক্ষতি হয়েছে বলে মনে হলো না, কারণ একটু আগেই সে গ্র্যান্ডমাস্টারের একটা নৌকা খেয়ে ফেলেছে। সে রানীকে সরিয়ে ফিরতি চাল দিল। এ চালটা গ্র্যান্ডমাস্টারের বুকের ভেতর দপদপ করা সহ চিনচিন মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়ালো।
গ্র্যান্ডমাস্টার জানতেন-- তার জন্য আরও কিছু আনন্দ জমা ছিল। যেমন, বোর্ডের সমস্ত দৈর্ঘ্য বরাবর কোণাকুণিভাবে হাতির চালটা দিতে গিয়ে দীর্ঘ সময় নেয়ার আনন্দ উপভোগ করা। হাতি গুটিটাকে যদি দাবা-বোর্ডের পাশে একটু টেনে আনা হয় তবে সেটি কিছুটা হলেও প্রতিস্থাপন করবে মস্কো শহরের কাছে কোন পুকুরের রৌদ্রজ্জ্বল এবং হালকা স্থির পানিতে দ্রুত পিছলে যাওয়া কোন ডিঙি-নৌকাকে। আলোর বাইরে, ছায়ার মধ্যে,… ছায়ার বাইরে, আলোর ভেতরে…।
গ্র্যান্ডমাস্টারের ‘এইচ-এইট বর্গক্ষেত্র’টি দখল করার একটা অনিবার ইচ্ছা জাগল। এটি ছিল একটি মায়ার ঘর, ভালোবাসার চূড়া; ঘন্টাধ্বনি বাজিয়ে যেন স্বাগত জানানো হতো এ ঘরে, যার উপরে স্বচ্ছ ফড়িংয়েরা বাতাসে ভাসতো।
‘তুমি যেভাবে নৌকাটাকে খেলে সেটি কিন্তু ছিল খুবই বুদ্ধিমান একটা চাল, কিন্তু আমি ওটাকে উড়িয়ে দিলাম,’ জিও গম্ভীর গলায় বললো; শুধু শেষের শব্দগুলো তাঁর বিরক্তিটাকে ঢেকে রাখতে পারছিল না...বিশ্বাসঘাতকতা করছিল।
গ্র্যান্ডমাস্টার নরম গলায় বললেন, ‘দুঃখিত’। ‘তুমি হয়ত কয়েকটা চাল ফিরিয়ে নিতে চাও, ঠিক?’
‘না, না, কোন প্রশ্রয়ের দরকার নেই, আমি ক্ষমা চাইছি, জিও বলে।
‘আমি আমার তলোয়ারটা দিয়ে দেবো...
তেজী ঘোড়াটাও দেবো...
তুমি শুধু তোমার ঐ রাইফেলটা দিয়ে দাও......’
জিও বুঁদ হয়ে দানের কৌশলটা মনস্থ করতে করতে গানটা গাইতে থাকে...।
তুমুল ভালোবাসায় হুমড়ি খেয়ে পড়া গ্রীস্মের ছুটিটা গ্র্যান্ডমাস্টারকে কোন আনন্দ দিলো না। বরং বিরক্তই করলো। সে অনুভব করল, ঠিক কেন্দ্রভাগে সহসাই এমন শক্তি জন্ম নেবে যা বাহ্যিকভাবে যৌক্তিক কিন্তু ভেতরে ভেতরে অযৌক্তিক। ফের শোনা যাবে বেসুরো সেই চেঁচামেচি, পাওয়া যাবে ক্লোরিনের গন্ধ – যেমনটি ঘটে তার দাবার বোর্ডের বাম পাশকে নিয়ে তার নচ্ছার স্মৃতির দূরবর্তী করিডোরগুলোতে।
‘আমি অবাক হয়ে ভাবি, কেন সব দাবা খেলোয়াড়রা ইহুদি হয়?’ জিও প্রশ্ন করল।
‘সবার কথা কেন বলছো?’ গ্র্যান্ডমাস্টার উত্তর দিলেন। ‘আমাকেই উদাহরণ হিসেবে ধরো না কেনো। আমিতো ইহুদি নই।’
‘তাই নাকি?’ জিও অবাক হয়ে বলল। ‘আমাকে ভুল বুঝোনা, আমি ঠিক সেভাবে বলিনি। আমি এক্ষেত্রে এতটা সংস্কারাচ্ছন্ন নই...শুধু একটু কৌতুহল ছিল, এই আর কি।’
‘ঠিকাছে, নিজেকেই উদাহরণ হিসেবে ধরো, গ্র্যান্ডমাস্টার বললো, ‘তুমিতো ইহুদী নও’।
‘আমি কীভাবে তা হবো! জিও বিড়বিড় করতে করতে বলল এবং আবার গোপন পরিকল্পনায় বুঁদ হয়ে পড়ল।
‘যদি আমি এটা করি, তাহলে ও ওটা করবে’ জিও মনে মনে এভাবে ভাবতে থাকল। ‘যদি আমি ওর গুটিটা এখানে সরাই তাহলে গ্র্যান্ডমাস্টার তার গুটিটা ওখানে সরাবে, তারপর আমি ওখানে সরাবো......অবশেষে ওকেই আমি হারাবো..., বড় কথা হচ্ছে -- গ্র্যান্ডমাস্টার, দাবার গুরু। তারপরও আমাকে হারাবার মত শক্তি তার নেই। আমি তোমার চ্যাম্পিয়নশীপ খেলাগুলো চিনি; অনেক আগেই খেলায় আঘাত এনে চাল দেবে তুমি...। কিন্তু আমিও তোমাকে ভেঙে গুড়িয়ে দেবো, অথবা অন্ততপক্ষে তোমার নাকটাকে ফাটিয়ে রক্তাক্ত করে ছাড়বো...!’
‘হুম, আমার খেলার মান অনেক নেমে গেছে,’ জিও গ্র্যান্ডমাস্টারকে বললো, 'কিন্তু কিছু মনে করো না, এখনও হাতে অনেক সময় আছে।’
জিও বোর্ডের মাঝখানে চাল দিয়ে আক্রমণ শুরু করলো। প্রত্যাশা অনুসারে অচিরেই সেখানে একটা অর্থহীন আর ভয়াবহ রণক্ষেত্র গড়ে উঠলো। সেখানে কোনো ভালোবাসা নেই। কোনো মিলিমিশ নেই। কোনো আশা নেই। জীবন নেই। আছে জ্বরের মতো শীত শীত বোধ। আছে হলুদ বরফ আবার। যুদ্ধের পরের মতো দুরাবস্থা আর এখানে শরীর জুড়ে চুলকানি আছে।
বোর্ডের মাঝখানে কালো রানীটা কামার্ত কাকের মত কা কা শব্দ করছে। খুঁজছে কাকের ভালোবাসা। গুটিগুলো ছুরি দিয়ে একটা টিনের বাটি কেটে প্রতিবেশীদের দিকে ছুঁড়ে মারছে।
কেনো এই জীবন অর্থহীন আর বিভ্রান্ত হয়ে উঠেছে তার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এই কেন্দ্রে নেই। খেলা শেষ করার সময় হয়ে এসেছে।
‘না’, গ্র্যান্ডমাস্টার চিন্তা করলেন, ‘দেখো, এর বাইরেও কিছু আছে।’ তিনি জোহান সেবাস্টিয়ান বাখ এর একটা দীর্ঘ পিয়ানো রেকর্ড বাজালেন এবং হ্রদয়কে সুরের স্বচ্ছ ও পরিমিত মূর্ছনায় শান্ত করলেন। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো মনে হলো এই সুরের মূূর্ছনাকে। মনে হলো তিনি এরপর রাশিয়ার অবকাশ কাটানোর জন্য তৈরি গ্রাম্য ঘর দাচার দিকে হেঁটে গেলেন। সেই ঘর থেকে বেরিয়ে সমুদ্রের দিকে চললেন। মাথার উপর পাইন গাছের মর্মর ধ্বনি আর পায়ের নিচে পিচ্ছিল তুলতুলে কাঁটা সূঁচের মত বিঁধতে থাকলো।
সমুদ্রকে ভেবে ও অনুকরণ করে নিজের অবস্থানটা আবার পরখ করে নিলেন তিনি এবং সব কিছুকে মেলাতে চেষ্টা করলেন। সহসাই হালকা আর শুদ্ধ মনে হলো নিজেকে। 'বাখ কোডা সুরে' ডুবে গিয়ে কালো গুটিকে কিস্তিমাত চাল দেওয়ার মতো একটা চাল হাতে এলো। কিস্তিমাতের এই পরিস্থিতিটা একটা ডিমের মতো ম্লান আর সুন্দর দেখালো।
গ্র্যান্ডমাস্টার জিওর দিকে তাকালেন।
সে ছিল শান্ত। গ্র্যান্ডমাস্টারের খেলা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকাটা বুঝতে পেরে সে চোখ রাঙাচ্ছিল।
গ্রান্ড মাস্টার খেয়ালই করেননি যে নিজের রাজাকে তিনি নিজেই কিস্তির মুখে ঠেলে দিয়েছেন। তিনি চুপ হয়ে গেলেন, হয়ত ভয় পাচ্ছিলেন যেন সেই মুহূর্তটি নষ্ট না হয়।
সে ছিল শান্ত। গ্র্যান্ডমাস্টারের খেলা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকাটা বুঝতে পেরে সে চোখ রাঙাচ্ছিল।
গ্রান্ড মাস্টার খেয়ালই করেননি যে নিজের রাজাকে তিনি নিজেই কিস্তির মুখে ঠেলে দিয়েছেন। তিনি চুপ হয়ে গেলেন, হয়ত ভয় পাচ্ছিলেন যেন সেই মুহূর্তটি নষ্ট না হয়।
ঘোড়াটি সরিয়ে জিও খুব নরম এবং সাবধানী স্বরে বললো, ‘কিস্তি’। ভেতরের গজগজ ভাবটা নিজের মধ্যে সে কমই চেপে রাখতে পারলো।
......গ্র্যান্ডমাস্টার চিৎকার করে দৌড়ে পালালেন।
দাচার মালিক এভরিপিদ ও নিনা কুজমিনিচনা দুজনেই খুব দৃঢ় মনের মানুষ ছিলেন। তারা পায়ের ছাপ রেখে রেখে আর হুইসল বাজাতে বাজাতে তাঁর পেছন পেছন ছুটলেন। শিকলে বাঁধা কুকুর নচকা, যার গলায় তখনও চেইনটা ঝুলছিল, সেটা নিয়েই সে গ্র্যান্ডমাস্টারকে ধরার জন্য সবার সামনে দৌড়াতে লাগলো।
ঘোড়াটাকে সরিয়ে আর নিশ্বাসের সাথে একটা বেদনাদায়ক আনন্দ নিয়ে জিও আরেকবার উচ্চারণ করলো,‘কিস্তি'...
......গ্র্যান্ডমাস্টার একটা ভিড়ের সঙ্গে চলছিলেন। তারা তার জন্য পথ তৈরী করে দিচ্ছিল। যে লোকটি পেছনে হাঁটছিল, সে শক্ত কিছু একটা দিয়ে গ্র্যান্ডমাস্টারের কাঁধে হালকা স্পর্শ করছিল। কালো কোট পরা লোকের কলারের ভাঁজে এস এস পরিচয়চিহ্ন আছে। সে সিঁড়ির উপরে তার জন্য অপেক্ষা করছিল। একটা সিড়ি- আধা সেকেন্ড, আরেকটা সিঁড়ি-- এক সেকেন্ড, আরেকটা-দেড় সেকেন্ড, আরেকটা- দুই সেকেন্ড, …সিঁঁড়িগুলো বেড়েই চলেছে। উপরে কেন? এরকম ব্যাপার খাাঁড়িতে থাকার কথা । গ্র্যান্ডমাস্টার ভাবলেন, ‘অবশ্যই সাহসী হতে হবে’। এটা কি বাধ্যতামূলক? একজন মানুষের মাথায় নোংরা গন্ধের ছালা রাখতেে কতটা সময় লাগে?
তারপর সবকিছু অন্ধকার হয়ে এলো এবং দম নেয়া কঠিন হয়ে পড়ল। শুধু দূরে কোথাও ‘ব্রাভুরা মেজাজে’ একটা অর্কেস্ট্রা বেজে চলছিল। সঙ্গে বাজে সেই গান...
‘সাহসী খাস বুলাস,…
‘কিস্তিমাত’… বলেই তামার ট্রাম্পেটের মতন লাফিয়ে উঠল জিও।
‘শেষ পর্যন্ত তুমি এখানে এসে পড়লে,' গ্র্যান্ডমাস্টার বিড়বিড় করে বললেন, ‘অভিনন্দন!’
‘ও ভগবান’, আমি সত্যিই নিজেকে নতুনভাবে ক্লান্ত বানিয়ে ফেলেছি। আমি গোল্লায় যাবো দেখছি। শুধু ভাবো, এটা কতটা অবিশ্বাস্য! সত্যিই অবিশ্বাস্য, আমি গ্র্যান্ডমাস্টারের চেক’কে গুড়িয়ে দিয়েছি। অবিশ্বাস্য, কিন্তু এটা সত্যি! ' সে হাসিতে ফেটে পড়ল। ‘আমার জন্য ভালো!' বলে সে মৃদুভাবে নিজের মাথা চাপড়াল।
‘ওহ আমার গ্র্যান্ডমাস্টার, আমার গ্র্যান্ডমাস্টার,’ গুনগুন করতে করতে সে গ্র্যান্ডমাস্টারের কাঁধে হাত রেখে বন্ধুত্বপূর্ণভাবে ঘষতে থাকল, তারপর বলল, তুমি একজন ভাল বন্ধু, তবে ... তোমার দুর্বল স্নায়ু ভেঙে পড়েছিল, এটা স্বীকার করো!’
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি ভেঙ্গে পড়েছিলাম', গ্র্যান্ডমাস্টার তাড়াতাড়ি স্বীকার করলেন।
জি.ও. হাত দিয়ে দাবার গুটিগুলোকে বোর্ড থেকে তুলে সাফ করল। বোর্ডটা পুরনো ও ভেঙেচুরে গেছে। নানা জায়গায় চকচকে আস্তরগুলো উঠে গেছে। ভাঙা জায়গা গুলোতে হলুদ কাঠ বেরিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে। এখানে-সেখানে আংশিক বৃত্তাকার দাগ পড়ে আছে। এগুলো অতীতে রেলপথে চা পরিবেশনের সময় চায়ের কাপ থেকে এই দাগগুলো পড়েছিল।।
গ্র্যান্ডমাস্টার খালি বোর্ডের দিকে তাকালেন। চারকোনা চৌষট্টিটি ঘর সম্পূর্ণ উত্তেজনাহীনভাবে পড়ে আছে। সেগুলো এক সময় শুধু তার নিজের জীবনই নয়, অসংখ্য মানুষের জীবনের সঙ্গে লেপ্টে থাকতে সম্ভব হয়েছে।। এই হালকা ও গাঢ় রঙের চতুষ্কোন ঘরগুলোই একসময় বিস্ময় ও আনন্দ-- দুটোই দিতো। তার মনে হলো, ‘আমি আমার জীবনে মনে হয় এখনও কোন মহৎ কোন কাজ করিনি।’
‘আমি জিতেছি একথা শুনলে বাইরের কেউ বিশ্বাস করবে না'। বলেই জিও একটা তিক্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলল।’
‘কেন তারা তোমাকে বিশ্বাস করবে না? এটা নিয়ে এত অবিশ্বাস্যেরই বা কি আছে? তুমিতো প্রবল ইচ্ছেশক্তি সম্পন্ন একজন শক্তিশালী খেলোয়াড়’, গ্র্যান্ডমাস্টার বললেন।
‘কেউ আমাকে বিশ্বাস করবে না,’ জিও পুনরায় বলল। ‘তারা বলবে আমি মিথ্যা কথা বলছি। আমার কাছে কী প্রমাণ আছে?’
জিও’র গোলাপী উঁচু কপালের দিকে তাকিয়ে সামান্য ক্ষুব্ধ হয়ে গ্র্যান্ডমাস্টার বললেন, ‘আমাকে অনুমতি দাও’,‘ তোমাকে বিশ্বাসযোগ্য কিছু প্রমাণ তোমাকে দেবো আমি। আমি জানি আমার সঙ্গে তোমার আবার দেখা হবে’।
গ্র্যান্ডমাস্টার তার ব্রিফকেসটা খুললেন। হাতের আকারের সমান বড় একটা সোনার মেডেল বের করলেন। সেটাতে সুন্দর অক্ষরে খোদাই করে লেখা; ‘এই মেডেলটির বাহক আমার বিপক্ষে দাবা খেলে জিতেছে, গ্র্যান্ডমাস্টার...অমুক এবং অমুক...’
‘শুধুমাত্র তারিখটাই লেখা বাকি রয়ে গেছে এতে,’ ...গ্র্যান্ডমাস্টার বললেন। এরপর তিনি ব্রিফকেস থেকে একটা সরঞ্জামের বাক্স খুললেন। তারপর খুব সুন্দরভাবে খোদাই করে মেডেলের এক কোনায় তারিখটা লিখে দিলেন। মেডেলটা জিওর হাতে তুলে দিতে দিতে বললেন, ‘এটা খাঁটি সোনার।’
‘সত্যি--সত্যিই?’ জিও ভীষণ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
‘একদম খাঁটি সোনা,’ গ্র্যান্ডমাস্টার বললেন। 'আমি ইতিমধ্যেই এরকম অনেকগুলো মেডেলের অর্ডার দিয়ে রেখেছি যাতে আমার পর্যাপ্ত মজুদ থাকে।’
------------------------------------------
গল্পটি লেখা হয়েছিল ১৯৬৫ সালে।
---------------------------------------
লেখক পরিচিতি
ভাসিলি আকসিওনভ
রাশিয়ান কাজান শহরে জন্মেছেন ১৯৩২ সালে। ২০০৯ সালে তিনি মস্কোতে মারা যান। পশ্চিমে তার দুটি উপন্যাস The Burn ও of Generations of Winter এর জন্য ভালো পরিচিতি পেয়েছেন। স্ট্যালিনের জমানায় তাঁকে গোয়েন্দা নজরে রাখা হয়েছেন স্বাধীন মতাবলম্বী লেখালেখির জন্য।
----------------------
সূত্রঃ
১। গুগলভস্কি বুলেভার্ড, বাড়ি # ১৪ ছিল দাবা খেলার সেন্টার হাউজ এবং এই দাবার মিউজিয়ামটি ১৯৬০ সালে স্থাপন করা হয়েছিল।
২। ‘সাহসী খাস-বুলাত’ গানটি ছিল জারদের সময়ের একটি জনপ্রিয় লোক সংগীত
৩। ভিলোচকা শব্দটির রুশ অর্থ হচ্ছে কাঁটাচামচ। এই গল্পে আক্রমনের ছকটা ছিল কাঁটাচামচের মতন। এই ছক ব্যবহার করে এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়, যাতে অপর পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকারী গুটিটি সহজেই বন্দী হয়ে যায়।
৪। ‘লায়ার’ হলো একটি প্রাচীন গ্রীস বাদ্যযন্ত্র। এর দুদিকে দুটি ইউ- আকৃতির ফ্রেম আছে। স্কাঙ্ক ফার কোটে পশুর চামড়াগুলো এই আকৃতিতে কাটা ও সেলাই করা হয়। একারনে এর অপর নাম লায়ার কোট।
অনুবাদকের পরিচয়
মৌসুমী কাদের
গল্পকার। অনুবাদক।
0 মন্তব্যসমূহ