অনুবাদ : এলহাম হোসেন
(লেখক পরিচিতি :
মায়া এঞ্জেলো আফ্রো-আমেরিকী কবি, গায়িকা, জীবনীকার ও সাধারণ মানুষের অধিকারের জন্য নিরলস কাজ করা একজন সমাজকর্মী। তাঁর জন্ম ১৯২৮ সালে আমেরিকায়; মৃত্যু ২০১৪ সালের ২৮ মে। লিখেছেন সাতটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ, তিনটি প্রবন্ধের বই ও কয়েকটি কবিতার বই। এছাড়া দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের কর্মজীবনে নাটক, সিনেমা ও টেলিভিশন শো’তে অনেক কাজ করেছেন।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই লেখিকা নানান পেশায় কাজ করেছেন জীবনের নানা পর্যায়ে। কখনো বাবুর্চি, কখনো নাইট ক্লাবের ড্যান্সার, কখনো সাংবাদিক আবার কখনো অপেরার অভিনেত্রী। জীবনের নানান অভিঘাত তাঁর অভিজ্ঞতাকে করেছে ঋদ্ধ আর কলমকে করেছে ক্ষুরধার। অনুদিত গল্পটি তাঁর Steady Going Up ছোটগল্পের বঙ্গানুবাদ।)
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই লেখিকা নানান পেশায় কাজ করেছেন জীবনের নানা পর্যায়ে। কখনো বাবুর্চি, কখনো নাইট ক্লাবের ড্যান্সার, কখনো সাংবাদিক আবার কখনো অপেরার অভিনেত্রী। জীবনের নানান অভিঘাত তাঁর অভিজ্ঞতাকে করেছে ঋদ্ধ আর কলমকে করেছে ক্ষুরধার। অনুদিত গল্পটি তাঁর Steady Going Up ছোটগল্পের বঙ্গানুবাদ।)

সকালের বৃষ্টিটা রাজপথে আছড়ে পড়েছে। কিন্তু বড় বড় টায়ারগুলো রাস্তাটাকে কামড়ে ধরে চলছে, যেন রাস্তাটাকে চুম্বন করে সশব্দে বিদায় জানাচ্ছে। বিশাল মোটরগাড়িটার কখনও লেহ্য, কখনো চুম্বন আবার কখনওবা গোঙানির শব্দের সঙ্গে সন্ধি করে রবার্ট ঘুমানোর চেষ্টা করে চলছিল। কারণটা হলো, তার সীট ও তার সামনের সীটের মাঝখানের জায়গাটা আরাম অনুভব করার জন্য যথেষ্ট নয়। সে কাত ফিরে হাত-পা গুটিয়ে শরীরটাকে ইংরেজি অক্ষর ‘জেড’ বানিয়ে নিয়েছে। তাতে তার অবস্থা হয়েছে আরও খারাপ। বাসের পেছনের দিকে বসার অভ্যাসের কারণেই সে এই সীটটা বেছে নিয়েছিল। বাসের সামনের সীটগুলো ভরেছে কি না-- তা দেখার জন্য চোখ মেলল। সে জানে বাসটা ইতোমধ্যে একটা টপেজে থেমেছিল। অবশ্য ঘুমটা তার গভীর হয়নি। শুধু ভয়ঙ্কর ক্লান্তিতে সে ঝিমোচ্ছিলো। সামনের দিকে তাকানোর প্রয়োজনও সে বোধ করেনি। তার দৃষ্টিটা ধাক্কা খেল সামনে বসা এক নিগ্রোর সঙ্গে। নিগ্রো লোকটা প্যাসেজের ওপারে বসা। মেম্ফিসে সে উঠেছে। তারপর সামনে বসে পড়েছে। চারপাশের সব কিছুই তার কাছে একই ঠেকছিল শুধু ওই দুজন শ্বেতাঙ্গ ছাড়া। মনে হচ্ছিল, ওরা আগের থেকে আরো কাছে এগিয়ে এসেছে। রবার্ট সামনের দিকে যেতে মনস্থির করলো। ওখানে অন্তত হাত-পা ছড়িয়ে বসতে পারবে।
সে দাঁড়ালে প্যাসেজের ওপারে বসা মহিলা বলে উঠলেন, ‘তাহলে আপনার ঘুম হয়ে গেল, হ্যাঁ?’
‘এখনো হয়নি। তবে একটা অপেক্ষাকৃত আরামদায়ক সীটে বসব ভাবছি...।’
মহিলা বললেন, ‘এখানে আমার সঙ্গে একটু বসুন। আপনি তো লম্বা, তাই না? কতদূর যাচ্ছেন?’ মহিলা লাঞ্চের বাক্সটি সরিয়ে মেঝেতে তার সীটের নিচে রাখলেন। কিন্তু বাইবেলটা তাঁর কোলের ওপরই রইল।
রবার্ট বলল, ‘বেশ, বসছি তবে এক মিনিটের জন্য।’ তার পাশে রবার্ট নিজেকে কোনমতে ভাঁজ করিয়ে নিয়ে বসলো। ‘আমি সিনসিনাতিতে যাচ্ছি। রাতে কাজ করি। তাই ঘুমোতে পারি না। বুঝতেই পারছেন, আমি খু-উ-ব পরিশ্রান্ত।’
সে যে ঘুম নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়, তাই রবার্ট বুঝাতে চাইলো; বৃদ্ধ মহিলার সঙ্গ নিয়ে নয়। তাকে সৌজন্য দেখাতে গিয়ে অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে হলো।
জিজ্ঞেস করলো, ‘আপনি কতদূর যাবেন?’
বৃদ্ধ মহিলা উত্তর দিলেন, ‘ক্লীভল্যান্ডে।’
‘তার বড় বড় পুরুষালী হাতদুটো দিয়ে বাইবেলে আলতো করে চাপড় দিলেন।
‘জীবন ও মৃত্যু অঙ্গাঙ্গীভাবে একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে --এ কথা ঈশ্বর নিজেই বলেছেন।’
রবার্ট ভাবলো, এটাতো আমাদের আমজনতাও জানে। উনি টিকেট কিনেছেন, আর তাই বাসে উঠেছেন। অথচ আশা করতে ভয় পাচ্ছেন, যদি কিছু একটা ঘটে যায়। যেমন ধরুন, বাসটা হয়তো রাস্তা থেকে ছিটকে পড়তে পারে অথবা টর্নেডো এতে আঘাত হানতে পারে। বেশ, তাহলে আমরা ধরে নেব যে, এটা উপরওয়ালার মর্জি। রবার্ট সীটের একদিকে সেঁটে বসল। পাঁচ মিনিটের মধ্যে তাকে ঝিমুনি পেয়ে বসলো। এর পরের ব্যাপারটা সে জানেই। হয়তো ঘুমিয়ে পড়বে, তাও আবার মহিলার কাঁধে মাথা রেখে।
‘বাবাজি! তোমার সীটে ফিরে যাচ্ছ না কেন?’ হতচকিয়ে সে ওঁর দিকে তাকালো, তারপর দেখে নিল উনি কীভাবে তার খেয়াল রাখছেন।
‘তুমি যখন ঘুমাচ্ছিলে তখন ওই দুইজন শ্বেতাঙ্গ তোমার ব্যাপারে কী যেন বলাবলি করছিল। তোমার দিকে তাকিয়ে কী যেন বলল। তারপর ওরা হোয়াইট সেকশনের পেছনের দুই সীটে গিয়ে বসলো। ওখানে ওরা মদ পান করছিল।’
রবার্ট বলল, ‘ম্যাডাম, আমি আসলে ওদের কাউকেই চিনি না, আর কারো কাছ থেকে পালাচ্ছিও না। আসলে আমি বলতে চাচ্ছি, কেউ আমার তালাস করছে না। তবে...
মহিলা বললেন, ‘আমি তো বলিনি যে, তুমি পালাচ্ছ। আমি বলতে চাচ্ছি যে, ওরা বাজে কিছু একটার পবিকল্পনা করছে। ভেতরটা যদি নষ্ট হয়ে যায়, তবে তো বাজে কাজ করবেই?। তুমি কি এটাই ভাবছ না?’
রবার্টের আসলে কিছুই বলার ছিল না। তবে সে বুঝতে পারল যে, মহিলা তাকে চোখে চোখে রাখছেন। ‘হ্যাঁ, ম্যাডাম। আপনাকে ধন্যবাদ। আমি আমার সীটে ফিরে যাচ্ছি।’
বৃদ্ধা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বয়স কত?’
রবার্ট জবাব দেয়, ‘বাইশ’।
তিনি বললেন, ‘আরে, তুমি তো দেখছি একটা শিশু। আমার ছেলের বয়সী।’
মেম্ফিসের গর্ডন সেকশনের সব বৃদ্ধ মহিলা এমনই। বাচ্চাকাচ্চাদের খুঁজে বেড়ান। ওঁরা তার ছোট বোনটাসহ তার নিজেরও বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছিলেন।
রবার্ট স্বস্তিবোধ করলো। ‘আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। মাফ করবেন, এখন আমি পেছনে যাব।’ এরপর । সোজা হয়ে না দাঁড়িয়েই লেনের ওপারে গিয়ে হাত-পা ছড়িয়ে চেয়ারে বসে পড়লো। সামনের দিকে জ্বলজ্বল করে তাকালো। দৃষ্টি আটকে গেল। শ্বেতাঙ্গরা সত্যিই কিছু একটা পরিকল্পনা করছে। সামনের সীটে বসা দু’জন শ্বেতাঙ্গকে ঠাহর করার চেষ্টা করছিল সে। কিন্তু ওরা রবার্টের কাছে একেবারেই অচেনা। এরপর একজন দাঁড়িয়ে হেলান দিয়ে মাথার ওপর র্যাকের দিকে ঝুঁকলো। ছোট নীল রংয়ের প্লাস্টিকের একটা শেভিং বক্স টেনে বের করলো। তারপর সবার সামনেই এক পাইন্ট বোরবন মদ ঢেলে নিল। ঝোলাটা র্যাকের ভেতরে ঢুকিয়ে সীটে বসতে বসতে রবার্টের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকালো। সে তার সঙ্গের জনকে কী যেন বলল, তারপর মাথাটা ঘুরিয়ে রবার্টের দিকেও তাকালো। এবার লোক দু’টোর চেহারা-সুরত ও মতি-গতি দেখে রবার্ট বুঝাতে পারলো, ওরা একেবারেই অচেনা। সম্ভবত যাকে খুঁজছে, রবার্টকে ওরা সে-লোক ভেবে ভুল করছে। রবার্ট জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। ভেবে ভেবে কোনো কুল-কিনারা পেল না। অন্যকিছু নিয়ে ভাবার কোনো কারণও নেই। ছোট বোনটাকে নিয়ে ভালোভাবে জীবনটা চালানোই এখন তার জন্য কঠিন ।
বাসটা এবার সত্যিই চলতে শুরু করেছে। বৃষ্টিস্নাত এলাকা পেরিয়ে গেল। তবুও শুধু টেলিফোনের খাম্বাগুলো মলিন গোধুলির আলো দৃষ্টিকে আহবান জানাচ্ছিল। থেকে থেকে নির্জন খামারবাড়িগুলো থেকে একটু-আধটু আলো এসে চোখে পড়ছিল। রবার্ট এই ব্লু গ্রাস স্টেন্টের ব্যাপারে আগেও শুনেছে। কিন্তু আগে কখনোই টেনেসির সীমান্ত পার হয়নি সে। সম্ভবত ছোট বোনকে নিয়ে ফেরার পথে দিনের আলোয় কিছু তামাক ক্ষেত ও নীল ঘাস দেখার সুযোগ পাবে। ছোট বোনটার সঙ্গে দেখা হবে, সেটাও একটা বড় ব্যাপার।
ছোট বোনটারও সে ছাড়া আর তো কেউ নেই।
গুটিশুটি মেরে বসে পড়ল। তার ডানপাশের সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। সত্যিই বাবা-মা মারা যাবার পর ছোট বোনটা ছাড়া তার আর কেউ নেই। বাবা-মা দুজনেই ছয় মাসের ব্যবধানে মারা যায়। সে তার বোনের চেয়ে তিন বছরের বড়। তার বয়স যখন পনের বছর তখন সে সংসারের বোঝা মাথায় তুলে নেয়। মি. উইলির অটো ম্যাকানিকের দোকানে চাকরি নেয়। ব্যাপারটা ছিল বেশ মজার। ভাবলে হাসি পায় যে, তার মতো কেউ এতটা বোকা ছিল না। কারখানায় যাওয়ার পর সে কার্বুরেটরের ক্যামশ্যাফ্ট সম্বন্ধে জানতই না। কিন্তু ডিপারমাউথ (নামটা ভালোভাবে উচ্চারণ করতে তার অবশ্য তিন মাস লেগেছিল। বিষয়টা সত্যিই অপমানজনক) তাকে বলল, ‘শোন, প্রত্যেক মানুষেরই কোনো না কোনো সময় কিছু একটা শুরু করতে হয়।’ এরপর একটু একটু করে মোটর কীভাবে কাজ করে, তা সে বুঝতে লাগলো। এখন সে পুরোদস্তুর পাকা মিস্ত্রি বনে গেছে। সে তার ছোট বোনটারও দেখাশোনা করে। বাবার মতোই যত্ন করে তাকে স্কুলে পাঠায়; কাপড়-চোপড় কিনে দেয়। এমনকি, যেসব ছেলেদের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়েছে বলে সে মনে করে, তাদের হাওলায় তাকে ছেড়েও দেয়।
বাসটা এবার গর্তে আছাড় খেল। ঠাণ্ডা জানালার কাঁচে মাথাটা লাগিয়ে দিয়ে রবার্ট ঝাঁকুনি খেল। বাইরে পুরো বিশ্ব, চাঁদ ও আকাশের তারকাগুলোও থমকে আছে। বাসের ভেতরেও অন্ধকার। তবে ড্যাস বোর্ডের নীল আলো তাকে বিজু থিয়েটারের কথা মনে করিয়ে দিল। ওখানে ওর ছোট বোনটা প্রতি শনিবারেই যেত, আর রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরত। থিয়েটারে গেলে রবার্ট রাগ করতো না। তার জন্য এটা একটা চমৎকার আউটিং। ঝুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে সে প্রেমও করতো না।
ছোট বোনটা ঠিক ওর মায়ের মতো। তবে ওর সঙ্গে আলাপ জমানো অপেক্ষাকৃত সহজ। একবার সে খানিকটা সেøা জিন পান করেছিল। বোতলটা দেখার আগ পর্যন্ত সে মনে করেছিল যে, এটা কম তেজি এলকোহল। একবার সে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিল। ফিরলো অনেক দেরিতে। রবার্টের কাজ থেকে ফিরে আসারও পর। রবার্ট তো রেগে অগ্নিশর্মা। ও ভয়ে কাঁপতে লাগল। চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছিল। তার পোশাক-আশাক পরিচ্ছন্নই ছিল। কিন্তু বারান্দা দিয়ে আসার সময় কিছু একটা তার হয়েছে। ঘাগড়াটা অন্যসব পোশাক-আশাকের ভিড় ঠেলে বেরিয়ে পড়েছে। রবার্ট তার কাছে জানতে চাইলো, সে মদ পান করেছে কিনা। সে বলল, সিরাপের মতো কী একটার সঙ্গে মিন্ট আর সেভেন আপ মিশিয়ে খেয়েছে। স্বাদটা ভালোই ছিল। রবার্ট বলল, ওটাই সেস্না জিন। যেকোনো ছেলে তাকে ওটা খাইয়ে তার দুর্বলতার সুযোগ নিতে পারে। ভবিষ্যতে আর এ কাজ না করাই ভালো। ও বলল, নাহ। ওই ছেলেটার নাম বিলি শেফার্ড। সে সত্যিই চমৎকার। সে ওকে ভালোবাসে। রবার্ট তো তার বাবা নয় যে, তার কথা তাকে শুনতেই হবে। সে তার থেকে মাত্র তিন বছর দুই মাসের বড়। কথাগুলো শুনিয়ে হন হন করে সে বিছানায় চলে গেল।
সে-রাতে রবার্ট ভালোমতো ঘুমাতে পারলো না। সে ভেবে ভেবে কোনো কুল-কিনারা পেল না। তার বাবার ওসিয়ত সে কীভাবে পূরণ করবে? ‘ছোট বোনটাকে আগলে রাখিস, বাবা। ওর যেন কিছু না হয়।’ ও যদি একবার বেঁকে বসে তবে রবার্টের আর কিছুই করার থাকে না।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই রবার্ট বিস্কিটের গন্ধ পেল। স্কুল খোলা থাকলে সে সকালে ঘুম থেকে উঠে চুলো জ্বালিয়ে বিস্কিট ছেঁকে নেয়। রুটির খামিরের সঙ্গে সুগন্ধি মিশিয়ে চুলোয় ছ্যাঁকা হয়। বাড়ির এক পাশের দরজা দিয়ে রবার্ট বাইরে গেল। এই দরজা অবশ্য তার বাবাই কেটেছিল ওদের দু’জনের জন্য। তারপর কূপের পাশে দাঁড়িয়ে মুখ-হাত ধুয়ে নিল। রান্না ঘরে ফিরে এসে দেখল, তার ছোট বোনটা গুনগুন করে গান গাইছে। পুরোনো দিনের গান। হঠাৎ থেমে গেল।
‘আমার দিকে তাকাবে না, বলছি। আমার কিছু কথা আছে। ও টেবিলের ওপর ঝুঁকে বসেছিল। এই টেবিলটা সে দশ বছর বয়সে তার মাকে বানিয়ে দিয়েছিল। ‘গত রাতে আমি একটা বোকার মতো কাজ করে ফেলেছি। আমি জানি, আমি তোমার সঙ্গে বেয়াদবি করেছি। আমি যে মদ্যপান করেছিলাম, ওটাই আমাকে হিতাহীত জ্ঞানশুন্য করে দিয়েছিল। দুঃখিত। সব কিছুর জন্য আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। তোমার ছোট বোন হিসেবে আমি আনন্দিত। হলফ করে বলছি, আর কখনো এমনটা হবে না। যদি চাও, আমি বিলি শেফার্ডকে আর প্রশ্রয় না দেই, তবে তাকে আর আমাদের বাড়ির আঙ্গিনা মাড়াতে দেব না।’
এভাবে সে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে নিল। ‘তুমি যদি আমাকে ক্ষমাই করে থাক, তবে আর এ ব্যাপারে কথা বলবে না। আমি যদি আর কখনো ওই পথ মাড়াই, তবে আমাকে শাস্তি দেবে, কেমন?
আস্তে আস্তে রবার্ট বলল, ‘ঠিক আছে, লক্ষ্মী বোন আমার।’ এরপর একটু ঝুঁকে ওভেন থেকে বিস্কুট বের করে হাসতে হাসতে তা খাবার টেবিলে নিয়ে গেল।
‘শুভ সকাল! আমি তো ভেবেছিলাম আজ সকালে একটা সারপ্রাইজ দেব, কিছু টমেটোর মোরব্বা দিয়ে হলেও।’ প্রাতরাশ সারতে সারতে আগামী রোববারে চার্চের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে কী করা যায়, সেই পরিকল্পনাগুলো তার কাছে জানতে চাইল। যখন সে বললো, তার কোনো পরিকল্পনা নেই, তখন সে তাকে কৌতুক করে বললো, ‘তুমি একটা ক্যারামেল কেক আর লেবুর শরবত বানিয়ে বারবারা কেনড্রিক আর ওই সুন্দর ছেলেটা অর্থাৎ বিলি শেফার্ডকে নিমন্ত্রণ জানালে না কেন।’ ও রবার্টের দিকে তাকালো। মজা করছে কি-না, তা জানার জন্য। সে কেমন মজা করছিল, তাও সে জানতে চাইলো। এবার দু’জনে হাসতে শুরু করলো। সে যখন থালাবাটি ধুচ্ছিল, তখনও হাসাহাসি চলছিল। এমনকি, বিদায়ের সময়ও হাসির রেশটা রয়েই গেল।
যে বিষয়টা সে খুব বেশি পছন্দ করে, তা হলো তার ছোট বোনের তাকে খুব দরকার। কাজেই সিনসিনাতিতে তাকে নার্সিং স্কুলে পাঠানোর সময় তাকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। সে সারাটাদিন তার সঙ্গে সঙ্গেই ছিল। তাকে চিৎকার করে কাঁদতে হয়নি। ওর ভাইকে ওর মা মরে যাওয়ার সময় যে অসিয়ত করে গিয়েছিল, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছিল। সে ভাইকে মনে করিয়ে দিল যে, তার মা তখন অসুস্থ ছিলেন এবং তিনি চেয়েছিলেন যে, সে নার্স হোক। তাহলে সে তার অসুস্থ মায়ের খেদমত করতে পারবে। তার ছয় মাস পরেই না বলে না কয়ে হুট করে বাবা মারা গেল।
ড. বার্টন তাঁকে মহৎ হৃদয়ের মানুষ বলে জানতেন। ও নার্স হতে চেয়েছিল, তাহলে কারও কিছু ঘটার আগেভাগেই সে কিছু একটা করতে পারবে। এ কারণেই রবার্টকে একটা দোকানে কাজ নিতে হয়েছিল। দোকানের কাজের বাইরেও তাকে একটা কিছু করতে হয়েছিল তার ছোট বোনের সিনসিনাতির মতো বড় শহরে পড়ার খরচ ও কাপড়-চোপড় কেনার জন্য। তার পকেটখরচা চালানোর জন্যও অতিরিক্ত একটা কাজের দরকার হয়েছিল।
কিন্তু যদিও সে কখনো বলেনি, ‘ভাইয়া, তোমার সব হিসাব আমি পাই পাই করে শোধ করে দেবো’ এবং ওর কাছ থেকে সে কোনো প্রতিজ্ঞাও আদায় করেনি, তবুও সে এ কাজ করে চলেছে। বারবারা কেন্ড্রিক তাকে এমন দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে সাহায্য করেছিল। ধারণা করা হয়েছিল, বছর দুয়েকের মধ্যেই ওরা বিয়ে করে ফেলবে। বারবারা তাকে বলেছিল, পরিবারে একজন নার্স থাকলে সে গর্ববোধ করবে। আর তার সন্তানদেরও বলতে পারবে যে, তাদের ফুপি একজন নার্স।
আর এখন এই ছোট বোনটাই, যে কিনা অসুস্থদের সেবা করতে চেয়েছিল, সে নিজেই অসুস্থ। স্কুলের অধ্যক্ষ তার কাছে চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে লিখেছেন, তাকে কমপক্ষে ছয় মাস পুরোপুরি বিশ্রাম নিতে হবে। আর বিশেষ ডায়েট খেতে হবে। কিডনির সমস্যা হতে পারে। বাবা সব সময়ই বলতেন, এটা একটা পারিবারিক ব্যাধি। রবার্ট যে আসছে, তা সে তাকে লেখেনি। কোনো প্রশ্নও করেনি। গত রাতে বারবারার বাসা থেকে ফেরার পরই সে চিঠিটা পেয়েছে। তাই সকালের বাস ধরেছে। সিনাসিনাতি পৌঁছলে সে যেন গোটা দুনিয়াটাই পেয়ে যাবে।
জানালা থেকে মুখ ফেরালে মনে হলো বাসের গতি কমে আসছে। দৃষ্টি পেছনে ফিরিয়ে দেখল একটা বিজনেস কারের আলো ঠিকরে পড়ছে বাসে। একটা রেস্তোঁরার সামনে এসে বাসটা থামলো। মিট মিট করে জ্বলতে থাকা রেস্তোরার আলো বাসে ঠিকরে পড়ল। আলোর সাইনে লেখা ’খেয়ে যান, খেয়ে যান, কোভিংটন।’ বাসের ভেতরের বাতিগুলো জ্বলে উঠলো। ড্রাইভার দু’পাশের সিটগুলোর মাঝের জায়গাটার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। যাত্রীরাও অস্বস্তিতে নড়াচড়া করতে লাগলো।’
‘সিনসিনাতির আগের শেষ স্টপেজ। আমরা এখানে দশ মিনিট দাঁড়াব। নামার প্রয়োজন না থাকলে বাসে অপেক্ষা করুন। আর মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যেই আমরা সিনসিনাতি পৌঁছে যাব।’ সামনের সিটের লোক দু’জন এবার উঠলো। লম্বা লোকটা শেভ করার সরঞ্জামগুলো টেনে নামিয়ে ওর মধ্য থেকে কী যেন বের করে নিল। তারপর মোটা লোকটার সঙ্গে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো।
রবার্ট মনে মনে চাইলো তাকে যেন বাথরুমে যেতে না হয়। অন্ততপক্ষে, ওই দু’জন যেন ওখানে না যায়। সে আসলে বুঝতে পারছিল না, ওরা কেন ওর দিকে ওভাবে তাকাচ্ছিলো। অনেকক্ষণ ধরে ওরা আর ওর দিকে তাকায়নি। তবে সে নিশ্চিত নয়, বাকি আধা ঘণ্টা ওরা ওর দিকে আবারও তাকিয়ে থাকবে কি-না। সে নিশ্চিত টয়লেটেও ‘সাদা’ ও ‘কালো’ সাইনবোর্ড সাটানো আছে। সেজন্য সে টয়লেটে যেতেই চাচ্ছিল না। নানান কিছ ভাবতে ভাবতে সে দাঁড়িয়ে পড়লো।
পাশের সীটের বৃদ্ধা জেগেই ছিলেন। বাইবেলটা তখনো তাঁর হাতে ধরা। ‘বাবাজি, বাস থেকে নেমে কিছু কি খাবে না? আমার বাক্সে অবশ্য কিছু ফ্রাইড চিকেন আছে।’
‘নাহ্, আমার একটু নামা দরকার।’
বৃদ্ধা অন্ধকারের মধ্যে তার সীটে বসে ভ্রু কুঁচকালেন। ‘তুমি কি আর আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে পারবে না?’
রবার্ট কী ভাবছে, তা তাঁকে বলতে পারলো না। ‘নাহ্, ম্যাডাম, বেশিক্ষণ অবশ্য লাগবে না।’ এরপর সে বাস থেকে নেমে পড়লো।
‘চাইলে আমার জন্য একটা ড. পেপার সফ্ট ড্রিংস নিয়ে এসো’, বৃদ্ধা পেছনের সীটে বসে বেশ জোর দিয়ে স্পষ্ট করেই বললেন।
‘ঠিক আছে, ম্যাডাম, আনব।’
ঠাণ্ডা বাতাস বইছিল। পায়ের নিচের মাটিও নরম ঠেকছিল। যদিও সে ভালো ম্যাকানিক, তবুও একটা কার কেনার কথা ভাবতেই পারে না। সত্য কথা বলতে কী, শুধু ঘোড়ায় চড়া ছাড়া আর কোনো যানবাহনে চড়া সে একদম পছন্দ করে না। ক্যাফের পেছনের একটা দেয়ালে সাদা রং দিয়ে লেখা ‘সাদা’ অতপর ‘কালো’।
ভেতরে অনেকক্ষণ জমে থাকা হলুদ মৃত্রের গন্ধ তার নাসারন্ধ্র রুদ্ধ করে ফেললো। তার মনে হলো, এ জায়গাটা যেন তৈরির পর থেকে কোনদিন পরিষ্কার করা হয়নি। মেঝের কালসিটে রং জুতার তলায় জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছিল। জানালার কাঁচে হাতের নখ ঘষার মতো। যদি সে নাক বন্ধ করে রাখতে পারতো, আর কোনোকিছু স্পর্শ করতে না হতো, তবে ভালো হতো। মূত্রথলির অতিরিক্ত চাপ এতক্ষণে নেমে গেল। আসলে ত্যাগেই শান্তি। সে আর হাত ধুতেও চাইলো না। ট্যাপের জলও নোংরা।
‘অ্যাবি দেখ, আমি কইছিলাম না, ও এইহানে আইবো’? ওরা চাচ্ছিলো ও ওখানে আসুক, কিন্তু কেন? লম্বা লোকটার নামই অ্যাবি। ও বলল, হ স্লিম, তুই ঠিকই কইছস’।
রবার্টের ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি-- অবস্থা।
‘তোমরা কি আমার খোঁজ করছিলে?’
মোটা লোকটা, যার নাম স্লিম, বললো, ‘ঠিক তাই। তুই কি জানস, বাসে তুই-ই একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ?’
অ্যাবি দরজার সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছিল। শার্টের নিচে সম্ভবত সে পিস্তল লুকিয়ে রেখেছিল। স্লিমকে বললো, ‘ওই বুড়িডার ব্যাপার পরে দেখবো।’
দাঁত কড়মড়িয়ে স্লিম বললো, ‘আমি তো বুড়িডারে কিছুই মনে করি না। সব শালা কৃষ্ণাঙ্গরা দক্ষিণাঞ্চল ছাইড়া পালাইতাছে। অই হালা, কেমনে আইছস? ক্যামনে এই উত্তরে আইয়া পড়লি? শ্বেতাঙ্গ মাইয়া গো সঙ্গে ফুর্তি করতে যাইতাছস?’
ওরা দু’জনেই মাতাল। ওদের মূত্র থেকে লেবুর টক গন্ধ ছড়াচ্ছিল।
অ্যাবি দরজার কাছ থেকে টেনে টেনে কথা বলছিল। ‘উত্তরে গিয়া সাদা মাইয়া গো সঙ্গে কী করবি, বল? দেহি তুই অ-গো সঙ্গে কী করিস।’
সিস্নমের চোখে মুখে কালো মেঘ জমেছে। ভাবটা এমন যেন সে বিশ্রামে আছে। কিন্তু রবার্ট দেখছে তার মুখের রেখাগুলো গভীর থেকে গভীরতর হয়ে উঠেছে, আর গলার মাংসপেশির শিরা-ধমনীগুলো শক্ত হয়ে উঠেছে।
‘তোমরা অযথা আমার সঙ্গে হট্টগোলের চেষ্টা করছো কেন? আমার ছোট বোনের সঙ্গে দেখা করতে আমি সিনসিনাতি যাচ্ছি। ... ও অসুস্থ।’ হায় খোদা, ছোট বোনটা আমার।
‘অ্যাবি, ও একটু মাল খাইলেই ঠিক হইয়া যাইব। হ্যারিরও এমনডাই হইতো।’
রবার্ট ওদের এই ইঁতরামি আর হজম করতে চাইছিল না। এই বদমাসগুলো তার সঙ্গে কিছু একটা করার পরিকল্পনা করছিল। তাকে এখনই বের হতে হবে। তা না হলে তার বাস ছেড়ে চলে যাবে।
অ্যাবি কোটের ভেতরে হাত ঢুকালো। ...‘নিগ্রো ব্যাটা এহনো ওই ভণ্ড কুত্তিটার লগে পালায়নি। ও তো আমার মালডাও খাইয়া ফালাইছে।’
বোতলটা যখন সে টেনে বের করলো, প্রথমে রবার্টের পাগুলো কেন জানি অসাড় হয়ে আসলো। মনে হলো খুব মিষ্টি জাতীয় কিছু একটা মুখে কেউ পুরে দিয়েছে। আর একবার তার বাসের কথা মনে পড়লো। এই দুই ক্ষ্যাপা গুণ্ডার সঙ্গে সে থেকে যাবার পাত্র নয়।
অ্যাবি হুইস্কির বোতলের মুখ খুলে রবার্টের দিকে এগোলো। স্লিম সিংক থেকে সরে দাঁড়ালো। ভাবাভাবির আর সময় নেই। রবার্ট ধেয়ে গেল অ্যাবির দিকে। বোতলটা কেড়ে নিতে চাইল সে। হ্যাংলা লোকটার দুই উরুর মাঝখানে সংবেদনশীল স্থানে হাঁটু দিয়ে আঘাত করলো। হুইস্কির কিছুটা হাতে ঢেলে পড়লো। তবে বোতলটা সে পেয়ে গেল। অ্যাবি সংবেদনশীল অংশ চেপে ধরে বসে পড়লো। গোঙাতে শুরু করলো।
স্থুলকায় লোকটা এবার হুংকার ছাড়লো। ‘ওরে নোংরা নিগ্রোর পুত, তরে আমি খাইয়া ফালামু।’ রবার্ট পেছনে সওে গেলো। ... মোটা লোকটা ছুটে এসে রবার্টের শার্টের কলার চেপে ধরলো। ল্যাং মেরে রবার্টকে ফেলে দিতে চেষ্টা করলো। রবার্ট সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সিস্নমের মাথায় বোতল দিয়ে দিল একটা বাড়ি। এবার দু’জনেই ঘোঁতঘোঁত শব্দ করতে লাগলো। কিন্তু লোকটা তখনো তার শার্টের কলার ধরেই রয়েছে। রবার্ট আর একটা ঘা বসিয়ে দিল আগের জায়গায়। পুরো ব্যাপারটা ঘটলো দুঃস্বপ্নের মতো, চোখের পলকে। রবার্টের মনেই হলো না যে, সে বোতল দিয়ে ওকে আঘাত করেছে। কিন্তু সে আবার, আবার আঘাত করলো। শ্বেতাঙ্গ দু’জনের মাথা রক্তে ভিজে গেল। অবশেষে লোকটা রবার্টের শার্টের কলার ছেড়ে দিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো। এবার রবার্ট রক্ত দেখতে পেল তার হাতে, শার্টে। হায় খোদা, এরা তো এবার ওকে মেরে ফেলবে। সে হ্যাংলা লোকটার দিকে তাকালো। সে বাইরে পালিয়ে যেতে পারেনি। তবে দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে টয়লেটের নোংরা ময়লার মধ্যে বসে কাতরাচ্ছে। সে চাইলেও এখন আর রক্ত ধুয়ে ফেলার সময় নেই। দরজার কাছে বসে থাকা হ্যাংলা লোকটার কলার ধরে টেনে সরালো যাতে দরজাটা খোলা যায়। বাহিরটা তমসাচ্ছন্ন। কিন্তু ফুরফুরে ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে চলেছে। রবার্টের যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। বাসে উঠতে গিয়ে চালকের সঙ্গে ধাক্কা খেলো।
বাসের চালক বললো, ‘আপনাকে তো প্রায় ছেড়েই যাচ্ছিলাম। এই এক্ষুনি গাড়ি ছেড়ে দিতাম।’
‘ঠিক আছে, আমি দুঃখিত।’ বেশ অন্ধকার। তাই সে রক্ত দেখতে পেল না। তবে মদের গন্ধ সে ঠিকই পেল। চালক বললো, ‘এই একটু থামুন তো। আপনি কি দু’জন শ্বেতাঙ্গকে দেখেছেন?’
‘নাহ্। আমি কাউকে দেখিনি।’ সে চালকের দিকে পীঠ দিয়ে কথা বলছিল। চারপাশের স্নিগ্ধ আবহাওয়া। যেন অনেক পথ পাড়ি দেয়ার পর ঘরে ফেরার আনন্দ।
‘বেশ, তাহলে ওদের ছেড়েই যাই। আমি ক্যাফেতে দেখেছি, টয়লেটেও দেখেছি।’
রবার্ট ভেতরে ভেতরে চাপা হাসি হাসলো। যাক বাবা, এখানে যে একাধিক টয়লেট আছে, তা হয়তো বাস চালক জানেই না। দরজার সিঁড়িতে উঠতে উঠতে ভাবলো, সে যদি ‘কালারড’ চিহ্নিত টয়লেটে উঁকি দিত, তবে কী যে হতো। বাসের বাতিগুলো জ্বলে উঠলো। রবার্ট তার হাতগুলো সামনের দিকে রাখলো, সম্ভবত শার্টের লেগে থাকা রক্তের দাগ ঢাকতে।
বৃদ্ধা তার সীটে সোজা হয়ে বসলেন, যেন গীর্জায় প্রার্থনারত। ‘ওহ্, আমার তো তোমাকে নিয়ে ভয় হচ্ছিল।’
রবার্ট জানত যে, সে তার সঙ্গে গল্প করতে চায়। কিন্তু তার মাথা জুড়ে শুধু একটাই ভাবনা-- ওই ক্ষ্যাপা দু’লোক যেন সাহায্যের জন্য কাউকে ডাকার আগেই বাসটা ছাড়ে। ...রবার্ট সীটে বসে পড়লো।
‘ম্যাডাম, আমি সত্যিই দুঃখিত। আমি আপনার জন্য ‘ড. পেপার’ কেনার সময় পাইনি।’
এবার তার মনে হলো বাসটা চলতে শুরু করেছে। বাতিগুলো নিভে গেল। ফুটপাত ছেড়ে বিশালাকার বাসটি সিনসিনাতির পথে ছুটে চললো।
অনুবাদক পরিচিতি
এলহাম
অনুবাদক। লেখক।
ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক।
ঢাকায় থাকেন।
0 মন্তব্যসমূহ