ইন্তিজার হুসেইনের গল্প : সর্বশেষ মানুষ


অনুবাদঃ মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ

ইলিয়াসুফ (Eleasuf) ছিল গ্রামের সর্বশেষ মানুষ। সে প্রতিজ্ঞা করেছিল ও আল্লাহ্‌র নামে শপথ নিয়েছিল যে, মানুষের অবয়ব নিয়ে সে জন্মগ্রহণ করেছে এবং এই অবয়ব নিয়েই সে মরবে। এবং সে তার শেষসময় পর্যন্ত চেষ্টা করেছিল মানুষের অবয়ব নিয়ে বেঁচে থাকতে।

তিনদিন আগে বানরগুলো গ্রাম থেকে মিলিয়ে গিয়েছিল। গ্রামের লোকজন প্রথমে অবাক হয়েছিল। পরে তারা খুশী হয়েছিল, কারণ তারা ভেবেছিল যে বানরগুলো তাদের শস্য ও বাগানগুলো নষ্ট করত, তারা চলে গেছে। কিন্তু যে লোকটি তাদেরকে বিশ্রামবারে (sabbath, শব্বাত) মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করেছিল, সে তাদেরকে বলেছিল যে বানরগুলো এখনো গ্রামেই আছে, তাদের মধ্যেই, কেবল লোকজন আর তাদেরকে দেখতে পাচ্ছে না। গ্রামের লোকজন তার কথা বিশ্বাস করল না। তারা বলল, “তুমি আমাদের সাথে ঠাট্টা করছ। সে বলল,”না তোমরাই ঈশ্বরের সাথে ঠাট্টা করেছ। তিনি তোমাদেরকে নিষেধ করেছিলেন শব্বাতের সময়ে মাছ না ধরতে, কিন্তু তোমরা এখনও সেদিন মাছ ধরতে যাচ্ছ। এবং তোমরা জেনো যে, সকল কৌতুকারীদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বড় কৌতুককারী।“

তৃতীয়দিনে এলিয়াযারের (Eliazar) দাসী গাজরুম (Gajrum), এলিয়াযারের শোবার ঘরে গেল এবং তাৎক্ষণিকভাবে উল্টোদিকে ছুটে ফিরে এসে এলিয়াযারের স্ত্রীর কাছে পৌঁছল। এলিয়াযারের স্ত্রী তার স্বামীর শোবার ঘরে গেল এবং কিছু একটা দেখার পর সেও তাজ্জব হয়ে গেল। এরপর খুব দ্রুতই দূরের ও কাছের সব জায়গাতেই খবর পৌঁছে গেল এবং সব জায়গা থেকেই এলিয়াযারের বাড়িতে লোকজন আসতে লাগল। তারা তার শোবার ঘরে গিয়ে খুবই অবাক হয়ে দেখতে পেল যে, সেখানে এলিয়াযারের জায়গায় একটি বড় বানর বসে আছে। বিগত শব্বাতের সময়ে এলিয়াযার অন্যদের চেয়ে বেশি মাছ ধরেছিল।

একটু পরেই একজন লোক অন্যজনকে খবর দিলোঃ “বন্ধু শুনেছ যে এলিয়াযার বানরে রূপান্তরিত হয়ে গেছে?” অন্যজন অট্টহাসি দিয়ে বলল, ‘তুমি আমার সাথে মস্করা করছ’। বলে সে আরও হাসতে লাগল, এতোটাই যে, তার মুখমণ্ডল লাল হয়ে গেল, তার দাঁতগুলো মূখ থেকে বেরিয়ে এসে ঝুলতে লাগল, তার মুখের চামড়া টানতে লাগল এবং কুঁচকাতে লাগল যতক্ষণ পর্যন্ত না সে একটি বানরে পরিণত হলো। এটা দেখার পর প্রথম বন্ধু অবাক হলো। তার মুখ হা হয়ে গেল, চোখ দুটো বিস্ময়ে গোল হয়ে গেল এবং সেও বানরে রূপান্তরিত হয়ে গেল।

এলিয়াব ইবনে জাবলুনের অবস্থা দেখে ভীত হয়ে পড়ল। বলল,” হে জাবলুনের পুত্র, কী হয়েছে তোমার? তোমার মুখ বিকৃত হয়ে গেছে কেন?” কথাগুলো ইবনে জাবলুনকে রাগিয়ে দিলো। সে রাগে তার দাঁত কিড়মিড় করতে লাগল। এটা এলিয়াবকে আরো ভীত করে তুলল। সে চিৎকার করে বলল,” হে ইবনে জাবলুন, তোমার মায়ের উচিৎ তোমার জন্যে প্রার্থনায় বসা! নিশ্চয়ই তোমার বড় কোনো সমস্যা হয়েছে।‘ এ কথা ইবনে জাবলুনকে আরো রাগান্বিত করল। তার মুখ রাগে লাল হয়ে গেল। সে দাঁত চেপে এলিয়াবকে ঘুষি মারল। এতে লিয়াব ভয়ে কাঁপতে লাগল এবং দুজনের মুখই বদলে যেতে লাগল – এলিয়াবের মুখ ভয়ে এবং ইবনে জাবলুনের মুখ রাগে। ইবনে জাবলুনের রাগ সকল সীমা ছাড়িয়ে গেল এবং ভয়ে এলিয়াব ভয়ে সংকুচিত হতে শুরু করল। এবং দুজনেই- একজন রাগান্বিত অবস্থায় ও অন্যজন ভয়ের চোটে – পরস্পরের সাথে জাপটাজাপটি করতে লাগল। তাদের মুখমন্ডল আরো বিকৃত হতে লাগল। প্রথমে তাদের শরীরের অঙ্গগুলো অদ্ভুত আকার ধারণ করল, তারপর তাদের কন্ঠস্বর এতোটাই বিকৃত হয়ে গেল যে, তাদের শব্দগুলো অস্পষ্ট হয়ে একসময়ে অর্থহীন শব্দে পরিণত হলো। এগুলো পরবর্তীতে পশুর চিৎকারে রূপ নিলো। তারপর তারা দুজনেই বানর হয়ে গেল।

এলিয়াসুফ ছিল সবার মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান এবং একমাত্র মানুষ যে শেষ পর্যন্ত মানুষ হিসেবেই থাকতে পেরেছিল। সে তার উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করল এভাবে, “হে মানুষেরা, নিশ্চয়ই আমাদের কিছু হয়েছে। চলো, আমরা সেই মানুষটির কাছে যাই, যে আমাদেরকে বলত শব্বাতের সময়ে মাছ না ধরতে।

এলিয়াসুফ লোকজন নিয়ে লোকটির বাড়িতে গেল এবং বাড়ির সামনে বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে তাকে দীর্ঘ সময় ধরে ডাকতে লাগল। কিন্তু লোকটি যখন বেরিয়ে এলো না, তখন সে হতাশ হয়ে পড়ল। সে উচ্চস্বরে তার লোকদেরকে বললঃ “যে মানুষটি আমাদেরকে শব্বাতের দিনে মাছ ধরতে নিষেধ করতেন, তিনি চলে গেছেন। তোমরা যদি এটা নিয়ে আর কথা বলো, তাহলে সেটি আমাদের জন্যে ভালো হবে না।“ লোকজন তার কথা শুনে খুব ভয় পেল। ভয়ের গোলামি তাদেরকে পেয়ে বসল। ভয়ের কারণে তাদের মুখ চেপ্টা এবং চামড়া খসখসে হয়ে গেল। এলিয়াসুফ তাদেরকে দেখে খুবই কষ্ট পেল। তার পেছনের সকল লোকেরা বানর হয়ে গেল। সে সামনের দিকে তাকাল। সেখানেও সে বানর ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেল না। তারপরে সে ডানে বামে তাকাল। সবদিকেই সে বানর দেখতে পেল। ভয় পেয়ে সে তাদেরকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল এবং এক গ্রাম হতে অন্যগ্রামে ছুটে গেল।

গ্রামটি ছিল একটি সাগরের পাশে। সেটিতে অনেকগুলো গম্বুজসহ বড় বড় ঘর এবং উঁচু প্রবেশদ্বার ছিল। এর বাজারটি সবসময়ে জনাকীর্ণ ও উচ্চকিত থাকত। কিন্তু মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে বাজারটি শূন্য হয়ে গেল এবং লোকজন বাড়িগুলো ছেড়ে পালিয়ে চলে গেল। এবং চারদিকে গম্বুজগুলো ও ছাঁদের ওপরে কেবল বানরদের দেখা যেতে লাগল।

মন খারাপ করে এলিয়াসুফ চারদিকে তাকাল এবং উচ্চস্বরে বিস্ময় প্রকাশ করলঃ “আমি কি শেষ মানুষ যে কেবল অবশিষ্ট আছে?” এবং এই চিন্তা তাকে এতোটাই ভীত করে তুলল যে, তার রক্ত প্রায় বরফ হয়ে গেল। কিন্তু সেই সময়ে তার এলিয়াবকে মনে পড়ল; কীভাবে তার মুখ সঙ্কুচিত হয়ে গিয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত সে বানরে রূপান্তরিত হয়েছিল। তখন এলিয়াসুফ নিজের ভয়কে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করল। সে প্রতিজ্ঞা করে আল্লাহ্‌র নামে শপথ করল যে সে মানুষের অবয়ব নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে এবং মানুষ হিসেবেই মারা যাবে। তারপর এক ধরণের শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতি নিয়ে তার সঙ্গীদের দিকে তাকাল, যাদের মুখ কুঞ্চিত হয়ে গিয়েছিল। সে তাদেরকে বলল,” সত্যিকার অর্থে আমি তোমাদের অন্তর্ভূক্ত নই, কারণ তোমরা বানর, এবং আমি মানুষের অবয়ব নিয়েই জন্মগ্রহণ করেছি এবং এখনো মানুষই আছি।“ এবং সে তার সঙ্গীদেরকে ঘৃণা করল। সে তাদের উজ্জ্বল লাল মুখ ও পশমে ঢাকা শরীরের দিকে তাকাল, এবং ঘৃণায় তার মুখ কুঁচকে যেতে লাগল। কিন্তু হঠাৎ করে তার ইবনে জাবলুনের কথা মনে পড়ে গেল, যার মুখ ঘৃণার কারণে কুঁচকে গিয়েছিল। সে তখন নিজেকে বলল,” এলিয়াসুফ, অন্যদেরকে ঘৃণা করো না, কারণ ঘৃণা করলে মানুষের অবয়ব বদলে যায়।“ এবং এভাবেই সে নিজেকে ঘৃণার অনুভূতি হতে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেল।

এবং এলিয়াসুফ নিজের মধ্য হতে ঘৃণার অনুভূতি সরিয়ে দিয়ে নিজেকে বলল,” নিশ্চয়ই আমি তাদেরই একজন।“ তারপর সে ঐ দিনগুলোর কথা মনে করল, যখন সে তাদেরই একজন ছিল এবং তার অন্তর ভালোবাসার আবেগে উদ্বেলিত হয়ে উঠল। তার মনে পড়ে গেল নবী খিজিরের মেয়ের কথা, যার গায়ের রঙ ফেরাউনের রথ টানা ঘোড়ার মতো দুধ-সাদা ছিল এবং যার বিশাল প্রাসাদটির দেয়াল মণিমুক্তা দিয়ে ও বরগা তৈরি করা হয়েছিল পাইন কাঠ দিয়ে। এবং এই স্মৃতিগুলোর সাথে তার মনে পড়ল সেই দিনগুলোর কথা, যখন সে পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকেছিল, যেগুলো মণিমুক্তা ও পাইন কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। তারপর সে শয্যাঘরের বড় বিছানার দিকে গিয়েছিল, তার জন্যে, যার জন্যে তার হৃদয় আশা করেছিল। সেখানে সে তার চুল দেখেছিল যেগুলো ছিল শিশিরে ভেজা, দেখেছিল যে তার বুক যুবতী হরিণের মতো কাঁপছিল এবং তার পেট দেখতে ছিল সোনালী গম ভর্তি চন্দন কাঠের গামলার মতো। এখন সে আবার সেই মণিমুক্তার দরজা ও পাইন কাঠ কাঠের বরগা দিয়ে তৈরি বাড়িতে পৌঁছল। সে শূন্য বাড়ির দিকে তাকাল এবং তাকে শয্যাকক্ষে অনুসন্ধান করল। তারপর চিৎকার করে বলল, “হে খিযিরের কন্যা, তুমি কোথায়? তোমার জন্যে আমার অন্তর দীর্ঘপ্রতীক্ষায় আছে। দেখো, কঠিন সময় পার হয়ে গেছে এবং ফুলের কেয়ারিগুলো আবার রঙিন হয়ে উঠেছে; গাছের ডালে ডালে পাখিরা কলকাকলিতে মেতে উঠেছে। তুমি কোথায়, হে খিযিরের কন্যা? যে তুমি উঁচু ছাঁদের নীচে চার-ছতরিযুক্ত বিছানায় ঘুমাও, তুমি কোথায়? হরিণেরা, যারা বনের মধ্যে আনন্দ করে এবং কবুতরেরা, যারা বড় বড় পাথরের গর্তে লুকিয়ে থাকে, তাদের পক্ষ হতে আমি তোমাকে অনুরোধ করছি নেমে এসে আমার সাথে দেখা করার জন্যে। কারণ আমার অন্তর তোমার প্রতীক্ষায় আছে। এলিয়াসুফ বারবার তাকে ডাকতে লাগল, যতক্ষন পর্যন্ত না তার আত্মা আবেগাপ্লুত হলো এবং সে কাঁদতে শুরু করল।

এলিয়াসুফ খিযিরের কন্যার কথা ভাবনায় কাঁদতে লাগল। কিন্তু হঠাৎ করে তার এলিয়যারের স্ত্রীর কথা মনে পড়ে গেল, যে নিজের স্বামীকে বানরে পরিণত হবার কারণে কান্না করায় নিজেও বানরে পরিণত হয়েছিল। এলিয়াসুফ এতোই উত্তেজিত ছিল যে, সে-ও কাঁদতে শুরু করল এবং অশ্রুর নীচে তার মুখের আকৃতি সঙ্কুচিত হতে লাগল। একসময়ে তার কান্না পশুর চিৎকারে পরিণত হলো। এমনকি তার শরীরের অবয়বেও পরিবর্তন আসতে লাগল। তখন যে বুঝল যে, খিজিরের কন্যাও বানরে পরিণত হয়ে গেছে। তখন এলিয়াসুফ নিজেকে বলল, “এলিয়াসুফ, তুমি এদেরকে ভালোবেসো না, নতুবা তুমিও তাদের একজনই হয়ে যাবে।“ এবং এলিয়াসুফ ভালোবাসা হতে মুখ ফিরিয়ে নিলো। সঙ্গীদের কাছে সে দূরের মানুষ হয়ে গেল এবং তাদেরকে বহিরাগত বলে বিবেচনা করতে লাগল। সে কোমল বুকের হরিণ, ময়দার স্তূপ ও চন্দনকাঠের গোলাকার গামলাকে চিরবিদায় জানাল।

এবং এলিয়াসুফ ভালোবাসাকে পরিত্যাগ করল এবং নিজের সঙ্গীদের লাল মুখ ও লেজগুলোর দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপের হাসি হাসল। তখন তাকে মনে করিয়ে দেওয়া হলো এলিয়াযারের স্ত্রীর কথা, যে ছিল গ্রামের সবচেয়ে সুন্দরী মহিলাদের একজন। সে ছিল লম্বা এবং খেজুর গাছের মতো নমনীয়। তার বুকগুলো ছিল আঙুর গুচ্ছের মতো। এলিয়াযার তাকে সতর্ক থাকতে বলে জানিয়েছিল যে, সে ঐ সুন্দর আঙুর গুচ্ছগুলো ছিঁড়বে। তখন তার স্ত্রী সেই আঙুরের গুচ্ছগুলো নিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সাগরের দিকে চলে গিয়েছিল। এলিয়াযার তার পিছু নিয়েছিল। এবং ফল ছিঁড়ে তাকে নিয়ে আবার ফিরে এসেছিল। কিন্তু এখন সে গাছের উঁচু ডালে বসে এলিয়াযারের শরীর হতে উকুন তুলে আনছিল এবং সেগুলো খাচ্ছিল। এলিয়াযার তার সোজা লেজ ও নিয়ে তার স্ত্রীর ওপরে চড়ে বসেছিল এবং তার স্ত্রী নিজের ময়লা থাবার ওপরে ঠেশ দিয়ে বসেছিল। এলিয়াসুফ দৃশ্যটি দেখে হাসল। এবং তারপর হাসতেই থাকল। তার হাসির শব্দ উচ্চ হতে লাগল এবং এক সময়ে পুরো গ্রামজুড়ে তার হাসির প্রতিধ্বনি শোনা যেতে লাগল। হঠাৎ তাকে মনে করিয়ে দেওয়া হলো সেই লোকটির কথা যে হাসতে হাসতে বানরে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিল। তখন এলিয়াসুফ নিজেকে বলল, “কাউকে অবজ্ঞা করে হাসবে না, কারণ তুমিও এক সময়ে হাসির পাত্রে পরিণত হতে পারো।“

এলিয়াসুফ হাসি ত্যাগ করল। তারপর সে এক এক করে ভালোবাসা ও ঘৃণা, রাগ ও সহানুভূতি, কান্না ও হাসি, সবগুলোতেই অভিজ্ঞতা লাভ করল এবং তার সঙ্গীদেরকে বহির্জগতের ভেবে তাদের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেল। তাদের লাফ দিয়ে গাছে ওঠার অভ্যাস, দাঁত কিড়মিড় করা, সুতীক্ষ্ণস্বরে চিৎকার করা, নিজেরা রক্তাক্ত না হওয়া পর্যন্ত কাঁচা-পাকা ফল নিয়ে পরস্পরের সাথে যুদ্ধ করা – সবকিছুই তার মধ্যে কান্না বা হাসির উদ্রেক করল। কোনো কোনো সময়ে সে এগুলো নিয়ে সে কাঁদত বা রাগান্বিত হতো। কোনো কোনো সময়ে সে দাঁতে দাঁত চেপে উপহাসের দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকাত।

একদিন সে তাদেরকে নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে দেখে চিৎকার করে ভর্ৎসনা করল এবং তারপর সে অবাক হলো নিজের কণ্ঠস্বরের উচ্চকিত অবস্থা দেখে। কয়েকটা বানরও তার দিকে অনাগ্রহ নিয়ে তাকাল এবং আগের মতো মারামারি করতে লাগল। এলিয়াসুফের কথাগুলো তারা কানেই তুলল না। তখন এলিয়াসুফ বুঝতে পারল যে, সঙ্গীদের সাথে তার সম্পর্ক চিরকালের জন্যে শেষ হয়ে গেছে। বিষয়টি তাকে বেদনা-ভারাক্রান্ত করল।

এলিয়াসুফ তার সঙ্গীদের, নিজে্র ও কথা দিয়ে ব্যথিত হলো। সে কষ্ট পেলো এই ভেবে যে, কোনো কারণ ছাড়াই তাদের মুখের ভাষা কেড়ে নেয়া হয়েছে। নিজেকে নিয়ে ব্যথিত হলো একারণে যে, তার কথাগুলো তার নিজের কাছেই খালি কলসীতে পরিণত হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে আজকের দিনটিই তার কাছে সবচেয়ে দুঃখের দিন, কারণ আজই তার কথাগুলো মৃত্যুবরণ করেছে। এলিয়াসুফ তার কথাগুলোর মৃত্যুতে ব্যথিত হলো এবং নিশ্চুপ হয়ে গেল।

এলিয়াসুফ কথা বলা বন্ধ করে দিলো এবং নিজেকে ভালোবাসা ও ঘৃণা, রাগ ও সহানুভূতি, হাসি ও কান্না – এগুলো থেকে নিজেকে পরিহার করে নিলো। সে তার সঙ্গীদেরকেও পরিত্যাগ করল, বিশ্বাস করে যে তারা তার কেউই নয় এবং নিজের মধ্যে আশ্রয় নিলো। এবং নিজের মধ্যে আশ্রয় নেয়ার পর সে একটা দ্বীপের মতো হয়ে গেলঃ নিজেকে সকলদের হতে বিচ্ছিন্ন করল ও গভীর জলের মধ্যে একাকী ভূমিতে পরিণত হলো। এবং সেই দ্বীপটি নিজেকে বললঃ আমি গভীর জলের মধ্যে ভূমির চিহ্নকে একাই ধারণ করে রাখব।

এলিয়াসুফ যে ভালো করেই জানত যে, তার মানবিকতার দ্বীপের গভীরতা কত। সে নিজেকে গভীর জল থেকে রক্ষা করতে লাগল। নিজের চারপাশে সে প্রাচীর গড়ে তুলল, যাতে ভালোবাসা ও ঘৃণা, রাগ ও সহানুভূতি, দুঃখ ও সুখ তাকে আক্রমণ করতে এবং কোনো আবেগের ঢেউ তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে না পারে। এবং এলিয়াসুফ তার আবেগকে ভয় পেতে লাগল। যখন তার প্রাচীর প্রস্তুত করা শেষ হলো, তখন সে অনুভব করল যে তার হৃদয়ের ভেতরে একটা পাথর সৃষ্টি হয়েছে। চিন্তিত হয়ে সে জিগ্যেস করল, “হে প্রভু, আমি কি ভেতর থেকে বদলে যাচ্ছি? এবং সে তার শরীরের বাইরের দিকে তাকাতে শুরু করল। অনুভব করল যে, পাথরটি বেরিয়ে আসছে ও শরীরের ভেতরে ছড়িয়ে যাচ্ছে; তার অঙ্গগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে; তার চামড়া ফ্যাঁকাসে হয়ে যাচ্ছে এবং তার রক্ত প্রাণশূন্য হয়ে যাচ্ছে। সে নিজের দিকে সতর্কভাবে আবার তাকাল এবং আবার চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল। অনুভব করল যে, তার শরীর পশমে ঢেকে যাচ্ছে এবং পশমগুলো রঙহীন ও শক্ত হয়ে যাচ্ছে। তারপর সে অনুভব করল যে, তার বাহু ও পাগুলো খাটো হয়ে আসছে। সেইসাথে তার মাথাও ছোট হয়ে আসছে। সে আরো ভীত হয়ে পড়ল এবং তার অঙ্গগুলো আরও ছোট হতে লাগল। তখন সে ভীত ও অবাক হয়ে ভাবলঃ “আমি কি পুরোপুরিই মিলিয়ে যাব?”

এবং এলিয়াসুফ মনে করতে পারল এলিয়াবকে, যে ভয়ে নিজের ভেতরে এতোটাই ছোট হয়ে গিয়েছিল যে, সে বানরে পরিণত হয়েছিল। তখন এলিয়াসুফ সিদ্ধান্ত নিলো যে, সে নিজের ভেতরের ভয়কে জয় করবে, যেভাবে সে বাইরের ভয়কে জয় করেছে।

এবং এলিয়াসুফ নিজের ভেতরের ভয়কে জয় করার পর তার সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়া আবার প্রসারিত ও লম্বা হতে শুরু করল। তার অঙ্গগুলো কোমল হলো। আঙুলগুলো লম্বা হয়ে গেল। চুলগুলো লম্বা ও সোজা হয়ে গেল। পায়ের গোড়ালি ও করতল লম্বা ও ক্ষিপ্র গতিসম্পন্ন হলো, অস্থিসন্ধিগুলো কর্মতৎপর হলো এবং এলিয়াসুফ অনুভব করতে পারল যে সেগুলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। স্থির সঙ্কল্প নিয়ে সে দাঁতে দাঁত চাপল এবং মুঠিবন্ধ করে নিজের ছড়িয়ে যাওয়া সত্তাকে একত্রিত করতে লাগল।

এলিয়াসুফ তার চোখগুলো বন্ধ করল, যাতে তাকে নিজের বিকৃত অঙ্গ দেখে অবাক না হতে হয়। চোখ বন্ধ করার পর সে অনুভব করতে শুরু অরল যে, তার অঙ্গগুলো বদলে যাচ্ছে। ভীত হয়ে সে নিজেকে জিগ্যেস করল যে, সে আগের মতোই আছে কিনা। এই চিন্তা তার অন্তরকে দুঃখে ভারাক্রান্ত করল। ভয়ের সাথে সে তার একটি চোখ খুলল এবং নিজের বাহু ও পায়ের দিকে তাকাল। সেগুলো সবসময়ের মতো দেখতে পেয়ে সে আশ্বস্ত হলো। এরপর সে ভয়শূন্যভাবে তার দুই চোখই খুলল এবং ধীরে ধীরে নিজের পুরো শরীরের দিকে তাকাল এবং বলল, “নিশ্চিত যে আমি আমার নিজের অবয়ব নিয়েই আছি।“ কিন্তু এর একটু পরে কোনো কারণ ছাড়াই তার মনে হতে লাগল যে, তার অঙ্গগুলো পরিবর্তিত ও বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। আবার সে চোখ বন্ধ করল।

এলিয়াসুফ তার চোখ বন্ধ করল। চোখ বন্ধ করার পর তার চিন্তাগুলো ভেতরের দিকে ফিরল। সে অনুভব করতে লাগল যে, সে অন্ধকার ও তলাহীন একটা কুয়ার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। বেদনায় সে চিৎকার করে বলে উঠল, “হে আমার প্রভু, আমার বাইরে ও ভেতরে দুই জায়গাতেই দোযখ।“ তারপর সে যখন অন্ধকার তলাহীন কুয়ার ভেতরে পড়তে লাগল, তখন তার সঙ্গীদের মুখ তাকে অনুসরণ করতে লাগল এবং অতীতের সকল স্মৃতি তার মনের ভেতরে ভিড় করতে লাগল। এলিয়াসুফকে মনে করিয়ে দেওয়া হলো কীভাবে তার সঙ্গীরা শব্বাতের দিনে মাছ ধরেছিল এবং সাগরকে মাছশূন্য করে ফেলেছিল। কীভাবে তাদের লোভ বেড়ে গিয়েছিল এবং তারা পরের শব্বাতগুলোতেও মাছ ধরা চালিয়ে গিয়েছিল। এছাড়াও তাকে মনে করিয়ে দেওয়া হলো যে, কীভাবে সেই লোকটি তাদেরকে শব্বাতের দিনে মাছ ধরতে নিষেধ করত এবং বলত, “আল্লাহ্‌র কসম, যিনি সাগরকে গভীর করেছেন এবং গভীর জলকে মাছদের জন্যে আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন, সেই সাগর তোমাদের লোভী হাত হতে আশ্রয় চায়। সুতরাং মাছেদের ওপরে শব্বাতের দিনে অত্যাচার করার বিষয়ে তোমরা সতর্ক হয়ে যাও, নতুবা তোমাদের পরিচয় হবে তাদের ওপরে অত্যাচারী হিসেবে।“

তখন এলিয়াসুফ বলল,”শব্বাতের দিনে আমি মাছ ধরব না।“ এবং যেহেতু এলিয়াসুফ একজন বুদ্ধিমান মানুষ ছিল, সেহেতু সে সমুদ্র হতে কিছুদূরে একটা গর্ত খনন করল এবং একটা খাল দিয়ে সেটিকে সাগরের সাথে যুক্ত করে দিলো। শব্বাতের দিনে মাছগুলো পানির পৃষ্ঠদেশে উঠে এলো এবং খাল দিয়ে সাঁতরে নিরাপদে গর্তটির মধ্যে চলে এলো। তখন যে লোকটি শব্বাতের দিকে লোকজনকে মাছ ধরতে নিষেধ করত, সে বিষয়টি দেখতে পেল এবং বলল, “ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সাথে প্রতারণা করবে, আল্লাহও তার সাথে প্রতারণা করবেন। এবং সন্দেহাতীতভাবে আল্লাহ্‌ সবচেয়ে বড় প্রতারক হতে পারেন।“ এবং এলিয়াসুফ এটি শুনে খুবই অনুতপ্ত ও উদ্বিগ্ন হলো। সে কি তাহলে প্রতারণার শিকার হয়েছে? সে অবাক হয়ে ভাবল। পর মুহূর্তে তার মনে হলো যে তার পুরো জীবন, এমনকি তার অস্তিত্বও ছিল প্রতারণাপূর্ণ। সুতরাং সে আল্লাহ্‌র কাছে আবেদন করল,”হে প্রভু, তুমিই আমাকে জীবন দিয়েছ, যা কেবলমাত্র তোমার মতো জীবনদানকারীই পারেন। তুমি আমাকে শ্রেষ্ঠ ছাঁচ দিয়ে তৈরি করেছ এবং তোমার আদলে সৃষ্টি করেছ। তাহলে কেন তুমি আমার সাথে প্রতারণা করবে এবং আমাকে অপমান করে নীচু জাতের বানরদের অন্তর্ভূক্ত করবে?” এরপর এলিয়াসুফ নিজের খারাপ অবস্থার কথা চিন্তা করে কাঁদতে লাগল। তখন সে নিজের চারপাশে যে প্রাচীর তৈরি করেছিল, সেটিতে ফাটল দেখা দিলো এবং সাগরের জল সেই দ্বীপকে ধুয়ে দিতে শুরু করল।

এলিয়াসুফ নিজের ভাগ্যকে নিয়ে অনেক কান্নাকাটি করল এবং বানরদের বসবাসের জায়গা হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বনের দিকে চলতে শুরু করল। কারণ, এই বাসস্থানগুলোকে তার কাছে বনের চেয়ে ভয়ঙ্কর ও বন্য বলে মনে হলো। তার কাছে ছাঁদযুক্ত ও দেয়াল ঘেরা বাসস্থানগুলো অর্থহীন মনে হলো, যেমনভাবে তার কথাগুলো অর্থহীন হয়ে গিয়েছিল। সে রাতের বেলায় গাছের শাখার ভেতরে লুকিয়ে রাত্রিযাপন করল।

পরদিন সকালে ঘুম হেকে জাগার পর তার পুরো শরীর এবং মেরুদণ্ডে বেদনা অনুভব করতে লাগল। নিজের বিকৃত অঙ্গগুলোকে তার কাছে আরও বিকৃত বলে মনে হলো। ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে সে নিজেকে জিগ্যেস করল, “আমি কি এখনও আমিই আছি?” সেই মুহূর্তেই তার মনে হলোঃ পুরো এলাকায় যদি সে একাই জীবিত মানুষ হয়ে থাকে, তাহলে তাকে কে বলতে পারবে যে সে কে ও কী? এবং এই চিন্তার ওপরে ভিত্তি করে সে নিজেকে প্রশ্ন করলঃ কেউ যদি মানুষ হিসেবে বাঁচতে চায়, তাহলে কি তার মানুষদের সাথে বাস করতেই হবে? এবং নিজেই এর উত্তর দিলোঃ এটা নিশ্চিত যে মানুষ একাকীভাবে অসম্পূর্ণ ও প্রতিটা মানুষই পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত এবং তাদেরকে নিজেদের মানুষদের মধ্য হতেই হাশরের দিনে উত্থিত করা হবে। এই ভাবনা তার মধ্যে প্রবল উদ্বিগ্নতার সৃষ্টি করল। তখন সে চিৎকার করে বলে উঠল,” হে খিজিরের কন্যা, তুমি কোথায়? তুমি ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। মুহূর্তের মধ্যে এলিয়াসুফ কম্পমান যুবতী হরিণের বুক, শস্যের স্তূপ এবং চন্দনকাঠের গোল গামলার চিন্তা দ্বারা আক্রান্ত হলো। সাগরের জল তখন দ্বীপটিকে প্লাবিত করছিল। এলিয়াসুফ বেদনায় চিৎকার করে উঠল, “ ওহে খিযিরের কন্যা, তোমার জন্যে আমার হৃদয় কাঁদছে। আমি তোমাকে উঁচু ছাঁদের সেই কক্ষের মধ্যে চার-ছতরিযুক্ত বিছানায় খোঁজ করব। এমনকি আমি তোমাকে খোঁজ করব লম্বা গাছগুলোর ঘন শাখার ভেতরে ও উঁচু টাওয়ারগুলোর মধ্যে। আমি তোমাকে খুঁজব দুগ্ধ-সাদা ঘোড়ার নাম ধরে; কবুতরদের নাম ধরে, যারা উঁচু আকাশে উড়ে বেড়ায়; রাতের অন্ধকারের নাম দিয়ে, যখন তা শরীরের ওপরে নেমে আসে; অন্ধকার ও ঘুমের নামে, চোখের ভ্রুর নামে যখন এটা ঘুমে ভারী হয়ে আসে। তুমি ফিরে এসো আমার কাছে। আমার হৃদয় তোমার জন্যে কাঁদছে।“ এবং যখন সে তার বেদনাবিধুর ডাক দিলো, তখন তার উচ্চারিত অনেক শব্দই পরস্পরের সাথে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে দিলো, যেমন করে শৃঙ্খলেরা পরস্পরের সাথে জড়িয়ে যায়, যেমন করে কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে এলে শব্দরা মুছে যায়। এলিয়াসুফ তখন একটু বিরতি দিলো নিজের কন্ঠস্বর পরিবর্তন করার জন্যে, এবং তখনই তাকে মনে করিয়ে দেওয়া হলো ইবনে জাবলুন ও এলিয়াবের কথা, যাদের কন্ঠস্বর বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। এলিয়াসুফ নিজের কন্ঠস্বরের পরিবর্তন নিয়ে চিন্তিত হলো এবং ভাবল, “হে প্রভু, আমি কি বদলে গেছি?” এবং পরের মুহূর্তেই তার মাথার মধ্যে একটি নতুন ধারণা এলো। সে ভাবল যে, যদি সে এমন কিছু একটা পেত, যা দিয়ে তার মুখ দেখা সম্ভব। কিন্তু ধারণাটিকে তার নিকটে চরম ধরণের অদ্ভুত বলে মনে হলো। তখন বেদনায় সে চিৎকার করে বলল,” হে প্রভু, আমি কী করে জানব যে, আমি বদলে যাইনি?”

এরপর এলিয়াসুফ প্রথমে ভাবল তার বাসস্থানে ফিরে যাওয়ার। কিন্তু পরের মুহূর্তেই সে ভয় পেয়ে গেল। বাসস্থানগুলোর শূন্য ও নির্জন অবস্থা তাকে ভীত করে তুলল। বনের লম্বা গাছগুলো তখন তাকে ঈশারা করে ডাকল। এবং সে বাসস্থানে যাওয়ার বদলে বনের মধ্যে প্রবেশ করল। বনের অনেক ভেতরে সে একটি স্বচ্ছ জলের জলাশয় দেখতে পেল। সে জলাশয়ের পাশে বসল এবং জলপান করল এবং নিজেকে মুক্ত বলে অনুভব করল। তারপর সে স্বচ্ছ জলের ভেতরে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল। “এটা কি আমি?” জলের ভেতরে নিজের মুখ দেখতে পেল সে। তারপর চিৎকার করে উঠল। তার চিৎকারের শব্দ তাকেই ভীত করে তুলল। তখন সে পালিয়ে গেল।

এলিয়াসুফের চিৎকার তাকে এতোটাই ভীত করল যে, সে নিয়ন্ত্রনহীনভাবে দৌড়াতে লাগল। এমনভাবে দৌড়াতে লাগল, যেন জলাশয়টি তার পিছু লেগেছে। দৌড়াতে দৌড়াতে তার পায়ের গোড়ালিতে ব্যাথা পেতে লাগল এবং তার কাছে মনে হলো যে, সেগুলো সমতল হয়ে গেছে। তার পিঠও ব্যাথা করতে লাগল। কিন্তু তারপরেও সে দৌড়াতে লাগল এবং তার পিঠের ব্যাথা ক্রমশ বাড়তে লাগল। একসময়ে তার কাছে মনে হলো যে, তার মেরুদন্ড দ্বিগুণ বেঁকে যাচ্ছে। তখন সে হঠাৎ করে নীচু হলো এবং অসচেতনভাবে হাতের তালুকে মাটিতে ঠেকালো। এরপর সে তার চারপায়ের ওপরে উঠে দাঁড়াল এবং খিজিরের কন্যার খোঁজে মাটি শুঁকতে লাগল।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ